মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১৮

0
2334

মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১৮
জান্নাতুল নাঈমা

ডক্টর এসে অপারেশন সাকসেসফুল জানাতেই স্নিগ্ধর বন্ধু-বান্ধবসহ রিনি, ইমরান সকলের মুখেই হাসি ফুটে ওঠলো। শ্রেয়ান খান আলহামদুলিল্লাহ বলেই আকাশকে জরিয়ে ধরলো। রিনি,ইমরানকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। এতোক্ষণ যেনো সকলেই নিজেদের প্রান ধরে নিয়ে বসে ছিলো।
.
একজন নার্স আরোহীর কেবিনে গিয়ে জানালো-

— আপনার হাজব্যান্ডের অপারেশন সাকসেসফুল।
ছয় ঘন্টার মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে, গুলিটা পিঠে লাগায় তেমন রিস্ক ছিলো না।

আরোহীর চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে না ওঠলেও মনে মনে ভীষণ খুশি হলো সে। নার্স কে বললো-

— আমি কি যেতে পারি এখন।

নার্স মৃদু হেসে বললো-

— অবশ্যই। আপনার যাবতীয় মেডিসিন আপনার বাড়ির লোক কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনি এখন যেতে পারেন কিন্তু খুবই সচেতন থাকতে হবে।
হাতে কোন প্রকার ইনফেকশন যেনো না হয়।
.
আরোহী কেবিন থেকে বের হতেই দেখলো শ্রেয়ান খান,রিনি,ইমরান সহ স্নিগ্ধর সাত,আট জন বন্ধু, বান্ধব দাঁড়িয়ে আছে।আরোহী সকলের পাশে এসেই চুপচাপ দাঁড়ালো। জারা এসে আরোহীর কাঁধে হাত রাখলো আর বললো-

— তুমি এখন ঠিক আছো?? কোন সমস্যা হচ্ছে না তো??

আরোহী স্মিথ হেসে বললো-

— ঠিক আছি আপু।
.
বেশ খানিক সময় পর শ্রেয়ান খান সকলকে বাড়ি চলে যেতে বললেন। আর জানিয়ে দিলেন সে স্নিগ্ধর সাথে হসপিটালই থাকবে। তাছাড়া তার মা বাবাও ভিষন চিন্তিত। তার মা রেগে কান্নাকাটি করছেন। কারন তাকে হসপিটাল নিয়ে আসা হয়নি।
তার বাবা কে মানাতে পারলেও মা কে পারেননি ।
তাই বাড়ি গিয়ে তাঁদের বুঝাতে হবে স্নিগ্ধ একদম ঠিক আছে।
.
রিনি যেতে চাইলো না তবুও ইমরান তাঁকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করালো বাড়ি ফেরার জন্য। শ্রেয়ান খান আরোহীর দিকে চেয়ে বললো –

— আরোহী মা তুমিও ওদের সাথে বাড়ি চলে যাও।
তুমিও আহত তোমার রেষ্ট প্রয়োজন।

আরোহী করুন চোখে তাকালো শ্রেয়ান খানের দিকে।
তাঁর মন যে বড্ড ছটফট করছে একটি বার স্নিগ্ধ কে দেখার জন্য। কিন্তু মনের কথা কিভাবে মুখে বলবে এনাদের।
.
রিনি ইমরান পা বাড়ালো আরোহী বার বার কেবিনের দিকে তাকাচ্ছিলো জারা কিছুটা আঁচ করতে পেরে আকাশকে ইশারা করলো।
আকাশ চট করে বলে ফেললো-

— আংকেল আরোহী থাকুক। স্নিগ্ধর জ্ঞান আসার পর ওকে দেখলে ভালো লাগবে। তাছাড়া আমার মনে হয় আরোহীও স্নিগ্ধর কাছে থাকতে চাইছে।

শ্রেয়ান খান সহ রিনি,ইমরান ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরোহীর দিকে। তাঁরা নিশ্চিত ছিলো আরোহী রাজি হবে না। কিন্তু তাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে আরোহী বললো-

— হ্যাঁ আমি থাকতে চাই প্লিজ আমি ওনার কাছে থাকবো।

রিনি অবাক হয়ে তাকালো ইমরান রিনির হাত চেপে ফিসফিস করে বললো-

— অবাক হওয়ার কিছু নেই এটাই হওয়ার ছিলো।
শালা বাবুকে তাঁর বউই সামলাক। আর শালা বাবুর বোন কে আমি। বলেই আবারো পা বাড়ালো।

শ্রেয়ান খান বেশ খুশি হয়ে আরোহীর মাথায় হাত রেখে বললো-

— থ্যাংকিউ মা।

আরোহী শ্রেয়ান খানের দিকে চেয়ে বললো-

— মেয়েকে কোন বাবা থ্যাংকিউ দেয়??

