মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১১

0
2485

মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১১
জান্নাতুল নাঈমা

আরোহী বেলকুনির বর্ডারে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। তাঁর চোখের পাতা ভেজা স্নিগ্ধ বুঝার চেষ্টা করেও বুঝলোনা সে ঘুমিয়ে গেছে কিনা।
বেশ ইতস্ততভাবেই কাছে গেলো।
আরোহী বলে ডাকতে চেয়েও পারলো না।
গলাটা কেমন কেঁপে ওঠলো।
“ভালোবাসা এতো অদ্ভুত কেনো?? এই মেয়েটার প্রতি কেনো আমার এতোটা দূর্বলতা সৃষ্টি হয়ে গেলো??কোনভাবেই কেনো দূরে সরতে পারিনা??কেনো এতো ভালোবাসতে ইচ্ছে করে ওকে??
কেনো এতো আপন করে নিতে ইচ্ছে করে??
এ কেমন অসুখে পড়ে গেলো আমার হৃদয়??
এ অসুখের মেডিসিন হিসেবে যে সেকেন্ড কোন অপশন নেই। “ভালোবাসা এমন এক অসুখ যে অসুখের মেডিসিন হিসেবে সেকেন্ড অপশন হয় না। ওয়ান এন্ড অনলি অপশন শুধু নির্দিষ্ট একজন মানুষই হয়” আর আমার জীবনে সেই একজন মানুষ শুধুই তুমি আরোহী।
কবে বুঝবে কিভাবে বোঝাবো তোমায়,
কোন উপায়ে বোঝাবো আমার মন যে বড্ড অশান্ত হয়ে আছে। অশান্ত কে শান্ত, অসুখ কে সুখে পরিণত করার জন্য আরোহী নামক তুমিটা যে আমার বড্ড প্রয়োজন।
.
নিজের মনের সাথে কথা বলার ঘোরে আরোহীর অনেকটা কাছে চলে আসে স্নিগ্ধ।
স্নিগ্ধর গরম শ্বাস আরোহীর মুখে পড়তেই চমকে ওঠে চোখ খুলে স্নিগ্ধ কে তাঁর এতো কাছে দেখে দুহাতে স্নিগ্ধর বুক বরাবর ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজে ওঠে পড়ে। আতঙ্কিত হয়ে বলে-

— একি আপনি কি করছিলেন এটা ছিঃ।
একটা মেয়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছিলেন এভাবে ছিঃ।কাপুরষ, মেরুদন্ডহীন।
.
স্নিগ্ধ খানিকটা রেগেই গেলো চোখ গরম করে চেয়ে আরোহীর কাছে চলে এলো। আরোহী দু পা পিছুতেই বর্ডারের সাথে গিয়ে ঠেকলো। স্নিগ্ধ দুহাত বর্ডারে রেখে নিজের ভারসাম্য বজায় রেগে তীক্ষ্ণ চোখে আরোহীর দিকে তাকালো।আরোহী এক ঢোক গিলে নিয়ে কাঁপা গলায় বললো –

— কি করছেন,,,

— আমার কিছু করার হলে তোমায় অচেতন অবস্থায় করতে হবে না আরোহী। স্নিগ্ধ কাপুরষ নয় নিজের বউয়ের কাছে আসার জন্য স্নিগ্ধ কে লুকিয়ে চুরিয়ে আসতে হবে না। আর এটা অবশ্যই ধীরে ধীরে তুমি বুঝবে। বিয়ে করেছি এমনি এমনি তো নয় বউকে আদর ভালোবাসা দেওয়ার জন্যই। বউয়ের সাথে চুটিয়ে প্রেম করার জন্যই।

আরোহী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো –

— তাই নাকি??তো স্নিগ্ধ কাপুরুষ না হলে আমার অচেতন অবস্থায় ম্যারেজ সার্টিফিকেটে সাইন করালো কি করে। এটা কে কি আদেও বিয়ে বলে??

— জাষ্ট স্যাট আপ।

— এখন ধমকাচ্ছেন কেনো সত্যি বললে ভীষণ গায়ে লাগে তাইনা।

— তোমার মতো কিছু ঘাড়ত্যাড়া প্রানীকে এভাবেই জব্দ করতে হয় ডু ইউ আন্ডার স্ট্যান্ড।

— নো আই এম নট আন্ডারস্ট্যান্ড।

— ওকে ফাইন তাহলে প্র্যাক্টিকেলি বোঝাই।

স্নিগ্ধ আরোহীর মুখের কাছে মুখ নিতেই আরোহী একহাতে স্নিগ্ধর মুখ চেপে ভয় ভয়ে বলে ওঠলো –

— আপনি আমাকে মালার সাথে কথা বলিয়ে দিতে চেয়েছেন। ভুলে গেছেন নাকি মিথ্যা স্বান্তনা দিয়েছেন??

