মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_৪

0
3018

মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_৪
জান্নাতুল নাঈমা

সেরকম কোন রোগ না থাকায় ট্রিটমেন্ট দেওয়ার না থাকলেও স্নিগ্ধর পাগলামোর জন্য ডক্টর খুঁজে খুঁজে কয়েকটা রোগ বের করলো।
.
আরোহী বেশ বিরক্ত হচ্ছে চিন্তাও হচ্ছে বেশ।
হাতে দুহাজারের বেশী টাকা নেই এই মাসটা দু’হাজারের মধ্যে চলতে হবে তারওপর ডক্টর প্রেসক্রিপশন লিখছে। মেজাজ টা চরম পর্যায়ে গরম হতে লাগলো। এই প্রথম বিনা অসুখে তাঁর জন্য ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডক্টরের উপরেও চরম বিরক্ত লাগছে।
“আহাম্মকে আহাম্মক বলে দিলেই তো হয় আমি একদম ফিট আছি। এই শালা কে এতো ভয়ের কি আছে। রোগ বালাইয়ের খবড় নাই ওষুধ লিখতে হবে মামার বাড়ির আবদার,,,আরোহী মনে মনে কথা গুলো বলেই চমকে ওঠলো।
“এই যা থাপ্পড়ের জন্য প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এইসব করছে না তো??বিনা অসুখে ওষুধ খেলে আমি মরে যাবো না তো”??
আরোহী যখন চিন্তিত মুখে ডক্টরের হাতের দিকে চেয়ে ছিলো ডক্টর তখন একটু মাথা তুলে ফিসফিস করে বললো,,,

— চিন্তা করবেন না এই ওষুধ গুলো একজন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ খেলেও সমস্যা হবে না।
আপনার যে স্বাস্থ্য এতে এগুলো জরুরি।
রুচি বাড়াবে খাবাড় খেতে কোন প্রকার সমস্যা হবে না।গ্যাসট্রিক আর পেট ব্যাথার ওষুধ লিখে দিয়েছি পেট ব্যাথা না থাকলে ব্যাথার ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
.
প্রেসক্রিপশন আরোহীর হাতে দিতে নিতেই স্নিগ্ধ খপ করে সেটা নিয়ে নিলো। কাকে যেনো ফোন করে রুমের বাইরে বেরিয়ে গেলো।
সকলেই ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। জারা হালকা কেশে বললো ” চলুন ডক্টর”
ডক্টর আর জারা বেরুতেই হোস্টেলে মেয়েরা হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকলো তুরিন কে দেখে বললো,,,
“তুরিন তুমিহ,তুমি অসুস্থ “??

তুরিন ভ্রু কুঁচকে বললো বললো,,,

— আমাকে আমান দস্ত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কি মনে হচ্ছে আমি অসুস্থ??

সকল মেয়ে ভ্রু কুঁচকে আরোহীর দিকে তাকালো।
হতাশ গলায় বললো,,,
” তাহলে কে অসুস্থ ”

আরোহী অবাক হয়ে এদের কান্ডকারখানা দেখতে লাগলো। কি বলবে সে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে আজ।
তুরিন বললো,,,
” আরোহী অসুস্থ ”

