মনের নদী বেশি গভীর,০৯,১০
আমিনা তাবাস্সুম
(৯)
অফিস শেষে আমার এক বন্ধু মুরাদের সাথে দেখা করতে এসেছি। ফারাহর সাথে আজকের কথার পর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবার ইচ্ছাটাই মরে গিয়েছে। তাও আসতে হলো। অনেকদিন ধরে মুরাদের সাথে দেখা করার এই পরিকল্পনা। আমাদের আরেক বন্ধু হাসান অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মুরাদের কাছ থেকে এই সময় বের করেছে। শেষ মুহূর্তে আমি না গেলে হাসান মাইন্ড করে বসবে।
মুরাদ হলো আমাদের যুক্তরাজ্যের এসএসসি – এইচএসসি ব্যাচ গ্ৰুপের মূল হোতা। বহুদিন ধরে ব্যাচেলর ছিল দেখেই মনেহয় ওর হাতে ছিল অফুরন্ত সময়। আর সেই সময়ের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করেছে বন্ধুদের পিছনে। এই গেট টুগেদার তো সেই পিকনিক তো সেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে কয়েকদিনের জন্য হলিডের পরিকল্পনা নিয়েই মনেহয় ওর জীবন ছিল। যদিও ওর পরিকল্পনায় আমি বেশিরভাগ সময়ই যুক্ত হতে পারতাম না তারপরও সবসময় ও যোগাযোগ রেখেছে, সবকিছুতে আমাকে যুক্ত করার চেষ্টা করেছে। আর শুধু আমাকেই না, সবার ক্ষেত্রেই ও এইরকম। কেউ পারুক না পারুক, যুক্ত হোক বা না হোক সবাইকে নিয়েই ওর সব আয়োজন, পরিকল্পনা। সত্যি কথা বলতে মুরাদের জন্যই এই ইংল্যান্ডে আমাদের ব্যাচমেটদের একটা সুন্দর সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
সেই মুরাদ অবশেষে দেড় বছর আগে আমাদের সবার জল্পনা, কল্পনা আর যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে বিয়ে করেছে। দেশে গিয়ে অল্পবয়সী, সুইট মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসে। ওর বিয়ের আনন্দে আমরা বন্ধু বান্ধবরা বেশ ঘটা করে ওর রিসেপশনের আয়োজন করি। চল্লিশোর্ধ সব বন্ধুরা আরেক বন্ধুর বিয়ের অজুহাতে মনের আশ মিটিয়ে সাজগোজ, নাচানাচি, ফুর্তি ফার্তি করে নেয়।
বিয়ের পর আমাদের সেই মুরাদ ডুব দিয়েছে। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ একেবারে কমিয়ে দিয়েছে। ওর সব পরিকল্পনা আয়োজনও মোটামুটি বন্ধ। যেইটুকু যোগাযোগ সবার সাথে তা শুধুমাত্র ফেসবুকের বদৌলতে। এই নিয়ে আমাদের বন্ধুদের মধ্যে তো ঠাট্টা মশকরার শেষ নেই। বুড়া বয়সে কচি বউ পেয়ে মুরাদ যেভাবে মজে আছে তা নিয়ে মুরাদ যতটা পুলকিত তার চেয়েও মনেহয় বেশি পুলকিত সব বন্ধুরা। এই নিয়ে ফেসবুক গ্ৰুপে চলে সারাদিন হাসি ঠাট্টা। মুরাদ সেগুলো দেখে মাঝে মাঝে হাসির ইমোজি দিয়ে চলে যায়। কিন্তু এই পর্যন্তই। অনেকেই হানিমুন পিরিয়ড শেষে মুরাদকে আগের ফর্মে ফিরে পাবার প্রতীক্ষায় আছে। আবার কেউ কেউ অগত্যা নিজে থেকেই বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন আয়োজনের ব্যবস্থা করা শুরু করে দিয়েছে। কতদিন মুরাদের অপেক্ষায় এভাবে বসে থাকা যায়?
আমি সেই নির্ধারিত কফি শপে পৌঁছে দেখি ইতিমধ্যে হাসান আর মুরাদ বসে কফি খাচ্ছে। আমাকে দেখা মাত্র মুরাদ খুশিতে ঝলমল করে উঠলো। যেমনটা বন্ধুদের দেখলে ও সবসময় করে। আমিও ওকে এতদিন পর দেখে যারপরনাই খুশি হয়েছি। ওকে দেখামাত্র আমি বলে উঠলাম,
– কী রে? বউ পেয়ে তো দেখি একেবারে ডুমুরের ফুল হয়ে গেলি?
