মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_১(সিজন ২)

0
2898

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_১(সিজন ২)
#পুষ্পিতা_প্রিমা

বিছানায় আদুরে বিড়াল ছানার মতো গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকা মেয়েটি ঠোঁটদুটো ফুলানো। কপালের দুইপাশে ছোট ছোট চুলগুলো লেপ্টানো। নাকের ডগা ঘেমে আছে।
মায়ের হাতের স্পর্শ কপালে পেতে না পেতেই মেয়েটি আয়েশ করে পাশ ফিরে শুয়ে মায়ের কোলের কাছে চলে আসল। মা হেসে চুলে আরেকটু বিলি কেটে দিতেই মাথাটি এবার সরাসরি কোলের উপর তুলে দিল মেয়েটি। মা খিলখিল করে হেসে উঠে বলল,

‘ পিহুসোনা আজকে কত তারিখ মনে আছে তো? যেতে হবে না মামার বাসায়? আজ তোমার দিদিয়ার গানের আলব্যাম বেরোবে।

পিহু প্রথমেই খুশি হলো। কিন্তু মামার বাড়ির মামাতো ভাইয়ের কথা মনে পড়তেই তার চোখমুখ কুঁচকে এল। সে উঠে বসল মাকে অবাক করে দিয়ে। চোখ চোখ কচলে কচলে বলল,

‘ আমি যাব না মাম্মা । মাহিদ ভাই আমাকে সবসময় মারে। কাল স্কুল থেকে ফেরার পথে দুমদাম মেরেছে। হাঁটতে,বসতে, যেখানে দেখে সেখানে মারে। আমার চুলের ঝুটি ধরে টেনে দেয়।

মা হেসে উঠল মেয়ের কথা শুনে। বলল,

‘ ওটা তো দুষ্টুমি করে। আসলে তো ও তোমাকে অনেক দেখতে পারে। আচ্ছা আজ গিয়ে রিপ মামাকে নালিশ দেবে। ওকে??

পিহু ঠোঁট উল্টালো। বলল,

‘ রিপ মামাকে বললে রিপ মামা রেগে যায়। ওকে বেশি বেশি বকে । ছোট মামি কষ্ট পাই। এবার থেকে বলব না। আমি নিজেই মারব।

মা মেয়ের কথার মাঝখানে হাসিখুশি মুখের একটি পুরুষ ডুকে পড়ল রুমে। হাতে তার তোয়ালে। ভেজা চুল মুছতে মুছতে বলল,

‘ মিষ্টি……. তোমায় খুঁজছি।

পিহু হো হো করে হেসে উঠল পাপপার মুখে মিষ্টি ডাকটি শুনে। হেসে উঠে মাকে বলল,

‘ মাম্মা পাপা তার বউকে ডাকছে বোধহয়।

ইশা চোখলাল করে তাকাল আদির দিকে।

‘ কতবার বলব আমাকে ইশা বলে ডাকবেন। তারপর ও মিষ্টি মিষ্টি। বিরক্তিকর। আপনার কি কথা কানে যায় না?

আদি হাসল। পিহু আদির হাসি দেখে হা হু করে হেসে দিল। আদি মিষ্টিকে আরেকটু রাগিয়ে দেওয়ার জন্য আবার ডাকল,

‘ মিষ্টি….

ইশার রাগ লাগল। এই লোকটা তাকে সকাল সকাল রাগিয়ে দিচ্ছে। সে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। পেছনে শোনা গেল বাবা মেয়ের হাসির শব্দ।
পিহু বাবাকে গিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরল। খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,

‘ পাপা আজ আমার খুব খুব খুশির দিন। আজ সিংগার ম্যান আসবে আমাদের বাসায়। আর দিদিয়ার গানের আলব্যাম বেরোচ্ছে। আমি যে কি খুশি? আহা চারদিকে গান আর গান। সিংগার ম্যান আর দিদিয়া একসাথে গান গাইবে। আল্লাহ আমি ভাবতেই পারছিনা কি খুশি লাগছে আমার?

