মন শুধ মন ছুঁয়েছে,পর্ব_২১

0
2727

মন শুধ মন ছুঁয়েছে,পর্ব_২১
জান্নাতুল নাঈমা

সেদিন তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এহসানুল হককে দেখে তাঁর স্বভাব, আচার,আচরন দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়। তোমার মা নিজেও অবাক হয়ে যায়।
এমন একটা দূর্ঘটনাবশত বিয়েকে একজন মানুষ এতো গুরুত্ব দিচ্ছে, তাঁকে বউ হিসেবে এতো সম্মান করছে কেয়ার নিচ্ছে যা দেখে এহসানুল মামার প্রতি তোমার মায়ের শ্রদ্ধা দ্বিগুন হয়ে যায়। হ্যাঁ এহসানুল হক আমার নিজের মামা।
.
বিয়েটা এক্সিডেন্টলি হলেও যতোটুকু শুনেছি মামা তোমার মা কে খুব পছন্দ করে ফেলে। বিয়ের একমাস গ্রামেই থাকে সব নিয়ম-কানুন মেনে চলে। তোমার মা কে যতোটুকু শ্রদ্ধা, ভালোবাসা দেওয়ার দেয় কোন কমতি রাখে না। কিন্তু ওনি খুব ভয়ে থাকতো মামাকে হারানোর ভয়। গ্রামের মেয়ে সে হুট করে এভাবে বিয়ে হয়ে যাওয়াতে শহড়ের অচেনা ছেলেটাকে সেভাবে বিশ্বাস করে ওঠতে পারছিলো না। তখন মামা তাকে ভরসা দেয় মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করে কখনোই ছেড়ে যাবে না। শহড়ে গিয়ে নিজের বাবা,মা পরিবার, পরিজন কে বুঝিয়ে তাঁকে শহড়ে নিয়ে যাবে। মা তখন সবটা শুনে বিলিভ করে স্বস্তি পায়।
.
এসব কথা মা সেদিনও আমায় জানায় এবং বলে এহসানুল মামা তাঁকে ঠকিয়েছে। তাই দ্বিতীয় বার এমন ঘটনা যাতে না হয় তাই তিনি আমাকে মেনে নেবেন না। তখন আমি একদম সিওর হয়ে যাই ওনিই সেই মানুষ। যাকে আমি খুঁজছি।তাই আমি ভাবি ওনাকে সব সত্যি জানিয়ে দিবো আমি ঠিক তাই করি। সবটা জানাই যা তুমি জানো না,ওনিও জানতেন না সেদিনই জানতে পারেন।
.
ওনাদের বিয়ের ৩৫ দিনের মাথায় মামা তাঁর নিজের বাড়ি ফিরে। তখন আমি বেশ ছোট বাবা বিজনেসের কাজে তখন বিদেশ গিয়েছে আমাকে আর আপুকে নানার বাসায় রেখে গেছে। মামা ফেরার পর সমস্ত ঘটনা সবাইকে জানায়। সব শুনে নানা বলেন, যা হয়েছে হয়েছে এক্সিডেন্ট কে সারাজীবনের সঙ্গী করে তোলার কোন মানে হয় না। মামা তখন জোর গলায় বলে, বিয়ে আমি একবারই করেছি। যাকে করেছি তাঁকেই সারাজীবনের সাথী করে থাকতে চাই।
শুরু হয়ে যায় তর্ক। নানী যাও সাপোর্ট করছিলো মায়ের ছবি দেখে চিৎকার, চেচামেচি শুরু করে দিলো। সেও নানার দলে চলে গেলো। মামা উপায় না পেয়ে বললো- আপনারা একটা রাত ভাবুন আমি কাল রাতে আবার আপনাদের মতামত নিতে আসবো। মতামত যাই হোক না কেনো আমেনাকে বউ করে নিজের ঘরে তুলবোই। নানা হুংকার দিলেন, যদি তাই হয় এ বাড়ি ছেড়ে তোমায় বেরিয়ে যেতে হবে। আমরাও তোমাকে একটা রাত একটা দিন সময় দিলাম।
.
পরেরদিন সকালে বাড়ির সামনের খোলা মাঠে ক্রিকেট খেলছিলাম। তিনজন ছেলে সাথে ছিলো একে একে তিনজনই চলে গেলো। কিন্তু আমার তখন আরো খেলতে মন চাচ্ছিলো মন খারাপ করে ফিরে আসছিলাম। এমন সময় মামা এসে বললো, কিরে খেলবি চল আমি আর তুই খেলি। মামার মন খারাপ ছিলো, হয় তো আমার সাথে একটু সময় কাটিয়ে মন হালকা করতে চাইছিলো। তখন না বুঝলেও এখন বেশ বুঝতে পারি। খেলা শুরু করি এক পর্যায়ে মামা চিৎকার দিয়ে স্নিগ্ধ বলে দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় সাথে সাথে বেশ শব্দ হয়। আর মামা আর্তনাদ করে ওঠে পরপর তিনটা গুলি লাগে মামার পিঠে। আমাকে জরিয়েই মাটিতে বসে কাতরাতে থাকে মামা। আমি ভয় পেয়ে যাই খুব। ভয়ে ভয়ে ডাকতে থাকি, মামা তোমার কি হলো।ও মামা কিছু তো বলো। মামা কাঁপতে থাকে আমি জোরে জোরে কাঁদতে থাকি। আমি মাঠ ছেড়ে দৌড়ে বাড়ির দিকে যেতে নিবো তখনি মামা আমার হাত চেপে কাঁপা গলায় বললো- স্নিগ্ধ যাস না আমার বোধ হয় সময় নেই। আমি কাঁদতে থাকি তখনি রিনি আপু আমাদের ওভাবে দেখে জোরে চিৎকার শুরু করে সাথে সাথে বাড়ি থেকে সকলে বেরিয়ে আসে।
আর মামা তখন পকেট থেকে তোমার মায়ের ছবি বের করে দূর্বল গলায় কোনরকমে বলে যায় ওকে দেখে রাখিস। ও আমার দায়িত্ব ওকে আমি কথা দিয়েছিলাম সারাজীবন ওর পাশে থাকবো। বাবা তুই বড় হয়ে ওর খেয়াল রাখিস…
.
ছবিটা হাতে নিয়ে আমি কাঁদতে শুরু করি এদিকে নানা এম্বুলেন্স খবর দেয়। মামা কে নিয়ে সবাই হসপিটালে চলে যায়। আমাকে রিনি আপুকে তারাহুরোতে নেয় নি। রাস্তায়ই মারা যায় মামা হসপিটাল নিয়ে শুনে রাস্তায়ই মৃত্যু ঘটেছে। পুরো বাড়িতে শোক লেগে যায়। মামার মৃত্যুর জন্য কারো আর খেয়ালই থাকে না সে বিবাহিত কোন একজায়গায় তাঁর বিয়ে করা বউ রয়েছে। আমার জন্য শুধু মাএ আমার জন্য সেদিন মামার মৃত্যু ঘটে।
শুধু মাএ আমার জন্য তুমি বাবাহীন বড় হয়েছো। বাবার আদর ভালোবাসা পাওনি আমার জন্য তোমার জীবনটা অপূর্ণতায় ঘেরা। তাই আমি তোমাকে খুব খুব ভালোবেসে আগলে রাখতে চাই আরোহী। কোন দয়া নয়, কোন করুনা নয় শুধু ভালোবাসায় ঘিরে রাখতে চাই। তুমি যেমন আমার ভালোবাসা তেমনি আমার দায়িত্ব।

