মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_৬
জান্নাতুল নাঈমা
মা হারানোর মতো ভয়াবহ যন্ত্রণা দুনিয়াতে আর দুটি হতে পারেনা। যার জীবনে এই কালো অধ্যায়টি এসেছে শুধু সেই জানে এর ব্যাথা কতোটা তীব্র।
.
স্নিগ্ধর ফোন পেয়েই আরোহী, আকাশ, শ্রেয়া গ্রামে আসে। জারার কিছু একটা সমস্যা ছিলো বলে আসতে পারেনি। স্নিগ্ধর ফোন পাওয়ার পর থেকেই বুকটা দুরু দুরু করছিলো আরোহীর। ভাবতে পারেনি বাড়ি আসতেই এমন ঘটনার সম্মুখীন হবে।
.
নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
আর না পারছে নিজের মন কে বোঝাতে,,,
আজকের পর আর মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমানো হবে না,আজকের পর মায়ের হাতে কখনো খাবার খাওয়া হবে না, বাবা নামক কাপুরষ টার কথা মনে পড়ে গেলে মায়ের বুকে মুখ গুঁজে আর কাঁদতে পারবেনা। আজকের পর আর কেউ মাথায় হাত রেখে বলবে না,,,
“আরোহী সোনা আমিই তোর মা আমিই তোর বাবা”
আজকের পর কেউ তাকে নিঃস্বার্থ, শর্তহীনভাবে ভালোবাসবে না। যে কোন সমস্যায় পড়ে গেলে মা নামক মানুষটার কাছে সমাধান খুঁজতে আসতে পারবে না।
মায়ের থেকেও কি পড়াশোনা টা খুব বেশী প্রয়োজনীয় হতে পারে?? যেই লেখাপড়ার উদ্দেশ্য অভিশপ্ত ঢাকা শহড়ে পা রেখেছিলো সেই লেখাপড়াই তাঁর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো।
আজ যদি সে শহড়ের নামকরা ভার্সিটিতে পড়াশোনার উদ্দেশ্য না যেতো স্নিগ্ধ নামক অভিশাপটার সাথে তাঁর না দেখা হতো আর না তাঁর মায়ের প্রান যেতো।
“মানুষ পড়াশোনা করে জীবনকে আলোকিত করার জন্য আর আমি পড়াশোনা করতে গিয়ে নিজের জীবনটা অন্ধকারে ঠেলে দিলাম”
মায়ের মৃত দেহের সামনে বসে নিজের দুহাতে মুখ চেপে চিৎকার করে কেঁদে ওঠলো আরোহী।
আশেপাশের মানুষের ভীর জমে গেলো। আকাশ,শ্রেয়া একে অপরের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো। দ্রুত ফোন করলো স্নিগ্ধ কে।
স্নিগ্ধ বেশ উত্তেজিত হয়েই বললো,,,
— তোরা এসে গেছিস ওকে আমি এখনি আসছি।
ডেড আর আপুও আসছে ওয়েট আমি দশমিনিটে এসে যাবো।
আকাশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই স্নিগ্ধ ফোন কেটে দিলো৷ এদিকে আরোহীর পাগলামো শুরু হয়ে গেছে। একবার মা কে জরিয়ে ধরছে তো আবার মালাকে জরিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে চলেছে।
মালা বার বার কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। আরোহী মালার মুখ দেখে বললো,,,
— কে মেরেছে মা কে কে তুই দেখেছিস?? দেখেছিস তুই??
