মন পাজড়ে শুধু তুমি আছো?,পর্ব_৫,৬

0
1469

মন পাজড়ে শুধু তুমি আছো?,পর্ব_৫,৬
লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
পর্ব_৫

আয়ানার বেশ খানিকটা খটকা লাগে,ও সাথে সাথে মুখ তুলে তাকায় আর অনেকটাই অবাক হয়ে যায়।ও দ্রুত দাঁড়িয়ে গেলো এবং অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,
— “অনিক তুমি? তুমি এখানে?”
— “কেনো আসতে পারি না বুঝি।” (অনিক)
— “না এটা তো ফিমে‌ইল একাডেমী।আর তাছাড়া তোমার তো এখানে আসার কথা না।” (আয়ানা)
— “আরেহ তোমায় মিস করছিলাম। অনেকদিন দেখি নি তোমায়।তাই ভাবলাম আজ এসে দেখা করে যাবো।আর এসেই দেখি তুমি পিপাসায় কাতরাচ্ছো।নাও এই যে পানি,একটু তেষ্টা মেটাও।” (পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে অনিক)

আয়ানা পানির বোতলটা নিলো ঠিকই কিন্তু পানি খেলো না।ও বোতলটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেললো।আর অনিকের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
— “তোমায় কতবার বললে তুমি বুঝবে? কতবার বলবো আমায় বিরক্ত করো না।কিন্তু বারবার এভাবে আমার কাছে কেনো চলে আসো? আমার এসব মোটেও পছন্দ না।কেনো এমন করছো বলো তো? কি চাই তোমার?”
— “আমি তো শুধু তোমাকে চাই আয়ানা,আমি তোমাকে ভালোবাসি আয়ানা।শুধুমাত্র তোমাকে এক নজর দেখবো বলে আমি অফিস বাদ দিয়ে ছুটে এসেছি।তুমি কেনো বোঝো না আমায়?” (অসহায়ের মতো করে অনিক)
— “কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না অনিক।এই এক‌ই কথাটা আর কতবার বলতে হবে তোমাকে? কতবার বললে তুমি বুঝবে?” (আয়ানা)
— “বুঝবো না আমি।তুমি শুধু একবার আমার কথাটা শোনো।আয়ানা আমি তোমাকে নিজের জীবনসঙ্গী করতে চাই।” (অনিক)
— “সেটা তো সম্ভব নয় অনিক।আমি অলরেডি অন্য কারো জীবনসঙ্গী।” (আয়ানা)
— “মানে এসব কি বলছো তুমি? তুমি মজা করছো তাই না?” (অনিক)
— “আজব,মজা কেনো করবো।আমি যা বলছি সত্যি বলছি।এই তো গত দুইদিন আগে আমার বিয়ে হয়েছে।যাই হোক তুমি আর আমায় বিরক্ত করো না। আশা করি তুমি আমার দিকটাও বুঝবে।” (আয়ানা)
কথাটা বলে আয়ানা এক মুহুর্ত দেরি না করে ওই জায়গা থেকে চলে আসে। অনিক অসহায়ের মত ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো আর আয়ানার বলা কথাগুলো ওর কানে বাজতে থাকলো।

!!
রাতে আয়ানা বিছানার উপর বসে থেকে টিভি দেখছে।আর অর্থ ঘরে এসে টিভিটা বন্ধ করে দিলো।আয়ানা অর্থের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
— “এই যে মিস্টার, কি সমস্যা আপনার? টিভি কেনো অফ করলেন?”
— “ভালো লাগছে না।” (অর্থ)
— “আপনার ভালো লাগছে না তাতে আমি কি করবো? আপনি কেনো আমার সাধের টিভি দেখা বন্ধ করলেন।” (আয়ানা)
— “এই শোনো‌ সবসময় এমন কানের কাছে প্যানপ্যান করবে না।আমার অসহ্য লাগে।সবসময় শুধু প্রশ্ন আর অশান্তি। জীবনটা পুরাই তেজপাতা করে ছাড়লো।” (রেগে অর্থ)

