মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১৭

0
2402

মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১৭
জান্নাতুল নাঈমা

গোরস্তানে নিজের মায়ের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ। তাঁর পাশে রয়েছে আরোহী। আরোহী ভ্রু কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করছে স্নিগ্ধ তাঁকে এমন একটা জায়গায় কেনো নিয়ে এলো।
.
আরোহী সবেই কিছু বলতে যাবে তখনি স্নিগ্ধ আরোহীর হাতটা ছেড়ে কবরের দিক মুখ করেই হাঁটু ভাজ করে ঘাসের ওপর বসলো।একহাতে আরোহীকে একটান দিয়ে নিজের পাশে বসালো। আরোহী অবাক হয়ে একবার স্নিগ্ধ তো একবার কবরের দিকে তাকিয়ে নিজে ঠিক হয়ে বসলো।স্নিগ্ধ আরোহীর হাত আবারো ছেড়ে দুহাটু দু’হাতের বাঁধনে রাখলো।মলিন দৃষ্টি তে মায়ের কবরের দিকে চেয়ে মলিন কন্ঠে বললো-

— এটা আমার মায়ের কবর।

আরোহী বিস্ময় চোখে তাকালো স্নিগ্ধর দিকে। এক ঢোক গিলে নিয়ে মনে মনে ভাবলো “ওনার মায়ের কবর এটা?? এখানে কেনো নিয়ে এলো আমায়??”
ভাবনার মাঝে ছেদ পড়লো স্নিগ্ধর কথায়,,,

“এখানে আমার মা শুয়ে আছেন। যেই মা আমাকে জন্ম দেওয়ার কয়েক মিনিট বাদেই মৃত্যু বরন করেছেন। যেই মা দশমাস তাঁর গর্ভে ধারন করেছে আমায়। আমাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে গিয়ে সে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করেছেন। নিজের জীবনের বাজি রেখে আমাকে একটা আলোকিত জীবন উপহার দিয়ে গেছেন। এখানে সেই মা শুয়ে আছেন যে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার ভাগ্য আমার হয় নি। এখানে সেই মা শুয়ে আছেন যার বুকে ঘুমানোর ভাগ্য আমার হয়নি। এখানে সেই মা শুয়ে আছেন যেই মা কে একটা বার মা বলে ডাকার ভাগ্য আমার হয়নি।
.
“পৃথিবীতে সব থেকে বড় হতভাগা কারা জানো?? যারা জন্মের পর একটা দিনও মায়ের কোল পায় নি, যারা জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ পান করতে পারেনি,যারা জন্মের পর মায়ের আশীর্বাদি হাত মাথায় অনুভব করেনি।আমি সেই হতভাগা আভিয়ান খান স্নিগ্ধ।

যে কখনো নিজের মায়ের আদর,ভালোবাসা পায়নি। মন খারাপ হলে মায়ের কোলে মাথা রেখে মন ভালো করতে পারেনি।
.
মা হারা সন্তান দের মায়ের প্রতি কতোটা আবেগ লুকিয়ে থাকে জানো আরোহী?? আর সেই আবেগটা শুধু নিজের মা কে ঘিরেই থাকে না সকল মায়েদের নিয়েই থাকে।

“যে ব্যাক্তির মা আছে সে যতোটানা মায়ের মর্ম বুঝতে পারে তাঁর থেকেও হাজারগুন বেশী মায়ের মর্ম বুঝে সেই ব্যাক্তি যার মা এই দুনিয়ার কোন প্রান্তেই নেই”
.
আমিও সেই ব্যাক্তি আরোহী যে নিজের মা কে চোখে দেখেনি কিন্তু এই দুমিয়ায় হাজার হাজার মাকে দেখেছি আমি। কেউ অবহেলিত, কেউ অসহায়।
.
এ শহড়ের সকল মানুষ আভিয়ান খান কে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে পারে। কিন্তু এই শহড়ের কোন মা আভিয়ান খান এর বিরুদ্ধে একটা ওয়ার্ড ও বের করতে পারবে না। আমাদের এলাকার বিশ থেকে,পঁচিশ জন বৃদ্ধ বাবা,মায়ের দায়িত্ব আমি নিজ হাতে নিয়েছি। বন্ধু দের মধ্যে কারো মায়ের অসুস্থতার খবড় পেলে ওদের থেকে আমারই যন্ত্রণা বেশী হতো। কারন যে শূন্যতা আমি ভোগ করছি,যে যন্ত্রণা আমি ভোগ করছি সেই যন্ত্রণা আমি ওদের ভোগ করতে দিতে চাইনা। দুনিয়ায় বাঁচিয়ে রাখার ক্ষমতা ঐ উপরওয়ালার ওনিই জীবন দেয় ওনিই জীবন নেয়। আমার উছুলায় শত মায়ের প্রান ঐ উপরওয়ালা বাঁচিয়ে দিয়েছে। আমি নিজেকে নিয়ে গর্বিত হইনা কারন আমার নিজের মা ই নেই আমার কাছে। কিন্তু আমি সেইসব ছেলেমেয়েদের নিয়ে গর্বিত যাদের মা বাবা দুজনই পৃথিবীতে বেঁচে আছে। আশ্চর্য হলেও সত্যি ওরা আমায় নিয়ে গর্ব করে।আর আমি সুখ পাই মায়ের পদস্থলে সকল সন্তানের জান্নাত সেই স্থান আমি পাইনি কিন্তু ওরা তো পাচ্ছে এতেই আমার সুখ।
.
স্নিগ্ধ থেমে এক ঢোক গিলে আরোহীর দিকে এক পলক চেয়ে আবারো চোখ ফিরিয়ে নিলো। আরোহীর চোখ বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
তা দেখে স্নিগ্ধ মলিন হাসলো। আবারো বলতে শুরু করলো-

