মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_২৬(সিজন ২)

0
674

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_২৬(সিজন ২)
#পুষ্পিতা_প্রিমা

রাত প্রায় দুটো ছুঁই ছুঁই। গভীর রাত। বাইরে তুমুল বর্ষণ। প্রকৃতি গর্জন করে যেন কেঁদে কেঁদে উঠছে। নয়ত সুখের আর্তনাদ করছে। মাঝেমাঝে বজ্রপাত বিকট স্বরে আওয়াজ তুলে কাঁপিয়ে তুলছে অন্তরআত্মা। প্রকৃতি এই বৃষ্টি দিয়ে যেন প্রমাণ করে দিতে চাইছে, আজ সেই দিনটি ছিল। যেইদিন পিহুর মাহিদ ভাই সেই দূর কানাডায় পাড়ি জমিয়েছিল৷ দিনটি পিহুর কাছে সবচাইতে বিষাক্ত একটি দিন। এখনো মনে পড়ে তার,ওই দিন রাতে সে মামার বাড়ির ছাদে গিয়ে মাহিদ ভাইকে হারানোর ভয়ে কেঁদেছিল। মাহিদ ভাই কি কখনো তার ছিল?
যে নয়, তাকে কেন হারানোর ভয় হয়?
যে সয়, তাকে কেন সয়ে যেতে হয়?
রুমের জানালা খুলে দিল পিহু৷ বাড়ির ড্রয়িংরুমে অনেকে আছে এখনো। মুরব্বিরা হয়ত বৈঠকে বসেছে বিয়ে নিয়ে। পিহুকে ঘুমানোর জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পিহুর দুচোখের পাতায় ঘুম ভর করল না। তার এই মন কেমনের বৃষ্টিতে আজ খুব করে ভেজার ইচ্ছে হলো। নিজেকে একেবারে পরিপূর্ণ রূপে বদলিয়ে নেওয়ার,নিজের বেহায়া স্বত্বাটাকে ধুয়ে মুছে সাফ করে ফেলার জন্য হলেও এই বৃষ্টিতে তার ভেজার দরকার। এমন মন কেমনের বৃষ্টি যে রোজ হয়না? এমন মন কেমন করা বৃষ্টির দেখা মিলে মন কেমনের দিনে। মন কেমন করা ক্ষণে। জীবনের মোড় পাল্টানোর সময়। আজ এই রাতটা ও পিহুর জীবনের মোড় পাল্টানোর রাত। প্রকৃতি জেনে গিয়েছে তাই তো এমন মন কেমন করা একটি বৃষ্টির রাত উপহার দিল পিহুকে। কিন্তু পিহুর দুর্ভাগ্য সে ভিজতে পারছেনা। সে বৃষ্টিজলে ভিজে পাগলপারা হতে পারছেনা।
জানালার কাচ খুলে সে দাঁড়িয়ে থাকল। মুখটা সাথে সাথে ঠান্ডা হাওয়ায় জমে গেল। বাতাসের ঝাপটায় চুলগুলো হয়ে পড়ল এলোমেলো, ছন্নছাড়া। শীতল চক্ষুদ্বয় গিয়ে ভীড় করল রাস্তার ও-ই জ্বলা-নিভা ল্যাম্পপোস্টের কাছে। ল্যাম্পপোস্টটি একবার জ্বলছে তো একবার নিভছে। কিছুক্ষণ পর হয়ত ল্যাম্পপোস্টটি ধসে পড়বে৷ পিহু চোখ সরিয়ে নিল ল্যাম্পপোস্ট থেকে৷ ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখদুটো বেশিক্ষণ ও-ই দূরে আর তাকাতে পারল না। যদি পারত,তাহলে দেখতে পেত বাইক চালানো ছেলেটি সেই রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে ক্ষানিক্ষণের জন্য হলেও থেমে গিয়েছিল।

