মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১৩
জান্নাতুল নাঈমা
স্নিগ্ধ গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভার কে বললো আকাশকে তাঁর বাড়ি পৌঁছে দিতে। আকাশ মাথা বের করে বললো –
— স্নিগ্ধ রাগারাগি করিস না। মাথা ঠান্ডা রেখে ওকে বুঝাস।
আকাশের কথাটা যেনো আরোহীর পছন্দ হলো না।
“আমাকে বোঝানোর কি আছে আমি কি অবুঝ নাকি” বিরবির করে বলেই দাঁতে দাঁত চেপে বললো –
— এবার নামান,, নাকি বাড়ির লোকের সামনেও অসভ্যতামো ছাড়বেন না।
স্নিগ্ধ সিরিয়াস চোখ, মুখে আরোহীর দিকে চেয়ে বললো –
— স্নিগ্ধ কখনো লুকিয়ে চুরিয়ে কাজ করে না আরোহী।বউকে ভালোবাসতে যেমন লুকোয় না তোমন বউকে শাসন করতেও লুকোবে না।
তবে কিছু শাসন সিকরেট রাখা উচিত চার দেয়ালের ভিতরে। বলেই আরোহীকে নামিয়ে হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো।
ড্রয়িং রুমে দাদান,বিবিন,রিনি এবং শ্রেয়ান খান বসা রয়েছে।
সকলের মুখেই চিন্তার ছাপ স্নিগ্ধ আরোহীকে নিয়ে ভিতরে আসতেই শ্রেয়ান খানের মুখে হাসি ফুটে ওঠলো।রিনি তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে ভাইয়ের কান্ড দেখছে। বিবিন বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে মুখের ওপর বলেই দিলো –
— কি ব্যাপার নাত বউ অসুস্থ বর রেখে সাত সকালে বেরিয়ে যাও কোন আক্কেলে??
শ্রেয়ান খান বললো-
— আহ মা এসে গেছে তো হয়তো কোন কাজ ছিলো।
যাও মা ওপরে যাও সকালে কিছু খেয়েছো বলে তো মনে হয় না। ব্যাগপএ রেখে খেতে আসো সকলে একসাথেই খাবো।
— দেখুন আমি এই বিয়ে মানি না। আমি আপনার ছেলেকে স্বামী হিসেবে গ্রহন করতে পারছিনা।
আপনার ছেলে আমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছে।
যেখানে আমি এ বিয়েই মানি না সেখানে ওনার জ্বর হোক যা হোক আমার জায় আসেনা। আমি আমার কাজে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু আপনার ছেলে অসভ্যের মতো আমাকে জোর জবর দস্তি করে নিয়ে এসেছে।
.
আরোহী এমন এক কথা বললো যা শুনে সকলের মুখই ছোট হয়ে গেলো। আর রাগ চড়ে গেলো স্নিগ্ধর মাথায়। ধমকে বললো-
— স্যাট আপ ওনি আমার বাবা হয়। ওনার সামনে কোন প্রকার বেয়াদবি আমি মেনে নেবো না আরোহী।
শ্রেয়ান খান ছেলেকে বেশ ভালোই চেনে তাছাড়া ছেলের সব কান্ডই তাঁর জানা তাই আরোহীর কথায় সে একটুও অসন্তুষ্ট হলো না। মুচকি হেসে বললো-
— আমার ছেলেকে মানতে অসুবিধা হলেও এই বাবাকে মানতে তো অসুবিধা নেই মা। আমি তো তোমার বাবার মতোই।
আরোহী আমতা আমতা করে উপরে ওঠে গেলো।
দাদান বেশ বিচক্ষণ মানুষ তাই সে চুপচাপ পরিবারের অশান্তি দেখে যাচ্ছেন। টু শব্দ অবদি করছেন না। যতোই স্নিগ্ধ আরোহীকে ভালোবাসুক দোষ তাঁর কম নয়। এভাবে বিয়ে না করে মেয়ের ইচ্ছায় বিয়ে করলেই পারতো নাতীর দোষ ভেবে নাত বউয়ের কথায় সেও কিছু মনে করলো না।
কিন্তু রিনি আর বিবিন বেশ অসন্তুষ্ট হলো। বিবিনের মুখ টা বেশ ছোট হয়ে গেলো।
“মেয়েটাকে এতো আদর ভালোবাসা দিচ্ছে সবাই তবুও মেয়েটা এমন আচরন করছে কেনো?? মানলাম দাদু ভাই তাঁকে পাবার আশায় অচেতন অবস্থায় বিয়ে করেছে তবুও বিয়েতো। ভালোবাসে তো তাহলে এমন করার মানে কি??” ভ্রু কুঁচকে তাকালো রিনির দিকে।
রিনি বিবিনের মনের কথা গুলো বুঝতে পেরে বিরক্ত মুখে উপরে ওঠে গেলো।তাঁর কোন শখ নেই নিজের ভাইকে কেউ খুনি ভাবে এটা আহাজারি করে বলার।
.