সকলেই চিৎকার করে বললো,,,
“কিহ তাঁর মানে স্নিগ্ধ,,, এটুকু বলেই থেমে গেলো সকলে। একে অপরের দিকে আহত চোখে চাওয়াচাওয়ি করে আরোহী কে ভূত দেখার মতো দেখতে লাগলো।
আরোহী হকচকিয়ে গেলো তাঁর মনে হচ্ছে এরা সবাই এখন তাঁকে গিলে খেয়ে নিবে। তাই দ্রুত কাঁথা মুড়ি দিয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
পুরো হোস্টেল জুরে রটে গেলো স্নিগ্ধ আরোহীর জন্য পাগল। আরোহীর থেকে সাবধানে থাকতে হবে তাঁর সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। সম্মানের চোখে দেখতে হবে তাঁকে।
” কি অদ্ভুত গায়ের রং চাপা হওয়াতে, সাধাসিধে হওয়াতে আধুনিক না হওয়াতে যারা প্রথম দিন তাঁর সাথে মিশতেই চায় নি দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে তাঁরাই আজ সমানে ভেবে যাচ্ছে কিভাবে তাঁর সাথে বন্ধুত্ব করবে”
.
জারাকে দিয়ে স্নিগ্ধ প্রায় একমাসের ওষুধ প্যাকেটে পাঠিয়ে দিয়েছে সে আসলে আরোহী যদি না নেয় তাই শুধু জারাকে পাঠিয়েছে।
সত্যি আরোহী প্রচন্ড রাগারাগি শুরু করে দিয়েছে তুরিনের সাথে। জারা আসাতে একটু চুপ করলো আরোহী।
জারা বললল,,,

— আরোহী ওষুধ গুলো রাখো। এগুলো রাখলে তোমার কোন ক্ষতি হবে না। বড় বোন হিসেবে রিকোয়েস্ট করছি এটা তুমি নাও।

আরোহী কি বলবে বুঝে ওঠতে পারছে না।
যেহেতু বড় বোন বলেছে তাই আর বেয়াদবি করতে চায় না জোর পূর্বক হেসে ওষুধ গুলো নিয়ে রাখলো।
.
সন্ধ্যার দিকে আরোহী বারান্দা দিয়ে হাটাহাটি করছিলো এমন সময় পাশের রুম থেকে কিছু কথা তাঁর কানে ভেসে এলো,,,

একজন বললো,,,

— দোস্ত ক্যামনে কি করমু। ইশ আমি যদি একটু কম সুন্দর হইতাম। গায়ের রং টা ক্যান আল্লাহ একটু চাপা দিলো না আমার।
বলেই ন্যাকা কান্না শুরু করলো।

আরেকজন বললো,,,

— এই চুপ কর তো আমার রং তো ওর মতোই কই আমার দিকে তো স্নিগ্ধ ভাইয়ের নজর পড়লো না।
নিশ্চয়ই ঐ মেয়ের মধ্যে অন্যরকম ব্যাপার আছে।

— হ্যা হ্যা কি লম্বা চুল,,,চোখ গুলো দেখেছিস বড় বড় হরিনের চোখের মতো আঁকানো।
মুখের মধ্যে আলাদা একটা কিউটনেস আছে।
ইশ কেনো যে ওর মতো হলাম না,,,

আরেক জনের গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো।

— চুপ কর তোরা আমি ইউটিউব ঘেটে দেখি কালো,বা শ্যামলা হওয়ার কোন উপায় আছে কিনা।

এবার আর আরোহী দাড়িয়ে থাকতে পারলো না।
নিজ রুমে গিয়ে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি শুরু করে দিলো।
“ওহ মাই গড আমি এটা কোথায় এসে পড়লাম।
অবশেষে সবাই আমাকে নিয়ে পড়লো। আমিতো দেখি ফেমাস হয়ে গেলাম” বলেই আবারো হাসতে লাগলো।
তুরিন এসে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,

— হাসছিস কেনো তুই। তুই জানিস তোর জন্য আজ কয়টা মেয়ের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।

