মন গহীনে,পর্ব-২৬,২৭

0
2316

মন গহীনে,পর্ব-২৬,২৭
সামান্তা সিমি
পর্ব_২৬

তুষার ভাইয়ার এমন আচমকা আগমন দেখে সবাই ভড়কে গেছে।সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে ফুপি।হালকা ধমকের সুরে বললেন,

” এত আওয়াজ তুলে দরজা খোলা লাগে?আয় ভেতরে আয়।”

তুষার ভাইয়া শান্ত ভঙ্গিতে ইয়াসির ভাইয়া যেখানে বসেছেন তার বিপরীত সোফায় বসে পড়লেন।মৃদু হেসে বললেন,

” কি খবর ইয়াসির! আছো কেমন?”

” আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?”

” বেশ ভালো।মেয়ে দেখতে এসেছো বুঝি?”

তুষার ভাইয়ার প্রশ্নের ধরণ শুনে ইয়াসির ভাইয়া বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন।সাথে উনার বাবা মা ও।কিন্তু তুষার ভাইয়ার চেহারা হাসি হাসি।একমাত্র আমিই বোধ হয় আন্দাজ করতে পারছি উনার এই হাসি চেহারার অন্তরালে রাগ কিভাবে উপচে পড়ছে।
এদিকে ফুপি দাঁত কটমট করছে।অন্যদিকে আমি বসে আছি এক অসহায় প্রাণীর মত।
ফুপি ধমকের সুরে বললেন,

” তুই ভেতরের রুমে যা তুষার!এখানে কোনো কাজ নেই তোর।”

তুষার ভাইয়া অদ্ভুত শব্দে হেসে উঠলেন।উনি কি উনার সাইকো রূপে ফিরে যাচ্ছেন নাকি।তাহলে তো এখানের প্রত্যেকেটা মানুষের উপর ঝড় বয়ে যাবে।

” আশ্চর্য তুই এভাবে হাসছিস কেনো?আমি কোনো হাসির কথা বলেছি?”

” অফকোর্স মা।যে মেয়েটাকে তিনটা বছর ধরে আমি আগলে রেখেছি,ছেলেদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রেখেছি,আমার ইচ্ছেমতো চলতে বাধ্য করেছি আজ তাকে দেখতে ছেলে পক্ষ চলে এসেছে অথচ আমাকে কেউ জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না।”

” তোর কথা কোথা থেকে গড়িয়ে কোথায় যাচ্ছে তা আমি বুঝতে পারছি না তুষার।”

ড্রয়িংরুমে পিনপতন নীরবতা।ইয়াসির ভাইয়া এবং উনার বাবা মা’য়ের কৌতূহলপূর্ণ তিনজোড়া চোখ তাকিয়ে আছে ফুপি এবং তুষার ভাইয়ার দিকে।আমার বাবারও একই অবস্থা।

তুষার ভাইয়া রাগে চাপা গর্জন করে বলে উঠলেন,
” কেনো বুঝতে পারবে না তুমি হুম?আমার মা হয়ে কেনো বুঝতে পারছো না যে নীলাশাকে আমি ভালোবাসি।”

নিঃশব্দে আরেকটা বাজ পড়ে গেল আমার মাথায়।হৃৎপিণ্ডটার ভেতরে কেউ যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছে।
আড়চোখে সর্বপ্রথম আমি ফুপির মুখের দিকে তাকালাম।উনি এই মুহূর্তে ভুত দেখার মত চমকে আছেন।কিন্তু ফুপি তো ভূত দেখেনি।ভূতের মত একটা ভয়ানক কথা শুনে ধাক্কা খেয়েছেন।
অন্যদিকে ইয়াসির ভাইয়ার এবং উনার বাবা মা’য়ের মুখ ফ্যাকাসে।আমার কেনো জানি ইয়াসির ভাইয়ার শুকনো মুখটা দেখতে ভালো লাগছে।বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা বন্ধ হয়ে এবার খুশির চোটে ঢোল বাজছে।তুষার ভাইয়ার সাহসের তারিফ করতে হয়।কিভাবে এতগুলো মানুষের সামনে নিজের ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে দিল!আহ্! আমার মন তো খুশিতে বলতে চাইছে প্রেমিক হও তো তুষার ভাইয়ার মত হও।

নীরবতা ভেঙে ফুপি গলা খাদে নামিয়ে বললেন,
” এসব কি বলছিস তুই?”

