মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_২৩

0
3151

মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_২৩
জান্নাতুল নাঈমা

আরোহীর শরীরে খুব গভীরভাবেই স্পর্শ করতে থাকলো স্নিগ্ধ। আরোহী প্রথমে বাঁধা দিতে চাইলেও,চেচামেচি করতে চাইলেও এখন ভয়ে, লজ্জায় একদম চুপসে গেছে। স্নিগ্ধর এমন মাতলামোর মুখোমুখি এ প্রথম হলো আরোহী। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না স্নিগ্ধ রেগে এমন করছে নাকি রাগটা শুধুমাত্র ছুঁতো তাঁকে কাছে পাওয়ার। সে যদি তাঁকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ না করতো তাহলে হয়তো এতক্ষণে সে অনেকভাবে বাঁধা দিতো কিন্তু তাঁর মন যে স্নিগ্ধর দখলে চলে গেছে।স্নিগ্ধ তাঁর স্বামী তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ অধিকার আছে স্নিগ্ধর। মন তো নিয়ে নিয়েছে এবার কি তাঁর সবটাই নিজের করে নেবে??
ভাবতেই চোখ দিয়ে নোনা পানি গড়িয়ে পড়লো।
স্নিগ্ধর অস্থিরতা, পাগলামো ঘেরা মাতাল করা স্পর্শে কেঁপে ওঠছে আরোহী। আরোহীর ছটফট কমে গেছে, তাঁর চেঁচামেচিও শুনতে পারছে না। দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ কানে বাজছে না। শুনশান নিরবতায় স্নিগ্ধর মাথায় কিছু কথা চলে এলো। সে তো সেদিন বলেছিলো আরোহী না চাইলে সে আরোহীকে স্পর্শ করবে না। তাহলে এসব কি করছে সে এটাতো ভুল আভিয়ান খান মুখ দিয়ে কোন কথা বের করেছে আর সেটার ব্যাতিক্রম হয়েছে এমন ঘটনা আজ অবদি ঘটেনি। তাহলে আজ কেনো নাহ নারীর শরীরে যতোই নেশা মিশিয়ে থাকুক না কেনো সে নেশা স্নিগ্ধকে এতো সহজে ঘায়েল করতে পারবে না। হোক সে শরীরটা নিজের বউয়ের তাতে কি। আরোহীর সেদিনের বলা কথা গুলো মনে পড়তে স্নিগ্ধ থমকে গেলো।
“এতোবড় ভুল কি করে করতে যাচ্ছিলাম তাহলে যে আরোহী আমায় আরো দ্বিগুন ভুল বুঝে যেতো।সব ঐ ধূর্তবাজটার জন্য ওর কথা আসলেই আমার মাথা গরম হয়ে যায় ধ্যাত” আরোহীকে ছেড়ে নিজেকে সরিয়ে ফেললো স্নিগ্ধ। ঘন শ্বাস ফেলতে ফেলতে বিছানা ছেড়ে ওঠতে যাবে তখনি আরোহী স্নিগ্ধর হাত চেপে ধরলো। স্নিগ্ধ চমকে গিয়ে অবাক হয়ে আরোহীর দিকে তাকালো। আবছা আলোয় আরোহীর ঘন শ্বাস নেওয়াটা স্পষ্ট বুঝতে পারছে।
আরোহীর চোখ দুটো বুজেই আছে স্নিগ্ধ ভ্রু কুঁচকে বুঝার চেষ্টা করছে ঘটনা কি??
কয়েকদফা শ্বাস নিয়ে আরোহী দূর্বল চোখে তাকালো। যা দেখে স্নিগ্ধর মাথাটা ঘুরে গেলো।
মৃদু স্বরে বললো,”আরোহী আর ইউ ওকে”??
আরোহী চোখ বুজে ফেললো মাথা নাড়ালো যার অর্থ সে ঠিক নেই।
স্নিগ্ধ এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো-
— হাত ছাড়ো আমি দূরে চলে গেলেই তুমি ঠিক থাকবে।
আরোহী আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। স্নিগ্ধ এবার দোটানায় পড়ে গেলো ইচ্ছে তো করছে অনেক কিছুই কিন্তু সেদিন এর কথা তো সে ভুলেনি। তাই নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বললো-
— দেখো আরোহী আমি তোমায় সেদিন বলেছিলাম তুমি না চাইলে আমি তোমায় স্পর্শ করবো না। কিন্তু তুমি এমন সব ঘটনা ঘটাও যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনা। আশা করি নেক্সট ঐসব ফাউল লোকজনের কথা মুখেও আনবে না। আর এ মূহুর্তে এভাবে আমাকে ধরো না তাহলে নিজেকে আটকে রাখা দায় হয়ে পড়বে। কিছু ঘটে গেলে আমায় দোষারোপ করতে পারবে না।
আরোহী চোখ খুললো শোয়া থেকে ওঠে বসলো একহাতে স্নিগ্ধর হাত চেপে ধরেই রইলো সে। অন্যহাতে নিজের ওড়নাটা গায়ে জরালো। লম্বা এক শ্বাস ছেড়ে ধীর গলায় বললো-
— আমি যদি না চাইতাম তাহলে এতোক্ষণ সময় আমি চুপ থাকতাম স্নিগ্ধ??
স্নিগ্ধ হকচকিয়ে গেলো আরোহীর কথা শুনে। অবশ্য আজ আরোহী তাঁকে হাজব্যান্ড স্বীকার করেছে তা বেশ মনে আছে তাঁর। তবুও একটু যাচাই করার জন্য আরোহীর থেকে হাত ছাড়িয়ে ওঠে পড়লো। একটু ভাব নিয়ে বললো-
— শুয়ে পড়ো আমি ঘুমাবো। বলেই বালিশটা নিয়ে সোফায় চলে গেলো।
আরোহীর প্রচন্ড খারাপ লাগলো স্নিগ্ধর এই আচরনে। রাগে অভিমানে সে আর টু শব্দটিও করলো না। চুপচাপ শুয়ে পড়লো চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়তে লাগলো। কি আজব দুনিয়া যখন কাছে চাইতো না তখন একদম কাছ ছাড়া হতো না। আর এখন কাছে চাইছে আর দূরে সরে গেলো। কান্নায় যেনো বাঁধ মানছে না। স্নিগ্ধ খুব বুঝতে পারছে কিন্তু সেও কম না নিজেকে বেশ জোর করেই স্থির রাখলো।
বেশ খানিক সময় পর কানে ভেসে এলো –

