মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_২২

0
3163

মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_২২
জান্নাতুল নাঈমা

স্নিগ্ধ কল্পনাও করতে পারেনি এমন একটা সিরিয়াস সময় আরোহী এসে হানা দিবে। মারপিটের মাঝখানে গিয়ে আরোহী চিৎকার শুরু করে দিলো। আহত লোকটাকে বাঁচানোর তীব্র চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। স্নিগ্ধর চ্যালারা সকলেই কয়েক হাত দূরে সরে গেলো।নয়তো আরোহীর সাথে তাদের হাতাহাতি হতো। যা স্নিগ্ধর একদম অপছন্দনীয়। আরোহীর শরীরে অন্যকোন পুরুষের বিন্দু স্পর্শ সে সহ্য করতে পারবে না। ভার্সিটিতে উপস্থিত প্রত্যেকটা ব্যাক্তিই জানে আরোহী স্নিগ্ধর স্ত্রী। সকলেই এক ঢোক গিলে আরোহীর কর্মকান্ড দেখছে। স্নিগ্ধর অগ্নিচক্ষুও কারো নজর এড়ালো না।
আহত লোকটা কয়েক কাঁপুনি দিয়ে জ্ঞান হারালো। আরোহী তখন পাগল প্রায় হাঁটুগেরে বসে লোকটাকে ধরে স্নিগ্ধর দিকে রক্তচক্ষু তে চেয়ে বললো-

— আপনারা কি মানুষ?? এতগুলো লোক মিলে একটা মানুষ কে এভাবে আঘাত করছেন ছিঃ।বলেই নিজের ব্যাগ থেকে ওয়াটার বোতল বের করে লোকটার চোখে, মুখে পানি দিতে দিতে বললো- এই যে শুনছেন, আপনি ভয় পাবেন না কিছু হবে না। কেউ আপনাকে সাহায্য না করলেও আমি করবো। আপনার সাথে কোন অন্যায় হতে দিবো না আমি।

কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই স্নিগ্ধ বাইক থেকে এক লাফে নেমে আরোহীর হাত চেপে একটানে দাঁড় করালো। অগ্নিচক্ষুতে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো-

— জাষ্ট স্যাট আপ। এখনি এই মূহুর্তে বাসায় ফিরবে তুমি।

আরোহী এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে চিৎকার করে বললো –

— আপনি কি মানুষ?? আপনার মনে কি দয়া,মায়া নেই। আপনার বিবেক কি লোপ পেয়েছে?? একটা মানুষ কে আধমরা করতে আপনার বুক না কাঁপলেও আধমরা অবস্থায় একটা মানুষ কে ফেলে যেতে আমার বুক কাঁপবে।

স্নিগ্ধ নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো রাগে তার পা থেকে মাথা অবদি কেঁপে ওঠলো। আরোহীকে এক টানে নিজের কাছে এনে দাঁত কটমট করতে করতে বললো-

— সোজা কথার মানুষ তুমি না।

বলেই হাতটা নিজের হাতের শক্ত বাঁধনে নিয়ে হাটা ধরলো। দাড়িয়ে থাকা সকলের দিকে চেয়ে বলে গেলো –

— স্টুপিট এর মতো দাঁড়িয়ে না থেকে এই জানোয়ারটাকে হসপিটাল এডমিট কর।
জ্ঞান ফিরলে মুখ খোলার ব্যবস্থা কর নয়তো ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলার ব্যবস্থা কর।