আরোহী হুহু করে কেঁদে ওঠলো ভাঙা আওয়াজে বললো -” তাহলে এতোগুলো বছর কেনো কোন খোঁজ নেননি কেউ”??

স্নিগ্ধ বাঁকা হেসে বললো- কে নেবে আরোহী?? কেউ তো মামার বিয়েটাকে মেনেই নেয় নি। মামার মৃত্যুর পর সবার ধারনা হলো তোমার মা অপয়া ছিলো। তাঁর জন্যই মামার এতো বড় দূর্ঘটনায় মৃত্যু হলো।
আসলে তো তা নয় হয়েছে আমার জন্য। আমার বাবার শত্রুরা আমার বাবার কলিজায় আঘাত করতে এসেছিলো কিন্তু মামা সেটা হতে দেয় নি। মামা নিজের জীবন শেষ করে আমার বাবার কলিজাকে রক্ষা করে গেছেন৷ সারাজীবনের মতো ঋনি করে গেছেন আমাকে আমার বাবা সহ আমার পুরো পরিবার কে। আর আমি তখন খুব ছোট ছিলাম। কয়েকবছর বাদে আমি এসব ভুলেও যাই।
কিন্তু ইন্টার পাশ করার পর আমি যখন পলিটিকসে যোগ দেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করি তখন খোঁজ করি। ছবিটা নিয়ে মামার সব বন্ধু বান্ধব কে দেখাই কেউ খোঁজ দিতে পারে না। মামার বন্ধু জসিমের খোঁজ লাগানোর পর জানতে পারি কোন এক দূর্ঘটনায় সেও মারা গেছেন। যার ফলে হয়তো তোমার মাও তোমার বাবার মৃত্যুর ঘটনা জানতে পারে নি।

