মন পাজড়ে শুধু তুমি আছো?,পর্ব_৭,৮

0
1513

মন পাজড়ে শুধু তুমি আছো?,পর্ব_৭,৮
লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
পর্ব_৭

অনিকের কথায় আয়ানা বেশ বিরক্ত হয়।ও মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে বলে,
— “স্যরি চিনতে পারছি না।আমার মনে হচ্ছে রং নম্বর।আমি রাখছি।”
আয়ানা ফোন রেখে দেয়।পরক্ষণেই অনিক আবার কল দেয়।কিন্তু এবারে আয়ানা ফোন হাতে নেওয়ার আগেই অর্থ এসে ফোনটা হাতে নেয়।অর্থ কলটা রিসিভ‌ও করে।
— “হ্যালো কে বলছেন?” (অর্থ)
— “আপনি কে?” (অনিক)
— “প্রশ্নটা আমি আগে করেছি।আর তাছাড়া ফোনটাও আপনি করেছেন।সো‌ নিজের পরিচয় আগে দিন।” (অর্থ)
— “দেখুন এটা যার ফোন তাকে দিন।আমার তার সঙ্গে কথা আছে। প্লিজ ফোনটা ওকে দিন।” (অনিক)
— “কিন্তু আপনি যার কথা বলছেন সে বলেছে সে আপনাকে চেনে না।অত‌এব এভাবে ডিসটার্ব করবেন না।” (অর্থ)

কথাটা বলে অর্থ কলটা কেটে দেয়।আয়ানা ছো মেড়ে ওর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো এবং জিজ্ঞেস করলো,
— “আপনি কেনো ফোনটা রিসিভ করলেন? আপনাকে কি আমি রিসিভ করতে বলেছিলাম?”
— “না বলো নি।বাট নিজেই তো বললে রং নম্বর।আর তারপরেও যখন আবার ফোন আসলো আমি ভাবলাম তোমায় বিরক্ত করার জন্য ফোন করেছে।দ্যাটস হোয়াই আমি রিসিভ করেছি।” (অর্থ)
— “ওহ তাই।” (আয়ানা)
— “হুম,কিন্তু ছেলেটার কথা শুনে মনে হলো সে তোমায় চেনে।আর আমার মনে হচ্ছে তুমিও তাকে চেনো। আচ্ছা কে এই ছেলেটা? তোমায় বারবার ফোন করছে কেনো?” (অর্থ)
— “ছেলেটা যে-ই হোক না কেনো তাতে আপনার কি? আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাকে কেনো ফোন করেছে সেই প্রশ্ন আপনি কেনো করছেন?দেখুন এই সবকিছু আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার,আপনি এসবের মধ্যে নাক গলাবেন না।” (আয়ানা)
— “আমার বয়েই গেছে তোমার বিষয়ে নাক গলাতে।তোমার মতো ফালতু মেয়ের বিষয়ে সারহান ইন্তেহাব নাক গলায় না।কথাটা মনে রেখো।” (অর্থ)
— “হ্যাঁ সেই তো আমার বিষয়ে আপনার কোনো কিছুই করতে হবে না।আপনি নিজের গার্লফ্রেন্ডকে নিয়েই ভাবেন।” (আয়ানা)
— “হুম ভাববোই তো।” (অর্থ)
আয়ানা আর কোনো কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে চলে গেলো।

একটু পরে অর্থ‌ ওর প্রয়োজনীয় জিনিসটা আলমারি থেকে নিয়ে ঘর থেকে বের হলো।ও সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে আয়ানা আর জয়ার কথোপকথন শুনতে পায়।যেখানে জয়া আয়ানাকে বলছে,
— “না নতুন ভাবি এটা করবেন না।দেখুন আপনি কাল রাতেও কিছু খান নি, আবার এখন‌ও কিছুই খান নি। গতকাল থেকে না খেয়ে আছেন।এসব খবর যদি বড় স্যার জানেন তাহলে খুব রাগারাগি করবেন।তাই বলছি আমার খাবার এনেছি আপনি খেয়ে নিন।আমি আপনার কথামতো সবকিছু রান্না করে রাখবো,আপনি চিন্তা করবেন না।আপনি এখন প্লিজ খেয়ে নিন।”

