মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১২

0
2308

মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১২
জান্নাতুল নাঈমা

শরীরের অত্যাধিক তাপমাত্রা আরোহীর শরীরও বেশ উষ্ণ করে তুললো। ঘেমে একাকার অবস্থা।
ঘুমন্ত অবস্থায় সম্পূর্ণ শরীর ছেড়ে দিয়েছে স্নিগ্ধ। তাঁর ওপর জ্বর থাকায় হুশে নেই যতোটা ওজনের সে তাঁর থেকেও যেনো দ্বিগুন ওজন বেড়ে গেছে। আরোহী বেশ ধাক্কাধাক্কি করে ক্লান্ত হয়ে পড়লো। যতোটুকু বুঝলো স্নিগ্ধর প্রচন্ড জ্বর এসে গেছে। কেমন নেশা নেশা গলায় বির বির করছে শরীরের তাপমাএাও দ্বিগুণ।
.
“জ্বর হয়েছে বেশ হয়েছে জ্বরে পুরে মর আমাকে পুরাচ্ছিস কেনো ওহ আল্লাহ রক্ষা করো। হুঁশে থাকলে যতো জ্বালায় বেহুঁশে তো দ্বিগুণ জ্বালাচ্ছে”
.
মনে মনে বির বির করে শেষ একটা চেষ্টা করলো ছাড়ানোর। যার ফলে স্নিগ্ধ একটু নড়েচড়ে তাঁকে এমন ভাবে আষ্টেপৃষ্টে ধরলো যে এবার একটু নড়ার উপায়ও রাখলো না তাঁর। শরীরে কেমন নাক ডাবিয়ে দিচ্ছে, মুখ ঘষসে দাঁড়ি গুলা যেনো গলায় বিঁধে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আরোহীর শরীরের ভিতর নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
তাঁর এতোই ঠান্ডা লাগছে যে জ্বরের ঘোরে গুটিশুটি হয়ে আরোহীর ভিতর নিজেকে আবদ্ধ করার তীব্র প্রচেষ্টা করছে।
একটা ছেলে তার শরীরটা এভাবে একটা মেয়ের সাথে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে অথচ মেয়েটা তাঁকে না গ্রহন করতে পারছে আর না ছাড়াতে পারছে। রাগে,দুঃখে কান্না পেলো আরোহীর মনের ভিতর অনুভূতি তাঁর শূন্য তবুও জ্বরে ভোগা মানুষ টার জন্য একটু মায়া হলো। পরোক্ষনেই ভাবলো পাপীষ্ঠদের জন্য মনের ভিতর কোন মায়া জন্মানো ঠিক না।
.
সারারাত ঠিকভাবে ঘুমাতে পারলো না আরোহী।
স্নিগ্ধ তাঁর ওপর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তাঁর প্রত্যেকটা ঘন,ভারী শ্বাস শুনতে শুনতে আরোহীর যেনো মগজ বেরিয়ে যাবে।
.
পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে ভাসতেই আরোহী আবারো স্নিগ্ধ কে সরাতে চাইলো।
স্নিগ্ধ একটু নড়ে চড়ে আরোহীকে আলগা করে দিয়ে ওপাশ ফিরে আবারো ঘুমিয়ে পড়লো।
আরোহী স্বস্তির এক শ্বাস ছেড়ে দ্রুত ওঠে পড়লো।
পিঠ সহ কোমড়ের এক সাইট ব্যাথা হয়ে গেছে।
“গন্ডার জানি কোথাকার,খাম্নাসের খাম্বাস,পাঠার মতো শরীরটা আমার ওপর ছাড়তে তোর বিবেকে বাঁধলো না,, বাঁধবে কি করে বিবেক থাকলে তো বাঁধবে” ফুঁসতে ফুঁসতে বাথরুম চলে গেলো আরোহী।
ফ্রেশ হয়ে কোন রকমে তারাতারি রেডি হয়ে কেউ তাঁকে দেখার আগেই বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে।
.
গেটের কাছে আসতেই দাঁড়োয়ান কে দেখলো। গেট খুলতে বলতেই দাঁড়োয়ান জিগ্যাস করলো,,

— কোথায় যাবেন ছোট সাহেব কোথায়??

