মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_৩৫ (সিজন ২)

0
607

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_৩৫ (সিজন ২)
পুষ্পিতা_প্রিমা

পিংক কালারের টেডিবিয়ার। কালো কালো ইয়া বড় বড় দুটো চোখ। টেডিবিয়ার কোলে নেওয়া বাচ্চাটির কোল থেকে কেউ একজন ঠাসস করে চড় মেরে বসল টেডিবিয়ারটিকে। টেডিবিয়ারটি পড়ে গেল বাচ্চাটির কোল থেকে। বাচ্চাটি চিল্লিয়ে কেঁদে উঠে বলল,
‘ আমাল বউকে ফিলে দিয়েছ কেন? মিহি পুঁচা কেন?
মাহিদ কোমরে হাত দিয়ে হা হু করে হাসল। টেডিবিয়ারটিতে এক লাথি দিয়ে দূরে ছিটকে ফেলে দিল৷ রাহি আর ও জোরে চিল্লিয়ে কেঁদে উঠল। মাহিদের পা আঁকড়ে ধরে কামড় দেওয়ার সুযোগ খুঁজতে লাগল। মাহিদ রাহির হাত পা সব একত্রে ধরল। খানিকটা উপর থেকে ফোমের বেডের উপর ধপ করে ফেলে দিয়ে বলল,
‘ জামাই বাবাজি শ্বশুররে কামড়াইতে মন চাইতাছে?
রাহি চোখ বন্ধ করে বলল।
‘ ছিকু নাই। মুরে গেছে।
মাহিদ টেডিবিয়ারটি নিয়ে খাটে বসল। রাহির গালে ঠাসঠুস মেরে আবার জোরে চুমু খেয়ে বলল,
‘ মুরে গেছস মানে কি বাপ? আর কইবি? কহ। আর কইবি?
রাহি পিটপিট করে চোখ খুলে বলল,
‘ পুঁচা কেন মিহি? মেরে আবার আদল করে করে কেন?
মাহিদ হো হো করে হাসল। টেডিবিয়ারটি দিয়ে রাহির মুখ চেপে ধরে আবার তুলল। রাহি জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
‘ মিহি পুঁচা৷ মিহি মারে কেন? ছিকু দুক্কু পায় কেন?
মাহিদ টেডিবিয়ারটিকে মারল। ছিকু চিল্লিয়ে কেঁদে উঠল। বলল,
‘ আমাল বউ।
মাহিদ হা হু করে হাসল। বলল,
‘ তোর বউ নাই বাপ। তোর বউ কোথথেকে আসবো? তোর বাপ আইবো না। পুতুল আবার বউ হয় নাকি?
রাহি ঠোঁট টেনে বলে,
‘ না বউ আছে৷ আছে৷
মাহিদ রাহির প্যান্ট টেনে দিয়ে বলে,
‘ এটুকুনি একটা পোলা পোলা বৌ বৌ করস কিল্লাই। রাহি প্যান্ট উপরে তুলে বলল,
‘ মিহি পুঁচা কেন? বিদ্দব কেন?
মাহিদ আর ও জোরে হাসল৷ রাহি খাট থেকে নেমে গেল। দূরে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে সাহস করে বলল,
‘ মিহি ডগ৷ মিহি ক্যাট। মিহি মাইস৷ মিহি মানকি।
মাহিদ বলল,
‘ শালার জামাই তোরে আমি হাতের কাছে পাই আগে।
রাহি কোমরে হাত দিয়ে মুখ বাড়িয়ে মুখ ভাঙালো। তারপর বলল,
‘ মিহি মানকি। মিহি ডগ। মিহি ক্যাট।
মাহিদ বলল,
‘ দাঁড়া তুই শালারে আমি দেখতাছি।
পকেট থেকে চকলেট বের করল মাহিদ। রাহিকে দেখিয়ে বলল,
‘ চকলেট দিমুনা তোরে৷ খাইলে আয় তাড়াতাড়ি।
রাহি চিন্তায় পড়ে গেল৷ এক পা এক পা করে এগোলো৷
মাহিদ ডাকল।
‘ আয়।
রাহি গালের ভেতর এক আঙুল দিয়ে বলল,
‘ মুজা?
মাহিদ বলল,
‘ মুজা মানে। খাইলে একদম সুজা হইয়া যাইবি বাপ।
রাহি আসল। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ দাও না কেন?
মাহিদ খপ করে ধরে ফেলল রাহিকে। রাহি চিল্লিয়ে উঠল,
‘ মিরে ফিলেছে মিহি। ওমা। ওবাপ। মিহি মিরে ফিলেছে। পরী রেহান আসেনা কেন? ইশু আসেনা কেন? ডকতর আসেনা কেন?
মাহিদ রাহিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে গা কাঁপিয়ে হাসল৷ রাহি ভয়ে চুপসে মুখ লুকিয়ে রাখল মাহিদের বুকে। মাহিদ বলল,
‘ তুই আমারে ইঁদুর ডাকছস। এখন তোরে ইঁদুরের মতো লাগতাছে বাপ। ওই ইঁদুরের বাচ্চা ইঁদুর। লুকায় আছস ক্যান বাপ? মুখ তোল।
রাহি মিউ মিউ করে বলল,
‘ মিহি ডগ। মিহি ক্যাট।
মাহিদ জোরে চাপড় মারল রাহির পিঠে। বলল,
‘ আবার কহ দেখি৷
রাহি বলল,
‘ মিহি ডগ, মিহি ক্যাট।
মাহিদ আর ও একটা মারল। রাহি কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
‘ মারো কেনো? বুলতে বুলো কেন? তুমি এত পুঁচা কেন?
মাহিদ রাহির পিঠে হাত বুলিয়ে দিল৷ বলল,
‘ শালার জামাই তোরে কত আদর করি তুই এগুলা দেখস না বাপ। মারলে এগুলা মনে রাইখা দিস। তুই শালা ভালা না। মেরিজান কিছু কইলেই তুই তারে ঘর থেইকা বাইর কইরা দিবি বুঝবার পারতাছি।
রাহি বলল,
‘ তুমি ইভাবে বুলো কেন? চবচময় ছিকুকে মারো কেন? ছিকুর বউকে মারো কেন?
মাহিদ টেডিবিয়ারটি এক লাথি দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিল। বলল,
‘ শালা আমার ছেড়ির আইবার আগে তুই তার সতিন লইয়্যা আইছস। শালা দুইনম্বর আর কিছুদিন অপেক্ষা কর বাপ। তার হাগুমুতু ও তোরে পরিষ্কার করতে হইবো। সারাক্ষণ কোলে লইয়্যা বইসা থাকবি বাপ। তার সতিনের দিকে তাকালেও খবর আছে।
রাহি মাহিদকে আঁকড়ে ধরে বলল,
‘ খবল আছে কেন?