“কিন্তু আফসোস আমি সারাজীবন আমার মতো দুঃখ, আমার শূন্যতা, আমার যন্ত্রণা অন্যকাউকে ভোগ করার থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে সফল হতে পারলেও আমার জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আমার ভালোবাসা কে এই যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করতে পারলাম না।
.
আরোহী চমকে বড় বড় করে তাকালো স্নিগ্ধর দিকে।
স্নিগ্ধ আরোহীর দিকে তাকালো একটু কাছে ভিরে আরোহী একটু কাছে টানলো। আরোহীর চোখ বেয়ে ঝড়া পানি গুলো আলতো হাতে মুছে দিলো। তাঁর নিজেরও চোখও চিকচিক করছে তবুও খব সুন্দর ভাবে নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো।আরোহীর দিকে চেয়ে আরোহীর এক হাত নিজের দুহাতে চেপে ধরা গলায় বললো-

— তোমাকে এসব কথা বলার একটাই কারন। তা হলো আমি কারো মায়ের হত্যাকারী হতে পারিনা আরোহী। বিশ্বাস করো আমার কাছে যদি এমন কোন অপশন থাকতো যে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে তোমার মা কে ফিরিয়ে আনা যাবে তাহলে আমি সেটাই করতাম। বিকজ ইউ আর মাই হার্ট আরোহী,ইউ আর মাই লাভ, এন্ড ইউ আর মাই ওয়াইফ।তোমার সুখের জন্য আমি নিজের সুখকেও বাজি রাখতে পারি এবং নিজের জীবনও।
.
আরোহী কান্না মিশ্রিত চোখেই বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো। স্নিগ্ধ আরোহীর হাতটা চেপে ধরে মাথা নাড়িয়ে বললো-” ইয়েস আরোহী ইটস ট্রু ”
.
আরোহী এ মূহুর্তে একটা প্রশ্নই মাথায় আনলো তা হলো তাঁর মায়ের ছবি স্নিগ্ধর ওয়ালেটে কি করে।
স্নিগ্ধ এতোক্ষন যা বললো তা মিথ্যা হতে পারেনা। তার মানে মায়ের ছবির ব্যাপারে জিগ্যাস করলেও সত্যিটা জানা যাবে।
.
আরোহী কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনি বিকট এক শব্দ হলো। সাথে সাথে স্নিগ্ধ আরোহীর ওপর গিয়ে পড়লো।আরোহী স্নিগ্ধর পিঠ আঁকড়ে সরাতে নিবে তখনি তাঁর হাত রক্তাক্ত হয়ে গেলো স্নিগ্ধ কেমন কুকিয়ে ওঠলো। আরোহী ভয়ার্ত চোখে সামনে তাকাতেই দেখলো কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা দুজন লোক দাঁড়িয়ে। একজনের হাতে পিস্তল। যা তাঁদের দিকেই তাক করা আরোহী চিৎকার করে বললো- “আপনারা কারা??? স্নিগ্ধ,,, বলেই কাঁপতে লাগলো আরোহী।
.
স্নিগ্ধর পিঠ দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝড়ছে,,,আরোহী চিৎকার করে স্নিগ্ধ বলে ডাকতেই স্নিগ্ধ আরোহীকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। এমন অবস্থায় স্নিগ্ধর এমন আচরনে আরোহী অবাক সেই সাথে মারাত্মক ভয় পেয়ে গেলো। কান্না করে দিয়ে স্নিগ্ধর পিঠে হাত চেপে ধরলো। সাথে সাথে তাঁর হাতে এসে আরেকটা গুলি লাগলো। আরোহী আহ করে হাত সরাতেই স্নিগ্ধ আরোহীকে ধরে বা দিকে সরে গেলো। যার ফলে আরেকটা গুলি এসে কবরের দেয়ালে লাগলো।
.
আরোহী হাতের রক্ত দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো৷ স্নিগ্ধ কাতরাতে শুরু করে দিয়েছে। কোনরকমে ফোন বের করে আকাশের নাম্বারে ডায়াল করলো। এদিকে দূরের লোক গুলো তা দেখে চট করে গাড়িতে ওঠে চলে গেলো।
.
একজন ফোন বের করে কাকে যেনো ফোন করে জানালো।” বস সব কাজ হয়ে গেছে মেইন কালপ্রিটকেই শেষ করে দিয়েছি সাথে একটা মেয়ে ছিলো মেয়েটা বাঁচলেও আভিয়ান খান বাঁচবে না। এইবার শ্রেয়ান খান জাষ্ট ফিনিশড”
.
আরোহী হাতের যন্ত্রণায় ছটফট করছে এদিকে স্নিগ্ধর অবস্থাও বেশ খারাপ। স্নিগ্ধ আরোহীর হাতটা কোনরকমে ধরে ফুঁ দিতে লাগলো। আরোহী আরো জোরে কাঁদতে শুরু করে দিলো। নিজের ওড়না দিয়ে স্নিগ্ধর পিঠ বাঁধতে চেষ্টা করলো কিন্তু সে পারলো না। কারন তার এক হাত আহত হয়ে সমানে রক্ত ঝড়ছে।
.
আরোহীর অমন কান্না দেখে স্নিগ্ধ ওঠার চেষ্টা করতে লাগলো আরোহী তা দেখে স্নিগ্ধ কে ধরলো। স্নিগ্ধ দূর্বল গলায় বললো-

