#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_১৫(সিজন ২)
#পুষ্পিতা_প্রিমা
মাহিদ আএলটিস পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরতে যাচ্ছিল। কাঁধে ব্যাগ, স্কুলের ইউনিফর্ম পড়া মেয়েটি ব্যাগের দুফিতা দুহাতের আঙুল দিয়ে ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে। তা ও নিচের দিকে তাকিয়ে। মাহিদ কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। তারপর হেলিয়ে দুলিয়ে সাইকেল চালিয়ে গেল মেয়েটির সামনে। মেয়েটি তারদিকে সাইকেল দ্রুত আসতে দেখে সরে গেল তাড়াতাড়ি। পরক্ষণে মাহিদকে দেখে চোখ কপালে উঠল। বলল,
‘ মাহিদ ভাই আজকে যদি সাইকেলটা আমার গায়ের উপর পড়ত তাহলে কেমন হতো?
মাহিদ হাসল। তবে আওয়াজ করে নয়। ধমক দিয়ে বলল
‘ চোপপ বেয়াদব। আমি কি তোর মতো কানা নাকি বাপ? ছোট্ট মাইয়া ছোট ছোট কইরা কথা কইবি। বুঝোস না ক্যান বাপ? আমি তোর কত বড় লাগি আমার সাথে কথা কইতে গেলে মাথা নিচু কইরা কথা কইবি। তুই এখনো ক্লাস নাইনে পড়স আর আমি কয়দিন পর ভার্সিটি যামু। তুই বেডি আমার মুখেমুখে কথা কস কিল্লাই??
পিহু সামনে ঝুলে থাকা একটি বেণি পেছনে ছুড়ে মারল। বলল, হুহহ তুমি বয়সে বড় হলে কি হবে আক্কেল আমার চাইতে ও কম। সারাক্ষণ বউ বউ করলে কি হবে? তুমি বউ মানে বুঝো? প্রেম মানে বুঝো?
মাহিদ চোখ উল্টে তাকাল। বলল,
‘ ও মারেম্মা! না না না আমি বুঝিনা। সব তুই বুঝস। তুই তো একেবারে লাইলী। সব বুঝস। তো তোর মজনু কোথায়? সে কি মইরা গেছে? তোর মতো সুন্দ্রী পুঁটিমাছের মতো বউ ফেলাইয়া সে কি সানি লিওনরে লয় পালাইছে? তুই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরস ক্যান??
খালে বিলে গিয়া মর না বাপ। পুঁটিমাছ সেখানেই থাকে। কোনদিন আমার পায়ের তলায় পইড়া ফুসস কইরা তোর পেট গইলা যায়। কওন যায়?
পিহু নাকমুখ কুঁচকে ফেলল। বলল,
‘ ছিঃ ছিঃ কি ভাষা তোমার? বমি আসে আমার।
মাহিদ পিহুর ঘাড় চেপে ধরল একহাত দিয়ে। বলল,
‘ কর বমি কর। কর। আজ বমি না করলে মাইর। তুই বাপ আজ শেষ । ফিনিশ।
পিহু বলল,
‘ মাহিদ ভাই আমি ব্যাথা পাচ্ছি। ছাড়ো। মাহিদ ভাই!!!
মাহিদ অনেক্ষণ পর ছাড়ল। বলল,
‘ সাইকেলের পেছনে উইটা বস। তোরে আজ ঘরে নিয়া যামু। বুড়ি নিয়া যাইতে কইছে। তার নাতনির লগে নাকি মন পুড়ে। কলিজা জ্বলে। চল। জল ঢাইলা দিয়া আয় বুড়ির কলিজায়। চল।
পিহু বলল, বাসায় ছোট মামা আছে???
থাকলে যাব নইলে যাব না। তুমি আমাকে মেরে ভূত বানিয়ে ফেলবে।
মাহিদ মাথায় এক হাত দিল। বলল,
‘ ওরেব্বাপ তোরে ভূত বানাইতে যামু কিল্লাই। তুই ভূত হইয়া গেলে আমারই লস বাপ। তুই আমার ঘাড় মটকাইতে আসবি ভূত হইয়া গেলে। তোরে মারুম না আদর করুম। চল। ওঠ। সাইকেলে ওঠ বাপ।
পিহুর লজ্জা পেল। এই বেয়াদবটার মুখে কোনোকিছু আটকায় না। আদর করুম মানে কি??
বেয়াদব।
মাহিদ বলল,
‘ ওই তুই তোর নাক বাপেরে এত ঢলতাছস ক্যান? হেতেই আবার কি করছে? ঢইলা ঢইলা লাল বানায় ফেলতাছোস কিল্লাই??