_____________________

এক্সামের রেজাল্ট শুনে পিহু খুশিতে লাফ দিয়ে উঠল। নিনিত ফোনের ওপাশ থেকে বলল,
‘ রিল্যাক্স আরিশা। পড়ে টরে গেলে তোমার বর আবার আমাকে বলবে,
‘ শালা নিনিইত্যে তুই আমার বউরে কি কইসছ যে শালী একেবারে এক লাফ দিয়া বেহুশ হয় পড়ছে।
পিহু হেসে উঠল। বলল,
‘ স্যার আপনি ও আপনার বন্ধুর চাইতে কমনা।
নিনিত হাসল। বলল,
‘ বন্ধু বলে কথা৷
নিনিত বলল,
‘ আচ্ছা। এখন গিয়ে সবাইকে জানাও। তোমার বরকে বলো মিষ্টি পাঠাতে৷
পিহু হাসল। বলল,
‘ আচ্ছা।

পিহু খুশিতে নিচে নেমে এল। নীরাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ মা আমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। কি যে খুশি লাগছে।
নীরা মাথার চুলটুল সরিয়ে দিয়ে কপালে চুমু আঁকে। বলে,
‘ ওমা তুমি এভাবে কাঁপছ কেন আম্মাজান?
পিহু নীরাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলল,
‘ খুব খুশি আমি। তুমি খুশি হওনি।
নীরা বলল,
‘ খুশি মানে। ওরেব্বাপ কি খুশি হইছি। আমার পোলার বউ ডাক্তার। আমারে আর কেউ ইনজেকশন পুশ করবোনা।
পিহু হাসল। বলল,
‘ দরকার হলে আমি ও করবো।
নীরা বলল,
‘ তুমি ভালা মাইয়্যা আমার। এভাবে কইলে আমি ডরাই বাপ।
পিহু খিলখিল করে হেসে ফেলল।
রিপ আসল৷ পিহুকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দিল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ এভাবে কাঁপছ তোমার শ্বাশুড়ি কি অন্ধ পিহু?
নীরা মুখ ফুলালো। পিহু পানি খেয়ে হেসে দিল৷ নীরা বলল,
‘ ব্যারিস্টার আপনি ভালো না।
রিপ হেসে ফেলল। বলল,
‘ আমি ভালো না, তুমি ভালো। যাইহোক, তোমার ছেলে কোথায় দেখে আসি।
পিহু বলল,
‘ মাহিদ ভাই বড়মার ঘরে। রাহির সাথে হয়তো।
বলতে বলতে না বলতেই মাহিদ চলে এল। কোলে রাহি। বলল,
‘ আমি এই শালারে দিয়া আসি ওর মার কাছে। শালা আমারে জ্বালায়। দুই মিনিট পর পর সুসু করব,সুসু করব করে মাথা খায় ফেলে৷
পিহু বলল,
‘ না থাক।
রাহি মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘ পরীর কাছে যাব।
পিহু বলল,
‘ পিহুর কাছে থাকবেনা?
রাহি বলল,
‘ থিকেছি। আর থাকবনা। পরীর আদল খাব। রেহানের আদল খাব। ইশুর আদল খাব। দাদুর আদল খাব।
মুনা বলল,
‘ নানু আদর করছি এগুলা হচ্ছে না? নানু,আছে নানাভাই আছে। পিহু আছে।
রাহি মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘ মিহি মারে।
রিপ বলল,
‘ কখন মেরেছে?
মাহিদ বলল,
‘ আরেহ ও মিথ্যা বলছে পাপা৷ আমি মারিনি।
রিপ বলল,
‘ আমার কোলে দে। আমি দিয়ে আসি।
রাহি মাহিদের কোল থেকে বেয়ে বেয়ে নিচে নেমে এল। রিপের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। রিপ হাত বাড়িয়ে কোলে নিল। রাহি সবাইকে হাত নাড়িয়ে বলল,
‘ টা টা বাই বাই৷ সি ইউ। সি ইউ।
সবাই হাসল৷ মুনা হাসল। বলল,
‘ নানুভাই আবার এসো।
রাহি মাথা দুলালো।
‘ ছিকু আবাল আসবে। মিহিকে মারবে। মিহি পুঁচা।
মাহিদ নিচের ঠোঁট কামড়ে চোখ গরম করে তাকাল। রাহি রিপের গলা ধরে আঁকড়ে ধরে৷ বলল,
‘ ব্যারিচতার মিহি পুঁচা কেন?
রিপ হেসে রাহিকে আদর দিল৷ যেতে যেতে বলল,
‘ মিহি দুষ্টু। ছিকুভাই তো ভালো।
রাহি মাথা দুলিয়ে বলল,
‘ ছিকুভাই ভালু কেন? গুড বয় কেন?

