মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_২২(সিজন ২)

0
653

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_২২(সিজন ২)
#পুষ্পিতা_প্রিমা

পিহু তাড়াতাড়ি সরে গেল। সিড়ি বেয়ে উঠার সময় রাহি ডাক দিল,
‘ পিহু চলে যাচ্ছে কেন? পিহু আমার সাথে কুথা বুলে না কেন? মিহির সাথে কথা বুলেনা কেন? পিহু পুঁচা কেন?
পিহু উপরে উঠে গেল৷ রাইনা মাহিদকে বলল,
‘ মাহিদ আজকে থেকে যেতে হবে।
মাহিদ মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ থাকা যাবেনা বড় আন্টি৷ আমার এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত পড়েছে সেখানে যেতে হবে। আমি পরে আসব।
ইশা বলল,
‘ রাতে এখানে চলে আসবি। আমি নীরাকে বলে রাখব৷
মাহিদ বলল,
‘ ধুর আমি এইখানে কি করুম বাপ? বুঝোনা ক্যান?
রাহি বলল,
‘ মিহি আমি যাব না কেন?
মাহিদ বলল,
‘ কোথায় যাবি বাপ?
‘ তুমার সাথে যাব না কেন?
মাহিদ হাসল৷ বলল,
‘ সোজাসাপটা বলতে পারস না। এত কেন কেন কস ক্যান বাপ?
রাহি দাঁত দেখিয়ে হাসল৷ বলল,
‘ মিহি দুষ্টু কেন বাপ? মিহি ছিকুকে বাপ ডাকে কেন? ছিকু বাপ কেন?।
মাহিদ হা হু করে হাসল। রাহির পেটে আঙুল দিয়ে গুতা মেরে বলল,
‘ তুই বাপ তাই বাপ ডাকি। তুই বাপ না?
রাহি তার ছোট্ট আঙুল দিয়ে মাহিদের পেটে গুতা দেওয়ার চেষ্টা করল পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে৷ যখন মাহিদকে ছুঁতে পারল না। মুখ কালো করে বলল,
‘ মিহি বড় কেন? ছিকু ছোট কেন?
রাইনা হাসল৷ রাহিকে কোলে তুলে ছোট্ট নাকটার ডগায় চুমু দিয়ে বলল,
‘ ছিকু বাচ্চা তাই।
ছিকু বলল,
‘ ছিকু মিহির মতো বড় হয়না কেন?
মাহিদ মাথায় হাত দিল। বলল,
‘ তোর কেন কেন শুনতে গিয়া আমার মাথা নষ্ট হইয়া যাইতাছে বাপ। আমি যাই।
ছিকু কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,
‘ মিহি চলে যায় কেন? ছিকুর রাগ লাগে কেন?
মাহিদ হাসল। ছিকুকে রাইনার কোল থেকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়৷ বলে,
‘ আয় আজ বাইক চালানো শিখামু তোরে।
রাহি খিলখিল করে হাসল। বলল,
‘ বাইক শিখব কেন?
মাহিদ রাহিকে ঘাড়ে তুলল। বলল,
‘ বউ চড়ানোর জন্য।
রাহি হাসল।
‘ বউ। বউ। রাহির বউ নাই কেন? মিহির বউ নাই কেন?
মাহিদ পেটে চেপে হাসল। বলল,
‘ ধুর ব্যাটা আমি বউ দিয়া কি করুম৷ বউ তোর লাগবো৷ তুই তোর মারে জ্বালাই খাস৷ তোরে গোসল করাইতে হয়, খাওয়াইতে হয়। ওগুলা তোর বউ করবে। তাই তোর বউ লাগবো। বুঝোস না ক্যান বাপ?
ছিকু বলল,
‘ ছিকু বুঝেনা কেন? ছিকু ছোট কেন ?
মাহিদ হাসতে হাসতে তাকে নিয়ে গেল বাইকের কাছে৷ বাইকের সামনে বসিয়ে দিল। রাহি বাইকের হ্যান্ডেল ধরে বলল,
‘ ভুউউউউউ ফিপফিপ।
মাহিদের পিছু পিছু রেহান চলে আসল। রাহি রেহানকে দেখে ডাকল,
‘ পাপা ফিপফিপ ফিপফিপ।
রেহান বলল,
‘ পাইলট?
রাহি হাসল। বলল,
‘ প্লেন চলেনা কেন? ফিপফিপ। ফিপফিপ।
রেহান আর মাহিদ একসাথে হেসে উঠল।
রাহির রাগ লাগল। বলল,
‘ সবাই হাসে কেন? ছিকুর রাগ লাগে কেন?
মাহিদ বলল,
‘ তুই বাপ আমার পেট ব্যাথা কইরা ফালাইছোস। আমি হাসতে পারতাছিনা৷ সর নাম। আমি যামু৷
রাহি নামতে চাইল না৷ বলল,
‘ না আমি নামব কেন? মিহি এভাবে বকে কেন?
রেহান এসে রাহিকে কোলে নিয়ে নিল। বলল,
‘ মামা আসবে আবার। এখন আমরা বাসায় যায়।
রাহি দুহাতে চোখ কচলালো।
‘ মামার সাথে যাবো। ফিপফিপ যাবো। যাব না কেন? ছিকু যাবেনা কেন?
মাহিদ রাহির গালে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
‘ আমি আসব। যাব আর আসব৷ এক্ষুণি যাব এক্ষুণি আসব বাপ৷
রাহি মাথা কাত করে বলল,
‘ ছিকুর রাগ হয় কেন? ছিকুর কান্না পায় কেন?
মাহিদ হেসে বাইক স্টার্ট দিল। বাইকের সামনের মিররে দেখা গেল নীল সাদা ড্রেস পড়া একটি মেয়েকে। যতক্ষণ দেখা গেল মেয়েটিকে ততক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল সে৷ মাথা হেলিয়ে দুলিয়ে বলল,
‘ ডাক্তারের বাচ্চি কত্ত বড় হইয়া গেছে বাপ।