অর্থের এমন আচরণ দেখে আয়ানা একটু অপ্রতিভ হয়।ও গালে হাত রেখে মনে মনে বলে,
— “উহু কিছু বোধ হয় ঘাপলা আছে।নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করে এসেছে আর সেই রাগ আমার ওপর ঝাড়ছে।ওয়েট আমিও কি কম যাই নাকি? দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।”
আয়ানা অর্থের মুখোমুখি হয়ে বসলো আর জোর গলায় বললো,
— “এই যে শুনুন গার্লফ্রেন্ডের রাগ না আমার ওপর ঝাড়বেন না।আমি আপনার ব‌উ‌ও ন‌ই আর বন্ধুও ন‌ই যে আপনার যা ইচ্ছা আমায় বলবেন।কোথায় না কোথায় ঝগড়া করে এসেছে আর তার রাগ আমার উপর ঝাড়ছে। বিচুটি পাতা লোক একটা!”
— “এই বিচুটি পাতা কি?না মানে এটা কি সেটা যেটা শরীরে পড়লে শরীর চুলকায়।” (অর্থ)
— “হুম এটাই সেইটা। বিছুটি বা বিচুটি পাতা,যার বৈজ্ঞানিক নাম ত্রগিয়া ইভোলুকড়াটা।” (আয়ানা)
— “বাহ তুমি তো অনেক কিছু জানো দেখছি।” (অর্থ)
— “তা আমাকে কি আপনার অশিক্ষিত মনে হয়?” (মুখ ভেংচি কেটে আয়ানা)
— “উহু তা বললাম কখন।বাই দ্যা ওয়ে, আম্মু বললো তুমি নাকি আজকে বেরিয়েছিলে, কোথায় গিয়েছিলে?” (অর্থ)

আয়ানা দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বললো,
— “বান্ধবীর বাড়ি আর কলেজে।অবশ্য এখন থেকে রোজ‌ই যাবো।আমার তো রোজ ক্লাস এটেন্ড করতে হবে।”
— “সত্যি কি কলেজে গেছিলে?”
আয়ানার দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেয় অর্থ।ওর প্রশ্নে কিছুটা ঘাবড়ে যায় আয়ানা।তারপর অর্থকে কিছু বুঝতে না দিয়ে আয়ানা বলে,
— “না মঙ্গল গ্রহে গেছিলাম।আচ্ছা আমি কোথায় গেছি না গেছি তা আপনাকে জানতে হবে কেনো?আপনি কোথায় যান না যান আমি কি সেটা দেখতে যাই?”
— “তোমার সাথে কথা বলাই বেকার।কেমন যেনো ব্যবহার করো।থাক আর কিছু বলবো‌ও না।আমার বালিশ আর বেডশিট দাও,আজ তো আবার ফ্লোরে শুতে হবে।” (বিরক্ত হয়ে অর্থ)

আয়ানা অর্থকে বালিশ আর বেডশিটটা দেয়। অর্থ ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে পড়লো,আর আয়ানা কিছুক্ষণ বসে থেকে নিজেও বিছানায় শুয়ে পড়লো।

