মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_২৮(সিজন ২)

0
937

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_২৮(সিজন ২)
পুষ্পিতা_প্রিমা

_________________________________

আদি এসে ইনজেকশন পুশ করল ঘুমন্ত পিহুকে৷ রেহানকে বলল,
‘ ঘুমের ঔষধ কয়টা খেয়েছে আল্লায় জানে। এটা কাটানোর জন্য ইনজেকশন দিয়েছি। আশা করি কিছুক্ষণের মধ্যে কেটে যাবে।
পরী বসে রইল পিহুর মাথার কাছে। চিন্তিত,উদ্বিগ্ন মুখ। রাহি এসে এক পা খাটে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে বলল,
‘ ছিকু উঠতে পারেনা কেন?
পেটে ভর দিয়ে উঠার চেষ্টা করল। উঠতে পারল না। আদি হেসে দিল। কোলে তুলে পিহুর পাশে বসিয়ে দিল। বলল,
‘ পিহুকে ডাকো। উঠতে বলো।
রাহি ভ্রুকুঞ্চন করে পিহুর দিকে তাকালো। পিহুর গায়ের উপর উঠে পিহুর মুখে দুম করে মেরে বলল,
‘ পিহুচুন্নি এত ঘুমায় কেন? ইশাকে কাঁদায় কেন? পরীকে কাঁদায় কেন? ছিকুকে রাগায় কেন?
আদি বলল,
‘ মেরোনা আজ না পিহুর বিয়ে? পিহু চলে যাবে।
ছিকু পিহুকে জড়িয়ে ধরল। পিহুর নাকে কামড় দেওয়ার চেষ্টা করে বলে,
‘ না পিহু আমার। ছিকুর সাথে থাকবে। থাকবেনা কেন?
পরী বলল,
‘ চলে এসো। চলে এসো। পিহু ব্যাথা পাচ্ছে।
রাহি পরীকে হাত দেখিয়ে বলল,
‘ মারবোওওও খুবব। ছিকুকে বকো কেন?
রেহান বলল,
‘ আমরা বের হয়ে যাই। কাকিয়া বসুক।
আদি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো ঘরের কোণে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটিকে। ইশা মেঝের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আদি তাকাতেই চোখাচোখি হলে রাগে চোখ ফিরিয়ে নিল। তারপর পিহুর মুখের কাছে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। পিহুর কাছে ধীরপায়ে হেঁটে গেল৷ মাথার কাছে বসে হাত বুলালো। ডাকল,
‘ মা উঠো। আর কত ঘুমোবে? এভাবে দেখতে ভালো লাগছেনা। পিহু!!!
আদি ডাকল,
‘ মিষ্টি? ডেকোনা।
ইশা কর্কশ কন্ঠে বলল,
‘ আমি আমার মেয়ের সাথে কথা বলছি।
পরী বলে উঠল,
‘ পাপা,,,পাপা এখন এসব থাক। আগে পিহু উঠুক।
আদি বলল,
‘ একটা সামান্য চড়ে রাগ করতে হয়?
ইশা চোখ মুছল। পরীকে গর্জে বলল,
‘ পরী তোমরা সবাই বেরিয়ে যাও৷ আমি আর আমার মেয়ে একটু একা থাকব।
পরী আদিকে হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ পাপা পরে রাগ ভাঙিয়ে দিও। মারলে কেন শুধু শুধু?
আদি বলল,
‘ বউ তাই মেরেছি আর কি?
রেহান পিছু পিছু এসে বলল,
‘ আমাকে ও মারতে হবে। আদি বলল,
‘ কেন?
রেহান হাসল। বলল,
‘ তুমি বউ পেটাতে পারলে, আমি পারব না কেন?
পিছু পিছু রাহি দৌড়ে আসল। বলল,
‘ আমি বউউ পিতাবোনা কেন?
সবাই একসাথে হেসে উঠল। আদি বলল,
‘ বউ থাকলেই তো পেতাবেন।
রাহি কোমরে হাত দিল।
‘ মিহির সাথে সাথে আমি ও বিইয়ে করবো। আমার বউ কুথায়??
রেহান বলল,
‘ আপনার বউ এখনো ভূমিষ্ট হয়নি বাপ।
রাহি প্রশ্ন করল, কেন কেন কেন ভুমিচতো হয়নি কেন?
আদি রাহির মাথায় চাপড় মারল হাঁটুগেড়ে বসে। বলল, ধুরর ব্যাটা তোর কেন’র উত্তর দিতে পারুমনা।
রাহি আদির মতো করে, আদির মাথায় চাপড় মারল। বলল,
‘ ধুরর ব্যাটা। এভাবে বলো কেন???????

