মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_৩
জান্নাতুল নাঈমা
স্নিগ্ধর রাগ এবার চরম পর্যায়ে।
যে মেয়েকে এক দেখাতেই তাঁর হৃদস্পন্দন থেমে গেছে। পুরো ভার্সিটির সামনে যে মেয়েটা বিনা অপরাধে তাঁর গায়ে পরপর তিনবার আঘাত করেছে সেই মেয়ে এখনো আস্ত রয়েছে তাঁর সামনে তা কি আর এমনি এমনি। দুজনের মধ্যে বেশ ধস্তাধস্তি চলছে,, যেই কারনে এতো তান্ডব সেটাই আবার ঘটালো।
স্নিগ্ধ বললো,,,
“তুমি জানো না আমি ঠিক কতোটা পাগল বলেই আরোহীর কোমড়টা শক্ত করে চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডাবিয়ে দিলো।ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠলো আরোহী, চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি ঝড়তে লাগলো।
তীব্র ঘৃনায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তাঁর।
স্নিগ্ধ ঠোঁট ছেড়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে আলতো করে ঠোঁটে স্পর্শ করতেই আরোহী আহ করে ওঠলো।অন্ধকারে ফাঁকা রুমে দুজন মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দে দুজনেই কম্পিত কেউ ভয়ে কেউ নির্ভয়ে।
স্নিগ্ধ আরোহীর কোমড় ছাড়তেই আরোহী স্নিগ্ধর হাতে কামড়ে দিয়ে ছুটে বেরিয়ে আসতে নিতেই স্নিগ্ধ খপ করে ধরে পিছন থেকে হাত মুচড়ে নিজের খুব কাছে নিয়ে এলো।
আরোহী এবার না পেরে হুহু করে কেঁদে ওঠলো।
স্নিগ্ধ বিরক্তি নিয়ে বললো,,,
” উফস এই মেয়েটা এতো ভীতু কেনো?
সেদিন তো খুব সাহস করে মেরে দিয়েছিলে।
তো এখন কি হলো তোমার?
তোমার ঐ ত্যাজেই তো আমি ঘায়েল হয়ে গেছি ডার্লিং বলেই বাঁকা হাসলো।
আরোহী তাঁর সর্ব শক্তি দিয়ে স্নিগ্ধর থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে।
স্নিগ্ধ কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,
” আরে ডিয়ার প্রেমের প্রথম ধাপে সবে পা রেখেছি এখনি ঘাবড়ে গেলে চলবে নাকি”
আরোহী হাত মোচড়াতে শুরু করলো,, অসহায় স্বরে বললো,,
“প্লিজ ছাড়ুন আমায় প্লিজ”
স্নিগ্ধ আরো শক্ত করে চেপে ঘাড়ে আলতো করে কামড়ে দিলো আরোহী ডুকরে কেঁদে ওঠলো।
তাঁর আর বুঝতে বাকি রইলোনা হোস্টেলে লোডশেডিং হওয়ার পর তাঁর সাথে সশরীরে কেউ
এই কাজ করেছিলো আর সে স্নিগ্ধ ছাড়া আর কেউ নয়।
স্নিগ্ধ কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,
“আর কোনদিন আমায় ভাই ডাকবে”??
আরোহী রেগে বললো,,
” ভাই,,আপনার মতো জঘন্য হীন মন মানসিকতার মানুষ কে ভাই বলে সম্মান দিতেও আমার ঘৃনা হবে”
.
স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে ছেড়ে দিলো আরোহী ও দরজা খুলে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো ক্লাস রুম থেকে।
সামনে প্রায় দশ-বারো জন ছেলে দেখতে পারলো।
লজ্জায় ঘৃনায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তাঁর।
মানুষ কতোটা নীচ হলে এসব করতে পারে।
একটা ছেলে একটা মেয়েকে জোর করে ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে অসভ্যতামো করছে। আর এরা পাহাড়া দিচ্ছে ছিঃ।
.