আরোহী বিছানায় বসে নিচের দিকে মাথা রেখে ফুঁসে যাচ্ছে। আর চিন্তা করছে আশিকের কোন ক্ষতি করে ফেলবেনা তো ওরা?? অতিরিক্ত টেনশনে শরীর ঘেমে একাকারা হয়ে গেলো।
স্নিগ্ধ রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলো। তীক্ষ্ণ চোখে আরোহীর দিকে তাকিয়ে আছে সে। আরোহী আড় চোখে স্নিগ্ধর রাগি লুকটা দেখে নিয়ে নিজেও রেগে ওঠে দাঁড়ালো। বড় বড় চোখ করে কড়া গলায় আঙুল ওঠিয়ে বললো-
— আশিকের কিছু হলে আমি আপনাকে ছাড়বো না।
ছাড়বো না আপনাকে।
আশিকের জন্য এতো ছটফটানি দেখে স্নিগ্ধ এবার মারাত্মক ক্ষেপে গেলো। শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে এগুতে এগুতে বললো-“কি করবে শুনি কি করবে ওকে তো জানে মেরে দিবো আমি দেখি তুমি কি করতে পারো”
আরোহী স্নিগ্ধর আগানো দেখে এক পা পিছুলো।এক ঢোক গিলে নিয়ে বললো- “আপনি বেশী বাড়াবাড়ি করছেন আপনার ভালো হবে না ঐ উপরে একজন আছে মনে রাখবেন। এতো অন্যায়, অবিচার ওনি সইবেন না”
স্নিগ্ধ চোখ বুজে এক শ্বাস ছেড়ে একদম এগিয়ে গেলো আরোহীর দিকে আরোহী আরেকটু পিছুলেই বিছানায় পড়ে যাবে। পিছন দিকে চেয়ে স্নিগ্ধ কে পাশ কাটাতে নিতেই স্নিগ্ধ তাঁর বিনুনি তে এক টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। আরোহী আহ করে ওঠতেই স্নিগ্ধ আঙুল ওঠিয়ে নিজের এক হাটু বিছানায় ভর করলো আর বললো “একদম চুপপ”
রাগে স্নিগ্ধর পুরো চোখ,মুখ লাল হয়ে গেছে।
আরোহী ভয় পেয়ে গেলো ভীষণ যতোই হোক সে একজন মেয়ে স্নিগ্ধর সাথে আর যাই হোক গায়ের জোরে পারবে না সে। বিছানার চাদর খামচে ধরে ওঠে পিছিয়ে গেলো৷ স্নিগ্ধ তাঁর দিকে আগাতে আগাতে বললো-
— তো কি বলছিলে,,,, আমাকে স্বামী হিসেবে মানো না, এই বিয়েটাও মানো না তাই তো। আমাকে স্বামী হিসেবে মানো না বলে রেষ্টুরেন্টে বসে অন্য ছেলের হাত ধরাধরি করবে?? কি ভেবেছো স্নিগ্ধ মেরুদণ্ডহীন ভালোবাসায় অন্ধ তাই কিছু বলবে না।
আমি আগেই বলেছি আমি প্রেমিক পুরুষ হয়ে দেবদাস হতে পারবো না। আমার স্টাইল আলাদা নিজেরটা আমি বুঝে নিতে জানি।
আর নিচে কি করলে??বাড়ির প্রত্যেকটা লোকের সামনে বেয়াদবি করার সাহসীকতা আমি মেনে নেবো না। আর না মানবো সবার সামনে আমাকে প্রত্যাখ্যান করলে।
তো আজ এমন কিছু হোক যাতে তুমি মানতে বাঁধ্য হও আমি তোমার স্বামী বলেই আরোহীর গায়ের ওড়নাটা একটানে সরিয়ে ফেললো।
আরোহী চমকে গিয়ে দুহাতে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করতে লাগলো। নিচের দিকে মাথা রেখে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ভয়ে ভয়ে বললো-
— প্লিজ আমার সর্বনাশ করবেন না প্লিজ।
অঝড়ে কাঁদতে লাগলো আরোহী।
স্নিগ্ধ আরোহীর এমন অবস্থা দেখে আরো রেগে গেলো। একটানে আরোহীকে নিজের মুখোমুখি করে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো –
— তুমি আমার সর্বনাশ করতে পারলে আমি কেনো তোমার সর্বনাশ করবো না। হোয়াই???