স্নিগ্ধর কথা শুনে ছেলেরা লোকটা কে ধরে ওঠাতে গেলো। ভার্সিটিতে তেমন স্টুডেন্ট নেই ঝামেলার শুরুতেই সবাই দূরে চলে গেছে। যে কয়েকজন ছিলো তাঁরাও মাথা নিচু করে হাঁটা দিলো। আর আরোহী ইচ্ছে রকম স্নিগ্ধর নিন্দা শুরু করে দিলো। স্নিগ্ধ একটা কথাও বললো না। লক্ষ তার আরোহী জাষ্ট বাসায় নিয়ে ঘরবন্দী করা নয়তো বাড়াবাড়ি করার ওষুধ দেওয়া।
.
সকলের সামনে হিরহির করে টানতে টানতে আরোহীকে উপরে নিয়ে গেলো স্নিগ্ধ। রিনি,বিবিন এতো ডাকাডাকি সত্বেও স্নিগ্ধ থামলো না। ইশা ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে ঘটনা টা কি?? আরোহীর কথাগুলো শুনে রিনি কিছুটা আঁচ করলো। আর বেশ বুঝলো স্নিগ্ধর গ্যাং এর মারপিটের শাক্ষি এই প্রথম হয়েছে আরোহী। বিবিনকে বললো কোন চিন্তা না করতে।
.
বিনা পরিশ্রমে আপনাআপনিই স্নিগ্ধ আরোহীর মাঝে ঝগরা দেখে ইশার মন নাচতে শুরু করলো।
.
স্নিগ্ধ আরোহী কে নিয়ে রুমে ঢুকে বেশ শব্দ করেই দরজা লাগিয়ে দিলো।আরোহী এবার চিৎকার করে স্নিগ্ধ কে দোষারোপ করতে শুরু করলো।
স্নিগ্ধ আরোহীর দিকে তেড়ে গিয়ে একহাতে মুখ চেপে আরেক হাতে পিঠ চেপে নিজের একদম কাছে নিয়ে এলো।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— এই সব বিহেইভ সব সময় একদম সহ্য করবো না।
ফাইজলামির একটা লিমিট আছে আর সেটা এবার তুমি ক্রস করে ফেলেছো। বেশী বাড়াবাড়ি করলে হাত বা বেঁধে রুমে বসিয়ে রাখবো মাইন্ড ইট।

এই প্রথম স্নিগ্ধ একদম সিরিয়াস রাগ ঝারছে আরোহীর ওপর। আরোহী স্নিগ্ধর থেকে ছাড় পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি শুরু করলো। স্নিগ্ধ আরো শক্ত হয়ে নিজের চোখ,মুখ শক্ত করে বললো,

— রাজনৈতিক ব্যাপারে তুমি না কিছু জানো আর না কিছু বুঝো। তাই যে বিষয় জানো না বা বুঝো না সে বিষয়ে একদম নাক গলাতে আসবে না। আর এই সব দরদ বাইরের লোকের জন্য না দেখিয়ে নিজের হাজব্যান্ডের জন্য দেখাও কাজে দিবে।

আরোহী মুখ ছুটিয়ে বললো,

— আপনি একটা অমানুষ আপনি ঐ লোকটাকে খুব হিংস্র ভাবে মেরেছেন এবং খুন করতেও বলেছেন। ঘৃনা হচ্ছে আমার এখন যে আমার বাবা, মা আপনার মতো মানুষের ওপর ভরসা করেছে ছিঃ।

আরোহী হাঁপাচ্ছে সমানে স্নিগ্ধ আরোহীকে আবারো চেপে ধরলো। রাগে তাঁর কপালের রগ গুলো ফুলে ওঠেছে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— যা জানো না তা নিয়ে কথা বলবে না আরোহী।
আরোহী রাগি চোখে চেয়ে বললো,

— তো জানান আমায়, জানতে চাই আমি। এমন কি ঘটেছে যার জন্য একটা নিরীহ মানুষ কে এভাবে রক্তাক্ত করে মেরে ফেলারও অনুমতি দিবেন।

স্নিগ্ধ চিৎকার করে বললো,

— ও নীরিহ নয়। ও আর ওর সাঙ্গপাঙ্গ রা বিরোধী দলের লোক। সেদিন আমাদের ওপর যারা এট্যাক করেছিলো খুন করতে চেয়েছিলো আমাকে তোমায় যারা আঘাত করেছিলো সেই দলের লোক ও।