আয়ানা জয়ার কথার উত্তর দেয়ার আগেই অর্থ সিঁড়ির উপর থেকেই বললো,
— “তুমি খাবারটা টেবিলে রেখে নিজের কাজে যাও।তোমার নতুন ভাবি ঠিক খেয়ে নেবে।”
— “ঠিক আছে স্যার।” (জয়া)
জয়া খাবারের প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে কিচেনে চলে গেলো। ততোক্ষণে অর্থ সিঁড়ি থেকে নেমে আয়ানার সামনে এসে দাঁড়ায়।আয়ানা অর্থের দিকে তাকিয়ে বললো,
— “খাবো কি খাবো না সেটা আমার ব‌্যাপার, আপনি কেনো বললেন যে আমি খাবো?আমি তো খাবো না।তাহলে আপনি কেনো এ কথা বললেন?”
— “কারণ তুমি খাবে।” (অর্থ)
— “না খাবো না।” (আয়ানা)
— “এই একদম আমার সাথে জেদ দেখাবে না।আজ পর্যন্ত আমি যখন যা বলেছি তাই হয়েছে কেউ আমার কথার অবাধ্য হয় নি।আর এখন তুমিও হবে না।” (অর্থ)
— “হ্যাঁ ওইজন্য‌ই তো এমন হাইব্রিড হয়েছেন। কিন্তু আমি না সবার মতো না,আমি আপনার কথা শুনবো না।” (আয়ানা)
— “শুনতে তো তোমাকে হবেই। তুমি তো সবসময় আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে এটা ওটা করাও।সো এখন চুপচাপ এখানে বসো।” (অর্থ)
— “না।” (আয়ানা)
— “কিসের না,বসো বলছি।” (ধমক দিয়ে অর্থ)

ধমক শুনে আয়ানা লক্ষী মেয়ের মতো চেয়ারে বসলো। অর্থ ওর পাশে আরেকটা চেয়ার টেনে বসে।
— “নাও এবার শুরু করো।” (অর্থ)
— “আমি বলেছি তো খাবো না‌।” (জেদ দেখিয়ে আয়ানা)
আয়ানার এমন অবাধ্যতা অর্থের একটুও মনে ধরলো না বরং আরো রাগ হলো।অর্থ রেগে হাত দিয়ে এক লোকমা খাবার নিয়ে আয়ানার মুখে পুরে দিলো।অর্থের এহেন কান্ডে আয়ানা বিস্মিত হয়।ওর আকার-ভঙ্গি স্পষ্ট জানান দিচ্ছে এই ঘটনাটার জন্য ও একদম প্রস্তুত ছিলো না।
— “কি হলো মুখের মধ্যে খাবারটা কতোক্ষণ রাখবে? চিবিয়ে খাবে তো নাকি?” (অর্থ)

আয়ানা কোনোমতে মুখের খাবারটা চিবিয়ে গলাধঃকরণ করলো।তারপর একদম সরল সিধে মুখভঙ্গি করে অর্থকে জিজ্ঞেস করলো,
— “আপনি যে এইভাবে আমাকে খাবার খাওয়ালেন আপনি হাত ধুয়েছিলেন?নাকি নোংরা হাতেই আমায় খাইয়ে দিলেন?”
— “এমনি কি বলি তোমার মাথার স্ক্রু ঢিলা!আরেহ বাবা স্যানিটাইজ করেছি তো।সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় স্যানিটাইজ করেছি দেন জীবাণুমুক্ত হাতে তোমায় খাওয়ালাম।এখন শান্তি?” (অর্থ)
— “অ্যা এ আপনি কি করেছেন? এখন আমার কি হবে?” (কাঁদো কাঁদো ফেইস করে আয়ানা)
— “তোমার কি হবে মানে? আর আমি কি করেছি?” (ভ্রু কুঁচকে অর্থ)
— “আরেহ স্যানিটাইজারে তো অ্যালকোহল থাকে।আর আপনি হাত স্যানিটাইজ করেছেন তারমানে আপনার হাতে অ্যালকোহল ছিলো।আর আপনি ওই হাত দিয়ে আমায় খাইয়ে দিয়েছেন সুতরাং আমি অ্যালকোহল খেয়েছি।ভ্যা ভ্যা এখন কি করবো আমি?” (আয়ানা)
— “আমার মাথা করো,অসহ্য একটা!” (অর্থ)