আদি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল কপালের একপাশে। বলল,

‘ আজ তোমার দিদিয়ার লাইফে অনেক ইমপোর্টেন্ট একটা দিন। তুমি দিদিয়াকে কি গিফট দেবে?

পিহু মাথা তুলে তাকাল আদির দিকে। আবার বাবার বুকে গুজে গিয়ে বলল,

‘ দিদিয়াকে আমি আমার টেডিবিয়ারটি গিফট দেব। ওটি আমার খুব প্রিয়। দিদিয়াকে আমি আমার প্রিয়াকে দিয়ে দেব।

আদি হাসল। বলল,

‘ দিদিয়াকে ভালোবাস??

পিহু মিনমিন করে বলল,

‘ খুবব। কিন্তু , দিদিয়া আমায় ভালোবাসে না। আমার গিফট কি নেবে?

আদির হাসিখুশি মুখ কিছুক্ষণের জন্য নিভু নিভু হয়ে অন্ধকারে ছেয়ে গেল। কপালে ভাঁজ পড়ল। পিহুর চুলে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

‘ নেবে। কেন নেবে না। দিদিয়া ও তোমায় ভালোবাসে। দেখায় না আর কি।

_________________

খান বাড়িতে টান টান উত্তেজনা কাজ করছে সবার ভেতর। রিক তাড়া দিচ্ছে মুনা আর নীরাকে। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে একধ্যানে মোবাইলে গেমস খেলছে মাহিদ। যেন কেউ ডিস্টার্ব করলে গুলি মেরে তার মাথার খুলি উড়িয়ে দেবে। হঠাৎ কেউ শক্ত করে তার কান টেনে ধরায় তার মেজাজ চটে গেল। বিশ্রী গালি মুখ থেকে বেরোনোর আগে রিককে দেখে সে চুপ হয়ে গেল। মোবাইল লুকিয়ে ফেলল সোফার কভারের নিচে। বলল,

‘ বাড়ে পাপা আমি গেমস খেলছি না। সত্যি। গান দেখছিলাম।

রিকের হাসি পেলে ও সে হাসল না। কান আর ও শক্ত করে ধরে বলল,

‘ আজকের দিনে ও তুই এসব গেমস নিয়ে বসে আছিস। তোর দিভাই তোকে না দেখলে কি তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে বসবে সে খেয়াল আছে।

মাহিদ রিকের হাত চেপে ধরে বলে,

‘ কান এবার ছাড়ো । লাগছে তো।

রিক কান ছাড়ল। মাহিদ চোখ উপরে তোলার সাথে সাথে দেখল মাকে।
নীরা হাত দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে ইশারা করে বলল, আর ও মারুক। বদমাশ ছেলে সারাক্ষণ গেমস গেমস গেমস।

মাহিদের রাগ লাগল। মা আর ও মাইর খেতে বলছে। মাহিদের প্রচুর রাগ লাগল। সে রাগ করে বেরিয়ে গেল। আজ রাগ দেখানোর সময় নেই। আজ দিভাইয়ের গানের আলব্যাম বেরোচ্ছে। শীঘ্রই অডিশনে যেতে হবে।

________________

গানের অডিশন শেষ হয়েছে বেশকিছু আগে। সবাই শুভকামনা জানাচ্ছে মেয়েটিকে। হাসিখুশি প্রাণবন্ত মেয়েটি সবার শুভকামনা অভ্যর্থনা গ্রহণ করছে সাদরে। আজ তার গানের আলব্যাম বের হয়েছে। আজ তার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। সে মনে করে তার এতটুকু পথ এগিয়ে আসার পেছনে পুরো অবদানটাই তার মাম্মা আর পাপপার। তাদের অনুপ্রেরণায় এতদূর আসা। তার হাজার ভক্তদের মাঝে তার চোখ আটকে গেল দুইজন মানুষের কাছে। সে দৌড়ে গেল । মুনা হাত দিয়ে ইশারা করে বলল, সাবধানে।
মেয়েটি দেখল না আশপাশ। ঝাপিয়ে এসে পড়ল বাবার বুকে। পরম ভালোবাসায় ডাকল,

‘ পাপপা, এত দেরী কেন??