__________________________

প্রায় ঘন্টা দুইতিনঘন্টা পার হলো। পিহুর মাথার পাশে হাত চেপে ধরে উঠে বসে কান্নাচোখে ইশাকে দেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ইশা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ পাগলটা আমার মেয়ের মাথা খেয়েছে, আগে জানলাম না কেন? জালিশা আর রিপদা না বললে তো জানতাম না৷
পিহু আওয়াজ করে কেঁদে দেয়। শক্ত করে জড়িয়ে ইশার কাঁধে মুখ গুঁজে রাখে। বলে,
‘ মাম্মা বিয়ে করব না আমি। করব না।
ইশা হাসল। বলল,
‘ আচ্ছা করতে হবেনা। আমি এখন নিচে গিয়ে সবাইকে বলে আসব। মাহিকে বলে আসব, যে মাহি আমার মেয়ে তোকে বিয়ে করবে না। অন্য বউ খুঁজে নে।
পিহু বলল,
‘ সবাইকে বলবে।
ইশা চুপ থেকে হেসে বলল,
‘ আচ্ছা, সবাইকে বলব।
পিহু কিছুক্ষণের মধ্যে চমকে উঠল৷ ইশার মুখের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকল। ইশা বলল,
‘ রিপদাকে বলব, রিপদা যার জন্য লাফ দিয়ে বিয়ের বাজার করতে চলে গিয়েছ, সে নাকি বিয়েই করবেনা।
পিহু সাথে সাথে কেঁদে দিল। এলোমেলো ভাবে চোখ মুছে বলল,
‘ না না না আমি এসব কিচ্ছু বলিনি।
ইশা এবার আওয়াজ করে হেসে দিল। পিহুর গালের একপাশে গাঢ় মমতার স্পর্শ দিয়ে বলল,
‘ রাহি কি বলতো যেন, ওহ হ্যা পিহু বউ, মিহি বর। ছিকুর বউ নাই কেন?
পিহু কান্নার মাঝে হেসে দিল।

_____________________

দুহাত ভর্তি শপিং ব্যাগ নিয়ে রিক আর রিপ ইশার রুমে চলে আসল। নীরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রিপকে বলল,
‘ ব্যারিস্টার এই বিয়ের বাজার দিয়ে তো আমরা ও বিয়ে করে নিতে পারব।
রিপ রিকের দিকে চট করে তাকালো। লজ্জায় মাথা কেটে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। ইশা, মুনা আদি হেসে উঠল। রিক রিপকে বলল,
‘ হয়েছে আর রেগে তাকাস না। এগুলো ইশুকে বুঝিয়ে দে।
রিপ চোখ রাঙিয়ে তাকালো। নীরা বলল,
‘ আপনি যে খুশি হয়েছেন, মনে হচ্ছে আপনি বিয়ে করছেন, তাই বললাম আর কি। রাগ করেন কেন? আপনি ভালো না ব্যারিস্টার।
রিপ বলল,
‘ দোহাই লাগে তোমার। আমি আর জীবনে ও হাসব না।
নীরা মুখ ফুলালো। বলল,
‘ বিয়ে করছে আপনার বাচ্চা, তার দেখাসাক্ষাৎ নাই। টো টো করে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাকে তো বলেই দিল,
‘ মেরি মা কবুল বলার সময় আমারে ডাইকো, তারআগে আমি নাই। সবাই আমার দিকে কেমন কইরা তাকায় বাপ। আমার ভাল্লাগেনা। লজ্জা করে। শরম পায়। বুঝোনা???
ইশা মাথায় হাত দিল। বলল,
‘ এটা কোনোকথা?
রিপ বলল,
‘ আমি ঘাড় ধরে নিয়ে আসব। তোরা অযথা চিন্তা করিস না তো। পিহুর কি অবস্থা?
নীরা খুশিতে বাকুমবাকুম করে বলল,
‘ যাই, আমি আমার পুত্রবধূর সাথে দেখা করে আসি। মাগোমা আমি আজ শ্বাশুড়ি হয়ে যাব। ইশু তোর মেয়ে আমার সেবা করবে, আমাকে চাচুমা ডাকবে। ওহহো আমি কি খুশি বাপ।
রিপ ধমকে উঠল।
‘ একদম চুপ নীরা। বেশি বেশি কথা বলো তুমি।
পরীর আগে আগে রাহি ডুকে পড়ল সেই ঘরে। কোমরে হাত দিয়ে বলল,
‘ ব্যারিচতার রাগে কেন? ব্যারিচতার বউ মনখারাপ কেন?
নীরা বলল,
‘ সোনা বাবা চলে এসেছে। ছিকু একমাত্র আমার দুক্কু বুঝে। আর কেউ বুঝেনা।
রাহি গাল এলিয়ে হাসল। শার্টের কলার পেছনে ঠেলে দিয়ে বলল,
‘ ছিকু গুড বয়। ছিকু ব্যাড বয় না কেন? ছিকু গুড বয় কেন?
রিক ছিকুকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ নানুভাই এত ভালো কেন?
ছিকু রিকের গলা জড়িয়ে ধরে চুমু খায় রিকের গালে। দাড়িতে খোঁচা খেয়ে বলে,
‘ অফিচমেন দুক্কু দেয় কেন? ছিকু ব্যাথা পায় কেন?
রিপ হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে পড়ল রুম থেকে৷ পেছন পেছন নীরা বেরিয়ে পড়ল। রিপ কিছুদূর যেতে না যেতেই নীরা ডাকল,
‘ অ্যাই ব্যারিস্টার?
রিপ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। নীরা বলল,
‘ আপনাকে হাসলে একদম হিরো হিরো লাগে। একদম সেইইই লাগে। ভেরি ভেরি সুন্দর লাগে। প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে বারবার।