” আমি যা বলার সরাসরি বলে দিয়েছি।তাই এটা নিয়ে অযথা প্রশ্ন করো না।”

ফুপি এবার গর্জে উঠলেন,
” ভালোবাসি বললেই হয়ে গেল, না?দেখ্ তুষার! এটা কোনো ছেলেখেলা ব্যাপার নয় যে তুই নিজের মনমতো কিছু একটা বলে বসবি আর আমরা বিনা বাক্য ব্যয়ে সেটা মেনে নেব।”

” বিনা বাক্য ব্যয় করতে না করেছে কে?এখন তুমি কি করতে চাইছো বলো।ধমকাবে আমায়?বকবে?তাহলে তাই হোক।কিন্তু আমি আমার জায়গায় অটল। তিনটা বছর ধরে ওর জন্য মনের ভেতর ভালোবাসা সাজিয়ে এসেছি। ওকে নিয়ে কল্পনায় হাজারো স্বপ্নে ঘুরে বেরিয়েছি,ওকে ভেবে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। এগুলো তোমার কাছে ছেলেখেলা মনে হচ্ছে? ”

তুষার ভাইয়া রাগে ফুঁসছেন।উনাকে দেখতে ভয়ানক লাগছে।উনি তাহলে চরম পর্যায়ে রেগে গেছেন।চোখের দিকেও তাকানো যাচ্ছে না।
সামনে বসা অতিথিরা নীরব দর্শকের মত ঘটনা উপভোগ করে যাচ্ছে।
আমার মনের ভেতর ঢোল বাজানো বন্ধ হয়ে এখন বিষাদের সুর বাজছে।ফুপি কি তাহলে ব্যাপারটা মেনে নেবে না?আমাদের দূরে ঠেলে দিবেন?তুষার ভাইয়াকে ছাড়া তো মরেই যাব আমি।

ফুপি রাগে কাঁপতে কাঁপতে আরো কিছু বলতে নিবেন তখনই বাবা উনাকে থামিয়ে দিল।পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বলল,

” আপা থেমে যাও।অতিথিদের সামনে এমন রাগারাগি না করাই ভালো।তুষার এবং নীলাশার ব্যাপারটা নিয়ে আমরা পরে শান্ত হয়ে কথা বলব।”

বাবার কথায় ফুপি অনেকটাই শান্ত হলেন।কিন্তু মুখের কাঠিন্য এখনো মুছে নি।একটু পর পর চোখ গরম করে তাকাচ্ছেন নিজের ছেলের দিকে।কিন্তু তাঁর ছেলের সেদিকে কোনো তোয়াক্কা নেই।আয়েশ করে বসে মোবাইল চালাচ্ছে।

ইয়াসির ভাইয়ার বাবা বলে উঠলেন,
” আমরা তাহলে উঠছি।এখানে থেকে শুধু শুধু আপনাদের কষ্ট দিয়ে লাভ নেই।”

আমার বাবা সৌজন্যতার সহিত বলল,
” এটা বলে আমাদেরই লজ্জা দিচ্ছেন ভাই।এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি আপনাদের কাছে।”

” ঠিক আছে তাহলে আমরা উঠি এখন।”

ইয়াসির ভাইয়ার বাবা মা বেরিয়ে গেলেন।কিন্তু ইয়াসির ভাইয়া বের হতে গিয়েও আবার পিছনে মোড়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন।উনার চোখে কেমন যেন উদভ্রান্ত ভাব।বুঝাই যাচ্ছে উনার মনের ভেতর কোনো সিরিয়াস বিষয় নিয়ে বোঝাপড়া চলছে।
এই প্রথম উনি মুখ খুললেন এবং তুষার ভাইয়াকে বললেন,

” আপনি নীলাশাকে ভালোবাসেন এটা আমি জানতাম না ভাইয়া।এখন নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে।আমিই আপনাদের মাঝে চলে এসেছি।আসলে এখানে ছোট্ট একটা কাহিনী আছে।পড়াশোনার জন্য আমি যখন চীন ছিলাম তখন যেকোনো ভ্যাকেশনে ঘনঘন বাসায় আসতাম।তো বিকেলে প্রায়ই ছাদে হাঁটতে যেতাম।তখন নীলাশাকেও ছাদে দেখা যেত।আমি যতদিন ছাদে গিয়েছি ততদিনই ওকে দেখতাম।প্রথমে ভেবেছি এটা একটা সাধারণ ঘটনা।কিন্তু অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝতে পারি সে একমাত্র আমাকে দেখার জন্যই দাঁড়িয়ে থাকে।তখন ভাবলাম হয়তোবা ওর মনে আমাকে নিয়ে কোনো অনুভূতি আছে।শুরুতে এটা তেমন পাত্তা না দিলেও আস্তে আস্তে আমারও ওর প্রতি একটা ভালোলাগা জন্মাতে শুরু হলো।তবে সামনাসামনি কখনো কিছু বলিনি।কারণ আমি নিজেই কনফিউজড ছিলাম।যখন স্টাডি কমপ্লিট করে বাসায় আসলাম, মা জানতে চাইল কোনো পছন্দ আছে কিনা আমার।তখন হুট করেই নীলাশার নামটা বলে ফেললাম।আমি নিজেও বুঝিনি নীলশার নামটা এভাবে বলে ফেলব।এরপর থেকেই মা নীলাশাকে দেখতে আসার জন্য ছটফট করতে লাগল।আমি অনেকবার বলেছি যে নীলশার হয়তোবা আমাকে মনেই নেই।তাই শুধু শুধু এই ব্যাপারটা নিয়ে মাথা না ঘামানো ভালো।কিন্তু মা কোনো কথা শুনলো না।ধরে বেঁধে আজ এখানে নিয়ে আসলো।”