____________________

খাওয়া-দাওয়া, অতিথি অ্যাপায়ন, অনুষ্ঠানের পালা শেষে ঘুমের আয়োজন করতে গেল নিনিত। পড়নের পাঞ্জাবী পাল্টে বাতাসের ছিটকিনি আসা জানালার কাচ নামিয়ে দেওয়ার জন্য চোখ আটকে গেল নিচে বাগানের পাশের ছোট্ট টুলে বসে থাকা মেয়েটির কাছে৷ আশ্চর্য! এত রাতে মেয়েটি ওখানে বসে আছে কেন? কি প্রমাণ করতে চাইছে সে? এভাবে বৃষ্টিজলে ভিজে এতরাতে এমন জায়গায় বসে থাকার কোনো মানে হয়?
রাগে নিনিতের চোয়াল শক্ত হলো ৷
‘ জাবির আঙ্কেল আর আইমি আন্টি কোথায়? তাদের মেয়ের এসব পাগলামি কি তারা দেখছেনা?
নিনিত কিছু না ভেবে ঘুমোতে গেল। কিন্তু ঘুম নামল না। অজস্র বিরক্তি নিয়ে সে উঠে বসল। গায়ে শার্ট ছড়িয়ে পা বাড়াল কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্যে।
ছাতাটা ভেজা থেকে আটকাতে পারলনা নিনিতকে। বাতাসের ঝাপটায় ছাতাটা ভেঙে গুড়িয়ে যাবে এমন অবস্থা। সারারাত হৈ-হুল্লোড়ে মেতে থাকা মানুষগুলো বেঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন। বৃষ্টির এমন তেজ তাদের চোখে ঘুম নামাতে বিপুল সহযোগিতা করেছে। নিনিত ছাতাটাকে দূরে ছুড়ে মেরে ফেলে দিল। গর্জে ডাকল,
‘ জালিশা????

ঢিলেঢালা শার্ট, কপালে পড়ে থাকা একঝাঁক চুলের সমাহার, চেহারায় একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাকানো ছেলেটাকে চোখতুলে একবার দেখে নিল মেয়েটি। শক্ত হয়ে বসে থাকল৷ বৃষ্টিতে ভিজতে তার ভালো লাগছে।। ‘ এই ছেলেটা তাকে ডিস্টার্ব করতে কেন এসেছে? সে ভিজলে ও কি? না ভিজলে ও কি? এত বিরক্ত হওয়ার কি আছে? বিয়ের পিড়িতে বসেছে, বিয়ে নিয়ে মত্ত থাকুক না। জালিশাকে চিন্তা করার কি দরকার?
জালিশা ভাবগতির নড়চড় না দেখে নিনিত গর্জে আবার ও ডাকল,
‘ জালিশা তোমাকে ডাকছি। জালিশা?
জালিশা এবার তাকালো। নিনিতের মতো করে গর্জে বলল,
‘ কি সমস্যা?
নিনিত গর্জন করল৷ বলল,
‘ যাবে নাকি যাবেনা?
জালিশা বসেই রইল। বলল,
‘ যাব না।
নিনিত তেড়ে এল। শক্ত করে ধরল মেয়েটির হাত। বলল,
‘ তুমি যাবেনা। তোমার বাপ যাবে। বৃষ্টিতে এভাবে ভিজার কুফল তুমি জানো?
জালিশা হাত ছাড়িয়ে নিল। বলল,
‘ না জানিনা। তবে এটুকু জানি, দেশে না ফেরাটা আমার জন্য আমার জন্য মঙ্গলময় ছিল। কেন ফিরলাম?
নিনিত তাকালো। বৃষ্টিজল মুখ থেকে মুছে নেওয়ার চেষ্টা করে বলল,
‘ কেন ফিরেছ? আমি ফিরতে বলেছি? জালিশা আগে ও বলছি,এখনো বলছি আমার কাছে কোনো এক্সপেক্টেশন রেখোনা। আমি আদি স্যারকে কথা দিয়েছি।
জালিশা নাক টেনে নিনিতের হাত ছিটকে দূরে সরিয়ে দিল। এলোমেলো কাঁদতে কাঁদতে আবার বসে পড়ল ওই টুলটাতে। চোখের স্বচ্ছ নোনাজল বুঝা গেলনা বৃষ্টিজলে৷ নিনিতের বিরক্তি ধীরে ধীরে কমে গেলে ও অস্বস্তি কমল না। সে মেয়েটির সাথে আর কোনোরূপ কথা না বলে চলে গেল। শুধু শুধু ভিজতে গেল। এসব বিদেশী লেড়কিগুলো ঘাড়ত্যাড়া হয়। চরম বিরক্তিকর।
জালিশা বসে থাকল সেভাবে। এভাবে পার অনেক সময়, অনেক ক্ষণ। নিনিত ভেজা শার্ট খুলে ঝাড়তে ঝাড়তে আবার ও তাকালো জানালা দিয়ে। আশ্চর্য! মেয়েটি এখনো বসে আছে? আরেহ মাথা পাগল!