মুরাদ কিছু বললো না। শুধু মনখোলা একটু হাসি হেসে বললো,
– কী খাবি বল? আমরা তোর অপেক্ষায় বসে আছি।
আমরা সবাই একেবারে হালকা কিছু স্ন্যাকস অর্ডার করে দিলাম। সবাই একসাথে ডিনার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মুরাদ রাজি হয়নি। ওর বাড়ি ফেরার তাড়া আছে।
আমরা চা কফি খেতে খেতে মন খুলে কিছুক্ষন আড্ডা দিলাম। সবার খবরাখবর জানালাম। চললো জীবন সম্পর্কে কঠিন কঠিন আলোচনা, হালকা অর্থহীন রসিকতা, আর সাথে পরিচিত বন্ধুদের নিয়ে গসিপ। তবে গল্প চালিয়ে গেলাম মূলত আমি আর হাসান। পুরোটা সময় খেয়াল করলাম মুরাদ কেমন যেন অস্থির। একটু পর পর ওর মোবাইল ফোন চেক করছে, ঘড়ি চেক করছে আর কেমন ছটফট করে যাচ্ছে।
হাসানের আজকের দেখা করার মূল উদ্দেশ্যে ছিল মুরাদ কেন এরকম হয়ে যাচ্ছে সেই ব্যাপারে কথা বলা। কিন্তু হাসান সেই প্রসঙ্গ মুখেও আনলোনা। কিছুক্ষন গল্পগুজব করে মুরাদকে বলে উঠলো,
– দোস্ত, তোর মনেহয় তাড়া আছে। বার বার ফোনে সময় চেক করছিস?
– হ্যাঁ রে দোস্ত। আজকে লিজা স্পেশ্যাল রান্না করছে আমার জন্য। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। বেচারা সকাল থেকে রান্নাবান্না করে বসে আছে। বাচ্চা মেয়ে তো। দেরি করলে ভীষণ অভিমান করে বসবে।
হাসান বললো,
– ও আচ্ছা। তাহলে আর দেরি করিস না। তুই যা।
মুরাদ মনেহয় এই কথা শুনে জানে পানি পেলো। বলে উঠলো,
– তোদের সাথে দেখা হয়ে অনেক ভালো লাগলো। গতবারের বন্ধুদের গেট টুগেদারে যেতে পারিনি। এর পরেরটা লিজাকে সাথে নিয়ে চলে আসবো।
হাসান কিছু জবাব দিলো না। আমি একটা প্যাকেট মুরাদের হাতে দিয়ে বললাম,
– এখানে তোর আর লিজার জন্য গিফট আছে। একটা পাঞ্জাবি আর শাড়ি। সেই কবে দেশ থেকে তোদের জন্য এনেছিলাম। এগুলো যে দিবো, সেই সুযোগই পাচ্ছিনা। তুই আমার পক্ষ থেকে লিজাকে দিয়ে দিস।
মুরাদ বেশ ইতস্তত করে প্যাকেটটা নিলো। তারপর বললো,
– এগুলো কেন করেছিস? এত কিছু? লিজার সাথে তোর দেখা হলে তখন তুই লিজাকে নিজে হাতে এগুলো দিস। ও খুশি হবে। আজকে থাকুক।
– ওমা, ছয়মাস ধরে দেবার সুযোগ পাইনি। তোদের সাথে তো দেখাই হয়না। আজকেই নিয়ে যা। আমি লিজাকে ফোন করে বলে দিবো না হয়।
– না না, ফোন করে কিছু বলা লাগবে না। ওকে তুই নিজে দিলেই মনেহয় সুবিধা হতো।
হাসান কিছু একটা আঁচ করতে পেরে বলে উঠলো,
– কেন, এখন তুই নিয়ে গেলে কোনো অসুবিধা?
মুরাদ আবার ইতস্তত করে বলে উঠলো,
– না মানে। লিজা আমাকে এত ভালোবাসে যে আমার ব্যাপারে ও একটু প্রটেকটিভ। অফিসের পর কোনো মেয়ে বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে আর তার কাছ থেকে গিফট পেয়েছি জানলে ও ভীষণ মন খারাপ করবে। বুঝিসই তো, বাচ্চা মেয়ে তো। এখনো একটু ইমম্যাচিউর।
আমি আর হাসান একটু মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। আমি মুরাদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
– ঠিক আছে বন্ধু। লিজার সাথে দেখা হলেই ওকে আমি দিবো। সেটাই ভালো হবে। তুই বরং রওনা কর। না হয় তোর দেরি হয়ে যাবে।
মুরাদ আমার আর হাসানের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি দিয়ে কোনোরকমে বিদায় নিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেলো।
মুরাদ চলে যাওয়া মাত্র হাসান বলে উঠলো,
– বাচ্চা মেয়ে না ছাই। একেবারে কন্ট্রোল ফ্রিক সেই মেয়ে। মুরাদকে ভালো মানুষ পেয়ে একেবারে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে। জানিস, আমাদের বাসায় দাওয়াত করলে ওরা আসে না কেন?