আয়ানাকে রাগ দেখিয়ে অর্থ বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।আয়ানাও কিছুক্ষণ পর কলেজের নাম করে গ্রাউন্ডের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।

!!
রাতে ঘুমানোর একটু আগে অর্থ সোফায় বসে গেমস খেলছে আর আয়ানা বিছানা রেডি করছে। হঠাৎ কিছু একটা মনে করে আয়ানা নিজের কাজ থামিয়ে রেখে অর্থের দিকে তাকালো।
— “আপনি ফোন হাতে নিয়ে কি করছেন?” (আয়ানা)
— “কেনো দেখতে পারছো না গেমস খেলছি।” (অর্থ)
— “এই মুহূর্তে ফোনটা রাখবেন।নাহলে কিন্তু আপনার কপালে শনি আছে।” (আয়ানা)
— “এই শোনো তুমি আমার টিচার ন‌ও যে যা বলবে তাই শুনবো।” (অর্থ)
— “আচ্ছা বেশ আমি আপনার শিক্ষিকা নই কিন্তু আমি আপনার বিয়ে করা বউ।শরিয়ত এবং আইনি মোতাবেক আমরা স্বামী-স্ত্রী।আমি কিংবা আপনি বিয়েটা না মানলেও সমাজের সবাই জানে আমরা বিবাহিত। সুতরাং যে ক’দিন আমাদের এই সম্পর্ক টা আছে ততোদিন যদি আপনি আমার কথা না শুনেছেন তাহলে আমি কিন্তু আপনার ওপর স্ত্রীর অধিকার খাটাবো।তখন কিন্তু আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনাকে একদমই সহ্য করবে না, আপনার সাথে ব্রেকআপ করে চলে যাবে। আপনি কি সেটা চান?” (আয়ানা)

অর্থ ঠাস করে ফোনটা টেবিলের ওপর রাখলো।ফোন রাখার আ‌ওয়াজটা এতোটাই জোরে যে আয়ানা চমকে উঠলো।
— “আমার ওপর রাগটা ফোনের ওপর একদম ঝাড়বেন না।ফোন আপনার কোনো ক্ষতি করে নি।যদি রাগ ঝাড়তেই হয় সরাসরি আমার ওপর ঝাড়বেন।” (আয়ানা)
— “তুমি কোথাকার কে যে তোমার ওপর আমি রাগ ঝাড়তে যাবো? আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই ফোনটা জোরে রেখেছি,ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?” (অর্থ)
— “হুম আমি আপনার কেউ না,ঠিক আছে মানলাম।কিন্তু তাহলে সকালে যখন আমি বললাম খাবো না তখন আমাকে জোর করে খাইয়ে দিলেন কেনো? আমি না খেয়ে থাকলে আপনার কি হতো?আমি তো আর আপনার কাছের কেউ হ‌ই না।তাহলে তখন অতোটা জোর কেনো খাটালেন?বলুন।” (আয়ানা)

আয়ানার এই প্রশ্নে নিশ্চুপ হয়ে যায় অর্থ।আয়ানা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অর্থের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু এই কথার জবাব নেই অর্থের কাছে। অর্থ শুধু সকালের ঘটনাটা ভাবছে তবে মুখে কোনো শব্দ নেই।অর্থ মনে মনে বললো,
— “জানি না,যখন শুনলাম কাল রাতেও ও খায় নি আবার এখন‌ও খায় নি তখন নিজের কাছে কেমন যেনো লাগছিল।ভেতরে ভেতরে অন্যরকম একটা অনুভুতি হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল ও না খেলে বুঝি আমি ভীষণ কষ্ট পাবো।আর তখন আমিও নিজের মধ্যে ছিলাম না।কি থেকে, কিভাবে যে আমি ওকে খাইয়ে দিলাম সেটা আমার নিজের‌ও অজানা।”
— “কি এখন মুখে আওয়াজ নেই কেনো? জবাব দিন আমার প্রশ্নের।” (আয়ানা)

