মনে_রেখো_এই_আমারে,পর্বঃ ০২

0
481

#মনে_রেখো_এই_আমারে,পর্বঃ ০২
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা(লেখিকা)

সবকিছু শেষ করে মাত্রই বাসায় এসেছে আবেশ। সারাদিননের ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে, কিন্তু এতোকিছু বাইরে থাকার কারণে ফ্রেশ না হয়ে ঘুমানো যাবে না, আর সারাদিনের কাজের জন্য কিছু খাওয়া ও হয়নি।

ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে একটা ডিম ভেজে নিয়ে ফ্রিজে রাখা পাউরুটি গরম করে নিলো। আপাতত তার এতেই হবে,পরে রাতে নাহয় ভাত তরকারি রান্না করবে।

খাওয়া শেষে আবেশ সবে বিছানায় গা এলিয়েছে, তখনি তার ফোন বিকট চিৎকার করে বেজে উঠলো। দরপরিয়ে উঠে বসে কল রিসিভ করে কানে নিতেই, পরশ ওপাশ থেকে তড়িমড়ি করে বললে–

স্যার আপনি যাওয়ার আধা ঘন্টা পরে একটা ঘটনা ঘটে গেছে, আমিও অফিস থেকে বেরিয়েই যাচ্ছিলাম তখন পুলিশ ইন্সপেক্টর হাসান ফোন দিয়ে বলেন- থানায় না একটি মেয়ে এসেছে, আর সে বলছে ফারুক মির্জা ও তার পরিবারকে নাকি সেই বিষ মিশিয়ে মেরেছে। আমি থানার দিকেই যাচ্ছি স্যার আপনি ও তারাতারি থানায় আসেন।

ঠিক আছে তুমি রাখো আমি এখনি আসছি।

বিছানা থেকে উঠে আলমারি থেকে অফিসিয়াল শার্ট প্যান্ট পড়ে ড্রয়ার থেকে পিস্তল বের করে কোমড়ে গুজে নিয়ে ওয়ালেট গাড়ির চাবি পকেটে নিয়ে একছুটে বেড়িয়ে ফ্লাটের দরজা লক করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো আবেশ। তার মধ্যে উত্তেজনা কাজ করছে, বারবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগছে- মেয়েটি কে? আর কেনোই বা থানায় এসে নিজের করা কর্মের কথা বলছে, আজকাল কেউ নিজের করা একটা সামান্য অন্যায় ও স্বীকার করে না সেখানে মেয়েটি এসে নিজের করা খুনের কথা বলছে। স্ট্রেঞ্জ!

~ হুর মুর করে থানায় প্রবেশ করলো আবেশ, ইন্সপেক্টরের সাথে পরশ ও বসে ছিলো। সম্ভবত তারা এই মেয়েটিকে নিয়েই আলোচনা করছিলো,

তাদের দিকে আবেশ এগিয়ে যায়। ইন্সপেক্টর সম্মান বিনিময় শেষে আবেশ কে বসতে বলে, একজন লেডি পুলিশ কে বলেন মেয়েটিকে নিয়ে আসতে।

পাঁচ মিনিট পর মেয়েটিকে নিয়ে আসা হলো তাদের সামনে। আবেশ একদৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। এতো সুন্দর মেয়ে কিনা খুন করেছে! মেয়েটিকে দেখেই তো আবেশের মনে হচ্ছে এই মেয়েটি কখনো একটা মশাও মেরে দেখেনি, এতো নিষ্পাপ দেখতে লাগছে মেয়েটিকে।

পরশের ডাকে আবেশ ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে। অতপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটা চেয়ার টেনে বললো বসো।

মেয়েটি দপ করে পাথরের মতো বসে পরলো। কেমন অনুভূতি শূন্য লাগছে দেখতে।

এতোক্ষণ পরে আবেশ মেয়েটির মুখ থেকে নজর সরিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। পরনে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, চুল গুলো হাটুর মাঝামাঝি লম্বা। মুখে কোনো প্রশাধনির ছাপ নেই। কেমন মলিন হয়ে আছে মুখ। ঠোঁটের কোণে রক্ত লেগে আছে, গালে আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট।

আবেশ আবারও মেয়েটির মুখের দিকে তাকালো, তারপর প্রশ্ন করলে- কি নাম আপনার?

মেয়েটি আবেশের প্রশ্নে মুখ তুলে তার দিকে তাকালো, সোজাসাপটা উত্তর দিলো– আমি জহুরা! জহুরা মির্জা, ফারুক মির্জার একমাত্র কন্যা।

জহুরার উত্তর শুনে পাশাপাশি চেয়ারে বসা তিন জনের চোখ বিস্মিত হলো। আবেশ কয়েক সেকেন্ড পরে বিস্ময় ভাব কাটিয়ে আবারও প্রশ্ন করলো– আপনি নিজের বিরুদ্ধে যে কথা গুলো ইনস্পেক্টর কে বলেছেন সেগুলো সত্যি?