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
– কেন?
– ওর “বাচ্চা” বউয়ের ধারণা মুরাদ আমাদের বাড়ি এলে আমার বউ মাধবীর প্রেমে পড়ে যাবে। আরে, মুরাদের যদি মাধবীর সাথে প্রেম হবার কোনো সম্ভাবনা থাকতো তাহলে তো ওর বিয়ের আগেই সেই প্রেম হতো। বিয়ের আগে তো পারলে প্রতি উইকেন্ড আমাদের বাড়ি এসে পড়ে থাকতো মুরাদ। আমাদের পরিবারের অংশই ছিল। মাধবী আর বাচ্চারাও মুরাদকে ভীষণ মিস করে। একেবারে কন্ট্রোল ফ্রিক সাইকো মেয়েটা। কারো সাথে মুরাদকে মিশতে দেয় না। দেখলি না, তোর কাছ থেকে একটা গিফট নেওয়া পর্যন্ত ও অ্যালাউড না। আর মুরাদটা যে কী? এরকম বউ পাগল আর বেকুব হলে হয়?
– থাক, ওরা খুশি থাকলেই হলো। আমাদের কী বলার আছে?
– তোর মনেহয় ওরা খুশি? তুই মুরাদ কে দেখলি না? ওকে তোর খুশি মনেহলো? কেমন বউয়ের ভয়ে মিইয়ে আছে। এরকম ভয়ের জীবন কখনো সুখের হয়?
তারপর একটু থেমে আবার হাসান বলে উঠলো,
– তোরা যে খালি মেয়েদের কষ্ট, অত্যাচার নিয়ে পড়ে থাকিস, পুরুষদের কোনো কষ্ট তোদের কোনোদিন চোখে পড়ে না? এটা কে কি তুই নির্যাতন বলবি না?
হাসানের সাথে কিছুক্ষন গল্প করে ঘরে ফেরার সময় আমার মনেহলো আজকে শুধু মন খারাপের দিন। ফারাহর ঘটনা আর তারপর মুরাদের সাথে দেখা হওয়া, সবই যেন কেমন মন খারাপ করে দিলো। এই ভাবতেই আশফাকের মেসেজ,
– বন্ধুদের সাথে আড্ডা কেমন হলো?
– এই তো ভালো। বাসায় ফিরছি।
– এত তাড়াতাড়ি? তোমরা বন্ধুরা ডিনার করোনি?
– নাহ, মুরাদের তাড়াহুড়া ছিলো।
– তোমরা দেখি ভীষণ বোরিং।
আমি শুধু হাসির ইমোজি পাঠিয়ে দিলাম।
আশফাক আর আমার সম্পর্ক একেবারে আদর্শ সম্পর্ক বলা যাবেনা। আমার তো মনেহয় সব সম্পর্কে ভালো মন্দ আছে, উত্থান পতন আছে। তবে আজকে আমাদের সম্পর্কের একটা ব্যাপার আমি অ্যাপ্রিশিয়েট না করে পারছিনা। আমাদের দুইজনেরই কিছু ব্যাপারে স্বাধীনতা আছে। আমরা দুইজন নিজেদের উপার্জিত অর্থ চাইলে নিজেদের মতো খরচ করতে পারি আর আমরা দুইজনই চাইলে যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে মেলামেশা করতে পারি। সাধারণত কোনো ধরণের জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা বোধ করিনা অথবা কোনো গোপনীয়তা রক্ষা করে চলার প্রেশার ফিল করিনা। খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার, যা আগে কখনো আলাদাভাবে খেয়াল করিনি। কিন্তু আজকে হঠাৎ আমার মনেহলো এটা আমাদের সম্পর্কের একটা জোরালো দিক।
এই ভাবতে ভাবতে আমি ফেসবুক স্ক্রল করে যাচ্ছি। হঠাৎ করে রিদওয়ান ভাই আর তার স্ত্রীর একটা চমৎকার হাস্যজ্বল ছবি আমার নিউজফিডে ভেসে উঠলো। ছবিটিতে রিদওয়ান ভাইয়ের স্ত্রী সোমা ভাবীকে সম্রাজ্ঞীর মতো মনে হচ্ছে। রিদওয়ান ভাইয়ের মনোজগতের সম্রাজ্ঞী। ছবির নিচে রিদওয়ান ভাইয়ের নারী ভক্তদের লাইক আর কমেন্টের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
“আপনাদের এই দৃঢ় বন্ধন চিরদিনের জন্য অটুট থাকুক……..
এভাবে একে অপরকে আগলে রাখেন চিরকাল……..
