মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_১৯
জান্নাতুল নাঈমা
কপাল থেকে হাত নামিয়ে থুতনি অবদি পানি মুছে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে ন্যাকা কান্না করে দিয়ে ইশা বললো-
— স্নিগ্ধ এটা কি করলে এই শীতে তুমি আমায় পানিতে নাকানিচুবানি খাওয়ালে,,,
স্নিগ্ধ হাত বাড়িয়ে আরোহীকে তাঁর হাত দিতে ইশারা করলো। আরোহী তাই করলো স্নিগ্ধ একটানে আরোহীকে উপরে ওঠিয়ে ইশার দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে বললো –
— তোমার শরীরে শীত স্পর্শ করে ওর শরীরে করে না??তাছাড়া আমার মনে হলো তোমাকেই ভূতে পেয়েছে তাই তো আমিও একটু টেষ্ট করে দেখলাম।
বলেই চোখ মারলো।
ইশা ঠোঁট ফুলিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে হাত বাড়িয়ে বললো “প্লিজ হেল্প মি”
স্নিগ্ধ আরোহীর হাত চেপে ধরে পিছন ঘুরলো। ডানদিক ঘাড় বাঁকা করে ঠোঁটে শয়তানি হাসি টেনে বললো-
— সরি বেবি আমার বউয়ের খুব শীত লাগছে আর এক সেকেন্ডও দেরী করা যাবে না। বাচ্চা বউ আমার নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে বলেই চোখ টিপ দিয়ে বেশ তারাহুরো নিয়েই নিচে চলে গেলো।
.
ইশা যেনো তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠলো। সটাং সটাং করে পা ফেলে ওপরে ওঠে এলো। চুল গুলো একহাতে ঝ্যাংটা দিয়ে পিছন দিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিচে নামতে লাগলো আর বির বির করতে লাগলো-
— বাচ্চা বউ উহুরে বাচ্চা পেঁচার মতো বউ। বাচ্চা না ছাই ঠিকতো বড় লোকের ছেলেকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে। আমার রূপ যৌবন দিয়ে আমি তোমাকে ফাঁসাতে পারিনি আর ঐ পেতন্নি কিনা ফাঁসালো। বেশ চতুর মহিলা উমহ বাচ্চা দেখে নিবো আমি কেমন বাচ্চা হুমহ।
.
আরোহী শীতে বেশ কাঁপছে স্নিগ্ধ রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগালো। আরোহী কাঁপা গলায় বললো-
— হাত ছাড়ুন আমি পোশাক পাল্টাবো।
স্নিগ্ধ পিছন ঘুরে একটানে আরোহীকে নিজের খুব কাছে নিয়ে এলো। একহাতে কোমড় জরিয়ে শীতল দৃষ্টিতে চেয়ে বললো –
শীতে তো কাঁপুনি ধরে গেছে ডিয়ার,,,পোশাক কি তোমায় উষ্ণ করতে পারবে?? তোমার এমন হট জামাই থাকতে পোশাক লাগবে না আসো কাছে আসো,,,
আরোহীর মেজাজ গেলো গরম হয়ে এমনিতেই ইশার ওপর চরম রাগ এবং বিরক্ত হয়েছে, তারওপর প্রচন্ড শীত লাগছে, এর মধ্যে স্নিগ্ধ অসভ্যতামি শুরু করে দিয়েছে। রাগি চোখে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো –
— একদম নষ্টামি করতে আসবেন না। ছাড়ুন আমায় বেহায়া কোথাকার ছাড়ুন।
স্নিগ্ধ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আরোহীর রাগি দৃষ্টি তে উপেক্ষা করে হাসি হাসি লুক নিয়ে বললো-
— উপস সোনা নিজ বউয়ের সাথে নষ্টামি করাই যায়। প্যারা নাই বেবি জাষ্ট চিল,,,
— আমি আপনার বেবি নই,,,
— জানিতো আমায় শাশুড়ি মায়ের বেবি আর আমার বেবির হবু মা।
আরোহী ক্ষেপে গেলো বেশ জোর খাটিয়ে ছাড়াতে চেষ্টা করলো স্নিগ্ধ কে। আরোহী যতোই স্নিগ্ধ কে ছাড়াতে চায় স্নিগ্ধ ততোই চেপে ধরে তাঁকে নিয়েই সামনে আগাতে থাকে। মুখে দুষ্টু হাসি টেনে বলতে থাকে,,,
— ওহ জানু রোমান্স করছি তো,,,বিয়ের পর বেশী বেশী রোমান্স করতে হয়। আরোহীর দিকে কেমন চোখে চেয়ে বললো -“এই অবস্থায় বউকে দেখে কি আর কন্ট্রোলে থাকা যায় উপস,,,
.