_________________

ইয়ারপোর্ট থেকে কাঙ্ক্ষিত যাত্রার উদ্দেশ্যে রওনা দিল জালিশা৷ বাংলাদেশের সবকিছুতে সে বিমোহিত। এটি তার মায়ের দেশ। বাবার ও। তার ও৷ মা বাবা বাংলাদেশে স্যাটেল হওয়ায় বাংলাদেশে আর ফেরা হয়নি৷ জালিশার খুশি দেখে তার মা হাসল। বলল,
‘ কেমন লাগছে বাংলাদেশ? কানাডা থেকে ও সুন্দর?
জালিশা কিছু একটা ভাবল। বলল,
‘ কানাডা তার মতো সুন্দর। বাংলাদেশ তার মতো সুন্দর। অল বিউটিফুল মাম্মাম।
জালিশার মা হাসল৷ গাড়ি আসায় তারা গাড়িতে উঠে বসল। জালিশা তাকালো গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বসে থাকা লোকটার দিকে৷ ডাকল,
‘ পাপা আর ইউ টায়ার্ড?
লোকটি উপরনিচ মাথা নাড়াল। জালিশা তার মায়ের কাঁধে মাথা রাখল৷ বলল,
‘ মাম্মাম তুমি ও? এতবছর দেশে ফিরে তোমার ভেতর কোনো এক্সাইটমেন্ট কাজ করছেনা?
জালিশার মা একটু হাসল। সিটে মাথায় এলিয়ে দিল, চোখের সামনে ভেসে উঠল স্মৃতির পাতায় ঢাকা পড়া কতশত গল্প। কতশত কাহিনী।
খুব পরিচিত নামটা, ভালোলাগার নামটি উচ্চারণ করল পাশে থাকা লোকটি।
‘ ইমি?
জালিশা খেয়াল করল মায়ের মুখ মলিন। সেই মলিন মুখে জিজ্ঞেস করল,
‘ বলুন৷
লোকটি হায় তুলতে তুলতে বলল,
‘ আর কতক্ষণ? আমি লম্বা একটা ঘুম দেব।
জালিশার মা হাসল। বলল,
‘ আর কিছুক্ষণ জাবির বাবু। এসে পড়েছি।
জালিশা কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল,
‘ মাম্মাম স্যার আমাকে খুব বকবে।
তার মা জিজ্ঞেস করল,
‘ কেন?
জালিশা বলল,
‘ স্যারের বাসায় ফোন দিয়েছি বলে।
তার মা হাসল৷ বলল,
‘ কিছু বলবে না। তোমার স্যার নিনিত ভাইয়ার বন্ধু। জানো?
জালিশা খুশি হলো বেশ৷ বলল, নিনিত ভাইয়ার সাথে কাল ও আমার হোয়াটস্যাপে প্রচন্ড ঝগড়া হয়েছে। নিনিত ভাইয়াকে বলেছি তার হবু বউয়ের ছবি দেখাতে। উনি দেখালই না৷ আজ গিয়ে কান মলে দেব।
জাবির মুখ খুলল। বলল,
‘ মাহিদ তোমাকে কান মলে দেবে৷ রেডি থাকো৷
জালিশা বলল,
‘ স্যারের বকা আমার ভালো লাগে৷
জাবির ভ্রু কুঞ্চন করে তাকালো।
‘ প্রেমে পড়েছ স্যারের?
জালিশা সাথে সাথে জিহ্বায় কামড় দিল।
‘ স্যারের? নো নো নো। ইয়ামপসিবল।
জাবির হেসে উঠল। সাথে জালিশা আর তার মা ও।