!!
আজ সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে। অর্থ,আয়ানা,অর্থি,বাবা-মা সবাই একসাথে খাচ্ছে।অর্থির সাথে তো আয়ানার ভীষণ ভাব।দুজনে খাচ্ছে আর গল্প করছে।আর অর্থ খাওয়া বাদ দিয়ে আয়ানার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে রয়েছে।
— “হাও টকেটিভ দিজ গার্ল ইজ! সেই কখন থেকে বকবক করে যাচ্ছে,একটুও থামার নাম নেই।আচ্ছা ওর মুখে কি কোনো ব্রেক নেই?” (মনে মনে অর্থ)
— “ভাই তুই আয়ানার দিকে তাকিয়ে কি বিড়বিড় করছিস? কিছু বলবি নাকি?” (দুষ্টু হেসে অর্থি)
অর্থির কথায় আয়ানা অর্থের দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকায়। অর্থ ওর এমন মুখভঙ্গি দেখে একটু ঘাবড়ে যায় আর আমতা আমতা করে বলে,
— “না রে আপু আমি তো কিছু বলি নি।আর আমি ওর দিকে তাকাতে যাবো কেনো? আমি তো খাচ্ছি।”
— “উহু তুই তো তাকিয়েছিলি আমি মাত্র দেখেছি।” (অর্থি)
— “আজকাল সবাই দেখি সুন্দরী মেয়েদের দিকেই তাকায়।” (অন্যদিকে তাকিয়ে আয়ানা)
— “হোয়াট? আর ইউ কিডিং? তুমি সুন্দর? তোমার মতো ফালতু মেয়ের দিকে তাকাতে আমার বয়েই গেছে,ইডিয়েট একটা!” (অর্থ)

কথাটা বলে অর্থ খাওয়ার টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো। অর্থের আম্মু আয়ানাকে বললেন,
— “আয়ানা তুমি অর্থের কথায় কিছু মনে করো না।ও আসলে ওরকম‌ই।যা মুখে আসে বলে দেয়,কিছু ভাবে না।”
— “না মা উনার কথায় আমি কিছু মনে করি নি।কিন্তু আমি একটা বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনার ছেলেটা একেবারে বিচুটি পাতা।সবসময় খিটখিট করে।ভালো কথা ভালো ভাবে বোঝেই না।কেমন যেনো উল্টা বাঙালি,হাইব্রিড বাঙালি।” (আয়ানা)
আয়ানার কথা শুনে অর্থের আম্মু হেসে দিলেন। অর্থের বাবা বললেন,
— “তুই তো আছিস মা,আর আমার ছেলেটা অতো খারাপ নয়।ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।”
— “আর হবে,এত বড় হয়ে গেছে তারপরেও স্বভাব যায় না।যাই হোক বাবা,মা আমি এখন যাই আমার আবার কলেজের লেট হয়ে যাবে।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা যা আর কোনো সমস্যা হলে একটা কল করি‌স।” (অর্থের বাবা)
— “ঠিক আছে বাবা।” (আয়ানা)
আয়ানা হাত ধুয়ে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

প্রতিদিন বড় ব্যাগ বহন করা সম্ভব না,কারণ বাসার সবাই সন্দেহ করবে।তাই আয়ানা আগেই একাডেমীতে যে কেবিনেট আছে ওর ভেতরে জার্সি,সেফটি হ্যান্ড এন্ড লেগ ব্যান্ড,মোজা,বুট সবকিছুই রেখে দিয়েছে।ও একাডেমীতে এসে থ্রি পিছ বদলে জার্সি,লেগিন্স,প্যান্ট,মোজা আর বুট পরে নিলো। চুলগুলো উঁচু করে রিবন দিয়ে বেঁধে হাতে একটা ব্যান্ড লাগিয়ে নিলো।এর‌ই মাঝে তুতুল (আয়ানার সাথেই খেলে) এসে আয়ানাকে বললো,
— “আনান‌ইয়া স্যার তোমায় ডাকছে।”
— “কেনো ডাকছে জানো?” (আয়ানা)
— “না তবে বললো জরুরি দরকার।তোমায় কি যেনো করতে হবে।” (তুতুল)
— “আচ্ছা চলো যাই।” (আয়ানা)

