মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_৩০

0
653

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_৩০
#পুষ্পিতা_প্রিমা

ড্রয়িংরুমে এল আইমি। বাবা আর চাচ্চু কথা বলছে। ইমদাদ সাহেব তাকে দেখামাত্রই বলল, ইমি দেখাও ছবি।
আইমি বলল, সারপ্রাইজ চাচ্চু।
ইমদাদ সাহেব হাসল। বলল, নো ডিয়ার। আমার তর সইছেনা। মিস্টারের ছবি আমি আজই দেখব।
আইমির কাজিন নেমে এল। বলল, বাবা ইমি আপুর বরের নাম কি জানো?

ইমদাদ সাহেব হাসল। বলল,

‘ জানব কি করে? ইমি তো বলছেই না। ভাই ও বলছে না।

আফাজ আহমেদ বলল,
‘ আমি তোকে বলেছিলাম ইমদাদ। আদি চৌধুরী। আজিজ চৌধুরীর ছোট ছেলে। তুই বোধহয় খেয়াল করিস নি? আদি মানে ওই আদি।

ইমদাদ সাহেব হাসল। আইমি বলল,

‘ চিটার বাবা। তুমি বলে দিয়েছ কেন?

আফাজ সাহেব হেসে সোফায় আয়েশি ভঙ্গিতে বসল। বলল,

‘ সরি মা। তোর চাচ্চুকে অনেক নাচিয়েছিস। তোর যে আদির সাথেই বিয়ে হচ্ছে এটা শুনে ওর চেহারাটার দিকে তাকিয়ে দেখ একবার। শক খেয়েছে প্রচুর পরিমাণ।

সবার হাসির মাঝে চেহারাখানা মলিন হয়ে আসল ইমদাদ সাহেবের। আদি চৌধুরী মানে?
ইমদাদ সাহেব হাসিখুশি আইমির চেহারার দিকে তাকিয়ে চট করে সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। কাজ আছে।

সবার অবাক দৃষ্টি উপেক্ষা করে ইমদাদ সাহেব বেরিয়ে এল বাড়ি থেকে। বাইরে এসে ফোন দিল আদির ফোনে। কয়েকবার রিং হলে ও কেউ ফোন তুলল না। ইমদাদ সাহেবের চেহারা রঙ পাল্টে গেল নিমেষেই। রাগ হচ্ছে আদির উপর। নিজের স্ত্রীর,বাচ্চার খোঁজখবর না নিয়ে আদি আবার বিয়ে করতে যাচ্ছে? বিয়ের ফাংশন তো আর দুইদিন পর। কি হবে?

_______________

বৃষ্টি থামায় ঠান্ডা শীতল পরিবেশ চারপাশে। ইশা ছাদের রেলিংয়ে হাত দিয়ে নাক দিয়ে শুঁকল বকুল ফুলের গন্ধ। কতদিন ছুঁই নি সো বকুল। আজ কুড়িয়ে এনেছে কয়েকটা। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের মৃদুমৃদু আলোয় আবছা আবছা দেখা গেল একটা গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে খান বাড়ির গেইটের কিছুটা দূরে। ইশা বিশেষ পাত্তা না দিলে ও তার ভয়টাই সত্যি হলো। সে দৌড়ে নিচে নামল। গেইট বন্ধ করে দেওয়ার মতো চিন্তা তার মাথায় এল। সে দৌড়ে গেল, অদৃশ্য বাঁধায় পারল না গেইট বন্ধ করতে। গেইট ফেলে সে বেরিয়ে পড়ল নির্জন রাস্তায়। গাড়িটার কাছাকাছি যেতে না যেতেই মাথা নিচু করে গাড়ির উপর বসে থাকা ছেলেটিকে দেখে তার বুক কাঁপল ছন্দ তুলে। মুখ ফসকে আপনাআপনি বের হলো একটি শব্দ, ডক্টর?
ঠিক তিনবছর আগে ডক্টরকে সে দুবার এভাবে বসে থাকতে দেখেছে। আজ আবার ও? কিন্তু কেন?
আদি মুখ তুলল না। ইশা নিঃশব্দে সিদ্ধান্ত নিল সে চলে যাবে । ঠিক তাই করল। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। আবার পিছু ফিরে তাকাল। সিদ্ধান্ত এবার পাকাপোক্ত হলো।

