মন শুধু মন ছুঁয়েছে,পর্ব_৭
জান্নাতুল নাঈমা
বিবাহ এর ফুল মিনিং বন্ধু দের কাছে শুনেছিলাম।
বিপদ-বাড়ানো-হলো কিন্তু ভাবিনি বিয়ের প্রথম দিনই এই মহা বিপদ আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরবে আমায়। শরীরের উপর যে হারে নির্যাতন শুরু হলো।
ভাবা যায়,,,পুরুষ নির্যাতন, এতোদিন সবাই নারী নির্যাতনের কথা বুক ফুলিয়ে নিউজ পেপারে বলে বেরিয়েছে আজকের পর বোধ হয় পুরুষ নির্যাতনের কথাও ওঠবে নিউজ পেপারে। মি.আভিয়ান খান স্নিগ্ধ বউয়ের হাতে নির্যাতিত হয়েছে,,,
পুরো শরীরের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে তাঁর বউয়ের মারাত্মক লেভেলের কামড়ের দাগ নেই।
ভয় হচ্ছে বউ নাকি তেঁতুল গাছের ডায়নী তুলে নিয়ে এসেছে কে জানে এবার বুঝি হাড়গোড় সব মটমট করে খাবে।
.
এমন কোন জায়গা নেই যেখানে মেয়েটা কামড় না বসাচ্ছে। শেষে নিচের দিকে হামলে পড়তে নিতেই স্নিগ্ধ লাফিয়ে ওঠলো আরোহী বলে চিৎকার করে ডাক দিতেই আরোহী স্নিগ্ধর দিকে রাগি চোখে তাকালো স্নিগ্ধ সেই দৃষ্টি দেখে অসহায় ভঙ্গিতে বললো,,,
“এভাবে কামড়াচ্ছো কেনো আরোহী। আচ্ছা এই নাও পিঠের দিকে শুরু করো বলেই পিঠ পেতে দিলো।
.
আরোহী সিরিয়াসলি পিঠেই তাঁর দাঁতগুলো ডাবিয়ে দিলো। স্নিগ্ধ এবার সহ্য করতে না পেরে দুহাতে বিছানার চাদর খামচে ধরলো।
মনে মনে বলতে লাগলো,,,
” আরে ব্যাটা সহ্য কর শখ করে বিয়ে করেছিস বউয়ের প্যারা তো কেবল শুরু। পাঁচ বছর ধরে জিম করে এমন বডি বানিয়েছিস আজ বউয়ের কাছে পরাজিত হওয়ার জন্য নাকি। কি জিম করলি ভাই যে এইটুকু একটা মেয়ের ডাবানো দাঁত লাগতেই রক্ত ঝড়ে পড়ে ”
.
কাজের মেয়ে দুটো সোনালি আর রূপালি দুইবোনই খাবাড় নিয়ে উপরে এসে এমন অবস্থা দেখে বড় বড় করে চেয়ে চিৎকার করে ওঠলো,,,
“আপা মনি গো দেইখা যান ছোট সাহেবরে মাইরা ফালাইলোগো, আহারে ছোট সাহেবরে খাইয়া ফালাইলো গো”
.
সাথে সাথে আরোহী স্নিগ্ধ কে ছেড়ে দিলো সে যেনো এতক্ষণ বেহুশ অবস্থায় ছিলো।চোখ মুখের ভাব পরিবর্তন হয়ে এলো স্নিগ্ধর থেকে দূরে সরে কাঁপতে থাকলো সমানে। দরজার দিকে ঘুরে তাকাতেই
দুজন মেয়েকে দেখে নিজের মাথাটা চেপে ধরে জ্ঞান হারালো।
.
স্নিগ্ধ চমকে গেলো কাজের মেয়েদের দিকে রাগি চোখে চেয়ে আঙুল তুলে বললো,,,
— হেই সশশ,,,একদম চুপ।
.
সোনালি আর রূপালি ভয়ে চুপ হয়ে গেলো।
.
আরোহীর আবার জ্ঞান হারানো দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেলো স্নিগ্ধর “শারীরিক অত্যাচার করাটা মানা যায় মানসিক অত্যাচার মানা যায় না” গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো স্নিগ্ধর আরোহীকে ধরে বিছানায় শুইয়িয়ে ডক্টরকে ফোন করলো ।
ডক্টর এখুনি আসছে,,,কিন্তু তাঁরও তো চিকিৎসার প্রয়োজন। তাঁর শরীর দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করেছে। এমন ভাবে ডক্টরের ট্রিটমেন্ট নেবে কিভাবে মান সম্মান নিয়ে টানাটানি বাজবে এবার।
পরোক্ষনেই ভাবলো দুলাভাইকে ফোন দেই। সোনালি কে বললো,,,”তুই এখানে ওর সাথে থাক” আর “তুই নিচে যা ডক্টর এলে দরজা খুলে দিবি”
.