শ্রেয়ান খান খুবই খুশি হয়ে আরোহীকে বুকে টেনে নিলেন।
.
মোড়ায় বসে আছে আরোহী। পুলিশ এসেছে তাদের সাথেই কথা বলছেন শ্রেয়ান খান। আকাশ সহ কয়েকজন বন্ধু কেবিনের বাইরে বসে আছে।
স্নিগ্ধ উপর হয়ে শুয়ে আছে পিঠে গুলি লাগায়।
আরোহী এক ধ্যানে চেয়ে আছে স্নিগ্ধর দিকে। বার বার শুধু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে স্নিগ্ধর বলা সেই কথা গুলো। আবার ভাবছে স্নিগ্ধ কে গুলি কারা করলো??কেনো করলো??
মনে পড়লো আকাশের কথা তাই ওঠে গিয়ে কেবিনের বাইরে আকাশের সামনে চলে গেলো।
আকাশ আরোহীকে বের হতে দেখেই বললো-

— স্নিগ্ধর জ্ঞান ফিরেছে??

আরোহী বললো-

— না ভাইয়া আমি অন্যকারনে এসেছি।

আকাশ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। আরোহী বললো-

— ভাইয়া স্নিগ্ধর সাথে এমনটা কেনো হলো?? কারা এসব করলো,কিসের শত্রুতা যে ওকে কেউ খুন করতে চাইছে।

আকাশের মুখটা চুপসে গেলো অপরাধীর মতো তাকালো আরোহীর দিকে। আরোহী বললো-

— আমি জানি আপনি সব জানেন তাই প্লিজ বলুন।

আকাশ আমতা আমতা করতে লাগলো। বাকি বন্ধুরা চোরের মতো পিছনে বসে আছে। আকাশ কি বলবে ভাবতে ভাবতে বললো-

— আসলে আরোহী স্নিগ্ধর থেকে তুমি যেনো নিও।
ওর ব্যাপারে ওর থেকে পারমিশন না নিয়ে বলা ঠিক হবে না।

পিছন থেকে শান দাঁড়িয়ে বললো-

— কি বলছিস ওর ব্যাপার মানে আসলে ব্যাপারটা কিছুই না। ওর বাবা এতো বড় বিজনেসম্যান তাঁর শত্রুর অভাব নেই। আর স্নিগ্ধ তাঁর একমাএ ছেলে তাই স্নিগ্ধ কে শেষ করা মানে শ্রেয়ান খানের প্রানভোমরাকেই শেষ করা।

আকাশ স্বস্তি নিয়ে বললো-

— হ্যাঁ হ্যাঁ।

আরোহী ভ্রু কুঁচকে আকাশের দিকে তাকালো।
শান আর আকাশ আরোহীকে আরো কিছু বোঝাতে নিবে তখনি আরোহী বললো-

— থাক আর বলতে হবে না। আপনাদের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু লুকাচ্ছেন। বলেই কেবিনের ভিতর চলে গেলো আরোহী।

আকাশ আর শান একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো।
.
বেডে হাত রেখে হাতের ওপর থুতনি ভর করে স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে চোখ দুটো বুজে এসেছে আরোহীর। রাত তখন একটা ছুঁই ছুঁই। স্নিগ্ধর জ্ঞান ফিরেছে। চোখ মেলে তাকাতেই নিজেকে হসপিটাল বেডে আবিষ্কার করলো। হাত হালকা নাড়াতে লাগলো ব্যাথায় টনটন করছে বুঝলো স্যালাইন দিয়েছিলো।সোজা হতে নিয়েও পারলো না শরীর দূর্বল এবং পিঠে ব্যান্ডেজ করা নড়াচড়া করতেই ব্যাথা অনুভব করলো।
মাথাটা বাম দিক থেকে ডানদিক করতেই আরোহীর মুখটা ভেসে এলো তাঁর চোখে। ঠোঁটের কোনে দূর্বল হাসি টেনে আরোহীর দিকে চেয়ে রইলো। বুকটা তাঁর প্রশান্তি তে ভরে গেলো। একহাতে থুতনি রাখা আরেক হাত বেডে রাখা স্নিগ্ধ হাতের ব্যান্ডেজ দেখতেই চোখ, মুখ শক্ত করে বললো-