আরোহী এবার হাসি থামিয়ে তুরিনের দিকে গোল গোল চোখ করে চেয়ে বললো,,,

— এবাবা তাই নাকি,,,আহারে যাদের ঘটে বুদ্ধির খাতা শূন্য তাঁদেরই হৃদয়ে ক্ষতর সৃষ্টি হয়েছে।
ইউ নো হোয়াট স্নিগ্ধ আরোহীর প্রেমে পড়বে এমন চিন্তা জাষ্ট হাস্যকর। তুই কি ভাবছিস স্নিগ্ধ মাএ চারদিনে এমন একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে যাবে??
অবশ্যই এখানে কাহিনী আছে আর সেটা তো আমি ধরে ফেলেছি এটা ভালোবাসা না রিভেঞ্জ।
আর স্নিগ্ধ বেশ চালাক ঘটে বুদ্ধি আছে বলতে হবে।
দেখেছে মেয়েটা সাধারণ ঘরের, দেখতে ভালো না।
তাই তাঁর মতো হ্যান্ডসাম, কিউট, পয়সাওয়ালা ছেলে মেয়েটাকে জাষ্ট দুমিনিটে পটিয়ে ফেলবে আর যখনি পটে যাবে অমনি প্রথম দিনের হওয়া অসম্মান টা শুধে আসলে ফেরত দেবে দ্যাটস ইট।
বলেই পা দোলাতে লাগলো।

তুরিন হা হয়ে এগিয়ে এসে আরোহীর পাশে বসলো।
অবাক চোখে চেয়ে বললো সত্যি???
আরোহী তুরিনে হা হওয়া মুখে তুড়ি বাজিয়ে বললো,,,

— ইয়েস ডিয়ার,,,
.
ক্যান্টিনে বসে আছে তুরিন আর আরোহী।
সবে বসেছে কিছু অর্ডারও করা হয়নি তবুও তাদের সামনে এক গাদা খাবাড় নিয়ে আসা হলো।
তুরিন হা করে চেয়ে আছে আরোহী ভ্রু কুঁচকে বললো,,,

— সরি ভাইয়া আমরা কিছু অর্ডার করিনি।

সাথে সাথে পাশ থেকে ভেসে এলো সেই বিরক্ত কন্ঠস্বর,,,

— আমি করেছি।

তুরিন সহ আরোহী দুজন তাকাতেই স্নিগ্ধর মুখে স্নিগ্ধময় হাসি দেখতে পেলো।
ব্লু শার্ট হাতা ফোল্ড করা,ব্ল্যাক জিন্স,একহাতে ব্র্যান্ডের ব্রেসলেট আরেক হাতে ব্র্যান্ডের ব্লু ওয়াচ, ফর্সা মুখে ঘন কালো চাপ দাঁড়ি কি অমায়িক সুন্দরই না লাগে সাথে বোনাস হিসেবে যদি থাকে কিউট একটা হাসি।
তাঁর পিছনে আরো একজন ছিলো যাকে এর আগে ওরা দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না। ছেলেটার পড়নে চকলেট কালারের শার্ট, গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ন শেফ করায় মুখের উজ্জ্বলতা একটু বেশীই পুরোই ইনোসেন্ট বয়।

স্নিগ্ধ সহ তাঁর সাথের ছেলেটা আরোহীর সামনের দুটো চেয়ারে বসে পড়লো।
পাশের ছেলেটা বললো,,,

— হাই আমি আকাশ আহমেদ। স্নিগ্ধর বেষ্ট ফ্রেন্ড।

তুরিন চোখ পিটপিট করে দুজনকেই দেখতে লাগলো। যদিও স্নিগ্ধ ভার্সিটির ক্রাশ বয় তবুও পাশের ছেলেটা কম সুন্দর নয়। স্নিগ্ধর বেষ্ট ফ্রেন্ড বলেই হয়তো সেও এতো সুন্দর। একবার স্নিগ্ধ তো আরেকবার আকাশ কে দেখতে লাগলো।
স্নিগ্ধ বেহায়ার মতো চোখ ডাবিয়ে ডাবিয়ে দেখে যাচ্ছে আরোহীকে। আরোহীর প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে মনে হচ্ছে এই মূহুর্তে সে পৃথিবীর সব চেয়ে অসহ্যকর, বিরক্তকর,অসভ্য,লুইচ্চা,খাটাশ বদমাশ ব্যাক্তির সামনে রয়েছে। এমন ভাবে চেয়ে আছে যেনো চোখ দিয়েই গিলে খাবে।
আরোহী সমানে নিজের ওড়না ঠিক করতে শুরু করলো মাথায় ভালোভাবে ওড়না চাপিয়ে নিজে বেশ গুটিয়ে বসলো।