আরোহী বিরক্তি চোখে চেয়ে বললো –

— ওনার জ্বর হয়েছে আমি ভার্সিটি যাচ্ছি তারাতাড়ি গেইট খুলুন।

দাঁরোয়ান ভ্রু কুঁচকে ফোন বের করলো স্নিগ্ধর নাম্বারে ডায়াল করতে নিতেই আরোহী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে ঝাঁঝালো গলায় বললো,,

— কি ব্যাপার গেট খুলছেন না কেনো। বললাম তো ওনার জ্বর এখন ওনাকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবেন না।

দাঁরোয়ান এক ঢোক গিললো আরোহীর দিকে সন্দেহ চোখে তাকাতেই আরোহী দাঁতে দাঁত চেপে বললো –

— গেট খুলবেন নাকি আপনার চাকরি খাওয়ার ব্যবস্থা করবো।

দাঁড়োয়ান বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে ভয় ভয়ে গেট খুলে দিলো। আরোহীও গটগট করতে করতে বেরিয়ে গেলো।
.
দশটা বেজে গেছে নাতি,নাত বউ কে এখনো নিচে আসতে না দেখে বিবিন স্নিগ্ধর রুমের দিক পা বাড়ালো।রিনি তাঁর হাজব্যান্ড ইমরানকে ব্রেকফাস্ট করিয়ে বিদায় দিলো। এবার সেও ভাইয়ের রুমের দিকে গেলো।
রুমের দরজা খোলা পেয়ে বিবিন ভ্রু কুঁচকে রুমে ঢুকলো। স্নিগ্ধকে ঘুমে দেখে পুরো রুমে চোখ বুলালো।বিছানার কাছে গিয়ে কয়েকবার ডাকলো,,

–দাদু ভাই কি গো আজ ওঠবে না নাকি বউ কোথায় গো দেখছি না যে।

রিনি রুমে এসেই বললো-

— কিরে ভাই আজ ওঠবি না?? আরোহী ওঠে পড়েছো??

বিবিন বললো-

— তাঁকে তো দেখছিনা।

রিনি স্নিগ্ধর কাঁধে হাত দিয়ে ডাকতেই চমকে গেলো।
দ্রুত কপাল মুখে হাত দিয়ে আতঙ্কিত হয়ে বললো-

— বিবিন ভাইয়ের তো বেশ জ্বর।

বিবিন এসে স্নিগ্ধকে ছুঁয়ে দেখলো। রিনি আরোহী বলে ডাকতে ডাকতে বাথরুম চেক করলো।

— একি আরোহী কোথায়??

বিবিন ভ্রু কুঁচকে বললো –

— দাদু ভাইয়ের এতো জ্বর আর মেয়েটা ঘরে নেই।
আমাদেরও কিছু বলেনি এসবের মানে কি??

রিনি এক ঢোক গিললো ব্যাস্ত গলায় বললো –

— বিবিন সেসব বাদ দাও আগে পানি নিয়ে এসো ভাইয়ের শরীর মুছে দেই। সোনালি,রূপালিকে বলো কিছু খাবাড় পাঠাতে ওষুধ খাওয়াতে হবে। এই জন্যেই বকেছিলাম জানিতো ভাইয়ের অতিরিক্ত ঠান্ডা গরম কোনটাই সহ্য হয়না । তারওপর কাল পুরো রাস্তা ভিজতে ভিজতে এসেছে।
.
রিনি আর বিবিন মিলে স্নিগ্ধ কে যত্ন করে খাওয়িয়ে ওষুধ খাওয়িয়ে দিয়েছে। পুরো দুঘন্টা পর স্নিগ্ধর ঘুম ভাঙলো শরীর ঘেমে জ্বর ও ছেড়ে গেছে। তবুও শরীরটা দূর্বল লাগছে চোখ টেনে তুলে আশে,পাশে তাকালো। স্মৃতিশক্তি হারানোর পর যেমন সব এক ঝটকায় ফেরত আসে তেমনি আরোহীর কথা স্মরন হতেই স্নিগ্ধ লাফিয়ে ওঠে বসলো।
আরোহী আরোহী বলে ডাকতে শুরু করলো।
বিবিন মুখটা গম্ভীর করে রুমে এলো।