স্নিগ্ধ আরোহীর হাতে শব্দ করে চুমু খেলো।
সাথে সাথে আরোহী চোখ বড় বড় করে হাত সরিয়ে নিলো। স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে একটা ভাব নিয়ে বললো-

— কথা বলতে চাইলে আমাকে অনুসরণ করে রুমে এসো।

স্নিগ্ধ বেশ মুড নিয়ে রুমে চলে গেলো।
আরোহী মনে মনে ইচ্ছে রকম কয়টা বকা দিয়ে রুমে গেলো।
.
ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে আছে আরোহী সাথে রয়েছে তুরিন। গতকাল রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনা তুরিন শুনেই বলে ফেললো-

— আমি শিওর স্নিগ্ধ ভাইয়া এসব কিচ্ছু করেনি।
তাই যদি হতো তাহলে মালা কে বাঁচিয়ে রাখতো না।
তোর সাথে কথাও বলিয়ে দিতো না। একজন খুনি অবশ্যই তাঁর খুনের শাক্ষিকে অমন আদর যত্ন করে রাখবে না। স্নিগ্ধ ভাইয়া যদি খুনিই হতো তাহলে মালাকে পড়াশোনা করানোর জন্য ওঠে পড়ে লাগতো না। কারন মালা কথা বলতে পারেনা পড়াশোনা জানলে অবশ্যই সে তাঁর মনের ভাব গুলো লিখে প্রকাশ করবে। যদি মালা রহস্যজনক কিছু জেনে থাকে তাহলে অবশ্যই সেটা তোকে জানাতে চাইবে। স্নিগ্ধ ভাইয়ার মতো ইন্টেলিজেন্ট বয় নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল কখনোই মারবে না। তাঁর মানে এটা সিওর খুনি স্নিগ্ধ ভাই নয়।

আরোহী বেশ চিন্তিত মুখ করে বললো-

— কিন্তু স্নিগ্ধ মালার দায়িত্ব কেনো নিবে ঐ হোমেই বা মালা কে কেনো রাখলো কিসের স্বার্থে। এমন তো নয় ভালো মানুষি করে নিজের দোষ ঢাকতে চাইছে।

— এমনটা নয় আরোহী দেখ তুই যা বললি এতে মালার মধ্যে স্নিগ্ধর প্রতি কোন রাগ বা ক্ষোভ তো দেখিস নি। কি তাইতো??

— এমনতো হতেই পারে স্নিগ্ধ ওকে লোভ দেখিয়েছে।
ওকে এতো ভালো জীবন উপহার দিয়েছে সারাজীবন প্রতিবন্ধী হিসেবে পরিচিত মেয়েটা আজ পড়াশোনার করার সুযোগ পেয়েছে। স্নিগ্ধ বললো মালা ওখানে খুব ভালো, সুন্দর একটা জীবন কাটাবে উপযুক্ত বয়স হলে ওখানেই ওকে কাজের সুযোগ করে দিবে এসব দেখে মালা সত্যিটা চেপেও যেতে পারে।

— ছিঃ আরোহী একটা অসহায় মেয়ে, অবলা মেয়ের বিষয়ে এমন একটা ধারনা কি করে করতে পারলি।
তুই না ওকে বোনের মতো ভালোবাসতি।

— আমি এখন কাউকে ভালোবাসিনা আর না কাউকে বিশ্বাস করি। আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না তুরিন। আমি জাষ্ট আর কিছু ভাবতে পারছিনা।
আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিনা সব কিছু এলোমেলো লাগছে।

তুরিন আরোহীর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো –

— আরোহী যদি এটা প্রুফ হয়ে যায় স্নিগ্ধ ভাইয়া এসব করেনি। এগুলোর সাথে অন্যকেউ জরিত তখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবিতো??আর স্নিগ্ধ কে স্বামী হিসেবে মেনে নিবি তো??

— এমন টা কখনো হবে না তুরিন খুনি স্নিগ্ধই। আমি অবুঝ শিশু নই বোঝার মতো বয়স হয়েছে আমার।

— যদি সেই বোঝাতেও ভুল থাকে??