দৌড়ে চলে যাওয়ার আগেই ধীরে ধীরে আদি ঘুরে এল গাড়ির অন্যপাশ দিয়ে। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল আকাশের দিকে মুখ করে। তাকাল না ইশার দিকে। অন্যহাতে থাকা খাঁচার দরজা খুলে দিল। মিনি উড়ে উড়ে চলে আসল একদম ইশার কাছে। ইশার গালে গাল ঘষে ডেকে উঠল,

‘ মিষ্টি। মিষ্টি। মিস ইউ। মিস ইউ।

ইশার পা দুটো অনবরত কাঁপাকাঁপি করতে লাগল। বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। সে পিছু হাঁটল। মিনিকে সরাতেই চাইলে ও মিনি সরল না। ডাকল,

‘ আদি। মিষ্টি। আদি। মিষ্টি। লাভ ইউ। লাভ ইউ।

ইশা তারপর ও দু পা পিছু হাঁটল। মিনিকে সরাতে চাইল। চিৎকার করে তার বলতে ইচ্ছে হলো।

‘ সব মিথ্যে। সবটা মিথ্যে। আমি মিষ্টি নই। আমি নই মিষ্টি।

কিন্তু সে উচ্চারণ করতে পারল না। চোখ সরাতে পারল না তার দিকে এগোনো ছেলেটির চোখ থেকে। ছেলেটির ভয়ানক দৃষ্টি উলটপালট করে দিচ্ছে সব। নিঃশেষ করে দিচ্ছে মিষ্টির এতদিনের জমে থাকা রাগ,অভিমান।
সে নিচে তাকিয়ে বলল,
‘ কি হচ্ছে এসব? আমি চিনি না এসব। জানিনা। কিচ্ছু জানিনা। এগোবেন না।
আমি চিৎকার করব।
আদির নীরবতা ভাঙল। সে চিৎকার করে উঠল।
‘ করো চিৎকার। করো। চিৎকার করে বলো আমি ঠকিয়েছি ডক্টরকে। বলো। বলো!

ইশা থমকে গেল আদির চেঁচিয়ে বলা কথায় আর তুমি,, ঠিক আগের তুমি সম্বন্ধে । বিড়বিড় করে কি যেন বলল। আদি তার বিষণ্ণ চেহারায় অসহায় হয়ে তাকাল মিষ্টির দিকে। ইশা গলল না তারপর ও। ঘাড় ঘুরিয়ে দৌড় দিতে চাইল। কিন্তু হিতে বিপরীত কিছু হলো। সে আটকা পড়ল। আটকে গেল বহুদিন পর ডক্টরের বাহুবন্ধনে। একেবারে বুকের মধ্যিখানে যখন এসে তার মুখ ঠেকল সে স্পষ্ট শুনতে পেল সেই ডাক,
‘ মিষ্টি। মিষ্টি। মিষ্টি,,,,,,,,,,,,,,
আদিকে মিষ্টিকে তার বুক থেকে মুখ তুলে দুইবাহু খামচে ধরল। চেয়ে রইল মিষ্টির ভয়ার্ত মুখের দিকে। ডাগর ডাগর চোখদুটোর দিকে।
মিষ্টির গলার একপাশে চোখদুটো চেপে ধরে বলল, আই হেইট ইউ। রিয়েলি হেইট ইউ। হেইট ইউ সো মাচ মিষ্টি।
তোমার জন্য টেডিবিয়ার আমি এনেছি মিষ্টি। আছে আমার কাছে খুব যত্নে। খুব যত্নে রেখেছি আমি সেটিকে।
কিন্তু আমারটা কোথায়? আমার দেওয়া পুতুলটি? সেটা কোথায় মিষ্টি? তুমি মেরে ফেলেছ?
মিষ্টি গলে আসে। কিন্তু সেই গলানিকে স্থায়ী হতে দেয়না সে। দূরে ঠেলে দেয় আদিকে। চেঁচিয়ে বলে,
‘ কোথাও নেই সে। হারিয়ে গেছে। আপনার জন্য সে মরে গেছে। মিষ্টি ও মরে গেছে। যান। সরুন। আমার পথ ছাড়ুন।
সে চলে যায় আদিকে একা রেখে। আদির ভয়ংকর চাহনি নিমেষেই পরিণত। হয়
অসহায়ে।

সে ওই চলে যাওয়া মেয়েটিকে কি করে ভালোবেসেছিল? যার মনে দয়া মায়া, ভালোবাসার ছিটেফোঁটা ও নেই তার প্রতি। বহুদিন পর আজ তার স্পর্শে কেঁপে উঠার কথা ছিল মিষ্টির । চোখের চাহনিতে হারিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। বহুদিন পর আজ হেসেখেলে বলার কথা ছিল,
‘ ডক্টর আমাদের বাচ্চা আছে। আমার কাছে আছে। আমি যত্নে রেখেছি তাকে।
কিন্তু মেয়েটি তা বলল না। বলল, সে নাকি হারিয়ে গেছে। বুক কাঁপল না মিষ্টির। ঠোঁট কাঁপল। গলা ধরে এলো না। এতবড় কঠিন কথা কি করে একজন মা বলতে পারে?