আয়ানা তুতুলের সঙ্গে গ্রাউন্ডে এলো।আয়ানাকে দেখে কোচ বললো,
— “আনান‌ইয়া তোমাকেই খুঁজছিলাম।তোমায় একটা কাজ করতে হবে।”
— “কি কাজ স্যার?” (আয়ানা)
— “একটু পরে আমাদের একাডেমীতে তিনজন ফুটবলার আসবেন।তিনজন‌ই ভীষণ ভালো খেলে।তো আমি তোমাকেই সিলেক্ট করেছি তুমি উনাদের অভ্যর্থনা জানাবে এবং একাডেমী ঘুরিয়ে দেখাবে।তারপর সবার সঙ্গে পরিচয় করাবে‌।উনারা আজ তোমাদের ফুটবল সম্বন্ধে অনেক কিছু বলবেন।তো তুমি রেডি?” (কোচ)
— “জ্বি স্যার।আপনি চিন্তা করবেন না।” (আয়ানা)
— “ঠিক আছে তাহলে তুমি আর নুসরাত যাও যা যা রেডি করার আছে করে ফেলো।” (কোচ)
— “আচ্ছা, চল নুসরাত।” (আয়ানা)

আয়ানা আর নুসরাত একাডেমীর ভেতরে গিয়ে সবকিছু রেডি করছে। হঠাৎ আয়ানার মনে প্রশ্ন জাগে এবং ও নুসরাতকে বলে,
— “আচ্ছা নুসরাত যারা আসবেন তারা তো বড় মাপের ফুটবলার।আচ্ছা জেরিন ম্যাম আসবেন নাকি? উনি তো অনেক ভালো খেলেন।”
— “নারে আনান‌ইয়া মেন টিম থেকে তিনজন আসবেন।উনারা ন্যাশনাল টিম প্লেয়ার।” (নুসরাত)
— “তুই কি জানিস কে কে আসবে? তাদের নাম জানিস?” (আয়ানা)
— “হ্যাঁ তো,ক্যাপ্টেন সারহান ইন্তেহাব,আর এমনি প্লেয়ার দুইজন, রাজ এবং মাহিন।” (নুসরাত)

নুসরাতের কথা শুনে আয়ানার মুখ শুকিয়ে গেলো।ও মনে মনে বললো,
— “সর্বনাশ, অর্থ আসবেন।উনি যদি একবার আমায় দেখতে পান তাহলে সব শেষ।না না আমায় কিছু একটা করতে হবে।”

চলবে

#মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?
#লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
#পর্ব_৬

নুসরাতের কথা শুনে আয়ানার মুখ শুকিয়ে গেলো।ও মনে মনে বললো,
— “সর্বনাশ, অর্থ আসবেন।উনি যদি একবার আমায় দেখতে পান তাহলে সব শেষ।না না আমায় কিছু একটা করতে হবে।”
আয়ানাকে অন্যমনস্ক দেখে নুসরাত ওকে দুইবার ডাকে।
— “এই আনান‌ইয়া কি হয়েছে তোর? কখন থেকে ডাকছি,কি ভাবছিস এতো?” (নুসরাত)
— “ও হ্যাঁ কিছু বলছিলি নুসরাত!” (ভাবনা থেকে বেরিয়ে আয়ানা)
— “হুম তাড়াতাড়ি কর,উনারা হয়তো এখন‌ই এসে পড়বেন।” (নুসরাত)
— “হ্যাঁ আমি ভেতর থেকে গ্লাস আনছি,যদি শরবত দিতে হয়।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা যা।” (নুসরাত)

আয়ানা ওখান থেকে দুই কদম এগোনোর পরেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
— “আহ!!ও মা গো।ইস মরে গেলাম মাগো।”
নুসরাত তাড়াতাড়ি আয়ানার কাছে এগিয়ে যায়।
— “আনান‌ইয়া কি হয়েছে তোর? কোথায় কষ্ট হচ্ছে?” (নুসরাত)
— “নুসরাত আমার প্রচন্ড পেট ব্যথা করছে।এমনিতেই আমার গ্যাস্ট্রিকের প্রবলেম আছে তার‌ওপর তিনদিন খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম হয়েছে।আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে রে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।আমি বোধ হয় আর থাকতে পারবো না।ও মা গো।” (আয়ানা)
— “তুই এখানে বোস আমি স্যারকে ডেকে আনছি।” (নুসরাত)