মাহিদ পিহুকে এক ঝাটকি দিল।
‘ ও-ই তুই নিচে আইছস কিল্লাই বাপ? তোর এত বড় পেট সবাইরে দেখায় দেখায় হাটতাছোস। বেয়াদব বেডি।
পিহু জিভে কামড় দিল। নীরা, মুনা বেশিদূর যেতে পারল না। থেমে গেল। পিহু কপাল চাপড়ে বলল,
‘ অসভ্য লোক। মা,, বড়মা শুনে ফেলেছে। মাহিদ লুকিয়ে গিয়ে বলল,
‘ আমি কিছু কইনায় বউ৷
পিহু হেসে ফেলল। নীরা দৌড়ে আসল। বলল,
‘ তোমার বর কোথায় লুকাইছে। বউয়ের লগে কিভাবে কথা কয় সে এখনো শিখেনাই ক্যান? কানাডা পাঠাইছি এসব ভাষায় কথা কওয়ার লাইগ্যা?
মাহিদ বের হলো সোফার আড়াল থেকে। বলল,
‘ মেরিমা রাগ করো ক্যান?
নীরা বলল,
‘ সর মা ডাকবি না আমাকে। গাধা বউয়ের লগে কিভাবে কথা কয় এখনো শিখেনাই। শোনো বউ, তুমি এরে ভাই ডাকবানা আইজ থেইকা।
মাহিদ হাসল। পিহুর পাশে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ল। বলল,
‘ মেরিজানের বাপ ডাকবি বুঝলি।
পিহু হাসল। নীরা বলল,
‘ না। আমার ভাই আসবে। বোন লাগবো না।
পিহু বলল,
‘ ঠিক।
মাহিদ চাটি মারল পিহুর মাথায়। বলল,
‘ ধুরর বাপ, এসব কি কথা কস। আমার ব্যারিস্টার বাপ যেটা চাই সেটাই হইবো।
পিহু বলল,
‘ নো নো। এখনো মিষ্টি না এনে এখানে বসে আছ কেন? তোমার বউ পাস করছে না।
মাহিদ বলল,
‘ তোর পাস দিয়া আমি কি করুম বাপ? তোরে বিয়া করবো জানলে আমি ও পাসটাস করতাম না বাপ। কানাডা ও যাইতাম না।
পিহু মুখ ভাঙালো। বলল,
‘ কোনো ফেল্টুসরে আমি বিয়া করতাম না বাপ।
মাহিদ রেগে তাকালো। নীরা ডাক দিল,
‘ মাহি ওর গায়ে আর হাত তুললে তোরে আমি খাইছি আইজ।
মাহিদ ভয় পেয়ে গেল। বলল,
‘ ডরাইছি বাপের বউ।
পিহু হেসে ফেলল খিলখিল করে। মাহিদ বলল,
‘ হেইই চোপপ। তোর ইদুরের মতো দাঁত দেখিয়ে হাসবি না বাপ।
পিহু হাসি বন্ধ করে বলল,
‘ তোমার জন্য কাঁদতে ও পারব না। হাসতে ও পারব না। ঢং।
মাহিদ সোফায় গা এলিয়ে দিল। বলল,
‘ বাপের পোলার বউ তোরে কি করে বুঝাই, তুই হাসলে তোরে আমার খাইতে মন চাই।
এমন কইরা হাসোস ক্যান বাপ?
পিহু বলল,
‘ এভাবে কি দেখো। নির্লজ্জ।
মাহিদ হাসল। বলল,
‘ তোরে ছাড়া আর কারে দেখুম বাপ?
পিহু লজ্জা পেয়ে গেল৷
নীরা যেতে যেতে বলল,