আরোহী বিস্ময় চোখে তাকালো। সেই চাহনী দেখে স্নিগ্ধ আরোহীকে খানিকটা ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে পিছন ঘুরে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে লাগলো।
আরোহী এবার খানিকটা স্থির হলো। শান্ত গলায় বললো,

— মানলাম ওনি সেই দলের লোক। তাই বলে আপনি আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন। ওরা যা অন্যায় করেছে সেই একি অন্যায় আপনিও করবেন। আপনার উচিত ওনাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া।

স্নিগ্ধ পিছন ঘুরেই শক্ত গলায় বললো,

— যা বুঝোনা তা নিয়ে একটা কথাও বলবে না।

আরোহী এবার বেশ চটে গেলো স্নিগ্ধর সামনে গিয়ে স্নিগ্ধর কলার চেপে ধরে বললো,

— এই কি বুঝিনা আমি। কি করবেন আজ মেরে ঠ্যাং ভেঙে দিবেন। ইনজেকশন দিয়ে মেরে দিবেন কাল আবার ওরা সেই প্রতিশোধ নিতে আবার আপনাকে শেষ করতে আসবে। এভাবে চলতেই থাকবে একবার আপনি আপনার লোকেরা আবার বিরোধী পক্ষের লোকেরা এসব খেলা বন্ধ করে শান্তিতে বাঁচার চেষ্টা করুন।

স্নিগ্ধ আরোহীর দুহাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে আঙুল তুলে বললো,

— তোমার এই ফালতু বকবক শোনার আমার বিন্দুমাত্র সময় নেই। বলেই রুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে নিলো আরোহী সাথে সাথে স্নিগ্ধর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

স্নিগ্ধ তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,

— হোয়াট??

আরোহী নিজের সমস্ত রাগ ত্যাগ করে শান্ত গলায় চট করে বললো,

— আপনাকে আমি কোথাও যেতে দিবো না স্নিগ্ধ। আপনি এসব মারামারি কাটাকাটি তে যাবেন না। আপনার এসব রাজনীতি করতে হবে না। সামনে আপনার ফাইনাল পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে বাবার অফিসে জয়েন করুন।

স্নিগ্ধ আরোহীর কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
ভ্রু কুঁচকে বললো,

— এখন এসব কথা ছাড়ো আমাকে যেতে হবে।

আরোহী স্নিগ্ধ কে দূর্বল করার জন্য বললো,

— আপনি না আমায় ভালোবাসেন তাহলে আমার কথা শুনবেন না??

স্নিগ্ধ ব্যাস্ত গলায় বললো,

— কোন কথা??

— এসব বাদ দিয়ে ভালো কাজ করুন। আমি কোন নেতার বউ হয়ে থাকতে চাই না।

স্নিগ্ধ রেগে বললো,

— ফালতু বকা বন্ধ করো আরোহী আমাকে যেতে দাও। বলেই পাশ কাটিয়ে যেতেই আরোহী স্নিগ্ধর হাত চেপে ধরলো।
স্নিগ্ধ এবার রেগে আরোহীকে একটান দিয়ে নিজের মুখোমুখি করে দুকাধে শক্ত করে চেপে ধরে বললো,

— বলছিনা যেতে দিতে কেনো বাঁধা দিচ্ছো??

