#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_২৫(সিজন ২)
#পুষ্পিতা_প্রিমা
বিয়ের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এল। এ কয়দিনের মধ্যে মাহিদকে চৌধুরী বাড়ি আসতে দেখা গেল না। পিহু তাকে চৌধুরী বাড়ির আনাচে-কানাচে দেখতে ও পেলনা। হসপিটালে যাওয়ার পথে ও আকস্মিক দেখা গেলনা। রাস্তায় হাঁটার সময় ও হুট করা দেখা হলোনা। পরীকে ফোনে বেশ কয়েকবার বলতে শুনেছে মাহিদের কথা। তাও মাহিদের সাথে নয়,নীরার সাথে৷ পরী মাহিদকে আসতে বললে নীরা জানাল।
‘ পিহুর বিয়ে টিয়ে হয়ে গেলে নাকি যাবে। তার আগে যাবেনা। এসব বিয়েটিয়ের ঝামেলায় সে নেই।
পিহু নিজে নিজে হাসল। মাহিদ ভাইয়ের কাছে আরিশ মানেই আস্ত একটা ঝামেলা। তার বিয়ে আর ও বেশি ঝামেলা। এই ঝামেলার কাছ থেকে যতটা দূরে থাকা যায় ততটা মঙ্গল মাহিদ ভাইয়ের জন্য। কিন্তু পিহুর একটা জায়গায় এসে ভীষণ খারাপ লাগছে। মাহিদ ভাই কি গতানুগতিক সম্পর্কের মানে ও জানেনা?
আরিশ তার কেউ না হলেও ফুপাতো বোন হয়, এই খাতিরে ও তার জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে মাহিদ ভাইয়ের থাকার কথা।
মেহেদী সন্ধ্যা উপলক্ষে মেহমানের আনাগোনা বাড়ল চৌধুরী বাড়িতে। গিজগিজ মানুষের মাঝখানে পিহু খুঁজে বের করল তার রিপ মামাকে৷ খয়েরী পাড়ের কমলা রঙের গায়ে হলুদের শাড়ি পড়া মেয়েটি হাসিহাসি মুখ করে যখন তাকালো রিপের দিকে অদ্ভুত প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল রিপের মনপ্রাণ। হাসিমুখে মেয়েটিকে কতটা স্নিগ্ধ লাগছে! রিপ পিহুর মাথায় হাত রেখে জানতে চাইল,
‘ ভালো আছ?
পিহু কাঁপাকাঁপা কন্ঠে হাসি ধরে রেখে জবাব দিল,
‘ খুববব।
রিপ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল৷ বলল,
‘ ভালো থেকো। ভালো রেখো।
পিহু রিপের হাত চেপে ধরল তার মাথায়। রিপ অবাক হলো। বিস্ময় নিয়ে তাকাতেই পিহু আর ও শক্ত করে রিপের হাত চেপে ধরল তার মাথায়। ক্ষীণ কন্ঠে বলল,
‘ মামা তোমার এই আশীর্বাদ আমার কোনো কাজে লাগবেনা। আমার চাইনা এমন আশীর্বাদ।
রিপ হেসে দিল৷ বলল,
‘ কোনো একসময় তোমার নানাভাই আমাকে এই আশীর্বাদটি করেছিলেন। আমি সেদিন তোমার মতোই বলেছিলাম। কিন্তু, দেখো সেই আশীর্বাদ নিয়েই আমি আজ এতদূর এসেছি। আশা করি আমার এই আশীর্বাদ ও তোমার কোনো না কোনো সময় কাজে লেগে যাবে৷
পিহু রিপের দিকে তাকিয়ে থাকল নির্নিমেষ। বেশকিছুক্ষণ পার হয়ে গেলে রিপ জিজ্ঞেস করল,
‘ কি?
পিহু ঢোক গিলে আমতাআমতা করতে করতে বলে,
‘ মামা তুমি ও কি কখনো এভাবে কাউকে ভালোবেসেছ? সে তোমায় ভালোবাসেনি? ছোট মামি কি সে নয়?
রিপ দুইপা পিছু সরে গেল৷ মুখটা মুছে নিয়ে কড়া কন্ঠে বলল,
‘ পিহু আমি তোমার মামা।
পিহু মাথা নামিয়ে ফেলল৷ বলল,
‘ সরি,, সরি মামা। আমার ভুল হয়ে গেছে। সরি।
রিপ কিছু বলল না।
পিহু চলে গেল দৌড়ে। দৌড়ে ঘরে ডুকে পড়ার সময় তার ঘর থেকে বের হওয়া লোকটির সাথে ধাক্কা লেগে গেল তার। পিহু চোখ তুলে তাকালো। আদি বলল,
‘ কোথায় গিয়েছ আম্মি? খুঁজছিলাম তোমায়।
পিহু তার গাল মুছতে পারল না৷ আদি বলল,
‘ কাঁদছিলে?
