#মনে_রেখো_এই_আমারে,পর্বঃ ০৩
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা (লেখিকা)
অন্ধকার জেলের মধ্যে চেয়ারে বসে আছে জহুরা। তারই মুখোমুখি চেয়ারে বসে জহুরার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে আবেশ। আজ দুইদিন পর সে জহুরার সামনে এসেছে। দুইদিনে সে অনেক কিছুরই খোজখবর নিয়েছে, এমনকি সুজনকে ধরতে ও সক্ষম হয়েছে। সুজনকে আপাতত অন্য জেলে রাখা হয়েছে জহুরার মুখ থেকে সব কিছু শুনে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, আর বুজাও জাবে কে আসল অপরাধী। যদিও সুজন স্বীকার করেছে সে মির্জা পরিবারের সকলকে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে হত্যা করেছে।
নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে জহুরার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো- কেমন আছো জহুরা?
জহুরা আবেশের দিকেই তাকিয়ে ছিলো, সময় বিনিময় না করে আবেশের দিকে তাকিয়েই প্রতুত্তর করলো– আমি তো খুবই ভালো আছি অফিসার, আমি জানি আপনি আমার কাছে সবকিছু জানার জন্যই এসেছেন, আমি ও আপনাকে বলতে চাই, সব বলতে চাই,,,
হ্যা বলুন জহুরা, সব কিছু খুলে বলুন আমাকে– অধিক আগ্রহ প্রকাশ করে বলবো আবেশ।
পাশ থেকে পরশ ও সায় দিয়ে বললো- হে জহুরা প্লিজ বলুন, আমিও শুনতে চাই,,
চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে জহুরা আবেশের দিকে একবার তাকিয়ে বলতে শুরু করে,,,,,,,,,,,,
আমি যখন ছোট তখন থেকেই রহিমা খালা আমাদের বাড়িতে কাজ করতেন, উনার স্বামী ও ছিলেন একজন বিশ্বস্ত ড্রাইভার। তাদের ছেলে সুজন প্রায়ই বাড়িতে আসতো, আমার সাথে খেলতো ঘুরতো, এভাবেই আমরা একসময় ভালো বন্ধু ও উঠেছিলাম, আস্তে আস্তে আমরা বড় হই সেই সাথে সম্পর্কের নাম ও পরিবর্তন হয়, আমরা বন্ধু থেকে হয়ে উঠি প্রেমিক-প্রেমিকা! বাবা প্রায়ই আমাকে মানা করতেন সুজনের সাথে বেশি না মিশতে কিন্তু আমি শুনতাম না। এরই মধ্যে একদিন ড্রাইভার কাকা মানে সুজনের বাবা এক্সিডেন্টে মারা যান। তখন রহিমা খালা অনেক ভেঙে পড়েন, সুজন ও এরপর থেকে তেমন আমার সাথে কথা বলতো না কেমন একটা দূরত্ব নিয়ে থাকতো। এভাবেই কয়েকটা দিন কাটার পর খবর আসে সুজন নিখোঁজ, পড়ে লাশ ও আসে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি ওটা সুজনের লাশ। যখন আমি লাশের কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে আসছিলাম, তখন আমার বাবার ঘর থেকে কিছু কথা শুনতে পাই, ঘরের ভিতর বাবা আর ভাইয়া ছিলেন, তারা সুজনের মৃত্যু নিয়ে কথা বলছিলেন আর হাসছিলেন। তারা নাকি সুজনকে প্লেন করে মেরে পেলেছেন, এটার মুলত তাদের কথা ছিলো, সেসব শুনার পড়ে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিলো, পরে কয়েকদিন নিজেকে সবার থেকে আড়াল করে রেখেছি, নিজ মনে সিদ্ধান্ত নেই আমি আর এই বাড়িতে থাকবো না, রাতের আধারে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম। আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সুজনের খুনিকে কখনো আমি বাঁচতে দিবো না। আমি পালিয়ে ঢাকার মিরপুরে এসে একটা ফ্লাটে উঠি। তারপর দিন পার হওয়ার সাথে নিজেকে ও প্রস্তুত করতে থাকি সুজনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার। কিন্তু আমি কিছু করার আগেই খবর পাই আমার পরিবারের সবাইকে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে, আমি তখন কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না, তার মধ্যেই সেদিন রাতে সুজন আমার ফ্লাটে আসে আর বলে সে আমাকে কিছু বলতে চায়। আমি তো সুজনকে দেখে খুবই অবাক হয়েছিলাম, কিন্তু পরে আবার খুশি ও হয়েছি আমার সুজন তাহলে মারা যায়নি, বেঁচে আছে। সেদিন সুজন আমাকে যা বলেছিলো সেসব শুনে আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিলো, সুজন বলেছিলো,,,,,,,,,,,,
আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই জহুরা, তুমি জানতে চায়না তোমার পরিবারের সবাইকে কে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে হত্যা করেছে? তুমি জানতে চায়না আমি কিভাবে বেঁচে আছি?
