মনময়ূরী,৯,১০

0
1189

মনময়ূরী,৯,১০
Anamika

খাবার টেবিলে সকলে নিরবতার সাথে খেয়ে যাচ্ছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। আজকের পুরো দিনটাই এমন গিয়েছে সবার। এমনিতেই সকলের মন মেজাজ খুব একটা ভালো নেই, মাহির ভাবছে তার যাওয়ার কথাটা শুনলে সবার রিয়েকশন কেমন হবে। বাবা হয়তো রেগে গিয়ে আধপেটা খেয়ে উঠেই যাবেন। চাচ্চু কিছু বলবেন না কিন্তু মনের মধ্যে নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেই চিন্তা পালছেন সেটা আরো দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। হতে পারে তার থেকেও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়বেন তিনি। চাচি শুধু চাচ্চুর দিকে চেয়ে থাকবেন। এটাই নিয়ম তার। চাচ্চু যেদিকে যাবেন চাচিও বিনা বাক্যে সেই পথে হাঁটবেন। আসলে এটা কোনো ভয় থেকে নয়। তাদের সম্পর্কটাই এমন, বিশ্বাসের। আর মা, মায়ের অবস্থা যে কী হবে ভাবতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে মাহিরের।

মাহির যেখানে বলতে গিয়েও বাধা অনুভব করছে সেখানে এশা কথাটা অকপটে বলে দিলো। অবশ্য মাহিরের মায়ের একটা কথাতে সে সুযোগটা পেয়ে গেল তা আর হাতছাড়া করতে চায়নি বলে মনে হলো মাহিরের কাছে।

যেখানে সকলে খেতে ব্যস্ত সেখানে মাহিরকে চিন্তিত দেখে তার মা বলেন,
-কী’রে খাচ্ছিস না কেন? খাবার ভালো লাগছে না বুঝি?
-না মা। তেমন কিছু না। এইতো খাচ্ছি।
বলে জোরপূর্বক খেতে শুরু করলো। ছেলের কান্ড দেখে মায়ের মনে কী হলো প্রশ্ন করে বসলেন তিনি।
-কিছু হয়েছে। সত্যি করে বলতো কী হয়েছে?
মাহির উত্তর দেওয়ার জন্য যেই প্রস্তুত হলো অমনি এশা বলে বসলো,
-কারণটা আমি জানি বড় মা।
এই মুহুর্তে সকলের দৃষ্টি এশার উপর নিবন্ধিত।
-তুই কী জানিস?
এশা’র মায়ের প্রশ্ন। তৎক্ষনাৎ মাহিরের বাবা বলে বসেন,
-যদি তুমি মনে করো ও তোমার কারণে এমন আচরণ করছে তাহলে এক্ষুনি সেই ভাবনাটা নিজের মস্তিষ্ক থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। অন্যায় হোক বা ন্যায়, সিদ্ধান্ত ভুল হোক বা সঠিক; যা করার আমি করেছি। তাই এখানে নিজেকে দোষারোপ করার কোনো প্রয়োজন নেই তোমার।
-আমি নিজেকে দোষারোপ করছি না বড় বাবা। তবে হয়তো তোমরা আমাকে দোষারোপ করতে পারো।
হাসলো এশা। হেসে বললো,
-তারজন্য অবশ্য নিজেকে তৈরি করেই রেখেছি।
-কী বলছিস কী এসব!
এশার বাবা মেয়েকে ধমক দিয়ে থামাতে চাইলেন। কিন্তু তার কথা কাজে দিলো না। এশা বললো,
-বড় মা, বড় বাবা তোমরা আমায় ক্ষমা করো। আমার কারণে তোমাদের কত লোকের কাছে কত কথা শুনতে হলো তারউপর তোমাদের ছেলের তিন তিনটে বছর পরে ফিরে আসার খুশিটা তোমরা লুফে নিতেই পারলে না যে আমারই কারণে যে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলো। আমি খুব সরি। এরচেয়ে বেশি কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
এশা উঠে চলে যায়। ঠিকমতো খাইও না। মাহির ভাবে, তারমানে এসবের কারণ হিসেবে এশা নিজেকে মনে করছে। চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তো মাহির বাবার উপরে রাগ করেই নিয়েছিল কিন্তু সেটা এশা’কে বোঝাবে কে? এশা যেতেই মাহিরের বাবা মাহিরের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাহির বলে,
-ছুটি ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছিল বাবা।
-ছুটি ক্যান্সেল হয়েছে নাকি তুমি করিয়েছ?
সন্দেহের দৃষ্টিতে তিনি ছেলের দিকে দেখে প্রশ্ন করেন। মাহির বলে,
-না বাবা, ছুটি ক্যান্সেল হয়েছে। আর আমি না ফিরলে বিষয়টা পুরোপুরি আমার ক্যারিয়ার আমার ফিউচারের উপর ইফেক্ট ফেলবে বাবা। নাহলে আমি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতাম না।
-তো কবে ফিরছ তুমি?
-এইতো আজ ১৫ তাহলে ২০তারিখ রাত দেড়টার ফ্লাইট।
-এতো তাড়াতাড়ি!
মাহিরের মায়ের আর্তনাদ যুক্ত কণ্ঠস্বর। এরপরে তিনি আর কিছু বলেন না। স্বামীর দৃষ্টি দেখে চুপ করে যান তিনি। সকলে নিরবেই খেয়ে উঠে যায়। মাহিরও উঠে চলে যায় ঘরে।