আয়ানার কথায় ভাবনা থেকে বর্তমানে ফিরে এলো অর্থ।কিছুটা তোতলিয়ে-ই অর্থ বললো,
— “ততো ককি হয়েছে? খাইয়ে দিয়েছি,তাতে কি? যত‌ই যাই হোক আমাদের বাড়িতে আছো,আর না খেয়ে থাকলে আমাদের‌ই দুর্নাম হতো তাই অতো শতো না ভেবে তোমাকে খাইয়ে দিয়েছিলাম।আর তাতে এমন জেরা করার কি আছে?”
— “না কিছু নেই।আপনার বিছানা রেডি আসুন শুয়ে পড়ুন।” (আয়ানা)
— “হুম।গুড নাইটটা অন করে দিও।” (অর্থ)
— “হ্যাঁ দিচ্ছি।” (আয়ানা)

!!
এভাবে কয়েকটা দিন কেটে যায়।আয়ানা আর অর্থের মধ্যেকার টক ঝাল মিষ্টি দ্বন্দ্ব লেগেই চলেছে।আজ অর্থের দুজন বন্ধুর আসার কথা রয়েছে।তাদের মাঝে একজন অর্থের টিমের সদস্য আর আরেকজন অর্থের কলেজ ফ্রেন্ড। অর্থ তাড়াতাড়ি প্র্যাকটিস শেষ করে বাসায় আসে। অর্থ যখন আসলো আয়ানা তখন ঘর গোছাচ্ছিলো। অর্থ রুমে প্রবেশ করে বলে,
— “এই শোনো।”
— “আপনি? এতো তাড়াতাড়ি চলে এলেন যে?” (পেছনে ঘুরে আয়ানা)
— “ওইজন‌্য‌ই তো তোমাকে ডাকলাম।বলছি আজ আমার দুজন বন্ধু আসবে বাসায়।” (অর্থ)
— “তো আমি কি করতে পারি?” (আয়ানা)
— “দেখো তোমার আমার মধ্যে কি চলে সেটা তো বাইরের কেউ জানে না।তাই আমার বন্ধুদের সামনে দয়া করে আমার ইমেজটা খারাপ করো না।মানে আমি কি বোঝাতে চাইছি বুঝতে পারছো?” (অর্থ)
— “বিনিময়ে কি দেবেন?” (আয়ানা)
— “মানে?” (ভ্রু কুঁচকে অর্থ)
— “মানে আমি আপনার ইমেজ ঠিক রাখলে তার বিনিময়ে কি দেবেন?” (আয়ানা)
— “তুমি যা চাইবে তাই।বলো কি চাই তোমার?” (অর্থ)

আয়ানা একটু ভেবেচিন্তে বললো,
— “বেশি কিছু না,শুধু আমায় সাথে নিয়ে একদিন পড়ন্ত বিকেলে নদীর ধারে আইসক্রিম খেতে যেতে হবে।তো আপনি কি রাজি?”

চলবে

#মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?
#লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
#পর্ব_৮

আয়ানা একটু ভেবেচিন্তে বললো,
— “বেশি কিছু না,শুধু আমায় সাথে নিয়ে একদিন পড়ন্ত বিকেলে নদীর ধারে আইসক্রিম খেতে যেতে হবে।তো আপনি কি রাজি?”
অর্থ কোনো কিছু না ভেবে তৎক্ষণাৎ বলে দিলো,
— “ইয়েস আমি রাজি।”
— “ওকে তাহলে আপনি যা বলবেন সেটা হয়ে যাবে।” (আয়ানা)

বিকেলের দিকে অর্থের বন্ধু দুজন এলো। অর্থ ওদেরকে ড্র‌ইংরুমে বসিয়ে টুকটাক গল্প করছে আর আড্ডা দিচ্ছে।
— “সব‌ই তো বুঝলাম।কিন্তু ভাবি কোথায়?ভাবিকে নিয়ে আয়।” (রুদ্র)
— “হুম অর্থ রুদ্র একদম ঠিক বলেছে।দেখ তুই বিয়ে করেছিস তবুও আমাদের ট্রিট দিস নি,ইভেন ইনভাইট‌ও করিস নি‌। আচ্ছা ঐসব ছাড়লাম এবার ভাবির সাথে তো আমাদের পরিচয় করাবি নাকি।” (ইমরান)
— “আরেহ ইয়ার আমায় ভুল বুঝিস না,হুট করেই সব হয়ে গেছে।আর আমরা ফাংশন‌ও করি নি।” (অর্থ)
— “হুম বুঝলাম এখন কথা না বলে ভাবিকে আমাদের সামনে নিয়ে আয়, পরিচয় করিয়ে দে।” (রুদ্র)
— “হ্যাঁ তোরা বোস আমি আসছি।” (অর্থ)