স্নিগ্ধ এদিকে আরোহী কে জ্বালাচ্ছে আর ঐ দিকে ইশার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে পুরো শরীর ভিজে চুপচুপে হলেও তাঁর শরীরে যেনো আগুন জ্বলছে।
কাপড় না পাল্টেই রাগে হনহন করতে করতে সোজা স্নিগ্ধর রুমের দিকে চলে গেলো।দরজায় বেশ জোরে কড়াঘাত করছে। শব্দ পেতেই স্নিগ্ধ কান, মন সেদিকে রাখলো। সুযোগ পেয়ে আরোহী স্নিগ্ধ কে এক ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো।
স্নিগ্ধ ভ্রু কুঁচকে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। আরোহী তয়ালেটা গায়ে জরিয়ে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালো। কিন্তু দরজা খোলার সাথে সাথে ইশা এমন ভাবে স্নিগ্ধর কলার চেপে চিৎকার দিলো যে আরোহী কেঁপে ওঠলো। থেমে পিছন ঘুরতেই চমকে গেলো সে। ইশা স্নিগ্ধর কলার চেপে চিৎকার করে বলছে,,,
— কি আছে এই মেয়ের মধ্যে বলো?? কেনো এতো তারাতাড়ি তুমি বিয়ে করে নিলে। কেনো আমাকে বার বার ফিরিয়ে দিলে বলো?? কেনো বলেছিলে তোমার মেয়েদের প্রতি কোন ইন্টারেস্ট বা ফিলিংস নেই। কেনো মিথ্যা বলেছিলে স্নিগ্ধ,, আর আজ এমন রূপহীন মেয়ের জন্য তুমি কেনোই বা এতো পাগল।
স্নিগ্ধ কলার থেকে ইশার হাত ছাড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো –
— কারন ওকে আমি ভালোবাসি,,, বেরিয়ে যাও রুম থেকে।
ইশা আবারো স্নিগ্ধর কলার চেপে ধরলো।
— কেনো ভালোবাসো তুমি ওকে,,, কি আছে ওর মধ্যে ভালোবাসার মতো??শারীরিক চাহিদা ছাড়া ঐ মেয়েটা আর কি পূরণ করছে তোমার বলো। আর আমি সবদিক দিয়ে তোমায় পূর্ণ করতে পারতাম। ওর থেকে দ্বিগুন সুখ দিতাম তোমায় আমি।
স্নিগ্ধর মাথায় যেনো আগুন ধরে গেলো, চোখ জোরা ভয়ানক হয়ে গেলো। আরোহী এমন বিশ্রি কথা শুনে চোখ বুজে ফেললো। রাগে তাঁর শরীর দ্বিগুণ কাঁপতে লাগলো।
স্নিগ্ধ ইশাকে এক ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো। কড়া গলায় বললো-
— আমার আপুর ননদ না হলে তোমার মতো ফালতু মেয়ের সাথে আজ আমি কি করতাম তুমি ভাবতেও পারছো না।
ইশা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো-“স্নিগ্ধ!