আপনাদের ভালোবাসা অমর হোক……..
এভাবেই চিরদিন ভালোবেসে যান…….. ”
সব কমেন্টে প্রেম, ভালোবাসা, মিলন, বন্ধন – এসবের ছড়াছড়ি। নিজের অজান্তেই আমার চোখ সোমা ভাবীর মুখের দিকে চলে গেলো। চেহারা দেখে তো মানুষ চেনা যায় না। তারপরও আমি মুখটা খেয়াল করে দেখলাম। সাধারণ একটা মুখ। সেই মুখে কোথায় যেন একটা সরলতা আছে । আমার মনে নানান প্রশ্ন খেলা করে যেতে লাগলো। সোমা ভাবী কি আসলেই নদীর সাথে রিদওয়ান ভাইয়ের সম্পর্কের কথা জানে না? এটা কি হতে পারে? সব না জানলেও এক ছাদের নিচে কারো সাথে বাস করলে তো কিছু একটা টের পাবার তো কথা। রিদওয়ান ভাইয়ের জীবনে কি এক নদীই আছে নাকি অনেক নদী বয়ে চলেছে? শুধু এক পক্ষের গল্প শুনেই কি সব সত্য জানা যায়? রিদওয়ান ভাইয়েরও নিশ্চয়ই কিছু বলার থাকতে পারে?
আমার আবারও মনেহলো আজকে শুধু মন খারাপের দিন। আজকে আমার শুধুই মন খারাপ হবে। তবে এই মুহূর্তে আমার সারাহর জন্য মন খারাপ হচ্ছেনা, ফারাহর জন্যও মন খারাপ হচ্ছেনা। মন খারাপ হচ্ছেনা মুরাদের জন্য। এমনকি নদীর জন্যও না।
আমার মন খারাপ হচ্ছে রিদওয়ান ভাইয়ের স্ত্রী সোমা ভাবীর জন্য। যার সাথে আমার কোনো পরিচয় নেই। সে মানুষ হিসেবে কেমন আমি জানিনা। হয়তো বা সে ভালো, হয়তো বা সে খারাপ। হয়তো বা সেও মুরাদের স্ত্রী লিজার মতো কন্ট্রোল ফ্রিক। হয়তো বা তাদের সংসারে শান্তি নেই, হয়তোবা স্বামী স্ত্রীর নেই কোনো কোনো বোঝাপড়া, মনের মিল।
তবে সে যাই হোক, তাদের সংসার যেমনই হোক, তাই বলে এত বড়ো ফাঁকি কি কারো প্রাপ্য? আমার মনে হলো কী ভয়ানক ফাঁকির মধ্যে সে আছে। কী ভয়ানক ফাঁকি। সে কি সেটা বুঝতে পারেনা?
আমি হঠাৎ করে আমার মোবাইলটা হাতে নিয়ে আশফাককে একটা মেসেজ করে দিলাম,
– তোমার যদি কাউকে কখনো ভালো লেগে যায়, তুমি যদি আর কারো প্রেমে পড়ে যাও, তাহলে আমাকে একদম সোজাসুজি জানিয়ে দিবে। আমি সরে যাবো। আমি কথা দিলাম, আমি সরে যাবো। খবরদার আমার সাথে সুখের সংসারের ভান করে আর কারো সাথে প্রেম করবে না। ঠিক আছে?
অপর প্রান্তে আশফাক মনেহয় শকড। আমার কথার মাথামুন্ডু কিছু বুঝতে পারছেনা। আমি ফোনের এই প্রান্তে বসে ওর বিভ্রান্ত চেহারা টের পাচ্ছি।
অল্পকিছুক্ষনের মধ্যেই জবাব পেলাম,
– ব্যাপার কী? আমাকে প্রেম করতে বলছো কেন? রাস্তা ক্লিয়ার করে তুমি কারো সাথে প্রেম করতে চাও নাকি?
– প্রেম করতে কোথায় বললাম? বললাম কারো প্রেমে পড়লে আমাকে জানাবে।
– ওই একই কথা। এখন আমি তো মহা চিন্তায় পড়ে গেলাম। কার সাথে আগে প্রেম করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আমার তো অনেকের সাথেই প্রেম করতে ইচ্ছা করে।
– সবসময় মজা ভালো লাগেনা। আমি সিরিয়াস কথা বলছি।
– আমিও সিরিয়াস। প্রেম করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বউ আছে দেখে কখনো প্রেম করতে পারিনা। এখন তুমি যখন এত করে বলছো, তখন তো ব্যাপারটা একটু আগানোই যায়। কী বলো?