আরোহী ভয়+অবাক চোখে তাকালো স্নিগ্ধ আরোহীর ঘাড় চেপে আরোহীর মুখ টা নিজের খুব কাছাকাছি নিয়ে বললো-
— ইয়েস,,,আমার বউ আমাকে জ্বরে রেখে অন্য পুরুষের হাত ধরে রেষ্টুরেন্টে বসে আছে এটা কি আমার সর্বনাশ নয়??
আরোহী মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইলে স্নিগ্ধ শক্ত করে চেপে ধরলো। ব্যাথায় চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো আরোহীর। স্নিগ্ধ বললো-
— এই তুই কাঁদছিস কেনো?? কেনো কাঁদছিস ঐ আশিকের জন্য,, এই তুই কেনো কাঁদবি ওর জন্য বল??
আরোহী চিৎকার করে বললো-
— কারন আপনি একটা খুনি আমার মায়ের মতো ওকেও খুন করতে আপনি পিছু পা হবেন না।
স্নিগ্ধ ভারী শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বললো –
— আর যদি ওর কোন ক্ষতি না হয়??
আরোহী চোখ তুলে তাকালো স্নিগ্ধর দিকে।
স্নিগ্ধ মাথা নেড়ে বললো-
— ওর কোন ক্ষতি হবে না শুধু তুই ওর কথা ভেবে এক ফোঁটা চোখের পানিও ফেলবি না।
আর হ্যাঁ আজকের পর ওর নামও মুখে আনবিনা দেখা তো দূরে থাক এগুলো যদি মানিস তাহলে ওর গায়ে একটা টোকাও দিবো না। আর যদি এর নড়চড় হয় তুই ভাবতেও পারবিনা ওকে আমি কি করবো।
তোকে যে ছেড়ে দিবো তাও কিন্তু না।
বল এবার তুই কি চাস??
আরোহী সমানে ফুঁসে যাচ্ছে স্নিগ্ধর থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করছে।
— কি হলো বল??
— ও আমার মামার ছেলে এটা তো অস্বীকার করতে পারবোনা আর না আমি কাউকে মিথ্যা স্বান্তনা দিবো। ওর সাথে আমি দেখা করবোই কথা বলবোই আপনাকে শাস্তি দিতে হলে ওকে আমার প্রয়োজন।
আমরা দুজন মিলে আপনার মুখোশ টেনে বের করবো।আর মালাকেও উদ্ধার করবো।
.
স্নিগ্ধ আরোহী ছেড়ে ঠাশশ ঠাশশ করে গালে দুই থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। আরোহী বিছানায় মুখ থুবড়ে পড়লো। ঠোঁট কেটে দু ফোটা রক্তের দাগ পড়লো সাদা বিছানাটায়।
আরোহী হুহু করে কেঁদে ওঠলো ওভাবে পড়েই।
স্নিগ্ধ নিজের মাথার চুল নিজেই টেনে ধরলো।
রাগে গায়ের শার্ট টেনে খুলে মেঝেতে ফেলে দিলো।
রাগে টেবিল ল্যাম্প তুলে এক ঢিল দিতেই দেয়ালের সাথে বাড়ি খেয়ে নিচে পড়ে গেলো। জগ, গ্লাস সব কিছু ভেঙে চুরমার করতে লাগলো। পুরো রুমে যেনো তান্ডব চলছে,,,
বিবিন,রিনি, শ্রেয়ান খান এসে দরজায় ঠকঠক করতে লাগলো। অথচ স্নিগ্ধ নিজের রুমের সব কিছু ভাঙচুর করতে ব্যাস্ত। রাগে যেনো মাথা ফেটে যাচ্ছে তাঁর। এই মেয়েটাকে কোনভাবেই কেনো তাঁর ভালোবাসা বুঝতে চাইছে না, কোনো এই মেয়েটা বিনা দোষে তাকে অপরাধী করে দিচ্ছে। সব শেষে অন্য একটা ছেলের সাথে হাত মেলাচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে। আজ যদি এর জায়গায় অন্য কেউ হতো তাহলে এখানেই পুঁতে ফেলতো। আর যাই হোক বিনা দোষে সে দোষীর তকমা নিয়ে সহ্য করার মতো ছেলে নয়। কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য যে মেয়েটাকে নিজের থেকেও বেশী ভালোবেসে ফেলেছে সেই মেয়েটাই তাঁর বিরুদ্ধে এমন কিছু করছে। তাই সব রাগ রুমের জিনিসের ওপর ঝাড়ছে সে।
.