আরোহী স্থির চোখে তাকালো তুরিনের দিকে।
ধীর গলায় বললো-

— তাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।

— আর বিয়েটা??বিয়েটা মানবি তো?? একসেপ্ট করবিতো স্নিগ্ধ ভাইয়ের ভালোবাসা কে??

— অসম্ভব এটা কোনদিন সম্ভব নয়।

তুরিন অবাক হয়ে বললো-

— কিন্তু কেনো??

— সব কেনোর উত্তর হয় না। স্নিগ্ধ কে গ্রহন করার কোন প্রশ্নই ওঠেনা সঠিক একটা সময়ে আমি ঠিক এসব থেকে বেরিয়ে যাবো।

তুরিন আহত গলায় বললো-

— আরোহী চোখের দেখা,কানের শোনা,মনের বোঝাতেও অনেক সময় অনেক বড় ভুল হয়ে যায়।
একটা মানুষ কে বাইরে থেকে বিচার না করে ভিতর থেকে জানার, বোঝার, চেষ্টা কর। স্নিগ্ধ ভাইয়া কিন্তু সত্যি আলাদা স্নিগ্ধ ভাইয়া তোকে সত্যিই ভালোবাসে। যদি বলিস আমি কি করে বুঝলাম তাহলে বলবো আমার লাইফে আমি এমন মানুষ খুব কম দেখেছি যে মানুষ টা অতি অল্প সময়েই তাঁর ভালোবাসা কে আপন করে নিয়েছে। দেখ আরোহী তোর মা নেই, পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই। স্নিগ্ধ ভাইয়া যদি তোর সাথে ফ্ল্যাট করার হতো তাহলে সেটা বাইরে করে বাইরেই ঝেড়ে ফেলতো।
এমনকি বিয়ে করে তোকে ভোগ করার ইচ্ছে হলেও করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারতো কিন্তু তা করেনি।
অথচ এমনটা করার অনেক সুযোগ ছিলো। তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কেও জানিস তবুও সে এমনটা করেনি।
একটু ভেবে দেখ ভালোবাসে বলেই হয়তো তোকে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
তোকে সত্যি ভালোবাসে আরোহী এটাতে কোন ভুল নেই ট্রাস্ট হিম আরোহী ঠকবি না তুই।

— তোর বকবক হয়ে গেছে??এবার ফোন টা দে একজন কে ফোন করবো।

— হোয়াট এতক্ষণ কি বললাম বুঝেছিস কি।

— তুরিন প্লিজ আমাকে এসব বোঝাতে আসিস না।
আমি নিজের মনের কথা শুনবো শুধু আর কারো না। এবার ফোন দে আশিক কে ফোন করবো।

তুরিন অবাক হয়ে ফোন বের করে দিলো।
আরোহী ফোনটা নিয়ে তাঁর ডায়েরি থেকে নাম্বার বের করে ফোন করলো আশিক কে।
.
তুরিন আরোহী গেটের বাইরে আসতেই একদল ছেলেরা বাইক নিয়ে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকতে লাগলো।কয়েকজন আরোহীর দিকে চেয়ে মুখে হাসি টেনে সালাম দিলো-“আসসালামু আলাইকুম ভাবী”

আরোহীর বিরক্ত লাগলেও সালাম ফেরালো।
ছেলে গুলো একে একে ভিতরে চলে গেলো।
একদম শেষে এলো স্নিগ্ধ সহ তাঁর সকল বন্ধু-বান্ধবরা। স্নিগ্ধ হাসি হাসি মুখ করে আরোহীর সামনে বাইক থামালো। জারা,শ্রেয়া,আকাশ,সহ আরো সব ফ্রেন্ডরাই আরোহীর সাথে কথা বললো।
আরোহীও খুব নম্রভাবে কথা বললো।
শ্রেয়া বললো-

— স্নিগ্ধ আরোহীকে অবশ্যই নিয়ে আসবি আর তুরিন তুমিও আসবে কিন্তু।

তুরিন প্রশ্নবোধক চোখে তাকাতেই জারা বললো-

— শ্রেয়ার বিয়ে নেক্সট ফ্রাইডে।

শ্রেয়া বিয়ের কার্ড এগিয়ে দিলো তুরিনের দিকে।
তুরিন খুব খুশি হয়ে কার্ড গ্রহন করলো।
শ্রেয়া আরোহীর দিকে চেয়ে বললো –