তুরিন বললো,,,

— হেলো আমি তুরিন, তুরিন ইসলাম। আরোহীর বেষ্ট ফ্রেন্ড।

আকাশ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে দুষ্টু হাসি একে বললো,,,

— আই মিন ভাবীর বেষ্ট ফ্রেন্ড। তাঁর মানে তো আমরা আত্মীয় রাইট। কি যেনো বলে,,,ও হে বেয়ান,বেয়ানি সম্পর্ক আমাদের।

তুরিন বেশ ভাব নিয়ে বললো,,,

— হ্যা,,,হ্যা,,,

সাথে সাথেই চট করে আরোহী ওঠে দাঁড়ালো।
কঠিন চোখে একবার আকাশ আবার স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে ঝাঁঝালো গলায় বললো,,,

— এখানে কি হচ্ছে,,, তুরিন চল এখান থেকে। এখানে আর এক মূহুর্তও নয়।
তুরিনের হাত চেপে ধরতেই তুরিন ভয় পেয়ে ওঠে দাঁড়ালো।
আরোহী এক পা বাড়াতেই স্নিগ্ধ আরোহীর হাতটা চেপে ধরলো।
আরোহী অগ্নি দৃষ্টি তে তাকাতেই স্নিগ্ধ শীতল দৃষ্টি তে চেয়ে মৃদু হেসে বললো,,,

— খাবাড় গুলো শেষ করে যেখানে যাওয়ার যাবে।
ডক্টর বলেছে তোমার বয়সের তুলনায় স্বাস্থ ঠিক নেই।

আরোহী রাগ+বিস্ময় চোখে চেয়ে বললো,,,

— হোয়াট কি সব ফালতু কথা বলছেন।

— নো,,,কোন প্রকার ফালতু কথা হচ্ছে না।
সেদিন ডক্টরের সাথে আধাঘন্টা এ বিষয়ে কথা হয়েছে। ভার্সিটিতে পড়া একটা মেয়ের স্বাস্থ এমন থাকে না। তুরিন কে দেখো তোমার থেকে দশ কেজি বেশীই হবে। আর তুমি দশ কেজী শরীরে বিশ কেজি ত্যাজ নিয়ে ঘুরাফেরা করো আমার তো ভয় হয়,,,

— হোয়াট ননসেন্স কি সব বাজে কথা বলছেন ছাড়ুন আমার হাত। ছাড়ুন বলছি আমি কিন্তু প্রিন্সিপালে কাছে নালিশ জানাবো।

তুরিন সহ আকাশ ওদের দুজনের ধস্তাধস্তি দেখছে আর একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে।

আকাশ শান্ত গলায় বললো,,,

— স্নিগ্ধ হাতটা ছেড়ে দে আর আরোহী প্লিজ তুমি শান্ত হয়ে বসো। সিনক্রিয়েট করো না তোমরা দুজনই শান্ত হয়ে বসো।
আকাশ ছেলেটার কথাবার্তা শুনে আরোহীর খারাপ লাগলোনা।একবার আকাশ তো আবার স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে হাতটা না নাড়িয়ে চুপ করে বসলো।
স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে হাতটা ছেড়ে দিয়ে নিজেও বসে পড়লো।
আবারো চোখ ডাবিয়ে রাখলো আরোহীর মুখের দিকে।
আরোহী এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিরক্তি নিয়ে অন্যদিক চাইলো।
আকাশ কোন ভনিতা ছাড়াই ডিরেক্ট বললো,,,