বাথরুম ঢুকে এিশ মিনিটের মতো শাওয়ার নিলো।
এদিকে বাড়ির লোক চিন্তায় শেষ। রিনি বললো-
— বাবা তুমি স্নিগ্ধ কে যে করেই বুঝিয়ে এই মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করো।
বিবিন বললো-
— দিদি ভাই কি বলছো মেয়েটার কথায় সব হবে নাকি। বিয়ে করেছে এ বাড়ির বউ সে তাঁকে এই সম্পর্ক মানতেই হবে। না মানলেও এ বাড়িই তাঁর শেষ ঠিকানা হবে কারন আমার দাদু ভাই ওকে ভালোবাসে। ওকে বুঝতে হবে দাদু ভাই ওকে এতোটা ভালোবাসে। ওর ইচ্ছের থেকেও আমাদের কাছে দাদু ভাইয়ের ইচ্ছের দাম অনেক বেশী।
শ্রেয়ান খান মিটিমিটি হেসে বললো-
— তোমরা অযথা চিন্তা করছো। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হয়ই স্বাভাবিক। দেখবে এভাবেই ওরা একে অপরের কাছাকাছি চলে আসবে। একদিন স্নিগ্ধর থেকেও আরোহী স্নিগ্ধ কে দ্বিগুণ ভালোবাসবে। শুধু স্নিগ্ধ নয় এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ কেই আপন করে নেবে। ওর চোখে মুখে আলাদা এক মায়া আছে, আর যে রূপটা এখন আছে সেটা ওর আসল রূপ নয়। ওর ভিতর থেকে সব ভুল ধারণা যেদিন দূর হয়ে যাবে সেদিন কিন্তু স্নিগ্ধ কে পাগলের মতো আঁকড়ে ধরবে। কারন স্নিগ্ধ ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে আর এই ভালোবাসা পেয়ে কেউ হারাতে চাইবে না।
বিবিন এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো-
— সেদিন আসতে খুব দেরী না হয়ে যায়। এতো বেশী অবহেলা উপরওয়ালার যদি সহ্য না হয়।
রিনি চমকে বললো-
— বিবিন কি বলছো৷
বিবিন চিন্তাযুক্ত মুখে বললো-
— আমরা পুরানো দিনের মানুষ অভিজ্ঞতা কম নাই বুঝলি। এই মেয়ের কপালে দুঃখ আছে দেখিস।
দাদু ভাই কে যদি বুঝতে পারে ভালো নয়তো ওর কপালে দুঃখ আছে। “কথায় আছে বেশী বাড় বেড়োনা বুবু ঝড়ে পড়ে যাবে”।
.