‘ আব্বা তুই তারে ধরে ধরে উপরে লইয়্যা যাহ। সাবধানে যাস। মারিস না আব্বা।
মাহিদ ঘাড় বেঁকিয়ে তাকালো পিহুর দিকে। পিহু বলল,
‘ আবার দেখো। আমার শরম করে।। মাহিদ হা হু করে হেসে উঠল। বলল,
‘ মেরির মা তুই শরম পাইস না বাপ। তোর শরম পাওয়া দেইখা আমার শরম করে।
পিহু মাহিদের বুকে দুমদাম কিল বসালো। বলল,
‘ বেশরম তুমি।
মাহিদ পিহুর হাত দুটো ধরল। বলল,
‘ তোর এইখানে প্রেম করার শখ জাগছে কইলেই পারস বাপ। এত ঢং করস ক্যা?
পিহু মাহিদের বুকে আঙুল দিয়ে গুঁতো মেরে বলল,
‘ এর সাথে প্রেম। ইয়ামপসিবল।
মাহিদ উঠল। পাঁজা খোলা করে পিহুকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরে বলল,
‘ মেরির মারে আমি কষ্ট দিতাম না বাপ। তাই হাটাইলাম না।
পিহু হেসে মুখ লুকোলো। মাহিদ চিল্লিয়ে বলে উঠল,
‘ ওরেব্বাপ আমার সুড়সুড়ি লাগে। তুই আমারে রাতদিন টর্চার করস কিল্লাই বাপ?
পিহু হেসে কুটিকুটি হয়ে আবার ও মুখ লুকোলো। মাহিদ খাটে বসিয়ে দিল পিহুকে। বলল,
‘ তোর ছেড়ির লগে আমি কত্তগুলা কাপড় আনছি দেখছস?
পিহু মাথা নাড়াল।
‘ তুমি না দেখালে কিভাবে দেখব?
মাহিদ ব্যাগ বের করল। ব্যাগ থেকে একে একে বের করল অনেকগুলো ছোট ছোট ড্রেস। পিহু হাসতে হাসতে বেহুশ হওয়ার অবস্থা। মাহিদ বলল,
‘ এভাবে হাসোস ক্যান? হাসিস না।
পিহু হাসি থামাতে থামাতে বলল,
‘ তোমার কান্ড দেখে হাসছি। এরকম পাগলামি কেউ করে?
মাহিদ ফটাফট কাপড়গুলো সরিয়ে পিহুর সামনাসামনি বসল। পিহুর হাস্যোজ্জ্বল মুখখানি দুহাতে আগলে নিয়ে নাকে নাক ঘষে বলল,
‘ আরিশ,,,,, এই শোন না?
পিহু হাসি থামিয়ে শান্ত চোখে তাকালো। একটুখানি আওয়াজ করে বলল,
” কিহহ ??
মাহিদ পিহুর মুখে মুখ ছুঁয়ে কন্ঠে খাদে নামিয়ে বলল,
‘ তুই আমাকে আরেকটা মা দিবি না?
পিহু তার মুখখানি আর ও একটুখানি এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে শ্বাসপ্রশ্বাস আদান-প্রদান করতে করতে দুষ্টুমি করে বলল,’ উহুম দেবনা।
মাহিদ রাগ করে ফেলে। চলে যেতে চাইলে পিহু আটকায়। মাহিদের গলা জড়িয়ে ধরে মুখ লুকোতে লুকোতে বলে,
‘ রাগ করো কেন? তোমার বাচ্চা তোমাকে দেবনা তো কাকে দেব?