আমি এখন তামাশা করার মুডে নেই। আমি অ্যাঙরি ইমোজি পাঠিয়ে কথা শেষ করে দিলাম।
বেশ অনেক্ষন পর আশফাক আবার আরেকটা মেসেজ করেছে,
– আমি জানি আমি কারো সাথে প্রেম করলে তুমি সরে যাবে। সাথে সাথেই সরে যাবে। I know it very well. সেকারণেই তো কারো সাথে প্রেম করতে পারবোনা। তোমাকে হারানোর মতো বোকামি কি আমি করতে পারি?
নাহ, কে বলেছে আজকে মন খারাপের দিন? আমার মনটা হঠাৎ করেই কেমন ফুরফুরে হয়ে যাচ্ছে।
(চলবে)
আমিনা তাবাস্সুম
মনের নদী বেশি গভীর
(১০)
নদী রিদওয়ান ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করেছিলো নিজেকে বন্দি জীবন থেকে মুক্ত করার আশায়। আর রিদওয়ান ভাইও সেই আশ্বাস দিয়েই নদীর সাথে পাল্টা যোগাযোগ করে। তিনি অবশ্য আগেও নদীকে হেল্পলাইনের নাম্বার পাঠিয়েছিলো। কিন্তু আগের যোগাযোগ আর পরের যোগাযোগের মধ্যে তারতম্য আছে। অন্তত আমার সেটা মনে হয়েছে। প্রথমবার তিনি নদীকে না দেখে যোগাযোগ করেছে আর পরের বার নদীকে দেখেই যোগাযোগ করেছে। দুটোর মধ্যে বিশাল ফারাক আছে।
আমি আবার নদীর চেহারাটা মনে করার চেষ্টা করলাম। এটা ঠিক যে মেয়েটাকে দেখেই আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু পরে এমন থ্রেট দেওয়া শুরু করে দিলো যে আর সৌন্দর্যের দিকে চোখ যায়নি। তবে ওর সৌন্দর্যে আমার চোখ গেলেই কী বা না গেলেই কী। যার যাবার তার ঠিকই গিয়েছে, সেই ডাক্তারের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত নদীকে এক ঝলক দেখেই মনেহয় রিদওয়ান ভাই নদীতে ডুব দিয়েছে।
এরপর নদীকে কীভাবে সাহায্য করা যায় এনিয়ে দুজনের ফেসবুকে কিছু কথাবার্তা হয়েছে। তারপর শুরু হয় নদীর জীবনের গল্প, জীবনের গল্প না শুনে কি আর সাহায্য করা যায়? তারপর সেখান থেকে সহানুভূতির জন্ম আর তারপর তা নদীর মতোই এঁকেবেঁকে প্রেমের সাগরে মিশে যায়। তুমুল বাঁধভাঙা প্রেম। সেই প্রেমের টানে বন্দি জীবন থেকে মুক্তির পাবার ব্যাপারটা যে অতলে কেমন করে হারিয়ে গেলো সেই রহস্য এখনো আমি উদ্ঘাটন করতে পারিনি।
নদী এখনো আমাকে মাঝে মাঝে মেসেজ করে ওর জীবনের কাহিনী বর্ণনা করে যাচ্ছে। কিন্তু কেন করছে বা ও আমার কাছ থেকে কী আশা করছে সেটা আমি বুঝে উঠতে পারছি না। আর ঘটনার কোন পর্যায়ে আমি জড়ালাম সেটা এখনো জানতে পারিনি। কোনো এক কারণে আমিও নদীকে কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করছিনা। আমি সাধারণত আমার প্রফেশনাল ক্যাপাসিটির বাইরে কোনো পরিচিত মানুষের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে গল্প শুনা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি। আমি যে খুব ভালোমানুষ সেকারণে না। পরিচিত মানুষের মুখরোচক গল্প শুনলে হয়তো বা কোনো এক সময় আমি আরেকজনের কাছে সেটা বলে দিতে পারি। হয়তোবা পুরো গল্প না জেনে না বুঝেই কিছু একটা বলে কারো ক্ষতি করে ফেলতে পারি। বলা তো যায় না। তাছাড়া যার সাথে আমার নিত্য উঠাবসা, তার গোপন গল্প বয়ে বেড়ানোর বোঝা বড়ো ভারী মনেহয়। কী দরকার সেই বোঝা বহন করার? আমার উচিত নদীকে থামিয়ে দেওয়া। কিন্তু কোনো এক কারণে আমি সেটা পারছিনা।