— কাকে ডাকছো দাদু ভাই।

— বিবিন আরোহী কোথায়??

— তোমার বউ সকাল সকাল কোথায় গেছে তাঁর খবড় তুমিই ভালো জানো। আমরা তো তোমাকে জ্বর অবস্থায় রুমে একা পেয়েছি।

সাথে সাথে স্নিগ্ধ বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো।

— হোয়াট কি বলছো আরোহী কোথায়।

রিনি এক গ্লাস জুস নিয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো-

— আমি দাঁরোয়ান চাচাকে জিগ্যাস করে আসলাম।
আরোহী ভার্সিটির কথা বলে বেরিয়েছে।
নে এটা খেয়ে নে।

স্নিগ্ধ রিনির কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে দ্রুত বাথরুম চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে বেশ তারাহুরো করে শার্ট গায়ে চেপে ঘড়ি আর ওয়ালেট পকেটে তুললো।

রিনি বিরক্ত মুখ করে বললো-

— ভাই অনেক হয়েছে এসব পাগলামো আর না। তোকে এমন জ্বরে রেখে যে মেয়েটা বাড়ির কাউকে না জানিয়ে ভার্সিটি বেরিয়ে যায় সেই মেয়ে আর যাই হোক তোর জন্য পারফেক্ট হতে পারেনা। দেখ স্নিগ্ধ আমি মহান নই আর আমি নিঃস্বার্থবানও নই।
আমার ভাইকে যে গুরুত্ব দিবেনা ভালোবাসবে না তাকেও আমি গুরুত্ব দেওয়া বা ভালোবাসার প্রয়োজন মনে করছিনা।

বিবিন গম্ভীর গলায় বললো-

— দাদু ভাই আমিও খুব অসন্তুষ্ট হয়ে আছি তোমার বউ এর ওপর। তুমি জানো তোমার বউ কতোবড় অন্যায় করেছে??

স্নিগ্ধর কানে যেনো কিছুই গেলো না। সে তাঁর মতো নিজেকে পরিপাটি করে জুস টা না খেয়েই বাইকের চাবি হাতে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বেরিয়ে গেলো।

রিনি প্রচন্ড মন খারাপ করে বেরিয়ে গেলো।
বিবিনও রিনির পিছন পিছন বেরিয়ে গেলো।
.
রেষ্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে আশিক আর আরোহী। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা পড়া। কালো শার্ট, কালো প্যান্ট পরিহিত আশিক। একজন ভদ্র,সভ্য মানুষের কাতারেই ফেলা যায় তাঁকে।
বেশ কবছর বিদেশে কাটিয়ে এবার দেশে এসে মোটামুটি ভালো একটা বিজনেস করছে।
তাঁর গলার স্বর বেশ নিচু কথা শুনে বোঝা মশকিল সে কি বলছে তবুও আরোহী বুঝতে পারছে সে কি বলছে। আশিকের ব্যাক্তিত্ব আরোহীর খুব ভালো লাগে। একজন পুরুষ মানুষ এতো সভ্য,ভদ্র কি করে হতে পারে তা তাঁর জানা নেই। সামনের মানুষ টার মতো একজন মানুষ কেই হয়তো প্রত্যেকটা মেয়ে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। সব ঠিক থাকলে এই মানুষ টাই তো আমার জীবনসঙ্গী হতো।

