মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১০

0
2487

মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১০
জান্নাতুল নাঈমা

স্নিগ্ধ বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে লেডিস হোস্টেলের গেটের দিকে।
এক ঘন্টা তেত্রিশ মিনিট হয়ে এলো সে এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে।বন্ধুরা, ছোট ভাইরা তাঁর সাথে এসেছিলো কিন্তু সে তাদের বিদায় জানিয়েছে।
লোকজন তাঁদের গ্যাং দেখলে ঘাবড়ে যাবে, শুধু শুধু মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরীর মানে হয় না।
তাঁর নিজেরও এভাবে লেডিস হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকাটা বেমানান দেখাচ্ছে তবুও বাঁধ্য হয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে। যে স্নিগ্ধ তাঁর পঁচিশ বছরের জীবনে পাঁচ মিনিটও অযথা ব্যয় করেনি সেই স্নিগ্ধ আজ ঘন্টা পার করে দিচ্ছে একটি মেয়ের অপেক্ষায়।
একবার ঘড়ি দেখছে তো আরেকবার গেটের দিকে তাকাচ্ছে। আকাশ একটু পর পর ফোন করে খোঁজ নিচ্ছে আর বলছে “দোস্ত তুই অহেতুক টেনশন করছিস দেখিস আরোহী কোথাও যাবে না হোস্টেল থেকে বেরিয়ে তোর বাড়িই ফিরবে”
স্নিগ্ধ গম্ভীর ভাবে উত্তর দিচ্ছে “আমি কোন প্রকার রিক্স নিতে চাই না”
.
একঘন্টা পঞ্চান্ন মিনিট পর সব অপেক্ষার অবসান ঘটলো। আরোহী গেটের বাইরে পা রাখতেই স্নিগ্ধ কে দেখে মুখটা মলিন করে ফেললো। কতটা অসন্তুষ্ট হয়েছে তা তাঁর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
এদিকে আরোহীকে বের হতে দেখে স্নিগ্ধ স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে ভূবন ভুলানো এক হাসি দিলো।
আরোহীকে এগিয়ে দিতে তুরিনও বের হয়েছে।
স্নিগ্ধ কে দেখে মুখটা কৌতূহলি করে একবার আরোহী তো আরেকবার স্নিগ্ধর দিকে তাকাচ্ছে।
ভাব টা এমন যেনো আরোহী স্নিগ্ধ কে নিয়ে এসেছে আর বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে তাঁকে কিছু জানায়নি। তাই বিস্ময় নিয়ে দুজনকে ক্ষনে ক্ষনে দেখছে। তুরিন ফিসফিস করে বললো –

— কি রে একে তুই সাথে করে নিয়ে এসেছিস??

আরোহী কাঁধে ব্যাগটা একহাতে ধরে আরেক হাতে মাথার কাপড়টা ঠিক করে নিয়ে ধীর গলায় বললো-

— পাগল নাকি,,, একে কেনো আমি নিয়ে আসবো। নিশ্চয়ই গোয়েন্দাগিরি করে আসছে।

স্নিগ্ধ কেশে ওঠলো সাথে সাথে তুরিন কেঁপে ওঠে স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে চোখ মুখ খিঁচে ভয়ে ভয়ে বললো –

— আমি কিছু বলিনি, আমি কিছু করিনি।

আরোহী তুরিনের অবস্থা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
স্নিগ্ধ খানিকটা এগিয়ে দুজনের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এক হাত পকেটে গুঁজে মুখে বাঁকা হাসি টেনে বললো-

— উফফ শালিকা দুলাভাই কে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে। বান্ধবীর সাথে ফুসফাস কথা বলাটাই তো স্বাভাবিক। তারওপর বান্ধবী যদি হয় নিউ ম্যারিড তাহলে তো কথাই নেই। বলেই তুরিনকে চোখ মারলো।

