মনের নদী বেশি গভীর,১৪,১৫

0
289

মনের নদী বেশি গভীর,১৪,১৫
আমিনা তাবাস্সুম
(১৪)
রাত বারোটার দিকে আমার মোবাইল সমানে ভাইব্রেট করে যাচ্ছে। আশফাক আমাকে জড়িয়ে ধরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলো। মোবাইলের অনবরত ভাইব্রেশনে আমার ঘুম না ভাঙলেও আশফাকের ঘুম ভেঙে গিয়েছে। আমাকে একটু জোরে ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে বললো,
– এই রাত বিরাতে কারা তোমার মোবাইলে ঘুটুর ঘুটুর করে? একটু শান্তি করে ঘুমাতেও পারিনা।
আমি তাড়াতাড়ি ঘুম চোখে মোবাইলটা নিয়ে ভাইব্রেশন বন্ধ করে সম্পূর্ণ সাইলেন্ট করে দিতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি ফারাহ অনবরত আমাকে মোবাইলে, মেসেঞ্জারে কল করে যাচ্ছে। অনেকগুলো মেসেজও করেছে। এত রাতে ফারাহ আমাকে মেসেজ করতে পারে কিন্তু সরাসরি কল করার কথা না। নিশ্চয়ই সিরিয়াস কিছু। আমি মোবাইল হাতে নিয়ে ওর মেসেজ খুলে দেখলাম। সেখানে লেখা,
“আপা যত রাতই হোক আমার মেসেজ দেখলে একটু কষ্ট করে কল করেন। আমাদের গল্পগুলির জন্য একটা গল্প পেয়েছি। যে গল্প পাঠিয়েছে সে একটু ঝামেলা করছে। আপনার এখুনি ব্যাপারটা জানা দরকার।”
আমি মোবাইল হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম। এইসময় আশফাক বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,
– এত রাতে কোথায় যাও?
– ফারাহর সাথে একটু কথা বলতে হবে। কাজের একটা সমস্যা হয়েছে।
– এত রাতে আবার কাজের সমস্যা কী? কী এমন কাজ করো তোমরা? যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীরও মনেহয় তোমাদের মতো রাত বিরাতে এরকম কাজ নিয়ে ছুটোছুটি করতে হয়না।
বোঝাই যাচ্ছে আশফাক এই নিয়ে এখন বিরক্ত। আমি আর কথা বাড়ালাম না। মোবাইল হাতে নিয়ে আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
একটা রিং বাজতেই ফারাহ ফোন ধরে ফেললো। যেন আমার কলের অপেক্ষায় বসে ছিল।
– আসসালামুলাইকুম আপা। সরি, আপনাকে এত রাতে বিরক্ত করলাম। আমি আর রুবিনা দুইজন বিকালে একটা গল্প পেয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। ভেবেছিলাম আগামীকাল অফিসের সময় আপনার সাথে এই নিয়ে কথা বলবো। কিন্তু এই গল্প নিয়ে একের পর এক ঝামেলা বেঁধে যাচ্ছে। এখন এমন ঝামেলা শুরু হয়েছে যে সকাল পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে পারলাম না।
– কোন গল্প? কী ঝামেলা? আমি তো ঘুমাতে যাবার আগে নতুন সব গল্প পড়লাম। ঝামেলা হবার মতো তো কোনো গল্প দেখিনি।
– না আপা, সেই গল্প তো এখনো কোথাও পোস্ট করা হয়নি।
– তাহলে ব্যাপার কী?