— তোমার আর তোমার বরেরটা একসাথে তোমার বরের কাছে দিয়েছি। সবাইকে ইনভাইট দিতে গিয়ে কার্ড শেষ তাই কাপলদের একটা করেই দেওয়া হয়েছে।

আরোহী জোর পূর্বক হাসলো।
সবাই বাই করে চলে যেতেই জারা তুরিনকে ইশারা করে তাঁর সাথে নিয়ে গেলো।
আরোহী পড়ে গেলো বিপাকে পা থেকে মাথা অবদি ঘামতে শুরু করেছে তাঁর স্নিগ্ধ দুষ্টুমি মাখা চোখে চেয়ে আছে তাঁর দিকে৷ আরোহী সবে প্রিপারেশন নিচ্ছে কেটে পড়ার তখনি ভার্সিটির একজন প্রফেসর বেরিয়ে এলো।

— কি ব্যাপার স্নিগ্ধ বৌমাকে নিতে এসেছো নাকি।

স্নিগ্ধ হাসি হাসি মুখে বললো-

— জ্বি স্যার।

আরোহী প্রফেসর কে সালাম দিলো। স্নিগ্ধ এই সুযোগে বললো-

— তারাতারি ওঠো আকাশের অবস্থা ভালো না বৃষ্টি আসবে।

প্রফেসর বললেন-

— হ্যাঁ হ্যাঁ তারাতারি চলে যাও আমিও বাসায় যাচ্ছি।

আরোহী বাধ্য হয়েই স্নিগ্ধর বাইকে ওঠে পড়লো।
.

স্নিগ্ধ অন্যপথ দিয়ে বাসায় যাচ্ছে যাতে আরোহীকে নিয়ে অনেকটা সময় বাইকে ঘুরা যায়। কতোদিনের স্বপ্ন তাঁর বউ নিয়ে বাইক জার্নি করবে।
কিন্তু এমন ধানি লঙ্কাকে নিয়ে সে স্বপ্ন পূরন করা মানে তাঁর ঝাঁজে নিজেকে জ্বালিয়ে শেষ করে দেওয়া। ছলেবলে কৌশলে একটু ওঠাতে পেরেছে তাই সে সময় টা খুব করে ইনজয় করতে চায় সে।
বাইকের স্পিড,বাড়িয়ে দিয়ে নৌকার মতো এদিক ওদিক ঢেউ খেলছে আর বাইক চালাচ্ছে। আরোহী নিজের ভারসাম্য বজায় রাখতে না পেরে ক্ষনে ক্ষনে স্নিগ্ধর পেটে জরিয়ে ধরছে। কখনো কখনো তাঁর মুখ ঠোঁট ঠেকে যাচ্ছে স্নিগ্ধর পিঠে। যখন নাক ঠেকছে তখনি বেশ লাগছে বিরক্ত হয়ে বললো-

— অসভ্যের মতো বাইক চালানোর কি আছে। কোনদিকেই সভ্যতার ছোঁয়া নেই দেখছি।

স্নিগ্ধ আরো দ্বিগুন স্পিড বাড়িয়ে দিলো এতে আরোহী আরো লেপ্টে গেলো তাঁর পিঠের সাথে দুহাতে আঁকড়ে ধরলো তাঁর পেটে।
স্নিগ্ধ চিল্লিয়ে বললো-

— আই লাভ ইউ আরোহী,,,আই লাভ ইউ সো মাচ।

আরোহী কিছু বললো না বিরক্ত লাগছে তাঁর পথ যেনো শেষই হচ্ছে না। মেঘ গুরগুর করছে বৃষ্টি এই নামলো বলে চারিদিকে কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে। আরোহী বাধ্য হয়ে জিগ্যাস করলো-

— আপনি কোথায় যাচ্ছেন এটাতো বাড়ির পথ না।

স্নিগ্ধ চিল্লিয়ে বললো-

— অন্য পথ দিয়ে যাচ্ছি নো টেনশন তোমার শশুড় বাড়ি পৌঁছে দিবো।

আরোহী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে মনে মনে বিরবির করে বললো-“এমন ভাব নিচ্ছিস মনে হয় কলেজের বড় ভাই হয়ে আমাকে শশুড় বাড়ি পৌঁছে দিবি”
.
বৃষ্টিতে ভিজে একাকার অবস্থা ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতে না করতেই স্নিগ্ধ সমানে হাঁচি দিতে শুরু করলো।রিনি সমানে বকে যাচ্ছে বৃষ্টি তে ভেজার কারনে। তয়ালে নিয়ে এসে স্নিগ্ধর মাথা মুছতে শুরু করতেই স্নিগ্ধ তয়ালেটা নিজেই নিয়ে নিলো।
বোনের কানে ফিসফিস করে বললো-