রিক হাসল। বলল,

‘ অনেকক্ষণ হয়েছে এসেছি। তোমার ফ্যানদের জন্য দেখা যাচ্ছে না।

মেয়েটি মাথা তুলে দেখল মুনাকে। বলল,

‘ মাম্মা হাতে এসব কি?

মুনা হেসে ফুলের তোড়া এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘ কনগ্রাছুলেশন প্রিন্সেস।

মেয়েটি ঠোঁট এলিয়ে হাসল। জড়িয়ে ধরল মুনাকে। জিভে কামর দিয়ে বাবা মায়ের পা ছুয়ে সালাম করে বলল,

‘ গুরু পইপই করে বলেছে আগে সালাম করে নিতে মা বাবাকে। বেমালুম ভুলে গিয়েছি। আমায় মনপ্রাণ দিয়ে দোয়া করো। যাতে আমি অনেকদূর এগোতে পারি। তোমাদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।

রিক আর মুনা হাসল। মাথায় হাত রেখে বলল,
‘ আমরা সবসময় তোমার জন্য দোয়া করি। তুমি ছাড়া আমাদের আর কে আছে?

মেয়েটির চেহারা হঠাৎ কিছুটা মলিন হলো। জড়িয়ে ধরল শক্ত করে বাবাকে। চোখ ভিজে উঠল তার।

রিককে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় হঠাৎই চোখ গেল ওই দূরে দাঁড়ানো একজন মহিলা আর একজন পুরুষের দিকে। তাদের সাথে আর ও একটি মেয়ে। সে রিককে ছেড়ে শক্ত হয়ে দাঁড়ালো। ওই তিনজন ধীরে ধীরে এগিয়ে আসল তার দিকে। চোখেমুখে তাদের উচ্ছ্বাস, আনন্দ। মেয়েটির চেহারার রং পাল্টাতে দেখে রিক আর মুনা ও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। আদি ইশা আর পিহুকে দেখে তারা হাসার চেষ্টা করল। কিন্তু ওই মেয়েটি তৎক্ষণাৎ চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। পেছন থেকে ডাক আসল,

‘ পরী মা…….

মেয়েটি থমকাল। কিন্তু ভুলে ও পিছু ফিরল না। না হুট করে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তার জন্মদাতা আর জন্মদাত্রীকে। না পিছু ফিরে তাকাল নিজের ছোট্ট বোনটার দিকে। তারা তিনজনই তার সামনে আসল। ইশা হাত বাড়িয়ে মুখ ছোঁয়ার আগেই পরী দু পা পিছু সরল। বলল,

‘ আমাকে টাচ করার ট্রাই করবেন না মিসেস চৌধুরী। আর এসব দরদ আপনার মেয়ের সাথে দেখান। এই ভরা পাবলিক প্লেসে আমার এসব নাটক দেখতে একদম ভালো লাগছেনা।

আদি কানে নিল না পরীর অমন কথা। কিন্তু ঠিকই মন খারাপ হলো। ইশা স্পষ্ট দেখল তা। ইশা দ্রুত পায়েসের বাটি বের করল ব্যাগ থেকে। বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

‘ তুমি আম্মার হাতে পায়েস খেতে পছন্দ করো না? ব্রেক পেলে খেয়ে নিও। খুব যত্ন করে বানিয়েছি। খাবে না?

কেড়ে নিল পরী পায়েসের বাটি। সাথে সাথেই খুলল ঢাকনা। এক চামচ মুখে দিতে না দিতেই মুখ থেকে থু থু করে ফেলে দিল সব। পুরো বাটিটা ছুড়ে মারল দূরে। বলল,

‘ আই হেইট সুইটস। তা ও মুখে দিলাম। কিন্তু কি জঘন্য হয়েছে। আমার বমি পাচ্ছে। ছিঃ,, আমার বন্ধুরা কি বলতো। ভাগ্যিস আগে টেস্ট করেছি।

আশেপাশের কয়েকজন দেখল এই দৃশ্য। পরী আগুনচোখে তাকানোর সাথে সাথে তারা চোখ ফিরিয়ে নিল।
ইশার দুচোখ টলমল করে উঠল। পিহু ভয়ে ভয়ে আদির পেছনে দাঁড়িয়ে পড়ল। টেডিবিয়ারটি কি আজ দেওয়া হবেনা। দিদিয়া এমন কেন করে? মাম্মা আর পাপপা কত কষ্ট পাচ্ছে?