— সরি আরোহী আমি বুঝতে পারিনি এমন কিছু হয়ে যাবে। এতোবড় একটা মিসটেক করে ফেলবো ভাবতে পারিনি। সামনে ইলেকশন এটা আমার মাথায়ই ছিলো না।
.
তিনটে গাড়ি গোরস্থানের সামনে এসে থামলো। নির্জন এই জায়গাটা একেবারেই জনশূন্য। তারওপর স্নিগ্ধ আরোহীকে নিয়ে একদম দুপুর টাইমে এসেছে।
এসময়টা নামাজের সময় হওয়াতে একদমই এ জায়গাটা নিরিবিলি থাকে।
.
শ্রেয়ান খানের দুটো গাড়ি আর স্নিগ্ধর টিম এর একটি গাড়ি থেকে ছুটে এলো সকলে। তাঁদের পিছনে রয়েছে পুলিশের গাড়ি।
.
ছেলে,ছেলের বউকে এমন অবস্থায় দেখে শ্রেয়ান খান ব্যাথিত হলেন।
আহত গলায় বললো- “বাবা তুমি তো এতো বড় ভুল কখনো করো না। আজ এমন কি হয়ে গেলো যে তুমি কাউকে না জানিয়ে এমন বিনা সিকিউরিটি তে বৌ মা কে নিয়ে এ জায়গায় এসেছো।

আকাশ বললো- “আংকেল তারাতাড়ি ওদের গাড়িতে নিতে হবে সরুন আপনি। আমরা দেখছি,,,
.
আরোহী, স্নিগ্ধ দুজনকেই গাড়িতে করে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হলো। এদিকে পুলিশ সহ স্নিগ্ধর গ্যাং রা জানার চেষ্টা করছে এতোবড় ষড়যন্ত্র কারী কে।

যদিও শ্রেয়ান খানের বুঝতে বাকি নেই এসব কার কাজ তবুও প্রমাণ ছাড়া আইন খুব দূর্বল।
স্নিগ্ধর চ্যালাদের মধ্যে কয়েকজন বলেই দিলো ” প্রমাণ ছাড়া আইন দূর্বল হলেও আমরা দূর্বল না আংকেল”