— কি করছিস আমি ছোট নাকি বিয়ে করে নিয়েছি।
বউ এর সামনে এমন করলে বউ আমাকে বাচ্চা ভাববে তখন আমায় মানবে না আপ্পি তুই বরং ওর মাথা মুছে দে আমি উপরে যাচ্ছি শাওয়ার নিয়ে নেই।

স্নিগ্ধ উপরে চলে গেলো। আরোহীরও পুরো শরীর ভিজে একাকার অবস্থা সেও উপরে যেতে নিতেই রিনি হাত আটকে দাঁড় করিয়ে তয়ালে টা মাথায় রাখলো।
খুব যত্নসহকারে মুছতে শুরু করলো।অজান্তেই আরোহীর চোখ বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
উপর থেকে স্নিগ্ধ এ দৃশ্য দেখে মুচকি হেসে রুমে ঢুকে পড়ল।
.
“এই বাড়ির মানুষ গুলো কি সত্যি এতোটা ভালো।
এরা কেনো আমায় এতো যত্ন করছে কিসের এতো ভালোবাসা আমার প্রতি এদের নাকি সবটাই মুখোশ??না আরোহী না যতো যাইহোক তুই গলে পড়বি না। নিজেকে শক্ত কর আরোহী সবই মুখোশ সব”

রিনি চুল গুলো এলোমেলো করে মুছে দিয়ে বললো-

— এবার ভেজা কাপড় ছেড়ে শুষ্ক কাপড় পড়ে নাও জলদি। নয়তো জ্বর এসে যাবে যাও যাও।
আরোহীর ভাবনায় ছেদ পড়লো রিনির কথায়।
সে দ্রুত পায়ে উপরে ওঠে গেলো।
.
রাত প্রায় দুটো ছুঁই ছুঁই। সোফায় বেআরামে শুয়ে স্নিগ্ধর পুরো শরীর ব্যাথায় টনটন করছে।
ঘুম আলগা হতেই ঘুমু ঘুমু চোখে চেয়ে নিজেকে সোফায় দেখে ভ্রু কুঁচকে বিরবির করে বললো-
“এহ আমি সোফায় ঘুমিয়ে গেছি ধূর”
টোলতে টোলতে বিছানায় আগাতে লাগলো।
যেনো সে নেশা করেছে,, অন্ধকারে বিছানায় এক মানবীর উপস্থিতি বুঝতে পেরে বাঁকা হাসলো।
বিরবির করে নেশা ধরা গলায় বললো-
“স্বপ্নবধূ এসেছো নাকি”
ধপাশ করে শুয়ে পড়লো স্নিগ্ধ।দুহাতে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে আরোহীর গলায় মুখ ডুবিয়ে চোখ বন্ধ করে ভারী নিশ্বাস ফেলতে শুরু করলো। আরোহী একটু নড়নচড়ন করতেই স্নিগ্ধ আরো গভীরভাবে জরিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো।
.
অতিরিক্ত উষ্ণতা, সেই সাথে উপরে ভারী কিছু পড়ায় আরোহীর দম বন্ধ হয়ে এলো ঘুম ছেড়ে একরাশ ভয় তাঁর অন্তর আত্মা কাঁপিয়ে তুললো।
পুরো ঘটনা টা বুঝতে তাঁর দুমিনিট সময় লেগে গেলো।
স্নিগ্ধর গরম শ্বাস তাঁর পুরো গলা জুরে শীতলতা সৃষ্টি করে দিচ্ছে। পুরো শরীর কেমন শিউরে ওঠছে।
রাগে মাথা তরতর করে কেঁপে ওঠলো। গায়ের সমস্ত জোর খাটিয়ে স্নিগ্ধ কে ধাক্কা দিতে লাগলো।
স্নিগ্ধ তবুও এক চুলও নড়লো বরং কিসব বিরবির করতে লাগলো। যার ফলে বারে বারে স্নিগ্ধর ঠোঁট জোরা আরোহীর গলা ছুঁয়ে দিতে লাগলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here