গায়ে শার্ট রাখা দায় হয়ে পড়ছে ভাগ্যিস তাঁর দাদা-দাদী বা ডেড বাড়ি নেই। তারাতাড়ি বোনের রুমে চলে গেলো।
রিনি তাঁর হাজব্যান্ড ইমরানের সাথে কথা বলছিলো। স্নিগ্ধ রুমে গিয়েই বললো,,,
— আপ্পি দুলাভাইকে তারাতারি আসতে বল।
.
রিনি ভাইয়ের দিকে চেয়ে আঁতকে ওঠলো।
ফোন না কেটেই বিছানায় ফেলে ওঠে স্নিগ্ধর সামনে গিয়ে আতংকিত গলায় বললো,,,
— ভাই আবার কার সাথে মারপিট করেছিস।
আর তোর গালেই বা এভাবে কে আঘাত করলো এখুনি বল ভাই কার এতোবড় স্পর্ধা,,,
রিনি সমানে রাগে ফুঁসতে শুরু করলো।
স্নিগ্ধ অপরাধীর মতো মুখ করে বললো,,,
— আপ্পি ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা কর। আর প্লিজ ডেড কে কিছু বলিস না দুলাভাইকে তারাতারি আসতে বল।
.
বলতে বলতেই শার্ট খুললো স্নিগ্ধ পুরো শরীর দেখে রিনি চিৎকার করে ওঠলো কান্না করে দিয়ে বললো।
— ভাই এসব কি কামড়ের দাগ কে করলো এসব কার এতোবড় সাহস আমার ভাইকে আঘাত করে??
স্নিগ্ধ করুন চোখে চেয়ে বললো,,,
— আপ্পি কার সাহস হতে পারে বল,,, বউ ছাড়া এমন ঘটনা আর কে ঘটাবে। যেমন টা তুই দুলাভাইয়ের সাথে করিস।
.
রিনি ক্ষেপে গেলো স্নিগ্ধ কে বিছানায় বসিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ইমরান এখনো লাইনে আছে।
দ্রুত বাসায় আসতে বলে ফোন রেখে ফার্স্ট এইডস বক্স নিয়ে তুলো দিয়ে রক্ত মুছতে লাগলো।
.
রাগি স্বরে বললো,,,
— আমি তোর দুলাভাইকে এভাবে রক্তাক্ত করি না ভাই। আরোহী কাজ টা ঠিক করেনি,,, এর জন্য ওকে জবাব দিতেই হবে। অযথা এতোটা টর্চার কেনো করবে??আর তুই তোর কি হলো ভাই আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা। তুই এটা কিভাবে মেনে নিচ্ছিস।
.
স্নিগ্ধ এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,,
— জানিনা আপি শুধু জানি ওর জন্য আমি আমার জীবনটাও বাজি রাখতে পারবো,,,
রিনি চমকে গিয়ে বললো,,,
— ভাই,,, কি বলছিস। আমি এসব মানবো না স্নিগ্ধ।
আমার কাছে সবার আগে আমার ভাই তাঁর পর বাকি সব। তোকে এভাবে আঘাত করলে সহ্য করতে পারবো না।
.
স্নিগ্ধ হেসে ওঠলো,,,
— আপ্পি ডোন্ট ক্রাই,,,কিছু হয়নি দেখ আমি একদম ঠিক আছি জাষ্ট একটু লেগে রক্ত পড়ছে ঠিক হয়ে যাবে। আসলে কি বল তো আরোহী হুশে নেই মা কে হারিয়ে উন্মাদের মতো করছে দেখ আপ্পি তুই ও তো মা কে হারিয়েছিস জানিস তো মা হারানোর যন্ত্রণাটা কি?? তোর কাছে মা চলে যাওয়ার পর বাবা, দাদান,বিবিন( স্নিগ্ধ, রিনি তাঁদের দাদিকে বিবিন বলে ডাকে) স্পেশালি আমি ছিলাম। আর ঐ মেয়েটার তো মা ছাড়া আর কেউ ছিলো না আপি।
সেই মা ওকে সারাজীবনের জন্য দুনিয়া ছেড়েই চলে গেছে কিভাবে ঠিক থাকবে বল তো।
.