জারা সহ সকলে এতো ডাকাডাকি করলো তবুও স্নিগ্ধ দাঁড়ালো না শুধু একটা কথাই বলে গেলো,,,
“আমার ওকে চাই,, চাই আমার ওকে,, ওকে লাগবে আমার,, ওকে আমার খুব প্রয়োজন যেভাবেই হোক ওকে আমার হতেই হবে,, পৃথিবীর কারো সাধ্য নেই যে আমার এই চাওয়াতে বাঁধা হয়ে আসবে ও নিজেও না,, ডেড আই এম কামিং”
বলেই বাইক ঘুরিয়ে ফুল স্পিডে বেরিয়ে গেলো।
.
সকলেই নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
একে অপরের দিকে হা করে চাওয়া-চাওয়ি করছে।
কাকে চাই স্নিগ্ধর?? কার কথা বলে গেলো ও সকলের মনে প্রশ্নেরা ওঁকিবুঁকি করতে লাগলো।
.
শ্রেয়ার ছোট ভাই শ্রাবণ এদের সকলের মুখোভঙ্গি দেখে শ্রেয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,,,
“আপি স্নিগ্ধ ভাইয়া ঐ মেয়েটা কে ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটার সাথে একা এক রুমেও ছিলো”
সকলেই বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে।
যেনো তাঁরা একদম কিছুই বুঝেনি, আর না কেউ বোঝার চেষ্টা করছে, মানে হলো নিজেদের মিথ্যা স্বান্তনা দেওয়া।
সকলেই গোল গোল করে চেয়ে বলে ওঠলো,,
“কোন মেয়ে”
শ্রাবণ বললো,,”ফার্স্ট ইয়ারের সেই মেয়েটা যে ভাইকে চড় মেরেছিলো”
সকলেই হা হয়ে এক ডাকে বলে ওঠলো,, “হোয়াট!”
জারা শ্রাবণের কাছে গিয়ে হাত চেপে ধরে বললো,,
“মানে কি বলছিস এসব শ্রাবণ এটা তোর ভুল ধারনা”
সকলেই বললো,,” হ্যাঁ তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে ,, স্নিগ্ধ ঐ মেয়েকে ভালোবাসবে” বলেই সকলে হু হা করে হেসে ওঠলো। শুধু জারা বাদে জারা বললো,,
” এক মিনিট দাঁড়া স্নিগ্ধ যাওয়ার সময় কি বলে গেলো শুনিস নি”
শান বললো,,
“হ্যা শুনেছি আর আমি সিওর স্নিগ্ধ ঐ কালিটার কথাই বলেছে” রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কথাটা বললো শান।
.
সকলের মাথায় বাজ কিছু তো একটা গড়বড় আছেই।
আভিয়ান খান স্নিগ্ধ কিনা শেষমেশ এমন মেয়ের প্রেমে পড়লো??ভার্সিটির কতো সুন্দরী, সুন্দরী মেয়েরা তাঁর জন্য দিওয়ানা, হাই সোসাইটির সুন্দরী মেয়েরাই তাঁর কাছে পাত্তা পায় না সেখানে এমন একটা,আনস্মার্ট রূপহীন মেয়ের প্রেমে পড়বে??
নিশ্চয়ই কোন গড়বড় আছে ওকে ভালোবাসার একটা রিজনও যদি থাকতো তাহলে এটা আমাদের মেনে নিতে অসুবিধা হতো না।
নিশ্চয়ই স্নিগ্ধ বড় কোন খেলা খেলতে যাচ্ছে।
জারার কথা শুনে সকলেই নিশ্চুপ।
শান হিসাব মেলাতে পারছে না যদি তাই হবে তাহলে তাঁর গায়ে হাত তুললো কেনো??নাকি এটাও ওর প্ল্যান??
