মনের মাঝে তুমি,০৪,০৫

0
779

গল্পঃ মনের মাঝে তুমি,০৪,০৫
লেখিকাঃ আয়েশা মণি

পর্বঃ ৪

– মিহরাব নেট ওপেন করতেই তার প্রিয় লেখিকার একটি গল্প দেখতে পেল। বেশ কিছুদিন পর তার লেখা পেয়ে মিহরাবের মনটা খুঁশিতে নেঁচে উঠল।

তবে গল্পের নামটা দেখেই একটু খানি ভেতরটা কেঁপে উঠল। গল্পের নাম ছিল ‘হৃদয়ের হুংকার।’
খুব আগ্রহ নিয়ে সে গল্পটা পড়তে লাগল।
গল্প পড়তে পড়তে কখন যে তার চোঁখে জল এসে ঘন পাপড়ি গুলো ভিজিয়ে দিয়েছে টের’ই পায়নি মিহরাব।

এই মেয়েটার গল্প/উপন্যাস গুলো হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
যেন ঘটনা গুলো চোঁখের সামনে ঘটে যাচ্ছে।
বাস্তবতা নিয়ে বেশি লেখে মেয়েটা। অপূর্ব তার লেখার গাঁথুনি। লেখিকার নাম তুবা জান্নাত।
মিহরাব তার বড় এক ভক্ত।

অবশ্য মিহরাব ছাড়াও অসংখ্য ভক্ত পাঠক আছে তার। তার কমেন্ট বক্সে যেন লেখার প্রশংসা মূলক কমেন্ট করার জন্য প্রতিযোগিতা চলে। অথচ মনে হয় লেখিকা তুবা সেই কমেন্ট গুলো কখনো চেয়েও দেখেননি।

বিগত তিন বছর যাবত মিহরাব তার গল্প পড়ছে।
মিহরাবের ঘোর লেগে যায় তার লেখা পড়ার সময়। যখন সে তুবা জান্নাতের লেখা পড়ে, তখন কেউ ডিস্টার্ব করলে মিহরাবের চরম পর্যায়ে বিরক্ত লাগে।

সে তার প্রিয় লেখিকার গল্প ধ্যানে মগ্ন হয়ে পড়ে।
মিহরাবের চোঁখে বর্তমান সকল লেখিকাদের চাইতে বেস্ট লেখিকা তুবা জান্নাত।

আজকের লেখা তুবা জান্নাতের গল্পটা তাকে আরো আকর্ষিত করেছে।কত নিঁখুত ভাবে লেখে মেয়েটা। তার লেখা পড়তে গেলে বুকের ভেতরের আবেগরা ঢেউ খেলতে শুরু করে। চোঁখের অশ্রুরা স্রোতের মত বইতে চায়। মনটা মোমের মত গলে যায়। মস্তিষ্কের আবর্জনা পরিষ্কার হয়ে যায়।

– আজ মিহরাবের খুব ইচ্ছে করছে তুবার সাথে কথা বলতে। বিগত তিন বছরে একটা মেসেজেরও রিপ্লাই দেয়নি তুবা। মিহরাব গুনে দেখলো এ পর্যন্ত ৯৫ টা মেসেজ সে করেছে। কিন্তু তুবা জান্নাত সিনও করেনি। অবশ্য তার অনেক পাঠকদেরও জিজ্ঞেস করেছিলো মিহরাব। সবাই বলেছে সে নাকি কারো মেসেজের রিপ্লাই দেয়না । তাই যা বলার তা কমেন্ট বক্সেই লিখে দেয় পাঠকরা।

তার কমেন্ট গুলো পড়লেই বুঝা যায় কতশত মানুষ তাকে ভালোবাসে। তার এক ইশারায় হয়তো পাঠক গুলো একটা করে কিডনিও দিয়ে দিবে।

কিন্তু মিহরাবের মনে হয় সে আরো অনেক বেশি ভালোবাসে।সেই লেখিকার লেখা তাকে এতটাই যাদু করেছে যে সে শুধু কিডনি নয় জীবনটাই দিয়ে দিতে পারবে।

কিন্তু যাকে এত ভালোবাসে সেই মানুষটার সাথে আজ পর্যন্ত একটা কথাও হলোনা, এটাই মিহরাবের নিকট বড় আফসোস। মিহরাব তাকে কোন বাজে এঙ্গেল থেকে ভালোবাসেনা। সে শুধু তাকে ভালোবাসে একজন গুরু হিসেবে। তবুও এই ভালোবাসার যেন সীমা নেই। ভালোবাসা তো ভালোবাসাই হয়। ভালোবাসতে জানলে প্রেমের সম্পর্ক ছাড়াও অন্যান্য সব সম্পর্ককেও ভীষণ ভালোবাসা যায়।

