মন পাজড়ে শুধু তুমি আছো?,পর্ব_১১,১২
লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
পর্ব_১১
হঠাৎ ওদের মাঝে একটা মেয়ে আয়ানাকে অর্থের পাশে দেখে। এতোক্ষণে কারোই আয়ানার দিকে নজর ছিলো না সবাই অর্থকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলো।কিন্তু এখন তারা অর্থকে জিজ্ঞেস করে,
— “আচ্ছা আপনি কিছু মনে না করলে আমরা কি জানতে পারি আপনার পাশের এই মেয়েটি কে?”
ওদের প্রশ্নটা শুনে আয়ানা এবং অর্থ দুজন দুজনের দিকে তাকায়।আয়ানা বুঝতে পারছে না এখন কি বলা উচিত আর ও এটাও বুঝতে পারছে না যে অর্থ কি উত্তর দেবে।কিন্তু অর্থ আয়ানাকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে ওর ফ্যানদেরকে বললো,
— “সি ইজ মাই ওয়াইফ আয়ানা।”
অর্থের মুখ থেকে এই কথাটা শুনে ওর ফ্যানদের এবং আয়ানার রিয়্যাকশন আকাশ থেকে পড়ার মতো।ফ্যানরা সবাই একসাথে বলে উঠলো,
— “আপনি ম্যারিড?অবশ্য আমরা এফবিতে দেখেছিলাম কিন্তু ভেবেছিলাম ফেইক নিউজ।বাট এখন দেখছি আপনি সত্যিই ম্যারিড।…….তবে ভালোই হলো একসঙ্গে ম্যামের সাথেও দেখা হয়ে গেলো।ম্যাম আমরা কি আপনার সাথেও একটা সেলফি উঠতে পারি?”
অর্থ আয়ানাকে হ্যাঁ বলতে ইশারা করে।আয়ানাও এগিয়ে যায়।তবে একটা মেয়ে বলে,
— “এক মিনিট স্যার আপনিও আসুন।আপনারা দুজন পাশাপাশি দাঁড়ান আর আমরা সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছি।”
অর্থ আয়ানার পাশে এসে দাঁড়ায় তারপর বাকিরা সেলফি তুলে নেয়।তবে সবাই যাওয়ার আগে অর্থ এবং আয়ানার দুজনেরই খুব প্রশংসা করে।অর্থ মুচকি হেসে গাড়িতে গিয়ে বসে, আয়ানাও পিছুপিছু যায়।
অর্থ ড্রাইভ করতে করতে আয়ানাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— “খুব তো সেদিন বললে আমার পেছনে নাকি কেউ ঘোরে না,আজ দেখলে তো কতজন আমার জন্য ফিদা আর আমার কত প্রশংসা করলো।”
আয়ানা এই কথার কোনো জবাবও দিলো না আর কোনো প্রতিক্রিয়াও করলো না।তবে অর্থকে অন্য একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো।
— “ওদের সামনে আমাকে আপনার ওয়াইফ বলে পরিচয় দেওয়াটা কি আপনার খুব দরকার ছিলো?” (আয়ানা)
— “কেনো? ওরা জানতে চেয়েছে তাই বলেছি।” (অর্থ)
— “কিন্তু আমি যে আপনার ওয়াইফ সেটা তো রিলেটিভরা ছাড়া কেউ জানে না।মিডিয়া জানে আপনি বিবাহিত বাট আমায় তো চেনে না।” (আয়ানা)
— “তো?” (অর্থ)
— “তো আবার কি? আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে যখন আপনার বিয়ে হবে তখন তো সেই নিয়ে লেখালেখি হবে।আর আমার পরিচয়টা দিয়ে সেটার সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দিলেন।আমার পরিচয়টা না দিলে তখন সবাই ভাবতো আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথেই আপনার বিয়ে হয়েছে।” (আয়ানা)
— “তোমার কি মনে হয় আমাদের ডিভোর্স হলে মিডিয়া সেটা প্রকাশ করতো না? আরেহ আমি সব ভেবেচিন্তেই বলেছি।আর যাই হোক না কেনো আমার অতো মাথা ব্যথা নেই।জাস্ট চিল ইয়ার।” (অর্থ)
— “হুম চিল চিল-ই করেন তারপর দেখবেন কপালে চিলের মতোই একজন জুটবে আর সে শান্তি কেড়ে নিয়ে যাবে।” (আয়ানা)
— “হ্যাঁ জুটেছেই তো, তুমি আস্ত একটা চিল।সেই প্রথম দিন থেকে আমার শান্তি কেড়ে নিয়ে আমায় জ্বালিয়ে মারছো।কবে যে একটু শান্তি পাবো…!!” (বিড়বিড় করে অর্থ)
!!