ফারাহ তো আবার অল্প কথায় কিছু বলতে পারেনা। ওদিকে আমি এত রাতে এসব করছি মনেকরে আশফাক নিশ্চয়ই না ঘুমিয়ে বিরক্ত হয়ে বসে আছে।
– আপা, আজকে সকালে অনন্যা রহমান নামের এক মহিলা ইমেইল করে একটা গল্প পাঠায়। সেই গল্পে নাম ধাম দিয়ে ঘটনা বর্ণনা করে পাঠিয়ে বলেছে যে গল্পটা যাতে হুবুহু এভাবেই পোস্ট করা হয়। যাতে কারো পরিচয় গোপন না করা হয়। সেই মহিলার পরিচয় না হয় প্রকাশ করা গেলো। কারণ সে নিজে অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এখানে তো আরো মানুষ জড়িত। তাদের কথা তো অনুমতি ছাড়া এভাবে প্রকাশ করা যাবেনা। কারো পরিচয় প্রকাশ করতে গেলে তখন পুরো ঘটনা আমাদের আগে ভেরিফাই করে দেখতে হবে। ঘটনা ভেরিফাই করলেও তো আমরা আরেকজনের নাম প্রকাশ করতে পারবো না। করলে Data Protection Act এ ধরা খেয়ে যেতে পারি।
– তো সমস্যা কী? সেই মহিলাকে জানিয়ে দাও যে আমরা এখানে শুধু অজ্ঞাতনামেই গল্প প্রকাশ করে থাকি।
– আপা, আমরা সাথে সাথেই সেটা জানিয়েছি। কিন্তু এখানে বিশাল সমস্যা আছে। যার কথা গল্পে উল্লেখ করেছে তার নাম শুনলে আপনার এখুনি হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে। আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না। আমার আর রুবিনার তো গল্প পড়ে হার্ট অ্যাটাক হবারই জোগাড়।
উফ, ফারাহ আসল কথা না বলে আবার নাটক শুরু করে দিলো। আমার এখন বুক ধুকপুক করছে কিন্তু আমি যেন ধারণা করতে পারছি কার কথা এখানে বলা হয়েছে। আমি বললাম,
– আহা, ফারাহ, বলতো ব্যাপার কী? আমার হার্ট তোমাদের থেকে সবল মনেহয়। হার্ট অ্যাটাক হবেনা।
এই বলে আমি হাসলাম। ফারাহ বললো,
– আপা, আপনাকে আমি গল্পটা ইমেইল করেছি। সেখানে আমাদের রিদওয়ান ভাইয়ের কথা বলা হয়েছে। আমার আর রুবিনার এই মহিলার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা। আমার কেন যেন মনেহয় সেই মহিলা জনপ্রিয়তার জন্য গল্প ফাঁদছে।
রিদওয়ান ভাইয়ের নাম শুনে আমি মোটেও বিস্মিত না। বেচারা ফারাহ আমার “আকাশ থেকে পড়া” টাইপের রিঅ্যাকশনের অপেক্ষায় আছে। ওকে দেখানোর জন্যও আমি বিস্মিত হবার অভিনয় করতে পারলাম না। ওকে হতাশ করেই বললাম,
– ঠিক আছে, আপাতত গল্প পোস্ট করার দরকার নাই। আমি গল্পটা এখন পড়ে ফেলবো। তারপর আগামীকাল এই নিয়ে কথা হবে। যা গল্পই হোক না কেন, লিগ্যালি আমরা কারো নাম প্রকাশ করতে পারবোনা। তাছাড়া আরেকটা ঝামেলা আছে। রিদওয়ান ভাই আমাদের সংস্থার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি আমাদের বিশাল ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। তার পরিচয় প্রকাশ করে আমাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেইজে কোনো কিছু পোস্ট করলে আমাদেরই বদনাম হবে। আমাদের কাজের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে সবাই তখন প্রশ্ন করবে। আমাদের একটু ভেবেচিন্তে এগুতে হবে।
আমি কয়েকদিন ধরেই ধীরে ধীরে রিদওয়ান ভাইকে আমাদের সংস্থার কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার কথা ভাবছিলাম। কীভাবে সেটা করবো তার পরিকল্পনাও করছিলাম। এটা অস্বীকার করা যাবেনা যে আমাদের কাজগুলো প্রমোট করার পেছনে তার অবদান অসামান্য। সেই কৃতজ্ঞতাবোধটা তো থাকা উচিত। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছিলো যে তার সাথে বেশিদিন জড়িত থাকলে আমাদের উপকারের থেকে অপকার হবে বেশি। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি এরকম কিছু ঘটবে সেটা ভাবতে পারিনি।
ফারাহ আমার এরকম কাঠখোট্টা জবাবে মনেহলো হতাশ। ও ভেবেছিলো, রিদওয়ান ভাইয়ের কথা শুনে আমি অস্থির হয়ে যাবো। ফারাহ বললো,
– সেটা তো বুঝলাম। আমরা অনেক গল্প রিজেক্টও করেছি। কন্টেন্ট তেমন কিছু ছিলোনা বা ইররেলেভেন্ট কন্টেন্ট দেখে। এটাও সহজে রিজেক্ট করে দেওয়া যায়। কিন্তু এই মহিলা গল্প পাঠানোর পর থেকে আমাদের ইমেইল আর মেসেজ করে যাচ্ছে। রীতিমতো থ্রেট দিচ্ছে। আমরা যদি রিদওয়ান ভাইয়ের নাম প্রকাশ না করি তাহলে আমাদের মুখোশ নাকি তিনি উন্মোচন করে দিবে।
– ওমা, আমরা আবার কী করলাম? আমাদের মুখোশ আবার কী?
– ওই যে রিদওয়ান ভাই আমাদের সংস্থার সাথে যুক্ত। আমরা নাকি চ্যারিটি করার নামে রিদওয়ান ভাইকে মেয়ে সাপ্লাই দেই।
– আন্দাজে আজে বাজে একটা কথা বলে দিলেই হলো?