আরোহী রেগে চোখ,মুখ কুঁচকে তাকালো।
তুরিন হা করে স্নিগ্ধর দিকে একবার আরোহীর দিকে একবার চেয়ে রইলো। স্নিগ্ধ সহ তাঁর পুরো গ্যাংকে দেখলেই তুরিনের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়। তারওপর স্নিগ্ধর এমন রসিকতা কথা শুনে তুরিনের হার্টফেল হওয়ার মতো অবস্থা।
.
স্নিগ্ধ বাইকে বসে আরোহীকে ইশারা করলো বসতে।
আরোহী দাঁতে দাঁত চেপে বললো –

— একা এসেছি একাই যেতে পারবো।

স্নিগ্ধ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে বললো-

— দেখো আরোহী খুব খিদে পেয়েছে। দুপুড়ে না খেয়েই এখানে এসে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছি।
সো এখন কোন প্রকার ঝামেলা করো না, খিদে পেলে কিন্তু আমার মাথা গরম হয়ে যায়।

আরোহী এবার ইচ্ছে করেই ওল্টো পথে হাঁটা ধরলো।
আর বললো-

— আপনার রাগে আমার কিছু জায় আসে না। আমি অটো নিয়ে চলে যাবো আপনি যেতে পারেন।

স্নিগ্ধ বাইক স্টার্ট দিয়ে একদম আরোহীর সামনে গিয়ে ব্রেক কষলো। রাগি চোখে চেয়ে কড়া ভাষায় বললো-

— বললাম না ঝামেলা না করতে একমিনিটের মধ্যে যদি বাইকে না ওঠিস তাহলে আজ আমিও দেখবো তুই কার অটো করে যাস। প্রত্যেকটা অটোতে একদম আগুন জ্বালিয়ে দিব৷ তুই নিশ্চয়ই তোর জন্য অন্যকারো ক্ষতি হোক এটা চাইবি না।

আরোহীও রাগি চোখে চেয়ে বললো –

— এটাই তো তোর আসল রূপ। নিজের মনের মতো কিছু না হলেই এসবই করতে পারিস। তোর থেকে এর থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না।

— জাষ্ট স্যাট আপ। অনেক হয়েছে আমায় যেহেতু এতোই চিনে গেছিস বুঝে গেছিস সেহেতু বুঝতেই পারছিস কি হবে?? সো চুপচাপ বস আর হাজব্যান্ডকে সম্মান দেওয়ার ট্রাই কর।

মানুষ আড় চোখে আরোহী স্নিগ্ধর দিকে তাকাচ্ছে।
বিকাল গড়িয়ে যাচ্ছে আরোহী আর কথা না বাড়িয়ে বাইকে ওঠে পড়লো।বেশ দূরত্ব বজায় রেখেই বসলো।
স্নিগ্ধ আয়নায় চেয়ে বাঁকা হেসে বললো –

— থ্যাংকস জানু উম্মাহ,,,

আরোহী এবার রাগে যেনো দ্বিগুণ চটে গেলো।
“কিছুক্ষণ আগে আসল রূপ বের করে এখন আবার গিরগিটির মতো রূপ বদলাচ্ছিস বেহায়া” মনে মনে কথাটা বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

স্নিগ্ধ সাথে সাথে এতো স্পিডে বাইক স্টার্ট দিলো যে আরোহী একদম স্নিগ্ধর পিঠে গিয়ে ঠেকলো তাঁর হাত দুটো স্নিগ্ধর পেট আঁকড়ে ধরলো।
সাথে সাথে স্নিগ্ধ আরো দ্বিগুন স্পিড বাড়িয়ে চিল্লিয়ে বললো–