___________________

বাড়ি পৌঁছে রাহি সে কি খুশি!
একলাফে রেহানের গায়ের উপর উঠে বিচার দিল,
‘ মিহি মেরেছে কেন ইখানে? আদল করেছে কেন?
রেহান বলল,
‘ মেরেছে ও। আবার আদল ও করেছে। এখন বলুন কোনটা বেশি করেছে?
রাহি বলল,
‘ বিশি বিশি আদল করেছে। আবাল বিশি বিশি মেরেছে।
রেহান হাসল। বলল,
‘ আমার আব্বাকে কি মারতে মন চাই? আদল করতে মন চাই।
রাহি হাসল। রেহানের চুল টেনে বলে,
‘ পরী কুথাইইই?
রেহান বলল,
‘ পরীর কাছেই যাচ্ছি।

পরী ঘর মুছে আসতে না আসতেই বাপ ছেলে রুমে ডুকে পড়ল। রাহি পরীর কোলে ঝাপ দিল। গালে গাল ঘষে ডাকল,
‘ পরীমাম্মা।
পরী হেসে ফেলল। ছেলের গালে টুপ করে আদর বসিয়ে দিয়ে বলল,
‘ পরীমাম্মা আবার কি?
রাহি হাসল।
পরী বলল,
‘ আব্বাকে মিস করেছি।
রাহি মুখে মুখে বলল,
‘ মিস কলেছি পরীকে। রেহানকে৷
পরী হাসল। বলল,

‘ কচু করেছেন। মিস করলে মিহির সাথে যাওয়ার বায়না ধরতেন?
রাহি মুখ কালো করে বলল,
‘ পরী লাগ করে কেন? ছিকু দুক্কু পায় কেন?
পরী হাসল। বলল,
‘ আব্বার সাথে কেউ রাগ করে থাকতে পারে?
রেহান গিটার হাতে নিয়ে রাহিকে ডাকল।
‘ রাহি এসো। গিটার শেখাবো। এসো। রাহি পরীর গা বেয়ে নেমে গেল। রেহানের কোলের উপর গিয়ে বসে গিটার টেনে গাইল,
‘ ডুম্পাছালে ডুম্পাছালে ডুম ডুম।
পরী রেহান হাসতে হাসতে পড়ে মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা হলো।
রাহি গাইল,
‘ আবিতোপাটি শুরু হো গেয়া। ওহ ওহ ওহ। ডুম্পাছালে ডুম্পাছালে ডুম।

________________________

ইশা প্যাকেটে করে পিহুর পছন্দের রান্না প্যাক করে দিল রিপকে। বলল,
‘ রিপদা গতবার দিয়েছি, নীরা বকেছে আমায়। এইবার দিও যাতে ও না দেখে। আমার ও তো কিছু খাওয়াতে ইচ্ছে করে।

রিপ হেসে ফেলল। বলল,
‘ নীরা কি ওকে এসব না খাইয়ে রেখেছে। তুই শুধু শুধু এসব কেন দিতে যাস?
ইশা মন খারাপ করে ফেলল। বলল,
‘ নিয়ে যাবেনা?
রিপ বলল,
‘ তোর মেয়ে এগুলো মুখে ও তুলতে চায়না। জোর করে খেলে আবার পরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তুই আর নীরা ও পারিস।
ইশা বলল,
‘ তো আমি এগুলো কেন রান্না করলাম।
রিপ নিয়ে নিল। বলল,
‘ রেধেঁছিস যখন নিয়ে যায়। খেতে কেমন হয়েছে তোর মেয়েকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে নিস।
ইশা খুশি হলো। বলল,
‘ রিপদা নীরাকে বলো ওকে খাইয়ে দিতে। হাতে ধরে খেতে আলসেমি করে।
রিপ হেসে বলে,
‘ নীরা বললে বকা খেতি। পিহু কি শুধু তোর একার মেয়ে? আমাদের কেউনা?
ইশা বলল,
‘ তুমি শুধু শুধু ভুল বুঝছ রিপদা। ওভাবে বলিনি আমি।
রিপ হেসে বলে,
‘ আচ্ছা মন খারাপ করিস না। আমি নিয়ে যাচ্ছি।
ইশা বলল,
‘ রিপদা তুমি ও খেও। তারপর জানিও কেমন হয়েছে।
রিপ বলে,
‘ আচ্ছা আচ্ছা খাব।