“আউস কইরা বাপে আমায় করাইছিল বিয়া
বউ আনতে গিয়াছিলাম একশো গাড়ি নিয়া,
এখন দিনে রাইতে দেখায় তার আসল চেহারা
বউ তো নয় যেনো সিসি ক্যামেরা!!”
গানটা হালকা ভলিউমে ছেড়ে দিয়ে অর্থ দাঁতে দাঁত চেপে শার্টের বোতাম সেলাই করছে।অবশ্য সেটা নিজের ইচ্ছেয় নয় আয়ানার হুকুমে,আর ঠিক এই কারণেই অর্থ এই গানটা শুনছে আর সেলাই করছে।গানের আওয়াজ কিচেনে থাকা আয়ানার কানে গিয়ে পৌঁছালো,সে আর এক মুহুর্তও সময় নষ্ট না করে ছুটে ঘরে চলে আসে।
— “কি ব্যাপার? আপনি এসব কি গান বাজাচ্ছেন? আপনি আমায় কটাক্ষ করছেন?” (আয়ানা)
— “কটাক্ষ করার কি আছে গানে বলা বৈশিষ্ট্যের সাথে তোমার যে পুরোপুরি মিল আছে সেটা তো সবারই জ্ঞাত।এমনিতে তো সবসময় জ্বালাও আবার এখন আমায় দিয়ে শার্টের বোতাম সেলাই করাচ্ছো, জীবনে আমি সেলাই করা জামা তো দূর একটা শার্ট তিনবারের বেশি পরি নি আর তুমি আমাকে পুরোনো জিনিসও পরাচ্ছো।” (অর্থ)
— “বেশ করছি।দুদিন পর পর শুধু জামাকাপড় কেনা তাই না? একটু ছিঁড়েছে তো কি হয়েছে সেলাই করে পরলে কি হয়? আর তাড়াতাড়ি বলছি গানটা বন্ধ করুন।” (আয়ানা)
— “করবো না আরো জোরে ভলিউম দেবো।” (অর্থ)
— “শুনবেন না তো আমার কথা?” (আয়ানা)
— “না শুনবো না,কি করবে তুমি হ্যাঁ?” (অর্থ)
— “কিচ্ছু করবো না।সব আপনি করবেন।কালকে যাবেন না জার্মানি,তো আপনার লাগেজ কে প্যাক করবে? সব নিজে করে নেবেন আমি একটুও হাত লাগাবো না।” (আয়ানা)
অর্থ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
— “না গোছালে তাতে কি? আমার কি হাত নেই নাকি।আমি একাই একশো বুঝেছো।”
— “কত যে আপনি একশো আমার জানা আছে। একশো তে ক’টা শুণ্য হয় জানেন?” (আয়ানা)
— “তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো? দাঁড়াও দেখাচ্ছি তোমাকে আমি কি পারি আর না পারি।” (অর্থ)
অর্থ রাগ করে উঠে আলমারির সামনে যায়।আয়ানা ওদিকে তেমন নজর না দিয়ে বিছানার একপাশে চুপটি করে বসে। অর্থ একে একে আলমারিতে ওর যতো জামাকাপড় ছিলো সবকিছু নিয়ে আসে।কিন্তু দুর্ভাগ্য অর্থ কিছুতেই বুঝতে পারছে না কোনটা রেখে কোনটা নেবে আর কোনটা নিলে ওর সুবিধা হবে।একদিকে দ্বিধাদ্বন্দ্ব অপরদিকে আয়ানাকেও কিছু বলতেও পারছে না সবমিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা অর্থের।নিমিষেই ও সব জামাকাপড় এলোমেলো করে ফেললো।আয়ানা এতোক্ষণ না দেখার ভান করে থাকলেও আর চুপ করে বসে থাকতে পারলো না।বাধ্য হয়ে অর্থের হাত থেকে জামাকাপড় কেড়ে নিয়ে হতাশ হয়ে বললো,
— “ওহ খোদা রক্ষা করো এ কাকে দিয়েছি আমি রাজার পার্ট?এ তো আস্ত একটা অপদার্থ,কোনো কাজের নয়।ইস জামাকাপড়গুলোর কি ছিড়ি করেছে, সবগুলো গুছিয়ে রেখেছিলাম আর এই অপদার্থ সব এলোমেলো করলো।দেখো আবার হা করে তাকিয়ে আছে।কি হলো দিন এগুলো আমাকে, আমি ঠিক করে দিচ্ছি সব।”