বলা যায় না স্নিগ্ধ মানুষ টাই এমন সবার থেকে আলাদা আর চিন্তা শক্তি ভীষণ প্রখর।
হয়তো তাদের পরে বলবে সব।
রাজিব বললো,,
“তোরা এতো টেনশন করিস না স্নিগ্ধ ঠিক কি চাইছে সব কিছু ও সর্বপ্রথম যাকে জানাবে সে হলো আকাশ,আমি সিওর আকাশ সবটা জানে তাই আমাদের আকাশের সাথে কথা বলতে হবে”
বাদল বললো,,,
“কিন্তু ঐ শালা তো কক্সাবাজারে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে ”
জারা বললো,,
“এমন ভাবে বলছিস যেনো আর আসবে না ওখানেই প্রেম করতে করতে শহীদ হয়ে যাবে যত্তসব।
লিসেন গাইস আমি খান বাড়ি যাচ্ছি।
স্নিগ্ধ আজ অবদি আমাকে কিচ্ছু লুকায়নি আমার ধীর বিশ্বাস আজো লুকাবেনা থাক তোরা”
সকলের থেকে বিদায় নিয়ে জারা চলে গেলো।
শান বললো,,
“সব ওলটপালট লাগছে আমাদের স্নিগ্ধ মাএ তিনদিনেই কেমন হয়ে গেলো হাউ দিজ পসিবল!
.
গিটারের টোন কানে বাজছে ভ্রু কুঁচকে উপরে ওঠতে লাগলো জারা।
.
স্নিগ্ধ গিটার বাজাচ্ছে এমন স্লো-মোশনে রোমান্টিক টোন??সত্যি প্রেমে টেমে পড়ে গেলো স্নিগ্ধ এটা কি করে পসিবল?? মেয়েদের প্রতি ফিলিংস আসে না, প্রেমটেম ফালতু একটা চ্যাপ্টার ওটা লাইফ থেকে ক্লোজ করাই বুদ্ধিমানের কাজ এসব বলা ছেলেটাও প্রেমে পড়ে??জাতীয় ক্রাশ বয় কিনা কাইলার প্রেমে পড়লো??অসম্ভব এমন কিছু হতে দেওয়া যাবে না কখনোই না। এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমে প্রবেশ করলো জারা।
স্নিগ্ধ মেঝেতে বসে বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ রেখে গিটার বাজাচ্ছে,,
সাদা শর্ট প্যান্ট কালো টি-শার্ট পড়া, চুলগুলো ভেজা কপালে বিন্দু বিন্দু জলকোনা, নিচের ঠোঁট টা উপরের ঠোঁট দিয়ে চেপে হাসি হাসি মুখে গিটার বাজাচ্ছে। স্নিগ্ধ এতোটাই ফর্সা যে গোসলের পর ঠোঁট জোরা দ্বিগুণ গোলাপী লাগছে, ভেজা ভেজা চুল শরীর ও নামের সাথে চেহেরার পারফেক্ট মিল।
এই মূহুর্তে জারার সামনে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সৌন্দর্যে ঘেরা সুপুরুষ টি রয়েছে। একদম স্নিগ্ধময়,,
ফর্সা পায়ে বড় বড় কালো লোম গুলা কি অমায়িক সুন্দরই না লাগছে বডি শেফ টা জাষ্ট যে কোন মেয়েকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট।
জারা এক ঢোক গিলে নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো। কাঁধ থেকে ব্যাগটা সরিয়ে মেঝেতেই রাখলো। স্নিগ্ধর পাশে বসে কাঁধে হাত রাখতেই স্নিগ্ধ চমকে গিয়ে চোখ খুললো।
জারাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,,
“এখানে কি করিস ”
জারা মুখ ফুলিয়ে বললো,,
“আসতে পারিনা”??