পিহু সাইকেলে ক্যারিতে উঠে বসে বলল,
‘ ফালতু কথা বলবে না। নাক আবার বাপ হতে পারে নাকি? তোমার কাছে যত অযৌক্তিক কথা।
মাহিদ তার মাথায় চাটি মারল। বলল,
‘ হেইই চুপ বেডি। ফটরফটর করবি না। তুই বাপ প্রমোশন পাইলে চাঁদে উঠতে চাস।
মাহিদ বলল, নাইমা পড়। আমি সাইকেলে উঠি।
পিহু নেমে পড়ল। মাহিদ সাইকেলে উঠে বলল,’ খবরদার ভালাই ভালাই বসবি। আমার শার্ট ধরে টানাটানি করবি না বাপ। যদি করস তাইলে লাত্তি দিয়া ফেলাইয়া দিমু কইলাম।
পিহু আওয়াজ ছাড়া মুখ ভাঙাল। মিনমিন করে বলল, একটু ভালো করে ও কথা বলেনা। সেই তাকে নাকি আমি,,,ধ্যাত। পিহুর বাচ্চি পিহু আর মানুষ পাইলি না?
মাহিদ বলল, এক চড়ে দাঁত সব ফালাইয়া দিমু। মিনমিন কইরা কথা কইবি না বাপ। তুই আমার মাথা গরম কইরা দেস ক্যান বাপ? সারাক্ষণ আমার মাইর খাইতে ইচ্ছা করে তোর?
মাহিদ সাইকেল ছেড়ে দিল। ইচ্ছেকরে এলোমেলো সাইকেল চালাতে লাগল। পিহু ভয়ে তার শার্ট আঁকড়ে ধরে বলল,
‘ মাহিদ ভাই একটু আস্তে চালাও না। আমার ভয় করে না?
মাহিদ হা হু করে হাসল। বলল,
‘ হিরোরা এভাবেই সাইকেল চালায় বাপ। বুঝোস না ক্যান?
পিহু বলল, আমাকে নামায় দেও। আমি ঢ়াব না তোমার সাথে। নামায় দাও না?
মাহিদ সাইকেল একটু আস্তে চালাল। বলল,
‘ শালার বাচ্চি। তোরে লাত্তি দিয়া ফেলায় দিতে ইচ্ছা করতাছে।
পিহু এতক্ষণ পর চোখ খুলল। ইচ্ছেকরে মাহিদের মাহিদের শার্টের কলার টেনে ধরল। গাইল,
‘ এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?
মাহিদ রেগে গেল। বলল,
‘ তুই কহ বাপ। হাট্টামার্কা গান করবি না বাপ। রাগ উঠে আমার।
পিহু হাসল। এই ছেলেটাকে রাগিয়ে দিতে তার ভালো লাগে। খুব বেশি বেশি লাগে। পিহু নাক ঘষে দিল মাহিদের পিঠে। মাহিদ চিল্লিয়ে উঠল।
‘ ওরেব্বাপ তুই আমারে মাইরা ফেলতাছোস বাপ। আমি মইরা যাইতাছি।
পিহু মিটিমিটি হাসল। দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। মাহিদের পিঠে মাথা রেখে বলল,
‘ মাহিদ ভাই আমার হাত তোমার পেটের কাছে। গালি দিলে কিন্তু সুড়সুড়ি দেব। চুপচাপ সাইকেল চালাও।
মাহিদ বলল,
‘ খবরদার সুড়সুড়ি দিলে তোরে আজ আমি কবরে পাঠামু শালী। সুড়সুড়ি দিবিনা।
পিহু তাকে আর ও জোরে চেপে ধরে পিঠে নাক ঘষতে ঘষতে বলল,
‘ একশবার দেব। হাজার বার দেব। তুমি কিতা করবে ইয়ের বাপ?
মাহিদ কিছুদূর গিয়ে সাইকেল থামিয়ে দিল। পিহুকে নামিয়ে দিয়ে বলল
‘ তুই বাপ এবার কোথায় যাবি যাহ। তোরে আজ ঘরে নিয়া যামু নাহ।
পিহু হো হো করে হেসে উঠল। বলল,
‘ আমি একা একাই যেতে পারব এবার। আর বেশিদূর নেই। ইউ গো। গো। গো।
মাহিদ রেগে সাইকেল চালিয়ে চালিয়ে চলে গেল। পিহু হাসতে হাসতে সেখানে বসে পড়ল। বলল,
‘ আমি আমার শ্বশুরবাড়ি চিনি গো চিনি। একা একাই যাইতে পারিব।
__________
পিহু হেলিয়ে দুলিয়ে পিঠের ব্যাগ নেড়ে নেড়ে আসল। রিপ তাকে দেখে হাত দিয়ে ইশারায় ডাকল। পিহু দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল। রিপ হেসে বলল,
‘ কিভাবে এসেছ তুমি? একা একা?