অর্থ কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বললো,
— “না থাক তোমাকে আমার জন্য কিছু করতে হবে না।আমি নিজের কাজ নিজেই করতে পারি।”
— “উহা তো কেবল মাত্রই দর্শন করিলাম জনাব।তা আপনি যদ্যপি আজ্ঞা করিয়া জামাকাপড়গুলো আমার নিকটে প্রেরণ করিতেন তবে বড়ই উপকার হইতো।” (আয়ানা)
অর্থ জামাকাপড়গুলো বিছানার উপর রেখে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলো।আয়ানা বাঁকা চোখে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিছানায় বসে সব কাপড়গুলো ভাঁজ করে ওর লাগেজ গুছিয়ে দিলো আর বাকি জামাগুলো আলমারিতে তুলে রাখলো।
!!
সকালে,
বাসার সবাই খুবই ব্যস্ত কারণ অর্থ আজকে একমাসের জন্য প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে জার্মানি যাবে।একটু পরেই ওর ফ্লাইট তাই বাসায় তোড়জোড় চলছে।তবে অর্থের আম্মুর মনটা খুব খারাপ একমাস ছেলেকে ছাড়া থাকবেন,কেননা মায়েদের কাছে তার সন্তানেরা তো ভীষণ প্রিয় আর সন্তানদের ছাড়া একমাস কি একদিন থাকতেও কষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক।তাও অর্থি আয়ানা মিলে উনাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কোনোমতে ঠিক রেখেছে।অর্থ একটু পরে বেরিয়ে যাবে তাই আয়ানা আগেই ওর জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করে ঘরে নিয়ে যায় দেয়ার জন্য।কিন্তু ও ঘরে গিয়ে অর্থকে পায় না।আয়ানা ব্রেকফাস্ট টা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে পেছনে ঘুরতেই জোরে একটা চিৎকার দেয় আর সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
— “এই মেয়ে কি সমস্যা? এতো জোরে চিৎকার করছো কেনো?” (অর্থ)
— “ইস আপনি আমার সামনে থেকে যান। ছিঃ এভাবে কেউ টাওয়েল পরে বের হয়?” (অন্যদিকে ঘুরে আয়ানা)
আসলে অর্থ মাত্রই শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে আর ওর শরীরে শুধু দুটো টাওয়েল। একটা ঘাড়ে আর একটা কোমড়ে পেঁচানো। অর্থ চুলগুলোও ভালো করে মোছে নি,চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে আর সারা শরীরেও পানির ফোঁটা লেগে আছে।
— “এদিকে ঘোরো।কি হলো ঘোরো বলছি।” (অর্থ)
আয়ানা আস্তে আস্তে সামনের দিকে ঘুরলো।
— “এবার চোখ খোলো।কি হলো খোলো।দেখো এক কথা রিপিট করতে আমার ভালো লাগে না।” (অর্থ)
আয়ানা চোখ মেলে তাকায়।চোখের সামনে অর্থকে এভাবে খালি গায়ে থাকতে দেখে আয়ানা মাথা নিচু করে বলে,
— “লাজ লজ্জা নেই? এভাবে একটা মেয়ের সামনে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছেন।”
আয়ানার কথা শুনে অর্থ হো হো করে হেসে দিলো।আয়ানা ওর হাসির কারণ খুঁজে না পেয়ে বললো,
— “পেত্নিতে ধরলো নাকি? এমন পাগলের মতোন হাসছেন কেনো?”