এটুকু বলে ইয়াসির ভাইয়া থামলেন।তুষার ভাইয়া একবারের জন্যও উনার দিকে তাকান নি।অথচ কথাগুলো তুষার ভাইয়ার উদ্দেশ্যেই বলা হচ্ছে। মা বাবা এবং ফুপি এতক্ষণ উৎসুক হয়ে ইয়াসির ভাইয়ার কথা শুনছিলেন।উনি থামতে তাঁরা নড়েচড়ে বসলেন।এদিকে আমার অবস্থা শোচনীয়। ছাদ থেকে লুকিয়ে দেখার ব্যাপারটা এখানে না বললে কি হত না?লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে পুরো।তবে একদিক দিয়ে ভালো লাগছে যে ইয়াসির ভাইয়া সমস্ত বিষয়টা ক্লিয়ার করে দিচ্ছেন। কিন্তু তুষার ভাইয়ার হলো টা কি?উনি এখনো চুপ থাকবেন? অন্তত ইয়াসির ভাইয়াকে দুয়েকটা সান্ত্বনা মূলক কথা তো বলা উচিত।

ইয়াসির ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন,
” একটু আগে আপনার রাগ মিশ্রিত কথা আর জেদ দেখেই বুঝে গেছি নীলাশাকে নিয়ে আপনি কতটা ডেস্পারেট। আপনাদের জন্য শুভ কামনা রইল ভাইয়া।আসছি।”

ইয়াসির ভাইয়া চলে গেলেন।এবার উনার জন্য একটু খারাপ লাগছে।আমি তো ভেবেছিলাম উনি আমার লাভ স্টোরিতে ভিলেন হয়ে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু না উনি তো বাংলা ছায়াছবির বাপ্পারাজের ভূমিকায় অভিনয় করে গেলেন।

ছি ছি এসব কি বলছি আমি।ইয়াসির ভাইয়া একজন ভালো মনের মানুষ। উনাকে নিয়ে এসব বলা একদম ঠিক নয়।আল্লাহ উনার জন্য একটা ভালো,ভদ্র এবং শিক্ষিত পাত্রী এনে দিও।

তুষার ভাইয়া ফোন পকেটে ঢুুকিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।উনার ভাবভঙ্গি দেখে ভালোমন্দ কিছুই বুঝার উপায় নেই।উনি এত স্বাভাবিক আছেন কিভাবে?একটু আগেই চিল্লিয়ে চোখ রাঙিয়ে তুমুল কান্ড বাঁধিয়েছিলেন।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে তুষার ভাইয়া বলে উঠলেন,
” অনেক জরুরি কাজ ফেলে চলে এসেছি।এখন যেতে হবে।অফিস থেকে আমার বাপজান অনবরত কল দিচ্ছে। মা দুপুরে কিন্তু আমি বাসায় লাঞ্চ করব।এক কাজ করো তো!আজ আমার পছন্দের আইটেম টা রান্না করে ফেলো!আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসব কেমন!”

গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে তুষার ভাইয়া বের হয়ে গেলেন।আমি পুরো নির্বাক।উনি এত অদ্ভুত কেনো?ফুপি উনার উপর রেগে বোম্ব হয়ে আছে আর উনি বলছেন পছন্দের আইটেম রান্না করতে।মানে কিভাবে সম্ভব!