স্নিগ্ধ আঙুল তুলে ভয়ংকর চোখে চেয়ে বললো-
— এই নাম নিবি না আমার। বেহায়া মেয়ে কোথাকার। তোদের মতো মেয়েদের এই স্নিগ্ধ দু পয়সার দামও দেয় না। তোদের মতো মেয়েরা স্বেচ্ছায় পুরুষ দের দেহ বিলাতে আসে তোদের ঐ সুন্দর মুখের পিছনে কি আছে তা আমি স্নিগ্ধ ভালো ভাবেই জানি। স্নিগ্ধকে রূপ দিয়ে ভোলানো যায় না।
তোর ঐ রূপ দিয়ে তুই আমার থেকে ভালোবাসা নিতে পারিসনি পারবিও না। আমি ইচ্ছে করলেই তোর দেহ ভোগ করতে পারতাম তুই স্বেচ্ছায় কম বিলাতে আসিস নি। কিন্তু পঁচা পুকুরে হাত ডুবিয়ে নিজেকে দুর্গন্ধ করতে চাই না।
ইশা চিৎকার করে বললো-“স্নিগ্ধ” সাবধানে কথা বলো।
— এই সাবধানে কি কথা বলবো রুম থেকে বের হো।
অন্যের বেড রুমে এতো রাতে আসতে লজ্জা করে না বের হো বলেই হাত ধরে দরজার বাইরে ছিটকে ফেললো। আঙুল তুলে বললো শোন স্নিগ্ধ আরোহীকে ভালোবাসে,, ভালোবাসা পবিএ সেখানে অপবিএতার কোন জায়গা নেই। আর ভালোবাসা দেহের হয় না, রূপের হয় না ভালোবাসা হয় মনের সাথে মনের। ভালোবাসায় মন কে বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয়। একটু থেমে এক ঢোক গিলে নিয়ে ইশার পা থেকে মাথা অবদি তাকালো ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো “আর শরীর, তোমার শরীরটা তো এভয়লেভল দেখতে দেখতে চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে।
তাই ইউস করার আগ্রহও জাগে না মনে সো লিভ।
বলেই দুম করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
.
পিছন ঘুরে তাকাতেই আরোহীর ড্যাব ড্যাব করে তাকানো চোখে পড়লো। বেশ রাগ নিয়েই বললো-
— হা করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও কাপড় পালটে নাও।
আরোহী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো –
— একদম আমাকে ধমকাবেন না। আপনার চরিএ আমার বেশ জানা হয়ে গেছে।
স্নিগ্ধ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো ” মানে,,,আমি আবার কি করলাম”
আরোহী ঝাঁঝালো গলায় বললো-
— ইশার শরীর এভয়লেভল দেখতে দেখতে আপনার চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে। ছিঃ আমি জানতাম আপনি একটা ক্যারেক্টারলেসই হবেন। আর তা আজ নিজ মুখেই স্বীকার করলেন আপনি। সুন্দরী মেয়েদের তো বিয়ে না করেই উপভোগ করতে পারেন তাই বিয়ে আমার মতো মেয়েকে করেছেন। এবার আসল কথা বুঝেছি। বলেই বাথরুম গিয়ে বেশ জোরেই দরজা লাগিয়ে দিলো।
.
স্নিগ্ধ আহাম্মকের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।
কি হলো কিছু বুঝলো না সে তবে একটু আইডিয়া করলো আরোহী জেলাস ফিল করছে,,,
.
গা এলিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে স্নিগ্ধ আরোহী ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো।
স্নিগ্ধ কে শোয়া দেখে স্বস্তির শ্বাস নিয়ে তয়ালে টা রশিতে দিয়ে নিজে সোফায় বসে পড়লো।
স্নিগ্ধ আরোহীর আগমন বুঝতে পেরে চোখ খুলে তাঁর দিকে তাকালো। সিরিয়াস মুখোভঙ্গি তে বললো-
— আসো আসো এবার দুজন চুপটি করে ঘুমিয়ে পড়ি। কেউ কোন দুষ্টুমি করবো না।
আরোহী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে কুশলটা নিয়ে বালিশ বানিয়ে সোফায়ই শুয়ে পড়লো।স্নিগ্ধও আর কিছু বললো না শুধু রহস্যময় এক হাসি দিলো।
.