স্নিগ্ধ মুচকি হাসলো গিটার টা পাশে রেখে জারার হাতটা চেপে ধরে বললো,,
” এসেছিস ভালো করেছিস। কথা আছে আমার ”
জারা একধ্যানে চেয়ে বললো,,
“কিহ”
স্নিগ্ধ জারার হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।
মুখোমুখি হয়ে বললো,,
“দোস্ত আমার ওকে চাই ডেডকে বলেছি কালই ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবো এই দেখ এয়ার রিং কালই এটা পড়িয়ে এনগেজমেন্ট সেরে ফেলবো”
পকেট থেকে ডায়মন্ডের রিং বের করতেই জারা দ্বিগুণ অবাক হলো।”কি বলছে কি স্নিগ্ধ ও কি পাগল হয়ে গেছে নাকি মাথা খারাপ”(মনে মনে )
চোখ মুখ কুঁচকে বললো” কিসব বলছিস কাকে চাই কিসের এনগেজমেন্ট? আংকেল কে বলেছিস মানে”
স্নিগ্ধ তাঁর উৎসুক মুখ স্বাভাবিক করে নিয়ে শান্ত গলায় বললো,,
“আরোহী। ওকে চাই আমার এট এনি কস্ট”
“হোয়াট পাগল হয়ে গেছিস তুই কি বলছিস কোন ধারনা আছে তোর, হোয়াটস রং উইথ ইউ স্নিগ্ধ “?
স্নিগ্ধ বিছানায় চিত হয়ে মাথা রেখে দুহাত দু’দিকে মেলে দিয়ে বললো,,
” সিরিয়াস পাগল হয়ে গেছি ওকে না পেলে এমন পাগল হবো যে তোদের সবাইকে কামড়ে দিবো “বলেই হোহো করে হাসতে লাগলো।
জারা বেশ বিরক্ত বোধ করলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ে বললো,,
” স্নিগ্ধ ফালতু কথা বাদ দে থাপ্পড় দিয়েছে রিভেঞ্জ নিবি অন্যভাবে নে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে নিজের ইমেজ নষ্ট করিস না”
স্নিগ্ধ এবার ধমকে ওঠলো,,
“আমি ওকে ভালোবাসি আমি ওকে চাই কেনো বুঝতে পারছিস না না বুঝলে বেরিয়ে যা, যা তো বিরক্ত করিস না”
জারা যেনো আকাশ থেকে পড়লো।
এসব কি হচ্ছে কিছু মাথায় ঢুকছে না তাঁর।
চাপা গলায় বললো,,
“স্নিগ্ধ?? কি বলছিস??
স্নিগ্ধ জারার দিকে চেয়ে কড়া গলায় বললো,,
” আমি ওকে ভালোবাসি ওকে দেখে আমার এখানে টান পড়েছে ( বাম পাশে দেখিয়ে)
আর এই কথাটা যে বিশ্বাস করবে না যার মানতে কষ্ট হবে সে আমার সীমানার বাইরে থাকবে ব্যাস”
.
“কি দেখে আই মিন এমন কি কারন যার জন্য ওকে ভালোবেসে ফেললি, কি আছে ওর মাঝে আনস্মার্ট, রূপহীন একটা মেয়ে, এতো রূপবতী মেয়েদের রেখে শেষে অমন রূপহীন গাইয়া টাইপ মেয়েকে তুই ভালোবাসলি অবিশ্বাস্য ”
.
“কি দেখে বুঝলি ও রূপহীন??গায়ের ঐ রং টা দেখে??
ইউ নো হোয়াট স্নিগ্ধ সবার থেকে আলাদা।
“স্নিগ্ধ ইজ স্নিগ্ধ ইয়ার আমার ব্ল্যাক কুইনকে আমার স্নিগ্ধতায় মুড়িয়ে রাখতে চাই আমি ”
সবাই গায়ের রংকে মূল্যায়ন করে মানুষের রূপ সৌন্দর্যের বিচার করে আর আমি দেখি অন্য কিছু বলেই চোখ টিপ দিলো।
জারা অবাক হয়ে চেয়ে আছে। স্নিগ্ধ মৃদু হাসলো।
“গায়ের রং সাদা হলেই যে সে সুন্দরী হবে তা কিন্তু নয়। রূপ সৌন্দর্য অন্যরকম জিনিস যা সবাই উপভোগ করতে পারে না আবার সবাই উপলব্ধি ও করতে পারে না”
আমি চাই ও না কেউ করুক জিনিসটা আমার সো আমি করলেই চলবে বলেই হোহো করে হেসে ওঠলো।
.