— “তোমার কথা শুনে হাসছি।আরেহ এতে লাজ লজ্জার কি আছে? ইটস আ নরমাল ম্যাটার।তুমি জানো আমি যদি সোশ্যাল মিডিয়াতে শার্টলেস পিক পোস্ট করি তাতে কতো লাইক হয়?আরেহ শুধু লাইক কি বলছি হাজার হাজার কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়।সব মেয়েরা তো আমার এই লুক দেখার জন্য পাগল।” (অর্থ)
— “থাক আর ভান্ডার খুলে বসতে হবে না।মেয়েগুলোও যেমন ক্যারেক্টারলেস আপনিও তেমনই।যাই হোক কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে ব্রেকফাস্টটা করে নেবেন।আমি একটু পরে এসে আপনার ওয়ালেট,রুমাল ওগুলো দিয়ে যাচ্ছি।” (আয়ানা)
— “ওকে।” (অর্থ)
আয়ানা তাড়াতাড়ি করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
একটু পরে অর্থ আয়ানাকে ডাকে।ওর ডাক শুনে আয়ানা ঘরে আসে।তারপর অর্থের ওয়ালেট,রুমাল আর মোজাটা বের করে দেয়। অর্থ এখন পুরোপুরি তৈরি,নিচে গাড়িও রেডি ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
অর্থ ঘর থেকে বেরোনোর আগে আয়ানার দিকে একটু এগিয়ে যায়।আয়ানা জিজ্ঞেস করে,
— “কিছু বলবেন?”
— “আজ আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে,এই একমাস তো বাইরে থাকবো তাই তোমার জ্বালা থেকে এই একমাস আমি মুক্ত থাকবো,আহা ভাবতেই আমার খুব হ্যাপি লাগছে।” (অর্থ)
চলবে
#মন_পাজড়ে_শুধু_তুমি_আছো?
#লেখিকা_মাইসারাহ_আরোহি?
#পর্ব_১২
অর্থ ঘর থেকে বেরোনোর আগে আয়ানার দিকে একটু এগিয়ে যায়।আয়ানা জিজ্ঞেস করে,
— “কিছু বলবেন?”