________________

হসপিটালে চেকাপ করে ফেরার পথে জালিশার সাথে দেখা হয়ে গেল পিহু আর মাহিদের। জালিশা নিনিতের কাছে এসেছে। পিহুকে দেখে ছুটে এল। আঙুল দিয়ে পিহুর মুখ ধরে বলল,
‘ ওয়াও আরিশা তুমি আগের চাইতে অনেক সুন্দর হয়ে গিয়েছ।
পিহু লজ্জা পেয়ে গেল। মাহিদ ধমক দিল,
‘ হেইইই ছেড়ি তোরে লজ্জা দিতাছে তুই ও লজ্জা ফিরায় দিবি। মাথা নামায় হাসোস ক্যান বাপ?
জালিশা মাহিদের কথায় হেসে ফেলল। পিহু বলল,
‘ জালিশা তোমার আর স্যারের কি খবর? টোনাটুনির সংসার হু হু?
জালিশা এক্কেবারে লজ্জায় লাল হওয়ার অবস্থা। জালিশা ভারী লজ্জা পেল স্যারের সামনে এমন কথা জিজ্ঞেস করায়। তাড়াহুড়ো করে চলে গেল সে৷
মাহিদ এদিকওদিক তাকালো। জায়গা একটু নির্জন মনে হওয়ায় দীর্ঘ চুম্বন খেয়ে নিল পিহুর গালে। বলল,
‘ বউ তোর উন্নতি ভালা উন্নতি হয়ছে। এরকম করবি সবসময়। বুঝছস?
পিহু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকল সামনে। নিনিত যেদিক থেকে এসেছে সেদিকে যেতে যেতে বলল,
‘ রিপোর্টটা তাহলে নিয়ে যাস। ও আল্লাহ!
পিহু কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,
‘ এটা তুমি কি করলে মাহিদ ভাই? আমাকে লজ্জায় ফেলে দিলে।
মাহিদ বলল,
‘ শালারে শিখাইতাছি। চুপ থাক তুই।

চেম্বারে গিয়ে জালিশাকে দেখে ও না দেখার ভান করল নিনিত। গলার কাছে দু বোতাম খুলে এসি বাড়িয়ে ইজিচেয়ারে বসে গেল সে। জালিশা বলল,
‘ কি হয়েছে আপনার?
নিনিত সগতোক্তি,
‘ লজ্জা পেয়েছি।
জালিশা উঠে দাঁড়াল। নিনিতের চেয়ার ধরে আটকালো। বলল,
‘ কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে?
নিনিত জালিশার গায়ের ওড়না টেনে নিল। তাড়াতাড়ি মুখ মুছে নিয়ে বলল,
‘ জালিশা পানি দাও।
জালিশা পানি দিল। নিনিত পানি খেয়ে জিরিয়ে নিয়ে বলল,
‘ লজ্জায় পড়ে গিয়েছ কখনো?
জালিশা হুট করে লজ্জায় পড়ে গেল কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে পড়ায়। নিনিত বলল,
‘ খুব লজ্জা পেলে কি করতে হয় জালিশা?
জালিশা মাথা তুলল। বলল,
‘ হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন? আপনি ও কি লজ্জা পেয়েছেন?
নিনিত মাথা দুলালো। বলল, তুমি ও??
জালিশা ও মাথা দুলালো। দুইজনই সমস্বরে বলে উঠল,
‘ মাহিদ?
জালিশা আটকে বলল,’ মাহিদ স্যার? আপনাকে ও?
নিনিত বলল,
‘ তুমি কি দেখেছ?
জালিশা জিভে কামড় দিল। বলল,
‘ এইসব কি কথা?
নিনিত পানি খেয়ে আবার বলল,
‘ থাক। বাদ দাও। আমরা লজ্জা পাব শুধু শুধু।
জালিশা হাসল। নিনিতের দিকে ঝুঁকে পড়ে বলল,
‘ লজ্জা ফেলে লজ্জায় ফেলা উচিত বাপ৷
নিনিত ঘাড় কাত করে হাসল। জালিশার ওড়না টেনে কাছে টানল। জালিশা মৃদু হেসে বলল,
‘ কি চাই?
নিনিত ওড়না আঙুলে পেঁচালো। জালিশা বলল,
‘ কি চাই?
নিনিত বলল,
‘ তোমাকে।
জালিশা একগাল হাসল।
ওড়নার অন্যপাশ দিয়ে নিনিতের কপাল মুখ মুছে দিতে দিতে বলল,
‘ আমি তো আছি।