রিপ হেসে দিল। বলল,
‘ তুমি কি ইচ্ছেকরে আমার সাথে এমনটা করো? নাকি তুমি এমনটাই।
নীরা দৌড়ে গেল। রিপের বুকে ঝাপটে পড়ে বলল,
‘ আমি আপনার জন্যই এমন। রিপের নীরা।
রিপ হাসল। তৃপ্তির হাসি। নীরার চুলের ভাঁজে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বলল,
‘ নীরা আমি আজ খুব খুব খুব খুশি। কতটা তুমি বুঝবেনা।
নীরা নড়েচড়ে রিপকে আর ও শক্ত করে ধরে বলল,
‘ আমি বুঝি ব্যারিস্টার। আপনার চোখ কথা বলে, আপনার ঠোঁটের হাসিটা কথা। আপনার তাকানোর ভঙ্গিমা কথা বলে। আমি বুঝি ব্যারিস্টার। আমি যদি জানতাম,তাহলে অনেক আগেই পিহুকে ছেলের বউ করে নিয়ে আসতাম। আপনি আমায় বলেননি কেন?
রিপ বলল,
‘ সবকিছুর একটা সঠিক সময় আছে নীরা। তোমার ছেলেটা ও বাপের মতো বদঅভ্যেস পেয়েছে। মনের কথা বলতে জানেনা। সব বলে কিন্তু আসল কথা চেপে যায়। ছলছলে চোখে পিহুর ঘরে যাওয়ার দৃশ্য যদি আমি না দেখতাম,তাহলে আমি ও পিহুর মতো ভুল নিশে বসে থাকতাম। ভাগ্যিস আমি তোমার ছেলের আসল রূপ দেখে ফেলেছি। তোমার মতো হলে ও চলত নীরা। আমার মতো কেন হলো?
নীরা আর ও চেপে ধরে বলল,
‘ মাহি এজন্যই ব্যারিস্টারের বাচ্চা। আমি এমনটাই চেয়েছি, আমার বাচ্চাটা ব্যারিস্টারের মতো হোক। উপরে আমার মতো, ভেতরে ব্যারিস্টারের মতো।
রিপ আবারও হাসল। বলল,
‘ কেউ চলে আসবে। ছাড়ো।
নীরা মাথা নাড়িয়ে বলে,
‘ নাআআ। ছাড়ব না।
রিপ বলল,
‘ কি হচ্ছে নীরা। যে কেউ চলে আসতে পারে। ছাড়ো।
নীরা ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ঝাঁপিয়ে পড়ে রিপের গালে চুমু খেয়ে বলে
‘ টা টা ব্যারিস্টার। আমার কাজ শেষ। বাকিটা পরে দেব। টা টা।
রিপ ভ্রুকুঞ্চন করে ফেলল।
‘ এ কেমন বউ তার? আল্লাহ!

______________________

রেহান মাহিদকে ফোনের উপর ফোন দিল। প্রায় সাত আটবার রিং হওয়ার পর রেহান রিপকে বলল,
‘ আন্কেল ও তো ফোনই তুলছেনা।
রিপ বলল,
‘ আমি দেওয়ার জন্য ধরছে। দাঁড়াও আমি দেই।
রিপ ফোন দিল। মাহিদ সাথে সাথে ফোন তুলল। রিপ রেহানকে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ নাও তুমি বলো যা বলার।
রেহান ফোন কানে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাইরে চলে আসল। মাহিদ বলল,
‘ জি হয়ছে বাপ? এত ফোন দেও কিল্লাই। কবুল বলার সময় হয়ছেনি?
রেহান বলল,
‘ পার হয়ে যাচ্ছে। এদিকে রিপ আন্কেল রেগে তুলকালাম বাঁধিয়ে দিচ্ছে।
মাহিদ বলল,
‘ ব্যারিস্টারের এই এক জ্বালা। শালার ব্যারিস্টার। আজ তার বাচ্চার বিয়া, অথচ সে এখনো খ্যাঁক খ্যাঁক করতে আছে। বরবাবুর লাইগা ভালো কইরা কথা কওন যায়না?
রেহান হাসল। বলল,
‘ শালাবাবু এবার একটু রোম্যান্টিক হোন। প্রেমনিবেদন করা শিখুন। এমন হলে তো আমার বোনডার কপাল পোড়া।
মাহিদ ফোন কেটে দিল। রেহান বলল,
‘ এই যাহহহহ। ফোন কেটে দিল?