নদীর এলোমেলো ছাড়া ছাড়া মেসেজ থেকে যা ধারণা করতে পারলাম তা হলো নদীর স্বামী ফরিদ সাহেব তো বেশিরভাগ সময়ই নদীর সাথে থাকেনা। দিনের বেলা তো থাকেই না, মাঝে মাঝে শুধু রাত কাটিয়ে চলে যায়। সারাটাদিন নদীর হাতে অফুরন্ত সময়। কত আর বাংলা চ্যানেল দেখে, নিজের জন্য রান্না করে আর নীলু ভাবীর সাথে গল্প করে কাটানো যায়। প্রতিটাদিন নদীর কাছে বড়ো দীর্ঘ মনে হতো। মনে হতো দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ মাস ……
ধীরে ধীরে সেই দীর্ঘ, স্তিমিত সময়টা ভালো লাগা আর ভালোবাসায় পূর্ণ করে দিতে থাকলো রিদওয়ান ভাই। সারাদিন ওদের হয় মেসেজ লিখে কথা হতো না হয় মেসেঞ্জারে কল করে করে কথা হতো। এত এত কথা যে সেই কথার কোনো শেষ নেই। সারাজীবনে নদী মনেহয় কারো সাথে এমন মন খুলে কোনোদিন কথা বলতে পারেনি। কারো সাথে না। সারাজীবনে কেউ মনেহয় ওকে এভাবে বুঝতে পারেনি, এভাবে ওর খেয়াল করেনি, ওর জন্য এরকম মায়া করেনি। এমনকি ওর মা বাবাও না। ওর মতো মেয়ে কি এত ভালোবাসা পাবার যোগ্য? এত ভালোবাসা কি ওর সইবে? আর এই ভালোবাসা কি ও কোনোদিন স্বপ্নেও চেয়েছিলো?
নদী আর কোনো পুরুষের ভালোবাসাই চায়নি। পুরুষমানুষদের ওর ঢের চেনা হয়ে গিয়েছে। ও নয়নকে চিনেছে। যে ভালোবাসার মুখোশ পরে নদীকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে, ঠকিয়ে আস্তাকুড়ে ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছে। নয়নের ভালোবাসায় শুধুই ছিল প্রতারণা। ও ফরিদ সাহেবকেও দেখেছে। যার কাছে নদী কেবলমাত্র রক্তমাংসের একটা পিন্ড। যার ভালোবাসায় শুধুই আছে কামনা। আর তারপর ও চিনলো এই রিদয়ান ভাইকে। সেও তো পুরুষ, সেও তো ভালোবেসে। কিন্তু তার ভালোবাসা এত স্বচ্ছ, এত পবিত্র, এত নির্মল যে সেই ভালোবাসা নদীকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। নদী আর যেন নদী ছিলোনা। নদী সাগরে হারিয়ে গিয়েছিলো।
রিদওয়ান ভাই তার শত ব্যস্ততার মাঝেও কখনো নদীর খবরাখবর নিতে ভুলেনি। নদী কেমন আছে, নদী খেলো কিনা, নদী ঘুমালো কিনা, নদীর শরীর ভালো নাকি, নদীর মন খারাপ নাকি, নদী, নদী, নদী, নদী, নদী, নদী চলতেই থাকতো সারাটাদিন। কোনোদিন ওরা সারাদিন কথা বলে কাটিয়ে দিতো, কোনোদিন সারা রাত। ভীষণ ব্যস্ততার মাঝেও রিদওয়ান ভাই কেমন করে যেন ঠিকই নদীর জন্য সময় বের করে নিতো।
নদী ছিল রিদওয়ান ভাইয়ের,
সন্ধ্যার মেঘমালা
দীপ্ত প্রাণের মণিকা
সকাল বেলার মল্লিকা, পাগলা হাওয়া, তটিনী তরঙ্গ, মালতীলতা, তৃষ্ণার শান্তি, স্বপ্নমায়া, জীবনের ধ্রুবতারা, কদম্বকুঞ্জের সুগন্ধ মদিরা …..
নদী ছিল রিদওয়ান ভাইয়ের
রিনি ঝিনি রিনি ঝিনি রিন্ ঝিন …..
ভাগ্যিস রবিঠাকুর ছিল। প্রেম এবং সৌন্দর্যের সব বর্ণনা তো তিনি করেই গেছেন। বুঝাই যাচ্ছে সেই চিরন্তন সব বাণী নদীর উপর বর্ষিত হয়েছে। একেবারে উজাড় করেই বর্ষিত হয়েছে। প্রেমের এই আকুল আবেদন আর প্রমত্ত নিবেদন অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কি নদীর ছিল? হোক সে বয়স্ক একজন লোক। হোক তার স্ত্রী সন্তান আছে। হোক না এই প্রেম গোপন। হোক না এই প্রেম নিষিদ্ধ। কিন্তু নদীর কাছে মনে হয়েছে এর চেয়ে পবিত্র আর কোনো প্রেম হতে পারেনা। এই প্রেমে রিদওয়ান ভাই শুধু ওকে দিয়েই চলছে, কিছু নিতে চায়নি। এই প্রেমে কোনো প্রতারণা নেই, কোনো কামনা নেই। এমনকি রিদওয়ান ভাই নদীকে ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখছেনা। এই প্রেম যদি পাপ হয়, পবিত্র না হয় তাহলে পৃথিবীতে কোন প্রেম পবিত্র?