পিহু বলল, না। মাহিদ ভাইয়ের সাথে এসেছি। কিছুদূরে আমাকে নামিয়ে দিল। তার নাকি শক্তি শেষ। আমাকে আর টানতে পারছেনা।
মাহিদ এল। রিপের সামনে কিছু বলল না। পিহু তাকে চোখ মেরে দিল। লাফিয়ে লাফিয়ে ডুকে পড়ল বাড়িতে। নীরা আর মুনা তাকে দেখে এগিয়ে এল। নীরা বলল,
‘ ইশার বাচ্চি আইছে। মাইয়্যাটা পুরা বোনের কার্বন কপি।
মুনা বলল, তোর বর বাইরে আছে। শুনলে তোর ঘাড় মটকাবে। ছেলেটা ও তোর কাছ থেকে এসব শিখছে।
নীরা বলল,
‘ একদম না। আমি মাহির কাছ থেকে শিখছি। আমার ভালালাগে ওর কথাগুলো আহা আমার বাচ্চাটা কত সুন্দর করে কথা বলে।
পিহু বলল, আমার ও ভালোলাগে।
পরক্ষণে জিভে কামর দিয়ে ফেলল। মুনা বলল
‘ তুমি না বলো, মাহিদ ভাই সুন্দর করে কথা বলো। তোমার কথা শুনলে বমি পায়। এটা ওটা। আবার এখন বলছো ভালোলাগে?
নীরা পিহুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ আমি আমার দলের একটা পাই গেছি। আমার দল একটু ভারী হইছে।
রিপ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল মাহিদের দিকে। গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ল,
‘ কোচিং কেমন হচ্ছে। মন দিয়ে পড়ছিসস তো?
মাহিদ মলিন চেহারায় মাথা নাড়াল। বাবার উপর তার চাপা রাগ। রিপ তার কাছে এগিয়ে এল। মাথায় হাত দিয়ে বলল,
‘ শোন আমি সবসময় তোর ভালো চাই। সবকিছু এখন তোর উপর ডিপেন্ড করছে। ভালো করে পড়।
মাহিদ চুপচাপ মাথা নাড়াল। ঘরে ডুকে পড়ল। পিহুকে নীরার বুকে দেখে জ্বলে উঠল। দৌড়ে গিয়ে পিহুকে টেনে নীরাকে সে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ আমার মায়ের কাছে তুই কি ডাক্তারের বাচ্চি? লজ্জা করেনা?
পিহু মন খারাপ করে ফেলল। মুনা জড়িয়ে ধরল পিহুকে। বলল, মন খারাপ করেনা।
মাহিদ পিহুকে টেনে সরিয়ে আবার মুনাকে জড়িয়ে ধরল। বলল,
‘ বড়মা আদর করার লাইগা আমি আছি না? আমারে ছাইড়া বাইরের একটা মেয়েকে তুমি আদর করতাছো। আমার রাগ লাগে।
পিহু মন খারাপ করে ফেলল। দরজা পেরিয়ে রিপ ঘরে ডুকল। পিহু দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। বলল,
‘ আমার মামা আছে। আর কাউকে লাগবে না। ইউ গো। গো।
মাহিদ এগোলো না। মুনা বলল,
‘ এতবড় হয়েছিস। তোর বাচ্চামো এখনো গেল না মাহি। আর কতদিন এরকম থাকবি?
মাহিদ বলল, চুপচাপ দাঁড়ায় থাকো। ফটরফটর কইরোনা তো। দাড়ি রাখছি বইলা কি বড় হইয়া গেছি।
মুনা বলল, না না। তুই বাচ্চাই থাকবি। বড় কখনোই হবিনা। বাচ্চাকাচ্চার বাপ হলেও না।
__________________
দুপুরের খাওয়ার সময় পিহুকে সবাই ডাকল। পিহু এল না। মাহিদ খাবার টেবিল থেকে উঠে পিহুর ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল,
‘ ওই আরিশের বাচ্চা কোথায় তুই?
পিহু মাত্রই গোসল সেরে বেরিয়েছে। ভেজা চুল গুলো মুছে তোয়ালে শুকাতে দিয়ে তাড়াতাড়ি আসার সময় মাহিদের সাথে দেখা। মাহিদ বলল,
‘ বাপ খাওয়ার আগে তোর ময়দা মাখন লাগে ক্যান বাপ?