রিক ছুটে গেল। বলল, এসব কি হচ্ছে পরী। আজকের দিনে এসব না করলেই নয়? ওরা তোমার মা বাবা পরী?

পরী রক্তচোখে নিয়ে তাকাল রিকের দিকে।

‘ তাহলে তোমরা কে পাপা? এরা আমার মা বাবা হয় কি করে? আমি মানিনা। এরা স্বার্থপর। আর স্বার্থপরেরা কখনোই মা বাবা হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা। এদেরকে কে আসতে বলেছে এখানে? এরা আমার ভালো দেখতে পারেনা।

ইশা এগিয়ে যায় পরীর দিকে। পরীকে ছুঁতে গেলে আদি তাকে ধরে ফেলে। মাথা নেড়ে না করে বলে,

‘ থাক মিষ্টি। এখানে অনেক মানুষ। ও ছোট মানুষ, চেঁচামেচি করলে লোক জড়ো হবে। শুধু শুধু ঝামেলা। আমরা বাসায় যায়।

রিক বলল, তোমরা আমাদের বাসায় যাবে। থাকো। তোমরা ও কি ওর মতো…….

রিক অন্যকিছু বলার আগেই পরী বলে উঠল,

‘ এরা থাকলেই কি না থাকলেই কি? আমার লাইফে ওদের কোনো অবদান নেই। জন্ম দিলেই মা বাবা হওয়া যায় না। এদের ছাড়া আমি ভালো আছি। আমি ভালো থাকব। এরা যাতে আমার বাড়িতে না যায়। গেলে আমি ডুকব না ওই বাড়িতে। ক্লাবে থাকব।

রিক বুঝানোর আগে পরী হনহন পায়ে হেঁটে চলে যায়। আদি ডাকল, পরী তোমার জন্য…..

পরী দাঁড়ায় না। চলে যায়। ইশা দাঁড়িয়ে থাকে ঠাঁই। রিক সান্ত্বনা দেয়। ওর কথাই মন খারাপ করিস না। তোদেরই তো সন্তান। তোরা না বুঝলে কে বুঝবে???

আদি মাথা নাড়ায়। বলে, মিষ্টি আমরা বাসায় গিয়ে পরে কথা বলি পরীর সাথে।

___________________

পরী বন্ধুবান্ধবদের সাথে উচ্চস্বরে হাসাহাসি করে। তার দুই তিনটা কম্পিটিটর তাকে আড়চোখে দেখল। হয়ত মনে মনে পরীর চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে ফেলছে। কিন্তু পরীর সেদিকে মাথা ব্যাথা নেই। সে কিছুক্ষণ গান গাইছে আর হাসছে।
গানের অডিশন প্রায় শেষের দিকে। ধীরে ধীরে কমে আসা ভীড় আচমকা আবার জড়ো হলো। চারদিকে লোকের সমাগম বাড়ল। কোলাহল বাড়ল। কয়েকটা গাড়ি এসে থামল মাঠের দিকে। পরী ঘাড় উঁচিয়ে দেখার চেষ্টা করল কে এসেছে। পরীর কাছ থেকে অটোগ্রাফ না নিয়ে সবাই ছুটল নতুন আগত সিংগারের কাছে।
গাড়ির কাচ উন্মুক্ত হতে হতে বেরিয়ে আসল একটি মুখ। বেশভূষা বিদেশী। গায়ে কালো জ্যাকেট। কালো কুচকুচে মাথা ভর্তি চুল। চেহারায় ক্লান্তি ক্লান্তি ভাব। ছেলেটি তার পাশে বসা লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘ ড্যাড কত মানুষ। আমি নামব না গাড়ি থেকে। প্রচন্ড টায়ার্ড লাগছে। আজ গান ও গাইব না। আমার রেস্ট দরকার।