নদী তো দেখেছে যে কত মহিলারা রিদওয়ান ভাইয়ের জন্য পাগল, দিওয়ানা। কিন্তু সব ছেড়ে রিদওয়ান ভাই এই অসহায়, তুচ্ছ, নগন্য নদীর কাছে এসেছে। প্রকৃতি নিজ হাতে নদীকে উজাড় করে ভালোবাসা দান করেছে। সেই দান ফিরিয়ে দেবার ক্ষমতা তো নদীর নেই।
নদী আমাকে লিখেছিলো,
“আপনি নিশ্চয়ই আমাকে খারাপ মেয়ে মনে করছেন? তাই না? আমি জেনেশুনে একজন বিবাহিত মানুষের সাথে সম্পর্কে জড়ালাম কেন? তাই ভাবছেন, না? যা ইচ্ছা তাই ভাবেন। আমার এতে কিছুই যায় আসে না। আমার এই পাঁচ বছরের নিরানন্দ রংহীন বন্দি জীবনে একটু রঙের ছোঁয়া তিনি। আর আমার তো খারাপ কোনো উদ্দেশ্য ছিলোনা। আমি তো তাকে তার স্ত্রী সন্তানদের কাছ থেকে দূরেও সরাতে চাইনি। এমনকি আমি তাকে কখনো ছুঁয়েও দেখতে চাইনি। আমি শুধু দূর থেকে এভাবে তাকে ভালোবেসে যেতে চেয়েছিলাম। এইটুকু চাওয়া কি অন্যায়? ”
আমি খুব একটা ধার্মিক মানুষ না। তবে সৃষ্টিকর্তার উপর আমার অগাধ বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস এত অগাধ যে আমি নিজে সেই বিশ্বাসের তল কখনো খুঁজে পাইনা। সেই বিশ্বাস থেকে আমি বিশ্বাস করি যে অপরের ন্যায় অন্যায় নির্ণয়ের ভার সৃষ্টিকর্তা আমাকে দেন নি। আমাকে তিনি বিবেক দিয়েছেন। তা দিয়ে আমার নিজের ন্যায় অন্যায় নির্ণয় করার চেষ্টা করা আমার উচিত। পরকালে যদি বিচার হয়ই, অপরের পাপের শাস্তি আমাকে বহন করতে হবেনা। তবে যদি ভুল করে অপরকে পাপী বা দোষী সাব্যস্ত করি, তাহলে সেই ভুলের জবাবদিহিতা নিশ্চয়ই আমাকে করতে হবে।
তাই নদী বা রিদওয়ান ভাই অন্যায় করেছে না ঠিক করেছে সেই চিন্তা আমি করতে চাইনা। কিন্তু তারপরও আমি মানুষ তো। ভালো, মন্দ, ভুলে, সঠিকে পরিপূর্ন একজন মানুষ। বিবেকের কাছে যতই দায়বদ্ধ থাকার করি, মনের লাগাম ততই ছুটে যেতে থাকে। তাই নিজের অজান্তেই অপরের ন্যায় অন্যায় নির্ণয়ে বসে পড়ি। নদীকে আমি কোনোভাবেই এখানে দায়ী করতে পারছিনা। হতে পারে মেয়েটা স্বার্থপর, হতে পারে মেয়েটা বোকা, হতে পারে মেয়েটা প্রেমবাজ, তারপরও মেয়েটা এখানে তো অসহায়, হেল্পলেস। অপরদিকে রিদওয়ান ভাই এখানে ক্ষমতাবান। তিনি চাইলেই নদীকে এই নরক থেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করে দিতে পারতেন। তিনি সেটা করেননি। বরং অসহায় অবস্থায় মেয়েটাকে রেখেই তার সাথে প্রেম চালিয়ে গিয়েছেন। একজন আদর্শ স্বামীর মুখোশ পরে সেটা করেছেন। হ্যা, এটা ঠিক যে এরকম অনেকেই করে, হরদম করে। এই যে নদীর স্বামী, সেও নিশ্চয়ই তার দেশের স্ত্রী এবং পরিবারের কাছে একজন আদর্শ স্বামী। এই গতকালই আরেক খবর শুনলাম। আমার পরিচিত এক বয়স্ক আপা স্বামী মারা যাবার পর জানতে পেরেছেন যে সেই স্বামীর এক মেয়ে আছে। তার প্রেমিকার ঘরের। পঁয়ত্রিশ বছর সেই স্বামীর সাথে সুখের সংসার করেছেন তিনি। সেই আপার এখন মাথা খারাপ অবস্থা। যারা এসব করে বা করেছে আমি নিশ্চিত যে সবার একটা কারণ আছে, যুক্তি আছে, যেটা বাইরে থেকে বুঝা অনেকের পক্ষেই সম্ভব না। তাদের জায়গায় নিজে হলে কী হতো সেটা জানাও সম্ভব না। কিন্তু অনেকেই করে বলে এত সহজে সঠিক-বেঠিক, ন্যায়-অন্যায় কি গুলিয়ে ফেলা যায়?