পিহু তার কথারর জবাব না দিয়ে বলল,
‘ মাহিদ ভাই দেখোতো আমাকে সুন্দর টুন্দর লাগছে কিনা? পাপা বলে কালো ড্রেসে নাকি আমাকে সুন্দর লাগে।
মাহিদ নিজের দিকে মাথা নিচু করে তাকাল। বলল,
‘ ওরেব্বাপ তুই আমার সাথে মিলাইয়া ড্রেস পড়ছস কিল্লাই? কালো শার্টে আমারে দেখতে হিরোর মতো লাগে। ব্যারিস্টারেরর বউ কয়।
পিহু বলল, হ তুমি তো হিরোর মতো। হিরো নও।
মাহিদ ঠাসসস করে মারল। শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বলল,
‘ আমি সবসময় সুন্দর। তোর মতো আটাময়দা মাখিনা বাপ।
পিহু বলল, তোমার মাথা। তোমার চাইতে আমি বেশি সুন্দর।
মাহিদ রেগে গেল।
‘ ওরেব্বাপ তুই কি ব্যাডা নাকি? আমার সাথে ক্যান পাল্লা লাগাইতে আসোস বাপ?যাহ তুই সুন্দর। তোর বাপ ও সুন্দর। তোর বাপের চৌদ্দ গুষ্ঠি ও সুন্দর। তাদের চৌদ্দগুষ্ঠির চৌদ্দগুষ্ঠি ও সুন্দর।
পিহু হাসল। বলল, মাহিদ ভাই ঠাংকু।
মাহিদ নাক ছিটকাল। বলল,
‘ ইয়াকক। ঠাংকু কি বাপ? তোর হাট্টামার্কা কথা শুনলে আমার বমি পায়।
পিহু বলল,
‘ বমি কতদিন ধরে পায়? পাপাকে বলব? আইমিন কয়মাস চলছে?
মাহিদ কিছু বুঝল না। বলল,
‘ ওরেব্বাপ তোর কথা আমি কিছু বুঝিনা বাপ। কয়মাস চলতাছে মানে কি?
পিহু বলল,
‘ ধুরর তুমি কিছু বুঝবা না বাপ। বুঝাইয়া লাভ নাই।
মাহিদ পিহুর পিছু পিছু গেল। নীরা আর মুনা সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। রিক পিহুকে বলল,
‘ আসো মামার পাশে বসো।
মাহিদ নীরাকে বলল,
‘ মা আরিশ্শে কি বলে দেখো। জিজ্ঞেস করছে কয়মাস চলছে?
রিপ আর রিক কিছু বুঝল না। মুনা বলল, কয়মাস মানে?
পিহু জিভে কামর দিল।
মাহিদ বলল
‘ আমি কি জানি?
রিপ বলল, খাওয়ার সময় কোনোকথা নেই মাহি।
মাহিদ চুপ করে গেল। পিহু মিটিমিটি হাসল। খেতে মাহিদকে মুখ ভাঙাল। রিপ থাকায় মাহিদ কিছু বলতে পারল না। পিহু তাকে চোখ টিপল। মাহিদ রাগল। ফুঁসল। কিন্তু ভাতের সাথে সাথে সব হজম করল। পিহু মিটিমিটি হাসল। মাহিদকে জিহ্বা দেখিয়ে দিল। মাহিদ কোনোমতে ভাত খেয়ে সোফার উপর পা তুলে শুয়ে পড়ল । নীরা বলল,
‘ এত কম খেলি কেন আব্বা? এত কম খেলে তো অসুস্থ হয়ে যাবি। তোকে আর হিরোর মতো দেখাবেনা। সুন্দর চেহারাটা সরু হয়ে যাবে। রং ফ্যাকাশে হয়ে যাবে।
রিপ বিরক্তি প্রকাশ করল। ‘ চুপ থাকো নীরা। কাল থেকে মাহিকে আগে আগে খাইয়ে দেবে অথবা পিহুকে। দুজনকে একসাথে বসিয়ে খাওয়াবে না। কেই খেতে পারল না ভালো করে।
নীরা তাকাল পিহুর প্লেটের দিকে। বলল,ওমা! কি হলো এটা! তুমি এখনো এক লোকমা ভাত ও মনে হয় মুখে দাওনি পিহুসোনা? কি হয়েছে? ইশা কি তোমাকে এখনো খাইয়ে দেয়?
পিহু মাথা নাড়ল। রিপ বলল,তুমি ওর হাত ধুয়ে দাও। আমি খাইয়ে দেই।
পিহু রিপের হাতে খেল। খেতে খেতে সোফায় পড়ে থাকা মাহিদের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল। মাহিদ চোখ বন্ধ করে থাকল। রিপ পিহুকে বলল,
‘ মাইর গুলো কি খুব মিষ্টি নাকি?
পিহু রিপের কথায় লজ্জা পেয়ে গেল। ধ্যাত ছোট মামা সব ধরে ফেলে। চোখ কি তিনটা আছে নাকি?
_____________
পরী ইশাকে ডাকল। আমমা আমি কি আর স্কুলে পড়াতে যাব না?