_________________________

বাইক থেকে নামার সাথে সাথে রিক কান টেনে ধরল মাহিদের। কানে মোচড়ে দিয়ে বলল,
‘ বরমিয়া আপনার সমস্যা কি? পালায় পালায় থাকছেন কেন?
মাহিদ বলল,
‘ আমার কান বাপরে ছাড়ো বাপের ভাই। কান লইয়া টানাটানি করো ক্যান মিয়া?
রিক বলল,
‘ হিরোসাহেব ধুমধাম কইরা বিয়া না কইরা লুকায় লুকায় বিয়া করতাছে ক্যান?
মাহিদ বলল,
‘ বিয়া করতে আহিনায়। খাইতে আইছি। পোলাও মাংস খামু। আহা।
রিক বলল,
‘ পোলাও মাংস শেষ। পোলাও মাংস কাল খাইস। আজ সাদা ভাত খাইয়া বিয়া কইরা লহ। আগে বিয়া করা ফরজ।
মাহিদ পেটে হাত বুলিয়ে বলল,
‘ আমার পেট বাপ আমারে বদদোয়া দিব।
রিক হেসে ফেলল। কান ধরে টেনে নিয়ে গেল ভেতরে। রাহি হাত তালি দিয়ে বলে উঠল,
‘ মিহি এসেছে কেন? অফিচমেন কান ধরেছে কেন? মিহি কান্না করছেনা কেন?
মাহিদ সেই চোখ নিচে নামালো। আর উপরে তুলল না। কারো দিকে তাকালো না। সবাই মৃদুমৃদু হাসছে তার কান্ড দেখে। মাহিদ নিচের দিকে তাকিয়ে কান চুলকাতে চুলকাতে বলল,
‘ লজ্জা বাপ, তুই আমারে ছাড়। আমি মাথা তুলতে পারতাছিনা বাপ। বুঝোস না ক্যান?
রিক কান শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল উপরে। বলল,
‘ কোনোকথা বলবিনা। নিজ হাতে আজ বর সাজাবো। আয়।
রেহান পিছু পিছু যেতে যেতে রাহিকে বলল,
‘ বর সাজাবো। চলো মাই বাপ।
রাহি হাসল। বলল,
‘ রাহি বর সাজবেনা কেন?
রেহান বলল,
‘ বউ নেই তাই।
রাহি বলল,
‘ বউ নেই কেন?
রেহান বলল,
‘ বউ হয়নি তাই।
‘ বউ হয়নি কেন?
‘ বউয়ের মা বাপ হয়নি তাই।
‘ মা বাপ হয়নি কেন?
‘ বউয়ের মা বাপের,,,, মা বাপের বিয়ে হয়নি তাই।

রিক মাহিদকে টেনে টেনে নিয়ে যেতে থমকালো। পরী আর নীরার পেছনে মেয়েটির সদ্য ধোঁয়া ভেজা স্নিগ্ধ মুখটা দেখে হাসল। মেয়েটি রিক আর মাহিদকে দেখে চমকালো। চোখ তুলে দেখল। ছেলেটি চোখ তুলল না। রিকের কানধরা হাতটা চেপে ধরে মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকল। বিড়বিড় করে কি কতগুলো ও যেন বলল। কেউ শুনল না। পরী হেসে দিল খিক করে। ডাকল,
‘ ভাইইই? মাথা নামিয়ে রেখেছিস কেন?
পিহু উৎসুক হয়ে তাকালো। নীরা বলল
‘ আমার বাচ্চাটাকে সবাই লজ্জা দেও কেন? বড়দা নিয়ে যান তো। রেহানের কোলে রাহি বলে উঠল,
‘ মিহি পিহুকে দেখেনা কেন? নজ্জা পায়না কেন?
রিক রেহান হো হো করে হেসে দিল। পিহু এত হাসাহাসির মানে বুঝল না। সে তো অন্য কাজে ব্যস্ত।

রিক বলল,
‘ আমরা তোমাদের আগে ফার্স্ট হবো। ফটাফট রেডি করে আনব।
পরী বলল,
‘ নো পাপা আমরা আগে। দেখে নিও।
রেহান বলল,
‘ চ্যালেঞ্জ?
পরী বলল,
‘ চ্যালেঞ্জ।
মাহিদ পায়ের আঙুল মোচড়াতে মোচড়াতে মনে মনে বলল,
‘ ধুরর বাপ। এরা আমারে এইখান থাইকা যাইতে দেইনা কেন বাপ? আমার লজ্জায় মাথা কাইটা পইড়া যাইতাছে।
রিক বলল,
‘ চল,চল। মাথাটা তোল এবার। এত লজ্জা পাসনা বাপ।
দুজনকে দুদিকে নিয়ে গেল। পিহু যেতে যেতে পিছু ফিরে তাকালো একটুখানি।
ওই ছেলেটি ও একটুখানি তাকালো কি তাকালো না, পিহুকে দেখার সাথে সাথে চট করে ঘাড় ঘুরিয়ে ফেলল। পিহু যেতে যেতে ভ্রু উঁচালো। ঠোঁটে দেখা গেল, মৃদুমন্দ হাসির চটা।