— এই আপনার ভালোবাসা। আপনাকে আমার বেশ চেনা হয়ে গেছে আপনি খুব খারাপ। আমি চলে যাবো। আশিকের কাছেই চলে যাবো আমি। স্নিগ্ধ কে জ্বালানোর জন্যই কথাটা বললো আরোহী।

সব ঠিকি ছিলো স্নিগ্ধ বেশ ভালো একটা মুডে ছিলো। কিন্তু তাঁর সব ভালো মুড কে পঁচা পুকুরে গোসল করানোর জন্য আরোহীর তীক্ত বানীই যথেষ্ট।
এখানে তো অন্য কথাও বলা যেতো, অভিমান বুঝানোর অনেক মেনুই আনা যেতো এই দুর্গন্ধ মেনু এনে সব কিছু নষ্ট করার মাশুল এবার দাও। ভেবেই স্নিগ্ধ এক লাফে ওঠে দাঁড়ালো। আরোহী মুচকি হেসে বিছানার একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। কারন সে জানে এবার স্নিগ্ধ ঠিক তাঁর পাশে শুবে। কিন্তু সে কি জানে তাঁকে এবার তাঁর ভুলের মাশুল দিতে হবে।
.
স্নিগ্ধ নিজের শার্ট খুলে ফেললো। ধীরে ধীরে বিছানায় শুয়ে আরোহী কে নিজের কাছে টানতে লাগলো। আরোহী চমকে তাকালো স্নিগ্ধর দিকে।
স্নিগ্ধকে খালি গায়ে দেখে লজ্জা পেলো খুব। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো,