ইশা এসে বলল,
‘ বাচ্চা ছেলে পড়ানো তো ঝামেলা। তোমার ইচ্ছা।
পরী বলল, আমি যাব।
ইশা বলল, যাও, আমাকে বলার কি আছে।
পরী বলল, উহু, ওই ছেলেটা যদি কিছু বলে? আমার ভয় করে।
পরী বলল, তুমি বলে যাবে। বলে গেলে কিছু হবেনা। না বললে একটু রেগে যাবে এই আর কি।
পরী বলল, আমি তার সাথে কথা বলিনা।
ইশা বলল, বলতে হবে। যেকোনো একজনকে তো বলতে হবে। যাও তুমি গিয়ে জিজ্ঞেস করে এসো। যাও।
পরী যেতে চাইল না। ইশা ঠেলে পাঠাল। পরী ভয়ে ভয়ে গেল। রুমের কাছাকাছি গিয়ে উঁকি দিল রুমের ভেতর। রেহান তখন অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে। অডিশনে ও যাওয়ার কথা ছিল। পরী আবার ইশার কাছে চলে এল। বলল,
‘ আমমা আমি বলব না কিছু। আমার ভয় করে। যদি ধমক দেই। আমার ভালোলাগেনা ধমকাধমকি।
ইশা বলল,
‘ না, তুমি বললে আর ও রাগবে। আমিই যাই।
ইশা হাসল। বলল, যাও। বাঘ তো নয় তোমার বর। নেআন বর।
পরী হাসল। বলল, আমমা বকলে আমি কি করব?
ইশা মাথায় হাত দিল। বলল
‘ বকলে তুমি ও বকে দেবে। কথা বলতে না চাইলে জোর করে কথা বলবে। আমি এরচাইতে বেশি কিছু বলতে পারব না।
পরী বলল,
‘ আমি তো জানিনা বরের সাথে কেমন বিহেভ করতে হয়। কি বলে ডাকতে হয়। তুমি তো ডক্টর ডাকো পাপাকে। আমি কি ডাকব? আমমা আমি পিহুর মতো দাভাই ডাকি? আমার ও তো দাভাই। ডাকি?
ইশা বিরক্ত হয়ে বলল, ডাকো। যা ইচ্ছে তাই করো।
পরী দৌড়ে চলে গেল। রেহান বেরোনোর আগে ডাকল,
‘ দাভাই শুনছেন?
রেহান চমকাল। থমকাল। পিছু ফিরল না। পরী ডাকল,
‘ দাভাই আমি স্কুলে যাব।
রেহান এবার পিছু ফিরল।
পরী ভয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। বলল, স্কুলে বলতে পড়াতে যাব।
রেহান বলল, দাভাই কে?
পরী সোজা জবাব দিল, কেন আপনি?
রেহান বিরক্তি নিয়ে এদিকওদিক তাকাল। পরী বলল, আমমা বলেছে। যা ইচ্ছে তাই ডাকতে। তো আমি আপনাকে দাভাই ডাকছি। আপনার শুনতে কি খারাপ লাগছে? বরকে কিন্তু দাভাই ডাকা যায়। সমস্যা নেই। সম্বোধনে কিছু যায় আসেনা। আমি তো আপনাকে গালি দিচ্ছি না।
রেহান গর্জে বলল,
‘ একদম চুপ।
পরী ঠোঁটের উপর আঙুল দিয়ে রাখল। না বরকে কেন দাভাই ডাকবে? সে আর পিহু তো এক না। পিহু বোন আর সে বউ। এজন্য বোধহয় আর ও রেগে গেছে।
পরী বলল, দেখুন কি ডাকব সেটা আপনি বলে দিন না। তাহলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
রেহান বিরক্তিকর শব্দ উচ্চারণ করল। বলল,
‘ মাথা খারাপ করবে না পরী। আমি তোমার সাথে ডং করার মুডে নেই।
পরী বলল, ওহ আচ্ছা।
‘ আচ্ছা???
পরী বলল,
‘ না বলছি যে বুঝতে পেরেছি বরবাবু।
রেহান বলল,
‘ বরবাবু?
পরী বলল, তাতে ও রাগ? এটাই ডাকব। বরবাবু।
রেহান হাতের ঘড়ি পড়তে পড়তে বলল,
‘ স্কুলে যাওয়ার দরকার নেই। বউ চালানোর মতো পয়সা আমি কামাই।
পরী বলল, ওহ আচ্ছা।
‘ আবার আচ্ছা?
পরী বলল,
‘ না না মানে বুঝতে পেরেছি।
পরী হাত বাড়িয়ে দিল রেহানের দিকে। রেহানন পরীর হাতের দিকে তাকাল। পরী তার হাত দেখিয়ে দিল। রেহান বলল,
‘ কি? মেহেদি? ঠিক হয়েছে। ভালো লাগছে।
পরী দুপাশে মাথা নাড়ল। বলল,
‘ টাকা ।
রেহানের ভ্রুকুঞ্চন হলো।
‘ কি টাকা?