“ভালোবাসার সীমানা প্রেম পর্যন্তই নয়।
মানুষের ধারনা প্রেম মানেই ভালোবাসা।
প্রেম কে ছাড়া বোধহয় অন্য সম্পর্ক কে ভালোবাসা বলে না। কিন্তু নাহ্ ভালোবাসার অসংখ্য প্রকার আছে। হৃদয় একটা হলেও সেই হৃদয়ের একেক স্থানে একেক জনের জন্য ভালোবাসা রয়েছে। কেউ কারো অংশ ছিনিয়ে নিতে পারেনা। যদি কেউ বলে আমি শুধু একজনকেই ভালোবাসি তাহলে সে ভুল। সে তো ভালোবাসতেই জানেনা। আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) সকল উম্মতকেই কত ভালোবাসতেন। তার ভালোবাসা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পুরো জগত জুড়ে। তাই বলে কারো প্রতি তার ভালোবাসার কমতি ছিলোনা। তার ভালোবাসার প্রতি কারো কোন অভিযোগ ছিলোনা। বরং তার এক বিন্দু ভালোবাসার মূল্য দিতে গিয়ে তার জন্য হাজার বার মৃত্যুকে বরন করলেও তার ভালোবাসার সামান্য মূল্য হবেনা।সুতরাং ভালোবাসা তুলোনা শুধুই ভালোবাসা”।

সেজন্য সেদিক দিয়ে একজন পাঠক হিসেবে মিহরাব প্রচন্ড ভালোবাসে তুবাকে। সে এটাও জানেনা লেখিকা তুবা কেমন বয়সি। সে তার নানুর বয়সি?নাকি খালার বয়সি?নাকি বোনের বয়সি। সে তার সমন্ধে কিচ্ছু না জেনেই তাকে এরকম অন্ধের মত ভালোবাসে। অবশ্য তার এই ভালোবাসার মাঝে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা রয়েছে।

– মিহরাব আজ যে করেই হোক তুবা জান্নাতের সাথে কথা বলবেই। কে সে? যার গল্প পড়লে মিহরাবের ভেতরটা উলট পালট হয়ে যায় সেটা সে জানবেই।

মিহরাব ইশার নামাজ পড়ে ফোন হাতে নিয়ে বেলকুনিতে বসে গেল। তারপর শুরু হলো তার মিশন।
একের পর এক মেসেজ করতেই লাগল। অবশেষে ১ ঘন্টা ৩৭ মিনিট পর তুবা জান্নাত মিহরাবের মেসেজ সিন করলো। তারপর সালাম দিয়ে বলল কে আপনি?এত গুলো মেসেজ কেনো করেছেন?

তুবার মেসেজ পেয়ে মিহরাব খুঁশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। তার হাত এখন কাঁপতে শুরু করলো। সে কি লিখবে বুঝে উঠতে পারছেনা। কাঁপা হাতে লিখলো।
-প্রিয় লেখিকা! আমি আপনার চরম ভক্ত। আপনার লেখা পড়ে বার বার আমি মুগ্ধতার মুগ্ধ বনে পৌঁছে যাই। আমার মনটা ভীষন চঞ্চল হয়ে উঠেছিল আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য, তাই আপনাকে হয়তো খুব বিরক্ত করে ফেললাম। প্লিজ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার কল্পনা তীত ছিলো আপনার সাথে কথা বলা। আমি হয়তো সৌভাগ্যবান যে আমার রিপ্লাই পেলাম।

তুবা নিযেকে খুব সাধারণ কেউ মনে করে। আর তার মত একজন সাধারন মেয়েকে একজন পাঠক এত সম্মান করছে দেখে তুবার চোঁখে জল এসে গেল।
একজন পাঠকের মনে লেখকের জন্য কতটা ভালোবাসা জমা হলে এত অস্থিরতা নিয়ে কেউ মেসেজ করতে পারে তুবার জানা ছিলোনা।

– তুবা মিহরাবের মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে বলল, আমি খুব সাধারণ কেউ। আপনি আমাকে যতটা সম্মান দিচ্ছেন আমি ততটা সম্মানের যোগ্য নই। আসলে আমি কোন ছেলেদের সাথে চ্যাট করিনা তাই হাজার মেসেজ করলেও আমি কাউকে রিপ্লাই দেইনা।