পুলিশ কথাটা শুনে তাঁদের দিকে তাকাতেই ছেলে গুলো এক স্বরে বললো- “তাকাইয়া লাভ নাই স্যার আমাদের পার্টি কাজ করার সময় কোন প্রমাণ রাখে না” কোন প্যারা নাই জাষ্ট চিল।
.
শ্রেয়ান খান আর এক মূহুর্তও দেরী না করে গাড়িতে ওঠে পড়লেন। এ মূহুর্তে ছেলের বেষ্ট চিকিৎসা করানো ছাড়া আর কোন চিন্তা মাথায় আনতে চান না। চোখ দুটো বন্ধ করে রইলো সে। ড্রাইভার বেশ দ্রুতই ড্রাইভ করছে।
.
শ্রেয়ান খান একজন সফল বিজনেসম্যান হিসেবেই বেশী পরিচিত। দেশের উচ্চবিত্ত ধনীদের মধ্যে তিনিও একজন।
.
বিজনেসের জন্যই দেশে, বিদেশে তার শত্রুর অভাব নেই। তার একমাএ ছেলে স্নিগ্ধ তাঁর প্রানভমরা।
স্নিগ্ধ কে মারার জন্য শত্রুরা মরিয়া হয়ে ওঠেছিলো।
বিজনেসের স্বার্থে বছরে বেশ কয়েকবার দেশের বাইরে যেতে হয় তাঁকে। স্নিগ্ধর যখন সাত বছর বয়স তখনও শ্রেয়ান খান দেশের বাইরে যায়।
.
ছেলে, মেয়েকে তাঁর নানা বাড়ি আর বাবা, মা কে দেশের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এক বোন সে ছিলো শশুর বাড়ি।
.
কিন্তু শত্রুরা সেখানেও পৌঁছে গেছিলো স্নিগ্ধ কে শেষ করতে গিয়ে তাঁরা শেষ করে দিয়েছিলো তাঁর বড় শালা কে। কোনভাবেই বাঁচাতে পারেনি তাঁকে।
সে মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিল “দুলাভাই মারের বদল পালটা মার দিলেই আপনি টিকে থাকতে পারবেন আর তা যদি না পারেন আজীবন মারই খেয়ে যেতে হবে” “জীবনে চলার পথে কখনো পিছন ফিরে তাকাবেন না। পিছন ফিরে তাকালেই আপনি আর এগিয়ে যেতে পারবেন না”
.
শালা বাবুর মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাঁদের শাস্তি দিয়েছিলো ঠিকই। রাজনৈতিক জীবনেও নামডাক থাকা সত্তেও সে জীবনের অবসান ঘটিয়ে নিজের বিজনেসে মন দিয়েছেন শুধুমাএ পরিবার পরিজনকে নিয়ে সুখে থাকার জন্য। কিন্তু পারেন নি
শত্রুরা তাঁদের কর্মের শাস্তি ভোগ করার জন্য রাগ পুষে রেখে নানাভাবে এট্যাক করতে থাকে।
.
শ্রেয়ান খান আইনি সহায়তা নিয়েই চলতে থাকে কিন্তু স্নিগ্ধ বড় হবার পর সব সামলে নিয়েছে।
তাঁর নিজের পরিচয় হয়েছে, শত্রুদের মোকাবিলা করার ক্ষমতা তৈরী হয়েছে।
.
সামনে ইলেকশন একদিকে বিজনেসের জন্য শত্রুতা অপরদিকে রাজনৈতিক শত্রুতা পুষিয়ে রেখেই নানাভাবে শ্রেয়ান খান এবং স্নিগ্ধর ক্ষতি করতে চায় শত্রু পক্ষরা।
.
পুরোনো ঘটনা মনে করে সেই সাথে নিজের ছেলে হারানোর ভয়ে বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে শ্রেয়ান খানের। মনে পড়ে গেলো তাঁর শালা বাবুর কথাও যার কারনে তাঁর ছেলে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলো। নিজের জীবন বলি দিয়ে যিনি তাঁর ছেলের জীবন দান করে গেছেন। সেই ঋন এ জীবনে শোধ হবার নয়। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো তাঁর আজো তাঁর ছেলে মৃত্যুর মুখে।
.
আরোহীর হাতে ব্যান্ডেজ করে দুটো ইনজেকশন পুশ করে দিয়েছে ডক্টর। কেবিনে চোখ বুজে শুয়ে আছে সে। বুকটা তাঁর দুমড়ে,মুচড়ে যাচ্ছে যা সব ঘটে গেলো সেসবের জন্য নয়। স্নিগ্ধকে যখন অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাচ্ছিলো স্নিগ্ধ কাঁপা গলায় আরোহী ডাকতেই আরোহী আহত অবস্থায়ই ছুটে যায়।
স্নিগ্ধর হাত চেপে ধরতেই স্নিগ্ধ কাঁপা গলায় বলে-