রিনি অবাক হয়ে চেয়ে আছে তাঁর ভাইটা হঠাৎ কেমন বদলে গেলো। যে ভাই কে এতোদিন সে ভালো-মন্দ বোঝাতো ধৈর্য, সহ্য শেখাতো, সেই ভাই আজ তাকে এসব শেখাচ্ছে ভাবা যায়?? মেয়েটা কতোটা ভাগ্যবতী যে আমার ভাইয়ের মতো একজন মানুষ তাঁকে ভালোবাসছে।
.
ইমরান এসে পুরো শরীর ড্রেসিং করে দিয়ে ওষুধ লাগিয়ে দিলো। সব ঘটনা শুনে সিমরান ভ্রু কুঁচকে তাঁর শালা বাবুর দিকে তাকালো।
স্নিগ্ধ মৃদু হেসে বললো,,,
— “ভালোবাসা ভাই ভালোবাসা ভালোবাসলে মানুষ সব সহ্য করতে পারে”আমি ওকে ভালোবাসি তাই আমার ভালোবাসার কাছে এসব কিছু তুচ্ছ।
সিমরান কেশে ওঠলো রিনি পানি এগিয়ে দিতেই সিমরান পানিটা খেয়ে নিয়ে বললো,,,
— ফেঁসেছো ভাই ফেঁসেছো,,, মরেছো ভাই মরেছো।
তুমি মরেছো একদম জিন্দা লাশ,,,
রিনি এই রিনি শালা বাবুকে সামলে রাখো এ রোগ মারাত্মক রোগ। এই রোগের ওষুধ আমার কাছে নাই। তো সেই মহিয়ষী নারীটি কোথায় যিনি এমন বাঘ কেও বিড়াল বানিয়ে ছেড়েছে,,,
স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে বললো,,,
— বাঘ বাঘই থাকে বাঘ কখনো বিড়াল হয় না ব্রাদার। আর বাঘ সবাইকে শিকার করলেও তাঁর বাঘিনীকে করে না,,,
বলেই হোহো করে হেসে ওঠলো স্নিগ্ধ। সিমরানও হেসে ওঠলো।
.
গায়ে শার্ট জরাতে না পারায় খালি গায়েই চলাফেরা করছে স্নিগ্ধ।
নিজ রুমে আর যায় নি আরোহীকে ডক্টর চেক-আপ করার পর ডক্টরের থেকে সব সমস্যা জেনে নিয়েছে।
এবং ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী ট্রিটমেন্টও চলবে।
ফার্স্টলি আরোহীকে খাবাড় খাওয়ানো বেশী জরুরি তাই রিনি আর সোনালি, রূপালি গেছে তাঁর রুমে।
.
আরোহীর চিৎকার শুনে ছুটে এলো স্নিগ্ধ।
কাল থেলে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটার আওয়াজ কেমন ভাঙা ভাঙা হয়ে গেছে। ডক্টর বলেছে ওকে কোন প্রকার টেনশন দেওয়া যাবে না।
শারীরিক এবং মানসিক দুভাবেই ভীষণ উইক।
এছাড়া অনেক বড় শখড পেয়ে ব্রেনে আঘাত পড়েছে যার ফলে বেশী চাপ নিতে না পারায় বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে,,,
.
— আমি এখানে কেনো?? আপনারা কে?? কেনো আমাকে আটকে রেখেছেন?? আমার মা কোথায় আর মালা, মালা কোথায় আমি বাড়ি যাবো, মায়ের কাছে যাবো আমি।
.
আরোহী আবারো কাঁদতে শুরু করলো।
রিনি বললো,,,
— আরোহী ওনি আর বেঁচে নেই এই সত্যিটা তোমাকে মানতে হবে। আমার মা ও বেঁচে নেই আট বছর বয়সে ওনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছে এই সত্যিটা মেনে নিয়েই আমরা বেঁচে আছি। তোমাকেও বাঁচতে হবে। খাবাড়টা খেয়ে নাও আরোহী।
.
আরোহী হুহু করে কেঁদে ওঠলো। তাঁর বুক টা যে ফেটে যাচ্ছে কিন্তু এরাই বা কে? এদের তো সে চেনে না। ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,,,
— আপনারা কারা??
— ওনি তোমার হাজব্যান্ডের বড় বোন। দ্যাট মিনস নোনাস।
রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বললো স্নিগ্ধ।
খালি গায়ে শুধু ট্রাওজার পরিহিত স্নিগ্ধ কে দেখে যেনো ফুঁসে ওঠলো আরোহী।
চিৎকার করে বললো,,,
.