– সেটা আপনার নিরাপত্তার জন্য বেস্ট আইডিয়া।
কিন্তু প্রিয় লেখিকা! আপনার মত মহৎ ব্যক্তির সাথে একটু খানি কথা বলতে আপনার সব পাঠকদেরই মন চায়। তাই আমি অনুরোধ করবো এর পর থেকে একবার হলেও আপনার পাঠকদের মেসেজের রিপ্লাই দিবেন। তবুও তারা শান্তি পাবে।

– সত্যিই আমি খুব দুঃখিত, আমি জানতামনা যে কেউ আমার জন্য এতটা কষ্ট পায়। এরকম জানলে আমি কাউকে কষ্ট দিতামনা।

– আমি জানি প্রিয় লেখিকা, আপনি পূর্নাঙ্গ। আপনার কোন ভুল থাকতেই পারেনা।

– আপনি কিন্তু একটু বেশি বেশিই প্রশংসা করছেন। প্লিজ আমার প্রশংসা করবেননা। সত্যি বলতে আমি খুবই নগন্য একজন আল্লাহর বান্দি মাত্র। এত প্রশংসা করে আমাকে লজ্জা দিবেননা।

– ঠিকআছে আর কিছু বলবোনা,যদিও আমার ভাষা ফুরিয়ে যাবে আপনার প্রশংসা করতে করতে। আপনি যখন চাইছেননা তখন আমি এ বিষয়ে আর কিচ্ছু বলবোনা।

তবে প্রিয় লেখিকা! ছোট মুখে একটা বড় কথা বলি।
ফুল যেখানে আছে ভ্রুমরা সেখানে যাবেই। ফুলের ঘ্রাণ ছড়ালে মানুষের নাকে পৌঁছবেই। কেউ সেটা আটকাতে পারবেনা। ফুল নিযেও না।

তুবা জান্নাত মিহরাবের কথায় মুগ্ধ হয়ে গেল।
তার কল্পনাতীত এই পাঠক।
তার প্রশংসা বাক্যে তুবাকে খুঁশি করানো উদ্দেশ্য ছিলোনা। ছিলো প্রতিটা মেসেজে প্রচন্ড ভালোবাসা আবেগ মিশ্রিত শব্দ।যেটা সে না চাইতেও বলে ফেলছে।

তুবা খুঁশি হবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারলোনা।
আজকের এই সম্মান তার পরম পাওয়া।
এখন থেকে সে আর কোন পাঠককেই বঞ্চিত করবেনা।একবার হলেও মেসেজের রিপ্লাই দিবে।

-মিহরাবের মন চাইছিলোনা তুবার সাথে কথা শেষ করে ডাটা অফ করতে, তবুও এত বড় একজন মানুষের সঙ্গে এত লং টাইম কথা বলে তার মূল্যবান সময় নষ্ট করা ঠিক হবেনা, তাই সে বলল,
প্রিয় লেখিকা! আপনাকে খুব কষ্ট দিলাম।
আজ ফোন রাখছি ইনশাআল্লাহ অন্য সময় কথা বলবো।আসসামুআলাইকুম, শুভ রাত্রী। আল্লাহ হাফেজ।

ওপাশ থেকে তুবা জান্নাত সালামের জবাব দিয়ে ডাটা অফ রেখে দিল।

মিহরাবের বিশ্বাসই হচ্ছেনা যে সে তার প্রিয় লেখিকার সাথে চ্যাট করলো। যার সাথে কথা বলার জন্য তিনটা বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

অনেক রাত পর্যন্ত তার ঘুম হচ্ছিলোনা, বার বার প্রিয় লেখিকার আজকের লেখা গল্পটার কথা মনে পড়ছিলো। অবশেষে রাত ২.২২ মিনিটে একটু সস্থি পেল, আর পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে গেল।

চলবে……..

গল্পঃ মনের মাঝে তুমি

লেখিকাঃ আয়েশা মণি

পর্বঃ ৫

_ এক সপ্তাহ পর!

