মনময়ূরী,৩,৪

0
1478

মনময়ূরী,৩,৪
Anamika

এলার্ম বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পরে আবারও এলার্ম বাজতে থাকে। এশার ঘুম ভেঙে যায় সেই শব্দে। কিন্তু তার ঘুম এতোটা গাঢ় ছিল যে এলার্ম বন্ধ করে এক ঘণ্টা পরে একটা সেট করে আবার শুয়ে পড়ে। ফোন রাখার সময় পাওয়ার বাটন যতক্ষণ সময় প্রেস করার কথা তার থেকে একটু বেশিই প্রেস হয়ে যায়। এরপর আর কী রাখতেই ফোন বন্ধ। এলার্ম ও বাজেনি আর এশার ঘুমটাও ভাঙেনি।

এতোদিন অন্য এক পরিবেশে থেকে এসে আজ হঠাৎ করে নিজের চেনা পরিবেশটাই অচেনা মনে হচ্ছে মাহিরের কাছে। চেনা বিছাটাও যেন বন্ধুত্ব ভুলে শত্রুতা শুরু করেছে। ঘুমটাই হলো না ঠিক মতো। সকাল তখন ৮টা বেজে ৩০ মিনিট। মাহিরের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমটা যে একটানা হয়েছে ঠিক তা নয়। একটু পর পর ঘুম ভাঙছিল তার। কিন্তু এবার যখন ঘুম ভেঙে গেল তখন আর ঘুমোনোর চেষ্টা করলো না সে। এমনিতেই এসেছে অনেক রাতে যার ফলে বাড়ির কারো সাথেই এখনও দেখা হয়নি। মাহির বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। এরপর সরাসরি বসার ঘরে চলে যায় সে। এখন সবাইকে ওখানেই পাবে। সবাই বলতে শুধু মা আর চাচি। চাচ্চু আর বাবা তো এতক্ষণে নিজ নিজ কর্মস্থলে। কিন্তু বসার ঘরের কাছাকাছি আসতেই সোরগোল শুনতে পেয়ে থমকে যায় মাহির। এতো লোকজন আজ এই বাড়িতে!