– সেটাই তো বলছি আপা। এই মহিলাকে মনে হচ্ছে সাংঘাতিক ডেসপারেট। দ্যাখেন না, নিজের নাম প্রকাশ করা নিয়ে তার কোনো দৃকপাত নাই। রিদওয়ান ভাইকে নাস্তানাবুদ করাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য। এই মহিলাকে আমার মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছেনা। আমি তার ফেসবুক প্রোফাইলের লিংকও আপনাকে পাঠিয়েছি। আপনি একটু দেখেন।
আমি ভাবলাম ফেসবুক প্রোফাইল দেখে কি আর কিছু বোঝা যায়। আমি ফারাহকে বললাম,
– ঠিক আছে, আমি সব দেখছি। তুমি এখন ঘুমাও। সকালে কথা হবে ইনশাল্লাহ।
– ঠিক আছে আপা। গল্পটা আগে পড়েন। আপনার মাথা খারাপ হয়ে যাবে।
এত কিছুর মধ্যেও মনেহচ্ছে ফারাহ গল্প নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত। আমার এখন একটু হাসিই পেলো। আমি ফোন কেটে দিয়ে লিভিং রুমের সোফায় বসে আমার ফোনেই ইমেইল খুলে পড়তে বসালাম। রাত বাজে প্রায় একটা।
গল্প তেমন কিছুনা। সেই চিরাচরিত গল্প। যেমনটা আমরা পেয়ে যাচ্ছি, যেমনটা দেখে যাচ্ছি। তবে অন্যান্য গল্পের তুলনায় যেন একটু সাদামাটাই, আন ইন্টারেষ্টিং। ফেসবুকে তাদের পরিচয়। রিদওয়ান ভাইয়ের কয়েকটা নিউজ ফিচার দেখে উৎসাহিত হয়ে নিজেই ফেসবুকে রিদওয়ান ভাইয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে। তারপর কমেন্টের আদান প্রদান, ইনবক্সে আলাপ পরিচয়, সেখান থেকে প্রেম ভালোবাসা। সেই প্রেম ভালোবাসার যা যা পরিণতি হওয়া সম্ভব, খুব অল্প সময়েই সব হয়েছে। এই মহিলা লুকোছাপার প্রেমে বিশ্বাসী না। এরপর তাদের প্রেম প্রকাশ্যে আনতে চাইলে রিদওয়ান ভাই পিছিয়ে যায়, ব্যস। এই গল্প নিয়ে আমাদের এত উত্তেজিত হবার কোন কারণ নেই। কিন্তু ফারাহ, রুবিনা কেন উত্তেজিত সেই ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। যেই মানুষটাকে নিয়ে এই গল্প সে আমাদের নিজের মানুষ। যেই মানুষটাকে ফারাহ, রুবিনা একজন শুভাকাঙ্খী মনেকরে এতদিন কাজ করে এসেছে। যেই মানুষটাকে তারা সম্মানের স্থানে বসিয়েছে। সাধারণভাবেই এই গল্প হজম করা তাদের পক্ষে এত সহজ না।
আমি অনন্যা রহমানের ফেসবুক প্রোফাইল খুলে দেখছি। আশ্চর্জনকভাবে সে আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। আমার সাথে কোনো ধরণের সংযোগ নেই কিন্তু দুইবছর ধরে আমরা একজন আরেকজনের বন্ধু তালিকায় আছি। কেন আমরা বন্ধু সেই রহস্য আমি কোনোভাবেই উদ্ঘাটন করতে পারলাম না। আমি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম নাকি সে? আমি যে পাঠাইনি সেই ব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহ। আমি পরিচিত না হলে আর যোগাযোগ না থাকলে কাউকে রিকোয়েস্ট পাঠাইনা। তবে অনেক অপরিচিত মানুষের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করা হয়েছে।