ফট করে দরজা খুলে ডুকে এল মাহিদ। জালিশা দূরে যেতে পারল না। নিনিতের আঙুলে ওড়না পেঁচানো। মাহিদ টেবিল থেকে রিপোর্ট নিয়ে আবার ফট করে বেরিয়ে গেল। কারো দিকে তাকালো না। নিনিত হা করে থাকল৷। মাহিদ যেতে যেতে বলল,
‘ আমারে লজ্জা দিছস তাই তোরে দিছি বাপ। পেরেম করবি ভালা কথা, দরজা বন্ধ কইরা কর। শরম পাইছি বাপ।

_________________

আর ও কয়েকমাস পেরোলো ইতোমধ্যেই।

বিছানার উপর আলুথালু হয়ে ঘুমানো মেয়েটির এ কয়মাসে একটু স্বাস্থ্য এসেছে। ঘুমন্ত চেহারাটাই ঝড়ে পড়ছে একরত্তি মায়া। মাহিদ চেয়ার টেনে বসে পড়ল মেয়েটির মুখের সামনে।
‘ আহা এত সুন্দর লাগে বউডারে বুঝায় কূলকিনারা পায়না।
কেউ একজনকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে দেখে পিহু ভড়কে গেল। ঘুমঘুম চোখে পিটপিট করে খুলতেই চোখের সামনে ধরা দিল খুব প্রিয় মানুষটি।

পিহু হাসল না। মুগ্ধ দৃষ্টি প্রয়োগ করে তাকিয়ে থাকল। হুট করে ঘুমঘুম কন্ঠে অপ্রত্যাশিত এক প্রশ্ন করে বসল মাহিদকে,
‘ আমি মরে গেলে তুমি কি আবার বিয়ে করবে? আমার বাচ্চাকে আগলে রাখবে?

মাহিদের চেহারার রঙ পাল্টে গেল। পিহু ভড়কে গেল। বিছানা ছেড়ে উঠে বসল। মাহিদের মুখোমুখি বসে বলল,
‘ যদি অন্যকারো প্রতি তোমার মুগ্ধতা কাজ করে আমাকে কি দূরে সরিয়ে দেবে? ধরো, আমি যদি তোমার চোখে অসুন্দর হয়ে যায়।

মাহিদের চোখদুটো হিংস্র জন্তুর মতো ধপধপ করে জ্বলে উঠল। সর্বশক্তি দিয়ে যেন সে চড় বসালো পিহু গালে। পিহু ও সর্বশক্তি দিয়ে আর্তনাদ করে উঠল। হু হু করে কেঁদে দিল। মাহিদকে ছোঁয়ার আগেই মাহিদকে বের হয়ে গেল ঘর থেকে। রাগ মাথায় নিয়ে ঘর থেকে এভাবে বেরোতে দেখে নীরা মুনা ছুটে গেল পিহুর কাছে। পিহুর কান্নার আওয়াজ শুনে মাথায় যেন বাঁজ ভেঙ্গে পড়ল তাদের।

ভয়ংকর কিছুর আশঙ্কায় তারা রুমে ডুকতেই পা থমকে গেল। পিহু মাটিতে বসে রয়েছে। কান্না করছে অবিরত। নীরা মুনা দৌড়ে গেল। পিহুকে ধরতেই পিহু বলল,
‘ আমাকে মেরে চলে গিয়েছে। আমি মরে গেলে আবার বিয়ে করবে। তখন আমার বাচ্চাকে কে দেখবে?
মুনা বলল,
‘ এসময় মুড সুয়িং হয়। তুমি এসব ওকে কেন বলতে গেলে? খারাপ লেগেছে হয়ত।
পিহু অবিরত কেঁদে বলল,
‘ আমি গালে ব্যাথা পেয়েছি। ব্যাথা করছে। পুরো শরীর ব্যাথা করছে। মাহিদ ভাই আমাকে মেরেছে। আমাকে একটু ও ভালোবাসেনা মাহিদ ভাই। আমি অসুন্দর হয়ে গেছি তাই ভালোবাসেনা।
নীরা মুনা শান্ত করাতে পারল না পিহুকে । নীরা রিপকে ফোন দিয়ে ডেকে আনল। রিপ আসতে প্রায় অনেক্ক্ষণ সময় কেটে গেল। রিপ এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ মাহিদ ভাই তোমাকেই ভালেবাসে। ভালোবেসেছে। ভালোবাসবে। এসব ভাবনা কেন মাথায় আনছ?
পিহুর কান্না থামল না। অচেনা অজানা ভয় ঘিরে ধরল তাকে। রিপ নীরাকে বলল,
‘ বুঝিয়ে বলতে পারতো তোমার ছেলে। গায়ে হাত তুলেছে কোন সাহসে? কিছু হলে আমি দেখো কি করি?
নীরা বলল,
‘ কি হবে? মুখে খারাপ কথা আনছেন কেন?
আমি আদিভাইকে ফোন দিয়েছি। হসপিটালে এডমিট করার ডেট কালকে ছিল। উনি বলেছেন, আজকে এডমিট করিয়ে দিতে। তাই ওনারা আসছেন। আমার মনে হয় ওর পেইন উঠেছে।