প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে স্নিগ্ধ সোফায় বসে এক মনে আরোহীর দিকে চেয়ে আছে। আরোহী কাঁদতে কাঁদতে বিছানার একপাশে শুয়েই ঘুমিয়ে গেছে।
স্নিগ্ধ রুম থেকে বেরিয়ে রূপালিকে সামনে পেলো।
এক প্লেট খাবাড় দিতে বলেই আবার রুমে ঢুকে গেলো।
রূপালি খাবাড় পানি আনতেই স্নিগ্ধ রূপালিকে চলে যেতে বলে দরজা লক করে দিলো।
কথায় আছে ভালো বাসলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। রাগের মাথায় যতোই রাগ ঝাড়ুক আছেনা দূর্বলতা, অদৃশ্য এক মায়া সেই মায়ার টানেই বুকটা হুহু করছে স্নিগ্ধর। আজ অবদি কখনো নিজে ভাত বেড়ে খেয়েছে কিনা সন্দেহ। নিজের কোন কাজই সে করেনা কখনো কাউকে খাওয়িয়েও দেয়নি।
আজ প্রথম সেই মহান কাজটা করতে যাচ্ছে বেশ ঘাবড়াচ্ছেও পারবে কিনা জানে না। “কিন্তু এই ঘাড়ত্যাড়া, জেদি মেয়েটাকে তো বলে খাওয়ানোও যাবে না” ভেবেই বিছানায় গিয়ে বসলো।
কয়েকবার আরোহী বলে ডাকলো। কিন্তু কোন সাড়া পেলো না তাই খানিকটা ঝুঁকে দুহাতে আরোহীকে শূন্যিতে তুলে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে দিলো।
এবার আরোহী বেশ জোরে ঝটকা দিয়েই স্নিগ্ধর থেকে সরে গেলো। বিছানা থেকে ওড়না নিয়ে গলায় চেপে ওঠতে নিতেই স্নিগ্ধ হাত টেনে ধরলো।
আরোহী অন্যদিক মুখ করেই বললো-
— ছাড়ুন আমায়।
স্নিগ্ধ মৃদু হেসে বললো-
— সব সময় এমন ছাড়ুন ছাড়ুন করো কেনো সোনা??
একবার তো ধরুনও বলতে পারো।
আরোহীর যেন গা জ্বলে যাচ্ছে এবার। অসহ্য লাগছে হাত ছাড়াতে চেষ্টা করতেই স্নিগ্ধ একটানে আরোহীকে তাঁর কোলে বসিয়ে একহাতে শক্ত করে কোমড় জরিয়ে ধরলো।
আরোহীর শরীরটা কেমন শিরশির করে ওঠলো।
নড়তে গেলেই স্নিগ্ধ পাঁচ আঙুলে তাঁর পেটে আলতো করে চেপে ধরলো। শিউরে ওঠলো আরোহী স্নিগ্ধ আরেকহাতে আরোহীর গালে আলতো করে হাত ছোঁয়ালো। ব্যাথায় কেঁপে ওঠলো সে স্নিগ্ধ ঠোঁটের কোনে কাটা দাগ দেখে অপরাধীর মতো মুখ করে বললো-
— সরি সোনা একটু রেগে গেছিলাম।
আরোহীর এবার রাগে মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো।
মনে মনে বললো -“আল্লাহ আর কতো এক্টিং দেখতে হবে আমায়,প্লিজ এসব থেকে বের করো আমায়”
স্নিগ্ধ আরোহীকে ওভাবে নিয়েই টেবিলের কাছ থেকে প্লেট টা নিয়ে আবার বিছানায় বসলো।
আরোহীর কোলে প্লেট রাখতে রাখতে বললো-
— নড়চড় করোনা প্লেট পড়ে যাবে। এ প্রথম নিজ হাতে কাউকে খাওয়াবো সো বুঝতেই পারছো আমি কতটা নার্ভাস।
আরোহী ভ্রু কুঁচকালো প্লেট টা নিজ হাতে নিয়ে বললো-
— আমাকে ছাড়ুন আমি কোথাও যাবো না।
স্নিগ্ধ বললো-
— গড প্রমিস???
— হুম।
আরোহীকে ছাড়তেই আরোহী মুখোমুখি হয়ে বসে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো। স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে ভ্রু উঁচিয়ে বললো-
— কি ব্যাপার জান আমাকে বুুঝার ট্রাই করছো??
আরোহী কিছু বলতে যাবে অমনি স্নিগ্ধ প্লেটটা নিয়ে চট জলদি অল্প খাবাড় মেখে হাসি হাসি মুখ করে আরোহীর সামনে ধরলো।
আরোহী খাবাড় মুখে না নিয়ে বললো-
— কেনো করছেন এসব,, আপনার মতলব টা আসলে কি??
স্নিগ্ধ ভ্রু নাচিয়ে বললো-
— আমার মতলব টা কি বুঝতে হলে আমার কাছে আসতে হবে জান,,, কিন্তু সেটা তো তুমি আসবে না তাই বুঝবেও না। বুঝার জন্য হলেও আসবে নাকি একবার খুব কাছে,,, বলেই চোখ মারলো।
আরোহী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কিছু বলতে নিতেই স্নিগ্ধ টুপ করে মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিয়ে হোহো করে হাসতে লাগলো।
আরোহী বোকার মতো মুখ ফুলিয়ে স্নিগ্ধর সে প্রানখোলা হাসি অবাক নয়নে দেখতে লাগলো।
চলবে…….