আরোহীও কম না কড়া চোখে চেয়ে মুখের ওপর বলে দিলো,

— নিজের বউয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাবার ওপর ছেড়ে দিতে লজ্জা করে না। আমার হাজব্যান্ড নাম করা নেতা দিয়ে আমার পেট চলবে??শশুরের টাকার ফুটানি আমি করতে পারবো না।

স্নিগ্ধ থমকে গেলো আমার হাজব্যান্ড কথাটা শুনতেই তাঁর বুক জুরো আলাদা এক শিহরন বয়ে গেলো। দুহাত তাঁর নরম হয়ে এলো শান্ত গলায় বললো,

— সব হবে শুধু এখন আমায় যেতে দাও।

আরোহীর মেজাজ বিগরে গেলো। এ মূহুর্তে স্নিগ্ধর আনন্দে আত্মহারা হওয়ার কথা ছিলো। খুশিতে তাঁকে জরিয়ে ধরার কথা ছিলো। তাঁর আরোহী বিয়েটা স্বীকার করে নিয়েছে বলে কিন্তু সেসবের কিছুই হলো না। স্নিগ্ধ শান্ত গলায় যেতে দাও বলে দিলো।কাঁধ ছেড়ে চলে যেতে নিতেই আরোহী বললো,

— আপনি যদি আমার কথা না শোনেন তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।

স্নিগ্ধ থেমে গেলো পিছন ঘুরে বললো,

— তুমি যদি আমায় যেতে না দাও তোমার সাথেও আজ খুব খারাপ হয়ে যাবে।

— মানে,,,

স্নিগ্ধ কয়েক কদম এগিয়ে এলো আরোহীর হাত চেপে একটানে রুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিলো। আরোহী সমানে দরজায় শব্দ করতে লাগলো। স্নিগ্ধ টু শব্দটিও করলো না সোজা নিচে চলে গেলো।
.
বেরুনোর সময় রিনিকে বলে গেলো তাঁর ফিরতে দেরী হবে। যদি রাত হয়ে যায় আরোহীর সাথে একসাথে ডিনার করে নিতে। আর দুপুরের খাবাড়টা উপরেই পাঠিয়ে দিতে বললো।
.
আরোহী প্রচন্ড রেগে আছে। এতো বড় অপমান জাষ্ট মেনে নিতে পারছে না। “ভালোবাসা ভালোবাসা বলে এতো জাহির করা অথচ সঠিক সময় কচু।আমি এতো করে বোঝালাম তবুও বুঝলো না সেই চলেই গেলো।নেতাগিরি দেখাতে ওকে ভালো কথা থাক তুই তোর মতো কিচ্ছু বলবো না আমি। আমারই ভুল হলো ওভাবে হাজব্যান্ড বলা উফফ আরোহী অনেক বড় একটা মিসটেক করে ফেলেছিস” বিছানায় বসে বসে বির বির করছে এমন সময় তাঁর ফোন বেজে ওঠলো। অচেনা নাম্বার রিসিভ করে সালাম দিতেই আশিক বেশ রেগেই বললো,

— কি ব্যাপার আরোহী সাতদিন যাবৎ ট্রাই করছি তবুও যোগাযোগ করতে পারছিনা। আমার সবকটা নাম্বার তুমি ব্ল্যাকলিষ্টে রেখেছো কেনো??

আরোহী বিস্মিত স্বরে বললো,

— কি বলছো তোমার নাম্বার আমি কেনো ব্ল্যাকলিষ্টে রাখবো। সেদিন রাতে তো বললাম আমাদের একটা ঝামেলা হয়ে গেছে স্নিগ্ধ আর আমার গুলি লেগেছিলো। তারপর থেকে ব্যাস্ততায় তোমার সাথে আর যোগাযোগ করতে পারিনি সরি। তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে। ইতিমধ্যে অনেক কিছু জেনে গেছি আমি।

আশিক বললো,

— এতোটা ব্যস্ত যে আমার নাম্বার ব্ল্যাকলিষ্টে রাখতে হয়??