পিহু রিপের বুকে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে,
‘ না আমি এই ঘর ছেড়ে কোথাও যাব না। কোথাও না। কোথায় মাহিদ ভাই? মাহিদ ভাই কিছু না বললে আমি কোথাও যাবনা। মাহিদ ভাই আমাকে ব্যাথা দিয়েছে।

রিপ সান্ত্বনা দিতে দিতে বলল,
‘ এভাবে বলেনা। কারো কথা না ভাবো, যে আসছে তার কথা ভাবো। তোমার মাহিদ ভাইকে আমি মারব। শাস্তি দেব। কেন তোমাকে মেরেছে?
পিহুর কাঁদতে কাঁদতে একসময় অচেতন হয়ে পড়ল। মাহিদকে পাওয়া গেলনা ফোনে।
আদি ইশা রেহান আফি চলে আসল। ইশা কান্নায় ভেঙে পড়ল পিহুকে ওভাবে দেখে। রিপ বলল,
‘ এভাবে কাঁদিস না ইশু। তোর মেয়েকে আগলে রাখার কথা দিয়েছি আমি।
আদি ডাকল বারকয়েক।
‘ মা ওঠো। এই মা। পিহু?
পিহু উঠল না। ইমার্জেন্সি ক্লিনিকে এডমিট করানো হলো পিহুকে। অচেতন পিহু দেখলই না হসপিটালের করিডোরে বসে থাকা দুই দুইটা পরিবারের মানুষ। একটি মেয়ের কোলে ঘুমন্ত একটি বাচ্চা শিশু। বাচ্চাটির ঘুম ও ভেঙে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর। ঘুমঘুম চোখে বাচ্চাটি বলে,
‘ সবাই কান্না করে কেন? ছিকুর কান্না পায় কেন?

ঝড়ো হাওয়া বইছে। শেষরাতে বাড়ি ফেরা ছেলেটি ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলল তালা মারা দেখে। পুরো বাড়িটাতে বিরাজ করছে নৈঃশব্দ্যতা। কালকের দিনটা খুব স্পেশাল তার কাছে। কাউকে না দেখে মুখ মলিন হলো । বুকটা মোচড়ে উঠল। কাঁপা-কাঁপা পায়ে সে উপরে উঠে গেল কোনোমতে। প্রিয় মানুষটি থাকা ঘরটাতে দরজা ঠেলে ডুকতেই নিত্যকার শুয়ে থাকা প্রিয় মানুষটিকে দেখা গেলনা। খোলা জানালা দিয়ে ঘরে ডুকে পড়েছে হাওয়া। নড়ে নড়ে উঠছে ঘরের পর্দা, আসবাবপত্র। মাহিদ জানালা বন্ধ করার আগেই চোখে পড়ল তার আর তার পাশে হাসিমুখে থাকা রমণীর ছবি পড়ে রয়েছে মাটিতে । মাটি থেকে কুড়িয়ে নিয়ে ছবিটা দুহাতের বন্ধনে আবদ্ধ করল সে। বুকের সাথে জড়িয়ে নিল সেই ছবি। জানালা দিয়ে ঝড়ো হাওয়া ডুকে পড়ল ঘরে। উদাস হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির চুল উড়ল। চোখজোড়া অনায়াসে ভর্তি হলো জলে। ডুবুডুবু চোখজোড়া থেকে খসে পড়ল একফোঁটা জল সেই ছবিটাতে। সেই জলের ফোঁটা ও যে মেয়েটির নামে পড়ল। মাহিদ বিড়বিড় করল,
‘ আমি তোকেই ভালোবেসে যেতে চেয়েছি। চাই। চাইবো। তুই কোথাও যাসনা তোর মাহিদ ভাইকে ছেড়ে ।

চলবে,
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here