ফুপি কাঁদকাঁদ হয়ে বললেন,
” কি ছেলে পেটে ধরেছি আমি।নিজের মা’য়ের রাগ অভিমানকেও গায়ে মাখে না।তোমাদের সামনে আজ আমায় ছোট করে দিল।সে নাকি ভালোবাসে! পিটিয়ে ওর পিঠের ছাল তুলে দেব আমি।ওর বাবা আসুক আজ।”

” আপা মাথা গরম করো না।দুলাভাই আসলে আমরা এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলব।তাছাড়া এটা এমন কোনো কঠিন সমস্যা নয় যে এত হম্বিতম্বি করতে হবে।সব ঠিক হয়ে যাবে।নীলাশা তুমি এখন রুমে যাও।”

বাবার কথামতো চলে আসলাম রুমে। আমার মাথাটা ভনভন করছে।কি থেকে কি হয়ে গেল।তুষার ভাইয়া পারেনও বটে!
মাকে রুমে ঢুকতে দেখে হাসি ফুটে উঠল আমার মুখে।বিছানার চাদর ঠিক করতে করতে মা বলল,

” কিরে তোর টেনশন কমেছে?এখন তো দেখছি মুখে হাসি আর ধরে রাখতে পারছিস না।”

” সত্যি মা।মন চাইছে হাসতে হাসতে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ি।কিন্তু মা একটা জিনিস বুঝলাম না।তুষার ভাইয়া এত স্বাভাবিক আছেন কি করে।উনার আচরণ দেখে আমি তো অবাকের উপর অবাক হচ্ছি।উনি এমন কেনো?”

” তুষার কি তোর মত গাধী?সে যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছেলে।সব পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করার পদ্ধতি জানে।তোর ফুপি এখন রেগে আছে কিন্তু এই রাগ সাময়িক।তুষার ভালো করেই জানে তাঁর মা তাঁকে কতটা ভালোবাসে। বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারবে না।তাই সে এখন তাঁর মাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা চালাচ্ছে।”

” কি বলছো মা!আমার তো সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ”

” তোর ফুপি এখন তাঁর ছেলের প্রতি রাগ দেখিয়ে গেল কিন্তু এতক্ষণে বাসায় বোধ হয় ছেলের জন্য পছন্দের আইটেম রান্না করতে বসে গেছেন।”

এসব শুনে আমি পুরো তব্দা খেয়ে গেলাম।তুষার ভাইয়ার সত্যিই কত বুদ্ধি!হাউ সুইট! ইস এমন একজন ছেলে আমাকে ভালোবাসে আমার তো খুশিতে নাগিন ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে।ইচ্ছে যখন করছে তখন ডান্স দিয়েই ফেলি।
মা রুম থেকে চলে যেতেই দরজা বন্ধ করে গান প্লে করে দিলাম।আমাকে আর পায় কে!বিছানার উপর উঠে লাফাতে আরম্ভ করলাম।নাচতে নাচতে গানের সাথে গলা মিলিয়ে দিলাম,

” ম্যায় নাগিন নাগিন!”

একটু পরেই মা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বকাবকি শুরু করল।কিন্তু এসব পাত্তা না দিয়ে আমি আরো জোর গলায় গান শুরু করলাম।মন শুধু বলছে আজ নাচতে হবে।প্রচুর নাচতে হবে।

চলবে….

মন গহীনে
সামান্তা সিমি
পর্ব_২৭

তুষার ভাইয়াদের ড্রয়িংরুমে এই মুহূর্তে সবাই উপস্থিত। সবাই বলতে আমার পরিবার এবং উনাদের পরিবার।ফুপি শুকনো মুখে সোফার এক কোণে বসে আছেন।আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে উনার মন প্রচন্ড ভালো।কিন্তু জোর করে মুখ শুকনো রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কে জানে হয়তোবা আমার মনের ভুল।
ফুপির পাশে ফুপা শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছেন।এই মানুষটার সামনে আমি সবসময়ই অস্থির বোধ করি।ফুপাকে দেখলে খুব রাগী মনে হয়।কিন্তু আসলে তা নয়।উনার সাথে আমার খুব কমই দেখা সাক্ষাৎ হয়।কদাচিৎ যদিও দেখা হয় দুয়েকটা হাসি ঠাট্টা করেন।তবুও উনার সামনে আমি কখনো সহজ হতে পারি না।
আর এই মুহূর্তে তো নয়ই।যার কারণে তুষ্টি আপুর হাত খামচে ধরে আমি শক্ত হয়ে বসে আছি।আপু আমাকে নিম্নস্বরে সাহস জুগিয়ে চলেছেন।
অন্যদিকে যার কারণে আজকের সভা বসেছে সেই মানুষটা দিব্যি হাত-পা ছড়িয়ে বসে বসে আপেল খাচ্ছে। রাগে আমার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। আমি এদিকে বিরসমুখে বসে আছি আর উনি!