____________________

সোফার উপর বসেছে পিহু৷ তার কোলে ছিকু৷ ছিকুর কোলের উপর বই। আঙুল দিয়ে ধরে ধরে পড়ছে এ, বি, সি, ডি, অ, আ,ই,ঈ। ক,খ,গ,ঘ। মামমা, পাপা,ইশু,ডকতর,পিহু,মিহু।
পিহু ডাক দিল।
সুন্দর করে করে পড়ো। দুষ্টুমি না। মারবো৷
ছিকু হাত তুলে বলল,
‘ পিহুকে মারতে মন চায় কেন?
পিহু হাসল৷ বলল,
‘ দুষ্টু আব্বা তাই৷
ছিকু বলল,
‘ দরজায় ঠুকা মারে কেন?
পিহু খেয়াল করল কলিং বেল বাজছে। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই আবিষ্কার করল একদম খুব বিরক্তিকর একটা মুখ৷ পিহুর দিকে চোখ পড়তেই মিলে গেল কপালের ভাঁজ৷ শিষ বাজিয়ে ছেলেটি পিহুকে ডিঙিয়ে ডুকে পড়ল বাড়িতে। হাতের ব্যাগটি রেখে দিল সোফার উপর। শিষ বাজাতে ডাকল,
‘ ছিকু মাই বাপ।
ছিকু খুশিতে চেঁচিয়ে উঠল।
‘ মামাআআ?
মাহিদ হাত বাড়াল।
‘ আয় আয়। পড়ালেখা বাদ দে বাপ। তোর বউ লাগতো না, আমার বউ তোরে দিয়া দিমু। পড়ালেখা বউয়ের জন্যি করতে হয়। বুঝলি?
পিহু শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল দরজার কাছে। মাহিদ ছিকুকে কোলে তুলে নিল। বলল,
‘ বাপ আমার।
ছিকু হাসল। বলল,
‘ বাপ আমার নয় কেন?
মাহিদ রাহিকে টেবিলের কাছে নিয়ে গেল৷ পিহু ডাক দিল,
‘ রাহি পড়তে এসো। তোমার মাকে ডাকব এখন৷
মায়ের কথা শুনে রাহি চুপ হয়ে গেল৷ মাহিদকে বলল,
‘ মামা পিহুকে বকোনা কেন? ছিকুকে বকে কেন?
মাহিদ কিছু বলল না। পিহু বলল,
‘ তাড়াতাড়ি আসো।
ছিকু বলল,
‘ ছিকুর পড়তে ইচ্ছে হয়না কেন? পিহু বুঝেনা কেন? পরী বুঝেনা কেন? মিহি ভালোমামা কেন?
মাহিদ হাসল। পরী ইশা আসল। মাহিদকে
বলল,
‘ সোফার উপর ব্যাগটা কার?
মাহিদ বলল,
‘ কানাডা থেকে এনেছি। তোমাদের জন্য। দেওয়া হয়নি,মায়ের নাকি খেয়াল ছিলনা।
পরী বলল,
‘ তোকে এসব আনতে কে বলেছে? কি দরকার ছিল?
মাহিদ ছিকুর সাথে খেলতে খেলতে জবাব দিল,
‘ না লাগলে ফেলে দাও।
পরী বলল, রাগ করিস কেন ভাই? শুধু কষ্ট করতে কেন গেলি তাই বলছিলাম।
ইশা বলল, কি কি এনেছে দেখো। সবাইকে সবারটা দিয়ে দাও।
মাহিদ রাহিকে বলল,
‘ তোর জন্য প্লেন এনেছি বাপ৷ তুই সেটা নিয়ে খেলবি৷ খেলবি না?
রাহি হাসল আনন্দে। বলল,
‘ খেলব না কেন? মিহি বড় ফিপফিপ আনেনি কেন?
মাহিদ বলল, আর ও বড় হ বাপ। তোরে বড় প্লেন দিমু৷