পিহু মাথা রাখল বাবার বুকে৷ শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ডাকল,
‘ পাপা!!!
আদি মেয়ের মাথার উপর থুঁতনি রাখল। বলল,
‘ আজ আমার মায়ের মেহেদী সন্ধ্যা। মা টা কখন এত বড় হয়ে গেল? এইতো কিছুদিন আগে ও তাকে কথা বলা শিখালাম। হাঁটা শেখালাম। হাতে ধরে খাওয়ানো শিখালাম। পড়া শেখালাম। কাল সে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে। পিহু বউ সাজবে। আমার মা বউ সাজবে। চলে যাবে। বাড়িটা খালি হয়ে যাবে না??
পিহু ডুকরে উঠে আদির গায়ের পান্জাবী আঁকড়ে ধরল৷ বলল,
‘ পাপা আমাকে এভাবে কেন তাড়িয়ে দিচ্ছ? দিদিয়াকে তোমাদের কাছে রেখেছ, আমাকে দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছ। আমার কষ্ট হচ্ছে পাপা। এই বাড়ি ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। এই বাড়ির মানুষগুলোকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। সব একটু একটু করে দূরে চলে যাচ্ছে। আমি কেন পর হয়ে যাচ্ছি পাপা? কেন পর করে দিচ্ছ আমায়?
আদি বলল,
‘ নিনিত ভালো রাখবে তোমায়। তোমার যখন তখন এখানে চলে আসবে। আমি নিনিতকে বলে রেখেছি।
পিহু আদির বুক থেকে মুখ তুলল। আদির মুখ দুহাতে আগলে ধরে বলল,
‘ আমি ভালো নেই পাপা। আমি একটু ও ভালো নেই। তোমার মা ভালো নেই।
আদি বাকহীন হয়ে চেয়ে রইল পিহুর দিকে। পিহু এক পা এক পা পিছু হেঁটে হেঁটে চলে গেল ওই লোকের ভীড়ে। সবার মাঝে সংয়ের মতো শক্ত হয়ে পলকহীন বসে থাকল। সবার সাথে তাল মিলিয়ে হাসল, কিংবা কাঁদল।
আদি পিহুর বলা কথা ভাবতে ভাবতে চলে ইশার কাছে। ইশাকে ডেকে নিল। ইশা ব্যস্ত পায়ে হেঁটে এসে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হয়েছে ডক্টর? আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?
আদি নির্বাক চেয়ে রইল ইশার দিকে। ইশা কাছে এসে আদির মুখে হাত ছোঁয়াল। বলল,
‘ কিছু না বললে কিভাবে বুঝব ডক্টর? আপনি তো কিছু বলছেন না।
আদি কম্পিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ আমি কি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি মিষ্টি? আমার কাছে পৃথিবীর সবচাইতে দামী জিনিস আমার মায়েদের ভালো থাকাটা, তাদের মুখের হাসিটা। আজ তারা কেন ভালো নেই মিষ্টি? পিহু কেন ভালো নেই? বাবা হিসেবে আমি কি তবে ব্যর্থ হয়ে গেলাম?
ইশা বলল,
‘ হঠাৎ এসব কথা কেন ডক্টর? কে বলেছে আপনার মায়েরা ভালো নেই। পরীকে দেখুন না? তার কত সুন্দর একটা সংসার আছে। একটা ছোট্ট বাচ্চা আছে। স্বামী, সংসার নিয়ে সে কত্ত ভালো আছে! আর পিহু?
আদি থামিয়ে দিল ইশাকে।
‘ পিহু ভালো নেই মিষ্টি। ও আমাকে বলেছে। ভালো নেই সে। আমি ভালো রাখতে পারিনি তাকে। কি করলে সে ভালো থাকবে?
মিষ্টি???
ইশা আওয়াজ করল।
‘ জি ? বলুন ?
আদি বলল,
‘ মিষ্টি,,, পিহ? পিহু কি কাউকে ভালোবাসে?
ইশা চমকে উঠল এমন অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন শোনায়৷ হা করে তাকিয়ে বলল,
‘ এটা কি বললেন ডক্টর? পিহু ভালোবাসতে জানে? আমাদের ছোট্ট পিহু? আমি তো কখনোই ভেবে দেখিনি ডক্টর। পিহু ও ভালোবাসতে শিখে গেছে? কখন? কাকে?