— উহহো জানু এভাবে জরিয়ে ধরছো কেনো?? লজ্জা করে না নাকি বাসায় যেয়ে নেই একটু তো সবুর দাও মন কে। মানুষ কি বলবে ছিঃ
.
বাড়িতে পা ফেলতে না ফেলতেই শুরু হয়ে গেলো হৈ চৈ। স্নিগ্ধর বিবিন রাবেয়া বেগম, দাদান শফিক খান দুপুরেই বাড়ি ফিরেছেন। নাতির বিয়ের কথা শুনে দুজনই বেশ খুশি বিবিন একটু বেশীই খুশি কারন রিনির কাছে যতোটুকু শুনেছে মেয়ে একদম তাঁর কার্বন কপি।
.
বিবিন স্নিগ্ধ কে দেখেই আমার দাদু ভাই বলেই জরিয়ে ধরলো। শফিক খান সোফায় বসে তাদের দিকে চেয়ে আছে তাঁর পাশে রিনি বসা কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর বিবিন, স্নিগ্ধর কাহিনি দেখে মিটি মিটি হাসছে।
আরোহী ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো। ষাটোর্ধ বয়সি মহিলাটার দিকে বেশ কৌতুহল হয়েই চেয়ে দেখছে।
সোফায় বসা বৃদ্ধ লোকটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বয়স সত্তর প্লাস। লোকটার ফেইসের সাথে কোথাও যেনো স্নিগ্ধর বড্ড মিল পেলো। যুবক বয়সে নিশ্চয়ই স্নিগ্ধর মতোই হ্যান্ডসাম ছিলো। বেশ বুঝলো এরা স্বামী-স্ত্রী আর স্নিগ্ধর দাদা-দাদি পরোক্ষনেই চমকে ওঠে স্নিগ্ধর দাদির দিকে তাকালো। কি আশ্চর্য বিষয় স্নিগ্ধর দাদির গায়ের রং টাও বেশ চাপা খেয়াল করলো তাঁর নিজের থেকেও চাপা। অথচ এ বাড়ির প্রত্যেকটা লোকই ধবধবে ফর্সা। “আচ্ছা এ বাড়ির লোকেরা এতো ফর্সা বলেই কি কালো মেয়েদের প্রতি এরা আসক্ত নাকি, এই উত্তর তখনি পাবো যখন স্নিগ্ধর মায়ের বিষয় জানবো ছবিতে তো আর গায়ের রং বোঝা যায় না” বেশ ভাবনায় মশগুল হয়ে পড়েছে আরোহী তখনি বিবিন চিল্লিয়ে ওঠলো –

— ও মা গো এটাই নতুন বউ আমার নাত বউ মা গো মা। দাদু ভাই সত্যিই বলেছিলো আমার জমজ বোনকেই আনবে। এতো দেখছি সত্যিই তাই,,,
আরোহীর দুগালে ধরে কপালে চুমু খেলো বিবিন।
থুতনিতে হাত রেখে বললো-

— বাহ বেশ মিষ্টি দেখতে মাশাআল্লাহ। দাদু ভাই আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। এই যে মেয়ে আমার দ্বিতীয় বরকে তো দিয়ে দিলাম প্রথম টার দিকে যেনো আবার নজর দাও না।

স্নিগ্ধ এসে বিবিনের কাঁধে হাত রেখে বললো-

— ওহ বিবিন আপডেট ভার্সন কেই কেয়ার করে না আবার ওল্ড ভার্সন কোন চাপ নিও না তোমার নাত বউ সভ্য আছে।

আরোহীর দিকে চেয়ে চোখ টিপ দিলো। আরোহী এদের মধ্যে কি বলবে কি করবে বুঝে ওঠতে পারছে না। বেশ অস্বস্তি তে পড়ে গেলো৷ বিবিন বললো-

— তা কতোদিন চলছে এসব কিছুইতো জানলাম না বুঝলাম না। আমার কর্তা তো পুরো পাঁচ বছর ভালোবাসা বাসি করে দুপরিবার জানান দিয়ে আমাকে এ ঘরে তুলেছেন।তা তোমার মা বাবা কোথায় থাকেন,তাঁরা সব মেনে নিয়েছেন তো না নিলে কোন সমস্যা নেই আমি আর কর্তা গিয়ে সব মানিয়ে আসবো ??