— একবার শুধু বেড থেকে ওঠতে দে আমায় সবগুলার চামড়া তুলে মরিচের গুঁড়া যদি না লাগাইছি। আমার আঘাত আমি ভুললেও আমার আরোহীর আঘাত আমি ভুলবো না।
.
কয়েকমিনিট বাদে স্নিগ্ধ ব্যাথায় চিৎকার করে ওঠলো।তবে চিৎকার টা এমন ভাবে দিলো যে চারদেয়ালেই আওয়াজ সীমাবদ্ধ রইলো। আরোহী চমকে চোখ খুলতেই স্নিগ্ধ সমানে আহ,উহ করতে লাগলো৷ আরোহী ওঠে দাঁড়িয়ে ব্যাস্ত গলায় বললো-

— কি হয়েছে একি জ্ঞান ফিরেছে তো আপনার।চিৎকার করছেন কেনো, কষ্ট হচ্ছে আপনার??

স্নিগ্ধ আবারো আহ, উহ করতে লাগলো। চোখের সামনে একটা মানুষকে এভাবে কাতরাতে দেখে সহ্য করতে পারলো না সে। কেঁদে দিয়ে বললো-

— কিছু হবে না আমি আকাশ ভাইয়াদের ডাকছি। ডক্টর ডাকছি বলেই ছুটে বেরিয়ে গেলো।

স্নিগ্ধ এবার থেমে হাসতে লাগলো যার ফলে পিঠে টান পড়তেই সিরিয়াস আহ করে ওঠলো।
বউকে পরীক্ষা করতে গিয়ে কি ভন্ডামিই না সে করলো ভেবেই মুচকি হাসলো।

আকাশ সহ সবাই ভিতরে এলো শান গেছে ডক্টরকে ডাকতে। আকাশ এসে ব্যাস্ত গলায় বললো-

— ডক্টর আসছে স্নিগ্ধ একটু সহ্য কর।

স্নিগ্ধ বালিশে থুতনি ভর করে মৃদু স্বরে বললো-

— কি সহ্য করবো ভাই।

আরোহী বললো-

— কিছু হবেনা আপনার ডক্টর আসছে সব ব্যাথা দূর হয়ে যাবে।

আকাশ বললো-

— তোর কি কষ্ট হচ্ছে???

স্নিগ্ধ হাসলো,, দুষ্টু হাসি। আকাশের দিকে চেয়ে বললো-

— আমার বউ আমাকে নিয়ে বেশীই নার্ভাস ফিল করছে। আমি একদম ঠিক আছি কোন ব্যাথা নেই।
আরোহীর দিকে চেয়ে বললো- বুকেও ব্যাথা নেই।

আরোহী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো –

— আপনি একটু আগে ব্যাথায় চিৎকার করছিলেন। তাই তো ওনাদের ডেকে নিয়ে আসলাম। তাঁর মানে আপনি এক্টিং করছিলেন??,

স্নিগ্ধ আরোহীর দিকে চেয়ে বললো-

— ইশ জানু টেস্ট করছিলাম তো,,,

— মানে,,,

— এই আমার বউ আমার প্রতি ঠিক কতোটা দূর্বল হয়ে পড়েছে।

আরোহী ঝাঁঝালো গলায় বললো-

— আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় আপনি আমার সাথে মশকরা করছেন। ছিঃ

— ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান বানে ডিয়ার,,,

আরোহী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রইলো।
স্নিগ্ধ হাসি চেপে বললো-

— ইশ এতোক্ষণ কি সুইট লাগছিলো গো তোমায়। এতোক্ষন মনে হলো আমার সুইটহার্ট আমার সামনে এখন মনে হচ্ছে আমার সুইটহার্ট বিটারহার্ট হয়ে গেছে। করলার থেকেও তেঁতো।

ডক্টর এসে বললো-

— একি এখানে এতো ভীড় কেনো আর পেশেন্ট এতো কথা বলছে কেনো??

আকাশ হাসতে হাসতে সকলকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।আরোহী খানিকটা রাগ নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে।
ডক্টর চেক আপ করে সব ওকে বলে চলে গেলো।
.
আরোহী চুপচাপ বসে আছে স্নিগ্ধর আবারো চোখ লেগে আসছে। তাই দুষ্ট বুদ্ধি সব দূরে ঠেলে বললো-

— আরোহী তুমি ওষুধ খেয়োছো??

আরোহী স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে গম্ভীর ভাবেই উত্তর দিলো”হুম”
স্নিগ্ধ মৃদু হেসে বললো,,
— “এখানে শুয়ে পড়ো আসো তোমার ঘুমের প্রয়োজন”
আরোহী ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বললো –

— আমার কথা ভাবতে হবে না ওটুকুন বেডে আপনার মতো পাঠার শরীরই আটছে না আমি শুবো কিভাবে??