________________
বাড়ি সাজানোর জন্য রাখা ফুলগুলো ছাদের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিল মেয়েটি। রজনীগন্ধা ফুলগুলো পায়ের তলায় দিয়ে পিষে ফেলল সে। কারো আসার আওয়াজ পেয়ে ফুলগুলো কুড়িয়ে ফেলে দিল নিচে। হাত ঝেড়ে চোখমুছে এলোমেলো পায়ে হাঁটল সে। ছাদের দরজা ঠেলে উঁকি দিল একটি ছেলে।
‘ জালিশা,,, আইমি আন্টি ডাকছে তোমায়। ফুলগুলো কোথায় রেখেছ?
জালিশা পেছনে হাত দিয়ে এদিকওদিক হেঁটে বলল,
‘ নিনিত ভাইয়া তোমার বিয়ের ফুল দিয়ে আমি কি করব? মাম্মামকে বলো আমি ওসবে নেই।
নিনিত কড়া কন্ঠে বলল,
‘ অলওয়েজ ইয়ার্কি ভালো লাগেনা জালিশা।
জালিশা হাঁটা থামিয়ে দিল। গর্জে বলল,
‘ আমি ও অলওয়েজ ইয়ার্কির মুডে থাকিনা।যাও। ভালো লাগছেনা৷
নিনিত তেড়ে এল। জালিশাকে নড়তে না দেখে অবাক হলো। নিনিতের বদলে জালিশা উল্টো চোখ লাল করে তাকাল নিনিতের দিকে৷ নিনিত বলল
‘ কি সমস্যা তোমার? চোখ রাঙাচ্ছ কাকে?
জালিশা উত্তর দিলনা। নিরুত্তরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে নিনিত তাকে পিছু ডাকল,
‘ কিছু বলছ না কেন জালিশা? কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমায়।
জালিশা চলে গেল৷ নিনিত বলল,
‘ তুমি কাল ওখানে যাবেনা জালিশা।
জালিশা থেমে গেল। উল্কার গতিতে ছুটে এসে নিনিতের কলার চেপে ধরে দাঁতের সাথে দাঁত চেপে বলল,
‘ বসে নেই তোমার বউ দেখার জন্য। দেখে নিয়েছি। তখন থেকে বউকে এমনভাবে আড়ালে রাখছ,যেন মনে হচ্ছে তোমার বউকে আমি উগান্ডায় পাঠিয়ে দিচ্ছি।
নিনিত ধীরহস্তে ছাড়িয়ে নিল শার্টের কলার। জালিশার হাত ছুড়ে মেরে বলল,
‘ টাচ মি নট। স্টে এওয়ে।
জালিশা কপাল কুঁচকে গেল। গণ্ডদেশ বেয়ে স্বচ্ছ জল গড়ালো। নিনিত বলল,
‘ আর কয়দিন আছো এই দেশে, ভালোই ভালোই থেকে চলে যাও। আমি কোনো সিনক্রিয়েট চাইনা জালিশা।
জালিশা দৌড়ে চলে গেল। নিনিত ভ্রুকুঞ্চন করে সেদিকে তাকিয়ে রইল।
_______________
দুহাতে মেহেদী পড়ানো হলো পিহুকে। দুহাত লম্বা করে সে দেখল হাতের মধ্যিখানে লেখা “এন” লেটারটি। নীরা আর মুনা এসে পাশে বসল পিহুর। নীরা পিহুর থুঁতনি ধরে মুখটা উঁচু করে ধরে বলল,
‘ পিহু তোমার মেহেদী দেখবে অনেক গাঢ় রঙ তুলবে। ডক্টর সাহেব দেখবে অনেক দেখতে পারবে তোমাকে।
পিহু চোখ নামিয়ে নিল৷ মুনা বলল,
‘ তুই আর কথা পাচ্ছিস না নীরা। মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে।
রাহি দৌড়ে দৌড়ে এল। পিহু চোখ তুলে তাকালো। রাহি পিহুকে দেখে চোখ বড় বড় করে বলল,
‘ পিহু বউউউ???? পিহু বউ কেন? ছিকু বর সাজেনি কেন? ছিকুর হাতে মেহেদী নেই কেন?
পিহু রাহির দিকে তাকিয়ে থাকল। মুনা বলল,
‘ ভাই তুমি এদিকে এসো। নানু পড়িয়ে দিই।
ছিকু মুনার কোলে উঠে গেল৷ বলল,
‘ নানু পিহুর মন খারাপ কেন? পিহু কুথা বুলেনা কেন? ছিকুর সাথে রাগ কুরেছে কেন?