সেদিন ওনি সবটা জানার পর ওনার ভুল ধারনা থেকে বেরিয়ে আসে। অনেকটা সময় আমার হাত ধরে কান্নাকাটি করে। আমি তাঁকে স্বান্তনা দেই। ওনি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার খুব চেষ্টা করে আর জানায় “আরোহীর যদি কারো সাথে বিয়ে হয় সেটা তুমিই হবে” আমি খুব খুশি হই এতোটাই যে আমার চোখ গড়িয়ে জল পড়তে থাকে। ওনি ওনার আশির্বাদি হাত রাখেন আমার মাথার ওপর। তখনি সেই মূহুর্তে আমি ডেডকে ফোন করি। তোমাদের ঐ জায়গার বাজার চলে যাই টুকটাক বাজার করতে। আর ফিরতেই তোমার মায়ের মরা মুখ দেখতে পাই৷ সেই সাথে মুখোমুখি হয় কিছু মিথ্যা অপবাদের।
.
সব শুনে আরোহী ডুঁকরে কেঁদে ওঠলো। তাঁর কান্নায় স্নিগ্ধর বুকে রক্তক্ষরণ যন্ত্রণা বইতে লাগলো। তবুও নিজেকে সংযত রাখলো। আরোহী অসহায় চোখ মুখে তাকালো স্নিগ্ধর দিকে। ফুঁপাতে ফুঁপাতে বললো,”তাঁর মানে আমার বাবা নির্দোষ ওনি ওনার স্ত্রী, সন্তান কে ঠকাননি,আমরা সারাটাজীবন একজন মৃত মানুষকে দোষারোপ করে গেলাম। সত্যিটা না জেনে ভুল বুঝে গেলাম। স্নিগ্ধ,,, তোমাকেও তো কম ভুল বুঝিনি। আমার সারাটা জীবন শুধু ভুলের মাঝে গেলো। অঝড়ে কাঁদতে লাগলো আরোহী।

এমন সময় স্নিগ্ধ বললো-
— কি আমাকে স্বামী হিসেবে বেছে নিতে ইচ্ছে করছে। সব শুনে আমার প্রতি ভালো ধারনা এসে গেছে??

আরোহী মুখ চিপে কেঁদে স্নিগ্ধর হাতের ওপর হাত রাখলো। সাথে সাথে স্নিগ্ধ হাত সরিয়ে ফেললো।
আঙুল ওঠিয়ে বললো-

— নো আরোহী এভাবে তোমাকে আমার চাইনা। কোন দয়া নয় কোন করুনা নয় বা কোন কারনে নয়।
যেদিন তোমার অন্তর গহীনে থাকা মন টা আমার মন ছুঁতে চাইবে সেদিন তুমি আমার হাতে হাত রাখবে তাঁর আগে নয়। বলেই স্নিগ্ধ বিছানা ছেড়ে ওঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আরোহী ডুকরে কেঁদে ওঠলো।
তাঁর মনে বার বার অপরাধ বোধ জেগে ওঠছে। নিজের নির্দোষ বাবাকে সারাটা জীবন সে আর তাঁর মা মিলে ভুল বুঝে গেছে। শুধু তাঁরা নয় এলাকার প্রত্যেকটা লোক তাঁর বাবার নামে নানারকম বাজে কথা বলেছে। খারাপ লাগলেও সত্যি বলে তাঁদের দেওয়া অপবাদ মাথা পেতে মেনে নিয়েছে। অথচ কখনো একটা বার খোঁজার চেষ্টা করেনি, জানার চেষ্টা করেনি। তবুও শান্তি তাঁর মা সত্যি টা জানার পর মৃত্যু স্বাদ গ্রহন করেছে।