আফি এক ধমক দিল।

‘ তোর গান শোনার জন্য কি কেউ বসে আছে নাকি? আমি একজনের গান শোনার জন্য এখানে এসেছি। তুই গাইলে কি না গাইলেই বা কি?
পেছনের সিট থেকে রাইনা চেঁচিয়ে উঠল।

‘ আপনি আমার ছেলের সাথে এভাবে কথা বলবেন না। আপনার গর্ব হওয়া উচিত ছেলেকে নিয়ে। ওরজন্যই এত লোকের ভীড় হয়েছে। দেখতে পাচ্ছেন না।

আফি বিদ্রুপ করে হাসল। বলল, আমি যার গান শুনতে এসেছি,তার কাছে তোমার ছেলে কিছুই না। তার গানের গলার সাথে তোমার ছেলের তুলনা হয়? পাগলের মতো কথা বলছ?

ছেলেটি চুপটি মেরে বসে মা বাবার ঝগড়া শুনল। ড্যাড তাকে কথা শোনাতে একবিন্দু ছাড় দেয়না। তার দোষটা কোথায়??

রাইনা বলল, দেখি কার শোনার জন্য আপনি এখানে এসেছেন? নামেন।

রেহান না করে উঠল।

‘ আমি যাব না মাম্মা। আমার ভালো লাগছেনা। আমাকে এক জায়গায় যেতে হবে।

রাইনা অবাক হয়ে বলল,

‘ কিন্তু আজকের ফাংশনে তোমার গান গাওয়ার কথা ছিল। তুমি তাদের কথা দিয়েছিলে।

রেহান মাথা চেপে ধরে বলল,

‘ আমি গাইব না। অডিশন অলরেডি শেষ। যাদের আলব্যাম বের হয়েছে তাদের গান গাওয়া ও শেষ। আমার কোনো কাজ নেই আর। আমি খুব টায়ার্ড মাম্মা।

কয়েকজন গাড়ির কাছে এসে অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য কলম বাড়িয়ে দিল। এক ঝামেলায় পড়ে গেল রেহান। বিরক্তি তরতর করে বাড়ল। কারো হাত থেকে কলম নিল না। প্রডিউসার কামাল উদ্দিন এসে রেহানকে ভেতরে নিয়ে যাওয়ার তাড়া দিল। রেহান নড়ল না তার জায়গা থেকে। বিরক্ত হয়ে বলল, আমাকে অন্য জায়গায় যেতে হবে ড্যাড। তোমরা যাও। আমি যাব না। আমি সোজা বাসায় ফিরব। চাচ্চু কাকিয়া বাসায় ওয়েট করছে আমার জন্য। আর…

আফি গর্জে উঠল।

‘ তোর কোন রাজ্যের কাজ পড়ে রয়েছে ব্যাটা। ডং দেখাস? দুই টাকার সিংগার হয়ে ভাব দেখাস?

রাইনা অবাক হয়ে গেল আফির ব্যবহারে। এতগুলো লোকের সামনে এসব কি বলছে আফি?
রেহান আফির কথা কানে নিল না। সে মনে করে তার বাবার মাথায় কোনো সমস্যা আছে। সারাক্ষণ তার পেছনে পড়ে থাকে। আবার ডেকে বলে, এই ব্যাটা তোর প্যানপ্যান মার্কা গান শোনা তো। দেখি কেমন প্যানপ্যান করতে পারিস?

রেহান তাই কিছু মনে করেনা আফির কথায় । সে কামালকে বলল,
‘ আমি সোজা বাসা ফিরব। অন্যদিন গান গাইব। আমি টায়ার্ড।
কামাল মাথা নেড়ে বলল, ঠিকআছে। কিন্তু যাদের আলব্যাম বের হয়েছে এটলিস্ট তাদের সাথে পরিচয় পর্বটা সেড়ে নিলে ভালো হতো না?
রেহান বিরক্ত হলে ও তা উপরে দেখালো না। বলল, ইটস ওকে। চলুন।
রেহান লোকজন উপেক্ষা করে হাঁটতে হাঁটতে থমকে গেল। ঠোঁটে আপনাআপনি হাসি ফুটে উঠল। সে দৌড়ে গেল। রাইনা আর আফি অবাক হয়ে দেখল,ছেলের কান্ড।