“তুই,,,তুই খুনি, খুনি তুই “বলেই বিছানা ছেড়ে ওঠতে নিতেই নেতিয়ে পড়লো। গায়ে যে অল্প পরিমাণ জোরও নেই রিনি চমকে ওঠে আরোহীকে চেপে ধরলো। স্নিগ্ধ আর চুপ থাকলো না যে করেই হোক একে ওর সামলাতে হবে।
ড্রয়ার থেকে ম্যারেজ সার্টিফিকেট গুলো বের করে বিছানায় বসলো স্নিগ্ধ। আরোহী ঘৃনায় দূর্বল শরীরটা দূরে সরিয়ে নিলো। রিনি ভ্রু কুঁচকে ভাইয়ের কর্মকান্ড দেখছে। কাজের লোকগুলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কাগজ সামনে ওঠিয়ে শান্ত গলায় বললো,,,”তোমার আমার বিয়ের সার্টিফিকেট এটা।
এইখানটায় তোমার সই দেওয়া আছে দেখো”
“বিস্ফোরিত চোখে তাকালো আরোহী কাগজটা নিয়ে সব দেখে চিৎকার করতে গিয়েও পারলো না।
গলার জোরটাও আর নেই দূর্বল গলায় কাঁদতে কাঁদতে বললো- ” কেনো করছেন এমন কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার কেনো আমার সাথে এমন করছেন”
রিনি আরোহীর মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো।
আরোহী ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো। স্নিগ্ধ নিজেকে শক্ত করে নিয়ে বললো,,,
— ফার্স্টলি তোমার মা কে আমি মারিনি।
সেকেন্ডলি আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই বিয়ে করে নিয়েছি।
থার্ডলি তুমি এসব কিছুই বিশ্বাস করছো না আই নো দ্যাট। বাট ফোর্থলি তোমার কাছে একটা অপশন রয়েছে তা হলো-এই বিয়েটা তুমি গ্রহন করো, স্বামি হিসেবে গ্রহন করো আমায়। আর প্রমান খুঁজো আমি কিভাবে তোমার মা কে কোন উপায়ে তোমার মা কে খুনের মতো জঘন্য অপরাধ টা করলাম
দেন পুলিশের কাছে সব প্রমান সাবমিট করো।
আবার বলোনা আমি কোন প্রমাণ রাখিনি।
মনে রেখো খুনি খুন করার সময় কোন না কোন প্রমাণ রেখেই যায়। নিজ ইচ্ছেয় নয় উপরে যিনি আছেন তাঁর ইচ্ছায় সো হয়তো অজানা ভাবে আমিও রেখেছি। নিজেকে এভাবে শেষ না করে বরং নিজেকে তৈরী করো সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে নিজের মায়ের খুনি আই মিন আমাকে শাস্তি দাও।
তবেই না তুমি তোমার মায়ের যোগ্য মেয়ে।
.
সকলেই হতবাক হয়ে চেয়ে আছে স্নিগ্ধর দিকে।
একজন খুনি কোনদিন এভাবে নিজের শাস্তি চাইবে??আরোহী মেয়েটা কেনো এতো বোকা কেনো বুঝতে পারছে না স্নিগ্ধ নির্দোষ।
.
আরোহী রিনির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে স্নিগ্ধর সামনে গেলো শরীর দূর্বল থাকায় পড়ে যেতে নিতেই স্নিগ্ধ ধরে ফেললো।আরোহী দূর্বল চোখে স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে বললো,,,”আপনি নিজেকে খুব চালাক মনে করেন তাইনা। এসব বলে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে পারবেন না। তবে ধন্যবাদ আপনি ঠিক বলেছেন আমায় বাঁচতে হবে নিজেকে বাঁচিয়ে আপনাকে শেষ করতে হবে।
.
স্নিগ্ধ শক্ত করে বুকে জরিয়ে নিলো আরোহী কে।
স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বললো,,,
— ওকে ডান,,, এবার এখানে বসো আপ্পি তুই ওকে খাওয়ি দে।
স্নিগ্ধ আরোহীকে আধশোয়া করে বসিয়ে দিলো।
রিনি আরোহী কে খাওয়ি দিলো।
স্নিগ্ধ ওষুধ গুলো সোনালিকে বুঝিয়ে দিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
.
“মানুষ মিথ্যাটা যতো তারাতারি একসেপ্ট করে নেয় সত্যি টা যদি ততো তারাতারি একসেপ্ট করতো তাহলে আজ দুনিয়া,দুনিয়ার মানুষ গুলোর জীবনও বোধ হয় অন্যরকম হতো”
“ভুল বুঝতে মানুষ সময় নেয় খুবই স্বল্প আর সঠিক বুঝতে সময় নেয় দীর্ঘ”
.