-তোমার ছেলে চলে যেতে চাইছে ওকে একবারের জন্যও আটকাবে না।
-না। এতে করে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।
-কিন্তু।
-কোনো কিন্তু নয়। ঘুমিয়ে পড়ো। এ ক’দিন ছেলের সাথে যতটুকু পারো সময় কাটিয়ে নাও।
কথাটা বলেই উনি অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়েন। কিন্তু ঘুমোতে পারেন না। কিছুক্ষণ যেতেই স্ত্রীর প্রশ্ন শুনতে পান তিনি। বুঝতে পারেন এতক্ষণ ভাবনার পরে তার কথার উত্তর বুঝতে পেরেছে তার স্ত্রী।
-তবে কি ছেলেটা আমার আর ফিরবে না?
-আহা, ঘুমিয়ে পড়ো না।
-এখনও আমার ঘুম আসবে বলে মনে হয় তোমার?
উনি চুপ রইলেন। জানেন উত্তর না পেলে কিছুক্ষণ গুতিয়ে গুতিয়ে উত্তর জানতে চাইবে তারপর না পেরে ঠিকই শুয়ে পড়বে।

মাহির তখন বেলকনিতে বসে আছে। এশা বলে,
-আসবো?
মাহির তাকায়। বলে,
-আসতে আবার পারমিশন প্রয়োজন হয় তোর? কোথায় আগে তো প্রয়োজন হতো না!
-আগের কথা আর এখনকার কথা কী এক?
মাহির উত্তর দেয় না। এশা গিয়ে মাহিরের বিপরীতে বসে পড়ে।
-কিছু বলবি?
মাহিরের প্রশ্ন। এশা উত্তর দেয়।
-তুমি আমার কথা চিন্তা করছো?
-দেখ এশা তুই আমার দ্বায়িত্ব…
-তবে তো তুমিও আমার দ্বায়িত্ব।
এশার কথা শুনে এইটুকু বুঝে আসে ওর সাথে পারা যাবে না। তাই সে বলে,
-আচ্ছা বল কী বলতে এসেছিস।
-আমাকে নিয়ে ভেবো না। নিশ্চিন্তে যাও তুমি।
-কিন্তু….
-কোনো কিন্তু নয়। আর একটা কথা, আমি কিন্তু তোমার দ্বায়িত্ব নই। আমি হলাম জোর করে তোমার উপর চাপিয়ে দেওয়া এক বোঝা মাত্র। যার জন্যে নিজের ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করার কোনো মানে হয় না।
-এশা দেখ আমি কিন্তু…
-আমি জানি তুমি আমায় বোঝা মনে করো না। কিন্তু এই সম্পর্ক যার মাঝে আমরা আছি সেটাকেও তো মানতে পারছো না।
এশা উঠে চলে আসে ঘরের ভেতর। বিছানার একপাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ে সে৷ কিছুক্ষণ বাদে মাহির আসে। অপর পাশে সেও একইভাবে শুয়ে পড়ে।