আজ মিহরাব আর তাবিয়ার এঙ্গেজমেন্ট।
তাহিয়া সকাল থেকেই সব কাজ কমপ্লিট করে রেখেছে। তারপর তার পছন্দের বসার স্থান, পেছনের বারান্দায় গিয়ে বসে বসে হাতে মেহেদী লাগাচ্ছে।
কেনো জানি আজ খুব সখ হলো হাতে মেহেদী পরতে।

তাছাড়া এখন হাতে কোন কাজ নেই,পুরো বাড়ি জুড়ে গেস্ট ভর্তি। এই মূহুর্তে বাড়িতে ভেতরে থাকার চাইতে এখানেই বেস্ট জায়গা।

তাই টিপটিপ করে মেহেদী পরল। মেহেদী পরা শেষ হলে তাহিয়া উঠে দাড়াল নিযের রুমে যাওয়ার জন্য।

এদিকে মিহবার ঘুরতে ঘুরতে পেছনের বারান্দায় এসে গেল। তাহিয়া বুঝতেই পারেনি তার পেঁছনে কেউ আছে। এক দমকা বাতাসে তার চুল গুলো এলোমেলো করে দিল। চোঁখের উপর এলো চুল গুলো পরে যাওয়াতে সে কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছেনা। হাতে মেহেদী থাকার কারনে ঠিকও করতে পারছেনা। চোঁখের উপর থাকা চুল গুলো সে হাতের পিঠের অংশ দিয়ে সরাতে সরাতে নিযের রুমের দিকে পা বাড়াতেই মিহরাবের সাথে ধাক্কা খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিলো।

তাহিয়াকে পড়ে যেতে দেখে মিহরাব তাহিয়াকে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল। আর তাহিয়ার ডানায় টান মেরে উঠালো। কিন্তু তাহিয়া নিযেকে কন্ট্রোল করতে না পারাতে তার মাথা আর মুখ ধুপ করে গিয়ে পড়ল মিহরাবের বুকের উপর। হাতের সব মেহেদী লেপ্টে গেল মিহরাবের পাঞ্জাবীতে।

মিহরাব এই পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। কিন্তু তাহিয়াকে সাহায্য না করলে সে পড়ে গিয়ে মাথাটা ফেটে যেতে পারত। তাই এতটুকু সাহায্য করাতে কোন ভুল হয়নি।

– মিহরাব এবার আলতো করে তাহিয়ার মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে কানের পেঁছনে গুজে দিল।
তাহিয়া চোঁখ মেলে তাকিয়ে সামনে এরকম একটা সুদর্শন পুরুষ দেখে ৮০০ বোল্ডের শকট খেল। সে ভাবতেই পারেনি এখানে অন্য কোন মানুষ আসবে।
ভেবেছিলো বাসার’ই কেউ হবে।

কিন্তু এখন মিহরাবকে দেখে সে ভয় পেয়ে গেল। যদিও সে এখন অব্দি জানেনা এটাই সেই ছেলে যার সাথে তাবিয়ার বিয়ে হতে চলেছে।

– তাহিয়া ভয়ে চোঁখ গুলো বড় বড় করে কোনমতে বলল সরী তারপর ভৌঁ দৌড় দিল।

মিহরাবের পঞ্জাবী নষ্ট হওয়াতে সে একটু রেগে গিয়েছে,তবে তাহিয়ার ভয় পাওয়া দেখে সে একটা রাগ মিশ্রিত হাসি দিল।

– মিহরাবের হাসি শেষ না হতেই পেঁছন থেকে তাবিয়া বলে উঠল, বাহ্! দারুন রোমান্টিক সিন। এগুলোতো সিনেমাতে দেখেছি। বাস্তবেও যে এতটা রোমান্টিক মূহুর্ত আসে জানতামনা।

– মিহরাব বলল, তাবিয়া তুমি যা ভাবছো তা নয়, আসলে মেয়েটি পড়ে যাচ্ছিলো তাই আমি তাকে হেল্প করেছি। আমি তো এটাও জানিনা সে কে?

– জানেননা? নাকি আমার কাছে লুকাচ্ছেন?
সেদিন আমিই আমার বড় বোনের ফোন থেকে আপনাকে ওসব মেসেজ পাঠিয়ে ছিলাম। আর তখন আপনি যদিও খারাপ বিহেভ করেছেন পর মূহুর্তে হয়তো আমার ডাইনি বোন আপনাকে পটিয়ে নিয়েছে।আর না হয় আপনি তাকে পটিয়েছেন। সেদিন আমার ভুল হয়েছে,তার ফোনে নাম্বারটা দেওয়া। জল যে এত দূর গড়াবে জানতামনা। ছিহ্, আপনাকে আর আমার বড় বোনকে কত সাধু ভাবতাম। আর আপনারা এত জঘন্য, এত দুঃশ্চরিত্র যে দিনের বেলাতেই এসব করছেন।

– মিহরাবের রাগ চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল। সে শরীরের সব শক্তি খাটিয়ে তাবিয়ার গালে এক চড় বসিয়ে দিয়ে বলল ব্যস। বেয়াদব মেয়ে, আমার সামনে দাড়িয়ে আমারই ব্যাপারে এত বড় বড় কথা বলার সাহস হয় কি করে তোমার?