আদি আর ইশা যেন বিষম খেল। হঠাৎই মনটা ভালো হয়ে গেল তাদের রেহানের মুখ দেখে। কত বড় হয়ে গেছে ছেলেটা। আর দেখতে একদম বিদেশি ছেলেদের মতো। কিন্তু ছেলে তো তাদের। সেই সহজ সরল হাসি। রেহান ঝাপটে জড়িয়ে ধরল আদিকে। ডাকল, চাচ্চু. মিস ইউ। মিস ইউ এ লট।

আদি পিঠে চাপড় মেরে বলল,

‘ সাবাশ রেহান। তোমাকে তো আমি চিনতেই পারছিনা। ভিডিও কলে একরকম দেখায়। সামনাসামনি অন্যরকম।

রেহান হেসে দিল। ইশাকে সালাম করে জড়িয়ে ধরল। বলল, কাকিয়া তোমার সাথে অনেক কথা জমে আছে।

ইশা রেহানের মুখ ছুঁয়ে বলল, আজ সারাদিন তোমার কথা শুনব। আগে বাসায় ফিরি?

ছোট্ট পিহু দৌড়ে আসল। ফোন দিয়ে সেলপি তেলার মত করে ধরে বলল,

‘ হেই হ্যান্ডসাম, টেক এ ওয়ান সেলপি প্লিজ??

রেহান চিনল না পিহুকে। আদি বলল, তোমার বোন, পিহু। চিনতে পেরেছ?

রেহান ঠোঁট এলিয়ে হাসল। বলল, এই প্রথম দেখছি। ছবিতে দেখেছিলাম। তখন খুব ছোট্ট ছিল। এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। কার মতো হয়েছে??
আদি হেসে বলেই দিল, ওর দিদিয়ার মতো।
রেহান হঠাৎই থেমে গেল। তাকে ডাকল কামাল। বলল, ওদিকে যেতে হবে মিঃ চৌধুরী।

রেহান যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরল। কিছুদূর গিয়ে আবার ছুটে এল ইশার কাছে। বলল,

‘ কাকিয়া কোথায় সে? তার আলব্যাম বের হয়নি?

ইশার মুখ মলিন হয়ে এল। সে তাকালো অনেক দূরে। মেয়েটি এদিকেই তাকানো ছিল। ইশা তাকানোর সাথে চোখ ফিরিয়ে নিল। ইশা কিচ্ছু বলল না।
রেহান ব্যস্ত হয়ে পড়ল অটোগ্রাফ দিতে। দূরে দাঁড়ানো মেয়েটি সে দৃশ্য দেখে ফুঁসতে লাগল। এই তাহলে সেই ছেলেটি? যে তার সবচাইতে বড় কম্পিটিটর। আর সেই ছেলেটিকে আদি চৌধুরী আর ইশা চৌধুরী আশীর্বাদ দিচ্ছে? হেসে হেসে কথা বলছে? এখন একটা বাইরের ছেলে তাদের কাছে বেশি হয়ে গেল? কোথাকার না কোথাকার একটা ছেলে?
পরী ধপ করে বসল একটি বেঞ্চে। ছেলেটি আসার সাথে সাথে সবাই হামলে পড়েছে তার উপর। যেন কোথাকার বাদশা? যত্রসব।