পরী বলল,
‘ ওই যে বললেন বউ চালাতে পারবেন। তাই হাত খরচের টাকা দিন। দিন দিন।
পরী অন্যদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে রাখল। রেহানের দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল। রেহান পকেটে হাত দিল। যা পেল তা পরীর হাতের উপর দিল। বলল, দিলাম।। পরী খুশি হয়ে গেল। আহ্লাদে চেঁচিয়ে উঠল। খুশিতে রেহানকে জড়িয়ে ধরতে গেল। আর সাথে সাথে আটকে গেল সেখানেই। আটকে গেল একদম। দুজনের দুজনের দিকে তাকিয়ে ফটাফট সরে গেল। পরী টাকাগুলো নিয়ে ইশার কাছে চলে গেল। ইশার হাতে দিয়ে বলল,
‘ আমমা এই নাও। ওই ছেলেটা এগুলো দিয়েছে। তোমার কাছে রাখো।
ইশা অবাক হলো।
‘ আমি কি করব? তুমি রেহানের কাছ থেকে টাকা নিয়েছ?
পরী বলল, হাত খরচের টাকা নিলাম আর কি?
ইশা বলল,’ তোমার টাকার কি দরকার এখন? তুমি ছেলেটাকে বড্ড জ্বালাচ্ছ পরী।
পরী হাসল। ফিসফিস করে বলল,
‘ জ্বালাতে জ্বালাতে মেরে ফেলব।
ইশা বলল, যাও ওর টিফিন দিয়ে এসো। তোমার আববা আর ওর জন্য টিফিন বানিয়েছি।
পরী বলল, আমি পারব না। তুমি যাও।
ইশা বলল,
‘ এগুলা বউদের কাজ। যাও।
পরী বলল, বরদের কাজ কি?
ইশা কপালে হাত দিল। পরীর দিকে চেয়ে রইল। এ মেয়েটা না তার ছোট্ট পরী? যে তাকে ইশআআ ডাকত। মাববো বলতো। সে আজ এ বাড়ির বউ। কত বড় হয়ে গিয়েছে মেয়েটা?
ইশাকে গভীর হয়ে ভাবতে দেখে পরী ডাকল, আমমমা?
ইশা বলল, ‘ হ্যা তুমি এখনো যাওনি?
পরী বলল, নাআআ। আমি গিয়ে তোমার বরকে টিফিন দিয়ে আসি। তুমি গিয়ে আমার বরকে টিফিন দিয়ে আসো।
ইশা ওর হাতে টিফিন বক্স ধরিয়ে দিল। বলল,যাও। তার হাতে দাও। বেশি কথা বলবে না পরী।
পরী গেল। বিরক্ত হলো আমমার প্রতি।
রেহানের হাতে টিফিন বক্স ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ নিন টিফিন। সময়মত খেয়ে নেবেন। আর? আর?
রেহান বলল, আর?
পরী বলল, ভুলে গেছি। দাঁড়ান আমমার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে আসি।
রেহান বলল, তার দরকার নেই। খাওয়ার পর হাত মুছে নিতে হবে সেটা কে না জানে? আমর অলরেডি টাইম ওভার হয়ে যাচ্ছে।
পরী মাথা নাড়িয়ে বলল, হ্যা হ্যা সেটাই করতে হবে। আপনি তো সবটা জানেন। তো আর আর করছিলেন কেন?
রেহান কিছু বলল না। পরীর সাথে কথা বলতে তার মন চাইল না। পাগল বউ তার। পরী কিছু একটা ভাবল। বলল,
‘ দাঁড়ান দাঁড়ান।
রেহান দাঁড়াল। পরী তার টাই ঠিক করে দিতে দিতে বলল,
‘ ছোটমা ছোটপাপাকে এভাবেই টাই ঠিক করে দিত দেখেছি। এগুলা নাকি বউয়ের কাজ। বরের কাজটা কি?
রেহান দুই পা পিছু সরাল। বলল,
‘ টাই তো আমি অলরেডি ঠিক করে নিয়েছি। তোমার তো দরকার নেই। পরীর মন খারাপ হলো। তার খ্যাঁকখ্যাঁক মার্কা বর। আগের বরটা ভালো ছিল।
রেহান বলল,
‘ পথ ছাড়ো আমি যাব।
পরী বলল সরলাম। সে সরে দাঁড়াল। রেহান এক পা এগোলো। পরী আবার ও সামনে চলে আসায় দুজনের মাথা একসাথে লাগল। নাকে নাক লাগল। রেহান বলল, হচ্ছেটা কি?
পরী বলল, কিছুই তো হয়নি।
রেহান বলল, পথ ছাড়ো। আমি যাব।
পরী পথ ছাড়ল। রেহান চলে গেল। পরী নিজের মাথায় চাটি মেরে বলল, পিহু থাকলে ভালো হতো। ও সব শিখিয়ে দিত। ধ্যাত আমি কিছুই জানিনা।
পিহুকে পেল মাহিদ ছাদে। উরুধুরা মেরে চলে গেল। কাল দুপুরে খাওয়ার সময় এভাবে মুখ ভাঙিয়েছে কেন? রাতে পিহুর গা কাঁপিয়ে জ্বর এল। নীরা আর মুনা চিন্তিত হয়ে পড়ল। রিক একদফা চেঁচাল মুনার উপর। রিপ এসে চেঁচাল নীরার উপর। মেয়েটা একদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে তারমধ্যেই জ্বর লাগিয়ে ফেলল কিভাবে?