— আসলে স্নিগ্ধ সেদিন প্রচুর টেনশনে ছিলো।
তাই ডক্টরের সাথে রাত দশটার দিকে আবারো দেখা করে। যদিও তেমন কোন সমস্যা নেই তবুও স্নিগ্ধর কাছে এটাই বিরাট সমস্যা। ডক্টর বলেছে তোমার খাওয়া-দাওয়া করা উচিত ঠিকভাবে।
হোস্টেলের খাবাড় বিষয়ে স্নিগ্ধ খুব ভালোই জানে তাই আর কি এগুলোর ব্যবস্থা প্লিজ খেয়ে নাও।

আরোহী ভড়কে গেলো।
“আহারে আমার শোভাকাঙ্খিরে,,,এতোদিন কই ছিলি ব্যাটা দরদ একেবারে উতলে ওঠছে শালা মকরম শয়তান।
আধঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছিস দেখা যায়।
ইমপ্রেস করার ধান্দা তুই চলিস ডালে ডালে তো আমি চলি পাতায় পাতায়”

ভাবনায় ছেদ পড়লো যখন তুরিন খাবাড় গুলো সামনে দিতে লাগলো।
আরোহী বললো,,,

— সরি আমি খাবো না আর যদি খাইও নিজের টাকায় কিনে খাবো। আপনারা কলেজের বড় ভাই এতোটা হেল্পের দরকার নেই থ্যাংকস।
আর তুরিন তুই এতো লেজ ছাড়া তা তো জানতাম না। ওনারা বলবে আর আমাদের খেয়ে নিতে হবে।
এতোগুলো বছর বুঝি আমি না খেয়েই ছিলাম যত্তসব চল এখান থেকে।

ওঠে দাঁড়াতেই স্নিগ্ধ আরোহীর হাতটা চেপে ধরলো।
আরোহী রেগে কিছু বলতে নিতেই চমকে ওঠলো।
স্নিগ্ধর চোখ দুটো অসম্ভব লাল আরোহী ভয়ে চুপসে গেলো মনে পড়ে গেলো সে আবারো ভাই ডেকেছে।
পরোক্ষনেই ভাবলো “বেশ করেছি ডেকেছি আবারো ডাকবো”

— আহ লাগছে ভাইয়া,,,হাত ছাড়ুন।

আবারো ভাই বলাতে হতটা মুচড়ে ধরে একটানে নিজের পাশে নিয়ে এলো আরোহীর পিঠ ঠেকলো স্নিগ্ধর বুকে।
আকাশ ভয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো ব্যাস্ত গলায় বললো,,,

— স্নিগ্ধ কি করছিস সবাই দেখছে।

তুরিন ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো।

স্নিগ্ধ আশে পাশে চেয়ে সকলকে তাকাতে থাকতে দেখে আরোহীকে এক ঝটকায় চেয়ারে বসিয়ে দিলো। পা দিয়ে অপর টেবিলের চেয়ার টেনে এনে আরোহীর মুখোমুখি হয়ে বসে পড়লো।
আরোহী সমানে হাত মুচড়াচ্ছে তবুও ছাড়াতে পারছে না।
স্নিগ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে নিচু গলায় বললো,,,

— জাষ্ট এই খাবাড়গুলো খাবে ব্যাস তারপর আমি নিজেই চলে যাবো সামনে থেকে। নয়তো এখানেই এভাবে আরো কাছাকাছি একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বসে থাকবো।
আরোহী রাগে কটমট করতে করতে তাকালো।
তুরিন এসব কান্ড দেখে কাঁপতে লাগলো সমান তালে। আকাশ খুব একটা অবাক হচ্ছে না।
স্নিগ্ধ তুরিনের দিকে চেয়ে বললো,,,

— হেলো শালিকা,,, ডোন্ট ওয়ারি তুমি ওখানে বসে খেতে শুরু করে দাও তোমায় আকাশ সঙ্গ দেবে।
আমার বউয়েরটা আমি বুঝে নিচ্ছি।