গভীর রাত। মাহির প্রশ্ন করে,
-ঘুমিয়ে পড়েছিস?
-না।
-তো ফাইনাল এক্সাম কবে?
-এতো আর চার মাস পরেই।
-এরপর কী করবি বলে ঠিক করেছিস?
-চেষ্টায় আছি স্পলার্শীপের। বাইরে কোথাও যাওয়ার প্ল্যান আছে।
-ওহ।
আবারও নিরবতা। মাহির কিছু বলতে চায় কিন্তু পারে না৷ কী যেন একটা কিছু তার মাঝে জড়তার সৃষ্টি করেছে। সে বহু কষ্টে চেষ্টার পরে বলে,
-একটা কথা বলবো এশা।
-বলো।
-একটা প্রস্তাব আছে আমার। এটাকে ডিলও ভাবতে পারিস।
-কেমন ডিল?
এশা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। মাহির উঠে বসে। এশাও উঠে বসে মাহিরের দিকে ফেরে। মাহির কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। হয়তো ভাবছে কোথাও এশা ওকে অন্যরকম কিছু ভেবে না বসে। এশা মাহিরের বা হাত ধরে আশ্বস্ত করে বলে,
-বলতে পারো, এতো ভাবনার কিছু নেই এখানে।
-তুই তো স্কলারশিপের ট্রাই করছিস। দেখ যদি কোনোভাবে আমার ওখানে আসতে পারিস। এটলিস্ট পরিবারের কথা ভেবে হলেও আমাদের একে অপরকে, নিজেদের সম্পর্ককে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।
এশা হাতটা ছেড়ে দিয়ে অন্যপাশে ফিরে যায়। মাহির বলে,
-আমাকে কী স্বার্থপর শোনালো!
এশা আবার ফিরে তাকায়। বলে,
-তা কেন হবে। কিন্তু পরিবারের জন্য তুমি নিজের ইচ্ছে স্যাক্রিফাইস করবে কেন? আমার জন্য? তার তো প্রয়োজন নেই। আমি একবার নিজে স্বাবলম্বী হতে পারলেই হলো। তাহলে তো তোমার আর চিন্তা থাকবে না বলো।
-এখানে বিষয়টা সেটা নয় এশা….
-বুঝেছি।
মাহিরের কথা পুরোপুরি না শুনেই এশা বলে,
-চলো ডিল ডান। আমার নিজেকে তৈরি করতে অনেকটা সময় প্রয়োজন হবে এরমাঝে যদি মনে হয় আমরা একসাথে থাকতে পারবো তবে আমি না করবো না।
এশার কথায় সায় দেয় মাহির।
-চল এবার শুয়ে পড়।
এশা কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়ে। সে মনে মনে চাইতে থাকে, তার উপর সিম্প্যাথি দেখিয়ে যেনো মাহির কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়। যার মাঝে মাহিরের ভালোলাগা, ভালোথাকার বিষয় থাকবে মাহিরের সিদ্ধান্ত যেন সেই দিকেই হয়।

দিনগুলো যেন স্রোতের গতিতে পেরিয়ে গেল। মাহিরের যাওয়ার দিনও এসে গেল।

continued…..

Anamika

#মনময়ূরী
১০.