– মিহরাবের গর্জনে পুরো বাসার সবাই একত্র হল।
ততক্ষণে তাবিয়ার গালে হাতের পাঁচটা আঙ্গুলের ছাপ উঠে গেছে। গালটা ফুলে ঢোল। সে গালে হাত দিয়ে কাঁদছে।

সাফা বেগম দৌড়ে এসে মেয়েকে ধরে বলল, আমার হিরের টুকরো, সোনা মা। তোর কি হয়েছে কাঁদছিস কেনো?

– তাবিয়া, নিযের মাকে কাছে পাওয়াতে সাহস বেড়ে গেল। সে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল, মা! এই ছেলেটা খুব খারাপ। তাকে আমি কক্ষনো বিয়ে করবোনা। সে আমাকে বিয়ে করে রাত কাটাবে অন্য মেয়েদের সঙ্গে।

– তাবিয়ার এসব বাজে কথা শুনে আহমাদ সাহেব বললেন। এই মেয়ে! কি বলছো এসব? আমার ছেলের সমন্ধে এত বাজে কথা কি করে বলতে পারো?

– আমি নিযের চোঁখে দেখেছি, সবার চোঁখে ফাকি দিয়ে আপনার ছেলে এই নির্জন স্থানে এসে আমার বড় বোনের সঙ্গে খুব জঘন্য কাজে করছিলো।

তাবিয়ার মুখে এই কথা শুনে সব গেস্টরা মুখ ঘুরিয়ে নিল। আহমাদ সাহেব বললেন, আমার ছেলে মোটেও সেরকম কিছু করতে পারেনা। আমার বিশ্বাস আমার ছেলে পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ। বাবা! তুই বল, তাবিয়া যা বলছে সব কি সত্যি?

– না বাবা! তুমি অন্তত বিশ্বাস করো আমি এসব কিচ্ছু করিনি। আমিতো ঘুরতে ঘুরতে এখানে এসে গেছিলাম।

সাফা বেগম বললেন, আমি বুঝে গেছি এগুলো সব কার চাল। কথাটা বলেই সে হনহন করে তাহিয়ার রুমে গেল। আর সেখানে গিয়ে দুম করে তাহিয়ার চুলের মুঠো ধরে ধাপুসধুপুস পিঠে কতগুলো কিল বসিয়ে দিল।

সাফা বেগমের পেঁছন পেঁছন সবাই এসে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। তাবিয়া বলল ছিহ্ আপু, তোকে তো আপু ডাকতেও লজ্জা করছে। তুই আমার হবু বরের সঙ্গে এসব করলি?

– আমি কিচ্ছু করিনি বোন, তুই ভুল বুঝছিস।

– আমি নিয চোঁখে দেখেছি তুই আর সে যা যা করলি।
তুই এত নিচ? এত চরিত্রহীন? যে ছোট বোনের হবু বরের সঙ্গে এসব করলি? এতই যখন জ্বালা তখন গোপনে কেন করছিস? পতিতালয়ে যেতিস।

– এবার তাহিয়ার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেল। সে মাটিতে বসে গিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল।

তাহিয়ার কান্না দেখে মিহরাবের খুব কষ্ট হতে লাগল।
অহেতুক মেয়েটাকে কত অপমানিত হতে হল।
মনে মনে বলল ছিহ! কত জঘন্য এদের মা-মেয়ের চিন্তা ভাবনা।