স্নিগ্ধ হকচকিয়ে গেলো তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,

— একজন রোগীর সাথে এমন আচরন করছো মনে কি মায়া দয়া নেই। আর আমাকে তুমি পাঠা বললে।
তুমি কিন্তু এই পাঠারই বউ।

— হ্যাঁ সেটা আমার দূর্ভাগ্য।

— সুস্থ থাকলে দূর্ভাগ্য না সৌভাগ্য বুঝিয়ে দিতাম।

আরোহী কড়া চোখে চেয়ে বললো –

— কি বোঝাতেন হুম বেশী কথা বললে পিঠে এক ঘুষি দিয়ে আমিও বুঝিয়ে দিবো।

স্নিগ্ধ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চোখ পিটপিট করে চেয়ে আহত গলায় বললো-

— কি সাংঘাতিক,,, এমন তিঁতা হৃদয় কারো কপালে যেনো না জুটে হুমহ।
.
দুজনে টুকটাক ঝগরা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে কেউ জানেনা।একজন বসে একজন শুয়ে। পুরো সাতদিন হসপিটাল ছিলো আরোহী স্নিগ্ধর সাথে। আরোহীর একহাত আহত থাকায় তাকেও একজন নার্স দেখাশোনা করেছে।
সাতদিন পর আরোহী স্নিগ্ধ দুজনেরই ব্যান্ডেজ খোলা হলো। স্নিগ্ধ কে রিলিজ করে দেওয়াতে তাঁরা দুজনই বাড়ি ফিরে যায়।
.
বাড়ি ফিরতেই স্নিগ্ধ আরোহী দুজনই অবাক।
কারন বাড়ি ভর্তি শুধু মানুষ আর মানুষ রিনির শশুর বাড়ি থেকে তাঁর ননদ ইশা এসেছে। স্নিগ্ধর ফুপু আর ফুপাতো ভাইরা এসেছে। সকলেই স্নিগ্ধর আহত হওয়ার কথা শুনেই তাঁকে দেখতে এসেছে।
.
স্নিগ্ধ সকলের সাথে টুকটাক কথা বললো।আরোহীর সাথে সকলেই পরিচিত হলো কিন্তু সকলের মাঝে রিনির ননদ ইশা একটু বাঁকা চোখে চাইলো। কয়েকটা বাঁকা তেরা কথাও বললো।বিবিন আবার সেগুলোর সঠিক জাবাবও দিয়ে দিলো।স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে সকলের থেকে বিদায় নিয়ে ওপরে চলে গেলো।
.
আরোহীর বেশ বিরক্ত লাগছে তাঁর এতো মানুষ এতো হৈ চৈ পছন্দ না। চেনা জানা বা সেরকম সম্পর্ক থাকলে খুব একটা সমস্যা বোধ করে না।
কিন্তু এখন বেশ বিরক্ত বোধ করছে। সেও যে সবে হসপিটাল থেকে ফিরেছে তা যেনো সকলেই ভুলেই গেছে। বেশ খানিকটা সময় বাদে স্নিগ্ধ ওপর থেকে চিল্লাতে লাগলো আরোহী আরোহী বলে।
আরোহী যেনো এই সুযোগ টাই নিলো সকলের থেকে বিদায় নিয়ে ঝটপট উপরে ওঠে গেলো।
রুমে গিয়ে স্নিগ্ধ কে বললো-

— ডাকছিলেন,,, থ্যাংকিউ আমি খুব আনইজি ফিল করছিলাম।

স্নিগ্ধ আরোহীকে হেচকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দাঁড় করালো। এক আঙুলে কপাল থেকে গাল অবদি আলিঙ্গন করতে করতে বললো-

— তাই তো এভাবে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ডেকে আনলাম জানু।

আরোহীর ঠোঁট জোরা কেঁপে ওঠলো।
বড় বড় করে স্নিগ্ধর দিকে তাকাতেই তাঁর সেই দুষ্টু হাসি চোখে পড়লো।দুহাত দিয়ে তাঁর বুক বরাবর ধাক্কা দিলেও এক ইঞ্চি সরাতে পারলো না। স্নিগ্ধ ধীরে ধীরে এগুতে লাগলো আর ফিসফিস করে বললো-

— একটু আদর দেই সোনা,,,

স্নিগ্ধর মুখ তাঁর মুখোমুখি হতেই আরোহী স্নিগ্ধর মুখের ওপর হাত দিয়ে চেপে ধরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বললো-

— আপনি আমার মায়ের হত্যাকারী নন বলে এই নয় যে আমি এই বিয়েটা মেনে নিয়েছি সো দূরে থাকুন।