— “আমি তো কখনো কারো সাথে কোন অন্যায় করিনি। জীবনে কখনো কাউকে আঘাত করে একটা কথা অবদি বলিনি অথচ ভার্সিটিতে আসার পর থেকে আমার সাথে একের পর এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে নিজের মা কেও হারিয়ে ফেললাম। আর এমন একজনের সঙ্গে জরিয়ে গেলাম যে কিনা আমারই মায়ের হত্যাকারী।
নিজের মায়ের হত্যাকারীর স্ত্রী আমি”

আরোহী কাঁদতে লাগলো আশিক হালকা কেশে ভরসার হাত বাড়িয়ে দিলো। আরোহীর হাতের ওপর হাত রেখে নম্র স্বরে বললো-

— কেঁদো না আরোহী । তোমার সাথে যা হয়েছে খুব খারাপ হয়েছে তাঁর মানে এই নয় তোমাকে সারাজীবন এই নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে।
সর্বপ্রথম তুমি মালা কে বাঁচাও আরোহী। যে করেই হোক স্নিগ্ধর হাত থেকে মালাকে রক্ষা করো।
স্নিগ্ধ ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে আছে আর মালাকে তোমার থেকে আলাদা রাখছে যাতে সত্যিটা তুমি কোনদিন জানতে না পারো। আরোহী তুমি যেভাবেই হোক যতোদ্রুত সম্ভব মালাকে খুঁজে বের করো স্নিগ্ধর মাধ্যমে। আর মালাকে আমার কাছে দিয়ে দাও। ও আমার কাছে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে আরোহী। এছাড়া তোমার বাড়ি আছে আরো অনেক কিছুই আছে তোমার আর মালার ঐ স্নিগ্ধর দয়া নিতে হবে না। বরং ওর কবল থেকে বেরিয়ে আসো নয়তো ফুপুর মতো তোমাদেরও শেষ করে দেবে ও।
আমি ফুপুকে হারিয়েছি তোমায় হারাতে চাইনা।

আশিক চশমা খুলে চোখের পানি মুছলো।
আরোহী মুখ চিপে কাঁদতে লাগলো।

— কিন্তু এই বিয়েটা??

— এই বিয়েটার কোন মূল্য নেই তুমি যদি অস্বীকার করো তো এটার কোন মূল্য থাকবে না আরোহী।
এছাড়া বর্তমানে টিপ সই এর কোন সত্যতা নেই, মূল্য নেই এটা নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। বরং যতো তারাতারি সম্ভব এসব থেকে তুমি আর মালা বেরিয়ে আসো। আমার দরজা তোমার জন্য সব সময় খোলা।

অশ্রু মিশ্রিত চোখে তাকালো আরোহী আশিক চশমা ঠিক করে নিয়ে আরোহীর দিকে চেয়ে মাথা নাড়ালো।
আরোহী আশিকের হাত চেপে ধরে অঝড়ে কাঁদতে লাগলো।
.
রেষ্টুরেন্টের অপরপাশে বসা ছেলেটি রেষ্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো। তাঁর ঠিক দুমিনিট বাদেই বড় বড় পা ফেলে স্নিগ্ধ ভিতরে এসেই আরোহীদের টেবিলে বেশ জোরেই দুবার থাবা দিলো। চিৎকার করে বললো-

— এখানে কি হচ্ছে,,

আশিক সহ আরোহী দুজনই চমকে ওঠে দাঁড়ালো।
স্নিগ্ধর সাথে যে কটা ছেলে এসেছে সবাই আশিক কে চেপে ধরলো।

আশিক মোচড়ামুচড়ি করতে করতে বললো-

— এসব কি হচ্ছে ছাড়ুন আপনারা কারা??