— ঘুমিয়ে পড়ুন কাল আমার ক্লাস আছে। তাছাড়া কাল তো মালা আসবে।
আরোহীর বলাও শেষ স্নিগ্ধর তাঁকে নিজের সাথে আবদ্ধ করাও শেষ। আরোহী এক ঢোক গিলে জোর পূর্বক হেসে আমতা আমতা করে বললো –
— এমন করছেন কেনো ইশ ছাড়ুন না।
স্নিগ্ধ আরোহীর গলায় নাক,মুখ ঘষতে ঘষতে বললো-
— হশশ কোন কথা না আমার প্রচন্ড রাগ হয়েছে। তাই চুপচাপ এই শাস্তি গ্রহণ করো নয়তো গালে আজ আরো কয় আঙুলের ছাপ পড়বে হিসেবের বাইরে।
কথাটা শুনে আরোহী বেশ অপমানিত হলো। কারন থাপ্পড়ের কথা মনে করিয়ে কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটা দিয়েছে স্নিগ্ধ। অভিমানে স্নিগ্ধর থেকে সরে যতে চাইলো। এতে স্নিগ্ধ পুরোপুরি ভাবে নিজের সাথে জরিয়ে ফেললো তাঁকে। তাঁর ঠোঁটে, গলায়,নিজের ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া দিতে লাগলো।
আরোহীও আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না। এতো প্রখর ছোঁয়া দিচ্ছে স্নিগ্ধ যে আর কোন কিছু ভাবার অবস্থাতেই রইলো না সে। শুধু স্নিগ্ধর ভালোবাসার পরশ গুলো হৃদয় থেকে অনুভব করতে লাগলো।
আরোহী সম্পূর্ণ ঘোরে চলে গেছে স্নিগ্ধ আরোহীর কপালে চুমু একে দিলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো –

— এতো সময় কেনো নিলে নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ করতে??আজ থেকে আমাকে অপেক্ষা করানোর শাস্তি ভোগ করতে হবে ম্যাডাম। বলেই আরোহীকে তাঁর ভালোবাসার উন্মাদনায় মত্ত করতে লাগলো। তাঁদের পবিএ মিলনে স্নিগ্ধ অনেক অভিযোগ করলেও আরোহী শুধু একটা কথাই বললো -“স্নিগ্ধ আমায় কখনো ছেড়ে যেওনা। তুমি ছাড়া এ পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। এ দুনিয়াতে আমার সর্বশেষ ঠিকানা শুধুই তুমি।আর কখনো এই আরোহী তোমার ভালোবাসা কে উপেক্ষা করতে পারবেনা। আরোহীর সবটা জুরেই শুধু স্নিগ্ধ আর স্নিগ্ধ”বলেই স্নিগ্ধ কে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি ঝড়তে লাগলো।
স্নিগ্ধও তাঁকে নিজের সাথে গভীরভাবে মিশিয়ে নিয়ে আদরে আদরে ভরিয়ে দিলো। ঘোরের মাঝে থেকে আরোহীর তুমি বলাটা বেশ ইনজয় করলো স্নিগ্ধ।
.
ফজরের আজান কানে বাজছে। আরোহী স্নিগ্ধর উন্মুক্ত বুকে মুখ গুজে চোখ বুজে রয়েছে। স্নিগ্ধ ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু আরোহী জাগনাই আছে।
সে স্নিগ্ধর বুকের ঢিপঢিপ আওয়াজ শুনতে স্নিগ্ধর শরীরের মাতোয়ারা ঘ্রান নিতে ব্যাস্ত। একজন পুরুষের শরীরের ঘ্রান এমন মাতাল করা হতে পারে জানা ছিলো না আরোহীর। বুকের ঐ ঢিপঢিপ আওয়াজ টা যেনো বার বার আরোহী আরোহী করছে। ভাবতেই তৃপ্তি তে ভরে যাচ্ছে তাঁর বুকটা।
এই মানুষ টা সত্যি তাঁকে খুব ভালোবাসে আর তা বুঝতে সে বেশ সময় নিয়েছে। এই মানুষ টা বিনা শর্তেই তাঁকে প্রচন্ড ভালোবাসা দিয়েছে।
“এই মানুষ টা তাঁর না রূপ না গুনের পূজারী এই মানুষ টা তার মনের পূজারী” “ভালোতো এমন মানুষ কেই বাসতে হয় যে রূপ,গুন নয় মনের পূজারী হয়”
.
নামাজ পড়তে হবে তাই স্নিগ্ধর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো আরোহী। কিন্তু স্নিগ্ধ ঘুমের ঘোরে তাঁকে আরো চেপে নিলো নিজের সাথে। মনে হচ্ছে এখুনি নিজের বুকের ভিতর ঢুকিয়ে ফেলবে।
আরোহী একটু মাথা তুলে আস্তে করে বললো-