শ্রেয়ান খান ফোনে হোহো করে হেসে যাচ্ছে।
বন্ধু কে ফোন করে ছেলের পাগলামো গুলো জানাচ্ছেন আর হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা করে ফেলছেন।
বন্ধু বললো,,
“তো এবার বিশাল আয়োজন হবে বোঝা যাচ্ছে ”
শ্রেয়ান খান বললো,,
“তা তো বটেই কিন্তু স্নিগ্ধ এ বিষয়ে এখনি ভাবতে নিষেধ করেছে মেয়েটা বোধ হয় রাজি না তাই ছেলের প্ল্যান ওঠিয়ে নিয়ে আসা”
বলেই হোহো করে হাসতে লাগলো আবারো।
ওপাশ থেকে বললো,,
“কি বলছিস এই শহড়ের কোন মেয়ে আছে যে আমাদের স্নিগ্ধ কে প্রত্যাখান করবে”
“আরে শহড়ের না গ্রামের ”
” ওও নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী ”
“হুম তাই তো বললো বাট গায়ের রং টা চাপা ”
ওপাশ,থেকে হোহো করা হাসি আসতেই শ্রেয়ান খান ও হোহো করে হাসতে লাগলেন।
স্নিগ্ধর বোন তাঁর বাবার এই কান্ড দেখে কপাল হাত দিয়ে বড় বড় চোখ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
” ভাবা যায় ছেলে প্রেমে পড়েছে তিনদিনেই এনগেজমেন্ট, তুলে আনার প্ল্যান কমপ্লিট।
অন্যসব বাবা হলে ছেলেকে ঝাটিয়ে বিদায় করতো।
আর তাঁর বাবা বন্ধু কে ফোন করে হোহো করছে যেনো তাঁর ছেলে বিশ্ব জয় করার প্রিপারেশন নিচ্ছে”
.
প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেছে আরোহীর ভার্সিটিতে আসার নাম নেই।
স্নিগ্ধ রাগে বাইকের চাকায় দিলো এক লাথি।
সকলেই ভয়ে চুপসে গেলো জারা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কারো সাহস হচ্ছে না স্নিগ্ধর সাথে কথা বলার।
স্নিগ্ধ কারো জন্য কখনো তাঁর এক সেকেন্ড সময় ও লস করেনা আর আজ পলিটিক্যাল ইম্পরট্যান্ট মিটিং বাদ দিয়ে গেটের সামনে পায়চারি করে যাচ্ছে শুধু মাএ আরোহীর জন্য। ছোট ভাই রা সব মিটিংয়ে রয়েছে শান,বাদল, জারা,শ্রেয়া ছাড়া কেউ নেই।
স্নিগ্ধ এবার এক চিৎকার দিয়ে ওঠলো,,
রাগে চোখ, মুখ লাল করে বলে ওঠলো,,
” ও কোথায়?? জারা তুরিন কে ফোন দে ফার্স্ট ”
জারা ভয়ে এক ঢোক গিলে কাঁপা হাতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করলো।
শান আর বাদল চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
জারা তুরিন কে ফোন করতেই তুরিন জানালো আরোহী অসুস্থ তাই ভার্সিটি যায়নি এতোটাই অসুস্থ যে তুরিন ওকে এই অবস্থায় রেখেও আসতে পারেনি ভার্সিটিতে। জারার ফোনে লাউড স্পিকার দেওয়া ছিলো যার দরুন সব কথাই স্নিগ্ধ শুনতে পেয়েছে।
শোনা মাএই স্নিগ্ধ তাঁর বাবাকে ফোন করলো।
এবং শহড়ের বেষ্ট ডক্টরকে ইমিডিয়েটলি ধরে নিয়ে আসতে বললো। সে যদি মৃত্যু পথেও থাকে তবে এম্বুলেন্স করে তাঁকে পনেরো মিনিটের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে বলেই স্নিগ্ধ ফোন রেখে বললো,,
“বাদল লেডিস হোস্টেল এর দায়িত্বে যিনি আছেন তাঁর থেকে পারমিশন নিয়ে আয় দুজন ছেলে যাবে সেখানে ডক্টর আর আমি, জারা তুইও চল।
স্নিগ্ধর বিহেভিয়ার দেখে সকলে স্তব্ধ কারো আর
কিছু বলার নেই। শুধু দেখে যেতে হবে।
জারার বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে না কিছু বলতে পারছে আর না সহ্য করতে পারছে।
.