_______________

বিয়ের দিন সকালে রাহির চেঁচামেচিতে সবার ঘুম ভাঙল।
‘ পিহু চলে যাবে কেন? পিহুর বিয়ে কেন? ছিকুকে নিয়ে যাবেনা কেন? ছিকু বর নয় কেন? ছিকুর বউ নেই কেন ? ছিকুর বিয়ে হবেনা কেন? ছিকু বর সাজবেনা কেন?
সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে ছিকুর কথা শুনে। ছিকু বড় ঢিলা শার্ট পড়ল। শার্টটি হাঁটু অব্দি। শার্টের কলার পেছনে ঠেলে দিয়ে বলল,
‘ রাহি চুন্দর। বিটিফুল। রাহির বউ নাই কেন? বিয়েতে রাহির বউ আসেনা কেন?
আফি বলল,
‘ দাদুভাই বউ আসবে। আর ও বড় হও। বড় হলে তারপর বউ অটোমেটিক চলে আসবে।। রাহি জেদ ধরল। নাক ফুলিয়ে বলল,
‘ এখুন আসেনা কেন?
রাইনা বলল,
‘ তুমি এখনো ছোট ভাই। বউ দিয়ে কি করবে?
রাহির ভ্রু কুঞ্চন হলো। বলল,
‘ বউ কি করে? বউ আদল করে। বউ কুলে নেয়। বউ পাপ্পি দেয়।
আফি হা হু করে হাসল। দূরে দাঁড়িয়ে আদি,রিক হাসল। রিক তাড়াতাড়ি সরে পড়ল মৃদু হেসে। আদি বলল,
‘ বউ তোমাকে কোলে চড়াবে? মাথা খারাপ?
রাহি বলল,
‘ অফিচমেন চলে গেল কেন? অফিচমেন নজ্জা পায় কেন? বউ কুলে চড়াবেনা কেন?
আদি বলল,
‘ ধুরর ব্যাটা তোর প্রশ্নের উত্তর তোর বাপকে এসে দিতে বল।
রেহান আসল। রাহিকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ চলেন খাবেন। না খেয়ে বকবক করছেন?
রাহি হাসল দাঁত দেখিয়ে। বলল,
‘ বউ ছিকুকে কুলে নেবেনা কেন?
রেহান মিনমিন করে বলল,
‘ ছিকু পুঁচা কথা বুলে কেন? বউ মানেই তো ভূত। বউ মানে পেত্নী। বউ মানে রাক্ষসী। আর বউয়ের কথা বুলবে?
ছিকু চোখ বড় বড় করল। দুইপাশে মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ পরী ভূত??? পরী পেটনি ?
রেহান বলল,
‘ হ্যা।
রাহি বলে গেল পরী ভূত। পরী পেটনি। পরী রাক্ষুসি।
পরী ছোট বাটিতে ভাত মাখতে মাখতে শুনল সে কথা। ঘাড় ঘুরিয়ে বলল,
‘ কাকে বলছ এসব?
রাহি বলল,
‘ পরী ভূত। বউ ভূত। পরী পেটনি। বউ পেটনি।
রেহান আওয়াজ করে হেসে দিল। পরী নাক ফুলিয়ে বলল,
‘ আপনি শিখিয়ে দিয়েছেন?
রেহান বলল,
‘ বলুক গে। তুমি পেত্নী না তুমি পরী। এবার ছলেবলে খাইয়ে দাও।
পরী মাথা নাড়াল। রাহিকে বলল,
‘ বর ভূত। রাহি ভূত। এবার গপগপ খাও তো দেখি।
রাহি বড় করে হা করল। পরী খাইয়ে দিল। রাহি গালের ভাতগুলো ফেলে দিয়ে পরীকে বলল,
‘ রাহি ভূত কেন? ও বাপ রাহি পেটনি কেন? রাহি রাক্ষুসী কেন?
পরী বলল, দেখেছেন? ফেলে দিল।
রেহান রাহিকে বলল,
‘ আব্বা আমরা একদম চুপ থাকব। কেউ কথা বুলবে না। শুধু খাব। কেমন?
রাহি মাথা নাড়াল। পরী খাইয়ে দিল। রাহি মাথা দুলালো। ভাত চিবিয়ে আবার ও ফেলে দিয়ে বলল,
‘ সব্বাই চুপ থাকবে কেন? রাহি চুপ থাকবে কেন? কুথা বুলবে না কেন? শুধু খাব্বে কেন?
পরী বাটিটা ধপ করে টেবিলের উপর রাখল। রাগীসুরে রেহানকে বলল,