মুনা বলল,
‘ পিহু বউ না? বউদের কম কথা বলতে হয়।
রাহি বলল,
‘ বউ কম কথা বুলে কেন? পিহু বউ সেজেছে কেন?
মুনা হাসল। নীরা বলল,
‘ ধুরর রেহাইন্নের বাচ্চা, চুপ থাক। কেন কেন কেন???
রাহি ভ্রু কুঞ্চন করল।
‘ ব্যারিচতারের বউ পুঁচা কেন? পুঁচা কুথা বুলে কেন?
মুনা হেসে দিল। বলল,
‘ বেরিচতার এরজন্য কত মারে?
নীরা বলল,
‘ একদম নয়। ব্যারিস্টার আমাকে কখনোই মারেনি।
রাহি হাসল দাঁত দেখিয়ে। বলল,
‘ ব্যারিচতার বউ মারে কেন? ব্যারিচতার পুঁচা কেন?
নীরা হেসে দিল। বলল,
‘ ওলেবাবা বাবু আমার লাইনে এসেছে। আসো আসো বাবু বসো। আদর করি।
নীরা নিয়ে নিল রাহিকে। চুমু দিল রাহিকে। রাহি গাল চেপে ধরে বলল,
‘ ব্যারিচাতারের বউ আদল কুরে কেন? ছিকুর গাল ভেজা কেন? ছিকুর রাগ লাগে কেন?
পরী দৌড়ে আসল। মুনাকে বলল,
‘ মাম্মা আমাকে কেমন লাগছে?
শাড়িটা রাহির পাপা এনেছে। আজ নতুন পড়েছি। ভালো লাগছেনা?
মুনা হাসল। পরীর গালে হাত বুলিয়ে বলল,
‘ খুব মিষ্টি লাগছে আমার মাকে।
পরী গাল এলিয়ে হাসল। নীরা বলল,
‘ যে দিয়েছে, তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর না কেমন লাগছে?
আমাদের কেন জিজ্ঞেস করছিস?
পরী বলল,
‘ যাহহহ। ছোট মা সবসময় লজ্জা দেয়।
রাহি বলল,
‘ মাম্মা ওয়াহ কেন? বিটিফুল কেন? রেহান চুন্দর বুলেনা কেন? পরীকে বিটিফুল বুলেনা কেন?
মুনা আর নীরা একসাথে হেসে উঠল। পরী রাহিকে কোলে নিয়ে নিল। যেতে যেতে রাহির নাকে কামড় দিয়ে বলল,
‘ আপনি সবসময় মাম্মাকে লজ্জা দেন কেন?
রাহি পরীকে কামড়টা ফিরিয়ে দিল। বলল,
‘ পরী রাহিকে কামড়ায় কেন? রেহানকে কামড়ায় না কেন? পরী নজ্জা পায় কেন?
পরী হাসল। বলল,
‘ আমার আব্বাটা।
রাহি হাসল। বলল,
‘ আমার আব্বা নাই কেন? রেহান নাই কেন?
পরী বলল,
‘ তোমার আব্বা নিচে। ডাকো। জোরে ডাকো।
রাহি বলল,
‘ ডাকব কেন? ডাকার আগে রেহান চলে এসেছে কেন?
পরী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। রেহান কয়েকটি বক্স একসাথে নিয়ে এসে বলল,
‘ পরী এগুলো চাচ্চু তোমাকে যত্ন করে রাখতে বলেছে। নাও তো।
রাহি বলল,
‘ পাপা ঘেমে গিয়েছে কেন? রাহির সাথে কুথা বুলেনা কেন?
রেহান হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বলল,
‘ পাপা পিহুর বিয়ের কাজে খুব বিজি। তাই।
রাহি পরীকে মাথা দিয়ে দুম করে মারল। বলল,
‘ পরী রেহানের ঘাম মুছেনা কেন? রেহানের সাথে কুথা বুলেনা কেন?
পরী রেহান একসাথে হেসে দিল। পরী বলল,
‘ আমার নতুন শাড়ি। ঘাম মুছবেন না। আমি তোয়ালে দিচ্ছি।
রেহান ঠিক সেটাই করল। পরীর শাড়ির আঁচল টেনে ঘাম মুছল। পরী চোখ রাঙিয়ে বলল,
‘ আমার নতুন শাড়ি। প্রিয় শাড়ি।
রেহান একগাল হাসল। রাহি কিছু না বুঝে রেহানের সাথে সাথে হাসল। পরী বলল,
‘ তারপরও????