মলিন হেসে জহুরা বললো– হ্যা সত্যি। আমিই খুন করেছি আমার পরিবারকে আমার পরিবারের সবাইকে। বিষ মিশিয়ে মেরে পেলেছি তাদের।

জহুরার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে আবেশ উঠে দাড়ালো তারপর ইন্সপেক্টরের দিকে তাকিয়ে বললে– আমি জহুরাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসা বাদ করবো, তাই আপনার কয়েকজন লেডি পুলিশে বলুন জহুরাকে নিয়ে আমার গাড়িতে তুলতে, গোয়েন্দা অফিসেই ওকে আমি যা জিজ্ঞাসা করার করবো।

বলেই আবেশ জহুরার দিকে এক পলক তাকিয়ে বের হয়ে গেলো।

আবেশের কথা মতো দুজন লেডি পুলিশ জহুরাকে নিয়ে গাড়ির পেছনে বসলো, পরশ সামনে আবেশের পাশের সিটে বসলো, ফ্রন্ট আয়নায় জহুরাকে কয়েক সেকেন্ড দেখে আবেশ গাড়ি স্টার্ট দিলো উদ্দেশ্য গোয়েন্দা অফিস।

___________

আবেশের চোখে ঘুম নেই, বারবার জহুরার প্রতিচ্ছবি তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সে হাজার চেষ্টা করও জহুরাকে ভুলতে পারছেনা। তার কাছে নিজের মায়ের পরে জহুরাকে তার দেখা সবচেয়ে পবিত্র ও স্নিগ্ধ রমণী মনে হয়েছে। এতো সাক্ষাৎ যেনো আকাশের পরী। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই আবেশের চোখে ঘুম নেমে এলো, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

সকাল দশটা পনের মিনিট। অন্ধকার জেলের ভিতরে মুখোমুখি বসে আছে আবেশ ও জহুরা। আবেশ কয়েক মিনিট জহুরাকে দেখলো, তারপর বললো– কেন নিজের নামে মিথ্যা কথা বলছেন জহুরা? আপনার চোখ বলে দিচ্ছে আপনি নির্দোষ। তবে কেন কিছু বলছেন না? আপনি আমাকে সব কিছু বলুন, আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করবো আমি, আপনি শুধু একবার সত্যি কথাগুলো বলুন

জহুরার ভীষণ কান্না পাচ্ছে, সে চায়না কাউকে কিছু বলতে, সবাই প্রতারক সবাই বেইমান।

সুজন কীভাবে মারা গেছে জহুরা?

আমি জানিনা

আপনি তো তাকে ভালোবাসতেন, আপনার ভালো বাসার মানুষ মারা গেছে আর আপনি কিছুই জানেন না, সত্যিই আপনি সুজনকে ভালোবাসতেন তো!

বাঘিনীর ন্যায় গর্জে উঠে জহুরা– কে বলেছে সুজন মারা গেছে, সব মিথ্যা সব! সুজন মারা যায় নি সেদিন ইচ্ছাকৃত ভাবে এরকম বানোয়াট নিখোজ হওয়র অভিনয় করে একটা লাশ পাটিয়ে দিয়েছিলো যাতে সবাই মনে করে ও মারা গেছে।

আর কি বললেন, আমি ভালোবাসি নি? আমি ভালোবেসেছিলাম তাই এভাবে ঠকেছি, সুজন আমাকে কখনো ভালোবাসে নি! ভালোবাসলে কখনো ধোঁকা দিতে পারতো না, কখনো না কখনো না!

আপনার কেন মনে হচ্ছে সুজন আপনাকে ভালোবাসে নি? আর আপনি কীভাবে জানেন সুজন মারা যায়নি, প্ল্যান করে সব করেছে?

জহুরা কিছু না বলে চুপ করে রইলো, জহুরাকে চুপ থাকতে দেখে আবেশ শান্ত কন্ঠে বলে,

আপনি যদি আমাকে সব কিছু না বলেন তাহলে আমি কীভাবে কেস solve করবো, বলুন? আমার আপনার সাহায্য লাগবে, প্লিজ চুপ করে থাকবেন না, জহুরা বলুন কি হয়েছিল আপনার সাথে বলুন জহুরা

আমি এখন আপনাকে কিছু বলতে পারবো না, আমাকে সময় দিন আমি নিজেই সব বললো, ততক্ষণ আপনি আপনার কাজ করুন, সব যদি আমিই বলে দিই তাহলে কেস solve করতে মজা পাবেন না,

ঠিক আছে জহুরা, আমি অপেক্ষা করবো তোমার মুখ থেকে সব সত্যিটা শুনার জন্য, জানো জহুরা আমি আজ পর্যন্ত কোনো আসামির সাথে এভাবে কথা বলিনি, টর্চার করে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সব বলতে বাধ্য করি, তুমিই প্রথম যার প্রতি আমি কঠোর হতে পারছিনা, আমি কাঙ্ক্ষিত সময়ের জন্য অপেক্ষা করবো, তুমি যত তারাতারি সম্ভব নিজেকে প্রস্তুত করো, তুমি যদি কিছু না বলো তাহলে আমি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে নিজের টেকনিক অনুযায়ী মুখ খুলতে বাধ্য করবো,

ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেন অফিসার, আপনি চাইলে আমাকে এখনি নিজের টেকনিক অনুযায়ী মুখ খুলতে চেষ্টা করতে পারেন, নাকি আমার প্রেম পরে গেলেন বলে পারছেন না! বাঁকা হেসে বলে জহুরা

আবেশ কয়েক সেকেন্ড জহুরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ঠান্ডা গলায় বলে,

আমার কাছে সবার আগে আমার দায়িত্ব, আমার কাজের জন্য যা করা প্রয়োজন আমি সব কিছু করবো, সেটা হোক না ইচ্ছার বিরুদ্ধেই, আবেশ এহসান কখনো দায়িত্ব ও কাজে হেলাফেলা করে না, আসি ভালো থাকবেন, আর হ্যা দুই দিনের মধ্যে আপনি যদি কিছু না বলেন তাহলে কীভাবে কথা বের করতে হয় সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি, সো গুড বাই।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here