ফুপা হালকা কেঁশে বললেন,

” তুষার! বাপ আমার এখন আমরা কি নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি তা নিশ্চয়ই তোমার জানা আছে।তুমি দয়া আপেল খাওয়া কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রেখে আমাদের পরিষ্কার করে বলো সবটা।”

তুষার ভাইয়া ঝরঝরে গলায় বলে উঠলেন,

” বলার মত বেশি কিছু নেই আব্বু।শুধু একটা কথাই বলতে চাই।আমি নীলাশাকে ভালোবাসি,ভালোবাসি এবং ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই ওকে ।এর থেকে আর কিভাবে পরিষ্কার করে বলা যায় তা আমার জানা নেই।”

তুষার ভাইয়ার কথা শুনে আমি দাঁতে দাঁত চেপে ধরলাম।ভীষণ ভয় লাগছে।কি হতে চলেছে কে জানে।উনি একটু সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বললেই তো পারতেন।সেটা না করে বন্দুকের মত বাক্য ছুড়ছেন।আজব লোক একটা।

” কিন্তু তুমি ভালোবাসলেই তো হবে না।অপর দিকের মানুষটার কথাও তো চিন্তা করতে হবে।আহান এবং আয়েশারও মতামতের ব্যাপার আছে।”

” সেটা তো থাকবেই।তাহলে মামা মামীকে জিজ্ঞেস করেই ফেলো।মামীকে জিজ্ঞেস করতে হবে না।শুধু মামা হ্যাঁ বলে দিলেই হলো।”

তুষার ভাইয়ার চটপটে কথাবার্তা শুনে আমি একের পর এক শক খেয়ে চলেছি।উনি কিভাবে এমন ফ্রি মাইন্ডে কথা বলে যাচ্ছে! যেখানে নিজের বাবা উপস্থিত সেখানে তো অন্তত মাথা নিচু করে কথা বলা উচিত।

ফুপা কিছু বলার আগেই ফুপি জিজ্ঞেস করলেন,

” মামীকে জিজ্ঞেস করতে হবে না কেনো?আয়েশা কি আগে থেকেই সব জানে?কি আয়শা তুমি জানতে সব?”

” জ্বি আপা।শুরু থেকেই জানতাম।তুষার যে নীলশাকে পছন্দ করে সেটা প্রথমে আমিই টের পাই।”

” তারমানে তুমি তুষারকে সাপোর্ট করেছো।তুমি তাহলে রাজি?”

মা মুচকি হেসে বলল,
” না মানার তো কিছু নেই আপা।তুষারকে অনেকদিন থেকেই চিনি।ওকে আমার বেশ পছন্দ। আমার মনে হয় নীলাশার জন্য এর থেকে ভালো ছেলে পাব না আর।”

ফুপির চোখ আনন্দে ঝলমল করে উঠল।কিন্তু তিনি তা চাপা দিয়ে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বললেন,

” তুমি মানলেই কি আর হবে?নীলাশা কি চায় সেটাই মুখ্য বিষয়।ওর মতের উপর নির্ভর করছে সবটা।”

সকলের উৎসুক দৃষ্টি এবার আমার উপর নিবদ্ধ হলো।আমি বোধ হয় জ্ঞান হারাতে চলেছি।লজ্জায় নাকি ভয়ে সেটা বুঝে উঠতে পারছি না।ওদিকে তুষার ভাইয়া দ্বিতীয় আপেলটি নিয়ে কামড় বসিয়েছেন।উনি কি আমার অবস্থা টা দেখতে পারছেন না?উনি বলে দিলেই তো হয় যে নীলশাও রাজি আছে।আসল কাজ না করে উনি আপেল নিয়ে কামড়াকামড়ি করছেন।

ফুপা কোমল গলায় বললেন,
” বলো নীলাশা।তুমি যা চাও সেটাই হবে।তোমার কথার বাইরে কিচ্ছু করনা না আমরা।”

ফুপার কথা উড়িয়ে দিয়ে তুষার ভাইয়া বলে উঠলেন,

” ওকে জিজ্ঞেস করার কি দরকার আব্বু?ওকে জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর পাবে না।তারথেকে আমার কথা শুনো।বিয়ে দিয়ে দাও আমাদের। ”

” তুমি চুপ করবে তুষার?বড়দের মাঝে এসব কি ঠাট্টা তামাশা শুরু করলে?”

” আরে আব্বু…!”