_________________________

কালো রঙের পাথরের কারুকাজের ভারী পাঞ্জাবী গায়ে দিতেই মাহিদের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল৷ রেহানকে বলল,
‘ তাড়াতাড়ি কাজী ডাকো বাপ। বিয়া কইরা এইডা ছুইরা ফালায় দিমু৷ সহ্য হইতাছে না। আমারে বসায় ফেলতাছে। কি ভার? বাপরে বাপ।
রেহান বলল,
‘ রিপ আন্কেল চলে আসবে এক্ষুণি।
মাহিদ বলল,
‘ কিতা?
রেহান বলল,
‘ যেই হারে বাপ ডাকছ তুমি!.
মাহিদ হাসল। বলল,
‘ তাইলে আর ডাকুম না। যাও৷। রেহান বলল,
‘ চলেন বরবাবু। আমরা ফার্স্ট। ওরা এখনো বোধহয় রেডি হয়নি। চলেন।
মাহিদ নড়ল না। বলল,
‘ আমি যাইতাম না বাপ। আগে কাজী আইসা বসুক৷ কবুল কইবার সময় যামু।
রেহান বলল, আমি জিতে গিয়ে ও হেরে যাব পরীর কাছে।
রাহি হেসে বলল,
‘ রেহান লুজার কেন? পরী উইনার কেন?
রেহান বলল,
‘ এটা কোনোকথা?
মাহিদ পান্জাবী একটান দিয়ে খুলল। উদাম গায়ে এদিকওদিক হাঁটতে বলল,
‘ পারুম না বাপ। এই পান্জাবী বাপরে কবুল বলার আগে পইড়া লমু। কাউরে রুমে আসতে দিওনা বাপ। আমি এভাবেই কিছুক্ষণ থাকি। আহ কি আরাম। মাইরা ফেলল আমায়। মইরা গেলাম। ইন্না-লিল্লাহ পড়তে থাকো ধীরে ধীরে৷। রেহান কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে চলে গেল।

পরী পিহুকে নামিয়ে আনতেই চেঁচিয়ে রেহানকে বলল,
‘ হেইই লুজার সিংগারম্যান।
রেহান বলল,
‘ আমরা অনেক আগে রেডি হয়েছি। বর নামেনা উপর থেকে।
পরী বলল
‘ যাইহোক আমরাই উইনার।
রেহান মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে থাকল।
পরী হাসল। ইশারায় আবার ও বলল,
‘ লুজার।

মাহিদ পাগড়ি পড়িয়ে দিল রাহির মাথায়। রাহির পুরো মুখ ঢেকে গেল পাগড়ীর আড়ালে। রাহি বলল,
‘ মিহি কিছু দেখিনা কেন?
মাহি হাসল। বলল,
‘ তোর আফসোস থাইকা যাব বাপ। তার লাইগা তুই পাগড়ি পড়। আমি পাঞ্জাবী পড়ি। এসব পাগড়ি পড়ে জামাই সাজতে পারুম না বাপ।
রাহি বলল,
‘ রাহি কিছু দেখেনা কেন? রাহির রাগ লাগে কেন?
মাহিদ পাগড়ি দূরে ছুড়ে মেরে বলল,
‘ তুই পাগড়ি বাপ ঘুমা৷ আমি বিয়া কইরা আসি।
রিক এসে বলল,
‘ বউসাহেব আপনি বেরোচ্ছেন না কেন?
মাহিদ বলল,
‘ বউসাহেব কিতা বাপ? আমারে দেইখা বউ মনে হয়।

রিক বলল,
‘ যেভাবে এখানে লুকায় আছোস? তো বলব না?
মাহিদ বলল,
‘ কম কথা কও বাপ। আমি যামু কেমনে। লজ্জা করে বেশি।

রিক আওয়াজ করে হেসে দিল। বলল,
‘ আমার পিছু পিছু আয়। সবাইকে তোর দিকে না তাকাতে বারণ করব।
মাহিদ গেল রিকের পিছু পিছু। নিচে বিশাল আয়োজন দেখে লুকিয়ে পড়ল পিলারের সাথে। রিককে বলল,
‘ যামু না।
রিক বলল,
‘ কান ধরে নিয়ে গেলে আর ও বেশি লজ্জা পাবি। এখন আমার পিছু পিছু চল। আয়।
মাহিদ একদম রিকের পিছু পিছু গেল। রাহি রিকের কোলে থাকা অবস্থায় চিৎকার দিয়ে বলল,
‘ মিহি এসেছে। বর এসেছে। বর এসেছে কেন? মিহি এসেছে কেন?
সবাই তাকালো। মাহিদ মিনমিন করে রাহিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘ তোরে আমি একলা পাই বাপ। তোরে আমার ছেড়ির লগে প্রেম করতে দিমুনা বাপ। তোরে ছ্যাঁকা না খাওয়াইলে আমার নাম মাহিদ খান নয়। বইলা রাখলাম।