আরোহীর মুখটা চুপসে গেলো। সে তো এমন করেনি তাহলে নিশ্চয়ই স্নিগ্ধ করেছে ভাবতেই রাগ হলো তাঁর। শান্ত গলায় বললো,

— সরি আশিক আমার মনে হয় কাজটা স্নিগ্ধ করেছে। আসলে ও কেমন পাগল তা তো জানোই।

আরোহীর কথা শুনে আশিক বসা থেকে ওঠে পড়লো। সিগারেট টা নিচে ফেলে আতঙ্কিত হয়ে বললো,

— মানে এসব কি বলছো আরোহী তোমার কথার ধরন এমন লাগছে কেনো?? একজন খুনির থেকে এর বেশী কি আশা করা যায়। ও পাগল না খুনি।

আরোহী এক ঢোক গিলে নিয়ে মলিন কন্ঠে বললো,

— না স্নিগ্ধ খুনি নয়। আমি সবটা জেনে গেছি আশিক। স্নিগ্ধ খুন করেনি ও এমনটা করতেই পারে না।

— মানে,,,

সেদিনের শোনা সবটা বললো আরোহী সব শুনে আশিকের মাথায় বাজ পড়লো। সে আহত গলায় বললো,

— আরোহী স্নিগ্ধ তোমাকে ভুলভাল বুঝিয়েছে তুমি ওর ফাঁদে পা দিও না প্লিজ।

— না এমনটা নয় ও মিথ্যা বলেনি। ওর কাছে আমার মায়ের ছবি আমার বাবাই দিয়েছে। তা ছাড়া সুমি আছে না সুমি আন্টি তাঁর যে বড় ভাই ছিলো জসিম মামা চেনো??

— হ্যাঁ জসিম কাকা ছোট বেলা দেখেছি। একটা দূর্ঘটনায় মারা যায় তাছাড়া ওনিই তোর,,,

— আমার বাবার বন্ধু ছিলো তাইতো। স্নিগ্ধ যদি মিথ্যাই বলতো তাহলে ও জসিম মামা কে কি করে চিনবে??

আশিক চুপ হয়ে গেলো ধীর গলায় বললো,

— হয়তো কারো থেকে খোঁজ নিয়েছে। প্লিজ আরোহী তুমি ওর ফাঁদে পা দিও না।

— না আমি কোন ফাঁদে পা দিচ্ছি না। যা সঠিক তাই করছি আমি। স্নিগ্ধ ভুল নয়,,,

আশিক বুঝে গেছে আরোহীকে এখন কোনভাবেই বোঝানো যাবে না। কারন সে এক রোখা নিজে যা বুঝবে তাই। কারো কথায় কান দিবে না সে। তাই বললো,

— আরোহী ফুপুর কবরে জিয়ারত করবো কয়েকজন হুজুর নিয়ে শুক্রবার। তুমি প্লিজ যেভাবেই হোক আসো এখানে। আর প্লিজ সাথে ঐ লোকটাকে এনো না। সহ্য করতে পারবো না আমি।

আরোহী বুঝলো আশিক তাকে পছন্দ করে তাই স্নিগ্ধ তাঁর সামনে গেলে কষ্ট পাবে। তাই বললো,

— ওকে আমি আসবো।
.
দুপুরে আরোহীর খাবাড় রুমে দেওয়া হলেও স্নিগ্ধর ওপর জেদ করে সে খায় নি। রাতে রিনি সহ সকলে মিলে এতো ডাকাডাকি সত্বেও নিচে যায় নি। রুমেই ঘাবটি মেরে বসে আছে।

রাত এগারোটা কলিং বেল বাজাতেই ইশা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। স্নিগ্ধ সোজা ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় বসলো। ঠান্ডার মৌসুমেও স্নিগ্ধর পুরো শরীর ঘেমে একাকার। কপালের ঘাম গাল বেয়ে পড়ছে। শার্ট ভিজে চুপচুপে অবস্থা। বুকের দিকে কয়েক টা বোতাম খুলে মুখ দিয়ে ফু দিতে থাকলো।

ইশা এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে স্নিগ্ধর সামনে ধরতেই স্নিগ্ধ থ্যাংকস বলে ঢকঢক করে পানিটা খেয়ে নিলো। ইশা সেই সুযোগে স্নিগ্ধর পাশে বসলো।
এই একটা থ্যাংকসই যথেষ্ট ছিলো সেদিনের স্নিগ্ধর প্রতি সকল রাগ ঝেড়ে ফেলার।
এবার ইশা কানের পিঠে চুল গুজে দিয়ে বললো,

— জানো কি হয়েছে,,,
স্নিগ্ধ আড় চোখে তাকালো ইশার দিকে। মনে মনে ভাবলো “ইশ কি ন্যাকা খুব জানি কান ভাঙাতে আসছে কিছু নিয়ে বা নিজের ন্যাকামো গুলো সুন্দর করে পরিবেশন করতে আসছে”

স্নিগ্ধ হালকা কেশে ওঠে বললো,

— সারাদিন তো বাড়িতে শং সেজে বসে ছিলাম না তো জানবো কি করে??

ইশা বেশ উৎসুক হয়ে বললো,

— ভাবী এতো এতো ডাকাডাকি করলো আরোহীকে খাওয়ার জন্য আর সে দেমাগ দেখালো। ভাবীকে ইনসাল্ট করলো। বিবিনকে অবদি ছাড়ে নি তাঁকেও ইগনোর করেছে দরজা অবদি খুলেনি।

স্নিগ্ধ ভ্রু কুঁচকে ইশার দিকে চেয়ে বললো,

— তাই নাকি???

ইশা গাল ফুলিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো,

— হুম। আমি হলে এমনটা কখনোই করতাম না। তুমি কেনো ওর মতো বেয়াদব কে বিয়ে করলে স্নিগ্ধ। যাক করে তো ফেলেছো কিন্তু এই বেয়াদবির শাস্তি কিন্তু দিতেই হবে।

স্নিগ্ধ এবার চোখে,মুখে দুষ্টু হাসি টেনে বললো,

— হুম এমন বেয়াদব মেয়ের শাস্তি না দেওয়া মানে নিজেকে বেয়াদব প্রমাণ করা।সো শাস্তি তো দিতেই হবে।

ইশা খুশিতে লাফিয়ে ওঠলো। স্নিগ্ধর গালে টপ করে কিস করে বললো,

— ইয়েস,,, এই না হলে আসল পুরুষ। আমি জানতাম তুমি একজন বীর পুরুষ। তুমি আর পাঁচ জনের মতো না।

— ওকে বেবি সেটা কাল সকালেই টের পাবে। বলেই ওঠে দাঁড়ালো।

ইশা ভ্রু কুঁচকে বললো,

— কিভাবে??

স্নিগ্ধ একটু নিচু হয়ে ফিসফিস করে বললো,

— মেয়েটার বেয়াদবির শাস্তি দিবো। আর শাস্তির চিন্হ যদি নাই দেখো তাহলে কি মজা আছে নাকি।

ইশা খুশিতে লাফিয়ে ওঠলো স্নিগ্ধ কে জরিয়ে ধরতে নিতেই স্নিগ্ধ সরে গেলো। বাঁকা হেসে বললো,

— আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলেকে টুপ করে কিস করে ফেললে। এতেই সন্তুষ্ট হও হাগ করার ট্রাই করো না ব্যার্থ হবে। গুড নাইট,,,
.
স্নিগ্ধর কাছে ডুপ্লিকেট চাবি থাকায় টোকা না দিয়ে নিজেই দরজার লক খুলে রুমে প্রবেশ করলো।
দরজা লাগিয়ে পিছন ঘুরতেই দেখলো আরোহী চুপচাপ বিছানায় বসে আছে। স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে টু শব্দ টিও না করে বাথরুম ঢুকে পড়লো। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসেও দেখলো আরোহী সেভাবেই বসে আছে। চুলের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,

— কি গো বউ এভাবে বসে আছো কেনো। তোমার ওয়ান এন্ড অনলি হাজব্যান্ড এসেছে। আদর যত্ন করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করো।

আরোহী ক্ষেপে গিয়ে বললো,,

— কে আপনি আপনাকে আমি চিনি না।

স্নিগ্ধ চট করে বিছানায় এসে আরোহীর ঘাড় চেপে ধরে বললো,

— তো জান আমাকে চেনাবো নাকি???

— উমহ ছাড়ুন বলছি। একদম ছুবেন না আমায় ছাড়ুন।

— ছাড়বোতো বটেই আগে নিচে গিয়ে ভদ্র মেয়ের মতো খাবাড় গরম করে দাও আর আমার সঙ্গে খেয়ে নাও।

আরোহী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো,

— পারবোনা আমি আপনি আমার কোন কথাটা শুনেছেন যে আমি আপনার কথা শুনবো।

— আমার কথা না শুনলে আগামীকাল মালা কে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলবো।

— কিহ,,,

স্নিগ্ধ মুচকি হেসে বললো,

— হুম।
.
আরোহী বধ্য মেয়ের মতো সুন্দর করে স্নিগ্ধ কে খাবাড় পরিবেশন করলো। স্নিগ্ধ তাঁকেও খেতে বসার জন্য ইশারা করলো আরোহী চট করে বসে খাবাড় নিয়ে খেতে লাগলো। তাঁর পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে স্নিগ্ধর এই ইশারারই অপেক্ষায় ছিলো সে। আরোহীর এমন ভাবে খাওয়া দেখে স্নিগ্ধ মিটিমিটি হাসতে লাগলো।
.
রুমে এসে সোফায় বসে রইলো স্নিগ্ধ। আরোহী বিছানায় বসে স্নিগ্ধ কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— চাইলে এখানে শুতে পারেন। ইচ্ছের বিরুদ্ধে আর ওখানে থাকতে হবে না বলেই বিছানার এক পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো আরোহী।

স্নিগ্ধ ওঠে লাইট অফ করে দিয়ে বিছানায় এসে বসলো। আরোহীর পাশে সেও শুয়ে পড়লো। আর মিটি মিটি হাসতে লাগলো। কারন আরোহীর মনে কথা ইতিমধ্যে সে বুঝে গেছে। তাঁর মানে স্বাভাবিক হাজব্যান্ড ওয়াইফের মতো সম্পর্ক গড়ে তোলা এবার সম্ভব। তাঁর প্রেয়সির মন অবশেষে নরম হয়েছে। স্নিগ্ধ আরোহীর দিকে ঘুরলো ধীর গলায় ডাকলো আরোহী,,,

সাথে সাথে আরোহী তাঁর দিকে ফিরে বললো,

— বলুন।

স্নিগ্ধ মুচকি হেসে বললো,

— বোধ হয় আমার ডাকের অপেক্ষায় ছিলে??

আরোহী তীক্ষ্ণ গলায় বললো,

— জ্বি না আমার কিছু কথা বলার আছে তাই ভাবছিলাম ডাকবো তখনি আপনি ডাকলেন।

— বাহ মনের টান আছে বলতে হবে,

আরোহী তাঁর কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো,

— আপনার সাহস হয় কি করে আশিকের নাম্বার ব্ল্যাকলিষ্টে রাখার??

এই একটা প্রশ্নই যথেষ্ট ছিলো স্নিগ্ধর মাথা গরম করে দেওয়ার জন্য। একদম আরোহীর ওপর গিয়ে দুহাত চেপে ধরে বললো,

— তোমার সাহস হয় কি করে আমার কাজে প্রশ্ন করার??

— এসব কি পাগলামি। ছাড়ুন বলছি কি অসভ্যতামো এটা, ছাড়ুন।

স্নিগ্ধ এবার আরো শক্ত করে চেপে ধরে আরোহীর মুখোমুখি হয়ে বললো,

— সত্যি করে বলো তুমি আবার ওর সাথে যোগাযোগ করেছো??