নুসরাত আয়ানাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে রেখে কোচকে ডাকতে বাইরে চলে যায়।এমন খবর শুনে কোচসহ বাকিরা তাড়াতাড়ি ভেতরে চলে আসেন।
— “আনান‌ইয়া তুমি ঠিক আছো? তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে?” (কোচ)
— “জ্বি স্যার আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।আমি আর থাকতে পারছি না স্যার।অসহ্য যন্ত্রণা করছে।” (আয়ানা)
— “স্যার আমার মনে হয় ওকে বাসায় যেতে দেওয়া উচিত।নাহলে এখানে থাকলে ওর আরো কষ্ট হবে।” (নুসরাত)
— “ঠিক‌ই বলেছো।এই এশা তুমি ওর সাথে যাও,ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসো।” (কোচ)
— “স্যার আমার খুব খারাপ লাগছে যে আমি আপনাকে আজ সাহায্য করতে পারলাম না।কেনো যে আমার এমন হলো আমি নিজেও জানি না।” (আয়ানা)
— “ঠিক আছে, সমস্যা নেই। তুমি বাসায় যাও, বিশ্রাম করো। উইশিং ইউ স্পিডি রিকোভারি।আর এশা ওর সঙ্গে যাও।” (কোচ)
— “জ্বি স্যার আমি যাচ্ছি।আনান‌ইয়া চল।” (এশা)

আয়ানা আর এশা সিএনজিতে বসে আছে।সিএনজি আপন গতিতে চলছে।আয়ানার‌ও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই,ও এক দিকে ঘুরে বসে আছে। হঠাৎ এশা বললো,
— “আজ সারহান ইন্তেহাব একাডেমীতে আসবেন শুনে তুই পেট ব্যথার নাটক করে পালিয়ে এলি তাই না?”
— “তুই তো সব‌ই জানিস।এছাড়া আর কীইবা করতাম আমি।” (আয়ানা)
— “কিন্তু এভাবে আর কতদিন? একবার আয়ানা একবার আনান‌ইয়া কিভাবে সামাল দিবি তুই? তার চেয়ে ভালো না ভাইয়াকে সবটা বলে দেওয়া।আমার মনে হয় না তাতে তোর অসুবিধা হবে,বরং সুবিধা-ই হবে।” (এশা)
— “সবকিছু এতো সহজ না রে এশা।আর তাকে আমি কোন মুখে নিজের স্বপ্নের কথা বলবো? সে তো আমায় স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় নি,সে অন্য কাওকে ভালোবাসে।আর ছোট থেকে ফুটবলের স্বপ্নটা আমি একাই দেখেছি তাই এটা আমাকেই পূরণ করতে হবে।তার জন্য যা করতে হয় করবো।” (আয়ানা)
— “শশুড় শাশুড়ি কেও তো বলতে পারিস।” (এশা)
— “আমার শশুড় শাশুড়ি ভীষণ ভালো মানুষ।তাদেরকে বললে কখনোই আমায় বাঁধা দেবেন না,কিন্তু এই মিষ্টি সম্পর্কটা তো মাত্র ছয় মাসের।তারপর তো আমাদের পথ আলাদা।তাহলে অযথা তাদের বলে কি লাভ?” (আয়ানা)
— “জানি না,তোকে যে কিভাবে সাহায্য করবো সেটাও আমার জানা নেই।” (এশা)