” চুপ থাকতে বলেছি আমি।তুমি চুপ থাকবে।তুমি বলো নীলাশা।”

উসখুস করছি আমি।এতক্ষণে টের পেলাম ভয়ে নয়। লজ্জায় আমি ফ্লোরে থাকা সাদা টাইলসের সাথে মিশে যাচ্ছি।এবার তো তুষার ভাইয়াও আমার দিকে অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছেন।আচ্ছা আমি যদি না বলে দেই তাহলে কি হবে?নিশ্চয়ই বড়সড় একটা বোমা বিস্ফোরণ হবে।বোমা বিস্ফোরক হবেন তুষার ভাইয়া নিজে।

” আরে আব্বু এভাবে সরাসরি জিজ্ঞেস করছো মেয়ে তো লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে। ওর চেহারা দেখে বুঝতে পারছো না যে ও রাজি!তোমরা তো দেখি ভীষণ বোকা।সবচেয়ে বড় কথা হলো যে নীরবতা সম্মতির লক্ষণ তাই না?তারমানে আমাদের নীলাশাও রাজি!”

তুষ্টি আপুর কথায় ফুপার মুখে হাসি খেলে গেল।ফুপিও হেসে দিলেন!সবার মুখে এত হাসি!তাহলে সবাই মেনে নিয়েছে?
তুষার ভাইয়ার দিকে তাকাতেই উনি ভ্রু নাচিয়ে কিছু একটা ইশারা করলেন।যদিও আমি কিছুই বুঝতে পারিনি তবুও লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ফেললাম।

ফুপা উৎফুল্ল কন্ঠে বলতে লাগলেন,
” ছেলে মেয়ে দুজনই যেহেতু রাজি তাহলে আমাদের এখানে দ্বিমত পোষণ করে লাভ কি?তুমি কি বলো আহান?এখনো পর্যন্ত তো কিছুই বলো নি।”

” আপনারা আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলে তবে তো বলব দুলাভাই? আমাকে ছাড়াই তো আপনারা সকল পাট চুকিয়ে ফেলছেন।”

” হাহাহা তা কি করে হয়।তুমি হলে মেয়ের বাবা।তোমার মতামতের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।”

বাবা আমার দিকে স্নেহপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন।বাবার চোখে আমি আমার জন্য অগাধ ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি। আমি জানি বাবা কখনো অমত করবে না।একমাত্র মেয়ে হওয়ায় ছোট থেকেই দ্বিগুণ আদর যত্নে বড় করেছেন আমায়।যখন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।মুখ দিয়ে কোনোকিছু চাওয়ার আগেই সামনে জিনিস হাজির করে ফেলতেন।

” আমার মেয়ে যা চায় সেটাই আমার কাছে মুখ্য।ওর মতের বিরুদ্ধে আমি কিছুই করব না।এই কথাটা আমি অনেক আগেই ভেবে রেখেছি যে আমার মেয়ের বিয়ে নিয়ে কেনো জোরজবরদস্তি চলবে না।মেয়ে সুখী হলে আমিও সুখী।”

বাবার কথা শুনে আমার চোখে প্রায় পানি আসার উপক্রম। মন চাইছে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি বাবা।
ফুপা প্রাণখোলা হাসি হেসে বললেন,

” বাহ্! তাহলে তো মিটেই গেল।কত সুন্দর ভাবে সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।এবার তোমাকে বলছি তুষার।সবসময় এমন মাথা গরম না করে একটু ধীরেসুস্থে কথা বললেই তো পারো তাই না?শুধু শুধু বাইরের মানুষের সামনে এমন সিনক্রিয়েট না করলে চলত না?”

ফুপার কথা গায়ে না মেখে তুষার ভাইয়া হাই তুলতে তুলতে রুমে চলে গেলেন।কত্ত ঢং উনার!ছেলে হয়ে এত ঢং দেখানোর কোনো অর্থ হয়?
তুষ্টি আপুকে কনুই দিয়ে খোঁচা মেরে ফিসফিস করে বললাম,

” তোমার ভাইয়ের ঢংয়ের নমুনা দেখেছো আপু?”

” উপস্ বনু আমার।এটাকে ঢং বলে না।এটা হলো এটিটিউড! বুঝছো?”