— “আজ আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে,এই একমাস তো বাইরে থাকবো তাই তোমার জ্বালা থেকে এই একমাস আমি মুক্ত থাকবো,আহা ভাবতেই আমার খুব হ্যাপি লাগছে।” (অর্থ)
আয়ানা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— “আহ খুশি দেখো উনার একমাসের জন্য জার্মানি যাচ্ছে তাই কতো ভাব।তা আপনি যতই লাফান না কেনো আপনাকে তো আবার এখানেই ফিরতে হবে,আমার নিকটই আসতে হবে।সুতরাং অতো খুশি হওয়ার আমি তেমন কোনো কারণ দেখছি না।”
— “এই শোনো তোমার কাছে ফিরবো মানে কি?আমি তোমার কাছে ফিরবো না এই বাড়িতে ফিরবো বুঝেছো?” (অর্থ)
— “ওই একই হলো।” (আয়ানা)
— “না এক হলো না। এমনিতেই ছয় মাস পূর্ণ হলে আমি ডিভোর্সের এপ্লাই করবো আর তারপর…..” (অর্থ)
— “হুম জানি তো আর বলতে হবে না তখন তো গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে লীলা করবেন।ওইসব ছাড়া তো আর কিছু পারেন না।ক্যারেক্টারলেস লোক একটা।” (অর্থকে থামিয়ে দিয়ে আয়ানা)
— “একদম আমাকে ক্যারেক্টারলেস বলবে না, তুমি ক্যারেক্টারলেস ওজন্যই তো তোমাকে সারাদিন ছেলেরা ফোন করে।” (অর্থ)
— “কিহ এতবড় অপবাদ।কে আমাকে ফোন করে হ্যাঁ,কার সাথে কথা বলি আমি? একদম ভুলভাল কথা বলবেন না ক্লাসলেস লোক একটা,অসভ্য ইতর প্রাণী।” (আয়ানা)
দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি চলছে। অর্থি অর্থকে ডাকতে এসে দেখে ওদের ঝগড়া চলছে আর এমন পর্যায়ে সেটা চলে গেছে যে আরেকটু হলে দুজনে মারপিট শুরু করবে। অর্থি হা করে দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত গিয়ে দুজনের ঝগড়া থামায়।
— “আচ্ছা হয়েছে হয়েছে থাম তোরা দুজনে।আয়ানা তুমি এদিকে এসো তো।আর ভাই তুই তাড়াতাড়ি যা ড্রাইভার তোর জন্য অপেক্ষা করছে,হাতে বেশি সময় নেই।যা তুই তাড়াতাড়ি।” (অর্থি)
— “হুম যাচ্ছি কিন্তু তুই এই মেয়েটাকে বল নিজেকে শুধরে নিতে আমায় যেনো আর ভবিষ্যতে এমন বিরক্ত না করে।” (অর্থ)
কথাটা বলে অর্থ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আর আয়ানা অর্থের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে শুরু করে। অর্থি ওর এসব কান্ড দেখে হাসতে হাসতে বিছানায় বসে পড়ে।
!!
দুইদিন হয়েছে অর্থ জার্মানি এসেছে।আজ থেকে ওদের প্র্যাকটিস শুরু আর পরশু দিন প্রথম ম্যাচ।তাই সবাই জোর কদমে সকাল থেকেই অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে। অর্থ যেহেতু অধিনায়ক তাই ওর দায়িত্বটা বেশি,কোচ ওকেই বেশি করে সিচুয়েশন টা বুঝিয়ে দেন,কেমন অবস্থায় কিভাবে খেলা উচিত সেটাই জেনে নিচ্ছে অর্থ। সবকিছু বুঝে নিয়ে অর্থ বাকি প্লেয়ারদের সাথে প্ল্যান করে নিলো।সবাই অনুশীলন করছে আর অর্থ গ্রাউন্ডের একপাশে পানির বোতল হাতে বসে আছে। অর্থ কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও কিছু একটা ভাবছে।হঠাৎ অর্থের টিমমেট হাসান এসে অর্থের পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,
— “কি ক্যাপ্টেন গভীর মনোযোগ দিয়ে কার কথা ভাবছেন হুম?”