-হলো তোমার? নিচে সবাই অপেক্ষা করছে।
-এইতো হয়ে এলো।
-ঠিকআছে তবে তুমি এসো আমি এগোই।
-শোন।
এশা বেরিয়ে যেতে গিয়েও থেমে যায়। মাহির ওকে ডাকে সেই ডাকেই থামতে হয় ওর। পেছন ফিরে মাহিরের দিকে দেখে সে। মাহির লাগেজ বন্ধ করে সেটা লক করে নিচে নামিয়ে রেখে এগিয়ে আসে এশার কাছাকাছি। এশা স্তব্ধ, নিরবে দেখে যায় মাহিরকে। মাহির এশার কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
-ডোন্ট বি স্যাড।
এশা একটুখানি মিষ্টি হেসে বলে,
-স্যাড! আমি? কেনো?
-প্রশ্নের আড়ালে স্যাডনেস লুকোনোর তোর এই বৃথা চেষ্টাগুলো বেশ ভালো লাগে জানিস তো। কিন্তু কী বল তো, সবসময় সবক্ষেত্রে নিজেকে লুকিয়ে রাখাটা বোকামি। হুম.. বোকামি। যখন একা থাকবি বসে ভেবে দেখিস।
মাহিরের কথাগুলো শুনে এশা মনের মধ্যেই বলে,
-একাই তো ছিলাম আমি তারপর ক’দিন আগে তুমি এলে সব পাল্টে গেল। নিজের সাথে আমায় জড়িয়ে নিলে তারপর এখন আবার একা ফেলে চলে যেতে চাইছো। উহু, ভুল বলে ফেলেছি। যেতে চাইছ কোই তুমি তো চলেই যাচ্ছ।
মনের মধ্যে দুঃখ, রাগ অভিমান যাই থাকুক না কেন মুখে কিছু বলে না সে। মাহিরের এসব কথা এড়াতে শুধু বলে,
-চলো চলো নিচে যাই।
-যাব তবে আরও একটা কথা আছে আমার।
-সব কথা পরে হবে, আমি যখন স্কলারশিপ পেয়ে তোমার কাছে গিয়ে থাকব তখন।
-তারমানে তুই চেষ্টা করবি!
মাহির মুহুর্তেই খুশি হয়ে যায়। কিন্তু সেই খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। এশা বলে,
-হ্যা অবশ্যই। আমি তোমার সাথে গিয়ে না থাকলে তুমি কী করে বুঝবে আমার সাথে থাকা সম্ভব নয়। কখনো নয়।
এশার এমন কথায় মাহিরের রাগ চড়ে যায় মাথায়, তবুও সে চুপ থাকে। এখন মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে গেলে নিজেই শান্তি পাবে না। এশা ভাবে ওর কথাতে হয়তো ওর গালটা আজ আঙুলের ট্যাটু প্রাপ্ত হবে কিন্তু না, মাহির রেগে মারার বদলে ওর দুই গাল ধরে কপালে ছোট্ট করে চুমু এঁকে দিয়ে আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এটা কী হলো! এশা মাহিরকে খুব ভালো করেই জানে ওর এমন বিহেভিয়ার দেখে মাহিরের রেগে যাওয়ার চান্স ছিল হান্ড্রেড পার্সেন্ট। তবে এমন করলো কেন? এশা কপালে হাত ছুঁইয়ে রেখে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়। মাহিরের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে সে। মাহির ড্রয়ার থেকে পাসপোর্ট আর তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বের করছে৷

আলমারি লক করে যখন মাহির ঘাড় ঘোরায় তখন এশা কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে ইতস্তত করে এদিক সেদিক দেখতে থাকে। মাহির ল্যাগেজ হাতে উঠিয়ে নেয় সাথে ছোট্ট একটা ব্যাগ ছিল সেটা নেওয়ার জন্য এশাকে বলে দেয়৷ দু’জনে একসাথে নেমে আসে নিচে। মাহির সকলের থেকে বিদায় নেয়। এয়ারপোর্ট অবধি মাহিরের সাথে যাবে এশার বাবা। তারপর, তারপর আর কী! মাহির চলে যাবে অনেকটা দূরে আর এশা, এশা নিজের লাইফে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আচ্ছা ও পারবে তো নিজেকে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে! পারবে পারবে, কেন পারবে না। আগেও পেরেছে এখনও পারবে।

-কবে ফিরবি?
-জানি না, মা।
-একটা কথা সবসময় মাথায় রাখিস তুই এখন আর একা নেই, অন্য একজনের দ্বায়িত্ব ও আছে তোর উপর। এই দ্বায়িত্ব শুধু শুধু মাসের মাস তার একাউন্টে একটা এমাইন্ট যোগ করে দেওয়া নয়, এসব তো গৌণ। মূখ্য কী জানিস, তার ভালোলাগা, ভালোথাকা, এমন কিছু না করা যাতে সে কষ্ট পায়।
-আমি আবার কী করলাম মা! তুমি এসব জ্ঞানের ঝুলি খুলে বসলে।
-তোর কী মনে হয় আমার চোখ মাথার পেছনে নিয়ে ঘুরি, চুলের আড়ালে?
-তা কেন হতে যাবে মা।
মাহির বিরক্ত হচ্ছে বেশ মায়ের এমন ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলা দেখে৷
-তুই এশার সাথে ঠিকমতো কথা বলিস না সেটা বুঝি আমি। দিনদিন মেয়েটা শুকিয়ে যাচ্ছে, নিশ্চয়ই তোর কারণে।
-যা বাবা! মা এশা সবসময় তোমাদের আশেপাশে থাকে আর ওর কিছু হলেই আমার দোষ। অথচ আমি সেখানে নেই।
মাহির আরও কিছু বলতো কিন্তু মায়ের পেছনে একটু দূরে আড়ালে লুকিয়ে এশা দাঁড়িয়ে আছে দেখে কিছু বলে না। মাহির তাকাতেই এশা সরে যায়৷ তারমানে কী হতে পারে? এতক্ষণ তো ঠিকই দাঁড়িয়ে ছিল সে। এমনটা তো তখনই হতে পারে যখন কেউ কাউকে খুব নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আর সে টের পেলেই কিছু না জানার ভান করে। মাহির একটু অবাক হলেও পরক্ষণেই হাসে। কিন্তু এই হাসিই তার জন্যে ভয়ংকর ফলাফল তৈরি করে দেয়৷ কেনো না তখন তার মা তাকে কিছু একটা বলছিলেন কিন্তু তার ধ্যান তো অন্যদিকে। এশার মাঝে আবদ্ধ ছিল সে। এখন সেটা মা’কে কী করে বোঝাবে সে। আর না পেরে ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয় মুখের উপর। এতে মায়ের রাগ বাড়তে বাড়ুক কিন্তু কাল যখন কথা বলবে তখন সেই রাগ আর থাকবে না।