পরীর বন্ধুবান্ধবরা আসল। বলল, আবরার চৌধুরীর সাথে পরিচিত হতে তোকে ডাকছে। পরী হাত ঝেড়ে নিল তার। বলল, এত পরিচিত টরিচিত হওয়ার কি আছে। আমি গিয়ে দেখে আসি, কতবড় সিংগার এসেছেন। পা পড়ল কেমনে এই দেশের মাটিতে। কেউ একজন বলল, ওনার বাড়ি এখানেই। বাংলাদেশে।
পরী মুখ মোঁচরাল। পা বাড়াল সেদিকে। ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে অটোগ্রাফ দিতে দিতে একপ্রকার ক্লান্ত হয়ে পড়ল রেহান। এজন্যই সে আসতে চায়নি। কিন্তু এখন মহা ঝামেলায় পড়ল। ভীড় হালকা হতে লাগল। দুইজন লোক এসে ছেলেমেয়েগুলোকে সরানোর চেষ্টা করল। সে হালকা হওয়া পথ ধরে এগিয়ে আসল একটি মেয়ে। একদম রেহানের সামনাসামনি এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, অটোগ্রাফ প্লিজ…..
রেহান চোখ তুলে তাকাল। কপাল বেয়ে এই প্রথম তার এভাবে ঘাম ঝড়ল। প্রচুর গরম এখানে। উফফ। সে পকেটে হাত দিয়ে মেয়েটির দিকে তাকানো অবস্থায় টিস্যু নিল পকেট থেকে। মেয়েটি খেয়াল করল টিস্যুর সাথে সাথে পড়ে গেল একটি ছবি। সে নিচু হয়ে তুলল সেই ছবিটি। দেখার আগ্রহ না দেখিয়ে বাড়িয়ে দিল রেহানের দিকে। রেহান চট করে সেই ছবিটি কেড়ে নিল। বলল,

‘ এক্সকিউজ মি… থ্যাংকস।

পরী ঠোঁট বেকিয়ে হাসল। বলল, মাই প্লেজার। দেন অটোগ্রাফ নাউ।

রেহান অবাক হয়ে হাসল। বলল,

‘ হাতে??

পরী মাথা দুলাল। রেহান লিখতে লাগল। পরী হাত নাড়াতে লাগল। রেহান পরীর হাত ছুঁতে অস্বস্তি বোধ করল। তাই সেভাবেই কোনোমতে এবড়োতেবড়ো ভাবে লিখে দিল।
পরী তার হাতের লিখা দেখে হো হো করে হেসে উঠল। ব্যঙ্গ করে বলল,

‘ বাহ নাইস হ্যান্ডরাইটিং।

তার দেখাদেখি কয়েকজন ও একসাথে হেসে উঠল হো হো করে। শান্ত স্বভাবের রেহান এসব গায়ে মাখল না। তার হাত বাড়িয়ে দিল পরীর সামনে। পরী জিজ্ঞেস করল, কি চাই??

রেহান হেসে বলল, অটোগ্রাফ?

পরী ভ্রু কুঞ্চন করল। বুঝতে পারল রেহানের চাল। সে হেসে দিল। বলল, আমি যাকে তাকে অটোগ্রাফ দেইনা সরি।

রেহান হাসল। লোকসমাগমের মাঝে হাত টেনে ধরল পরীর। কলম ধরিয়ে দিল। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

‘ ইফ ইউ ডোন্ট রিকোগনাইজ মি, আই ক্যান রিকোগনাইজ ইউ। ডোন্ট ইউ রিকোগনাইজ মি পরী???
আ’ ইম রেহান। উইল ইউ গিভ অটোগ্রাফ নাউ? প্লিজ।

পরী তার হাত সরিয়ে দিল। কলম হাতে নিয়ে আন্দাজে রেহানের হাতে অটোগ্রাফ দিয়ে রেহানের চোখে চোখ রেখে বলল,

‘ আই ডোন্ট কেয়া’র হু আর ইউ। জাস্ট কিপ ওয়ান থিং ইন মাইন্ড, ডোন্ট কাম টু কম্পিট উইথ দ্য পরী। উডনট বি নাইস। কিপ ইন মাইন্ড অলওয়েজ মিঃ চৌধুরী।

পরী রেহানের হাতে কলম ধরিয়ে হাঁটা ধরল। রেহান আবার ডাকল, পরীইইই…..

মেয়েটি পিছু ফিরে দেখল না। এই ছেলেটা চরম অসভ্য। যেভাবে ডাকছে মনে হচ্ছে কতকাল ধরে চেনে। ইডিয়ট।

চলবে,

অনেকের সিজন ২ ভালো না ও লাগতে পারে। স্কিপ করবেন, না হয় ১৮ পর্ব থেকে পড়বেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here