আদির ফোন বাজল। সে বসে রইল গাড়ির উপর কতক্ষণ!
ফোন বাজল বেশ কয়েকবার। ফোন তুলল সে অবশেষে । ফোনের ওপাশে এক মায়ের আহাজারি শোনা গেল।

‘ আদি মিনিকে নিয়ে চলে গেলে? মায়ের সাথে দেখা করলে না একবার? তোমাকে যে অনেক কথা বলার ছিল। একটিবার মায়ের কথা মন দিয়ে শোনো। তুমি আমার আদরের বাচ্চা। তোমার খারাপ কি করে চাই আমি?

বলতে না বলতেই আলিয়া কাঁদল। আদি তার নীরবতায় জল ঢেলে দিয়ে বলল,

‘ কেন কাঁদছ মা? তোমার বাচ্চা তোমার কথা শুনছে না বলে? শুধু কথা শুনছে না বলে?

আর আমার বাচ্চা? সে নেই মা। হারিয়ে গেছে। মরে গেছে। আমার বাচ্চা মৃত মা। মিষ্টি বলেছে।

আলিয়া না না করে উঠল। বলল,

‘ তোমার বাচ্চা বেঁচে আছে আদি। তোমার একটা রাজকন্যা আছে। একটি জীবন্ত পুতুল আছে। সে বেঁচে আছে। সে কোমল ঠোঁট দুটো নেড়ে কথা বলে। পিটপিট করে তাকায়। খিলখিল করে হাসে। ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না করে। গুটিগুটি পায়ে হাঁটে। পাকা পাকা কথা বলে। আমাকে দাদ্দা ডেকেছে আদি। তুমি জানো ও খুব দুষ্টু। ও তোমার বাবাকে মুখ ভাঙিয়ে দিয়েছে। তুমি জানো সে সেজে আয়নায় নিজেকে দেখে খিলখিল করে হাসে। ও তোমার প্রিন্সেস আদি। চোখদুটো তোমার মতো। ওর রাগগুলো তোমার মত আদি। ভীষণ রাগী। তোমার মেয়ে।

আদি কথা বলতে পারেনা। শুকনো ঢোক গিলে বলে,
‘ মা আমার প্রিন্সেস আছে? আমাকে বাবা ডাকে? আমার কথা তার মনে পড়ে কখনো? মিষ্টিকে মা ডাকে?
আলিয়া চুপ হয়ে যায়। বলে, সে খান বাড়িতেই আছে আদি। আদিশা খানম পরী। তোমার প্রিন্সেস।

কিছুক্ষণের মধ্যে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। আদি মনোযোগ দেয় ফোনে। ফোনের ওয়ালে নিয়ে আসে মনকাড়া, নজরকাড়া একটি ছবি। যেখানে একটি মা তার মেয়ের গালে গাল রেখে হসপিটালের কেবিনে শুয়ে আছে আধশোয়া হয়ে। কি অপূর্ব সুন্দর সেই দৃশ্য! কি মনোরম! কি মনোমুগ্ধকর!
আদি হাসল ছলছল চোখে। ফোনের ওয়ালে হাত বুলিয়ে বলল, ওতততো মাই প্রিন্সেস! আদিশা!!!