‘ আপনি খাওয়ান। আমি পারব না।
পরী চলে গেল। রেহান রাহির দিকে তাকাল অসহায় চোখে। রাহি মুখ ফুলিয়ে,অসহায় চোখে তাকালো রেহানের দিকে। রেহান বলল,
‘ এটা কি করলেন আপনি? মাম্মাকে এত জ্বালান কেন? মাম্মা দুক্কু পেয়েছে।
রাহি কিছু ভাবল। বলল,
‘ মাম্মা দুক্কু পায় কেন? ছিকু দুক্কু দেয় কেন? ছিকু ব্যাড বয় কেন?
রেহান বলল, যান রাগ ভাঙিয়ে আসেন। নইলে পরী কান্না করবে।
রাহি নিচে নামল। রেহান বাটিটা রাহির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ যান, মাম্মাকে বলবেন, মাম্মা খাইয়ে দেয়না কেন?
রাহি মাথা দুলালো।
বাটিটা নিয়ে পরীর পিছু পিছু গেল। পরী সোফায় গিয়ে বসে থাকল মুখ ফুলিয়ে। রাহি বাটিটাতে হাত দিয়ে ভাত নিল হাতের মুঠোয়। হাতের মুঠি গালের ভেতর দিয়ে বলল,
‘ ছিকু খাচ্ছে। পরী তাপরেও রাগ কুরে কেন? ছিকু একা একা খায়,পরী খাইয়ে দেয়না কেন?
পরী আড়চোখে তাকালো। রাহি ভাতগুলো গালে দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খেল। হাতের মুঠিতে ভাত নিয়ে গালে দিতে গিয়ে সারা গালে লেগে গেল। তারপর ও খেল। খেতে খেতে বলল,
‘ ভাতু মিয়া তুমি মুজা কেন? তুমি টেসটি কেন? ছিকুর মুজা লাগে কেন? ছিকুকে মাম্মা খাইয়ে দেয়না কেন?
পরী হেসে দিল। কিন্তু চোখের দিকে তাকালো না। ছিকুর ঝাল লেগে উঠল। কাঁদোকাঁদো হয়ে তারপর ও খেতে খেতে বলল,
‘ মাম্মা রাগ করে কেন? ছিকুর দুক্কু লাগে কেন? মাম্মা খাইয়ে দেয়না কেন?
পরী গেল ছুটে। রাহির হাত থেকে বাটি কেড়ে নিয়ে পানি খাইয়ে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তারপর গালে জোরে চুমু দিয়ে বলল,
‘ আব্বাটা খেয়েছে, কত ভালো লাগছে। এরকম রোজ খাবে। ওকে? তখন মাম্মা রাগ করবে না।
ছিকু গালটা মুছে দিল পরীর গালে। পরীর গলার কাছে মুখটা ঘষে ঘষে বলল,
‘ ছিকুর কান্না পায় কেন? ছিকু মাম্মাকে দুক্কু দেয় কেন?
পরী হেসে তাকে বুকের সাথে জড়ালো। কোলে তুলে নিয়ে বলল,
‘ আজ পিহুর বিয়ে না? মাম্মা কাজে খুব বিজি থাকব। খিদে লাগল বলবে। কেমন? আজেবাজে খাবার খাবেনা। মিষ্টি খাবেনা বেশি। ওকে?
রাহি মাথা নাড়ল। বলল,
‘ ছিকু সন্দেশ খাবেনা কেন? ছিকুর খেতে মন চায় কেন?
পরী হাসল। বলল,
‘ খাবেন কিন্তু কম। একদম কম। বেশি খেলে তুমি সিক হয়ে পড়বে। আমার আব্বা ভালো না থাকলে পরী কিভাবে ভালো থাকবে?
রাহি হাসল। বলল,
‘ মাম্মা আলাবিউ।
পরী হেসে দিল। বলল,
‘ আলাবিউ টু ছিকুসোনা। রেহান আসল। বলল,
‘ আমাকে ছাড়া প্রেম হচ্ছে। ভালোবাসার হচ্ছে?
রাহি হাসল। বলল,
‘ পাপা আলাবিউ।
রেহান হেসে দিল। বলল,
‘ আলাবিউ টু। লাভ ইউ সো মাচ ছিকু এন্ড ছিকুর মাম্মা।
রাহি খিলখিল করে হাসল। রেহান আর পরীর মাথা একজায়গায় এনে তার মাথা দিয়ে দুম করে মেরে বলল,
‘ রেহান পরীকে আলাবিউ বলে কেন?