আয়ানা হাসতে হাসতে বললো,
— “তোকে কিছু করতে হবে না। শুধু এটুকু বল যে আয়ানা আর আনানইয়া দুজনকে দেখে কি বুঝতে পারিস যে দুজন এক‌ই মানুষ?”
— “উহু সম্পূর্ণ‌ই আলাদা।এটা আসলে তোর একটা স্পেশাল গুণ,তোকে জার্সিতে আর অন্যান্য ড্রেসে একদম‌ই অন্যরকম লাগে।কোনো মিল থাকে না।খুব ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে না দেখলে বোঝা যাবে না দুজনে এক।” (এশা)
— “ব্যাস এটুকুই চলবে।এভাবেই আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো।” (আয়ানা)
— “ইনশাআল্লাহ আমি সবসময় তোর পাশে আছি।যেকোনো প্রয়োজনে আমায় পাশে পাবি তুই।” (এশা)
— “এজন‌্যই তো তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।” (আয়ানা)
এশা সঙ্গে সঙ্গে আয়ানাকে জড়িয়ে ধরলো,আয়ানাও মুচকি হেসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। বেস্ট ফ্রেন্ডকে এভাবে জড়িয়ে ধরে মনের সব কথা শেয়ার করার মাঝেও এক সুন্দরতম অনুভূতি রয়েছে।

!!
রাত এগারোটা বাজে,ঘড়ির কাঁটা শব্দ করে এগিয়ে চলেছে। অন্ধকার ঘরে বিছানায় বসে থেকে অর্থের অপেক্ষা করছে আয়ানা। অর্থ এখনো বাসায় ফেরে নি,সেই সকালে বেরিয়েছে আর বাসায় আসে নি। অবশ্য বাসায় ফোন দিয়ে বলেছে ওর আসতে দেরি হবে কিন্তু আয়ানা কিছুতেই নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে পড়তে পারছে না।তাই ওর আসার অপেক্ষায় পথ চেয়ে রয়েছে।

কিছুক্ষণ পর বারোটা নাগাদ অর্থ হেলতে দুলতে কানে এয়ারফোন গুঁজে গুণগুণ করতে করতে ঘরে প্রবেশ করলো।ওকে দেখেই একজন মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব যে অর্থ কোনো নাইট পার্টি থেকে ফিরছে।আয়ানা হুট করে পেছনে তাকাতেই অন্ধকারে আবছা অবয়ব দেখতে পেলো।ওর বোঝা শেষ অর্থ‌ই এসেছে।আয়ানা বিছানা থেকে নেমে অর্থের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
— “কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?” (আয়ানা)

অর্থ কান থেকে এয়ারফোন বের করে বললো,
— “কেনো দেখে বুঝতে পারছো না,কোথা থেকে আসছি? পার্টিতে গিয়েছিলাম।”
— “হুম সেটা তো বুঝতেই পারছি।তা পার্টিতে নিশ্চয়ই আপনার গার্লফ্রেন্ড‌ও ছিলো?” (আয়ানা)
— “হুম অবভিয়েসলি ও না থাকলে চলে!ও তো সবসময় আমার সঙ্গেই ছিলো।বাট হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছো? তোমার কোনো সমস্যা?” (অর্থ)
— “না আমার আর কিসের সমস্যা হবে।” (আয়ানা)
— “তুমি তো থার্ডক্লাস এসব কি আর বুঝবে।” (অর্থ)
— “আমি থার্ডক্লাস হলে আপনার তো কোনো ক্লাস-ই নেই।আসলে আমি মাঝেমাঝে চিন্তা করি যে আপনার গার্লফ্রেন্ড কি রোবট নাকি, না মানে আপনার মতো একটা অপদার্থকে কিভাবে যে কন্ট্রোল করে।” (আয়ানা)
— “ইউউউউ জাস্টটট শাট আপ।” (রেগে অর্থ)
— “আচ্ছা ঠিক আছে কিছু বলবো না। আপনি যান ফ্রেশ হয়ে নিন আমি খাবার দিচ্ছি।” (আয়ানা)
— “আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।” (অর্থ)
— “তাহলে আর কি চেঞ্জ করে শুয়ে পড়ুন।আমি জয়াকে (সার্ভেন্ট) বলছি খাবার ফ্রিজে রাখতে‌।” (আয়ানা)
— “হুম তাই করো।” (অর্থ)
অর্থ আর কথা না বাড়িয়ে চেঞ্জ করে এসে শুয়ে পড়লো।আয়ানা জয়াকে খাবার ফ্রিজে রাখতে বলে এসে মেঝেতে শুয়ে পড়লো।