ইশা ঘুমন্ত পরীকে দোলনা থেকে নিয়ে নিল কোলে। দোলনায় ঘুমোবে বলে বায়না ধরেছিলল । রিকের সাথে বকবক করতে করতে এই অসময়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমন্ত নিষ্পাপ বাচ্চাটিকে এভাবে আচমকা কোলে নিয়ে নেওয়ায় রিক অবাক হয়ে পড়ল। কোনো কথা বলতে পারল না ইশার কান্না দেখে। মুনা ছুটে এল তার পিছু পিছু সাথে তালহা বেগম ও। ইশা দেয়াল ঘেষে বসে পড়ল পরীকে কোলে নিয়ে। ঘুমন্ত পরীর ঠো্টে চুমু খেল। পুরো গালে, মুখে মমতার স্পর্শ একেঁ দিল। বুকের সাথে চেপে ধরে এলোমেলো হয়ে কাঁদল। ছোট্টছোট্ট চুল গুলো কপাল থেকে সরিয়ে পাগলের মতো চুমু খেয়ে বকতে লাগল,

‘ আদিশা। আমি দেবনা ওকে। কাউকে দেব না। ডক্টরকে দেবনা। ও আমার কাছে থাকবে। আমার সামনে থাকবে। আমি কাউকে দেব না। বড়দা তোমাকে ও দেব না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি ওকে আমার কাছে রাখব। ও আমার মেয়ে। শুধু আমার মেয়ে। ডক্টর ওকে নিয়ে যাবে! আমি দেব না। না। না
কিছুতেই দেব না। এই শোন তুই যাবি না। আমাকে ছেড়ে যাবি না। আমি তোকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। আমি ডক্টরকে ছাড়া বাঁচতে শিখেছি। কিন্তু তোকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।

গুনগুন করে কাঁদল সে। হাঁটুমুড়ে। কোলে বাচ্চা মেয়েটি। মুনা এগোনোর সাহস পেল না। রিক ও সাহস পেল না। পরী নড়লচড়ল। মায়ের বুক পেয়ে আবার ও তলিয়ে গেল ঘুমের দেশে।

দরজার কাছাকাছি এসে দাঁড়াল রিপ। ইশা তখন পরীর মাথায় মুখ লাগিয়ে বসে আছে। রিপ এগিয়ে গেল ইশার কাছে। একটি হাঁটুগেড়ে বসল ইশার কাছে। ইশা ধীরে ধীরে মাথা তুলে তাকাল রিপের দিকে। ইশা কেঁদে দিল।

‘ রিপদা। আমায় ক্ষমা করো তুমি। রেগে থেকোনা। মুখ ফিরিয়ে থেকোনা। আমার কষ্ট হচ্ছে রিপদা।

রিপ চুপটি মেরে শুনল ইশার কথা। কিছুক্ষণ পর বলল,

‘ ফিরতে হবে আপনাকে। ডক্টর আদির কাছে। খুব শীঘ্রই। প্রস্তুতি নিন। মিসেস চৌধুরী।

ইশা চেপে ধরল পরীকে।

‘ যাব না রিপদা। এভাবে বলোনা। আমি নিজেকে আর জড়াতে পারব না ডক্টরের সাথে। পারব না। ডক্টর আইমির সাথেই ভালো থাকুক। শুধু আমার মেয়েটাকে নিয়ে না গেলে হবে। পরী আমার কাছে থাকবে। শুধু আমার কাছে থাকবে। তুমি যেওনা রিপদা।

______________

রিপ গুছিয়ে নিয়েছে স্যুটকেস। লন্ডনে ফেরার জন্য নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। এবার আর কোনো পিছুটান নেই তার। কারো জন্য আর দিনরাত চিন্তায় মগ্ন থাকতে হবেনা। কারো একটা ফোনের অপেক্ষায় দিনতিপাত করতে হবেনা। কারো মিষ্টি কন্ঠস্বর শোনার জন্য চাতকের মতো অপেক্ষা করতে হবেনা। এবার সে মুক্ত। এবার নিজেকে নিয়ে বাঁচার লড়াই। নিজের কথা ভাবার লড়াই। নিজেকে নিয়ে তার পৃথিবীটা সাজাবে এবার। নিজেকে ভালোবাসবে এবার।
দুপুর থেকেই পুরো বাড়িটা থমথমে। তালহা বেগম শুকনো মুখে সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। জহির মিয়া বেতের চেয়ারে বসা। রান্নাঘরে টুকিটাকি কাজ করছে মুনা। রিক রিপের সাথে এয়ারপোর্ট যাবে। রিপ নেমে এল নিচে। চুল কাটিং করেছে। তাই আজ অন্যরকম দেখাচ্ছে তাকে। রিপ নিচে নেমে এল। মুনার সাথে আলাপ শেষ করল। মা বাবাকে সালাম করল। তাদের দিকে না তাকিয়ে বলল,
‘ আমায় দোয়া করো। তোমাদের আবদার না রাখতে পারায় আমি দুঃখিত। বিয়ে নামক শব্দটার কোনো জায়গা হবে না আমার জীবনে। আমি ঠাই দেব না সেই শব্দটিকে। আমার ভালো লাগেনা। কি দরকার। আমি এভাবেই ভালো আছি। আমি যাচ্ছি।
তালহা বেগম ডুকরে কেঁদে উঠে। বলে,
‘ কেন বারবার যাচ্ছি, যাচ্ছি বলিস?
রিপ হাসল। মাকে জড়িয়ে ধরল। বলল, আসছি। আসছি বাবা।
মুনা দৌড়ে এল। কোলে তার পরী। ঘুমন্ত। রিপ নিয়ে নিল পরীকে। বলল,
‘ কে বলেছে আমার পিছুটান নেই? আমার পিছুটান তো এই মা। আমার পরী মা। এই মাকে আমি খুব খুব মিস করব। আমার কষ্ট হবে। খুব কষ্ট হবে।
মুনা শান্ত কন্ঠে বলল,
‘ ইশুর সাথে দেখা করবি না? ঘুমের ঔষধ নিয়েছে ও । শরীরটা ও ভারী অসুস্থ। ওকে এই অবস্থায় রেখে চলে যাবি?