এশা ঘরে এসে লাইট বন্ধ করে বিছানার এক কোণে বসে থাকে। লজ্জা পেয়েছে ভীষণ। মাহির তাকে দেখে ফেলেছে। ইশ! এতটা কেয়ারলেস হলো কী করে ও? এর আগে এইভাবে দেখেনি কখনো। একটু পরেই মাহির তাকে কল দেবে, লজ্জা দেবে তাকে। তখন সে কী করবে? পালিয়ে যাবে! উহু ঘরটা এইভাবেই অন্ধকার করে রেখে দেবে সে। মাহির তাকে দেখতেই পারবে না। হ্যা, সেই ভালো। দেখতে না পেলে সে এশার ভাবভঙ্গি বুঝতেও পারবে না। এবার যা করার করুক সে, এশার কিচ্ছু যাবে আসবে না। খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করে তার। নাচেও কিন্তু একটু সময় পেরোতেই চুপসে যায় সে। যদি মাহিরের ঘরে আলো জ্বালানো থাকে তখন। তখন তো ওকে দেখেই ফেলবে মাহির। অল্প আলোই যথেষ্ট এশার চেহারার অবস্থা দেখার জন্য। এখন কী হবে? ফোনটাই সুইচড অফ করে দেবে সে। কিন্তু পরে তো আবার বকা দেবে মাহির। একদিন না পেলেই পরেরদিন এত্ত এত্ত বকা দেয় ওকে।

চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলো এশা। ওর এই চিন্তা তখন দূর হয় যখন মাহির কল দেয়। ভিডিও কল দেয়নি মাহির। অডিও! মাহির হয়তো বুঝতে পেরেই এমনটা করেছে। এশা নিজ মনেই বলে ওঠে,
-ইশ, বুদ্ধিমান বর আমার।
কথাটা বলে নিজেই চমকে যায়। তার বর! হ্যা, তারই তো। বিয়ে তো করেছে সে। তো মাহিরকে বর বলতে বাধা কোথায়? আছেই তো বাধা। কোথাও না কোথাও একটা বাধা আছেই। এশার মনটা মুহুর্তেই খারাপ হয়ে যায়। সে স্ক্রিনের দিকে দেখে। মাহিরের ছবিটা দেখা যাচ্ছে নিচে রিসিভ অর রিজেক্ট। এই মুহুর্তে ভীষণ অভিমান জাগে মনে। কেন তার অডিও কল দিতে হলো! তার কী ইচ্ছে করে না এশার লজ্জা মাখা মুখটা দেখতে? আচ্ছা এশা যেমন আনমনে মাহির কে বর বলে সম্বোধন করে মাহিরও কী ওকে বউ বলে সম্বোধন করে? করে নাই তো। করবেই বা কেন?

মাহির এবার টেক্সট করে। এশা সীন করবে না। উপরের নোটিফিকেশন বার থেকেই দেখে নেবে ভেবে স্ক্রল করে।
-কী’রে ঘুমিয়ে পড়েছিস? তোর না পরীক্ষা শুরু হবে সামনে সপ্তাহ থেকে। এইভাবে ঘুমোলে তো ডাব্বা মিলবে রে। আমি কিন্তু চাই না কেউ আমাকে ডাব্বা প্রাপ্ত ছাত্রীর জামাই হিসেবে জানুক।
মেসেজটা পড়ে এশা কাঁদে। কেন কাঁদছে জানে না সে। ফোন পাশে রেখে শুয়ে পড়ে সে।

continued…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here