মাহিদ মুখের উপর হাত দিয়ে ঘাম মুছল। নীরার কাছে গিয়ে নীরার শাড়ির আচঁল টেনে মুখ মুছে বলল,
‘ মেরি মা, বিয়া কখন শেষ হইবো। আমি বিয়া কইরা চইলা যামু বাপ। এইহানে আমার দম আটকায় আসতাছে বাপের বউ। আমি মইরা যামু।
নীরা ফটাফট ছেলের কপালে চুমা খেয়ে বলল,
‘ আজ আমার বাচ্চাটার বিয়া। আমার কি যে খুশি লাগতাছে বাপ। আমার বাচ্চাটার এইদিন দাড়ি উঠল, আর আজ বিয়া কইরা ফেলতাছে। কয়দিন পর বাচ্চাকাচ্চার বাপ হইয়া যাইবো। ওররে আমি দাদু হমু। আব্বা আমার যে কি খুশি লাগতাছে।
মাহিদ বলল,
‘ মেরি মা। তোমার খুশি দেইখা কচুগাছে লটকায় ফাঁস খাইতে মন চাইতাছে।
নীরা বলল,
‘ সবসময় আজেবাজে কথা বলিস কেন?
মাহিদ হাসল। মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ মেরি মা, তোমার বাপ বিয়া কইরা নিতাছে। আমিন কও।
নীরা বলল,
‘ আমিন।
মাহিদ হেসে উঠল। নীরা চেঁচিয়ে উঠল। বলল,
‘ আব্বা ওই দেখ তোর বউ। কত সুন্দর লাগতাছে, তুই দেখস নাই?
মাহিদের ভ্রুকুঞ্চন হলো। নীরা আঙুল দিয়ে বধূবেশে অনঢ় হয়ে বসে থাকা মেয়েটিকে দেখিয়ে দিল। মাহিদ সেদিক একপলক তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
‘ মেরি মা, আমারে শেখাও, কবুল কেমনে কমু? আমার সেইই লজ্জা করতাছে বাপ। কবুল বইলা আমি মনে হইতাছে বেহুশ হইয়া পইড়া মইরা যামু।
নীরা বলল,
‘ চোখবন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে কয় দিবি বাপ। মনে করবি তোরে পোলিও খাওয়াইতাছি। একটু ঝাঁজ লাগবো, কিন্তু পরে ভালা লাগবো। বুঝছোস?
মাহিদ বলল,
‘ কবুল, কবুল, কবুল। বইলা দিলাম মা। তুমি কাজীর কানে কানে গিয়া বইলা দিও তো বাপের বউ।

নীরা বলল,
‘ না চিল্লাইয়া কইতে হইবো। বুঝছোস?
মাহিদ বলল,
‘ তাইলে বিয়া করুম না।
নীরা বলল,
‘ তাইলে তোর বাপ আর আমি কইরা লমু। চাপ নিসনা বাপ।
মাহিদ হাসল। বলল,
‘ মা তুমি এক্কান কলিজার টুকরা।

________________________________

কাজী বিয়ে পড়ালো। আগেরবারের মতো ঘোমটার আড়ালের মেয়েটিকে কবুল বলতে বলা হলো। পরী এসে পিহুর কানে কানে বলে গেল,
‘ পিহু মাহিদ শোনেমত বলতে হবে। নয়ত আবার পরে বলবে, তুই আমার বউ না বাপ, তুই কবুল কইছস আমি হুনিনাই।
কান্নার মাঝে পিহু খিক করে হেসে দিল। ওপাশে মাহিদ হাতের তালু ঘষতে ঘষতে মিনমিন করে বলল,
‘ তুই কইস না বাপ। কইস না। আমার পালা আইবো।
পিহু পরীর কথায় হাসতে হাসতে বলল,
‘ কবুল,কবুল,কবুল।
তারপর মিনমিন করে বলল,
‘ জাতির ভাই আপনাকে কবুল। এবার আপনার পালা।
মাহিদ চোখ বড় বড় করল। শুকনো ঢোক গিলল। কাজীকে বলল,
‘ কবুল কইছি তিন দশে ত্রিশবার। আর কইতে হইবো??
কাজী শিখিয়ে দিল।
‘ কনের মতো করে বলুন।
মাহিদ বলল,
‘ পারুম না বাপ। আর কইতে পারতাম না। আমার মারে কইছি।
কাজী চোখে ভালো করে চশমা লাগাল। বলল,
‘ কনের মতো করে বলুন। তিনবার কবুল বলুন।
মাহিদ রেগে গেল। দাঁড়িয়ে পড়ে হাত নেড়ে বলল,
‘ কইতাম না আর পারুম না। জোর করেন ক্যান?
কাজী রিপের দিকে তাকালো।