মালা সমানে মাথা নারাচ্ছে কাঁদতে কাঁদতে হেচকি ওঠে গেলো তাঁর।
আরোহী কাঁদতে কাঁদতে কাঁপা গালয় বললো,,,
মালা আমার দিকে তাকা লম্বা,ফর্সা, মুখ দাঁড়ি স্নিগ্ধর ফেইসের সবটা মালাকে বললো মালা কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি দিতেই আরোহী চিৎকার করে কেঁদে ওঠলো।
আশে পাশের মানুষ জন বিস্ময় চোখে সবটা দেখছে আর শুনে যাচ্ছে।
আকাশ সহ শ্রেয়া দুজনই হতবাক “এসব কি বলছে আরোহী স্নিগ্ধ?? স্নিগ্ধ এমন একটা জঘন্য কাজ করবে অসম্ভব এটা আমি বিশ্বাস করিনা” বলেই আকাশ বের হলো।
শ্রেয়া পিছু পিছু যেতে যেতে আশে পাশে চেয়ে দেখলো। আরোহী দের বাড়িটা ইট দিয়ে গাঁথা হলেও উপরে টিনের চাল আশে পাশে বাড়ি নেই কিছু দূর দিয়ে সিরিয়াল করা অনেক বাড়ি। যতোটুকু বুঝলো এ বাড়িতে আরোহীর মা আর ঐ বোবা মেয়েটা ছাড়া কেউ থাকে না আর আরোহী এলে আরোহীকে নিয়ে থাকে। তার মানে হলো কেউ এসে মেরে গেলে তাঁর শাক্ষি শুধু ঐ বোবা মেয়েটা কিন্তু কে সেই খুনি??
আর যদি খুন হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে ওনার গায়ে তো সেসবের কোন চিন্হ নেই,,,
শ্রেয়ার কথা শেষ হতে না হতেই স্নিগ্ধ গাড়ি নিয়ে এসে থামলো তাঁদের সামনে আশে পাশের মানুষ ছুটে ছুটে এদিকে আসতে দেখে স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে বললো,,,
— বাহ নতুন জামাই দেখার জন্য গ্রামে এভাবেই লোকজন ছুটে আসে নাকি???
আকাশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে চেয়ে স্নিগ্ধর কাঁধে ধরে বললো,,,
— স্নিগ্ধ আরোহীর মায়ের মৃত্যুর সঙ্গে তুই জরিত??
— হোয়াট!
এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে রাগি চোখে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,
— কি সব ফালতু বকছিস চল ভিতরে চল।
আরোহী কোথায় ভিতরে গেছে?? তোদের বসতেও দেয়নি তাই তো এই মেয়ে টা কে নিয়ে আর পারিনা চল তো,,,
শ্রেয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো,,,
— স্নিগ্ধ আরোহীর মা মারা গেছে আর ওদের বাড়ির মেয়েটা বলছে এই খুন তুই করেছিস।
কথাটা শোনামাএই স্নিগ্ধ ঝড়ের বেগে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো। আরোহীর কান্নার আওয়াজে বুকটা কেঁপে ওঠলো তাঁর নিচে তাকিয়ে আরোহীর মায়ের নিথর বডি টা দেখে মনের অজান্তেই চোখ বেয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো সেও। গলা দিয়ে শুধু একটা আওয়াজই ভেসে এলো “না এটা হতে পারেনা এতোবছর পর একজন মা পেয়ে তাঁকে হারিয়ে ফেলতে পারিনা”
সঙ্গে সঙ্গে গালে সাজোরে এক থাপ্পড় দিলো আরোহী। কলার টেনে চিৎকার করে বলতে লাগলো,,,
— তুই,,, তুই আমার মায়ের খুনি । তুই মেরে ফেলেছিস আমার মা কে। এই কেমন ভালোবাসিস তুই, আমার মা তোকে মেনে নেয় নি বলে তুই এই জঘন্য কাজটা করতে পারলি???তুই আমাকে একেবারে নিঃস্ব করে দিলি এতিম করে দিলি তুই আমায়। কেনো কেনো কেনো,,, কেনো করলি,,, আমার নিষ্পাপ মাকে কেনো শেষ করে দিলি।
স্নিগ্ধ হতভম্ব হয়ে গেলো কি বলবে সে কিছু বুঝতে পারছেনা আরোহীর হাত চেপে অস্থির গলায় বললো,,,
— আরোহী কি বলছো এসব আমি এসব করিনি।
মা আমাকে প্রথমে নিষেধ করেছিলো কিন্তু পরে ওনি সবটা মেনে নিয়েছেন বিলিভ মি.
এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিলো আরোহী।
দূরে সরে চিৎকার করে বললো,,,
— তুই খুনি, পাপী তুই মহাপাপি ঐ পাপের হাতে আমায় স্পর্শ করবি না তুই। ঐ পাপী মুখে আমার মা কে মা ডাকবি না। মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, এক মূহুর্তের জন্য হলেও তোকে বিশ্বাস করেছিলাম আর তাঁর ফল হিসেবে পেয়ে গেলাম নিজের মায়ের মরা মুখ। তোকে ছাড়বো না আমি ছাড়বোনা তোকে।
.
আশে পাশে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো,,,
— আপনারা তাকিয়ে দেখছেন কি একজন খুনি এভাবে আপনাদের সামনে থেকে পার পেয়ে যাবে।
আমার মায়ের খুনিকে পুলিশের হাতে তুলে দিন আপনারা।
কথা গুলো বলতে বলতেই জ্ঞান হারালো আরোহী।
স্নিগ্ধ চমকে ওঠলো আরোহী বলে এক চিৎকার দিয়ে কাছে গিয়ে জরিয়ে নিলো নিজের বুকে।
.
প্রায় তিনঘন্টা হয়ে গেছে আরোহী চোখ খুলেনি।
এদিকে আমেনা বেগমের জানাজা শুরু হয়ে গেছে।
গ্রামের লোকরা স্নিগ্ধ কে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চাইলেও শ্রেয়ান খান আসাতে ব্যাপারটা সমাধান হয়ে যায়। এছাড়াও আমেনা বেগমের গায়ে এমন কোন চিন্হ পায়নি যাতে বোঝা যায় এটা একটা মার্ডার। মালার সামনেও স্নিগ্ধ কে আনা হয়েছে মালা কিচ্ছু বলেনি হ্যাঁ বা না কোন কিছুই বলেনি।
মালার অবস্থাও তেমন ভালো নয় সে সমানে কেঁদেই চলেছে।
পুলিশের ঝামেলা মিটে গেলেই জানাজা শুরু হয়।
আরোহীর যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে ছেলেটি হলো আরোহীর মামাতো ভাই তাঁদের বাড়ির থেকে বেশ কিছুদূর আশিকের বাড়ি।
আরোহীর এক মামা ছিলো সেও মৃত, নানা-নানী মৃত। মামাতো ভাই দুজন এবং মামাতো বোনের স্বামী এসেছে জানাজায়।
.
আরোহীকে সেলাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।
এমন সময় আশিক রুমে ঢুকলো শ্রেয়া বসে ছিলো আরোহীর পাশে। আশিক বললো,,,
— এক্সকিউজ মি. প্লিজ।
শ্রেয়া বেরিয়ে গেলো।
আশিক চেয়ার টেনে আরোহীর পাশে বসলো।
আরোহীর হাতটা চেপে ধরতেই আরোহী আশিকের দিকে চেয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো।
আশিক আরোহীর হাতে হাত রেখে শান্ত গলায় বললো,,,
— আমি আছি আরোহী। আমি থাকতে তোর কিছু হবে না ফুপুর খুনিকে প্রমান সহ খুঁজে বের করে শাস্তি দিবোই।
আরোহী কান্নায় ভেঙে পড়লো,,,
— আমি জানি মা স্নিগ্ধ কে রিজেক্ট করায় স্নিগ্ধ মাকে মেরে ফেলেছে। কিন্তু আমাদের হাতে কোন প্রমান নেই মায়ের গায়ে কোন আঘাতের চিন্হ নেই।
আশিক বললো,,,
— এমনো তো হতে পারে স্নিগ্ধ ফুপুকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরেছে।
আঁতকে ওঠলো আরোহী ডুকরে কেঁদে ওঠলো সে।
আশিক আরোহীর মাথায় হাত রেখে নরম সুরে বললো,,,
— এভাবে কাঁদিস না আরোহী আমি আছিতো তোর পাশে।
.