বসার ঘরে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় সামনের বাসার তিন নম্বর ফ্ল্যাটের দাদু বসে বসে হলুদ পিষছেন। ওদিকে চাচি একসাথে বিশ পঁচিশ জন মানুষের সমান রুটি বেলে ফেলেছেন। কিছু রুটি আবার ভাজাও শেষ মা রান্না ঘরে রুটিগুলো ভাজতে ব্যস্ত। হচ্ছেটা কী কিছুই বুঝে আসছে না তার। আর সবাই এতোটাই ব্যস্ত যে তার দিকে খেয়াল করার সময়টুকুও নেই তাদের। সকলের মাঝে থেকে একজনের একটা কথায় মাহির বুঝে যায় আসলে কী হচ্ছে এই বাড়িতে। কীসের এতো তোড়জোড় চলছে।
-ভাবি বিয়ের কনে কোথায়?
-কী আর বলবো বলো, এখনো অভ্যেস ছাড়াতে পারলাম না। এই কিছুক্ষণ আগেই গিয়ে ডেকে এলাম। মেয়ে আমার কথা শুনলে তো! সেই মহারানী ঘুমে কাত হয়ে আছেন।
রান্নাঘর থেকে মাহিরের মায়ের আওয়াজ।
-আহা, ঘুমোচ্ছে ঘুমোক না।
-এই দেখেছো। এই করে করেই তো অভ্যেসগুলো খারাপ করেছ।
-একেবারেই অভ্যেস খারাপ হয়নি। আমাদের মেয়ে জানে ওর কোথায় কার সাথে কীভাবে মানিয়ে নিতে হবে।
-সারাদিন ঘুমোলে তো স্বপ্নের মধ্যেই সবার সাথে মানিয়ে নিতে হবে এতে বাস্তবে যা কিছুই হোক না কেন?
-আচ্ছা বোস আমি গিয়ে ডেকে দিচ্ছি।
কথাটা বলার পরে চুলার উপরে থাকা রুটিটা নামিয়ে রেখে হাত পরিষ্কার করছিলেন উনি তখনই মাহির ডাকে,
-মা।
মাহির ডাক শোনার পরেও ফিরে তাকান না। আজকাল কত যে ভ্রম হয় তার। এই মনে হয় মাহির তাকে ডাকছে তাই আজ আর পাত্তা দিলেন না এইসবে। এখন সবথেকে বড় দ্বায়িত্ব এশার বিয়ে। কালই মেয়েটা চলে যাবে তাই এখন সম্পূর্ণ ফোকাশ এশার উপরেই থাকতে হবে। ভাবতে থাকেন উনি। ভাবনার মাঝেই আবার মাহির ডাক শোনেন। এবার এশার মায়েরও কণ্ঠস্বর শোনা যায়। কণ্ঠে তার মাহিরের নামটা শুনতে ভুল হয়নি।
-মাহির।
আটা মাখা হাতে মাহিরের গালে দেওয়ায় মাহিরের গালে আটা লেগে যায়।
-এই যা, দেখেছিস আটা মাখিয়ে দিলাম।
-সমস্যা নেই চাচি। এখন বলো তো এসব কী হচ্ছে?
-ওসব পরে হবে এখন বল তো তুই কখন এলি?
-রাতে।
মাহিরের মা মাঝখানে এসে বলেন,
-রাতে মানে, কাল রাতে?
-না মা আজ রাতে। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো।
-কোই ডাকিসনি তো! ভেতরে এলি কীকরে? তবে কী কাজের মাঝে গেট লাগাতে ভুলে গেছিলাম!
-না মা গেট লাগানোই ছিল।
-তাহলে?
-এশা খুলেছে।
-এশা জেগে ছিল?
-হ্যা৷
-দেখলে তো, রাত জেগে এখন ঘুম দেখাচ্ছেন উনি।
-চাচি এখন রাগ করো না তো।
-আচ্ছা বাবা করছি না রাগ৷ এখন বল আমাদের তখনই কেনো ডাকিসনি?
-আমি ডাকতে চেয়েছিলাম এশা বললো তোমরা অনেক ক্লান্ত সবে কিছুক্ষণ হয়েছে ঘুমিয়েছিলে তাই আর ডাকিনি।
এই জায়গায় মাহিরের মা বলেন,
-দেখেছিস মেয়েটা আমাদের কতোটা চিন্তা করে আর তুই সবসময় ওকে বকতেই থাকিস।
-আমরা বলেই সবটা সহ্য করছি শ্বশুর বাড়ির লোকজন তো আর করবে না।

-করবে না মানে, অবশ্যই অবশ্যই সহ্য করতে হবে। ওরা সহ্য না করলে আমি বিয়েই করবো না।
এশা পেছন থেকে এসে যোগ দেয়। এশার মা রেগে গিয়ে বলেন,
-দেখেছো এই মেয়ে কী বলছে? কাল বিয়ে আর আজ এসেছে বিয়ে করবে না তার কারণ দেখাতে।
-কাল ওর বিয়ে, আমাকে তো জানাওনি!
মা মেয়ের মাঝে মাহির কথা বলে। মাহিরের কথার উত্তরে তার মা বলেন,
-তোকে জানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল বাপ কিন্তু তুই মনে হয় পৃথিবীর বাইরে অবস্থান করছিলি তাই আমরা কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারিনি।
-এ আবার কেমন কথা মা?
-ওসব ছাড় খাবি তো নাকি? আয় খাবার দিচ্ছি।
মাহিরের মা যেতেই এশা আঙুলে ভর করে দাঁড়িয়ে মাহিরের কানের বরাবর উঁচু হয়ে বলে,
-বড় মা খুব রেগে আছে। মানে গরম আছে। এখনি গিয়ে বরফ গলাও নয়তো আবার ফ্রীজারে ঢুকে গেলে গলাতে পারবে না। বুঝলে?
-হু।
-বুঝেছ তো দাঁড়িয়ে না থেকে যাও।
মাহির চলে যায় মায়ের কাছে। মা খুব রেগে আছেন মানাতে হবে তাকে। এরপর শুরু হয় মায়ের রাগ ভাঙানোর কার্যক্রম।