অঝড়ে কেঁদে চলেছে আরোহী,,, এদিকে স্নিগ্ধর আর কোন খবড় নেই একটিবারের জন্যও সে রুমের মুখোমুখি হয়নি। অথচ আরোহী এ মূহুর্তে তাঁকে খুব করে কাছে চাচ্ছে। তাঁর হাতটা শক্ত করে চেপে মন খুলে কেঁদে নিজেকে হালকা করতে চাচ্ছে। সে বুঝে গেছে এ পৃথিবীতে স্নিগ্ধ ছাড়া তাঁর আপন বলতে আর কেউ নেই। তাঁর বাবা,মা যে তাকে স্নিগ্ধর হাতেই তুলে দিয়ে গেছে।
.
কয়েকদিন ধরেই স্নিগ্ধ বেশ মনমরা গম্ভীর হয়ে থাকে। প্রয়োজন ব্যাতিত আরোহীর সাথে তেমন কথা বলছে না। আরোহী বলতে গেলেও কাজের ছুতোয় সামনে থেকে চলে যাচ্ছে। কিন্তু আরোহী ঠিক এখন স্নিগ্ধ কে খেয়াল করে স্নিগ্ধর প্রত্যেকটা বিষয় অনুভব করার চেষ্টা করে। তা কি স্নিগ্ধ বুঝতে পারছে??যদি বুঝতে পারে তাহলে দূরে দূরে থাকছে কেনো??

— দশটায় বাড়ির সামনে থাকবো ভার্সিটি যাবেতো আজ??

ভাবনার মাঝেই চমকে গেলো আরোহী পিছন ঘুরে স্নিগ্ধ কে দেখেই বললো-

— আপনি কোথায় যাচ্ছেন??

— কাজ আছে তাই বের হতে হচ্ছে। সময় মতো ভার্সিটি পৌঁছে দিব রেডি থেকো। বলেই ঘড়ি পড়তে পড়তে বেরিয়ে গেলো।আরোহীকে আর কোন কথা বলার সুযোগ দিলো না।
.
রেডি হয়ে বের হতেই দেখতে পেলো স্নিগ্ধ বাইকের ওপর বসে আছে। মাথায় হেলমেট পড়া চোখ তাঁর সামনের দিকে স্থির। যা আরোহীর একটুও পছন্দ হলো না। “আগেতো ঘার বাঁকা করে বজ্জতামাখা হাসি দিয়ে লুচ্চা মার্কা কথা বলতো এখন এতো সাধু গিরির কি আছে” তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বির বির করতে করতে বাইক চেপে বসলো আরোহী। স্নিগ্ধর কাঁধে শক্ত করে চেপে হাত রাখলো।

স্নিগ্ধ আয়নাতে একবার আরোহীকে দেখে নিয়ে বাইক স্টার্ট করলো। এই প্রথম আরোহী নিজে থেকে স্নিগ্ধর কাঁধে হাত রেখেছে বাইকে তাঁর দিকে চেপে বসেছে। যা আগে সে কখনো করতো না। আজ আর স্নিগ্ধ কে স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে ব্রেক কষে কষে আরোহীকে নিজের সাথে জোরানোর দরকার পড়লো না। স্নিগ্ধর অনুভূতি টা কি হচ্ছে তাই বুঝতে পারছে না আরোহী। যার কারনে বেশ বিরক্ত হচ্ছে সে।এভাবে স্নিগ্ধ কে তাঁর মোটে ভালো লাগছে না তাঁর আগের সেই বজ্জাত, লুচ্চা স্নিগ্ধকেই বেশ লাগে।
.
বাইক নিয়ে সোজা কেন্টিনের সামনে থামলো স্নিগ্ধ।
আরোহী বললো-

— একি এখানে কেনো তুরিন আমার জন্য ঐপাশে ওয়েট করছে। আচ্ছা আমি হেঁটেই যেতে পারবো বাকিটা। বলেই বাইক থেকে নেমে হাঁটা ধরলো।
সাথে সাথে স্নিগ্ধ আরোহীর হাত চেপে ধরলো।
গম্ভীর গলায় বললো –