বয়স বেশি না মহিলার। তিরিশ হতে পারে, পঁয়ত্রিশ হতে পারে বা আরেকটু বেশিও হতে পারে। চেহারা আমার কাছে তেমন মনে না হলেও, ধবধবে ফর্সা, টিকালো নাক, ছিপছিপে লম্বা, জিরো ফিগারের মডেলের মতো সেই মহিলাকে দেখে যে কোনো প্রেমিক পুরুষের জিভ বের হয়ে যেতে বাধ্য। মহিলা বিবাহিত। ছোট ছোট পুতুলের মতো সুন্দর দুইটা বাচ্চাও আছে তার। হাজবেন্ডও সেইরকম হ্যান্ডসাম। পুরো পরিবারের একজন যেন আরেকজনের চেয়ে সুন্দর। টেলিভিশনে যেইধরণের পরিবার নিয়ে “সুন্দর ছোট সংসার” গানের সাথে বার্থ কন্ট্রোল পিলের বিজ্ঞাপন তৈরী করা হয়ে থাকে, সেই রকম সুন্দর একটা পরিবার।
মহিলা চাকরিজীবী। ভালো একটা ব্যাংকে চাকরি করছে। ফেসবুকের ছবি এবং পোস্ট দেখে পোশাক-আশাক, চাল-চলন, মন-মানসিকতা সব কিছুতেই তাকে বেশ খোলামেলা মনে হলো। অনেক পোস্টেই সে “খোলা সম্পর্কের” কথা প্রকাশ্যভাবে প্রচার করেছে। এই বিয়ে, সংসার সবকিছু তার কাছে এক ধরণের অহেতুক বন্ধন মনেহয়, বোঝা মনেহয়। মেয়েদেরকে টেনে ধরে রাখার একটা পন্থা মনেহয়। এইসব নাকি মেয়েদের জীবনের সুখ, আনন্দ, স্বাধীনতা সবকিছু থেকে বঞ্চিত করে রাখার একটা কৌশল মাত্র। মেয়েদের সবার এই বন্ধনের বিরুদ্ধে নাকি সোচ্চার হওয়া উচিত।
অনেকে হয়তো বা এই অনন্যা রহমানের সম্পর্কে নানান কথা বলবে। কিন্তু আমার কাছে মহিলার একটা ব্যাপার পছন্দ হলো। এটা পরিষ্কার যে এই মহিলা লুকোছাপায় বিশ্বাসী না। সে খোলা সম্পর্কে বিশ্বাসী, রিদওয়ান ভাইয়ের সাথে খোলা সম্পর্কে জড়িয়েছে। সম্পর্ক উপভোগ করার এক পর্যায়ে তার রিদওয়ান ভাইয়ের অতিরিক্ত লুকোছাপার চেষ্টা দেখে বিরক্ত লেগেছে, সে বিরক্ত প্রকাশ করেছে। তারপর এক পর্যায়ে রিদওয়ান ভাইকে তার প্রতারক মনেহয়েছে। সেই ব্যাপারটা মনেহয় তার ইগোতে লেগেছে। তাই এখন সে ডেসপারেট।
এই অনন্যা রহমান অবশ্য তাদের খোলা সম্পর্ক নিয়ে কোনো অভিযোগ তোলেনি এবং সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া নিয়েও কোনো অভিযোগ তোলেনি। তার কথা একজন আরেকজনের সাথে সম্পর্ক করতেই পারে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে একজনের আরেকজনের প্রতি মোহ কেটে যেতেই পারে। সেই মোহ কেটে গেলে একজন আরেকজনকে ছেড়ে চলে যেতেই পারে। এরপর অন্য আরেকজনকে ভালো লাগতেই পারে। এসব কিছুতে তার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সেই সম্পর্কটা হতে হবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। যতক্ষণ সম্পর্ক চলবে সেটাও চলবে সততার সাথে। সেখানে কোনো জটিলতা, কুটিলতা, প্রতারণা থাকবেনা। একদম বিশুদ্ধ ভালোলাগা এবং আনন্দ থেকেই সবকিছু হতে হবে। তার পক্ষ থেকে স্বতঃস্ফূর্ততার কোনো অভাব ছিল না। এমনকি তার হাজবেন্ড ব্যাপারটা বুঝতে পারলে সে নাকি সরাসরি স্বীকার করে নিয়ে বলেছে যে তার আর সংসার ভালো লাগছে না। হাসবেন্ড ডিভোর্স চাইলে সে ডিভোর্স নিয়ে নিবে। কিন্তু তার পক্ষ থেকে সততা থাকলেও সে এখন বুঝতে পারছে যে রিদওয়ান ভাইয়ের পক্ষ থেকে নাকি শুরু থেকেই কোনো স্বতঃস্ফূর্ততা ছিলোনা, কোনো সততা ছিল না। অনন্যা রহমানের খোলা সম্পর্কের প্রতি আকর্ষণ দেখে তিনি তাকে টার্গেট করে, ভীষণ গোপনীয়তা রক্ষা করে, পরিকল্পনা করে এগিয়েছে। গোপনে মজা নেওয়াই নাকি তার একমাত্র উদ্দেশ্য। কিন্তু যখন দেখেছে অনন্যা রহমান গোপনীয়তার পক্ষপাতী না, তখন সেই সম্পর্ক থেকে সরে যেতে একমুহূর্তও দেরি করেনি রিদওয়ান ভাই। এই ব্যাপারটাতাই সে বিশাল ধাক্কা খেয়েছে। এত বড় ঠগ এবং প্রতারকের মুখোশ উন্মোচন না করে দিলে সে নিজের কাছে দোষী থাকবে মনে করে নিজের মান-সম্মানের কোনো তোয়াক্কা না করে সে এই মিশনে নেমেছে।