আরোহী স্নিগ্ধর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো-

— এসব কি ধরনের অসভ্যতা,, আপনার জন্য কি এক দন্ড শান্তি পাবো না আমি। ওকে এভাবে ধরেছেন কেনো ছাড়ুন বলছি। ছাড়ুন খুব খারাপ হয়ে যাবে বলছি।

স্নিগ্ধ দুচোখ বন্ধ করে নিজের রাগটা সংযত করার চেষ্টা করলো। আরোহী ছেলেদের হাত ছাড়িয়ে আশিকের হাত চেপে রেষ্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো।
ছেলে গুলো ভাই বলে ডাকতেই স্নিগ্ধ সামনের টেবিলে রাগে এক লাথি দিলো। রেষ্টুরেন্টের ম্যানেজার সহ কয়েক জোরা কাপল ভয়ে কেঁপে ওঠলো। ছাএদলের নেতা হওয়ায় স্নিগ্ধর বেশ নামডাক তাঁদের গ্যাং ঢাকা শহড়ে বেশ বিখ্যাত।
সকলেরই প্রায় হাঁটু কাঁপা-কাঁপি অবস্থা।
এক ছেলে বললো-

— ভাই ওর হাত, পা ভেঙে বস্তা বন্দি করে দেই।

স্নিগ্ধ হাত ওঠিয়ে থামতে বলে বেরিয়ে গেলো।
.
আরোহী আর আশিক সবে রিকশায় ওঠবে এমন সময় স্নিগ্ধ আরোহীর ইয়া লম্বা চুলের বেনুনীটা ডানহাতে পেঁচিয়ে এক টানে তাঁর সম্পূর্ণ দেহটা একদম নিজের বুকে মিশিয়ে ফেললো। আরোহী ব্যাথায় আহ করতেই স্নিগ্ধ রক্তবর্ণ চোখে আরোহীর দিকে চেয়ে বললো –

— সরি জান কখনো কখনো ভুলের শাস্তি পেতে হয়।
আর স্নিগ্ধ ভুলের শাস্তি দিতে পিছুপা হয় না।
আমার সাথে তুমি যাই করো না কেনো আমার এতে বিন্দু সমস্যা নেই। তাই বলে নিজের বউ কে অন্যকারো সাথে দেখেও চুপচাপ থাকা মানে কাপুরুষের খাতায় নিজের নাম লিখিত করা।
স্নিগ্ধ সব মেনে নিলেও এমন বেহায়াপনা মেনে নেবে না। অসুস্থ স্বামী কে ঘরে রেখে বাইরে এসে অন্য পুরুষের হাত ধরে চোখের পানি ফেলে সহানুভূতি নিচ্ছো??

আরোহী রেগে বললো-

–কিসের স্বামী, কিসের বিয়ে মানি না এই বিয়ে আমি আর না মানি আপনাকে স্বামী হিসেবে। আশিক পর পুরুষ নয় ওর সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।আপনি ওর হবু বউকে জোর করে তুলে নিয়ে এসেছেন। মিথ্যা বন্ধনে আবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।

স্নিগ্ধর রাগে মাথায় রক্ত চড়ে গেলো যেনো।
দুহাতে আরোহীর গলা চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো –

— আমি আমার বউকে নিয়ে এসেছি অন্যকারো না।
তুই আমার বউ, তুই শুধু আমার জোর করে যাই করিনা কেনো কোন ভুল করিনি। ভালোবাসি তোকে আমি ভালোবাসি।
স্নিগ্ধর ভয়ংকর রূপ দেখে সেই সাথে চিৎকার শুনে
ছেলে পুলেরা মাথা নিচু করে ফেললো।

আশিক আরোহীর গলা থেকে স্নিগ্ধর হাত ছাড়াতে নিতেই স্নিগ্ধ তার অন্য হাতে আশিকের নাক বরাবর এক ঘুষি দিলো।
আশিক ছিটকে পড়ে গেলো নিচে।
আরোহীর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়তে লাগলো।
সাথে সাথে স্নিগ্ধর যেনো হুশ ফিরলো। অন্য ছেলের সাথে আরোহীকে দেখে আরোহীর মুখে অন্যকারো বউ কথাটা শুনে স্নিগ্ধর যেনো মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
হাত নরম হয়ে এলো,, এক ঢোক গিলে গলাটা ভিজিয়ে নিয়ে সকলের সম্মুখেই আরোহীকে পাঁজাকোল করে নিয়ে ঘাড় বাঁকা করে ছেলেগুলোকে ইশারা করলো সাথে সাথে তাঁরা আশিক কে চেপে ধরলো আশিক চিৎকার করে ওঠলো।