মানুষের জীবন কি অদ্ভুত! মূহুর্তের মধ্যেই ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারন করে। একমিনিট আগে এবং এক মিনিট পরে মানে বিশাল পার্থক্য। একমিনিটেই একটা জীবন, প্রান শেষ তো একমিনিটেই কারো জীবন শুরু।
আরোহীর স্নিগ্ধর জীবনও নতুন মোড় নিয়েছে।
গতকাল আরোহী ছিলো শুধুই একটা মেয়ে।
তাঁর মায়ের মেয়ে আজ আরোহী শুধু মেয়ে নয় আজ আরোহী কারো ঘরের বউ। আজ আরোহীর কাছে তাঁর মা নামক মহামূল্যবান সম্পদ টা আর নেই।
চারপাশে শুধু অচেনা, অজানা মানুষে ভরপুর।
এতো অচেনা মানুষের মাঝে একজন ব্যাক্তি তাঁর খুব চেনা সে আর কেউ নয় তাঁর মায়ের খুনি স্নিগ্ধ।
কাল থেকে যাকে শুধু মায়ের খুনি হিসেবে চিন্হিত করেছে আজ কিছুক্ষণ আগে থেকে তাঁকে স্বামী হিসেবেও গ্রহন করতে হয়েছে।
হ্যাঁ আভিয়ান খান স্নিগ্ধর বউ আসমাউল হুসনা আরোহী। কিন্তু সেটা শুধু মুখেই মন থেকে কি আদেও সে স্নিগ্ধ কে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছে না নেয় নি। নিজের মায়ের খুনি কে স্বামী হিসেবে মেনে নেওয়ার থেকে নিজেকে শেষ করে দেওয়া উত্তম। কিন্তু সে নিজেকে শেষ করতে চায় না সে চায় প্রতিশোধ নিতে নিজের মায়ের খুনি কে প্রমান স্বরূপ পুলিশের হাতে তুলে দিতে।
আর এই প্রমান জোগার করতে হলেও তাঁকে এ বাড়িতে এই খুনির সাথে থাকতে হবে।
.
ওয়াশরুম যাবে শরীরটা আগের থেকে বেশ ভালো লাগছে। বোধ হয় খেয়ে ওষুধ খাওয়ার জন্যই কিন্তু এরা আমার এতো যত্ন নিচ্ছে কেনো??স্নিগ্ধই বা কি চাচ্ছে,,, মায়ের কবরটা নিশ্চয়ই হয়ে গেছে,,, আর মালা সেই বা কোথায়,,, সে কেনো পুলিশকে সত্যি টা বললো না কথা বলতে না পারুক দেখিয়ে দিতে তো পারতো।
.
কয়েক পা এগুতেই পড়ে যেতে নিলো তখনি ধরে ফেললো স্নিগ্ধ।
সাথে সাথে আরোহী ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।
স্নিগ্ধ মুচকি হেসে পাঁজাকোল করে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে নিজে বাইরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো।
উঁচু গলায় বললো,,,
— ঝটপট কাজ সেরে বের হও তুমি ভীষণ উইক। যতোদিন সুস্থ না হচ্ছো ততোদিন ওয়াশরুমেও কোলে করে নিয়ে আসবো।
.
ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই দেখলো খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ। রাগ,ক্ষোপ যেনো উপচে পড়বে এবার নাক, মুখ,চোখ সবে রাগের ভনিতায় নিতে বসেছে অমনি স্নিগ্ধ খপ করে আবারো কোলে তুলে নিলো তাঁকে।
.
বিছানায় শুইয়িয়ে দিতে গিয়ে আরোহীকে শুইয়িয়ে একটু ঝুঁকেছে সেও তখনি আরোহী কলার চেপে ধরলো। দুজনই মুখোমুখি, দুজনই স্পষ্ট শুনতে পারছে একে অপরের শ্বাস, চোখে চোখ পড়লো দুজনেরই স্নিগ্ধ দুষ্টু হাসি আঁকলো ঠোঁটের কোনে, ফিসফিস করে বলে ওঠলো কি গো,,,
“কিসসি করবা নাকি,,,সকালে এতো এতো কিসসি করেছো এই ঠোঁট ছাড়া আর কোথাও কিসসি করার জায়গা নেই গো। এবার এইটুকুই বাকি আছে নাও স্টার্ট বলেই ঠোঁট টা এগিয়ে দিলো স্নিগ্ধ।
স্নিগ্ধর গরম শ্বাস আরোহীর মুখে পড়তেই ঠাশশশ,,,
চলবে…….
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।