আমি গল্প পড়ে বোঝার চেষ্টা করলাম যে এটা কবেকার ঘটনা। যা বুঝলাম তা হলো এদের খোলা সম্পর্ক চার মাসেরও বেশি টিকেনি। আর সবকিছুর শুরু হয়েছে যখন থেকে নদীর সাথেকার সম্পর্কটা শিথিল হওয়া শুরু করেছে। নদীর ধারণা তাহলে ঠিকই ছিল। কাউকে গভীরভাবে ভালোবাসলে তাহলে দূরে থেকেও তার সম্পর্কে অনেককিছুই টের পাওয়া পাওয়া যায়। কিন্তু তাহলে রিদওয়ান ভাইয়ের স্ত্রী কেন কিছু টের পাননি? আর রিতা আপারই বা দেলোয়ার ভাইয়ের ব্যাপারটা টের পেতে এত দেরি হলো কেন? হয়তোবা নদী যেহেতু গোপন সম্পর্কে জড়িয়েছিলো আরেকটা গোপন সম্পর্ক নিয়ে আঁচ করা তার জন্য সহজ ছিল। রিতা আপা বা সোমা ভাবী তো আর গোপন সম্পর্ক ছিলোনা। তাদের কাছে হয়তোবা ব্যাপারটা আঁচ করা এত সহজ ছিলোনা।
তবে সব মানলাম। বুঝলাম যে অনন্যা রহমান অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার জন্য রিদওয়ান ভাইয়ের মুখোশ উন্মোচন করে দিতে চায়। অতি উত্তম প্রস্তাব। সত্যি কথা বলতে কী, আমি এতে আনন্দিতই হবো। সে নিজের ফেসবুকে এটা প্রকাশ করুক, এই নিয়ে লাইভ করুক। আমি নিঃসন্দেহ যে দলে দলে মানুষজন সেই লাইভ দেখতে হাজির হয়ে যাবে। তার লাইভের রিচ আমাদের ফেসবুক পেইজের থেকে অনেক বেশি হবে। অথবা তিনি অন্য কোনো সাংবাদিকের মাধ্যমেও কাজটা করতে পারে। রিদওয়ান ভাইয়ের মতো জনপ্রিয় সাংবাদিকের স্ক্যান্ডাল প্রচার করতে অন্যন্য সাংবাদিকরা মুখিয়ে থাকবে। তাছাড়া এই মহিলাকে দেখে মনে হচ্ছে তার গল্পও কম মুখরোচক হবে না। ফেসবুক লাইভ বা সংবাদমাধ্যম – সে যাই হোক, সবাই এর গল্প লুফে নিবে।
কিন্তু আমাদের এই সংস্থা নিয়ে এখানে টানাটানি কেন? আমাদের এখানে তো হাত নেই। আমরা তো সত্যি সত্যি মেয়েদের উপকার করার জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। এতই যখন সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার তখন আমাদের সংস্থার কাজ নিয়ে টানাটানি করা কি অন্যায় না?
আমি সুন্দর করে তাকে একটা ইমেইল করে দিলাম। সেখানে বলে দিলাম যে আমরা খুবই দুঃখিত যে তাকে এইরকম দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আমরা তার সাহসিকতার প্রশংসা করছি। তার মতো সাহসী নারীদেরই আমরা খুঁজছি। আমাদের সংস্থা তার সাথেই আছে এবং এই ধরণের গল্প আমাদের প্রকাশ করে জনসচেতনা তৈরী করতে হবে। আর সাথে অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করে দেওয়াও প্রয়োজন। কিন্তু আইনগত বিধিনিষেধ মেনে আমাদের এই প্রজেক্ট শুধুমাত্র অজ্ঞাতনামে গল্প প্রকাশ করতেই সক্ষম। তবে বিশেষ বিবেচনায় আমরা এই ব্যাপারে পুনরায় আইনি পরামর্শ নেবো। আইনগত কোনো বাধা না থাকলেই শুধুমাত্র পরিচয় প্রকাশ করে গল্পটি প্রকাশ করা যাবে। যথাসময়ে সেটা তাকে অবগত করা হবে। Thanks for understanding.