রেহান তার কপাল দিয়ে পরীর কপালে দুম করে বাড়ি খেয়ে বলল,
‘ প্রিয় মানুষের ঘাম প্রিয় শাড়ির আঁচল দিয়েই মুছতে হয়। জানো না?
পরী চোখ ছোট ছোট করল। বলল,
‘ অন্ধ।
রেহান হাসল। বলল,
‘ উহুম।
পরী বলল,
‘ ঠিক বলেছি।
রেহান বলল,
‘ উহুম। দেখেছি দূর থেকে।
পরী ঠোঁট গোল করে বলল,
‘ ওহহহহ। দূর থেকে ও দেখা যায়?
রেহান হেসে দিল। বলল,
‘ হুমমম। বলা হয়নি। লাগছে। সুন্দর। খুব বেশি।
পরী মাথা নামিয়ে হাসল। রাহি বলল,
‘ রেহান পরীকে চুন্দর বলে কেন? পরী নজ্জা পায় কেন?
রেহান আওয়াজ করে হেসে দিয়ে বলল,
‘ পরী পুঁচা তাই।
রাহি ও হাসল।
‘ পরী পুঁচা। পরীর বর পুঁচা। পরীর বাচ্চা ভালো। ছিকু গুড বয়। পরী হাসল। বলল,
‘ পরীর বাচ্চা ভালো শুধু। আর কেউ না৷
_________________
লাইটিং, মিউজিক, সবার হাসিখুশি আনন্দ, উল্লাসের মাঝে চুপটি মেরে বসা থাকা মেয়েটি মাথা নিচু করে বসে রইল। এত আনন্দ, উল্লাস কোনোকিছুই তাকে ছুঁতে পারল না। হাত দুটো লম্বা করে রেখে সে একপলকে তাকিয়ে রইল মেঝের দিকে। খুব চেনাপরিচিত একটি নাম ধরে কাউকে ডাকতে শুনে পিহু পিটপিট করে তাকালো সেই আওয়াজকে অনুসরণ করে। এত মানুষের ভীড়ে এক-আধটু দেখা গেল ছেলেটিকে। পিহু উঠে দাঁড়ালো তাড়াতাড়ি। সবাই তার এভাবে উঠে দাঁড়ানোকে বিশেষ মূল্য দিল না। সবাই নাচ আর গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। পিহু সবার ভীড়ের মাঝে খুঁজতে লাগল কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে। পরী এসে টেনে নিয়ে গেল পিহুকে। বলল,
‘ হেঁটোনা পিহু। বসো। ওদের নাচ দেখো।
পিহু বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তাকালো। পরী তাকে নিয়ে গেল। সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল,
‘ এখানে বসো। আমমা আসবে এখন।
পিহু বারবার এদিকওদিক তাকাতে তাকাতে কোথা থেকে যেন রাহি ছুটে এল।
পিহুর হাতের তালুর মেহেদীগুলো ঘষে নিয়ে নিল নিজের ছোট্ট গুলুমুলু হাতটাতে। পিহু চমকে গেল,কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারল না। ছিকু ঠোঁটের উপর আঙুল দিয়ে পিহুকে বলল,
‘ চোপপপ পিহু কুথা বুলোনা। বুলোনা। মাম্মাকে কিছু বুলোনা। পিহু ভালো। খুব ভালো। ছিকু ভালো না কেন?
পিহু হা করে তাকিয়ে রাহির যাওয়া দেখল। রাহি দৌড়ে দৌড়ে হামাগুড়ি দিয়ে সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেল এক একা। হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে দাঁড়াল ছাদের এককোনায় পিছু করে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির পিছনে। ছেলেটি ঘাড় ঘুরিয়ে রাহিকে দেখল। হাঁটুমুড়ে রাহিকে দেখে হাসল। রাহি ফিসফিস করে বলল,
‘ ছিকু এত দুষ্টু কেন?
ছেলেটি ও রাহির সাথে সাথে হাসল। রাহির দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। রাহি হাতে থাকা মেহেদি গুলো আঙুলে লাগাল। ছেলেটির হাতের উপর আঙুলের দাগ কেটে লিখল
‘ মিহি ফর এম। পিহু ফর এফ। ছিকু এত ভালো লিখে কেন? পরী এগুলা দেখেনা কেন?
ছেলেটি হেসে দিল রাহির কথায়। রাহি ছেলেটির হাসি দেখল। ছেলেটির গালে চটাস করে চুমু খেয়ে বলে,
‘ তুমি হাসো কেন? ওহহ, ওহহ ছিকুর এত খুশু লাগে কেন?
চলবে,
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি