মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_৩৩(সিজন ২)

0
716

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_৩৩(সিজন ২)
পুষ্পিতা_প্রিমা

কেবিন থেকে বেরোতেই আদি চমকে চকিতে তাকালো। এদিক-ওদিক উঁকি দেওয়া ছেলেটিকে দেখে বুকে আড়াআড়ি ভাবে হাত ভাঁজ করে দাঁড়াল। ঠোঁটের কোণায় হাসি ঝুলিয়ে ডাকল,
‘ জামাই বাবাজি?
মাহিদ শার্টের কলার পেছনে ঠেলল। এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল,
‘ ওই নিনিতকে খুঁজছিলাম।
আদি তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। বলল,
‘ নিনিতকে খুঁজছেন নাকি নিনিতের স্টুডেন্টকে খুঁজছেন?
মাহিদ মাথা নামিয়ে ফেলল। বিড়বিড় করে বলল,
‘ শালার শ্বশুর। নিজে বউ বউ করে, আমি করলে সমস্যা। বেয়াদব শ্বশুর।
আদি বলল,
‘ পিহু ক্লাসে আছে।
মাহিদ আদিকে ডিঙিয়ে হেলিয়ে দুলিয়ে হাঁটা ধরল।
আদি বলল,
‘ ক্লাসের ভেতর ডুকে পড়লে পিহু কান মলে দেবে।
মাহিদ যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলল,
‘ ডুইকা যামু কেলাসে। জামাইরে একা রাইখা অত কেলাস ফেলাস দিয়া কি করবো বাপ?
জামাই করাবো কেলাস। জামাইর কেলাস করবো। জামাইর বন্ধুর কিল্লাই করবো। আজ এক চড়ে দাঁত কপাটি ফালায় দিমু জাতির বউরে।

জরুরী ফোন আসায় নিনিত ক্লাস থেকে বের হয়ে এল ফোন কানে দিয়ে। বাইরে এসেই মাথা নিচু করে ফোন টিপা ছেলেটাকে দেখে সে বাকহারা হয়ে পড়ল। ফোনকল শেষ করে এসে জোরে চাটি মারল সে ছেলেটির মাথায়। ছেলেটি গর্জে গালি দিল নিনিতকে। স্টেথোস্কোপ কেড়ে নিয়ে জোরে বাড়ি দিল নিনিতকে। বলল,
‘ শালা বউ রাইখা এইহানে কি করিস বাপ? আমার বউডারে বাইন্ধা রাখছস?
নিনিত মাইর পড়া হাতের বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
‘ তুই ব্যাটা প্রফেসর বেকার ঘুরতাছস ক্যান? তোর কোনোকাজ নাই। তোর বউডারে কি কেউ খায় ফেলতাছে?
মাহিদ চোখ বড় বড় করে তাকালো। ‘ ‘ ‘হানিমুনে যামু বাপ। তুই আমার বউরে এসব কেলাস টেলাসে আটকায় রাখলে তো হইবো না বাপ। আমার শ্বশুর হওয়ার স্বপ্ন ও স্বপ্ন থাইকা যাইবো। বুঝোস না ক্যান বাপ? ভার্সিটি ফার্সিটিতে চাকরি নিলে আমার আর কিছু করবার জোঁ থাকবো না বাপ।
নিনিত হাসল। বলল,
‘ তুই ব্যাটা ফাজিল। চরম ফাজিল। তোর সাথে কথা নাই ব্যাটা।
মাহিদ ক্লাসে ডুকে পড়ল। পিহু ব্যস্ত ছিল, পেছনের বেঞ্চের ক্লাসমেটদের সাথে করভার্সেশনে। সবাইকে সামনে তাকাতে দেখে পিহু ও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। চোখ দুটো আপন শক্তিতে বড় হলো। ঢোক গিলল সে। যার ভয় পাচ্ছিল তার কিছুই হলোনা। সবাই ফিসফিস করে বলল,
‘ ইনি আরিশার হাজবেন্ড? ইংলিশ প্রফেসর, গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে এসেছে কানাডা থেকে?
পিহু হা করে তাকিয়ে থাকল। বিড়বিড় করে বলল,
‘ জাতির ভাই, আপনি এইখানে কেন আসলেন?
মাহিদ ভদ্রতার সহিত পিহুর ক্লাসমেটদের হাই হ্যালো করল। নিনিত দরজার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বলল,
‘ শালার মাহিদ্দে তোর আর কত রংঢং দেখবো শালা?
মাহিদ পিহুর দিকে ঝুঁকে পড়ল বেঞ্চে হাত রেখে। পিহুকে ডিঙিয়ে হাত মেলালো পিহুর ক্লাসমেট আবিরের সাথে। আবির হাসল। বলল,
‘ সো নাইস টু মিট ইউ।
মাহিদ হাসি উপহার দিল। মনে মনে বলল,
‘ ধুরর শালা বউরে দেখাইতাছি মুই কত ভালা। নইলে কইতাম না বাপ।
মাহিদ ফিসফিস করে পিহুকে বলল,
‘ বাইর হ তুই জাতির বউ। নইলে তুলকালাম চলবে।
পিহু হেসে ফেলল। হেসে হেসে বন্ধুদের সামনে সৌজন্যে রক্ষার্থে বলল,
‘ আপনি এখানে কেন? ফোন দিতে পারতেন? কোনো জরুরি প্রয়োজন?
নিনিত হাসতে হাসতে ঢলে পড়ার অবস্থা হলো। মাহিদ মুখের ভঙ্গি পাল্টিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল।
‘ ওমা জাতির বউ আমার লগে এভাবে কথা কয় ক্যা?
পিহু শুকনো ঢোক গিলল। তুই তুকারি করলে শেষ।
মাহিদ হেসে ফেলল। বলল,
‘ কোনো জরুরি কিছুনা। তুমি জানোনা তোমাকে ছাড়া আমার কিছু ভালোলাগেনা।
পিহু কাঁদোকাঁদো হয়ে গেল। তার বন্ধু-বান্ধবরা মাথা নিচু করে মিটিমিটি হাসছে। পিহু বের হয়ে গেল ক্লাস থেকে। দরজার বাইরে হাসতে থাকা নিনিতকে দেখে রাগে ফেটে পড়ল সে। রেগে বলল,
‘ আপনি মাহিদ ভাইকে ক্লাসে এলাও করলেন কেন স্যার?
নিনিত বলল,
‘ তোমার বরকে এলাও করার আমি কে? পারমিশন না ফেলে কি সে সোজা ক্লাসে ডুকে যায়। বড় স্যারের পারমিশন আছে। টিচার বলে কথা?
জোরে মাথায় মাইর পড়লো পিহুর। মাহিদ নিচের ঠোঁট কামড়ে গর্জে বলল,
‘ ওইই,,, আমার যখন ইচ্ছা তখন আসুম৷ তোর কিতা? হা?
পিহু মাথায় হাত দিয়ে ছলছল চোখে তাকালো। মাহিদ ভড়কে গেল। বলল,
‘ এভাবে কি দেখস বাপ?
নিনিত বলল,
‘ বউ বলে সারাক্ষণ মারবি? আশ্চর্য মাহি?
পিহু হনহন পায়ে হেঁটে চলে গেল।
মাহিদ বলল,
‘ ওরেব্বাপ এত রাগার কি আছে? আমি মারুম না, তো কে মারবো?
নিনিত বলল,
‘ ভালো হয়ছে। সবকিছুর একটা লিমিট থাকে।
পিহু যেতে যেতে মাহিদ তার হাত টেনে ধরল। পিহু তাকে ধাক্কা দিল। ঘষে চোখের জল মুছে বলল,
‘ একদম ছুঁবেনা। অধিকার ফলাতে আসো সবসময়? আমি বিরক্ত তোমার প্রতি। বুঝোনা? আমাকে ছুঁবেনা একদম। যাও।
মাহিদ বলতে চাইল,
‘ আমি ওই,,,
পিহু কপাল চেপে ধরল একহাত দিয়ে। মাহিদকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ অনেক সহ্য করেছি তোমাকে। আর পারবনা। পারছিনা আমি।
পিহু চোখ ফিরিয়ে নিল। মাহিদ বলল,
‘ তোর বেশি লেগেছে?
পিহু বলল,
‘ ঢং করিওনা। যাও। মারবে আবার জিজ্ঞেস করবে, ‘ তোর বেশি লেগেছে’? অসহ্য লাগছে আমার।
মাহিদ কন্ঠরুদ্ধ হয়ে এল।
‘ এভাবে বলতে হয় নাকি? ঠিকআছে আর কখনো মারবে না।
পিহু কপালে হাত দিয়ে বন্ধ চোখ খুলতে না খুলতেই মাহিদ উদাও। পিহু হাতে থাকা কলমটি দূরে ছুড়ে মারল। গিয়ে পড়ল নিনিতের পায়ের কাছে। নিনিত কলমটি কুড়িয়ে নিয়ে বলল,
‘ এভাবে বলতে গেলে কেন? বুঝিয়ে বলতে পারতে।
পিহু কিছুএকটা ভেবে, চলে গেল। বলে গেল,
‘ ফাইলটা আমি বাসা থেকে রেডি করে আনব স্যার। আমার বাসায় ফিরতে হবে।
নিনিত বলল,
‘ রেগে থেকোনা। বুঝিয়ে বলো।
পিহু চলে গেল।