রিপ চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করল। তারপর মাহিদকে বলল,

‘ মাহি উনি যেটা বলছে সেটা শোন।

মাহিদ বিরক্ত হলো। বলল,

‘ কবুল।

কাজী বলল, কনের মতো বলেন।

মাহিদ বলল,

‘ কবুল কইছি।

কাজী বলল,

‘ কনের মতো করে বলেন।

মাহিদ বলল,

‘ কবুল, কবুল, কবুল। কইছি বাপ। এবার আমি যাই। জ্বালায় মারল সবাই।

মাহিদ চলে গেল। সবাই হেসে লুটোপুটি খাওয়ার অবস্থা হলো। রাহি তার পড়নের পান্জাবীর হাতা গুটিয়ে এসে বলল,

‘ কবুল,কবুল,কবুল বলে কেন? মিহি চলে গেল কেন? সব্বাই হাসে কেন?

পিহু মাথা নামিয়ে কেঁদে ফেলল হঠাৎ। এত হাসাহাসির মাঝে হঠাৎ এমন করুনসুরে কান্না সবাইকে থামিয়ে দিল। রেগেমেগে চলে যাওয়া ছেলেটি যেতে যেতে থমকালো। পিহুর ঘোমটা সরিয়ে দিল পরী। জড়িয়ে ধরে বলে,
‘ কাঁদছ কেন? পিহু? এটা কি কাঁদার সময়?
পিহু??
পিহুর কান্না থামাতে পারল না কেউ। এই কান্নার মানেটা ও বুঝলনা কেউ। এই কান্নার আড়ালে, কত সুখ, কত আনন্দ, কত ত্যাগ, কত অপেক্ষা, কত নোনাজল যে রয়েছে। কেউ যদি জানত? একমাত্র পিহু জানে। একমাত্র পিহু জানে কতশত প্রতীক্ষার পর আজ দিনটি ধরা দিল তারকাছে। সে পেল তার প্রাণপুরুষ, প্রাণসখাকে।

_______________________________

খাটের উপর পিহুকে ঘিরে সবাই বসে রয়েছে। পিহুর কোলের উপর বসা রাহি। সে পিহুকে বলল,
‘ পিহু বিটিফুল কেন?
পিহু হাসল। বলল,
‘ আব্বা বিটিফুল তাই।
রাহি বলল,
‘ আব্বা বিটিফুল কেন?
‘ আব্বাটা আমার তাই৷
পিহু গলার কাছে চুলকিয়ে পরীকে বলল,
‘ দিদিয়া শাড়ি চেন্জ করব। ভালোলাগছেনা।
পরী বলল,
‘ আম্মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসি।
পিহু মাথা নাড়ালো।

_______________

রিপ এসে সবার উদ্দেশ্যে বলল,

‘ কাল বাড়িতে তুলব পিহু। আজ রাতটা এখানেই কেটে যাক।
পরী বলল,
‘ আজ সারারাত আমরা গল্প করে কাটিয়ে দেব পাপা । রেহান বলল,
‘ বরবাবু কোথায়? বউ রেখে পালালো কোথায়? একটু দুজনকে একপাশে বসাও। আমরা দেখি। ছবিটবি তুলব না?
পরী বলল,
‘ তাই তো। ভাই কোথায়?
রিপ বলল,
‘ আবার পালিয়েছে হয়ত। উফ এই একটা ছেলে আমার মাথা খেয়ে ফেলছে। তার বোধবুদ্ধি হবে কখন?

পরী রেহান হাসল। নীরা বলল,
‘ ঝড়বৃষ্টির রাত। কোথায় যায় ছেলেটা?
ইশা এসে বলল,
‘ কোথাও যায়নি। ছাদে আছে হয়ত। রেহান ফোন দাও। আসতে বলো। মেয়েজামাইকে একটু মন ভরে দেখি।
সবাই একসাথে হাসল। আদি ও হাসল। ইশা মুখ মোচড়ালো। বলল,
‘ আমি যাকে তাকে হাসতে বলিনি?
আদি মুখ কালো করে ফেলল। রাগ করল। মিষ্টির দিকে আর তাকাবেও না সে। ভালোবাসবে, মারবে ও। মিষ্টি বুঝেনা।

_____________________

আড্ডা বসল। মেঝের টাইলসের উপর পাটি বিছিয়ে দিল ইশা। সবাই বসল। রাহি বড় গিটারটি টেনে টেনে এনে ধরিয়ে দিল রেহানকে। বলল,
‘ ছিকুকে গান শোনওনা কেন?
পরীকে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসল। বলল,
‘ পরী গান করেনা কেন?
রেহান আর পরী হাসল। পুরো রুম ভর্তি সবাই একসাথে হৈ-হুল্লোড় করে উঠল। রেহা নের মামার মেয়ে তিনটা পরীকে রেহানের পাশে বসিয়ে দিয়ে বলল,
‘ ভাবিজান গান শোনাবে। পছন্দের গান, দিল কো কারার আয়, তুঝপে পেয়ার আয়া,,,,,,,,,,