হাসানের কথায় অর্থ মুখ তুলে তাকালো।তারপর ঠোঁট কিঞ্চিত প্রসারিত করে বললো,
— “না কারো কথা ভাবছি না।আসলে এই একমাস ফ্যামিলিকে ছাড়া থাকতে হবে তাই একটু খারাপ লাগছে।”
— “ফ্যামিলি নাকি ওয়াইফ? দেখ আমি কিন্তু সব বুঝি আসলে নতুন নতুন বিয়ের কালে এমনই হয়।আমারও হয়েছিল।তাই আমার মনে হচ্ছে তুই ফ্যামিলিকে না ভাবিকে মিস করছিস।” (হাসান)
— “আরেহ ধুর ওকে কেনো মিস করতে যাবো? আমার এমনিই ভালো লাগছে না।” (অর্থ)
— “সে তুই যাই বল আমি বুঝি সবটা।দেখ এর আগেও তো তুই পরিবারকে ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় খেলতে গিয়েছিস তখন তোর এমন হয় নি।কিন্তু এখন হচ্ছে,আর এখন হওয়ার কারণটা হচ্ছে তুই ভাবিকে মিস করছিস। তুই বরং এক কাজ কর একবার ফোন করে কথা বলে নে।আমি যাই বাকি অনুশীলনটুকু করি।” (হাসান)
হাসান অর্থকে একা রেখে অনুশীলন করতে চলে গেলো।তবে হাসানের বলা কথাগুলো অর্থকে খুব ভাবাচ্ছে।
— “আচ্ছা সত্যিই তো এর আগেও তো আমি বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, অনেকদিন থেকেছি তখন তো আমার এমন মনে হয় নি।কিন্তু এখন আমার এমন কেনো লাগছে?কেনো মনে হচ্ছে আমি আমার সবচেয়ে কাছের একটা জিনিস ফেলে এসেছি?কেনো মনের মধ্যে এমন উথাল পাতাল করছে? আর কেনোই বা বারবার ওই মেয়েটার মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে? আচ্ছা আমি ওকে মিস করছি নাকি? ওকে কি একটা ফোন করবো,একটু কি কথা বলে দেখবো ও কেমন আছে?” (মনে মনে অর্থ)
মনে মনে কথাগুলো ভাবার ঠিক পর মুহূর্তেই অর্থ নিজের সব ভাবনাকে দূরে ঠেলে দিয়ে বললো,
— “না আমি কিছুতেই ওই মেয়েটাকে মিস করতে পারি না,ওর মতো ফালতু মেয়েকে কেনো আমি মিস করবো? থাক ওকে আমি ফোনও করবো না,ফোন করলে ভাববে আমি ওর জন্য পাগল হয়ে গেছি।আর তাছাড়া ওর নম্বরটাই তো আমার কাছে নেই।ধুর এসব ভাবলে চলবে না।কুল অর্থ,কুল!!এখানে তুই খেলতে এসেছিস সো অন্য কোনো চিন্তা করলে চলবে না।জাস্ট এনজয় কর আর মন দিয়ে খেলে যা।তোকে তো চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে।”
নিজেকে কিছু মোটিভেশনাল ওয়ার্ড শুনিয়ে অর্থ ছুটে মাঠে চলে গেলো।
!!
দুইদিন পর,
বাংলাদেশ সময় এখন দুপুর একটা।আয়ানা ক্লান্ত হয়ে গ্রাউন্ড থেকে ফিরলো। পাঁচ মিনিট রেস্ট নেওয়ার পর আয়ানা ওয়াশরুমে চলে যায় শাওয়ার নিতে।শাওয়ার থেকে বেরিয়ে বারান্দায় টাওয়েল মেলে দিয়ে ঘরে আসতেই জয়া এসে আয়ানাকে ডাকে।
— “নতুন ভাবি নিচে সবাই আপনাকে লাঞ্চ করার জন্য ডাকছে।” (জয়া)
— “আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।” (আয়ানা)
একসাথে দুপুরের খাওয়ার শেষ করে আয়ানা আবার ঘরে চলে আসে।একা একা কিছু ভালো লাগছে না তাই আয়ানা টিভি অন করলো।একের পর এক চ্যানেল গুলো চেঞ্জ করতে গিয়ে আয়ানার মনে পড়লো আজকে তো অর্থের ম্যাচ আছে।