অর্থ আয়ানাকে ডাকার জন্য ঘরে যায়।আয়ানা ঘরেই রয়েছে তবে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে মনে মনে কিছু একটা ভাবছে। অর্থ ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আলতো করে বললো,
— “আয়ানা!!!”
আয়ানা সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে তাকায়।ওর চোখের চাহনি, ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি,আকার-ভঙ্গি সবকিছু একটা মুগ্ধতার রেশ প্রকাশ করছে।কেননা অর্থ আয়ানাকে এতো সুন্দর করে ডেকেছে যে আয়ানা খুব‌ই মুগ্ধ।এই এতো বছরে কেউ আয়ানাকে এভাবে ডাকে নি।তবে অর্থ অন্যদের ব্যতিক্রমও বলে নি শুধু আয়ানা বলেই ডেকেছে। কিন্তু ওর এই ডাকের মাঝে অন্য একটা টান আছে যেটা আয়ানাকে এতো মুগ্ধ করলো।

আয়ানা মুচকি হেসে বললো,
— “জ্বি বলুন।”
— “বলছিলাম যে আমার বন্ধুরা তোমার সঙ্গে আলাপ করতে চাইছে। তুমি কি একটু যাবে ড্র‌ইংরুমে?” (অর্থ)
— “হুম চলুন।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা চলো।” (অর্থ)
আয়ানা দুই ধাপ এগিয়ে দাঁড়িয়ে যায়,
অর্থ ওর দাঁড়ানোর কারণ খুঁজে না পেয়ে বললো,
— “দাঁড়ালে যে?”
— “মাথায় কাপড় দিতে ভুলে গেছিলাম।না মানে আমি দেখেছি নতুন ব‌উদের মাথায় কাপড় দিতে হয়।” (আয়ানা)
— “আচ্ছা দিয়ে চলো।” (অর্থ)
আয়ানা মাথার উপরে ওড়না দিয়ে অর্থের সঙ্গে নিচে গেলো।

অর্থ আর আয়ানাকে একসাথে দেখে রুদ্র এবং ইমরান মুখে হাসির ঝিলিক নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে।আয়ানা ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— “আসসালামুয়ালাইকুম।”
রুদ্র আর ইমরান সালামের জবাব দিলো। রুদ্র মুচকি হেসে বললো,
— “কেমন আছেন ভাবি?”
— “আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনারা কেমন আছেন ভাইয়া?” (মুচকি হেসে আয়ানা)
— “আমরা‌ও ভালো আছি।তা অর্থ ভাবিকে আমাদের পরিচয়টা দে।” (ইমরান)
— “ওহ হ্যাঁ দিচ্ছি।ও হচ্ছে ইমরান,আর ও রুদ্র। রুদ্র তো আমার সঙ্গেই টিমে খেলে আর ইমরান জব করে।” (অর্থ)
— “ওহ আচ্ছা আপনারা বন্ধুরা গল্প করুন আমি চা-কফির ব্যবস্হা করছি।” (আয়ানা)