— স্নিগ্ধ ওঠুন আজান দিয়েছে নামাজ পড়তে হবে।

স্নিগ্ধ ঘুমের ঘোরেই বললো-

— যাও যাও পড়ে নাও।

আরোহী মুচকি হেসে বললো –

— না ছাড়লে যাবো কি করে ছাড়ুন না। শাওয়ার নিতে হবে প্লিজ ছাড়ুন।

স্নিগ্ধ চোখ টেনে তুলে তাকালো আরোহীর দিকে।
রাতের কথা মনে পড়তেই চোখে, মুখে দুষ্টু হাসি টেনে বললো-

— এই যে আমার ধানিলঙ্কা বউ কি হুম যুদ্ধ,বল বাজি বলো জেদ বলো হেরে তো গেলে তুমি আর জিতে গেলাম আমি বলেই চোখ মারলো।

আরোহী হকচকিয়ে গেলো তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বললো-

— কিছু বিষয়ে হেরে যাওয়ার মাঝেও অনেক বড় প্রাপ্তি থাকে। এবার আপনার বাহাদুরি দূরে সরান আর আমাকে ছাড়ুন। বলেই জোর জবরদস্তি শুরু করলো।

স্নিগ্ধ হাসতে হাসতে বললো-

— ত্যাজ দেখি এখনো কমেনি ১৬ আনাই আছে। কি আছে তোমার ঐ দেহে সব তো নিয়েই নিলাম এখনো এতো ত্যাজ কিসের??

আরোহী রাগি চোখে তাকালো স্নিগ্ধ আরোহীর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো-

— নাও আমার বাশি চুমু।

আরোহী শান্ত গলায় বললো-

— ফাইজলামি পরেও করা যাবে নামাজের সময় চলে যাচ্ছে প্লিজ ছাড়ুন।

স্নিগ্ধ শান্তির শ্বাস ছেড়ে বললো-

— আহা এবার লক্ষিমন্ত বউয়ের ন্যায় কথা হয়েছে সোনা। যাও বলেই আরোহীর কপালের চুল গুলো পিছন দিক সরিয়ে দিয়ে কপালে আলতো করে চুমু একে দিলো।আরোহী খানিকটা লজ্জা নিয়েই ওঠে পড়লো। আবার পিছন ঘুরে স্নিগ্ধর পিঠে হাত রেখে বললো- আপনিও চলুন না একসাথে নামাজ পড়বো।

স্নিগ্ধ তাঁর দিক ঘুরে ভ্রু কুঁচকে বললো –

— তুমি তো বেশ চালাক সারারাত বরের ভালোবাসা পেয়ে মন ভরে নি। এখন নিজের সাথে শাওয়ারে নিয়ে গিয়ে রোমান্স করার মতলব।

আরোহী বড় বড় করে চেয়ে বেশ রাগ নিয়ে বললো-

— মোটেওনা। আপনি তো একটা নাস্তিক নামাজ পড়েন না। আর আমি বললাম আপনি কিসের মাঝে কি তুলে আনলেন। দেখুন আমি শাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়তে পড়তেই যেনো আপনাকে জায়নামাজে দেখতে পাই। বলেই শটাং শটাং পা ফেলে চলে গেলো।