আমার মনেহলো এই মহিলা সহজে আমাদের ছেড়ে দিবেনা। আগামীকালই এই ব্যাপারে লিগ্যাল অ্যাডভাইস নিতে হবে। আর রিদওয়ান ভাইকেও ফর্মাল একটা চিঠি পাঠাতে হবে। বিশেষ কারণে আমাদের সংস্থার সাথে তার কোনো সংযোগ রাখা সম্ভব হচ্ছেনা, এরকম কিছু বলে। এত ঝামেলা আমার ভালো লাগছে না।
এই ভাবতে ভাবতেই টুং করে ইমেইল নোটিফিকেশন পেলাম। অনন্যা রহমান ইমেইলের রিপ্লাই করেছে। এত তাড়াতাড়ি? মহিলা কি ঘুমায় না? ইমেইলে লেখা।
“আগামীকাল এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য আপনার সাথে দেখা করতে চাই। দয়া করে আমাকে একটা অ্যাপয়েনমেন্ট দিবেন। ধন্যবাদ।”
আমি কিছু না চিন্তা করেই জবাব দিয়ে দিলাম,
“আগামীকাল দুপুর দুইটায় আপনি আমার অফিসে চলে আসতে পারেন। ধন্যবাদ।”
আমার মনেহলো কালকে ভোরে ভোরে অফিসে পৌঁছে যেতে হবে। তার সাথে কথা বলার আগে কিছু ব্যাপার জেনে নিতে হবে। আমি ফারাহ আর রুবিনাকেও মেসেজ করে একেবারে সকাল সকাল অফিসে চলে আসতে বললাম। আর সবার প্রথমেই যাতে ডাটা প্রটেকশনের ব্যাপারটা নিয়ে আবার একটু পরামর্শ নিয়ে রাখে, সেটা বলে দিলাম।
ফারাহ আর রুবিনাও মনেহয় জেগে আছে। ওরা সাথে সাথেই রিপ্লাই করে “ওকে” জানিয়ে দিলো।
রাত প্রায় আড়াইটা বাজে। আমার আর আজ ঘুম হবে না। আমার মনেহচ্ছে কী মনে করে রিদওয়ান ভাই নদীকে ছেড়ে এই অনন্যা রহমানের পেছনে ছুটলো? এত ঝামেলার মধ্যেও এই অনন্যা রহমানকে দেখার জন্য আমি প্রবল আগ্রহবোধ করছি।

(চলবে)

মনের নদী বেশি গভীর
(১৫)
অনন্যা রহমান আমার সামনে বসে আছে। মহিলা ফেসবুকের ছবির থেকে বেশি আকর্ষণীয়। এই ব্যাপারটায় আমি কিছুটা বিস্মিত। সম্প্রতি অনেক মহিলাদের ফেসবুকে দেখার পর সামনাসামনি দেখে আমি রীতিমতো হতাশ হয়েছি। সুন্দর, স্লিম, মসৃন ত্বকের, শিশুর সারল্যপূর্ণ মুখশ্রীর ফেসবুকের মহিলাদের সাথে অনেক ক্ষেত্রেই আমি বাস্তবের মহিলাদের তেমন মিল খুঁজে পাইনি। কিন্তু এই অনন্যা রহমান ফেসবুকের থেকে বহুগুন রূপবতী। আমি তার থেকে চোখ সরাতে পারছিনা।
অনন্যা রহমান মনেহয় ব্যাপারটা বুঝতে পারছে। সুন্দরীরা এইসব ব্যাপার আবার ভালো বোঝে। সে এক পায়ের উপর আরেক পা তুলে আমার সামনে বসে এক হাত দিয়ে বার বার চোখের উপর থেকে চুল সরাচ্ছে। অনন্যার পরনে কালো রঙের স্লিভলেস ফর্মাল অফিস ড্রেস। ড্রেসটা লম্বায় হাঁটুর বেশ উপর পর্যন্ত। ওয়াক্স করা মসৃন অনাবৃত লম্বা পা জোড়া তার সৌন্দর্যে বাড়তি আকর্ষণ যোগ করেছে। বারগেন্ডি শেডের রং করা খোলা চুল ঘাড় পর্যন্ত নেমে এসেছে, সামনে আবার ফ্রিঞ্জ কাটা। ঠোঁটে চুলের সাথে মিলিয়ে বারগেন্ডি রঙের লিপস্টিক আর মুখে ন্যাচারাল প্রসাধন। পায়ে কালো রঙের হাইহিল জুতা। তার ফ্লোরাল পারফিউমের সুবাসে ঘরটা ভরে উঠেছে। সাজসজ্জা এবং গায়ের রঙের কারণে অনন্যাকে ঠিক বাংলাদেশি মনে হচ্ছে না।
এই ধরণের কেতাদুরস্ত সাজসজ্জা এদেশের হাই প্রোফাইল কর্পোরেট জগতে দেখা যায়। আমাদের অফিসের এই ছোট্ট রুমটায় অনন্যা একেবারেই বেমানান। আমাদের তো গরীবি হাল। আমরা এর ওর কাছ থেকে ফান্ড চেয়ে কোনোরকমে দেশি চ্যারিটি চালাই। আমরা অফিস করি মোটা কাপড়ের দেশি ফতুয়া বা ঢিলা টপ আর ঢলঢলে একটা ট্রাউজার পরে। অফিসের অর্ধেক মেয়েরা হিজাবি, অনেকের মাথায় ইস্ট লন্ডনের ফুটপাতের দোকান থেকে কেনা এক্সট্রা লার্জ ম্যাক্সি হিজাব অযতনে জড়ানো। আমরা অফিসে বসে বাসা থেকে আনা সিঙ্গারা, চপ, পিঠা দিয়ে চা নাস্তা করি। আমাদের সাজসজ্জার কোনো বালাই নেই। আমরা সাজ-সজ্জার ধার ধারিনা। আমরা নিজেদের মেধা আর শ্রম দিয়ে এদেশে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছি।
আমার এই ধরণের চিন্তা দেখে আমি নিজেই হঠাৎ লজ্জ্বা পেয়ে গেলাম। কেউ সাজগোজ করলেই যে সে কাজে মেধা আর শ্রম দেয়না তা তো না। সাজ-সজ্জা, শ্রম, মেধা এগুলো কোনোটার সাথে কোনোটার সম্পর্ক নেই। আমি নিজেও হালকা সাজগোজ করা, টিপটপ হয়ে থাকা পছন্দ করি। অথচ এই মুহূর্তে আমি আমার সামনে বসে থাকা অতীব সুন্দরী অনন্যাকে দেখে মনেহয় জেলাস। আর সেই হীনমন্যতাবোধ থেকে আমার এই অনুভূতি। আসলে মেয়েদের সৌন্দর্যের একটা ক্ষমতা আছে। আদিম যুগ থেকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার মাথায় মেয়েদের সৌন্দর্যের ক্ষমতার কথা গেঁথে দেওয়া আছে। সেই গেঁথে যাওয়া সৌন্দর্য অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা সবার সবসময় থাকেনা। আমার সামনে বসে থাকা অনন্যা রহমান এই মুহূর্তে আমার আত্মবিশ্বাসের ভীত দুর্বল করে দিয়েছে। আমি তার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। কয়েক মুহূর্তের জন্য। তারপর আবার চোখ ফিরিয়ে এনে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
– চা কফি কিছু দিবো আপনাকে?
