মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_৩৯ (সিজন২)

0
651

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_৩৯ (সিজন২)
#পুষ্পিতা_প্রিমা

মাথার দুইপাশে দুটো ঝুঁটি। গায়ে পড়নের ফ্রকটি গাঢ় নীল রঙের । খালি পা। এক পা এক পা করে হেঁটে বাচ্চা মেয়েটি কারো একটা রুমের ভেতর ডুকে পড়ল। কোলে থাকা ছোট্ট টেডিবিয়ারটিকে বলল,

‘ টুকি আম্মা আসিনা। কুলে নেইনা। বাবাই আসিনা। কুলে নেইনা। মেরি পুঁচাদের সাথে কুথা বুলেনা।

চেয়ারে বসে থাকা লোকটা মিনমিন করে বলা কথাগুলো শুনে চোখ তুলল। হেসে ফেলল। ছোট্ট আদুরে বাচ্চা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ কে এসেছে আমার ঘরে?

‘ মেরি ইসেছে বেরিচতারার ঘরে।

‘ মেরি কার সাথে কথা বলছে?

মেরিনা হাতের পুতুলটির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ টুকির সাথে কুথা বুলে।

‘ কি কুথা বুলে?

‘ মেরির আম্মার কুথা বুলে। মেরির আব্বার কুথা বুলে।

‘ মেরির আম্মা কুথাই?

‘ মিদিকেলে।

‘ মেরির বাবাই কুথাই,?

‘ ভাছিটিতে।

রিপ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মেরিনার সামনে গিয়ে হাঁটুমুড়ে বসে বলে

‘ বোন কি রাগ করেছে?

মেরিনা ঠোঁট ফুলায়। উপরনিচ মাথা নাড়ে। বলে,

‘ খুব রাগ কুরেছে । কান্না পাইছে।

রিপ হাসল। পাঁজাখোলা করে কোলে নিয়ে যেতে যেতে বলল,

‘ নীরা তুমি আমার বোনটাকে একা একা ছেড়েছ কেন?

মেরিনা হাসে। বলে,

‘ নীআ নাই। মোনা নাই।

রিপ বলল,

‘ কোথায় সবাই? বোনকে একা রেখে সবাই যায় কোথায়?

মেরিনা টুকিকে বলল,

‘ টুকি ভালো। সবাই ভালু না।

রিপ হাসল। নীরা রান্নাঘর থেকে ছুটে আসতেই রিপের কোলে মেরিনাকে দেখে শান্ত হয়।
বলে,

‘ ছোট্ট ছোট্ট পাগুলো দিয়ে এত হাঁটাহাঁটি করলে পা ব্যাথা হবেনা? বাপ আসলে তখন বাপকে নালিশ দেবে, আববা ইখানে বিথা, ওখানে বিথা। মা ডাক্তার তো আছেই।

মেরিনা দাঁত দেখিয়ে হাসল। আঙুল দিয়ে নীরাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল,

‘ নীআ ভালু না। কুলে নেইনা।

নীরা চোখ লাল করে তাকায়। মেরিনা রিপের গলা জড়িয়ে ধরে বিড়বিড় করে বলে,

‘ বেরিচতারা নীআআ ভালু না।

রিপ বলল,

‘ একদম বাজে নীআ। এত পাজি কেন?

মেরিনা বলল,

‘ বেরিচতারা ভালু।

নীরা বলল,

‘ যেমন বাপের বাপ, তেমন বাপের ঝি।

________________

বাইরে পরিচিত গলার আওয়াজ শোনা গেল। রিক গিয়ে দরজা খুলল। পিহুকে দেখে বলল,

‘ মাহি কোথায়?

পিহু বলল,

‘ আসতে একটু দেরী হবে নাকি। আমাকে একা একা ফিরতে বলেছে। মেরি কোথায়?

রিক বলল,

‘ রিপকে জ্বালিয়ে মারছে। কিছু খাচ্ছে ও না। পড়ছে ও না।
পিহু দৌড়ে গেল।

বিছানার উপর পা লম্বা করে বসা মেয়েটা টুকির সাথে কথা বলে।

‘ আমমা আসিনা ? বাবাই আসিনা ? মেরির কান্না পায়।

টুকির নাকে আদর দিয়ে বলে,

‘ আববা ইভাবে আদল কুরে মেরিকে। আমমা আদল কুরে।

পিহু পা টিপে টিপে এগোলো। চুপিচুপি ওয়াশরুমে ডুকে হাত মুখ ধুয়ে নিল। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ছোট্ট মেয়েটির পেছনে গিয়ে ডাকল,

‘ মা!!!! মা কই?