— “ওহো এখন তো দুটো বাজে। তারমানে জার্মানিতে সকাল ১০ টা। অর্থের ম্যাচও তো ১০টায় হওয়ার কথা ছিলো।” (আয়ানা)
আয়ানা দ্রুত স্পোর্টস চ্যানেলে দেয়।মুহুর্তেই আয়ানার মুখে হাসি ফুটে উঠলো কারণ ইতোমধ্যে খেলা শুরু হয়ে গেছে আর টিভিতে অর্থ কে দেখাচ্ছে।অর্থ দলের অধিনায়ক এজন্য ক্যামেরা ফোকাসটা ওর দিকেই বেশি।আর বলও অর্থের পায়ে যার কারণে সকল দর্শক এবং ধারাভাষ্যকার সবার মুখেই অর্থের নাম।আয়ানার তো ফুটবল প্রিয় যার কারণে ও আর চ্যানেল চেঞ্জ না করে মনের আনন্দে খেলাটা উপভোগ করতে থাকলো।
মোটামুটি ম্যাচটা জমে উঠেছে।হাফ টাইম শেষে প্লেয়াররা আবার মাঠে নেমেছে। ইতোমধ্যে অর্থের টিম দুটো গোল দিয়েছে আর তার মধ্যে একটা গোল অর্থ দিয়েছে।আয়ানা খুব মনোযোগ দিয়ে খেলাটা দেখছে।কিন্তু হঠাৎ কি যে হলো আয়ানা বুঝতে পারলো না।ও শুধু দেখতে পাচ্ছে অর্থ নিজের ডান কাঁধ ধরে মাটিতে শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে।আয়ানা এখনো বুঝতে পারছে না বিষয়টা কি হলো।পরক্ষণেই যখন ঘটনাটার রিপ্লে দেখানো হলো তখন আয়ানা দেখলো অর্থ যখন বল পায়ে গোলপোস্টের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই অপরনেন্ট টিমের একজন প্লেয়ার পা দিয়ে অর্থকে বাঁধা দেয়।যার কারণে অর্থ বাঁধা পেয়ে উল্টে খুব জোরে মাটিতে পড়ে যায়।আর ওর পায়ে লাগার সাথে সাথে দেহের ভার টা সম্পূর্ণ এসে ডান কাঁধের উপর পড়ে।
এদিকে অর্থের খুব খারাপ অবস্থা ও কিছুতেই চোখ মেলে তাকাতে পারছে না, কাঁধে আর পায়ে দুটোতেই ভীষণ যন্ত্রণা করছে।ও মাঠে শুয়ে থেকে কাতরাচ্ছে।সাথে সাথে ম্যাচ রেফারি বয়দের আসতে ইশারা করে।তারপর কয়েকজন ছেলে এসে অর্থকে স্ট্রেচারে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। টিভিতে এসব কিছু দেখে আয়ানার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে,না চাইতেও ওর চোখ থেকে পানি বেরিয়ে গেলো।ও তাড়াতাড়ি গিয়ে অর্থের বাবা আর আম্মুকে সবটা জানালো।সবাই এই খবরটা পেয়ে ভেঙে পড়েছে।মিডিয়াও জানিয়ে দিয়েছে অর্থের ইনজুরির কথা,তবে কতটা ইনজের্ড সেটা এখনো নিশ্চিত ভাবে জানা যায় নি,স্ক্যান চলছে রিপোর্ট পেলে সবটা বোঝা যাবে।
!!
দুপুরের ওই ঘটনার পর আয়ানা কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা অর্থ কেমন আছে জানার জন্য ও ব্যাকুল হয়ে আছে।ও বারবার আল্লাহর কাছে দোয়া করছে যাতে অর্থ ঠিক থাকে বেশি ইনজের্ড না হয়।
আয়ানা হাঁটুর মাঝে মুখ গুঁজে বসে আছে এমন সময় অর্থি কাঁদতে কাঁদতে এসে বললো,
— “আয়ানা ভাইয়ের শোল্ডার ডিসলোকেটেড হয়েছে আর পায়েও আঘাত লেগেছে।ডক্টর বলেছে খুব দ্রুত সার্জারি করতে হবে।”
কথাটা শোনার সাথে সাথে আয়ানার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।
চলবে