সন্ধ্যেবেলা এশাকে হলুদ দেওয়া হবে তারপর মেহেদী পরানো হবে৷ আয়োজন চলছে দ্রুতগতিতে। আর সবকিছুতে বেশ তাড়া দিচ্ছেন এশার মা। তা দেখে এশা বাবার কাছে গিয়ে বলে,
-বাবা।
-কিরে মা কিছু বলবি।
-নালিশ করার আছে।
-কার?
-মায়ের।
-কেন রে?
-দেখো কেমন উঠে পড়ে লেগেছে সবকিছুতে। মায়ের হাতে থাকলে মনে হয় আজই আমাকে বিদেয় করতো। আচ্ছা, বড় বাবা কোথায় বলো তো।
-কেন?
-একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে তো তাই। খুব জরুরি।
-ভাইজান তো মাহিরের সাথে এখানেই ছিল আশেপাশে দেখ পেয়ে যাবি।
এশা খেয়াল করলো তার বাবার কণ্ঠস্বর ভারী শোনাচ্ছে। বাবার দিকে ভালো করে দেখে সে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করলো। তিনি অন্যদিকে ফিরে আছেন।
-আর ইউ ক্রাইং বাবা?
বাবা ফিরে তাকান মেয়ের দিকে।
-ডোন্ট ক্রাই বাবা।
এশা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। তারপরেই ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে আবার বলে,
-ওয়েট বড় বাবার সাথে আগে আলোচনাটা সেরে আসি। হতে পারে আমাকে যেতেই হলো না।
এশা চলে গেল। এশার বাবা মেয়ের কথা শুনে অবাক চোখে চেয়ে রইলেন। বুঝতে পারছেন না মেয়েটা কী বলে গেল? না জানি আবার কোন খিচুড়ি পাকাচ্ছে ব্রেনে! এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা যায় না। এবার তিনিও এশার যাওয়ার পথ অনুসরণ করে পিছু নিলেন।

continued……

Anamika
#মনময়ূরী
৪.