আরোহীর মুখ টা মলিন হয়ে গেলো। স্নিগ্ধ বুঝতে পেরে বেশ তারাহুরো নিয়ে বললো-

— ওহ বিবিন সব পরে শুনবে খুব খিদে পেয়েছে খেতে দাও তো। সব পরে শুনে নিও আমাদের দুজনেরই প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।

বলেই আরোহীর হাত চেপে বললো”চলো চলো এই যে এই হলো আমার দাদান”

আরোহী সালাম দিতেই শফিক খান চশমার ফাঁকে আরোহী কে দেখে নিয়ে হোহো করে হেসে সালাম ফেরালো। স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে বললো-

— আমার যোগ্য উত্তরাধিকার তুমি।

স্নিগ্ধ মুচকি হেসে আরোহীর হাতটা চেপে ধরে নিয়ে উপরে ওঠে গেলো। সকলের সামনে এমনটা করায় আরোহী বেশ অস্বস্তি,বিরক্তি বোধ করলো সিঁড়ি পার হতেই এক ঝটকায় স্নিগ্ধর হাত ছাড়িয়ে রুমে চলে গেলো। স্নিগ্ধ জোরে একটা শ্বাস নিয়ে গুনগুন করতে করতে রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলো।
.
আরোহী ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই স্নিগ্ধ বাথরুম ঢুকে পড়লো।
মাথাটা প্রচন্ড ভার হয়ে আছে আরোহীর।
অতিরিক্ত কান্নার ফল। তবুও টেনশন কমাতে পারছে না ফোনটাও বাড়ি ফেলে এসেছে “মকরম শয়তান আমাকে নিয়ে এলি আমার প্রয়োজনীয় জিনিস কেনো নিয়ে এলি না??ওও তা আনলে তো আমার উপকার হতো তোর দ্বারা কেউ আবার উপকৃত হবে হুমহ” যে ভাবেই হোক মালা, বা আশিকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এ দুজন ছাড়া আর কেউ আমাকে সাহায্য করতে পারবে না। এ মূহুর্তে একটা ফোন খুব দরকার।

স্নিগ্ধ বেরিয়ে আরোহীর এমন চিন্তিত মুখ দেখে এক হাতে চুলের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আয়নায় আরোহীর দিকে চেয়ে বললো-

— মালার কথা ভাবছো??

আরোহী চমকে গেলো বড় বড় চোখ করে ওঠে দাঁড়ালো। স্নিগ্ধর পাশে এসে আতঙ্কিত স্বরে বললো-

— আপনি কি করে জানলেন?? মালা কোথায় কি করেছেন ওর সাথে আপনি?? ও বেঁচে আছেতো??

স্নিগ্ধ বিরক্ত হয়ে আরোহীর দিকে চেয়ে বললো-

— মালা সঠিক জায়গায়ই আছে।যেখানে আছে বেশ নিরাপদেই আছে ওকে নিয়ে তোমায় টেনশন করতে হবে না। বউ তুমি আমার তোমার প্রতি যেমন আমার দায়িত্ব রয়েছে তেমন তোমার আগাড়ে,নিগাড়ে সবার প্রতিই আমার যথেষ্ট দায়িত্ব আছে। আর আভিয়ান খান কখনো তাঁর দায়িত্ব এড়িয়ে চলে না। মাইন্ড ইট।
এবার চলো খাবো।

আরোহীর হাত চেপে ধরতেই আরোহী দাঁতে দাঁত চেপে বললো –

— মালা কোথায় আছে ওকে আমার কাছে এনে দিন নয়তো আমি কিচ্ছু করবো না চলে যাবো এখান থেকে।

স্নিগ্ধ আরোহীর অনেকটা কাছে চলে গেলো এক আঙুলে ঠোঁট জোরা চেপে ধরে ভারী আওয়াজে বললো –

— সসশ নিচে চলো একসাথে বসে খাবো। তারপর মালার সাথে কথা বলিয়ে দিবো প্রমিস। আমার সাথে না খেলে মালার হদিস কোনদিন পাবে না হুম।