বলেই আয়ানা কিচেনে গিয়ে ওদের জন্য কফি আর স্ন্যাকস বানিয়ে নিয়ে আসে।অর্থ ওদেরকে খেতে বললো।কফিটা খাওয়ার পর ইমরান বললো,
— “ভাবি এগুলো কি সব আপনি নিজেই বানালেন?”
— “জ্বি ভাইয়া,আসলে আপনারা ওনার বন্ধু তাই আপনাদেরকে নিজের হাতে আপ্যায়ন করানোই টাই বেশি উপযুক্ত মনে করেছি। কিন্তু ভাইয়া কফিটা খেতে কি খুব বাজে হয়েছে?” (আয়ানা)
— “একদম না ভাবি।অনেক ভালো হয়েছে ইভেন প্রতিটা আইটেম-ই অসাম।আসলে আমরা ভাবিই নি‌ই যে আপনি আমাদের জন্য স্ন্যাকস বানাবেন।” (ইমরান)
— “কেনো ভাইয়া?” (আয়ানা)
— “না আসলে যত‌ই হোক আপনার হাজব্যান্ড তো একজন স্টার।তার সত্ত্বেও আপনি সার্ভেন্টদের কাজ না করতে গিয়ে নিজেই এসব বানালেন।আপনার মাঝে একটুও অহংকার নেই।হ্যাঁ আমার বন্ধু অর্থ কখনো অহংকার করে নি,নিজের পরিচয়ের বড়াই করে নি।আর আপনিও ঠিক ওর‌ই মতো।আপনাদের দুজনের মধ্যে কোনোরকম অহংকার নেই।” (ইমরান)
— “তুই ঠিকই বলেছিস ইমরান।এই তো কিছুদিন আগে একটা গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে ছিলাম।ভাইরে ভাই কি বলবো,প্লেয়ার আমি,আমার অতো অহংকার নেই আর ওর অহংকারের চোটে মাটিতে পা-ই পড়ে না।তারপর ভাবলাম বিয়ের আগেই এতো,বিয়ের পর তো অহংকারে আমার বাবা-মাকেও পাত্তা দেবে না।ব্যাস তখন‌ই ব্রেক‌আপ।বাট এইদিক দিয়ে ভাবি আপনাকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে।” (রুদ্র)

আয়ানা মুচকি হেসে বললো,
— “আসলে ভাইয়া ওসব কিছু না।মিছে অহংকার করে কি লাভ।মানুষ অনেক বড় কিছু‌ই হতে পারে তাতে অহংকার করার কিছু নেই।আর আপনারা আমার হাজব্যান্ডের বন্ধু মানে আপনারা আমার ভাইয়ের মতো।আর ভাই যখন বোনের বাসায় বেড়াতে আসবে তখন বোন কি তাদের নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে না? আর তাছাড়া আপনারা তো দুপুরে আসতে পারতেন আপনাদের আমি স্পেশাল কিছু খাওয়াতাম।”
— “থাক থাক অনেক হয়েছে তোমাকে আর স্পেশাল কিছু খাওয়াতে হবে না।তোমার স্পেশাল মানে তো ওই মাছের ঝোল আর সবজি।” (অর্থ)
— “ওসব ছাড়া আমি বিরিয়ানিও রান্না করতে পারি হুহ।দুপুরে আসলে ওটাই খাওয়াতাম।” (আয়ানা)
— “মিস করে গেলাম তো।এই অর্থ তো আমাদের দুপুরে আসতে বলে নি।ইস দুপুরে আসলে কি ভালোই হতো!” (রুদ্র)
— “হুম ঠিকই রে।এই অর্থ আমাদের আগে বলিস নি কেন?” (ইমরান)
— “আমি কি আর জানি নাকি ও এসব করবে।আমি তো ভেবেছি ও কিছু পারে না।” (অর্থ)
— “হুম আপনি সেটাই তো ভাববেন, মাথামোটা একটা!!” (মুখ ভেংচি দিয়ে আয়ানা)
— “আচ্ছা হয়েছে আর ঝগড়া করিস না তোরা।” (রুদ্র)
— “হুম ভাইয়ারা আপনারা আপনাদের বন্ধুকে
বুঝান।আমি যাই মা’র সাথে হাঁটতে বের হবো।” (আয়ানা)
— “হ্যাঁ হ্যাঁ যাও তো তুমি।” (অর্থ)

আয়ানা অর্থের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে ঘরে চলে গেলো। রুদ্র আর ইমরান অর্থের সঙ্গে গল্প করতে লাগলো।
— “অর্থ আজ আসি রে। আবার অন্য একদিন আসবো।” (রুদ্র)
— “হুম অর্থ,ভাবিকে নিয়ে আমাদের বাসায় বেড়াতে যাস।আর একটা কথা মনে রাখিস ভাবি কিন্তু অনেক ভালো,তুই ভাগ্য করে এমন একটা ওয়াইফ পেয়েছিস।” (ইমরান)