মাহিদ সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরল। পিহুর কাছে গেল। নীরা বলল,কিভাবে মেরেছিস তুই। তোর বাপ জানলে মেরে ফেলবে। মাহিদ বলল, আমার কারণে ওর জ্বর উঠেছে?
তালহা বেগম এসে লাঠি দিয়ে গুতা মারল মাহিদকে। বলল,
‘ ওরে শয়তান এটা কি করলি? তার বাপ ডাক্তার যখন জানবে তুই ওকে মারার কারণে জ্বর চলে এসেছে এখানে তো আর কখনোই আসতেই দেবেনা।
সবাই ওকে বকে বকে চলে গেল। মাহিদ চুপ করে বসে থাকল। পিহু পাশ ফিরে শুয়ে থাকল। মাহিদ বলল, ওইই ওঠ। তোর লাইগ্যা সবাই বকতাছে বাপ। ওঠ। আমার হাতের মাইর খাইলে তোর জ্বর ক্যান হইবো?তুই জন্ম নিছস আমার হাতের মাইর খাওনের লাইগ্যা। ওঠ।
পিহু নড়েচড়ে উঠে বসল। মাহিদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। কোনোকথা বলল না। তারপর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। বলল,
‘ মাহিদ ভাই আমি তোমার কাছ থেকে একটা জিনিস চাইব। দেবে?
মাহিদ পিহুর কান্না দেখে ভড়কে গেল। মিনমিন করে বলল, কি???
পিহু বলল, ক্যালেন্ডার। যাতে সেই ক্যালেন্ডার কেউ না দেখতে পায়। আমি আমার সঙ্গে সঙ্গে রাখতে পারি। দেবে? আগামী কয়েক সালের একসাথে লাগবে।
মাহিদ তারপরের দিন পিহুকে ছোটসাইজের ক্যালেন্ডার এনে দিল। বলল, ধর তুই নৌকা বানা আমি চড়মু। জ্বর গায়ে পিহু খিলখিল সুরে হাসল। মাহিদ তার হাসি দেখে শান্তি পেল। তার মাথায় চাটি মেরে বলল,
‘ ডাক্তারের বাচ্চি আমারে মাইরা ফেললি বাপ। তুই মইরা গেলি না ক্যান? আমার মাইর তোরে আর ও খাইতে হইবো বাপ। তোর টাকাওয়ালা জামাই যতদিন তোরে শ্বশুরবাড়ি না নেয় ততদিন তুই শুধু আমার হাতে মাইর খাবি। তারপর তোরে বিয়া দিয়া দিমু। সেদিন তোরে আমি ছাইড়া দিমু। তোর টাকাওয়ালা জামাইরে কমু যাহ বাপ তোর বউয়েরে ভালা রাখ। ভালা রাখ। মারিস না বাপ। আমি অনেক মারছি।
পিহু আবার কাঁদল জোরে। মাহিদ ভয় পেয়ে গেল। পিহু কেঁদে কেঁদে বলল,
‘ মাহিদ ভাই তুমি কিছু বুঝোনা। তুমি একদম ছোট বাচ্চা। ছোটমামি তোমাকে ঠিকই বাচ্চা ডাকে। তুমি ললিপপ খাও। যাও।
মাহিদ ভ্রুকুঞ্চন করে তাকিয়ে থাকল। বলল,
‘ হেইই চুপ বেয়াদব। আমি ক্যান ললিপপ খামু বাপ। তুই খাহ। তোর টাকাওয়ালা জামাইর বাপেরে খাওয়া। যাহ।
পিহু কেঁদে কেঁদে রিপের কাছে গেল। বলল, আমি থাকব না এখানে চলে যাব। রিপ কিছু বলল না। শুধু পিহুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, কেঁদোনা আর।
পিহু ফিরে গেল তার বাড়ি। রিপ নিয়ে গেল। পিহু প্রথমেই আদিকে ঝাপটে ধরে কাঁদল। কাঁদতে কাঁদতে হিঁচকি উঠে গেল। রিপ বলল,
‘ কাল জ্বর উঠেছিল। এখন একটু কমেছে। শরীর খারাপ লাগছে তাই হয়ত কাঁদছে। ইশা অবিশ্বাস্য চোখে পিহুর কান্না দেখল। পিহু এভাবে কাঁদেনা কখনো। শান্তশিষ্ট হাসিখুশি পিহু চেঁচিয়ে কাঁদেনা কখনো। খুব কষ্ট পেলে ও কাঁদেনা। শরীরের ব্যাথা বেদনা তাকে আঘাত করতে পারেনা। তাহলে কি? কেন কাঁদছে পিহু?