হোস্টেলের সবাই স্তব্ধ। আভিয়ান খান স্নিগ্ধর কর্মকান্ড দেখে সকলের মাথায় যেনো বাজ পড়লো।
ফার্স্ট ইয়ারের একটা মেয়ে অসুস্থ।
যার অসুস্থতার কথা জানতে পেরে আভিয়ান খান শহড়ের বেষ্ট ডক্টর কে হাজির করে সশরীরে লেডিস হোস্টেলে চলে এসেছে। সকলের মনে তীব্র ইচ্ছে জাগলো কে সেই ভাগ্যবতী মেয়ে তাকে এক নজর দেখে সকলেই তাঁদের চোখ জুরাতে চায়।
সকলেই ভাবতে লাগলো না জানি মেয়েটা কতো সুন্দর ইশ আরেকটু সুন্দর হলে নিশ্চয়ই ঐ মেয়ের জায়গায় আজ আমি থাকতাম।
সব মেয়েই একি কথা বলছে আর একিঝুকি মারছে জানালা দিয়ে ভিতরের মেয়েটাকে দেখার জন্য।
কিন্তু আভিয়ান খানের কড়া নিষেধ অপ্রয়োজনীয় কেউ যেনো আরোহীর রুমে পা না দেয়।
.
এদিকে তুরিন সমানে পানি খেয়ে চলেছে।
কারন তাঁর গলা বার বার শুকিয়ে যাচ্ছে।
যা সব দেখছে যা সব ঘটছে এগুলো বোধহয় স্বপ্নেও ভাবা যায় না। আরোহী তেলেবেগুনে জ্বলে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে। স্নিগ্ধ কে দেখা মাএই তাঁর গায়ে যেনো আগুন ধরে গেছে কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার স্নিগ্ধ আজ তাঁর দিকে খুব সিরিয়াস চোখে চেয়ে আছে।
ডক্টর সমানে আরোহীকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে
“ম্যাম আপনার কি সমস্যা হচ্ছে বলুন সবটা খুলে”
আরোহী করুন চোখে তুরিন আবার ডক্টরের দিকে তাকালো। তাঁর আবার কি সমস্যা হলো কিসব প্রশ্ন।
আরোহী স্নিগ্ধর দিকে কঠিন চোখে চেয়ে ডক্টরকে বললো,,
“সরি ডক্টর আমার কোন প্রবলেম হচ্ছে না,আই এম ওকে”
আরোহী কথাটা বলা মাএই স্নিগ্ধ হুট করে বিছানায় বসে আরোহীর হাতটা শক্ত করে চেপে বললো,,
“জান প্লিজ এমন করোনা, আমার সাথে তোমার যতোই ঝামেলা থাক তোমার শরীরের সাথে তো তোমার শত্রুতা নেই, কি হয়েছে কোথায় কষ্ট হচ্ছে প্লিজ বলো”
স্নিগ্ধর এমন উদ্ভট আচরন উতলা, ছটফট দেখে আরোহী ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বললো,,
“আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না আপনাকে কি আমি বলেছি আমার সমস্যা হচ্ছে ডক্টর নিয়ে আসুন”
স্নিগ্ধ আরোহীর হাত আলগা করে কঠিন চোখে তাকালো তুরিনের দিকে।
তুরিন বড় বড় চোখ করে ভয়ে এক ঢোক গিলে নিয়ে আমতা আমতা করতে করতে বললো,,