ইমরান আর রুদ্র চলে যায়।ওদের বিদায় দিয়ে অর্থ ঘরে আসে।আয়ানা তখন ঘরে নেই, অর্থের আম্মুর সাথে হাঁটতে বেরিয়েছে। অর্থ আনমনে এসে বিছানায় বসে।ওর কানে শুধু ইমরানের বলা শেষের কথাগুলোই বাজছে।
— “আমার কেনো এরকম হচ্ছে? কেনো শুধু মাথার মধ্যে এই মেয়েটার কথা আসছে।এই মেয়েটা সারাদিন আমার কানের কাছে বকবক করে আমাকে পুরো পাগল করে দিয়েছে।না না আমাকে এসবের মধ্যে জড়ালে চলবে না।” (অর্থ)
এসব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার জন্য অর্থ ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে দিয়ে এক্সারসাইজ করা শুরু করলো।

!!
— “হ্যাঁ সারা তুই কোনো চিন্তা করিস না,আমি কালকে ঠিক পৌঁছে যাবো।হোল নাইট থাকতে না পারলেও লেট নাইট যতটুকু পারি থাকবো। সবাই মিলে বেশ এনজয় করবো।তোর বার্থডে আর আমি না গেলে হয় বল।”
ফোনে কথা গুলো বলতে বলতে রুমে ঢুকলো অর্থ।অপর পাশ থেকে সারা বললো,
— “হুম অর্থ তোকে তো আসতেই হবে‌‌। আচ্ছা ঠিক আছে বেবি কালকে তাহলে চলে আসিস।”
— “ওকে ওকে।” (মুচকি হেসে অর্থ)

অর্থ কথা বলা শেষ করে সোজা তাকাতেই ওর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো।কারণ আয়ানা ওর দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অর্থ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
— “কি?কি হয়েছে?এভাবে তাকাচ্ছো কেনো?”
— “কার সাথে কথা বলছিলেন?” (আয়ানা)
— “ওহ আমার ফ্রেন্ড সারা। কালকে ওর বার্থডে তাই ইনভাইট করলো।আসলে খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড তো।” (অর্থ)
— “হুম সে তো বুঝতেই পারছি কতোটা ক্লোজ।তা আপনি নিশ্চয়ই কালকে পার্টিতে যাবেন।” (আয়ানা)
— “অবভিয়েসলি এতবার করে বলেছে আর যাবো না তা কি করে হয়?” (অর্থ)
— “নাচানাচিও করবেন?” (আয়ানা)
— “আরেহ পার্টিতে যাবো আর ডান্স করবো না এটা কেমন ধরণের কথা।সবাই ডান্স করবে আমিও করবো।” (অর্থ)
— “না আপনি করবেন না। আপনার কালকে পার্টিতে যাওয়া বন্ধ।বার্থডে পার্টি হচ্ছে তাই না,মেয়েদের সঙ্গে নাচানাচি?সব আমি বের করছি দাঁড়ান।আচ্ছা আপনার এইসব স্বভাব আপনার গার্লফ্রেন্ড জানে? আপনার গার্লফ্রেন্ড এর নম্বরটা আমায় দিন তাকে আমি ফোন করে সব কেচ্ছা জানাবো।” (আয়ানা)
— “এই শোনো একদম বাড়াবাড়ি করবে না।আর আমার গার্লফ্রেন্ডের নম্বর আমি তোমাকে দেবো না।ও তোমার মতো থার্ডক্লাস নয় যে এসব সামান্য বিষয় নিয়ে ঝামেলা করবে।” (অর্থ)
— “হ্যাঁ জানি তো আপনার গার্লফ্রেন্ড কতটা ক্লাসের। এইজন্য তো আপনার লুচ্চামি তার চোখে পড়ে না। ছিঃ একে তো হাফ প্যান্ট পরে পা গুলো সবসময় মেয়েদেরকে দেখান আর তার ওপর মেয়েদের সাথে ডান্স এতোটা লুচু কেমনে হতে পারেন আপনি?” (আয়ানা)
— “মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ।ডান্স ইজ জাস্ট নরমাল।আর হাফ প্যান্ট বলছো কি ফুটবলের জন্য ওটাই উপযুক্ত ড্রেস।” (অর্থ)
— “ফুটবলের জন্য না আপনার সুবিধার জন্য। যাই হোক আপনার পার্টিতে যাওয়া হবে না এটাই ফাইনাল।” (আয়ানা)

অর্থ রাগান্বিত দৃষ্টিতে আয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো,
— “আমি যাবো কি যাবো না সেটা তুমি বলার কে? কে হ‌ও তুমি আমার?”
আয়ানা বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বললো,
— “বিয়ে করা বউ।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here