– নাহ, আমি ঠিক আছি।
– আমার এক কাপ চা দরকার। আপনি যদি কিছু না মনে করেন আমি পাঁচ মিনিটে আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে আসছি।
অনন্যা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
আমি এক কাপ চায়ের সাথে আমার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে নিয়ে অনন্যার সামনে এসে বসলাম। তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আপনার গল্প আমি পড়েছি। আমি খুবই দুঃখিত। আপনি বোধহয় আরো কিছু বলতে চান?
– আমি আর কিছু বলতে চাই না। আমি শুধু একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে আপনাকে জানাতে এসেছি। আপনারা চ্যারিটির নামে একজন চরিত্রহীন এবং ফ্রড মানুষকে প্রমোট করছেন। এবং আমি যখন তার খবর আপনাদের জানালাম তখন আপনারা তার মুখোশ উন্মোচন করা তো দূরের কথা, তাকে প্রটেক্ট করছেন। As far as I am concerned, রিদওয়ান চৌধুরী আর আপনাদের সংস্থা সবই এক। ভালো মানুষের মুখোশ পরে, ফ্রড করাই আপনাদের কাজ। আর আপনি আর রিদওয়ান চৌধুরী তো বেস্ট ফ্রেন্ডস। আমারই ভুল হয়েছে। আপনাদের এইসব বলে কোনো লাভ হয়নি। আমি রিদওয়ান চৌধুরী আর আপনার চ্যারিটি দুইটার মুখোশই একসাথে খুলে দিবো।
আমি অনেক কষ্টে মুখ খারাপ করা থেকে বিরত থাকলাম। আমি আর রিদওয়ান চৌধুরী বেস্ট ফ্রেন্ডস? রিদওয়ান চৌধুরীর সাথে কে ফষ্টিনষ্টি করেছে? নিজে ফষ্টিনষ্টি করে যখন আর ভালো লাগছেনা তখন রিদওয়ান চৌধুরী ফ্রড হয়ে গেলো আর সে হয়ে গেলো সাধু। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো গিয়ে প্রফেশনাল হিসাবে মনের কথা মুখে বলা যাচ্ছে না। আমি বললাম,
– বুঝাই যাচ্ছে যে আমাদের সংস্থা সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা নেই। আমাদের সংস্থার মুখোশ উন্মোচন নিয়ে আমি মোটেও বিচলিত না। আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আমরা জানি আমরা কী কাজ করেছি। এতে আমাদের লুকোছাপার কিছু নেই। আমাদের সংস্থা থেকে উপকৃত হওয়া মেয়েরাই আমাদের টেস্টিমনি। আপনার একার কথায় তো রাতারাতি আমাদের সব ভালো কাজ খারাপ হয়ে যাবার নয়। যাবেও না।
আমি একটু থেমে আবার বললাম,
– আপনি মনেহয় এই মুহূর্তে ভীষণ অশান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। আপনার সাহসিকতা সত্যি প্রশংসনীয়। আমরা চাই এই ব্যাপারটা নিয়ে কিছু একটা করতে। আপনার এই প্রচারণার ব্যাপারে আমরা আলোচনা করে এক ধরণের সমাধান বের করার চেষ্টা করতে পারি। তবে আপনি এদেশে কাজ করেন আপনি নিশ্চয়ই ভালো মতো জানেন আইনি কারণে কিছু কিছু ব্যাপারে আমাদের হাত পা বাঁধা। যেহেতু এটা একটা রেজিস্টার্ড চ্যারিটি, আমরা কারও মানহানি হতে পারে এমন কোনো তথ্য সরাসরি আমাদের সংস্থার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারবো না। তবে আপনি নিজে কিন্তু অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কাজটা করতে পারেন। আর সেই ব্যাপারে আমরা আপনাকে সাপোর্ট দিতে পারি, আপনাকে প্রমোট করতে পারি। আমরা ইতিমধ্যে আইনি পরামর্শ নিয়েছি। আপনার সাহসিকতা এবং আপনার প্রকাশিত তথ্য প্রমোট করার ব্যাপারে আমাদের কোনো বাধা নেই। আপনি ব্যাপারটা ভেবে দেখতে পারেন।
অনন্যা আমার কথা কী বুঝলো কে জানে। বললো,