“আআমি কিছু করিনি,আমি মিথ্যা বলিনি গড প্রমিস। ও সত্যি পেট ব্যাথায় ছটফট করছিলো।
এই আরোহী দোস্ত প্লিজ আমাকে ফাঁসিয়ে দিস না।
জারার দিকে চেয়ে বললো,,আপু আমাকে বাঁচাও প্লিজ।
ডক্টর সহ সবাই ভ্রু কুঁচকে রইলো।
আরোহীর এবার কান্না পাচ্ছে স্নিগ্ধ কে ইচ্ছে রকম বকতে লাগলো মনে মনে।
” আহা দরদ শালা আমার জন্য তোকে ডক্টর আনতে কে বলছে পাঠার পাঠা,খাম্বাসের খাম্বাস চরিএের ঠিক নাই সিনেমা করতে আসছে ওও করবিই তো টাকা-পয়সার অভাব নাই সাদা ফকফকা চামড়া সিনেমাতো তুই করবিই হুমহ”
স্নিগ্ধ হঠাৎ করেই আরোহীর পেটে হাত চেপে বললো,,
পেট ব্যাথা কোথায় ব্যাথা কষ্ট হচ্ছে তোমার??
এই ডক্টর দুমিনিটে ওর পেট ব্যাথা ভালো করা চাই।
আরোহী স্নিগ্ধর হাতটা শক্ত করে চেপে নিজের পেট থেকে ছাড়িয়ে চোখ মুখ শক্ত করে বললো,,
“ডোন্ট টাচ মি”
স্নিগ্ধর কোন ভাবান্তর হলো না সে চিন্তা যুক্ত চোখ মুখে ওঠে ডক্টর কে ইশারা করলো।
ডক্টর আরোহীর দিকে আরেকটু ঝুঁকে বললো,,
— মিস. আরোহী আপনার কি সমস্যা হচ্ছে বলুন।
লজ্জা পাওয়ার প্রয়োজন নেই।
আই মিন আপনার কি পিরিয়ড সারকেল প্রবলেম হচ্ছে?? তাহলে আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি।
ডক্টরের কথা শুনে আরোহী চোখ বড় করলো লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তাঁর ছিঃ কি অবস্থা এই শহড়ে এসে একের পর এক ভেলকি দেখেই যাচ্ছে সে । গ্রামের মেয়ে আরোহী যদিও আজকাল সকলেই বেশ আধুনিকতায় মিশে গেছে।
সব বিষয়েই কমফরটেবল তাঁরা কিন্তু আরোহী আলাদা। আধুনিকতার ছোঁয়া খুব কমই তাঁর মধ্যে সে যেমন স্ট্রং তেমন খুব বেশী লজুক এবং নরম মনের মেয়েও। আঠারো বছরের জীবনে এমন ঘটনার এমন লজ্জাকর পরিস্থিতির সম্মুখীন কোনদিন হয়নি।
.
শেষে কিনা তাঁর ব্যাক্তিগত শারীরিক সমস্যা এভাবে সকলের সামনে তুলে ধরা হলো ওহ মাই আল্লাহ আমাকে ওঠিয়ে নিয়ে একটু দয়া করো।
আমার সম্মান, সম্মানের বাপ, মা, ভাই, বোন সবগুলাকেই হ্যানস্তা করে ছাড়লো এই দুই আবালের দল। না না তুরিন আবালের বউ আর এই ক্যারেক্টারলেস টা হচ্ছে মকরম শয়তান।
তুরিনের বাচ্চা তোর একদিন কি আমার একদিন ওয়েট কর শুধু।
আর স্নিগ্ধর বাচ্চা স্নিগ্ধ তোর জন্য আজ এই দিন আসলো আমার ক্যারেক্টার লেস জানি কোথাকার,,
চলবে…..