বাড়ি পৌঁছে পিহু দেখল না মাহিদকে। নীরাকে জিজ্ঞেস করতেই নীরা বলল,
‘ আজ বাড়ি ফিরবেনা বলেছে। কোথায় নাকি কাজ আছে।
পিহু বলল,
‘ আচ্ছা।
নীরা বলল,
‘ তোমাকে বলতে গিয়েছিল না? বলেনি?
পিহু বলল,
‘ বলতে গিয়েছিল কেন ? ফোনে বললে কি হয়? যখন তখন মেডিক্যালে গিয়ে আমাকে ডিস্টার্ব করবে।
নীরা হা করে থাকল। বলল,
‘ মেডিক্যালে গিয়েছিল? তোমাকে কিছু বলেছে?
পিহু শক্ত জবাব দিল।
‘ নাআআ।
নীরা অবাক হয়ে বলল,
‘ এভাবে কথা বলছ কেন? মাহিদের সাথে কি ঝগড়া হয়েছে? তোমাকে আবার মেরেছে?
পিহু কর্কশ গলায় বলল,
‘ মার ছাড়া আর কি পারে তোমার ছেলে? আমি কি বাপের বাড়ি থেকে এখানে আছি তার মার খেতে? যখন তখন হাত চলে তার।
মুনা আর নীরা অমন শক্ত কথা শুনে চমকে গেল। কালই তো সবাই চৌধুরী বাড়ি ফিরল। আজ সেখানে যাওয়ার কথা মাহিদ পিহুর। হঠাৎ এমন কি হলো?

সন্ধ্যার দিকে পিহু ব্যাগ গুছিয়ে নিচে নেমে এল। রিপ তাকে এভাবে একা দেখে বলল,
‘ একা কিভাবে যাবে। মাহি আসুক। কাল সকালে যাবে।
পিহু বলল,
‘ আজকে যাওয়ার কথা ছিল না?
রিপ বলল,
‘ কথা তো ছিল। কিন্তু মাহিকে ছাড়া গেলে খারাপ দেখায়।
পিহু বলল,
‘ সে কাল যাবে। আমি একা যেতে পারব।
রিপ বলল,
‘ কোনো সমস্যা হয়েছে তোমাদের মাঝে? সমস্যা দুজনে মিলে মিটমাট করে নাও।
পিহু বলল,
‘ কোনো সমস্যা হয়নি মামা।
রিপ থামাল।
‘ এখন মামা নেই৷
পিহু চোখ তুলে তাকালো।
‘ সরি আব্বা।
রিপ বলল,
‘ চলো আমি দিয়ে আসি। মাহি আসলে পাঠাবো।
পিহু মাথা নাড়াল।

‘ মারলে মারছ কেন সেটা ও বলতে পারবে না? রাগ শুধু তার একার? পিহুর কোনো রাগ নেই। মারগুলো সহ্য করতে পারলেই ভালো।

____________

চৌধুরী বাড়ি পৌঁছাতেই রাহি দৌড়ে এল। পিহুর পেছনে দেখে বলল,
‘ মিহি কুথাই। আছেনা কেন? মিহি লুকুলুকি খেলে কেন?
পিহু তাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
‘ মিহিকে কি দরকার? পিহু আছেনা?
ইশা রিপকে দেখে বলল,
‘ তোমার ছেলে কোথায় রিপদা?
রিপ বলল,
‘ আসবে। পিহু আসতে চাইছিল তাই নিয়ে এলাম৷ মাহি কাল অথবা রাতে ফিরবে। আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি।

ইশা মাথা নাড়াল। বলল,
‘ আজ রাতেই আসতে বলো। আমি কত আয়োজন করেছি জামাইয়ের জন্য। না আসলে কষ্ট পাব।
রিপ বলল,
‘ আসবে। আসবে।
পরী দৌড়ে আসল। রিপকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ পাপা তোমার জন্য আমি তোমার পছন্দের রান্না করব। আজ খেয়ে ছিকুর সাথে থেকে যাবে।

ছিকু একা একা হেঁটে যেতে যেতে বলে,
‘ শুশুর মুছাই আছেনা কেন? পিহু ইকা ইকা আছে কেন?
ইশা বলল,
‘ কি বলছে রাহি?
পরী রিপকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ কে জানে? সারাক্ষণ উল্টাপাল্টা কথা বলতে থাকে।

___________________

বিছানার চাদর ঠিক করে ঘর গুছিয়ে রেখে আসতেই আদি ভেজা মাথায় চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরোলো। ইশা বলল,
‘ ডক্টর আপনার কফিটা টেবিলে রাখা আছে।
আদি ইশাকে টেনে নিল। ইশার হাতে তোয়ালে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ মিষ্টি মুছে দাও দেখি। আজকাল সেবা টেবা করছ না।
ইশার ভ্রু কুঞ্চন হলো। সে বলল,
‘ ডক্টর নিচে আমার অনেক কাজ। আপনি মুছে নেন।
আদি তোয়ালে সরিয়ে রাগীমুখে তাকালো ইশার দিকে। ইশা তোয়ালে কেড়ে নিল। আদি তার হাত থেকে তোয়ালে কেড়ে নিল। বলল,
‘ তোমার শাড়ি দিয়ে মুছে দাও। নইলে মুছব না আর।
ইশা বলল,
‘ এসব কি ডক্টর?
আদি বলল,
‘ আচ্ছা যাও।
ইশা চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। আবার এসে বলল,
‘ ডক্টর রাগ করেছেন? আমার সত্যি অনেক কাজ।
আদি কোনো উত্তর দিলনা। ইশা শাড়ির আঁচল তুলে নিল।
আদির মাথা মুখ মুছে দিতে দিতে বলল,
‘ মাঝেমাঝে আপনি এত বাচ্চা হয়ে যান ডক্টর? আমার সামলাতে বড্ড কষ্ট হয়।
আদি হাসল। শাড়ির আঁচল টেনে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল মিষ্টিকে। ঘাড়ের কাছে মুখ ঘষতে ঘষতে বলল,
‘ সামলানোর দায়িত্ব নিয়েছ কেন?
ইশা হেসে ফেলল। আদিকে সরাতে সরাতে বলল,
‘ সরুন। সুযোগ পেলে আপনার কাজ শুরু হয় যায়। আর কোনো কাজ নেই।
আদি হেসে আবার ও আগলে ধরল ইশাকে। বলল,
‘ সারাদিন হসপিটালে এত কাজের পর, এই একটা কাজ আমার ভালো থাকার মন্ত্র। বউটা বুঝেনা কেন?
ইশা মিষ্টি করে হাসল। আদি তার গায়ে শাড়ির আঁচলটা জড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ মিষ্টি তোমাকে আজ আবার ও সত্যি খুব মিষ্টি লাগছে।
ইশা আদির নাক টেনে দিয়ে বলল,
‘ আদির কাছে ইশাকে সবসময় মিষ্টি লাগে। এটা নতুন কিছু নয়।

__________________

খয়েরী রঙের শাড়ি পড়া মেয়েটির হাঁটতে অসুবিধা এই প্রথম এভাবে শাড়ি পড়ায়। হাঁটার সময় শাড়ির কুঁচি ধরে হাঁটতে হয়। নিকিতা বেগম মেয়েটিকে বললেন,
‘ হাঁটতে অসুবিধা হলে শাড়ি চেন্জ সেলোয়ার-কামিজ পড়ো। সমস্যা নেই।
জালিশা না না করে উঠল। শাড়ি পড়লে বউ বউ লাগে
আইমি আর নিকিতা বেগম একসাথে হেসে উঠল। জালিশা বলল,
‘ হাসছ কেন?
আইমি বলল,
‘ না এমনি হাসছি। শাড়িতে তোমাকে সুন্দর লাগছে।
জালিশা লজ্জা পেল। নিশিতা টেবিলে পানিভর্তি জগ রাখতে রাখতে বলল,
‘ জালিশা ভাইয়া বলেছে শাড়ি পড়তে? সুন্দর লাগে বলেছে? হয়ত বলেছে? না?
জালিশা চমকে গেল। বলল,
‘ সবসময় ফালতু কথা বলিস কেন নিশু?
নিকিতা বেগম বললেন,
‘ জালিশা লজ্জায় পড়ে গেছে নিশু। ও তোর ভাবী হয়।
জালিশা কোমরে হাত দিয়ে বলল,
‘ হুহহ। রেসপেক্ট দিয়ে কথা বল।
নিশিতা মুখ মোঁচড়াল। বলল,
‘ কচুর ভাবী।
জালিশা বলল,
‘ কচু মিনস হুয়াট?
নিশিতা মাথায় হাত দিয়ে বলল,
‘ তোর বরকে জিজ্ঞেস করিস?

নিনিত ফেরামাত্রই জালিশা একদম তার পিছুপিছু দৌড় লাগাল। নিনিত চোখমুখ কুঁচকে বলল,
‘ এভাবে দৌড়াচ্ছ কেন? কি ভাববে সবাই?
জালিশার মুখ কালো হয়ে গেল। নিনিত বলল,
‘ কি হলো?
জালিশা বলল,
‘ আমরা হানিমুনে কখন যাব? আপনি আমাকে সব ঘুরে ঘুরে দেখাবেন বলেছিলেন।
নিনিত বলল,
‘ জানিনা। না ও যেতে পারি। হসপিটালের কাজের চাপ বেশি।
জালিশার মন খারাপ হয়ে গেল। বলল,
‘ বিয়ে করেছেন কেন? তো? বউ নিয়ে ঘুরতে যেতে পারবেনা। আবার বিয়ে করবে।
নিনিত বলল,
‘ জাস্ট শাটআপ। বেশি কথা বলবেনা একদম। আমি যা বলব তাই হবে৷ কফি নিয়ে এসো। আমি ফ্রেশ হচ্ছি।
জালিশা বলল,
‘ আনব না।
নিনিত গর্জে ডাকল,
‘ জালিশা?
জালিশা কাঁদোকাঁদো হয়ে গেল। বলল,
‘ সবসময় ধমকাধমকি। শুধু বিয়ের দিন একটু মিষ্টি করে কথা বলেছে।
নিনিত যেতে যেতে বলল,
‘ কফি চাই। মনে থাকে যেন। নিশিতা আনলে তোমার খবর আছে।
জালিশা বলল,
‘ দেবনা একদম। আমি বানাবো। আমি খেয়ে বসে থাকব।

নিনিত ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কফি পেলনা। জোরে কড়া কন্ঠে ডাকল,
‘ জালিশা????
জালিশা রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ যেভাবে ডাকছেন, সবাই বউ পাগলা।
নিনিত বলল,
‘ কথা কম বলবে।
জালিশা বলল,
‘ কম কথা বলা মেয়ে বিয়ে করেননি কেন তো? আমি বাঁচাল জানতেন না?
নিনিত বলল,
‘ একদম চুপ। কফি এদিকে দাও।
জালিশা কফির মগে চুমুক বসিয়ে বলল,
‘ এই নিন।
নিনিতের নাকমুখ কুঁচকে গেল। বলল,
‘ আমি তোমার খাওয়া জীবনে ও খাবনা।
জালিশা এগিয়ে গেল তার দিকে। নিনিতের হাতে ধরিয়ে দিল কফির মগ। তারপর মগটা নিনিতের মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল,
‘ খান। টেস্ট আর ও দ্বিগুণ।
নিনিত বলল,
‘ খাব না।
জালিশা তার কলার টেনে ধরল। ঠোঁটের উপর ফটাফট চুমু খেয়ে নিয়ে বলল,
‘ হয়েছে। এটা কফির চাইতে ও টেস্ট বেশি। আর কফি খাওয়া লাগবেনা।
নিনিত হা করে তাকিয়ে থাকল। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলনা।
জালিশা যেতে যেতে থামল। নিনিতকে আর ও রাগিয়ে দেওয়ার জন্য বলল,
‘ রোজ একটা করে পাবেন। এর বেশি না। হুহহহ।
নিনিত হাতের তোয়ালে দূরে ছুড়ে মেরে বলল, ননসেন্স।

_____________

সোফার উপর পায়ের উপর পা তুলে বসা আফিকে দেখে রাহি ও সেভাবে বসার চেষ্টা করল। সোফার উপর বসে এক পায়ের উপর আরেক পা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,
‘ ছিকু ইভাবে বসতে পারেনা কেন?
আফি দেখল ছিকুকে। বলল,
‘ দাদুভাই আর ও বড় হতে হবে।
ছিকু পা তুলে দিতে গিয়ে উল্টে পড়ল সোফার উপর। ব্যাথা পেয়ে বলল,
‘ ছিকু দুক্কু পায় কেন?
আফি হেসে দিল। বলল,
‘ এমনি বসো। পায়ের উপর পা তুলোনা ভাই।
রাহি বলল,
‘ কেন তুলব না কেন? তুমি পুঁচা কেন দাদাই?
আফি বলল,
‘ জানিনা ভাই। তোর প্রশ্নের এত উত্তর নাই আমার কাছে।
রেহান চলে এল নিচে। রাহিকে কোলে তুলে নিয়ে উপরে যেতে যেতে বলল,
‘ আপনি ওখানে একা একা কি করেন?
রাহি হেসে বলল,
‘ ছিকুর সাথে কিউ খেলেনা কেন? ছিকুর ভাই নাই কেন? বোনু নাই কেন? বউ নাই কেন? কিউ ছিকুকে আদল করেনা কেন?

রেহান দরজা ঠেলে রুমে ডুকে। খাটে বসে কাপড় ভাঁজ করা মেয়েটির পেছনে রাহিকে ছেড়ে দেয়। ফিসফিস করে বলে,
‘ বলেন ভাই লাগবে, বোন লাগবে।
রাহি পরীর পিঠ জড়িয়ে ধরে৷ পরীর কানে নাক লাগিয়ে ঘষে ঘষে বলে,
‘ মাম্মা বোনু লাগবে কেন? ভাই লাগবে কেন? বউ লাগবে কেন?
পরী কাজে মনোযোগ দিয়ে বলে,’ এসব কি কথা আবার? ছাড়েন মাম্মা কাজ করছি।
রাহি মন খারাপ হয়ে গেল। সব রাগ গিয়ে পড়ল রেহানের উপর। বলল,
‘ পাপা পুঁচা কেন? ছিকুকে বুলতে বুলে কেন?
রেহান হেসে ফেলল। পরী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। পরী বলল,
‘ মাস্টারমাইন্ড তো আপনি।
রেহান হাসল। বলল,
‘ ভুল কিছু বলিনি।
ছিকু দুহাত গালে দিল।
‘ রেহান পুঁচা কেন? পরী পুঁচা কেন? কিউ ছিকুকে আদল করেনা কেন?
পরী কাপড় রেখে দিল।
রাহিকে কোলের উপর নিয়ে দুহাতে ছোট্ট মুখটা ধরল। তারপর এলোপাতাড়ি আদর করে দিয়ে বলল,
‘ আদল কলেছি। খুশি হয়েছেন?
রাহি হাসল। পরী রাহির গাল নিজের গালের সাথে লাগিয়ে রেখে বলল,
‘ আমার আব্বা?
রাহি দাঁত দেখিয়ে হেসে বলল,
‘ রেহানকে পরী আদল করেনা কেন? শুধু ছিকুকে আদল করে কেন?
পরী দীর্ঘ চুম্বন দিল ছেলের গালে। বলল,
‘ রেহান পুঁচা।
রেহান এসে কোলে নিয়ে নিল রাহিকে। বিছানায় রেখে মাথার নিচে বালিশ দিয়ে শুইয়ে দিয়ে তার পেটে সুড়সুড়ি দিতে দিতে বলল,
‘ এটাকে কি বলে? আদল বলেনা?
রাহি হাসতে হাসতে বলল,
‘ ইনননা আদল বুলেনা কেন? দুক্কু বুলে কেন?ছিকুর বিশি হাসি পায় কেন?
রেহান রাহির পেটে মুখ চেপে আওয়াজ করে বলল
‘ হাসেন হাসেন। আর ও বেশি বেশি করে হাসেন।
রাহি তার পেট শার্ট দিয়ে ঢেকে দিয়ে বলল,
‘ রেহান বিদ্দব কেন? রাহিকে কুতুকুতু দেয় কেন?
পরী ছেলের পাশে শুয়ে পড়ল। রাহিকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল,
‘ আমরা মা ছেলে কিছুক্ষণ ঘুমায়। সিংগারম্যান আপনি এখন যেতে পারেন। আমরা ঘুমাবো।
রেহান রাহির পাশে ধপ করে শুয়ে পড়ে। বলে,
‘ আমরা বাপ ছেলে ঘুমোবো।
রাহি মাঝখান থেকে উঠে যায়। হামাগুড়ি দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে বলে,
‘ ছিকু ঘুমায় না কেন? ছিকু পুঁচা কেন? রেহান আর পরী এত ঘুম ঘুম কেন? পুঁচা কেন?
পরী বলে,
‘ আসো আব্বা। এখন কোথায় যাচ্ছ?

রাহি প্যান্ট উপরে টেনে তুলে মিনমিন করে বলল,
‘ সুসু করতে যাচ্ছি। ওখানে, বাইরে।

রাহিকে একা একা যেতে দেখে ইশা আটকালো। বলল,
‘ কোথায় যাচ্ছ ভাই?
রাহি প্যান্ট ধরে যেতে যেতে বলল,
‘ সুসু করব। সুসু পেয়েছে কেন?
ইশা বলল,
‘ আসো। আমি ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। নইলে ওই,,,,
রাহি হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে নিচে নেমে গেল সিড়ি বেয়ে। ইশা দেখে দেখে নামালো। তারপর এক দৌড় দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। ইশার পিছুপিছু রাইনা আর পিহু গেল।

রাহি দূরে ছিটিয়ে ছিটিয়ে সুসু করে করে বলল,
‘ আরওওওও ওখানে যায়না কেন? ছিকুর সুসু পুঁচা কেন?
পেছন থেকে রাইনা ডাক দিল। কি করছ ভাই? এভাবে কেউ সুসু করে? তোমার মা দেখলে বকবে। ভাই???
রাহি গলা কাত করে ওই দূরে দেখিয়ে দিয়ে বলে
‘ ওখানেএএএএএ যায়না কেন?
পিহু ডাক দিল।
‘ রাহি????
ততক্ষণে বাইক এসে থামল একটি রাহির সামনাসামনি। রাহি তাড়াতাড়ি প্যান্ট উপরে তুলে নিয়ে বলল,
‘ সুসু শেষ কেন?
বাইকে বসা ছেলেটি হেলমেট খোলার সাথে সাথে চিল্লিয়ে বলে উঠল,
‘ রেহাইন্নের বাচ্চা। আমার বাইকের চাকায় তোর সুসু লেগে গেল। শালা সুসু করার জায়গা পেলিনা বাপ?
রাহি গলা কাত করে ঢিলা প্যান্টটি আবার ও উপরে তুলে বলে,
‘ সুসু মিহির গায়ে পড়িনি কেন? সুসু বাপ পুঁচা কেন? কেন বাপ কেন?
মাহিদ বাইক থেকে নেমে পড়ল। রাহি দৌড় লাগাল। পিহুর কাছে এসে আটকে গেল। পিহু তাকে ধরে ফেলল। মাহিদ চোখ তুলে একবার দেখে আর তাকাল না ।
পিহু রাহিকে নিয়ে চলে গেল।
ইশা বলল,
‘ এতক্ষণ কোথায় ছিলি মাহি? তোর চিন্তায় শেষ। তোর মা ও আছে তোর বাপকে ফোন দিতে দিতে জ্বালিয়ে মারছে।
মাহিদ হাসল। বলল,
‘ চিন্তা করো ক্যান বাপ? আমি কি বাচ্চা নাকি বাপ?
ইশা বলল,
‘ তোর বাপ আছে। ঘাড় মটকাবে আজ তোর। মাহিদ বলল,
‘ বাপ আমার ফোন দিছে তাই আইছি বাপের বইন শ্বাশুড়ি মা।
রাইনা হেসে বলল,
‘ এই মাহি রাহিকে নিয়ে আমি শেষ।

পিহু রাহির শার্ট খুলে নিল। হাতমুখ ধুয়ে এনে সোফার উপর বসিয়ে দিল। বলল,
‘ একদম চুপ করে বসে থাকো।
রাহি সোফায় থেকে নেমে গেল। নিজেকে মাথা নিচু করে দেখে দেখে বলল,
‘ ছিকুর শার্ট দেয়না কেন? ছিকুর নজ্জা করপ কেন?
পিহু পেটে আঙুল দিয়ে গুতো দিয়ে বলে,
‘ কিছুক্ষণ এভাবে থাকো। এটুকুনি একটা ছেলে সারাক্ষণ কাপড় পড়ে পড়ে থাকে। কিছুক্ষণ এভাবে থাকো। গায়ে বাতাস লাগুক।