এরপর ধীরে ধীরে নদী আর রিদওয়ান ভাইয়ের প্রেম মাস গড়িয়ে বছর পার করে দেয়। প্রেম গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। বাড়তে থাকে প্রেমের আবেদন, যুক্ত হতে থাকে নানান বাসনা, কামনা। আর কতদিন দূর থেকে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভালো লাগে? এরপর রিদওয়ান ভাইয়ের নদীতে ডুব দেবার শখ জাগে, আকণ্ঠ পান করার তৃষ্ণা জাগে।
” – নদী নদী নদী নদী ….
– জি রিদওয়ান ভাই?
– আমাকে ভালোবাসো?
– সেটা কি বলতে হবে?
– হ্যাঁ, বলতে হবে।
– আমি বলতে পারবো না।
– না বললে ভেবে নিবো আমাকে ভালোবাসো না।
– এটা কেমন কথা? আপনি বুঝেন না আমি আপনাকে ভালোবাসি কি বাসি না?
– সব কি বুঝা যায় নদী? ভালোবাসা আড়াল করে রাখলে বুঝবো কেমন করে? ভালোবাসা তো উজাড় করে ঢেলে দিতে হয়।
– আমি কি উজাড় করে দেইনি?
– কী দিয়েছো বলোতো?
আসলেই নদী তো বুঝে উঠতে পারেনা যে রিদওয়ান ভাইকে ও কী দিয়েছে। ওর মনটা তো উজাড় করেই দিয়েছে। কিন্তু সেটা কি আর দেখা যায়? নদী মন খারাপ করে বলে,
– আসলেই তো। কিছুই আপনাকে দিতে পারিনি। আপনি কত বড়ো একজন মানুষ। আমার মতো হতোভাগাকে ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন। আর আপনাকে কোনো কিছু দেবার ক্ষমতাই আমার নেই।
– ধুর বোকা মেয়ে। তুমি যে আমাকে কী দিয়েছো সেটা যদি তুমি বুঝতে তাহলে এই কথা কোনোদিন বলতে না। তোমাকে যে আমি কত ভালোবাসি সেটা যদি তুমি জানতে তাহলে কোনোদিন একথা বলতে না। আমি আমার সবটা তোমার চরণে উজাড় করে দিলেও আমার ভালোবাসার সম্পূর্ণ নিবেদন সম্ভব না।
– ছি, কী বলেন এসব? আপনি পুরুষ মানুষ। আপনি কেন আমার চরণে ভালোবাসা নিবেদন করবেন?
– কে বলেছে আমি পুরুষ মানুষ? আমি তো শুধু প্রেমিক। নদীর প্রেমিক। আমি শুধু নদীতে ডুব দিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চাই। দিবে তোমাতে ডুবতে?
– আমার যা তার সবটুকুই তো আপনার। এটুকু কি বুঝেন না আপনি ?”
এরপর রিদওয়ান ভাই নদীকে গানের অংশ পাঠিয়ে বলেছিলো,
আমার সকল নিয়ে বসে আছি
সর্বনাশের আশায়
আমি তার লাগি পথ চেয়ে আছি
পথে যে জন ভাসায়
– নদী নদী নদী নদী…. আমি তোমার পথ চেয়ে বসে আছি। আমি পাগল হয়ে আছি। আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাও।”
এইটুকু শুনে নদী স্তব্ধ হয়ে বসে ছিল। কী জবাব দিয়ে তাকে শান্ত করবে তা বুঝে উঠতে পারছিলো না। কিন্তু রিদওয়ান ভাইই শান্ত হয়েছিলো, নদীকে শান্ত করেছিল, যেমনটা সবসময় করে। পরিবেশ হালকা করার জন্য শুধু একটা মজার ছড়া পাঠিয়েছিলেন,
“তোমার জন্য হঠাৎ কেন হলাম পাগল
রাস্তা ঘাটে সবাই আমায় ডাকে ছাগল।
পারছিনা আর থাকতে আমি নদীর কূলে
ডুব দিতে চাই সবটা নিয়ে ব্যাকুল সুরে।”
(চলবে)
আমিনা তাবাস্সুম