তুরিন এক ঢোক গিলে চুপচাপ চেয়ারে বসে পড়লো।

স্নিগ্ধ আরোহীর দিকে চেয়ে বললো,,,

— এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই যা বলছি ঠিক তাই হবে।

— আপনি আপনার সীমা লঙ্ঘন করছেন।
আপনার কোন অধিকার নেই আমার ওপর জোর করার।

স্নিগ্ধ আরেকটু কাছে চলে গেলো সাথে তাঁর চেয়ারটাও। ফিসফিস করে বললো,,,

— আমার অধিকারের বিষয়ে তোমার কোন ধারনাও নেই। অধিকার কিভাবে তৈরী করতে হয় তা খুব ভালো করেই জানা আছে আমার।
ভালোবাসি তোমায় আমি আর ভালোবাসা থেকেই অধিকারের জন্ম হয় ডার্লিং।

— স্যাট আপ,,,আমি আপনাকে ভালোবাসি না আপনার মতো বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ কাউকে ভালোবাসতেপারেনা আর না কারো ভালোবাসা পায়।
আই জাষ্ট হেইট ইউ। আপনি কি করেছেন আমার সাথে আমি ভুলিনি।

স্নিগ্ধ রহস্যময় হাসি হেসে বললো,,,

— তা তো আমিও ভুলিনি জান। তুমি আমার সাথে যা করেছো তা শুধু আমি না পুরো ভার্সিটির কেউই ভুলেনি। আর আমি তোমার সাথে যা করবো সেটাও কেউ ভুলতে পারবেনা।

আরোহী আঁতকে ওঠলো কাঁপা কন্ঠে বললো,,,

— মমানে,,,আপনি রিভেঞ্জ নিচ্ছেন??

স্নিগ্ধ ভ্রু কুঁচকে বললো রিভেঞ্জ?? হোহো করে হেসে ওঠে বললো “ইয়েস রিভেঞ্জ একদম শুধে আসলে সব ফিরিয়ে দেব। এবার খাবাড় টা খেয়ে নাও জান”।
.
এক প্রকার বাধ্য হয়েই খেতে হলো আরোহীকে এবং মনে মনে পন করলো আর জীবনে সে ক্যান্টিনে আসবে না।

.
— ভাবী আসসালামু আলাইকুম।
.
— আসসালামু আলাইকুম ভাবী।
.
— ভাবী আসসালামু আলাইকুম ভালো আছেন।
সকাল থেকে সবার সালাম ফেরাতে ফেরাতে মুখ ব্যাথা হয়ে গেছে আরোহীর।
এতো সম্মান অতিরিক্ত মাএায় আদিক্ষেতা আর তাঁর সহ্য হচ্ছে না। ক্লাস থেকে বের হতেই আবারো আরেক ছেলে বলে ওঠলো — আসসালামু আলাইকুম ভাবী।

এবার মেজাজ টা এমন প্রক্রিয়ায় গরম হয়ে গেলো যে ছেলেটার কলার চেপে ধরে ঠাশ ঠাশ করে দুই গালে দুইটা লাগিয়ে আঙুল তুলে কড়া গলায় বললো,,,

— এই তোর কোন ভাইয়ের বউ আমি?? কি শুরু করেছিস কি তোরা ভাবী ভাবী ভাবী,,,মাথাটা খেয়ে ফোলছিস সারাদিনে। শোন স্নিগ্ধ খানের চামচা তোদের লিডারকে বলে দিস আমি উনাকে ভালোবাসিনা আর না কোন দিন বাসবো।
আর না আমি ওনার বউ ভাবীতো পরের কথা।

ক্লাসের সামনে ঘটিত ঘটনা গুলো আরেক ছেলে দেখে দৌড় দিলো গেটের দিকে।
আর বলতে লাগলো,,,

— স্নিগ্ধ ভাই ও ভাই গো সর্বনাশ হইয়া গেছে।
ভাবী বলে আপনারে ভালোই বাসে না,,,

চলবে…..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here