বাচ্চা মেয়েটি পিছু ফেরেনা। গাল ফুলিয়ে টুকিকে বলে,

‘ মা রাগ কুরেছে। মা কথা বুলবেনা। মেরি কুথা বুলেনা।

পিহু নরম কন্ঠে ডাকল,

‘ এই মা? মা কি করে?

মেরি একটুখানি আড়চোখে পিহুকে দেখে বলল,

‘ ইকা ইকা বুসে আছে। মেরির সাথে কিউ কুথা বুলেনা।

পিহুর খারাপ লাগল। পেছন থেকে বাচ্চাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে বলল,

‘ শুধু দুইদিনই তো। মা যখন বড় হবে,তখন সাথে করে নিয়ে যাব। তখন আর ইকা ইকা থাকতে হবেনা।

মেরির রাগ কমেনা। হাতের মুঠি দিয়ে ধরল পেছনে থাকা পিহুর চুল। টানতে টানতে বলল,

‘ মেরি লাগ কুরেছে। ভাতু খাইনি। বচ্ছু খাইনি।

পিহু বলল,

‘ এভাবে ধরেছ। লাগছে তো। আমমা বিথা পাই। মেরি আম্মাকে বিথা দেই?

মেরিনা সামনে ফিরে। পিহুর গাল ধরে ছোট্ট হাত দিয়ে। কামড় দেওয়ার সুযোগ খুঁজতে খুঁজতে বলে,

‘ আমমমা!!!

পিহু খিলখিল করে হাসে। বলে

‘ বিড়ালিনী সারাক্ষণ কামড় দিতে চাই। এত রাগ কোথা থেকে আসে? আমার রাহি আব্বা কত ভালো ছিল ছোটবেলায় ?

মেরি মাথা তুলে। মাথা দিয়ে ধপ করে মারে পিহুকে। বলে,

‘ নাহি ভালু না। মেরি ভালু। গুড গারেল।

পিহু হাসতে হাসতে মেরির কপালে চুমু দিয়ে বলল,

‘ ওমা! আমার বাচ্চা সবার চাইতে ভালো। একদম বাপের মতো।

মেরিনা দাঁত দেখিয়ে হাসল। পিহুর গালে গাল ঘষে বলল,

‘ মেরি মিহির মুতো। বাপির মুতো।

পিহু বলল,

‘ ঠিক ঠিক। একদম বাপের মুতো খাটাশ।

মাহিদ রুমে ডুকে হাতের ফাইলগুলো রাখতে রাখতে জবাব দেয়,

‘ আমার নামে বদনাম করা হচ্ছে?

মেরিনা চমকে উঠে। কত প্রতীক্ষার পর যেন কাঙ্ক্ষিত কন্ঠস্বর শুনতে পেল সে। ডাকল,

‘ আবববা???

মাহিদ ডাকল,

‘ মেরিজান আসো আম্মাজান।

মেরিনা হেসে হাত বাড়িয়ে দিল তাড়াতাড়ি।

পিহু বলল,
‘ এখন ধরবেনা আমার মেয়েকে। আগে হাত ধুয়ে এসো। মুখ ধুয়ে এসো। যাও।

মেরিনা হাত বাড়িয়ে ডাকে,

‘ আব্বা? বাব্বাই। আসু । আসু । কুলে নাও। কুলে নাও। পাপ্পি দাও। আসু ।

মাহিদ গালি দিল পিহুকে।

‘ তুই ডাক্তারের বাচ্চিরে আমি পরে দেইখা লয়ুম বাপ। আমার আর আমার ছেড়ির মাঝখানে ভিলেন সাজতে আইছস বাপ?
পিহু হাসল। বলল,

‘ ধুয়ে এসো। যাও।

মাহিদ ওয়াশরুমে গেল।

মেরিনা মাথা দিয়ে বাড়ি মারল পিহুকে। রাগে, দুঃখে, আক্রেশে ফেটে পড়ায় নাকের মাথা,গালের ফোলা অংশ কিঞ্চিৎ লাল হলো। নাক টেনে টেনে বলল,

‘ আমমা ভালু না। আমমা পুঁচুনি। আববা ভালু। আববা পুঁচাইয়া না? আববা গুড বয়।

পিহু হাসল। ইচ্ছেমতো হাতের মার খেল মেরির। মাহিদ হাতে তোয়ালে নিতে না নিতেই মেরি ছোড়াছুড়ি শুরু করল পিহুর কোলে। হাত বাড়িয়ে ডাকল,
‘ আব্বা আসু।

মাহিদ বলল,

‘ মুখ মুছব না?