মুখ ঝামটা দিলাম আমি।আপু তো দেখি এখন ভাইয়ের পক্ষে চলে গেছে।এমনিতে দিন রাত দুজন ঝগড়া করেই কাটায় আর এখন ভাইয়ের হয়ে কথা বলছে।

আমি পুনরায় সামনে বসে থাকা মানুষগুলোর আলোচনায় মনযোগ দিলাম।
ফুপা বাবাকে বলছেন,

” আমি কিন্তু আগেই ঠিক করে রেখেছি আমার ছেলের বিয়ে গ্রামের বাড়িতে হবে।বাপ দাদার বিশাল দালান কোঠা অনাদরে পড়ে আছে।বিয়ে উপলক্ষে সেগুলো না হয় নতুন করে সেজে উঠুক।কি বলো তুষারের আম্মু?”

” বিয়ে যখন হবে তখন দেখা যাবে।এখন উঠো।ডিনার করবে।”

বিয়ের কথা শুনে আমি এবার লজ্জায় লাল থেকে বেগুনি হয়ে গেলাম।পাশ থেকে তুষ্টি আপু খুঁচিয়ে যাচ্ছে আর ঠোঁট চেপে হাসছে।
মা বলল,

” চল নীলাশা।বাসায় যেতে হবে তো।”

আমি উঠতে নিলে ফুপি বলল,
” কোথাও যাওয়া চলবে না।তোমরা ডিনার করে যাবে।যাও ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসো।”

ফুপির কড়া আদেশ মা আর অমান্য করতে পারল না।তুষ্টি আপুর ফোনে কল আসায় সে রুমে চলে গেল।বাবা আর ফুপা গল্প করছে।মা টেবিলে প্লেট সাজাচ্ছে। তাই আমিও একা বসে না থেকে কিচেনে ফুপির কাছে চলে গেলাম।আমার কেনো জানি লজ্জা লজ্জা লাগছে।কখনো ভেবেছিলাম চেনা মানুষগুলোর সামনে এত লজ্জা পেতে হবে?
ফুপি আমাকে দেখে মায়াবী হাসি দিয়ে বলল,
” আয়।জানিস আমি খুব খুশি আজ।তুষার যখন বলেছিল সে তোকে ভালোবাসে তখন কিছুক্ষণের জন্য অবাক হয়েছিলাম।অবাকের থেকেও আনন্দিত হয়েছি বেশি।কারণ আমারও যে তোকে খুব পছন্দ। কিন্তু ভেবেছিলাম তোর মা বাবা রাগারাগি করবে, মানতে চাইবে না।সেটা চিন্তা করেই দমে ছিলাম।যাই হোক সব ভালোয় ভালোয় মিটে গেছে এতেই আমি খুশি।আমার ছেলের মনের কথা যদি বুঝতে পারতাম তাহলে কি ইয়াসিরের বাবা মাকে তোদের বাসায় নিয়ে যেতাম?তখনের ঘটনাটা মনে পড়তেই আমার হাসি পাচ্ছে। ”

আমি নীরবে ফুপির কথা শুনে যাচ্ছি। অতিরিক্ত খুশির সময়ে ফুপি পুরো বাচ্চাদের মত হয়ে যায়।

” নীলাশা তোর তো এখন কোনো কাজ নেই।তাহলে তুষারকে ডেকে নিয়ে আয় যা।ছেলেটা না খেয়ে তখন রুমে চলে গেল।নিশ্চয়ই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। ঘুমাতে দেখলে চিৎকার চেঁচামেচি করে তুলবি।রাতে ভাত না খেয়ে ঘুমানো আমার একদম পছন্দ নয়।”

কথাটা বলেই ফুপি চলে গেল কিচেন থেকে।ভালোই মুশকিলে পড়েছি।তুষার ভাইয়ার সামনে যেতে ইচ্ছে করছে না আমার। কেনো তা জানি না।ধুর!

পা টিপে টিপে উনার রুমে ঢুকলাম।কোনো প্রকার নক করা ছাড়াই ঢুকে গেছি।নক করব কেনো?উনি কোন রাজা মহারাজা যে পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হবে?

রুমে শুধুমাত্র টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে।সেই আলোতে দেখা যাচ্ছে তুষার ভাইয়া বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন।ঘুমানোর কি স্টাইল।হালকা কোঁকড়া চুলগুলো কপালে পড়ে আছে বিধায় চোখ দেখতে পারছি না।উনি ঘুমিয়ে নাকি জেগে?
আমি বিছানা থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ডাকতে লাগলাম,

” ভাইয়া! উঠুন।খেতে ডাকছে আপনাকে।”

কোনো সাড়াশব্দ নেই উনার।বোধ হয় গাঢ় ঘুমে তলিয়ে আছে।তাই আরেকটু এগিয়ে উনার হাতে স্পর্শ করে বললাম,

” শুনছেন আপনি!উঠে যান।”