ফজরের আজান কানে ভাসতেই ঘুম আলগা হয়ে গেলো আরোহীর। মন,মস্তিষ্ক সব বলছে আরোহী ওঠ নামাজ টা সেরে নে।কিন্তু শরীর তাঁর একটুও শায় দিচ্ছে না। বলতে গেলে সে কিঞ্চিত নড়নচড়নও করতে পারছে না। তাঁর পুরো শরীর কেউ যেনো তাঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে আছে।
ঘাড়ে কারো গরম, ভারী শ্বাস পড়ছে ক্রমাগত।
বুঝতে পেরেই আতঙ্কিত হয়ে চোখ খুললো সে।
আশে পাশে চোখ ঘুরিয়ে যেই নিজের সামনে তাকিয়েছে অমনি তাঁর ছোট খাটো এট্যাক হয়ে গেলো। স্নিগ্ধ তাঁর ওপর মরার মতো শুয়ে ঘুমাচ্ছে। “কিন্তু কিভাবে সম্ভব আমি তো সোফায় ছিলাম তাঁর মানে ওনি” আরোহীর এবার কান্না পাচ্ছে এটা ভেবেই যে এমন পাঠার শরীরটা তাঁর ওপর সারারাত পড়ে ঘুমাচ্ছে।তারওপর সমস্ত শ্বাস তাঁর গলায় পড়ছে ঘুমন্ত অবস্থায় না হয় সমস্যা হয়নি। কিন্তু জাগ্রত অবস্থায় পুরুষ মানুষের এমন শ্বাস কি সহ্য করা যায়?? তবুও হয় যদি সে নিজেরই বর,,,
দুহাতে সমানে ধাক্কা দিয়েও সরাতে পারলো না। ভ্রু কুঁচকে ভাবলো “ঘুমন্ত মানুষের গায়ে এতো জোর সত্যি ঘুমিয়েছে নাকি এক্টিং”??
.
দুবার স্নিগ্ধ বলে ডাকলো কোন সারা পেলো না। দুহাতও চেপে আছে কোনভাবেই ছাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। নামাজের সমসও পার হয়ে যাবে কি করবে না করবে তাই ভাবতে লাগলো। অবশেষে বুদ্ধি পেলো নখ দিয়ে গায়ে আঁচড় কাঁটা,,,সত্যি তাই করলো স্নিগ্ধ একটু নড়ে চড়ে তাঁর ওপর আরো ভালোভাবে চেপে রইলো। আরোহী বড় বড় করে চেয়ে এক ঢোক গিললো,,, রাগ হচ্ছে তাঁর প্রচন্ড দাঁতে দাঁত চেপে ডাকতে লাগলো তবুও স্নিগ্ধর ওঠার নাম নেই। এবার আরোহী রেগে বললো-
— তোর শখের ঘুম আমি বের করছি।
নিজের মুখ একটু নিচু করে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো উদ্দেশ্য স্নিগ্ধর গালে সাজোরে এক কামড় দেওয়া। কয়েকদফা শ্বাস নিয়ে চোখ জোরা বুজেই ঠোঁট ফাঁক করে গাল ছুঁতে যেতেই এক জোরা ঠোঁট তাঁর ঠোঁটে আবদ্ধ হয়ে গেলো। সাথে সাথে শখড খেলো আরোহী বড় বড় করে চাইতেই দুজোরা দুষ্টু চোখ চোখে পড়লো। মুখটা সরিয়ে নিতে চাইলেও পারলো না। স্নিগ্ধ তাঁকে গভীরভাবে আঁকড়ে ধরেছে। হাত দিয়ে বাঁধা দিতেই হাতজোরা বিছানার সাথে চেপে ধরলো। বেশ অনেকটা সময় পর স্নিগ্ধ থেমে গেলো।
নেশাভরা চোখে তাকালো আরোহীর পানে ঠোঁট জোরা আলগা করে দিতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো আরোহী।
স্নিগ্ধ হকচকিয়ে গেলো এক ঢোক গিলে নিয়ে আরোহীর থেকে সরে গেলো। আদুরে গলায় বলতে লাগলো-
— এমা আরোহী কাঁদছো কেনো?? ট্রাস্ট মি আমি মোটেও কিছু ভাবিনী তুমি যে চুপি চুপি আমাকে কিস করতে এসেছো এতে আমি একদম মাইন্ড করিনি। আই উইল প্রমিস ইউ আমি কাউকে কিছু বলবো না। গড প্রমিস,,,