– আমার কথা আপনারা প্রমোট করতে পারবেন না। রিদওয়ান দিবে না।
– আমরা তো কারও কথায় চলিনা এখানে। যেটা সত্য সেটা দেখাই আমাদের কাজ। তাছাড়া আপনার allegation এর উপর ভিত্তি করে আপাতত আমাদের সব ধরণের কাজ থেকে রিদওয়ান চৌধুরীর সম্পৃক্ততা সাময়িকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন ইনডিপেন্ট ইনভেস্টিগেশন হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তিনি আমাদের সংস্থার সাথে জড়িত থাকতে পারবে কি পারবেনা।
– আপনি দেখি অনেক চালাক একটা মানুষ। আপনি সরাসরি নিজে কিছু করবেন না। কিন্তু চালাকি করে আমাকে দিয়ে প্রকাশ করিয়ে তারপর সেটা প্রমোট করবেন। সাপও মরলো, লাঠিও ভাঙলো না।
– আপনি এসব কী বলছেন? এখানে আমার কথা আসছে কেন? আমি সরাসরি কী প্রকাশ করবো? এটা তো আমার ব্যক্তিগত কোনো ব্যাপার না।
হঠাৎ করেই অনন্যা কথা ঘুরালো,
– আচ্ছা, আপনি তো তার খুব কাছের একজন মানুষ। আপনার তাকে চার্মিং মনে হয়নি? আপনি কি তার ফাঁদে আটকা পড়েন নি?
আমি একথায় থতমত খেয়ে গেলাম। তবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
– জ্বি, তাকে আমার অবশ্যই একজন চার্মিং মানুষ মনে হয়েছে। ভীষণ চার্মিং। তবে তিনি আমার জন্য কোনো ফাঁদ পাতেননি বা আমি তার ফাঁদে আটকা পড়িনি। আমি কেন আমার সংস্থার মেয়েরা তার সাথে কাজ করেছে। তিনি হয়তোবা প্রেমবাজ বা ফ্রড, কিন্তু আমাদের সাথে প্রফেশনাল সম্পর্ক বজায় রেখে সব কাজ করেছেন।
– আমি কিন্তু সবার কথা বলছিনা। শুধু আপনার কথা বলছি। আমার তো সবসময় মনে হয়েছে তিনি আপনাকে ভিন্ন চোখে দেখেন। একারণেই তো আপনাকে আজ দেখতে এলাম।
কী মুশকিল। এরও তো দেখি নদীর মতো অবস্থা। সে আমাকে দেখতে এসেছে নাকি রিদওয়ান চৌধুরীর কথা প্রকাশ করতে এসেছে? তারপরও আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছা করছে কী কারণে তার এটা মনে হয়েছে। পর মুহূর্তেই আমি সেই ইচ্ছাটা চেপে গেলাম। বললাম,
– আমার এরপর আরেকটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, একটু তাড়া আছে। আপনি আমার কথাগুলো চিন্তা করে দেখতে পারেন। আপনি নিজে কিছু প্রকাশ করতে চাইলে আপনাকে আমরা সাহায্য সহযোগিতা করতে পারবো।
আমার কথা মনেহয় অনন্যার কানে গেলো না। হঠাৎ করেই একটু উদাস হয়ে বলে উঠলো,
– আমি কিন্তু তাকে মন থেকেই ভালোবেসেছিলাম। তার জন্য আমার হাজবেন্ডের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার বাচ্চাগুলোকে আমার হাজবেন্ড এখন আমার থেকে দূরে সরিয়ে ফেলতে চাচ্ছে।
তারপর হঠাৎ করেই আবার সেই উদাস ভাবটা ঝেড়ে ফেলে বলে উঠলো,
– আপনার অনেক সময় নষ্ট করলাম। আমি এখন উঠি তাহলে।
আমি বললাম,
– কী সিদ্ধান্ত নিলেন, জানাবেন প্লিজ। আমরা কিন্তু আপনাকে সহযোগিতা করতে চাই। এতে অনেকের উপকার হবে।
অনন্যা কিছু বললো না। শুধু হালকা করে একটু হাসি দিলো। সেই হাসির মানে আমি ঠিক ধরতে পারলাম না। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে যেই উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে রিদওয়ান ভাইয়ের মুখোশ উন্মোচন করার জন্য অনন্যা রহমান উদগ্রীব হয়ে ছিল, সেই উৎসাহে কোনো এক কারণে এখন ভাটা পড়েছে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here