মেরি মাথা ঝাঁকিয়ে বলে।

‘ নান নান না নান নান না।

মাহিদ মুখ না মুছে হাত বাড়িয়ে দেয়।
মেরি ঝাঁপ দেয় তার কোলে। গলা জড়িয়ে ধরে পড়ে থাকে মাহিদের ঘাড়ে । একদম চুপ হয়ে। শান্ত হয়ে। মাহিদ মেয়ের পিঠের উপর হাত রেখে বলল,

‘ আব্বাকে মিস করেছ মেরিজান?

মেরিনা মিউমিউ করে বলল,

‘ মিচ কলেছি।

মাহিদ হাসে। মেয়ের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

‘ এভাবে পড়ে আছো কেন? আদর করব না?

মেরিনা উঠে পড়ে। মাহিদ গালের দু স্নেহের পরশ আঁকে। মেয়ে ও আঁকে। বাবা ফিরলে সে যেন চাঁদ হাতে পায়।

আবার শক্ত করে মাহিদের গলা জড়িয়ে ধরে মেরিনা। পড়ে থাকে একদম নির্জীব হয়ে। পিহু তোয়ালে দিয়ে তার ভেজা মুখ মুছে দেয়। মাহিদ তাকাল পিহুর দিকে। পিহুর পলকহীন দৃষ্টিকেই প্রশ্ন করল,

‘ এভাবে কি দেখছিস?

পিহু হাসল মৃদু। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে দিতে দিতে বলল,

‘ আমার মাঝেমাঝে অবাক লাগে, এই দূরন্ত, বাউন্ডুলে, ছন্নছাড়া ছেলেটা আজ মেয়ের বাবা। আমার মেয়ের।

মাহিদ ফিরে গেল অন্যপাশে। মেয়ের পিঠে আলতোভাবে হাত বুলাতে বুলাতে হাঁটল। আবার পিহুর দিকে এগিয়ে এসে চোখে চোখ রেখে বলল,

‘ এত অবাক হওয়ার কি আছে? মাহিদ মাহিদই আছে। তোর মাহিদ ভাই দূরন্ত, বাউন্ডুলে এখনো আছে। সে বদলায়নি, বদলাবে না। সে চাই, সবসময় চাইবে, তুই যেভাবে চাস সেভাবেই থাকতে। থাকবে ও। তুই থাকিস। থেকে যাস। আমার জন্য। আমার বাচ্চার জন্য। তোকে আমার সবসময় চাই। খুব করে চাই। বারবার চাই।

পিহু মেয়ে স্বামীকে একসাথে জড়িয়ে ধরল। বলল,
‘ আমি থাকব।

কিন্তু মেরি চিৎকার দিয়ে উঠল।

‘ আমাল আব্বাকে ধরেছ কিনো? আমাল আব্বা। মেরির আব্বা। পিহুর না। ছিড়ে দাও। আমাল আব্বাকে ছিড়ে দাও।

পিহু, মাহিদ দুজনই একসাথে হেসে উঠল। মেরি নাক ফুলিয়ে দুজনের মাথা একদিকে এনে দুম করে বাড়ি খেল। তারপর নিজে নিজে কপাল ঢলে বলল,
‘ ওফফফফ। বিথা। খুব বিথা। ওফফফফ।

___________________

বাইকের পেছন থেকে নেমে এল রাহি। রেহান বলল,
‘ তুমি যাও। আব্বা আসছি।
রাহি স্কুলের টিফিনবক্স ঘোরাতে ঘোরাতে এগোলো। বলল,
‘ পাপা তাড়াতাড়ি আসো না কেন?
রেহান বলল,
‘ যাচ্ছি তো।
রাহি ঘরে ডুকে ডাকল ইশাকে।
‘ ডাক্তারের বউ আসেনা কেন?
ইশা রান্নাঘর থেকে হাঁক ছেড়ে বলল,
‘ ছিকুসোনা এসেছে?
রাহি কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
‘ জুতোয় কাঁদা লেগেছে। মাম্মা কোথায়? আসেনা কেন? তাড়াতাড়ি আসো।
ইশা, পরী কেউ এলোনা। রাইনা এল। সোফায় বসে থাকা আফি বলল,
‘ তুই ব্যাঠা আসার সাথে কি শুরু করছস পোলার পুত? কানটা উইড়া চইলা গেল।
রাহি ব্যাগটা ছুড়ে মারল ঘরে ডুকে। সোফায় গিয়ে পড়ল ব্যাগটা। কাঁদা নিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বলল,
‘ এভাবে বলেছ কেন দাদাই? কাঁদায় মাখামাখি করে দেব পুরো ঘর।
রাইনা হায় হায় করে উঠল।
‘ জুতো খুলে আসতে পারতে দাদুভাই?.
তোমার মা দেখলে এখন চিল্লাপাল্লা করবে তো।
রাহি শক্ত কন্ঠে বলল,
‘ করুক। দাদাই বকেছে কেন? আমাকে ওভাবে বলেছে কেন? তুমি ও দাদাইয়ের পক্ষে কথা বলছ কেন?