ঝড়ের বেগে রুমে ঢুকলো স্নিগ্ধ কলার ধরে একটানে আশিক কে বসা থেকে ওঠিয়ে নাক বরাবর দিলো এক ঘুষি।
— তোর সাহস কি করে হয় ওকে টাচ করার।
সাহস কি করে হয় তোর এই কে তুই বল কে তুই??
আশিক স্নিগ্ধর হাত কলার থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,,,
— আপনি এমন করছেন কেনো? কি সমস্যা আপনার আরোহী আমার ফুপুর মেয়ে আমার হবু স্ত্রী আপনি এখানে কেনো??
কথাটা বলা মাএই নাক মুখে সাজোরে কয়েকটা ঘুষি লাগালো।
আরোহী উত্তেজিত হয়ে নামতে গিয়ে আবারো জ্ঞান হারিয়েছে।
স্নিগ্ধ মারতে মারতে ঘর থেকে বের করে ওঠানে নিয়ে এলো।ওঠানে স্নিগ্ধর বন্ধু রা সহ আরোহীর নানা বাড়ির লোকজন ছিলো।
স্নিগ্ধ চিৎকার করে বললো,,,
— আরোহী আমার,,, ওকে বিয়ে করবো আমি।
আজি নিয়ে যাবো ওকে আমার সঙ্গে আভিয়ান খান স্নিগ্ধর বউ হবে “আসমাউল হুসনা আরোহী” মিসেস আভিয়ান খান।কেউ ওর দিকে তাকালে তাঁর চোখ উপরে ফেলবো আমি।
স্নিগ্ধর বন্ধু রা স্নিগ্ধ কে থামাতে চেষ্টা করলো।
ইতিমধ্যেই গ্রামের লোক জন বেশ ভালো করে জেনে গেছে স্নিগ্ধর ক্ষমতা সম্পর্কে। যাকে পুলিশরা স্যার স্যার করে তাঁকে বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা এই নিরীহ গ্রামের লোক দের নেই। এছাড়া আরোহীর আপন বলতে কেউ নেই যদিও আশিকের সাথে বিয়ের কথা চলছিলো কিন্তু আশিকের মা আরোহীকে এবং আরোহীর মা কে কোন কালেই পছন্দ করেন নি।
তাই তো আরোহীর নানা বেশ কিছু সম্পত্তি লিখে মেয়েকে আলাদা বাড়ি করে দিয়ে গেছেন।
.
স্নিগ্ধর গায়ের জোর এবং ক্ষমতার সাথে আশিক পেরে ওঠবে না ভেবেই পিছু হাটলো সে।
.
আরোহীর অবস্থা ভালো নয় এতো বড় শখড টা হয়তো মেনে নিতে পারছেনা। জ্ঞান ফিরতে না ফিরতেই আবারো জ্ঞান হারাচ্ছে সে স্নিগ্ধ আর সময় নষ্ট না করে রাতেই রওনা দিলো শহড়ের উদ্দেশ্যে।
তাঁকে শহড়ের বেষ্ট ডক্টরের কাছে পৌঁছাতে হবে যে কোন মূল্যে।
.