আরোহী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রইলো। স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে চোখে ইশারা করে নিচে যেতে বলে নিজে চলে গেলো। আরোহী এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণে এনে বেরিয়ে গেলো।
.
বিবিন বেশ আদর যত্ন করে স্নিগ্ধ আর আরোহীকে খাবাড় বেড়ে দিচ্ছে। আরোহী লক্ষ করলো এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষই ভীষণ মিশুক সহজেই মিশে গেছে তাঁর সাথে অথচ সেই শুধু মিশে যেতে পারলো না। শুধু মাএ স্নিগ্ধর জন্য স্নিগ্ধ খাবাড় মুখে দিয়ে আরোহীকে ইশারা করলো খেতে আরোহী তবুও ভাবনায় ডুবে রইলো। স্নিগ্ধ আরোহীর দিকে চেয়ে আবার বিবিনের দিকে তাকালো আর বললো-

— বিবিন আমার বউ লজ্জা পাচ্ছে তুমি এক কাজ করো ওকে খাওয়িয়ে দেও এতে ওর লজ্জাটা অনেকটাই কমে যাবে। চিন্তা করো না এর জন্য তোমায় আমি বকশিস দিবো বলেই চোখ মারলো।

বিবিন খুশিতে গদগদ হয়ে আরোহীর পাশের চেয়ারে বসে ভাত মেখে মুখের সামনে ধরলো।
আরোহী কয়েক পলক ফেলে বিস্ময় চোখে তাকালো বিবিনের দিকে। অজান্তেই দুচোখ ভরে এলো তাঁর।
স্নিগ্ধ দেখেও না দেখার ভান করে খেতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।
আরোহী মুখ চিপে খাবাড়টা মুখে নিলো। নিজের কান্নাটা আটকানোর সর্বস্ব চেষ্টা করে যাচ্ছে সে।
বার বার মায়ের মুখটা ভেসে আসছে বিবিন খুব যত্নসহকারে স্নিগ্ধর ছোট বেলার গল্প করতে করতে তাঁকে খাওয়িয়ে দিচ্ছে।
.
স্নিগ্ধ বিছানায় হাত,পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সুয়ে আছে।
আরোহী রুমে এসে স্নিগ্ধ কে বিছানায় দেখে সোফায় গিয়ে বসলো। শরীরটা ভালো লাগছে না একটু আরাম করে বসে চোখটা বুজেছে সবে। অমনি স্নিগ্ধ এক গ্লাস পানি আর ওষুধ সামনে ধরলো।

— ওষুধ টা খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ো। ভয় নেই আমি সোফায় ঘুমিয়ে যাবো।

আরোহী এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো।
গম্ভীর গলায় বললো এসবের প্রয়োজন নেই। আপনার বাড়ি, আপনার ঘর, আপনার বিছানা সো আপনিই সেখানে ঘুমান আমি এখানেই ঠিক আছি।
স্নিগ্ধ মুচকি হেসে বললো –

— বউটাও কিন্তু আমারি।

আরোহী ফুঁসে ওঠে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো বেলকুনিতে। স্নিগ্ধও পিছন পিছন গেলো। আদুরে গলায় বললো-

— জান প্লিজ ওষুধ টা খেয়ে নাও। এটা না খেলে তুমি সুস্থ হবে কি করে গায়ে শক্তি পাবে কি করে। গায়ে, মনে জোর না এলে আমার সাথে ঝগরা কি করে করবে??একজন খুনির সাথে লড়তে হলে নিজেকে শারীরিক এবং মানসিক দুভাবেই স্ট্রং রাখতে হবে। ডক্টরের বলা কথা ভুলে গেছো তুমি দুদিক থেকেই ভীষণ দূর্বল।

আরোহী জোর পূর্বক হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো।

— ইয়েস ইউ আর রাইট। একজন খুনি মানে হলো আপনি। আপনার সাথে লড়তে হলে আমায় এই ওষুধ গুলো খেতে হবে রাইট?? ওকে এই যে খেয়ে নিলাম।