— ছাড়ো আমায় ছাড়ো। তোমরা ঠিক করছো না এর মূল্য তোমাদের দিতে হবে।
আরোহী স্নিগ্ধর কোলে হাত, পা ছাড়াতে লাগলো।
চিৎকার করে বলতে লাগলো ছাড়ুন আমায়। আশিককে ওরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওর কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়বোনা। কখনো ক্ষমা করবো না আপনাকে।
.
আকাশ গাড়ি নিয়ে এসে স্নিগ্ধর সামনে থামতেই স্নিগ্ধ আরোহীকে কোলে করে নিয়েই পিছন সিটে বসে পড়লো।
আরোহী সমানে চেঁচিয়ে যাচ্ছে স্নিগ্ধ কে যা তা দোষারোপ, খারাপ কথা বলে যাচ্ছে।
স্নিগ্ধ এক হাতে আরোহীর ঘাড় চেপে ধরে বললো –

— তোর যা খুশি বল আমায়। যা খুশি তুই কর।
শুধু তোর আশে,পাশে আমি ব্যাতিত অন্য পুরুষ যেনো না ঘেষে। তুই আমার বউ আরোহী, আমি তোকে ভালোবাসি। তোকে আমি সব দিক দিয়ে মুক্ত রাখবো আমায় তোকে ভালোও বাসতে হবে না শুধু তুই অন্যকোন পুরুষের সংস্পর্শে যাস না।
তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
তুই আমার ভালো রূপটা দেখেছিস খারাপ টা দেখাতে বাধ্য করিস না।

আরোহী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো –

— এর থেকেও খারাপ রূপ আর কি হতে পারে??

স্নিগ্ধ আরোহীকে শক্ত করে বুকে জরিয়ে নিলো।
শান্ত গলায় বললো-

— সরি,, আমি এতোটা করতে চাইনি মাথার ঠিক ছিলো না আমার। বউ তুমি আমার,, তোমার পাশে অন্য কেউ তবুও এমন একজন যার সাথে তোমার বিয়ের কথা চলছিলো তাঁকে আমি সহ্য করতে পারবোনা আরোহী।

— আমি আপনার বউ না। এটা কোন বিয়েই নয়।

স্নিগ্ধ মাথা তুলে ধমকে বললো –

— আরোহী,,

— ইয়েস মানি না এই বিয়ে আমি ছাড়ুন আমায় আপনি। আমার গা ঘিনঘিন করছে আপনার স্পর্শে।

স্নিগ্ধর আবারো মাথা গরম হয়ে গেলো দাঁত চেপে বললো-

— যখন ও তোমায় স্পর্শ করেছিলো তখন কেনো ঘিনঘিন করেনি আরোহী। আমি তোমার হাজব্যান্ড আর এটা তোমায় মানতে হবে।

আরোহী চিল্লিয়ে বললো-

— মানি না আমি আপনাকে হাজব্যান্ড হিসেবে ছাড়ুন আমায়।

আকাশ বললো-

— তোমরা চুপ করবে যতো ঝামেলা করার বাড়ি ফিরে করো।

আরোহী চুপ হয়ে স্নিগ্ধ কে ছাড়াতে ধস্তাধস্তি লাগিয়ে দিলো। স্নিগ্ধও নিজের সর্বস্ব জোর খাটিয়ে আরোহীকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে করতে বললো-

— ওকে সোজা আঙুলে ঘি না ওঠলে আঙুল তো বাঁকাতেই হবে মিসেস.আভিয়ান খান। বলেই বাঁকা হাসলো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here