এবারের ডাকে কাজ হলো।উনি আড়মোড়া ভেঙে উঠেছেন।চোখগুলো রক্তিম লাল হয়ে আছে।তারমানে সত্যিই উনি ঘুমিয়ে ছিলেন।

” খেতে আসুন।ফুপি ডাকছে আপনাকে।”

যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম।দরজা পর্যন্ত পৌঁছার আগেই তুষার ভাইয়া ঝড়ের বেগে আমার হাত টেনে উনার কাছাকাছি নিয়ে গেলেন।ততক্ষণে উনিও দাঁড়িয়ে গেছেন।আচমকা এমন হওয়ায় ভয় পেয়ে গেছি খুব।চিৎকার দিতে গিয়েও দিই নি।
অবাক হয়ে বললাম,

” আর একটুর জন্য আমার হাত খুলে পড়ে যায় নি।আপনার কি মুখ নেই?আমাকে ডাকলেই তো পারতেন!”

তুষার ভাইয়া এবার আমায় পাশের দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ধরলেন।উনার ঠোঁটে শয়তানি হাসি।আমি বেশ ভড়কে গেলাম।কি করতে চাইছেন উনি?উনার হাসি দেখে কেমন যেন লাগছে আমার।আরেকটু কাছে আসতেই বলে উঠলাম,

” ছাড়ুন আমাকে!কি করছেন?

” কিছুই তো করিনি এখনো। এর আগেই এমন ছটপট করছিস কেনো?”

তুষার ভাইয়ার কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম আমি।এ গলার স্বর আমার কাছে নতুন।কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেল আমার।

” তুষার ভা..ভাইয়া দূরে যান আপনি।দ..দরজা খোলা।কেউ এসে যাবে।”

” ও আচ্ছা। দরজা খোলা?দাঁড়া দরজাটা তাহলে বন্ধ করে দিই।”

আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে তুষার ভাইয়া সত্যি সত্যি হাত বাড়িয়ে দরজাটা ভিড়িয়ে দিলেন।
আমি ছুটার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু একবিন্দু পরিমাণ নাড়াতে পারছি না উনাকে।দুইহাত দুই পাশের দেয়ালে রেখে লক করে দিলেন আমায়।
ঝুঁকে এসে বললেন,

” তোর তো একটা পানিশমেন্ট পাওয়ার বাকি আছে।পানিশমেন্ট নিবি না?”

” ম..মানে?”

” আবার মানে জিজ্ঞেস করছিস?আজ ইয়াসিরের বাবা মা তোকে দেখতে এসেছে এর পেছনে তো সম্পূর্ণ তুই দায়ী।ছাদ থেকে ইয়াসিরকে লুকিয়ে দেখার ফল এটা।সামান্য একটা ঘটনা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে দেখেছিস?”

তুষার ভাইয়ার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মত অবস্থায় আমি আর নেই।উনি এত কাছে চলে এসেছেন যে উনার শ্বাস-প্রশ্বাস গুলো গুনতে পারব আমি।

আমাকে চুপ দেখে আবার বললেন,

” আচ্ছা যা তোর শাস্তি মওকুফ করে দিলাম আমি।আজ আমার মন ভীষণ ভালো।”

” আপনি সরে দাঁড়ান প্লিজ! ”

তুষার ভাইয়া আমার কথা বোধ হয় শুনতেই পাননি।হঠাৎই উনি আমার কাঁধের পাশে ছড়ানো চুলগুলো সরিয়ে গলায় পরপর তিনটে চুমু খেয়ে নিলেন।আমি ধাক্কা দিতে পুনরায় আবার একই জায়গায় ঠোঁট বসিয়ে দিলেন।
সাথে সাথে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম।আমি বোধ হয় আর এই দুনিয়াতে নেই।এত ভারী শক আর কখনো পাই নি।দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিও যেন নেই।
কিছু বুঝে উঠার আগেই তুষার ভাইয়া আমাকে ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন হুড়মুড় করে।আমি দেঁয়াল ঘেঁষে এখনো আগের মতই দাঁড়িয়ে আছি।নিজেকে ধাতস্থ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। একটু আগে আমার সাথে কি হলো এটা!প্রচন্ড গরম লাগছে আমার। শরীরের চামড়া ভেদ করে গরম ভাপ বের হচ্ছে।
ডাইনিং রুম থেকে তুষার ভাইয়ার চিল্লানোর আওয়াজ পাচ্ছি,

” কিরে নীল!আমার রুমে এখনো কি করছিস তুই?ভাত খাবি না?সবাই যে অপেক্ষা করছে সেটা চোখে লাগছে না তোর?জলদি খেতে আয়।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here