_____________________

গোল্ডেন শাড়ির উপর মেরুন রঙের ওড়নাটি দিয়ে ঘোমটা পড়িয়ে মেয়েটির বিয়ের সাজ শেষ হলো। সবাই একেক কথা বলে হাসানোর চেষ্টা করল মেয়েটিকে৷ কিন্তু পারল না। চারদিকে এত মানুষ,এত সমাগম। কিন্তু সবার মাঝখানে বসে মেয়েটির মনে হলো কেউ নেই তার চারপাশে। কেউ নেই।
পিহু বহুক্ষণ পর সবাইকে বলল,
‘ আমি একটু একা থাকতে চাই।
সবাই তার মুখের কথা শুনে তড়িঘড়ি বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ আগে বলবি না। আচ্ছা তুই একটু রিল্যাক্সে থাক। আমরা আসছি।
পিহু দরজায় খিল মেরে দিল। দরজায় কতক্ষণ যে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল, তার হিসেব নেই। তারপর ধীরপায়ে হেঁটে গিয়ে দাঁড়ায় আয়নার সামনে। নিজেকে সে চিনতে পারছেনা।
যেদিন থেকে সে বুঝতে শিখেছে ভালোবাসা কি? সেদিন থেকে এই বধূসাজে সে সবমসয় মাহিদ ভাইয়ের সামনে যাবে ভেবে এসেছে। নিজেকে মাহিদ ভাইয়ের সাথে ভেবে এসেছে। ভালোবাসার মাহাত্ম্য বুঝার আগে থেকে সে মাহিদ ভাইকে ভালোবেসে এসেছে। শুরুটা মাহিদ ভাই ছিল, শেষটা মাহিদ ভাই হতে পারত। এত সাজ, এত ভারী মেকআপকে উপেক্ষা করে সাদা বিন্দু বিন্দু জলের নহর জল গড়ালো কপোল বেয়ে। হাতে দিয়ে সেই চোখের জল মুছে নিতে ও আলস্য। বিরক্তি।
পিহু মাথা নামিয়ে নিল তাড়াতাড়ি। নিজের কাছে এই চোখের জলগুলো বড্ড বেমানান লাগছে। বিয়ে করছে অন্য একজনকে, কাঁদছে আরেকজনের জন্য। এটা কি মানানসই?
কিছুক্ষনের মধ্যে বর এল, বর এল আওয়াজে মুখরিত হলো চৌধুরী বাড়ি। সবার আগে ছিকুর গলার আওয়াজ শোনা গেল। কি আনন্দ তার?
পিহু জোরে আওয়াজ করে কেঁদে উঠল। ডাকল, মাহিদ ভাই কোথায় তুমি? আমি হারিয়ে যাচ্ছি মাহিদ ভাই। আমি মারা যাচ্ছি। তুমি কেন এতটা পাষাণ মাহিদ ভাই? কেন?

দরজায় কড়াঘাত হলো জোরে জোরে। পিহু কান্না থামিয়ে দিল। চোখ মুছে নিল। টিস্যুপেপার দিয়ে গাল মুছে নিল তাড়াতাড়ি। কম্পিত হাতে দরজায় হাত লাগাল। দরজা খোলার সাথে সাথে হুড়মুড় করে ডুকে পড়ল একটি ছেলে। চোখাচোখি হলো চারচোখ। মুখোমুখি দুটো মুখ। কতকথা, কত অভিযোগ চারচোখে একে অপরের প্রতি। কত অভিমান। কত প্রেম।
মেয়েটি বোধহয় এই প্রথম ছেলেটির ছলছলে চোখ দেখল। এই প্রথম তার চোখ ভর্তি জল দেখল। এই প্রথম তার প্রতি একটুখানি ভালোবাসা দেখল। ছেলেটি কাঁপাকাঁপা কন্ঠে এই প্রথম বলে উঠল,

‘ আমি কানাডা থেকে কেন এসেছি? কার জন্য এসেছি?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here