স্নিগ্ধ ঘরির দিকে চেয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওঠে পড়লো। বাথরুমের সামনে তয়ালে গলায় ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
আরোহী বের হতেই স্নিগ্ধ কে দেখতে পেয়ে মুচকি হেসে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
আরোহী নামাজ শেষ করতেই পাশে স্নিগ্ধ জায়নামাজ নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
.
স্নিগ্ধ শুয়ে পড়লো আবারো কিন্তু ঘুমাতে পারলো না। তাঁর ফোন বেজে ওঠলো স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো তাঁর বাবা ফোন করেছে। ভ্রু কুঁচকে রিসিভ করে বললো-

— গুড মর্নিং ড্যাড।

— গুড মর্নিং মাই প্রিন্স। গুড নিউজ আছে অফিস চলে আসবে নাকি ফোনেই বলবো??

স্নিগ্ধ শোয়া থেকে বসে পড়লো আরোহী তয়ালে দিয়ে তাঁর ভেজা চুল গুলো মুছছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে। ভেজা চুলের ঘ্রান স্নিগ্ধর নাকে পৌঁছাতেই সে আর দূরে থাকতে পারলো না। কানে ফোন রেখেই এগিয়ে গেলো আরোহীর দিকে। পিছন থেকে এক হাতে কোমড় জরিয়ে ঘাড়ে নাক ঘষতে থাকলো। আরোহী কেঁপে ওঠলো স্নিগ্ধর দিকে ফিরে তাকাতে নিতেই স্নিগ্ধ পেটে শক্ত করে চেপে ধরলো। আরোহী একদম ফ্রিজড হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
এদিকে শ্রেয়ান খান বললো-

— সাতজনকে থানায় নেওয়া হয়েছে সেদিন যারা তোমাদের এট্যাক করেছিলো তাঁদের শনাক্ত করা গেছে। তুমি কি একবার থানায় যাবে নাকি আমিই সামলে নিবো।

স্নিগ্ধ আরোহীর ঘাড়ে আলতো ঠোঁট ছুয়িয়ে দিয়ে বললো-

— নাহ যাবো না। আমার জরুরি এক কাজ পড়ে গেছে ওদিকটা তুমি সামলে নাও। আর আমি আকাশ আর শানকে পাঠিয়ে দিবো। আমার কাজটা ওরাই করে দেবে।

শ্রেয়ান খান ওকে ওকে বলে ফোন রেখে দিলেন।
স্নিগ্ধ এবার আরোহী কে পিছন থেকে জরিয়ে শূন্যিতে ওঠিয়ে তিনটা ঘোরপাক খেলো। আর হো হো করে হাসতে লাগলো। আচমকায় এমন ঘুরানিতে আরোহীর মাথাটা ভন ভন করে ওঠলো। চেঁচিয়ে বললো-

— স্নিগ্ধ ছাড়ুন আহ,

স্নিগ্ধ এমন আর্তনাদ শুনে নামিয়ে দিলো। সাথে সাথে আরোহী টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলো।
স্নিগ্ধ আরোহী বলেই চট করে ধরে বিছানার কাছে নিয়ে বসিয়ে দিলো। চিন্তিত মুখে বললো-

— সরি সরি আসলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে কি করবো বুঝে ওঠতে পারছিলাম না।

আরোহী কয়েকদফা শ্বাস নিয়ে স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে বললো –

— ইটস ওকে।

স্নিগ্ধ সন্দেহ চোখে চেয়ে বললো-

— তুমি ঠিক আছো অল্পতেই এমন মাথা ঘুরে গেলো যে??

আরোহী ইতস্ততভাবে বললো-

— না কিছুনা আমি নিচে যাচ্ছি আপনি আরেকটু ঘুমিয়ে নিন। বলেই ওঠে দাঁড়ালো। কয়েক পা এগুতেই স্নিগ্ধ আরোহীর হাত আঁটকে বললো-

— আমি কি অবুঝ নাকি যে কিছু বুঝিনা। চুপ চাপ এখানে বসো বা শুয়ে পড়ো আমি আসছি।

— আপনি কোথায় যাবেন??
— উফফ বললাম তো চুপচাপ রেষ্ট নাও নিচে যেতে হবে না। আর আজ বাসার বাইরেও যেতে হবে না। আমি ভার্সিটি যাবো না মালাকে নিতে যাবো সো তুমি বাসার বাইরে যাবে না।

স্নিগ্ধ রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো আরোহী নিজের মাথায় ওড়নাটা চাপিয়ে আধশোয়া হয়ে বসলো।
স্নিগ্ধ বিবিন কে বললো সোনালিকে দিয়ে উপরে ব্রেকফাস্ট পাঠিয়ে দিতে আরোহীর শরীর ঠিক নেই।
.
নয়টার দিকে স্নিগ্ধ রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো। তাঁর কয়েক মিনিট বাদেই আবার রুমে এলো।
আরোহী বই নিয়ে বসেছে সবে স্নিগ্ধ হুড়মুড়িয়ে রুমে এসে আরোহীর থেকে বই ছিনিয়ে নিয়ে একপাশে রাখলো।আরোহীর দিকে সিরিয়াস ভাবে চেয়ে গম্ভীর গলায় বললো-

— তুমি কিন্তু আশিকের সাথে যোগাযোগ করবে না।

আরোহী এবার বুঝলো মহাশয় এ ব্যাপারে কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলো। নিশ্চয়ই বাড়ির বাইরে পা ফেলতেই মনে পড়েছে আর এভাবে ছুটে এসেছে সাবধান করতে। আরোহী হালকা কেশে বললো-

— আপনি পারেনও বটে আজব লোক একটা।

স্নিগ্ধ আরোহীর দু কাধে শক্ত করে চেপে ধরে বললো –
— লিসেন তুমি শুধুই আমার।

— তো,,,এটা তো আমি জানি আর এখন মানিও তাহলে এসব কথা ওঠছে কেনো??

স্নিগ্ধ রেগে বললো-

— তুই ওর সাথে ফারদার যদি যোগাযোগ করিস মেরে ফেলবো।

আরোহী ভ্রু কুঁচকে তাকালো। স্নিগ্ধ জোর পূর্বক হেসে শান্ত গলায় বললো-

— আরোহী বোঝার চেষ্টা করো। আমাদের সম্পর্কে আর ঝামেলা চাই না। আর আমি যা সহ্য করতে পারবো না তুমি প্লিজ তা করবেনা। খুব ভালোবাসি তোমায়, আর খুব ভালোবাসবো। তুমি আমার খুব আদরের হয়ে থাকবে শুধু আমার কথাগুলো শুনে চলো।নয়তো আমি রেগে গেলে যা তা করে ফেলতে পারি।

আরোহীর স্নিগ্ধর এসব কথা অহেতুক মনে হলো।
ঠান্ডা গলায় বললো-

— আপনি কোথাও বেরুচ্ছিলেন সো সেখানে যান।

স্নিগ্ধ আরোহীকে জরিয়ে ধরলো। ভালোবাসাময় গলায় বললো-

— আমি যা করবো যা করছি যা বলছি সবটাতে আমাদের দুজনের ভালো মিশে আছে। আর ঐ ছেলেটাকে আমার একদম সুবিধার মনে হয় না। তাই তুমি ওর সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখবে না।

আরোহী বুঝতে পারলো স্নিগ্ধ একটু বেশী চিন্তা করছে তাঁকে নিয়ে তাই শান্ত গলায় বললো –

— আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি এবার আপনি যান তো।
.
ইশা রুমে এসে দেখলো আরোহী বসে পড়ছে।
কালরাতে কি হয়েছে স্নিগ্ধ এমন শাসন করেছে যে আজ নিচেও যায় নি। তাই নিজের চোখে দেখার জন্য রুমে চলে এসেছে ইশা। কিন্তু সে তেমন কিছুই দেখলো না। সব তো ঠিকই আছে। আরোহী ভ্রু কুঁচকে বললো –

— কিছু বলবে??
— না মানে ইয়ে তোমাদের মাঝে কি কিছু হয়েছে??
আরোহী হকচকিয়ে গেলো। “ইশা কিসের কথা বলছে আল্লাহ ছিঃ ও কি কিছু বুঝে গেলো” এক ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললো –
— মানে??
ইশা কিছু না ভেবে বলে ফেললো-
— স্নিগ্ধ ভাইয়া অমনি একটু রাগি তাঁর বিবিন আর বোনের সাথে কেউ একটু অন্যরকম বিহেভিয়ার করলেই প্রচন্ড রেগে যায়। তাই হয়তো তোমার সাথে অমন করেছে।
আরোহী এবার বুঝলো ইশার মতলব তাই বললো-
— কই কি করেছে সব তো ঠিক আছে আমাদের মাঝে তো কিছু হয়নি। আমার শরীর একটু খারাপ আর এটা তাঁর জন্য বোঝোইতো হাজব্যান্ড ওয়াইফের সম্পর্ক। কিন্তু সে আমার বেশ সেবা করেছে। এখন ঠিক আছি।
ইশা বিস্মিত হয়ে বললো-
— আর পাঁচ টা দম্পতির মতোই তোমাদের মাঝে সব ঠিক।
— অবশ্যই,,,কেনো নয় হাজার হোক ভালো সে আমাকে আগে বেসেছে আর তাঁর মতো মানুষ কে ভালো না বেসে আমিও থাকতে পারিনি।
ইশার মুখটা দেখার মতো ছিলো। “ছিঃ স্নিগ্ধ ছিঃ। সত্যি সব পুরুষ রাই এক মেয়েদের শরীর পেলে আর কিছু লাগে না। আরে এর মধ্যে কি এমন আছে যে একে নিজের বউ করে নিলে” মনে মনে কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই বেরিয়ে গেলো ইশা।
আরোহী তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রইলো দরজার দিকে।
.
আশিক কে ফোন দিয়ে আরোহী জানালো সে যেতে পারবে না একটু সমস্যায় আছে তবে যেদিন যেতে পারবে তাঁকে ফোন করে জানাবে। ফোন রেখে ভাবলো, আমি স্নিগ্ধর বিশ্বাস টা পুরোপুরি অর্জন করি তারপর একদিন ওকে নিয়েই যাবো ওখানে।
.
মালাকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছে স্নিগ্ধ আরোহী ড্রয়িং রুমে সকলের সামনেই মালাকে জরিয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো। মালাও কাঁদছে আরোহী কে জরিয়ে।
তাঁর যে অনেক কথা বলার আছে। আর সেই সব কথা মুখের ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা ওপরওয়ালা না দিলেও স্নিগ্ধ নামক ফেরেশতার ওসুলায় লিখে প্রকাশ করার সুযোগ করে দিয়েছে। সে বলবে সব টা বলবে। দুচোখে দেখা কিছু নির্মম সত্যি জানাবে সে আরোহী কে।
.
স্নিগ্ধ লম্বা এক শ্বাস ছাড়লো। নিজেকে বেশ হালকা লাগছে আজ। এবার আর কোন ঝামেলা নেই এবার সবটা ঠিক হয়ে যাবে। সমস্ত সমস্যার সমাধান বেরিয়ে যাবে৷ আসল অপরাধীর নাগাল পাবে কিন্তু সত্যি অপরাধী আছে তো নাকি মৃত্যু টা আল্লাহ প্রদত্তই ছিলো? সব প্রশ্নের উত্তর মালার কাছে রয়েছে। তাঁর বেশ হালকা লাগছে। সুখ সুখ ও লাগছে বেশ আরোহীকে নিজের করে পেয়েছে যে৷
সবদিক পরিপূর্ণ এই পূর্নতা দীর্ঘস্থায়ী হবে তো নাকি এই পূর্ণতা বড় কোন ঝড়ের পূর্বাভাস?? সব কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে তাঁর। পরোক্ষনেই ভাবলো, ধূর অদ্ভুত চিন্তা মাথায় না আনাই ভালো। আর কিসের ঝামেলা আমার রানী ঠিক তো সব ঠিক। রানী ব্যাঠিক হলে মাইরের ওপর আর কোন কথা হবে না এবার থেকে।

চলবে……

রিসপন্স কম পেলে লেখায় অনীহা চলে আসে। গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সবাই আশা করি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here