আরোহী ওষুধ টা খেয়ে নিতেই স্নিগ্ধ টপ করে আরোহীর কপালে চুমু খেয়ে গ্লাসটা নিয়ে রুমে ঢুকে পড়লো।
.
আরোহীর এসব আর সহ্য হচ্ছে না। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে” মানুষ কেনো এতো রহস্যময়??
মানুষ কেনো গিরগিটির ন্যায় রূপ ধারন করে”??
মুখোশের আড়াল থেকে মানুষ কে বের করে নিয়ে আসা কেনো এতো কঠিন??

মেঝেতে হাঁটু ভাঁজ করে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে আরোহী। তাঁর প্রতিটা কান্না কম্পন সৃষ্টি করছে স্নিগ্ধর হৃদয়ে। তাঁর প্রতিটা কান্নায় স্নিগ্ধর প্রতি অগাধ অবিশ্বাস,অগাধ ঘৃনা ভরপুর।
দরজার পাশ থেকে সরে গেলো স্নিগ্ধ বুকে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে তাঁর আর এই যন্ত্রণা লুকানোর একমাএ সহায়ক তাঁর গিটারের সুর,,,

সোফায় বসে ট্রি টেবিলে এক পায়ের ওপর আরেক পা তুলে মৃদু হেসে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। কোলের ওপর গিটার নিয়ে সুর তুললো,,,গানে গানে প্রিয় মানুষ টাকে জানিয়ে দিতে লাগলো তাঁর না বলা বানী গুলো,তাঁর ভালোবাসাময় হৃদয়ের কথাগুলো –

……………………………………..
আমার মতন, কে আছে বল

বাসবে তোমায়, এতো ভালো!

আমার মতন, কে আছে বল

বাসবে তোমায়, এতো ভালো!

আমি মনেরি দেওয়ালে, সুখের খেয়ালে

জেলেছি যে তোমার আলো

তুমি চোখের আড়ালে, কখনো হারালে

হয়ে যাব এলোমেলো।

আমার মতন, কে আছে বল

বাসবে তোমায়, এতো ভালো!

আমার মতন, কে আছে বল

বাসবে তোমায়, এতো ভালো!

হো… স্বপ্নেরি মহোনায়, সাজিয়েছি যে তোমায়

ভুলে যাব কি করে?

তোমারি ছায়া যে, ফেলেছে মায়া যে

জীবনের পথজুড়ে

স্বপ্নেরি মহোনায়, সাজিয়েছি যে তোমায়

ভুলে যাব কি করে?

তোমারি ছায়া যে, ফেলেছে মায়া যে

জীবনের পথজুড়ে

আমি মনেরি দেওয়ালে, সুখের খেয়ালে

জেলেছি যে তোমার আলো

তুমি চোখের আড়ালে, কখনো হারালে

হয়ে যাব এলোমেলো।

আমার মতন, কে আছে বল

বাসবে তোমায়, এতো ভালো!

আমার মতন, কে আছে বল

বাসবে তোমায়, এতো ভালো!

হো… চোখেরি ইশারায়, রেখেছি পাহারায়

যেতেদেব না দূরে

তুমি হীন আমি যে, শুধু পাগলামি যে

হৃদয়টা ভবগুরে…

চোখেরি ইশারায়, রেখেছি পাহারায়

যেতেদেব না দূরে

তুমি হীন আমি যে, শুধু পাগলামি যে

হৃদয়টা ভবগুরে…

আমি মনেরি দেওয়ালে, সুখেরি খেয়ালে

জেলেছি যে তোমার আলো

তুমি চোখের আড়ালে, কখনো হারালে

হয়ে যাব এলোমেলো।

আমার মতন, কে আছে বল

বাসবে তোমায়, এতো ভালো!

আমার মতন, কে আছে বল

বাসবে তোমায়, এতো ভালো!

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here