কোথা থেকে মাহিদ এসে রাহির বুকে চিমটি মেরে চলে গেল। রাহি বুকের উপর দুহাত দিয়ে ঢেকে রেখে বলল,
‘ মিহি চিমুট দেয় কেন? মিহি বিদ্দব কেন? ছিকুর নজ্জা পায় কেন?
মাহিদ যেতে যেতে হেসে গড়াগড়ি খেল। আদি,রিপ হেসে ফেলল রাহির কথায়। পিহু রাহির গাল টেনে দিয়ে বলল,
‘ মাগোমা কি লজ্জা। কি লজ্জা?
রাহি দুহাতে মুখ ঢাকল।
পরী দৌড়ে এসে রাহিকে কোলে নিয়ে নিল। ওড়না দিয়ে রাহিকে ঢেকে দিয়ে বলল
‘ আমার আব্বাকে নিয়ে সবাই মজা করছেন কেন?
রাহি পরীর সাথে লেপ্টে গেল। ওড়না মুখ থেকে সরিয়ে পিহুকে চোখ টিপে দিয়ে বলল,
‘ পিহু পুঁচা কেন? পিহুর নজ্জা নাই কেন,?
পিহু জিহ্বা দেখিয়ে দিল রাহিকে। রাহি ও পিহুকে দেখিয়ে দিল।

__________________

খাওয়া দাওয়া ঘুমানোর প্রস্তুতি তখন। পিহু হাই তুলতে তুলতে ঘুমাতে গেল। বিছানার চাদর ঝেড়ে বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার আগে মনে হলো ছেলেটা কোথায়?
পিহু ডাকল ‘ কোথায়?
মাহিদ পা টিপে টিপে এসে ধীরেসুস্থে শুয়ে পড়ল একপাশে। কাত হয়ে চোখের উপর হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। পিহুর ভ্রুকুঞ্চন হলো। ছেলেটিকে টেনে বুকে মাথা রাখল। বলল,
‘ রাগ করেছ? আমাকে কত মারো? আমি রাগ করি? আজ একটু করেছি বলে দূরে দূরে থাকছ। নিজে আমার উপর রাগ করে বসে আছ।
মাহিদ তাকে ঠেলে সরিয়ে দিল। বলল,
‘ মেডিক্যালে আমি গেলে প্রেস্টিজে লাগবে,সেটা বললে আমি যেতাম না। আর যাব না। জীবনে ও না।
পিহুর মুখ কাঁদোকাঁদো হয়ে গেল। মাহিদকে আবার টেনে ধরে মাহিদের দুগাল আঁকড়ে ধরে বলল,
‘ তুমি রাগ করলে আমার কষ্ট হয়। আমার রাগ হয়েছে তাই ভুলকিছু হয়ত বলে ফেলেছি। সরি বলছি না?
মাহিদ পিহুকে সরিয়ে দিল। বলল,
‘ আমার জায়গাটা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য থ্যাংকস। তুই বিরক্ত আমার প্রতি জানতাম না।
পিহুর চোখের জলে ভিজে গেল তার বুক। মাহিদ বলল
‘ সর। আমার ঘুম পাচ্ছে।
পিহু বলল,
‘ তুমি এভাবে কথা বলছ কেন? আমার কষ্ট হচ্ছে।
মাহিদ পাশ ফিরে শুয়ে গেল। পিহু তাকে একহাত দিয়ে আগলে ধরে পিঠের কাছে শার্টে নাক মুছে দিতে দিতে বলল
‘ মেরে ফেলব একদম। শার্ট নষ্ট করে দেব। ফিরো। তাকাও। মাহিদ নড়ল না।
পিহু বলল
‘ আমি মরে যাচ্ছি মাহিদ ভাই।
মাহিদ ঘুমাতে ঘুমাতে বলল,
‘ মরে যাহ বাপ। যাহ। আমারে বিরক্ত করিস না। আজ আদর টাদর দিতে পারুম না। আমি বড্ড কেলানতো।

চলবে,

গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি বাপ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here