হে সুজন আমি জানতে চাই, আমি সব জানতে চাই, তুমি বেচে আছো কিভাবে, আর তোমার যে লাশ পাওয়া গেছিলো সেটা কি ছিলো
জহুরা আমার বাবা এক্সিডেন্টে মারা যান নি, আমার বাবাকে তোমার বাবা মেরে পেলেছেন, তোমার বাবা অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন, সবার সামনে তিনি ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে থাকতেন। তোমার বাবার অবৈধ ব্যবসার কথা আমার বাবা জানতে পেরে, তোমার বাবাকে এসব ছেড়ে দিতে বলে ছিলেন, আর এ ও বলেছিলেন পুলিশের কাছে সব স্বীকার করতে, তাহলে হয়তো তিনি শাস্তি কম পাবেন, কিন্তু তোমার বাবা ফারুক মির্জা আমার বাবার কথা না শুনে আমার বাবাকে টাকার লোভ দেখিয়েছেন, আমার বাবা তোমার বাবাকে হুমকি দিয়েছিলেন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ না করলে তিনি তোমার বাবার অবৈধ ব্যবসার কথা সব বলে দেবেন। তখন তোমার বাবা কিছু না বললে ও মনে মনে আমার বাবাকে কিভাবে নিজের পথ থেকে সরাবেন সেটা নিয়ে প্লেন বানাচ্ছিলেন। এর পরের দিনই তোমার বাবা আমার বাবার গাড়ি নিজের লোক দিয়ে এক্সিডেন্ট করিয়ে আমার বাবাকে মেরে ফেলেন, সেটা আমি আমার বাবার মৃত্যুর দুইদিন পর জানতে পারি, তোমার বাবা আর ভাই এর গোপন মিটিং আমি শুনে পেলেছিলাম, তারপর থেকেই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি আমি আমার বাবার খুনিদের শাস্তি দিয়েই ছাড়বো।
তারপর নিজে নিখোজ হয়ে, একটা তেতলানো মুখের ডেট বডি পাটিয়ে সবাইকে বিশ্বাস করাই যে আমি মারা গেছি, ডাক্তার কে টাকা দিয়ে ডিএন এ টেষ্ট ও পাল্টে দেই। তারপর এভাবেই কয়েক মাস কেটে যায়। আমি মায়ের সাথে যোগাযোগ করি, তাকে সব বলি, মা চাইছিলেন না আমি প্রতিশোধ নেই তাই বাধ্য হয়ে ছদ্মবেশ নিয়ে কাজের লোক হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে খাবারে বিষ মিশিয়ে দেই।
আর বাকিটাতো তুমি জানোই।
আমার বাবা ভাই দুষ করেছেন, কিন্তু বাকি সবাই কি দুষ করেছে সুজন তুমি তাদের ও কেন মারলে,,
কারণ তারা সবাই তোমার বাবার কৃতকর্মের কথা জানতো, কিন্তু জেনেও কোনো প্রতিবাদ করেনি, একমাত্র তুমি ছিলে যে কিছু জানতে না,,
তুমি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করো সুজন, পুলিশ তোমাকে যা শাস্তি দিবে তা মাথা পেতে নিবে, আমি ততোদিন তোমার জন্য অপেক্ষা করবো,,
না জহুরা তা কখনো হবে না, আমি কখনোই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবো না,, চলো তুমি আর আমি লুকিয়ে চলে যাই এদেশ ছেড়ে অনেক দূরে যেখানে কেউ আমাদের জানবে না চিনবে না, যাবে জহুরা আমার সাথে
না সুজন সেটা সম্ভব না, পুলিশ যদি একবার জানতে পারে আমার পরিবারের সবাইকে তুমি খুন করেছো তাহলে তোমাকে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করবে, তুমি প্লিজ আত্মসমর্পণ করো,,,
না জহুরা আমি আত্মসমর্পণ করবো না, তুমি কি আমাকে ঘৃণা করো, করলো করতে পারো, আমি তোমার পরিবারের সবাইকে খুন করেছি তা আমি স্বীকার করছি কিন্তু কেন মেরেছি সেটাতো তোমাকে বললাম জহুরা তারপরেও তুমি আমাকে আত্মসমর্পণ করতে বলছো,,
হে বলছি কারণ তুমি খুন করেছো, তার শাস্তি তো তোমাকে ভুগ করতেই হবে।
না জহুরা আমি কখনোই আত্মসমর্পণ করবো না, আমি চেয়েছিলাম তোমাকে নিতে অনেক দূরে চলে যেতে, কিন্তু তুমি হয়তো আমাকে চাও না, ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না ভালো থেকো আসি,,
এরপর,,,,
এরপর কি জহুরা– উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করে আবেশ,,
এরপর সুজন চলে যায়, তখন আমার মনে হয়েছিলো আমি জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল করে ছি সুজনকে ভালোবেসে, ও শুধু নিজের সার্থি বুঝলো আমার কথা একবার ও ভাবেনি। তখন আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই যে করেই হোক আমি সুজনকে ওর অপরাধের শাস্তি দেওয়াবই, এরপরে,,,,,,
চলবে,,,,,,