পরী হাসল। রেহান ভ্রু উঁচালো। পরী বলল,
‘ যাহহহ।
পিহু হাসল। বলল,
‘ দিদিয়া কবে চেন্জ করব?
পরী বলল,
‘ আড্ডা শেষ হোক। আমি চেন্জ করিয়ে দেব।
পিহু হাসল। বলল,
‘ তুমি আর দাভাই একসাথে গাইবে। পরী হাসল। বলল,
‘ তোমার বরটা কোথায়, আসেনা কেন?
পিহু হাসল মৃদু। “” তোমার বর “” কি সুন্দর সম্বোধন!
ইশা বলল,
‘ ও আসছে। পরী তুমি শুরু করো ততক্ষণে। ঝাড়বাতির রঙবেরঙের আলো, সবার মুখে মৃদুমন্দ হাসির রেখা, উজ্জ্বল প্রশান্তির মুখ, সবকিছু মিলিয়ে মুহূর্তটা মন কেমন করা। গিটারের টুংটাং শব্দে দ্বিগুণ মুখোরিত হয় পরিবেশ। চারদিকে বসানো ডেকোরেশনের টেবিল ফ্যানের বাতাসে উড়ছে পর্দা, চুল, শাড়ির আঁচল। গিটারের টুংটাং শব্দ যেন ‘ ভালোবাসি, ভালোবাসা ‘ বলে বলে সুর তুলছে। পরী সিক্ত কন্ঠে গেয়ে উঠল,

দুয়া বি লাগে না মুঝে,
দাওয়া বি লাগে না মুঝে
জাব সে দিল কো মেরে তু লাগে হ্যায়
নিদকোওও রাআতোন কি মেরি
চাহাত বাতোন কি মেরি
চ্যান কো বি মেরে তুনেইয়ানথাগা হ্যাএএ
জাব ছাচেবারুন মেএ বান্দে
আখেকারুন মে
নাজার তু ইয়ারর, আ,,,,,,,য়া

দিল কো করার আ,,,,,,য়া
তুঝপে পেয়ার আয়া
পেহলি পেহলি বার আয়া
ওহহ এয়ারা,,,,,

দিল কো করার আ,,,,,,য়া
তুঝপে পেয়ার আয়া
পেহলি পেহলি বার আয়া
ওহহ এয়ারা,,,,,

সাদা পর্দাটা নড়ে উঠল হঠাৎ। সবার ঘোর কাটল না । কেটে গেল পিহুর। সবার আগে চোখ পড়ল তার। সে উঠে গেল। ধীরপায়ে হেঁটে গেল পর্দার কাছাকাছি। পর্দার আড়ালে দাঁড়ানো কালো পান্জাবী পড়া ছেলেটি দাঁড়িয়ে থাকল নিজেকে আড়াল করে। নরম নরম পা ফেলে আসা মেয়েটিকে যেন অনুভব করতে পারল আগে থেকেই। পিহু পর্দা সরাল কৌতূহল নিয়ে। ছেলেটি দাঁড়িয়ে রয়েছে পিছু করে। বাতাসের দোলায় নড়েচড়ে উঠছে চুল, শাড়ি, ভালোলাগার আবেশে ছেয়ে যাচ্ছে মনপ্রাণ । রক্তিমবর্ণ ধারণ করেছে গালদুটো। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে গেল মুহূর্তেই। ছেলেটি ফিরল ধীরে। কামড়ে ধরে রয়েছে গোলাপ ফুলের ডাঁটা। গোলাপ ফুলটি থেকে সুবাস ছড়াচ্ছে। পিহু এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনায় সেখানেই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ছেলেটি গোলাপ ফুলের ডাঁটা কামড়ে ধরেয় রেখেছে,সাথে ঠোঁটের কোণায় ভালোবাসাময় একটি হাসি। পিহু সাথে পর্দা সরিয়ে এপাশে চলে এল। পর্দার ওপাশে ছেলেটি। পিহু বুকে হাত দিয়ে হাসল। রাহি দৌড়ে এল। ছেলেটির মুখ থেকে ফুলটা নিয়ে ধরিয়ে দিল পিহুকে। পিহু ফুলটির দিকে তাকিয়ে থাকল নির্নিমেষ। কানে বাজল,

দিল কো করার আ,,,,,,য়া
তুঝপে পেয়ার আয়া
পেহলি পেহলি বার আয়া
ওহহ এয়ারা,,,,,

চলবে,

দুলাইন মন্তব্য আশা করছি বাপ ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here