আরোহী কে এবার পায় কে ক্ষেপে গিয়ে স্নিগ্ধর গলা চেপে ধরলো। রাগি চোখে চেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো-
— মজা হচ্ছে এখানে,,, নাটক করতে আসছেন,,,
এতোই নেশা শরীরের প্রতি কি চাই এই শরীর টা।
আপনি আমার মা কে খুন করেন নি তাই বলে এটা নয় আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি।
বার বার কেনো আমার শরীর ছুঁতে আসেন অসহ্য লাগে আমার অসহ্য লাগে।
স্নিগ্ধ যেনো বড়সড় এক ধাক্কা খেলো। আরোহীর হাত ছাড়িয়ে মলিন চোখে তাকালো আহত গলায় বললো-
— তুমি আশিক কে ভালোবাসো??ওর জন্য তুমি আমায় স্বীকার করছো না।
আরোহী নিজের মাথা চেপে ধরে হুহু করে কাঁদতে লাগলো। যা স্নিগ্ধ কে দ্বিগুণ আঘাত করলো। এক ঢোক গিলে নিয়ে বললো-
— ওকে ফাইন আমি তোমাকে ছুঁবো না। যতোদিন না তুমি চাইবে ততোদিন ছুঁবো না। তারমানে এই নয় যে আমি তোমাকে আশিকের কাছে দিয়ে দিবো। আমি এতটা মহৎ হতে পারবো না। আশিকের জন্য যে ভালোবাসা বুকের ভিতর রয়েছে তা আস্তে আস্তে ঝেড়ে ফেলো সময় দিলাম। তুমি যদি শুধু আমার ভালোবাসা হতে তাহলে এটুকু সেক্রিফাইস আমি তোমায় করতে পারতাম। কিন্তু না সেক্রিফাইস আমি করবো না কারন আমি ছাড়া পৃথিবীর কারো কাছে তুমি সর্বোচ্চ ভালোবাসা পাবে না।
স্নিগ্ধ একটু থামলো আরোহী কেঁদেই যাচ্ছে তাই বাধ্য হয়ে স্নিগ্ধ এক সত্যি কথা বলেই দিলো,,,
— দেখো আরোহী এসব কান্নাকাটি বন্ধ করো। আমাকে রাগিও না কান্না করার মতো কিছু হয়নি।
তোমাকে আমি যেভাবেই বিয়ে করিনা কেনো বিয়ে আমি করেছি। বউ তুমি আমার শুধু ভালোবাসি বলে বিয়ে করিনি। তোমার প্রতি আমার অনেক বড় একটা দায়িত্ব ছিলো বলে করেছি। কারো কাছে আমি ভীষণ ভাবে ঋনি যার কারনে এই বিয়েটা আমি ওভাবে করেছি। তুমি যে টাইপ মেয়ে কোনদিন ভালোবেসে বুঝিয়ে বাগে আনতে পারতাম না।
আরোহী থেমে গেলো চমকিত চোখে চেয়ে ধরা গলায় বললো-
— মানে,,,
স্নিগ্ধ বললো-
— সেদিন জানতে চাইলে না কেনো তোমার মায়ের ছবি আমার ওয়ালেটে??
আরোহী দ্বিগুণ চমকে গেলো। স্নিগ্ধর অনেকটা কাছে এসে দু কাধে ধরে ঝাঁকিয়ে বললো-
— কেনো বলুন কি করে পেলেন আমার মায়ের ছবি।
আর পেলেনই যখন তখন সেটা আপনার ওয়ালেটে কেনো??
স্নিগ্ধ গভীর চোখে চেয়ে মলিন স্বরে বললো-
— ছাড়ো আরোহী আমি তোমায় ছুঁবো না সো তুমি নিজে থেকে কাছে এসো না। তাহলে আমি ছুঁয়ে ফেলবো,,,
আরোহী কিছুটা শান্ত হয়ে স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে এক ঢোক গিলে সরে গেলো। স্নিগ্ধর সামনাসামনি হয়ে বসে বললো-
— বলুন,,,
স্নিগ্ধ ঘড়ির দিকে চেয়ে বললো-
— তুমি বোধ হয় এ সময় নামাজ পড়ো। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে নামাজটা আদায় করে নাও। ধীরে সুস্থে বলছি ভয় নেই আজ তোমায় সবটা আমি বলবোই।
চলবে…..