— ব্রেকফাস্ট করবে চলো।

আরোহী হকচকিয়ে গেলো। তাঁর মানে সে যে খেয়ে বের হয় নি সেটা স্নিগ্ধর কানে ঠিক পৌঁছে গেছে। বাহ দারুন ব্যাপার। মনে মনে বেশ খুশি হলো আরোহী।
কিন্তু স্নিগ্ধর গম্ভীর মুখটা দেখে মেজাজ খারাপ হতে থাকলো।
.
দুজনে একসাথে খাচ্ছে।স্নিগ্ধ খাওয়ার সময় একবারো আরোহীর দিকে তাকায়নি। আরোহী বার বার তাকিয়েছে। মন ভরে দেখেছে তাঁকে।
.
ক্লাস শেষে তুরিন আরোহী সহ আরো কয়েকজন একসাথেই বেরিয়ে এলো। মাঠে বেশ ভীড় জমেছে।
ভ্রু কুঁচকে আরোহী তুরিন সহ কয়েকজন এগিয়ে যেতেই দেখলো স্নিগ্ধ বাইকের ওপর বসে আঙুলে চাবি ঘোরাচ্ছে। আর তাঁর চ্যালারা মিলে একটা ছেলেকে মারধর করছে। একদম রক্তাক্ত করে ফেলেছে মারতে মারতে।
.
— একটা ছেলে কে এতোগুলা ছেলে ধরে এইভাবে মারছে, রক্তাক্ত করে জীবনটা শেষ করে দিচ্ছে।
আর তোমরা সবাই চুপচাপ হাত-পা গুটিয়ে বসে আছো।ভার্সিটির কোন নিয়ম,শৃঙ্খলা নেই নাকি।

তুরিন ভয়ে এক ঢোক গিলে বললো-

— আরোহী চুপ কর এখানে স্নিগ্ধ ভাইয়ের গ্যাং রা মারপিট করছে। কেউ কিছু বলবে না,তোর দেখতে খারাপ লাগলে হয় চোখ বন্ধ করে থাক নয় আমার সাথে চল।বলেই আরোহীর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। আরোহী এক ঝ্যাংটা দিয়ে ছাড়িয়ে বললো-

— পারবো না, আমি এর প্রতিবাদ করবোই করবো।

তুরিন ভয়ে শিউরে গেলো কিছু বলতে যাবে তখনি পাশ থেকে এক মেয়ে টিটকারি দিয়ে বলে ওঠলো-

— উমহ নেতার বউ হয়ে এতো দরদ মানায় না,,,
ওখানকার মেইনকালপ্রিট তো তোমার জামাই ই।
এতোই যখন দরদ রাতে বেড রুমে জামাইকে বললেই তো হয় নেতাগিরি বাদ দিতে।

আরোহী রেগে তাকালো মেয়েটার দিকে কড়া গলায় বললো-

— আমি কোন নেতার বউ না হতেও চাইনা।

তুরিন অবাক হয়ে বললো-

— আরোহী চুপ কর,,,

পাশ থেকে আরো কয়েকজন বলে ওঠলো-

— তোমার মাথা ঠিক আছে কি বলছো। তুমি তো স্নিগ্ধ ভাইয়ার বউই।

আরোহী এক ঢোক গিলে নিয়ে বললো-

— হ্যা স্নিগ্ধর বউ কিন্তু কোন নেতার না।

তখন মেয়ে গুলো তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে লাগলো।
একজন বলেই ফেললো –
— তোমার মাথা মনে হয় ঠিক নাই। বাসায় যাও তোমার হাজব্যান্ডের ব্যাপারে তুমি এসব না জেনে তো বসে নেই। কিছুদিন আগেই না শত্রুপক্ষের গুলি খেয়েছো দুজন। এখনো কিছু জানো না নাকি, অভিনয় করো??

আরোহী চমকে গেলো মনের ভিতর তাঁর হাজারো প্রশ্ন। স্নিগ্ধ সেদিন বলেছিলো শত্রু ওর বাবার বিজনেসের তরফের কিন্তু এরা তো অন্য কথা বলছে।

তুরিন আরোহীর কানে ফিসফিস করে বললো-

— আরোহী তুই জানিস না স্নিগ্ধ ভাই পলিটিকাল লিডার।আমি তো আগেই বলেছি।

আরোহী চিন্তিত মুখে বললো-

— জানতাম এতোটা নিম্ন মানের তা জানতাম না।

— মানে,,,

— আমার হাজব্যান্ড মনুষত্যহীন হবে আর সেটা আমি মেনে নিবো না তুরিন। আমি খুব সাধারণ মানুষ তাই আমি একজন সাধারণ কাউকেই চাই। বলেই আরোহী ছুটে গেলো স্নিগ্ধদের দিকে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here