— আরোহী মালার ঠিকানা রিনি আপু জানে। মালার দায়িত্ব আমি নিয়েছি শুধুমাএ তোমার জন্য। যাতে ও তোমার মায়ের মৃত্যুর রহস্য তোমাকে জানাতে পারে।
খুব শিঘ্রই সেটা তুমি জানতে পারবে, কোন চিন্তা করো না।

আরোহীর হাতের বিষয় টা খেয়াল ছিলো না স্নিগ্ধর।
কিন্তু কথার ফাঁকে চোখ যেতেই স্নিগ্ধর দূর্বল শরীরে যেনো অদৃশ্য শক্তিরা এসে ভর করলো। চিৎকার করে বললো-

— এই ডাক্তার আমাকে ছাড়ুন আমার আরোহীকে দেখুন ওর হাতে কতটা রক্ত ঝড়ছে।

আরোহী তোমার কষ্ট হচ্ছে,,, বলেই ডাক্তারের কলার চেপে ধরলো দাঁতে দাঁত চেপে বললো -“বললাম না আমার ওয়াইফকে দেখতে ওর যদি কিছু হয় খুন করে ফেলবো”

ডাক্তার ভয়ে এক ঢোক গিললো ভয়াতুর কন্ঠে বললো –

— মি.স্নিগ্ধ ওনার থেকেও আপনার অবস্থা বেশী ভয়াবহ ইমিডিয়েটলি অপারেশন করতে হবে। ওনারও ট্রিটমেন্ট নিবো।

আরোহী স্নিগ্ধর পাগলামো গুলো এতো গভীরভাবে অনুভব করছে যে তাঁর চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি ঝড়তে লাগলো। স্নিগ্ধ চিৎকার করতে লাগলো পাগলের মতো ছটফট করতে করতে বললো-

— আরোহী কেঁদো না কিচ্ছু হবে না তোমার। কিচ্ছু হবে না,কিছু হতে দেবো না। আমি যদি নাও বাঁচি তবুও তোমার কিছু হবে না।

স্নিগ্ধর বন্ধু রা কড়া গলায় বললো-

— স্নিগ্ধ পাগলামো করিস না ওর ট্রিটমেন্ট নিবো তুই ডাক্তারদের কথা শোন।

অপারেশন থিয়েটারের দরজায় থেকেও স্নিগ্ধ কাঁপা গলায় বললো-

— আরোহী,,,তুমি আমার ভালোবাসা তার থেকেও বড় তুমি আমার দায়িত্ব।

আকাশের দিকে দূর্বল চোখে চেয়ে ভাঙ্গা আওয়াজে বললো-

— আকাশ,,,আরোহীর বেষ্ট ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা কর। আমি যদি মরেও যাই তবুও সারাজীবন ওকে তোরা প্রটেক্ট করে যাবি। আমার সব কিছু ওর নামে করে দিলাম। কোন সার্টিফিকেট লাগবেনা আমার মুখের কথাই বড় সার্টিফিকেট আশা করছি। আমি মৃত্যু পথযাএী বলে ভাবিস না ওকে তোরা অবহেলা করলে রেহাই পাবি।
.
আকাশের চোখ বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
তাঁর বেষ্ট ফ্রেন্ড একটা পাগল জানতো আজ বুঝতে পারছে তাঁর বেষ্ট ফ্রেন্ড শুধু পাগল না। মহাপাগল সাথে মহাপাগল প্রেমীক।
.
আরোহী এসব দেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সব ব্যাথা ভুলে তাঁর দৃষ্টি স্থির রাখলো স্নিগ্ধর কাতর মুখটাতে।

স্নিগ্ধ আবারো কাতরিয়ে বললো-

— আর হে আমি যদি বেঁচে না থাকি ওর সব চাওয়া পূরন করার চেষ্টা করবি শুধু আমার জায়গায় অন্যকাউকে বসাতে দিবি না। তোদের ভাবীকে তোদের দায়িত্বে রেখে গেলাম আকাশ,,,

আরোহী ফুপিয়ে কেঁদে ওঠলো ডক্টররাও আর এক সেকেন্ড দেরী করলো না। ভিতরে নিয়ে গেলো স্নিগ্ধ কে।
.
সে দৃশ্য সে কথাগুলোই আরোহীর বুকের ভিতর কম্পন সৃষ্টি করে দিয়েছে।
যে কম্পনের সৃষ্টি হয়েছে সেই কম্পন ততোক্ষণ থামবে না যতোক্ষণ স্নিগ্ধর সুস্থতার খবড় তার কানে না পৌঁছাবে।

চলবে……

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা ভালো মন্দ যাই লাগুক অবশ্যই জানাবেন। স্পেশালি খারাপ লাগলে অবশ্যই অবশ্যই জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here