‘ ডাক্তারের বউদের কাছে এসব সামান্য অসুস্থতা। ডাক্তার তো আছেই। কি দরকার আমার মতো ছোঁয়াছে রোগীকে। আমি ছুঁলে সে বরঞ্চ আর ও অসুস্থ হবে।
রিপের কন্ঠে মেশানো উৎকন্ঠা তারপর ও। ”’ বড়দাকে বলেছি একটা ভালো ডাক্তার দেখাতে। ভালো হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। চিন্তা করোনা। আমি আসছি। দেখে রেখো।

রিপ চলে যায়। গাড়ি নিরুদ্দেশ হয় মুহূর্তে খান বাড়ির গেইট পেরিয়ে।

________________

সেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে ইশা। উঠার নামগন্ধ নেই। পরীকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে। কাউকেই দিতে চাইছিল না। ছুতে ও দিচ্ছিল না। মুনা তাই পরীর সাথে ঘুমাতে বলেছিল। ঘুমানোর আগে বলেছিল, আমি ঘুমের ঔষধ নিয়েছি। আমার মেয়েকে পাশে রেখো। আমি আজকে ঘুমোবো ওর সাথে। মানা করোনা প্লিজ। শুধু আজ।
কিন্তু এতক্ষণে ও উঠছেনা কেন সে? সে কি জানে তার রিপদা চলে গিয়েছে?
মুনা পায়ে হাত দিতেই দেখল পা বরফ। হাত ও ঠান্ডা বরফ। মুনা চেঁচিয়ে ডাকল সবাইকে। শুধু তালহা আর জহির মিয়া এগিয়ে আসল। রিক তো রিপের সাথে। পরী গুটিগুটি পায়ে হেঁটে আসল। বিছানার উপর উঠে ইশার মুখ ধরে ডাকল,
‘ ফিপপপি????
ফিপি চোখ তুলে তাকাল না। পরী বলে ডাকল না। মা বলে ডেকে উঠল না। পরীর রাগ লাগল। কষ্ট লাগল। ইশার মুখে ঠাস করে চড় মেরে ডাকল, আমমমমমমা?
ইশা তারপর ও চোখ খুলল না। পরী তার ভেজা গাল লাগিয়ে দিল ইশার চোখ দুটোতে। মুখে। ঠোঁটে।
ইশা তারপর ও জেগে উঠল না। পরী এবার কাঁদল। নিজের মাথা ঠুকল খাটের সাথে। কান্না করল। তার কান্না দেখার সময় কারো হয়ে উঠল না। আশেপাশের লোকজন ডেকে এনে ইশাকে তোলা হলো অ্যাম্বুলেন্সে। তালহা বেগম আর জহির মিয়ার আহাজারিতে ভারী হলো পরিবেশ। সাথে পরীর। পরী কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে পড়ল সেই লোকজনের পিছুপিছু। মুনা আটকাতে গেলে হাতে কামড় বসাল। তালহার চুল টেনে দিল। কাঁদতে কাঁদতে এসে গেল গেইটের কাছাকাছি। হাতের মুঠো দিয়ে চোখ মুছল। অ্যাম্বুলেন্সটার দিকে তাকিয়ে কাঁদল। হাত বাড়িয়ে ডাকল, আমমমমমমা আয় আয় আয়। আমমমমা!!

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here