— সত্যি মিথ্যার কি আছে আমি কথা বলেছি অনেকটা সময়। এ কদিনের সবটা ওকে জানিয়েছি আমি আর ওর সাথে দেখাও করবো বলেছি।

স্নিগ্ধ ধমকে ওঠলো – “আরোহী”,,,

আরোহী কেঁপে ওঠলো। স্নিগ্ধ আরোহী কে ছেড়ে রাগে ফুঁসতে লাগলো নিজের বালিশটা ছুঁড়ে ফেললো।নিজের ফোনটাও ছুঁড়ে ফেললো।
আরোহী কেঁপে ওঠলো প্রত্যকবারই ভ্রু কুঁচকে বললো,

— এমন রাগ করার কি আছে এখানে তাই তো বুঝছি না। আপনার মাথায় কি গন্ডগোল আছে স্নিগ্ধ??

কথাটা বলার সাথে সাথে স্নিগ্ধ আরোহীর গালে ঠাশশ করে এক থাপ্পড় দিলো।
আরোহী বালিশে মুখ গুজে পড়তেই স্নিগ্ধ একটানে আরোহীকে ওঠিয়ে পিঠে খামচে ধরলো। আরোহী আহ করে ওঠতেই স্নিগ্ধ রক্তচক্ষু তে চেয়ে বললো,

— আশিকের সাথে দেখা করা তো দূরে থাক নেক্সট ওর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে ঐ শালাকে আমি জানে মেরে দিবো।

আরোহী ভয় পেয়ে গেলো স্নিগ্ধর এই রূপ দেখে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়তে লাগলো। আতঙ্কিত গলায় বললো,

— স্নিগ্ধ কেনো এমন করছেন আপনি?? আমি আপনাকে আমার স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি। তারপরও কেনো এমন আচরন করছেন। প্লিজ ছাড়ুন আমায় লাগছে আমার। আশিকের সাথে দেখা করার কারনটা অন্য। ওর সাথে দেখা করাটা আমার জরুরি প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন।

স্নিগ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— কোন জরুরি কাজ থাকতে পারে না ওর সাথে তোমার। আমি না করেছি মানে না তুমি যাবে না ব্যাস।

আরোহী রেগে গেলো কড়া গলায় বললো-

— আমি যাবোই আপনার এই পাগলামো আপনি আপনার কাছেই রাখেন।

— পাগলামির দেখেছো কি আরোহী। তুমি আমার অবাধ্য হয়ে খুব খারাপ করলে। আমি তোমাকে বিলিভ করলেও ঐ আশিককে একটুও বিলিভ করিনা। সো তুমি যাবে না।

— আমি যাবো যাবো যাবো। ছাড়ুন আমায়।

স্নিগ্ধ কে ছাড়িয়ে কান্না করে দিয়ে বললো,

— আমারই ভুল আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নেওয়া। মানতে না মানতেই অধিকার খাটাচ্ছেন।

স্নিগ্ধ ক্ষেপে গেলো। রাগি চোখে চেয়ে বললো-

— অধিকার আছে বলেই খাটাচ্ছি আর যা বলছি তা তুমি শুনবে দ্যাটস ইট। আমার মাথা গরম করো না।

— পারবোনা শুনতে ফাইজলামি করতে আসছেন রাত দুপুরে অসহ্য। ইচ্ছে করছে এখুনি আশিকের কাছে চলে যাই আর আপনার জ্বালাটা চারগুন বাড়িয়ে দেই। বলেই বিছানা ছেড়ে ওঠতে নিতেই স্নিগ্ধ একটানে আরোহীকে বিছানায় ফেলে দিলো।
গায়ে থেকে ওড়না সড়িয়ে ফেলতেই আরোহী বড় বড় চোখ করে চিৎকার দিলো “একি কি করছেন আপনি? আমি মজা করছিলাম, এমনি বলছিলাম।
প্লিজ,,,

আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না আরোহী।

চলবে……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here