রাহি হাত তালি দিল। পিহুকে দেখিয়ে বলল,
‘ পিহুর প্লেন নেই কেন? পিহুর কিছু নেই কেন?
পরী রাহির কথামতো ব্যাগ চেক করল। দেখল পিহুকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। রাইনা, আফি,আদি, ইশা আর রেহান,রাহির খেলনা,শাড়ি ঘড়ি, পান্জাবী ছাড়া অন্যকিছু নেই।
পরী জানতে চাইল।
‘ ভাই পিহুর জন্য কিছু নেই কেন? বাড়িতে রেখে এসেছিস নাকি?
মাহিদ ছিকুর সাথে খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। খেলতে খেলতে বলল,
‘ কানাডা থেকে আনিনি হয়ত। সব কি আর মনে থাকে?
ইশা খেয়াল করল পিহুকে। বলল,
‘ এটা কি করলি মাহি? পিহুর কথা ভুললি কি করে? আমার মেয়েটা,,,,
পিহু পা টিপে টিপে ইশার সামনে এল। হাসিহাসি মুখে বলল
‘ পরের জিনিস আমি নেইনা মাম্মা। নিতে আমার রুচিতে বাঁধে৷
ইশা হা করে তাকিয়ে শুনল পিহুর কথা৷ পরী বলল, পিহু তুমি,,,,,
পিহু কাউকে কিছু বলার সুযোগ দিলনা। দৌড়ে দৌড়ে উপরে চলে গেল।
মাহিদ ছিকুর সাথে খেলতে খেলতে উঠে দাঁড়ালো। ইশার সামনে গিয়ে বলল,
‘ এগুলো দেওয়ার জন্য এসেছি। যাই।
ইশা বলল, না না খাবি না? না না যেতে পারবি না।
মাহিদ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
‘ বাপের বইন বুঝোনা ক্যান? আমার দাওয়াতের উপর দাওয়াত পড়ছে। আমি খাইতে আসিনাই বাপ। এগুলা দেওয়ার জন্যি আইছি। যাই।
ছিকু কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,
‘ মিহি ভালো না কেন? পিহুকে কষ্টু দিয়েছে কেন? চলে যাচ্ছে কেন?
মাহিদ রাহির গালে আদর দিল। তারপর সোজা বের হয়ে এল চৌধুরী বাড়ি থেকে। এমনভাবে বের হলো পায়ের সাথে লেগে ফুলের টব পড়ে গেল কাত হয়ে। বাইকে চেপে বসল সে। সাথে সাথে সদর দরজা পার হয়ে দৌড়ে এল একটি মেয়ে। মাহিদ মেয়েটির চেহারা ভালোভাবে দেখার আগেই মেয়েটি তার সামনে এসে দাঁড়াল। মাহিদের হাত ধরে হাতের তালুতে কি যেন দিয়ে এই প্রথমবার বলল,
‘ পরের জিনিস নিজের কাছে রাখতে নেই।
মাহিদ হাতের তালুর উপর নূপুর দুটো দেখল। পিহুর দিকে চোখ তুলে তাকালো। দূরে ছুড়ে মেরে ঠাসস করে চড় মেরে বসল পিহুকে। পিহু দুই পা পিছু হটে গেল গালে হাত দিয়ে। মাহিদ বাইক ছেড়ে দিল। নিমেষেই নিরুদ্দেশ হলো।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here