ভোর চারটায় নিজ বাড়িতে নিজ বেডে এনে শুইয়িয়ে দিলো স্নিগ্ধ আরোহীকে। ফ্রেশ হয়ে নিয়ে কিছু পেপার্স বের করে আরোহীর পাশে বসে আরোহীর বুড়ো আঙুলে কালার ছাপ নিয়ে প্রত্যেকটা পেপার্সে টিপ সই করিয়ে নিলো।
পেপার্সগুলো ড্রয়ারে রেখে পিছন ঘুরতেই রিনির মুখ টা ভেসে এলো। রিনি কান্না করে দিয়ে ডাকলো,,,
“ভাই,,,
সাথে সাথে স্নিগ্ধ ছুটে বোনকে জরিয়ে ধরলো।
রিনি কাঁদতে লাগলো হুহু করে স্নিগ্ধ শান্ত গলায় বললো,,,
— আপ্পি এভাবে কাঁদছিস কেনো?? দেখ তোর ভাইয়ের বউ এসে গেছে এভাবে কাঁদতে দেখলে কি বলবে বল তো একদম কাঁদবি না আপ্পি আমাদের সকলকে হাসি-খুশি থাকতে হবে আপ্পি ওর জন্য শুধু ওর জন্য।
রিনি শান্ত হয়ে স্নিগ্ধর মাথা তুলে কপালে চুমু খেলো।
— আমার ভাইটা এক ঝটকায় কেমন বড় হয়ে গেলো। আমার ভাইটা দায়িত্ববান স্বামী হয়ে গেছে ভাবা যায়।
স্নিগ্ধ স্মিথ হাসলো।
রিনি আবারো বললো,,,
— ভাই ও জেগে ওঠলে এসব যদি মেনে নিতে না পারে??আরো ভয়ংকর কিছু যদি ঘটে যায়।
স্নিগ্ধ এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
— আপ্পি আমি জানি ও মানবে না আর সজাগ অবস্থায় এটা করা সম্ভব হতো না। আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না আপ্পি আর ওকে কি করে ম্যানেজ করতে হয় তা আমি খুব ভালো করে জানি।
প্রথম দিন থেকে এই মেয়েটা আমায় শুধু ভুল বুঝেই যাচ্ছে আপ্পি । কোনভাবেই আমার প্রতি এই মেয়েটা পজেটিভ ধারনা আনতে পারেনি। আর শেষে ভুলটা এমন পর্যায়ে চলে গেলো যে আমি ওকে ছাড় দিলে ওকে আর পাওয়া হতো না আমার।
তাই এবার ভুলের ওপর দিয়েই ওকে আমি ম্যানেজ করবো।
রিনি অবাক হয়ে চেয়ে রইলো।
স্নিগ্ধ পিছন ঘুরে পকেটে হাত গুজে দিয়ে টান টান হয়ে দাঁড়ালো। রিনি একটু এগিয়ে ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালো।
স্নিগ্ধ জোরে এক শ্বাস টেনে নিয়ে বললো,,,
“সারাজীবন যে ছেলেটা মেয়েদের থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে সেই ছেলেটাই আজ একটা মেয়ের সাথে গভীরভাবে জরিয়ে গেছে”
“সারাটা জীবন যে ছেলেটা অসংখ্য মেয়ের ভালোবাসা কে তুচ্ছ করে প্রত্যাখ্যান করেছে আজ সেই ছেলেই কারো প্রত্যাখ্যান পেয়ে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে”
সারাটা জীবন যে ছেলেকে সবাই পাওয়ার জন্য এতো আহাজারি করেছে আজ সেই ছেলেকেই একটা মেয়ে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে।
অথচ ছেলেটা পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটাকে। এতোবড় জঘন্য একটা অপরাধের জন্য আমার দিকে আঙুল তোলা হলো অথচ আমি সেটা হাসি মুখে মেনে নিলাম কার জন্য এই মেয়েটার জন্য। কেনো?? বিকজ আই লাভ হার,,,
.
রিনি বললো “ভাই বিয়েটা ও মেনে নেবে না ভাই।
আর এভাবে বিয়ে হয় না ছেলে-মেয়ের সম্মতি ছাড়া বিয়ে হতে পারেনা”
— আপ্পি এসবের সময় এখন নয় । বিয়ে বিয়েই সে আমার লিগ্যাল ওয়াইফ এখন সে চাইলেও আমার থেকে দূরে যেতে পারবে না আর না কেউ আমার থেকে তাঁকে কেড়ে নিতে পারবে।
আর তুই খুব ভালো করেই জানিস এটা আমি শুধু নিজের জন্য করিনি। যা হয়েছে এতে আমার থেকেও ওর মঙ্গল বেশী। আপ্পি সর্বপ্রথম ওর সুস্থতা দরকার।
আমি ওকে ভালোবাসি আপ্পি খুব বেশী ভালোবেসে ফেলেছি। আমার ভীতরটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে আপ্পি আমি আর পারছিনা এই মেয়েটা এভাবে কেনো শুয়ে থাকবে বল??এই মেয়েটার তো এভাবে শুয়ে থাকা মানায় না।
এই মেয়েটা আমার দিকে হাজার অপরাধের আঙুল তুলুক। চোখে মুখে একরাশ ঘৃনা ছুঁড়ে দিক। তবুও এভাবে শুয়ে না থাকুক। আমি সহ্য করতে পারছিনা আপ্পি সহ্য করতে পারছিনা।
.