এশা এখন তার বড় বাবার রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতর থেকে দু’টো কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে, একটা তার বড় বাবার একটা মাহিরের। সে ভাবছে ভেতরে যাবে কিনা। যাওয়া কী ঠিক হবে! ভাবতে ভাবতে গেটে নক করে বসে সে। ভেতর থেকে মাহির প্রশ্ন করে,
-কে?
-আমি।
এশার আওয়াজ চিনতে ভুল হয়নি বাবা-ছেলে কারোরই। মাহিরের বাবা বলেন,
-আয় ভেতরে আয়।
এশা ভেতরে যায় তখনই তার বাবাও পৌঁছে যান সেখানে। শুনতে পান তার বড় ভাই এশা’কে প্রশ্ন করছেন,
-কিছু বলবি মা?
-আচ্ছা বড় বাবা, আমি চলে গেলে তো তোমরা আমাকে খুব মিস করবে তাই না?
-এ আবার প্রশ্ন করার বিষয় হলো!
-আহা, বড় বাবা প্রশ্নের উত্তর হয় পাল্টা প্রশ্ন নয়।
-আচ্ছা। মিস করবো। খুব মিস করবো।
-গ্রেট!
মাহির অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
-মিস করার মানে বুঝিস? কেউ তোকে মনে করে কষ্ট পাবে আর তুই নেচে উঠছিস!
-আমি তো সমাধান ভেবে এসেছি বলে খুশিতে নাচছি।
-আচ্ছা?
-হু।
-শুনি কী সবাধান ভেবেছেন আপনি।
-বাবা, ওই ছেলেটা….
বলতে গিয়ে থেমে একটু ভেবে নিয়ে আবার বলে,
-না না ওই লোকটা। হ্যা, ওই লোকটার নাম কী যেন?
মেয়ের কথা শুনে বাবা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। এ কেমন প্রশ্ন! তখন মাহির বলে,
-কোন লোকটা?
-ওই তো যার সাথে কাল আমার বিয়ে।
-সেকিরে, তুই নামই জানিস না। আর লোকটা লোকটা কেন করছিস?
-করবো না! তুমি জানো ওই লোকটা বয়সে আমার চেয়ে ১২বছরের বড়।
মাহির বেশ অবাক হয়। বাবা চাচ্চু ওনারা এমন একটা লোকের সাথে এশার বিয়ে ঠিক করেছেন ভাবতেই অবাক লাগছে তার কাছে। সে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার বাবার দিকে। ছেলের দৃষ্টির অর্থ বুঝে বাবা উত্তর দেন,
-সবদিক বিবেচনা করে তবেই এগিয়েছি। এরপরে আর কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না।
মাহির বাবার কথা শুনে চুপ করে থাকে। একে তো ইভানের বিষয়টা এখনো ক্লিয়ার হয়নি তার উপর এশার বিয়ের খবর আর এখন এসব। মাথাটা হ্যাং হয়ে আসছে। এশার সেদিকে কোনো চিন্তা নেই সে এখনও আগের মতোই তার বাবার উত্তরের অপেক্ষা করছে।
-বাবা, আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।
-সেকি, কেন?
-আমি না তোমায় নাম জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় বললে না তো!
-ওহ, তানভীর নাম।
-ওকে, বড় বাবা শোনো ওই তানভীর নামের লোকটাকে বলবে এখানেই থেকে যেতে তাহলে তোমাদের আর আমাকে মিস করতে হবে না। বুঝলে? আচ্ছা এখন আমি আসি। না বুঝলে তিনজনে মিলে একে অপরকে বুঝতে সাহায্য করো। আর যতক্ষণ না বুঝতে পারছো কেউ নড়বে না এখান থেকে।
এশা চলে যেতে মাহির রাগে পাশের চেয়ারে একটা লাথি মারে যার ফলে চেয়ারটা পড়ে যায়। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না তার বাবা-চাচা দু’জনে মিলে এশাকে এমন একজন মানুষের সাথে বিয়ে দিতে যাচ্ছেন!
-এ কেমন ব্যবহার মাহির?
-বাবা, এটলিস্ট তোমাদের থেকে এমনটা আশা করিনি। চাচ্চু তুমিও।
-দেখ মাহির এশাকে দেখছিস তো, ওকে দেখে ওর আচরণ দেখে কেউ বলতে পারবে ওর বয়স ২২ পেরিয়ে গেছে।
-এর সাথে এসবের কী সম্পর্ক বাবা?
-এশা বয়স অনুযায়ী কম ম্যাচিউর সেই দিক বিবেচনা করতে গেলে ওর জন্য এমনই একজন ম্যাচিউর জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন যে ওকে বুঝবে৷ এখন ওর বয়সেরই আরেকজনের সাথে যদি ওকে বিয়ে দেওয়া হয় তখন কী হবে জানিস, আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরি হওয়ার জায়গায় সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হবে বেশী।
-তাই বলে এমনটা। বাবা, আর দু-চার বছর সময় দাও। এশার বয়স তো আর পেরিয়ে যাচ্ছে না।
-ব্যস মাহির। অনেক হয়েছে। অনেকদিন বাদে এসেছ মায়ের সাথে সময় কাটাও, বাড়িতে আরও অনেকেই আছে তাদের সময় দাও। এসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। আশা করছি তুমি কোনো প্রকার ঝামেলা সৃষ্টি করবে না। কাল বিয়ে আর আজ ঝামেলা সৃষ্টি করলে সমাজে কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে সেটা তুমি বুঝতেও পারছো না।
বাবা কাছে এমন কথা শুনে মাহির রাগে ফুঁসছে কিন্তু কিছু বলতে পারবে না সে এখন। অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। আগে যদি জানতো এমন কিছু ঘটাবে তার বাড়ির লোকজন তবে অনেক আগেই ফিরে আসার চেষ্টা করতো আর ফেরার সম্ভব না হলেও কথা বলে বুঝিয়ে মেনেজ করতে পারতো সে। এখনও বুঝিয়ে বলা সম্ভব আর তার বাবা বুঝবেনও কিন্তু সমাজ…. এই একটাই বাঁধা। আর যাই হয়ে যাক না কেন মানুষকে সমাজের রীতি মানতেই হবে। এতে দুনিয়া জলে যাক সেটাও মেনে নেবে। ওরা বুঝতে চায় না সমাজ, সমাজের নিয়ম সব মানুষের সৃষ্টি। আর সেই মানুষই একটা নিয়ম না মানলে সমাজ রসাতলে যাবে না। বাবা যা ভাবছেন তার বিপরীত ও তো ঘটতে পারে। তানভীর নামের লোকটা এশার শক্তি না হয়ে তার কষ্টের কারণও তো হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সন্ধ্যে পেরিয়ে যায়। এশার গায়ে হলুদের ছোঁয়া লেগে গিয়েছে৷ এখন সে মেহেদি লাগাতে ব্যস্ত। আর একটুখানি হলেই মেহেদি দেওয়া শেষ হয়ে যাবে। মেহেদি পরানো হাত থেকে চোখ সরাতেই মাহিরকে দেখতে পায় এশা৷ বলে,
-কিছু বলবে?
মাহির কেবল ঠোঁট নাড়িয়েছে কিছু বলতে যাবে তখনই এশা বাধা দিয়ে বলে,
-আমি বোধহয় জানি তুমি কী নিয়ে কথা বলতে চাও। একটু অপেক্ষা করো। মেহেদি দেওয়া শেষ হলো বলে। শেষ হলেই এই আপুটা চলে যাবে তারপর নাহয় শুনবো তোমার কথা।