গেস্টরা সবাই ছি,ছি করে চলে যাচ্ছিলো।
সাফা বেগম সবাইকে বাঁধা দিতে লাগল।

এতক্ষণ মারুফ সাহেব চুপ ছিলো,তাকে বোধহয় সকাল থেকেই কোন তাবিজ ভেজানো পানি খায়িয়ে সাফা বেগম বস করে রেখেছেন। তাইতো বাবা হয়েও মেয়ের উপর এত অত্যাচার অবিচার দেখেও চুপ ছিলেন। এবার যখন মুখ খুললেন। তখন নিযের মেয়ের জন্য নয় তাবিয়ার শুপারিশের জন্য সে বললেন, বাবা মিহরাব! আমার মেয়ে তাবিয়ার অল্প বয়স। সে না হয় ভুল করে ফেলেছে।তোমাকে ভালোবাসে তো তাই তোমার সঙ্গে তাহিয়াকে দেখে সহ্য করতে পারেনি। তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। আর চলো এঙ্গেজমেন্ট ভালোভাবে করে ফেলি। যা হবার তো হয়েই গেছে। ভুলে যাও এসব।

– নাহ্,আমি আর এক মূহুর্তও এ বাড়িতে দাড়াবো না।
এরকম ডেঞ্জারাস মেয়ে আমার বউ আর এরকম ডেঞ্জারাস মহিলা আমার শ্বাশুড়ি হতে পারেনা।

– চলো বাবা – চলো মা, বাসায় ফিরে যাই।
মিহরাব আর তার বাবা মা চলে যাচ্ছিলো, গেইটের সামনে যেতেই সাফা বেগম বলল যাও যাও! তুমি না হয় বিয়ে করতে পারবে। কিন্তু এই পতিতাকে,(তাহিয়াকে উদ্দেশ্য করে) কে বিয়ে করবে?
সারা জীবন এই কলংকের বোঝা মাথায় নিয়ে বাঁচতে হবে।

মিহরাব দাড়িয়ে গেল। তার কানে ভেসে এল তাহিয়ার কান্না। মেয়েটি এখনো ডুকরে কাঁদছে। সত্যিই মেয়েটার সাথে আজ বড় অন্যায় হলো।

– মিহরাব কে দাড়াতে দেখে সাফা বেগম খুঁশি হলেন।
সে ভেবেছে মিহরাব তাবিয়ার জন্য দাড়িয়েছে।
কিন্তু সে ভাবতেও পারেনি মিহরাব এখন কি বলবে।

– মিহরাব বলল বাবা!মা! ভেতরে চলো।
আদিবা বেগম আর আহমাদ সাহেব দুজনেই সঙ্গে বললেন কেনো?

– আমি তাহিয়াকে বিয়ে করবো। আর আজ’ এক্ষুনি।
সবাই মিহরাবের কথা শুনে থমকে গেল।

– মিহরাব তার পরিচিত একজন কাজীকে ডাকল।
আধ ঘন্টার মধ্যেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হল।
তাহিয়া তো নিযের মধ্যে নেই, সে কাঁদতে কাঁদতে বিভোর হয়ে গেছে। পরিস্থিতির স্বিকার হয়ে সেও কবুল বলতে বাধ্য হল।

পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে গেল।
স্বামী -স্ত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হলো
মিহরাব আর তাহিয়া।

কে জানতো আজ এতকিছু ঘটে যাবে?
সবই আল্লাহর ইচ্ছা।

– কারো মুখে কোন কথা নেই। তাহিয়ার পরনে যে কাপড় ছিলো সে কাপড়েই মিহরাব বলল চলো তাহিয়া।

মিহরাব তাহিয়ার হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিল।
তারপর তাবিয়ার সামনে গিয়ে বলল মেয়ে, তুই দেখে নিস। যে পর্যন্ত না তুই সহীহ মনে তাওবাহ পড়বি, তার আগে তুই ভালো জীবন পাবিনা। আজকের এই লাঞ্চনা তোকে বারবার পেতে হবে। তোর মনটা পাপে ভরা বলেই তোর মস্তিষ্ক খারাপ চিন্তাই করে।

তারপর সাফা বেগমের সামনে গিয়ে বলল, আপনি মা নয়, মা নামের একটা ডাইনি। যে অন্যের ক্ষতি করতে চায় সে ক্ষতি তারই হয়। এই মেয়ের জন্য চোঁখের পানিতে আঁচল ভিজবে একদিন। শুধু সময়ের অপেক্ষা করুন।

এবার মারুফ সাহেবকে লক্ষ্য করে বলল, এই যে মেয়ের বাবা! আপনাকেও আল্লাহর নিকট জবাব দিতে হবে। হক আদায় না করে বোবা থাকার জন্য।

সবাইকে মুখের উপর এই কথা গুলো বলে মিহরাব গাড়িতে গিয়ে বসল। আর সঙ্গে নতুন অচেনা কাউকে নিয়ে নিযের বাড়ির দিকে রওয়ানা হল।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here