!!
ঘড়িতে সকাল ন’টা বাজে।সবার ব্রেকফাস্ট করা হয়ে গিয়েছে,শুধু আয়ানা বাকি রয়েছে।ও এখনো খায় নি।আয়ানা রান্নাঘরে গিয়ে জয়া আর বাকি সার্ভেন্টদের দুপুরের রান্নার কথা বুঝিয়ে দিলো।
— “কিন্তু নতুন ভাবি আপনি তো এখনো ব্রেকফাস্ট-ই করেন নি। লাঞ্চ নাহয় আমরা পরে বানাবো। কিন্তু আপনি তো ব্রেকফাস্ট করবেন।” (জয়া)
— “পরে করবো।তোমাদের যা বললাম তোমরা করো।আমি পরে ব্রেকফাস্ট করছি।তোমরা কাজ করো,আমি একটু পরে আসছি।” (আয়ানা)

আয়ানা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ঘরের দিকে যাচ্ছে রেডি হ‌ওয়ার জন।কারণ অর্থ বেরিয়ে যাওয়ার পর আয়ানাও একাডেমীতে যাবে,ওর প্র্যাকটিস আছে।তাই সময় নষ্ট না করে ও ঘরে গেলো।আয়ানা ঘরে গিয়ে দেখে অর্থ ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে চুল ঠিকঠাক করছে।আয়ানা কোনো শব্দ করলো না,অর্থ এখনো বোঝে নি যে ঘরে কেউ এসেছে। অর্থ নিজের মনমতো জেল দিয়ে চুল সেট করে,মুখে সানস্ক্রিন মেখে,হাতে ওয়াচ পরে,গায়ে পারফিউম লাগালো। সবকিছু ঠিকঠাক করে পেছনে ঘুরতেই অর্থ আয়ানাকে দেখলো আর বললো,
— “এরকম চোরের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”
— “চোর না কথাটা চুন্নি হবে।এত বড় হয়েছেন তাও কোথায় কি বলতে হয় জানেন না।আর আমি চোর বা চুন্নি কোনো কিছুর মতো করেই দাঁড়িয়ে নেই।ঘরে এসে দেখলাম আপনি রেডি হচ্ছেন তাই আর বিরক্ত করি নি।” (আয়ানা)
— “ওহ আচ্ছা, আলমারির চাবিটা দাও তো আমার একটা জিনিস বের করতে হবে।” (অর্থ)
— “চাবি তো আমি নিই নি।মনে হয় টেবিলের উপরেই আছে।” (আয়ানা)
— “ওকে আমি দেখছি।” (অর্থ)

আয়ানা বিছানার এক সাইডে বসে, অর্থ সেন্টার টেবিলের উপর থেকে আলমারির চাবিটা নিয়ে আলমারি খুলে ওর দরকারি জিনিসটা খুঁজছে।হঠাৎ আয়ানার ফোনে রিংটোন বেজে ওঠে।আয়ানা ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আননোন নম্বর।ও কলটা রিসিভ করে বলে,
— “হ্যালো কে বলছেন?”
— “আয়ানা আমি অনিক।” (অনিক)
— “স্যরি রং নম্বর।আমি রাখছি।” (আয়ানা)
— “আয়ানা প্লিজ কলটা কেটো না, তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।প্লিজ আমার কথা শোনো।” (অনিক)

অনিকের কথায় আয়ানা বেশ বিরক্ত হয়।ও মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে বলে,
— “স্যরি চিনতে পারছি না।আমার মনে হচ্ছে রং নম্বর।আমি রাখছি।”
আয়ানা ফোন রেখে দেয়।পরক্ষণেই অনিক আবার কল দেয়।কিন্তু এবারে আয়ানা ফোন হাতে নেওয়ার আগেই অর্থ এসে ফোনটা হাতে নেয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here