দশ মিনিট। দশ মিনিট অপেক্ষা করার পরে মেহেদি আর্টিস্টকে এশার রুম থেকে বেরিয়ে যেতে দেখল মাহির। দূরত্ব স্বল্প তবুও ঝড়ের গতিতে এগিয়ে আসে মাহির৷ সে রেগে আছে, প্রচুর রেগে আছে। তাকে দেখলেই বোঝা যায় সে রেগে আছে।
-তুই নিজের সাথে অন্যায় হতে দেখেও চুপ করে আছিস কেন?
-অন্যায়! কীসের অন্যায়?
অবাক হয়ে বলে এশা। মাহির এবার শান্ত গলায় বলে,
-ইভান কোথায়? কোনোভাবে কী তোদের মাঝে কোনো ঝগড়া হয়েছে তাই রাগের মাথায় এমন ডিসিশন নিয়েছিস তুই?
-তা কেন হতে যাবে!
-তবে নিজের থেকে বয়সে এতোটা বড় একজনকে কেন বিয়ে করতে যাচ্ছিস তুই?
-ওই তো বড় বাবা, আর বাবা বললো ছেলে ভালো আমি সুখী হবো তাই।
-ওরা বললো আর তুই রাজি হয়ে গেলি!
-হ্যা, সুখী হতে কেই বা না চায় বলো?
এশা হেসে এগিয়ে যায় জানালার কাছে৷ আজ আকাশের চাঁদটা কোথায় যেন মুখ লুকিয়েছে, তারাগুলোও আজ দেখা দিতে চাইছে না। মাহির কিছুক্ষণ এশাকে পর্যবেক্ষণ করে তারপর বলে,
-আজ চাঁদ নেই আকাশে কেন জানিস?
-কেন?
-কারণ চাঁদের শখ হয়েছে লুকোচুরি খেলবে। ঠিক তোর মতো।
এশা ঢোক গিলে কথাটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু চেষ্টা বৃথা যায় তার।
-খুব ভালো অভিনয় করতে পারিস তো তুই! সেরা অভিনেত্রী এওয়ার্ডটা তোরই প্র‍্যাপ্য।
-কী বলতে চাইছো তুমি?
-এই যেমন মনে কর অভিনেত্রীর মাঝে একটা বিশেষ গুণ থাকে নিজেকে যে কোনো চরিত্রে মানিয়ে নিতে পারে সে। সেই গুণটা তোর মাঝে ঠেসেঠুসে ভরা আছে বুঝলি। একেবারে অভিনয় গুণ ওভারলোডেড।
এশা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। মাহির বলে,
-অপরিপক্কতার আড়ালে পরিপক্কতাকে ভালোই লুকিয়ে রেখেছিস ত! নাহলে বাবা এতো বিচক্ষণ একজন মানুষ হয়ে তোর অভিনয় ধরতে পারলো না সেটা তো অসম্ভব কে সম্ভব করা। যেটা তুই পেরেছিস। এবার বলতো সমস্যাটা কোথায়? ইভানের সাথে মনোমালিন্য হয়েছে?
-আফসোস, আমি ভালো অভিনেত্রী হলেও তুমি ভালো গোয়েন্দা হয়ে উঠতে পারলে না।

Continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here