জ্ঞান ফিরতেই আরোহী ধড়ফড়িয়ে ওঠে বসল। নিজেকে আবিষ্কার করলো বিশাল বড় এক রুমে।
চোখে শুধু আলোর ঝলকানি সাদা দেয়ালে সাদা লাইটিং থাকায় তীব্র আলোকিত হয়ে আছে রুম টা।
ভালোভাবে আশে পাশে তাকাতেই একপাশের দেয়ালে স্নিগ্ধর বেশ অনেক ছবি দেখতে পেলো।
যা দেখে দু’হাতে নিজের চোখ মুখ ঢেকে গলা ফাটিয়ে দিলো এক চিৎকার।
.
সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এলো স্নিগ্ধ আরোহীর কাছে গিয়ে বুকে জরিয়ে ধরলো আরোহীকে।
আরোহী সমানে ফুঁপিয়ে যাচ্ছে,,,
বেশ কয়েক মিনিট পর শান্ত হয়ে চোখ তুলে তাকাতেই আবারো চিৎকার করে ওঠলো।
হাত ছাড়িয়ে খানিকটা দূরে সরে গিয়ে বললো,,,
“খুনি তুই খুনি আমায় ছুঁবি না তুই একদম ছুঁবি না”
ফুঁপাতে ফুঁপাতে ভয়ংকর দৃষ্টি তে চেয়ে রইলো।
স্নিগ্ধ কিছু বললো না সবটা হজম করে নিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো বিছানা ছেড়ে রিনিকে ডাকতে লাগলো আরোহীর খাবার খেতে হবে ওষুধ খেতে হবে তাই এখন আরোহীর সাথে কথা না বলে চুপ থাকাই ভালো।
.
আরোহীর মাথা কাজ করছে না সামনের মানুষ টা তাঁর মায়ের খুনি ভাবতেই এই মানুষ টা কে খুন করতে ইচ্ছে করছে। পাগলের মতো আশেপাশে চোখ ঘোরাতে লাগলো।
টেবিলে রাখা ছুড়িটা দেখে খপ করে ছুঁড়ি নিয়ে পিছন থেকে আঘাত করতে নিতেই স্নিগ্ধ পিছন ঘুরে আরোহীর হাত থেকে ছুড়িটা কেড়ে নিয়ে ফেলে দিলো।
আরোহীর গায়ের জোর যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
আবারো ছুড়ি নিতে যেতেই বেশ ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেলো স্নিগ্ধর সাথে।স্নিগ্ধ বাধ্য হয়ে আরোহীকে শক্ত করে ধরে বিছানায় শুইয়িয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরলো।
যার ফলে আরোহী রেগে হিংস্র বাঘিনীর মতো স্নিগ্ধর হাতে কামড়ে দিলো স্নিগ্ধ তবুও না ছাড়ায় আরোহী স্নিগ্ধর গালে কামড়ে ধরলো খুব শক্ত ভাবে। এতোটাই শক্ত যে গাল দিয়ে ব্লিডিং হতে শুরু করলো। স্নিগ্ধর মনে হলো তার দাঁড়ি সহ গালের মাংস রক্ত সব ভক্ষণ করবে এই নারী।
ব্যাথায় স্নিগ্ধর হাত নরম হয়ে আসতেই আরোহী যেনো তাঁর শিকার পেয়ে গেছে,,, হামলে পড়লো স্নিগ্ধর উপর গলায় কামড়ে ধরলো,,,
গলা ছেড়ে শার্ট সহ বুকে কামড়ে ধরলো।
স্নিগ্ধর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।
তবুও মৃদু হেসে নিজের শরীর টা ভালো ভাবে মেলে দিলো।
যাতে তাঁর বউ এর সুবিধা হয় কামড়াতে,,,
চলবে……..
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।