আদি বলল, মা কেন কাঁদছে এভাবে? শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে। পিহু কাঁপাকাঁপা হাতে মাহিদের দেওয়া ক্যালেন্ডারটি তুলে ধরল আদির সামনে। আবার ঝরঝর করে কেঁদে দিল। আদি ইশা কিছুই বুঝতে না পারলে ও রিপ ঠিকই বুঝতে পারল। রিপ বলল,
‘ ইশু আমি আসি। সবাই ভালো থাকিস।
ইশা বলল, যেতে পারবেনা রিপদা। রাতে খেয়ে যাবে। আমি তোমার জন্য তোমার পছন্দের রান্না করব। প্লিজ রিপদা যেওনা।
রিপ কিছুক্ষণ ভাবল। অনেকক্ষণ সময় নিয়ে বলল, আচ্ছা।
__________________
মাহিদের এডমিশন টেস্টের রেজাল্ট দিল। বেশ কয়েকটা ভার্সিটিতে সে চান্স পেল। এদিকে আইএলটিএস পরীক্ষার রেজাল্ট ও চলে এল। মাহিদ সাইকেল চালিয়ে দ্রুত বাসায় ফিরল। বাবার মুখ খুশির সংবাদ শোনার আকুলতা কেটে গেল মুহূর্তে মায়ের ছলছলে চোখ দেখে। রিপ তার দিকে বাড়িয়ে দিল পাসপোর্ট। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ যাহ তোর ব্যারিস্টার বাপের মুখ উজ্জ্বল করে আয়। আইএলটিএস এ এইট পয়েন্ট পেয়েছিস তুই। যাহ তুই আজ থেকে স্বাধীন। ঘুরে আয় ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি থেকে। এবার লড়াইটা তোর একার। তোর মা থাকবেনা সেখানে। ব্যারিস্টার বাপকে ও পাবিনা আর।
রিপ তাড়াহুড়ো করে কেটে পড়ল সেখান থেকে হয়ত ভিজে উঠা চোখদুটো লুকোতে। কি করে থাকবে এতগুলো বছর ওই ভালোবাসাময় মুখটা না দেখে? ব্যারিস্টার বাপ ডাকটি ও যে একটি ভালোবাসা।
মাহিদ তাকিয়ে থাকল নীরার দিকে। তারপর পরই বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। আজ নিজের দেশ আর দেশের মানুষগুলোকে তার আপন মানুষগুলোকে একটু ঘুরে দেখা যাক। সে খুব মিস করবে। সবাই কি মিস করবে মাহিকে? মাহি কি মিস করার মতো কেউ?
ইশা এসেই সুখবর শোনাল সবাইকে। মাহিদ কানাডায় পড়তে যাচ্ছে। পিহুর তখন বেঘোর জ্বর। জ্বর মাথায় নিয়ে সে কাঁপাকাঁপা পায়ে গিয়ে দাঁড়াল বারান্দায়। গ্রিলে মাথা এলিয়ে দিল। চাঁদের আলো আধারিতে দেখা গেল একটি ছেলে সাইকেলের উপর বসে রয়েছে আনমনা হয়ে। পিহুর গাল বেয়ে নিঃশব্দে জল গড়াল। সে বিড়বিড় করে ডাকল, মাহিদ ভাই আমাকে মনে রেখো।
মাহিদ অনেকক্ষণ বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেল। সবখানেই তো ঘুরে আসল। সবার সাথে দেখা করে আসল। চৌধুরী বাড়ি যাবেনা?
চৌধুরী বাড়িতে তো ফুপী আছে। দিদিয়া আছে। সে চলে যাবে অথচ ফুপীর সাথে দিদিয়ার সাথে দেখা করবে না? না ফুপী আর দিদিয়া তো কালই যাবে তাকে বিদায় দিতে। আর যাওয়ার দরকার নেই।
মাহিদের মন তারপর ও ভেবে কূল পেলনা। বারবার যেন মনে হলো,
‘ কেউ একজন খুব অগোচরে থেকে গেল। কেউ একজনকে বলা হলোনা। কে সে?
মাহিদ সাইকেল চালিয়ে চলে গেল। পিহু গ্রিল ঘেঁষে ঘেঁষে নিচে বসে পড়ল। দুহাতের মুঠোয় নিল মাথার চুল। আবার ও অস্ফুটস্বরে মুখ দিয়ে বের হয়ে এল,
‘ মাহিদ ভাই যেওনা। আমি খুব একা হয়ে যাচ্ছি। আমার সাথে ঝগড়া করার ও কেউ থাকছেনা। আমি তোমার মারগুলোকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে ভালোবাসি মাহিদ ভাই। আমাকে ভুলে যেওনা। যেওনা।
চলবে,,