স্নিগ্ধ সাথে সাথে তাঁর ডানহাতে আরোহীর পেট চেপে ধরে একদম শূন্যে তুলে নিলো।
আরেক হাতে আরোহীর চুল সরালো মুখের সামনে থেকে। ভারী আওয়াজে বললো-

— আমাকে স্বামী হিসেবে না মেনে নেওয়ার আর কোন রিজন নেই জানেমন। সো তোমার কোন বাঁধা আমি শুনছি না বলেই ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো।

আরোহী সমানে ছাড়াতে চেয়েও পারলো না। তাই পিঠের ব্যাথার জায়গায় হাত দিয়ে অল্প আঘাত করলো।যার ফলে স্নিগ্ধ ঘাড় থেকে মুখ সরিয়ে আহ করে ওঠলো,আরোহীকে নামিয়ে দিয়ে রক্ত বর্ন চোখে তাকালো। আরোহী হাঁপিয়ে ওঠেছে সে স্নিগ্ধর দিকে একবারো তাকালো না প্রায় দৌড়েই সোজা ওয়াশরুম চলে গেলো।
.
চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হতেই দেখলো রুম ফাঁকা। স্নিগ্ধ রুমে নেই ব্যাথার জায়গায় ওভাবে আঘাত করা ঠিক হয়নি ভেবেই মায়া হলো তাঁর। আবার ভাবলো ” না হলে যে অসভ্যতামি করতে আসতো তাঁর কি হতো বেশ করেছি যা করেছি”
.
রাতে ডিনারের পর সকলে যার যার ঘরে চলে গেছে।
ইশার ঘুম আসছিলো না তাই রুম ছেড়ে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো। কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে ছাদে যাচ্ছে সে।
.

স্নিগ্ধ ফোনে কি সব করছে সমানে তাঁর ফোন আসছে কখনো অসুস্থতার খবড় নিচ্ছে কেউ বা কেউ শত্রুর সন্ধান করছে। এতো বকবক শুনতে শুনতে আরোহীর কান ঝালাপালা হয়ে গেছে।
তাই সে বিরক্ত হয়ে ছাদে গিয়ে সুইমিংপুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের প্রতিচ্ছবি নিজেই তাকিয়ে দেখছে। উদাস মনে দাড়িয়ে ভেবে যাচ্ছে বহু স্মৃতি। কিন্তু তাঁর স্মৃতির পাতায় অল্প সময়েই স্নিগ্ধ বেশ বিরাজ করছে।
.
এদিকে স্নিগ্ধ সব কাজ শেষ করে আরোহীকে খুঁজলো পরে মনে পড়লো রুম ছেড়ে বেরুনের সময় আরোহী বলে গেছে সে ছাদে যাবে। তাই দেরী না করে বেশ খুশি খুশি মনে সেও চলে গেলো।
.
ইশা ছাদে যেতেই আরোহীকে অমন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভাবলো ” এটা সত্যি আরোহী নাকি আরোহীর ভূত”?? এক ঢোক গিলে নিয়ে পিছন থেকে আরোহী বলে দিলো এক ধাক্কা। আরোহী সোজা পানিতে মুখ থুবড়ে পড়লো। আচমকা এমন হওয়াতে ভীষণ রকম ভয় পেয়ে গেলো আরোহী নাক মুখ দিয়ে পানি ঢুকে গেলো। কোন রকমে দাঁড়িয়ে কাশতে শুরু করলো। ইশা তাই দেখে সে কি হাসি যেনো সে কোন সার্কাস দেখতে এসেছে।
হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে একদম পেট চেপে বসছে তো ওঠছে।
.
স্নিগ্ধ ছাদের দরজায় পা রাখতেই আরোহীকে অমন অবস্থায় দেখলো। সে সমানে কাশছে অবাক হয়ে আরোহী ডাকতেই ইশা পিছন ঘুরে এবার হাসতে হাসতে স্নিগ্ধর ওপর ঢলে পড়লো।

— স্নিগ্ধ ভাইয়া,,, আমিতো ভাবছিলাম এখানে কোন মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে বা ভূত তাই টেষ্ট করে দেখলাম আসলেই কিনা। বলে আবারো হাসতে লাগলো।

স্নিগ্ধর মেজাজটা চরম পর্যায়ে বিগরে গেলো।ইশাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে ইশার
হাতটা চেপে ধরে একটানে নিয়ে ফেললো সুইমিংপুলের মাঝখানে। মুখে হাসি এনে দাঁতে দাঁত চেপে বললো –

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here