রাইনা মাথায় হাত দিয়ে বলে,
‘ এত প্রশ্ন??
রাহি উপরে চলে গেল। পরী রুম থেকে বের হয়ে রাহিকে দেখে হাসল। এক হাতে টেনে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ ক্লাস কেমন হয়েছে? এক্সামের রুটিন দিয়েছে?
রাহি বলল,
‘ মাম্মা আমার রাগ লাগছে। এখন কোনো কথা বলবো না আমি।
পরী বলল,
‘ কেন? এত রাগ কেন?
রাহি জুতোর ফিতা খুলতে খুলতে বলে,
‘ দাদাই বকেছে আমায়। বকেছে কেন?
পরী হেসে ফেলল। বলল,
‘ এটার জন্য রাগ করতে হয়?
রাহি বলল,
‘ রাগ হয় কেন?
পরী বলল,
‘ কচুর জন্য হয়?
রাহি ঘরের এপাশওপাশ চোখ বুলালো। বলল,
‘ বোনকে দেখিনা কেন?
পরী বলল,
‘ বোন ডাক্তারের কাছে।
রাহি মোজা খুলে দূরে ছুড়ে মারল। বলল,
‘ আমি কাল মামার বাড়ি যাব। খালামণিকে দেখতে যাব।
পরী বলল,
‘ আচ্ছা যেও। আমরা ও যাব। পিকনিক।
রাহি হাসে। বলে,
‘ পিকনিক কেন?
পরী বলল,
‘ বোন কাঁদে। আমি যাই। তুমি কেন কেন জপতে থাকো আব্বা।

_____________

কোলে থাকা এক বছরের বাচ্চাটি কিউমিউ করে আদির কোলে। আদি রান্নাঘরে উঁকি দেয়। ধীরপায়ে হেঁটে গিয়ে দাঁড়ায় ইশার পেছনে। আদি ডাকার আগে ছোট্ট বাচ্চাটি মিউমিউ করে আওয়াজ করে। ইশা না দেখেই বলে,
‘ ডক্টর ওকে এখানে কেন আনছেন? পরীকে গিয়ে দিয়ে আসুন। যান।
আদি শুনল না। চেয়ার টেনে বসল। বলল,
‘ মিষ্টি আমাদের নানা নাতনিকে মিষ্টি খেতে দাও। ফ্রিজে আছে।
ইশা না করে উঠে।
‘ ওর ঠান্ডা লেগে যাবে ডক্টর। আপনি ডক্টর হয়ে?
আদি বলল,
‘ আমি খাব। আঙুলের মাথায় করে একটুখানি ওর জিহ্বায় লাগিয়ে দেব। নাহলে তোমার নাতনী আমার খাবারে নজর দেবে। আর আমার পেট খারাপ করবে।
ইশা হেসে দেয়। বলে,
‘ আপনি একদম ছোট্ট বাচ্চাদের মতো কথা বলেন ডক্টর।
আদি হাসল। শাড়ির নিচে ইশার লম্বা বিনুনি ধরে টান দিয়ে বলল,
‘ এই মিষ্টি,,, মিষ্টি দাওনা।
ইশা আর্তনাদ করে উঠে বলে,
‘ ডক্টর আমার চুল ধরবেন না একদম। আমার চুলগুলো এমনিতেই ঝড়তে ঝড়তে শেষ। পরে আপনাকে সবাই টাকলার জামাই ডাকবে। এই বয়সে এসে আপনার বাজে স্বভাব এখনো যাইনি।
আদি সুর টেনে গাইল।
‘ আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবেনা।
ইশা তরকারি কষাতে কষাতে হাসল। পরী এসে বলল,
‘ আম্মা তুমি যাও। এবার আমি বাকি কাজগুলো করে নিই।
ইশা বলল,
‘ কাজ শেষ। তুমি আলোকে দেখো। তোমার আব্বা ওকে মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
পরী বলল,
‘ তোমাদের আলো তো ডক্টরকে একদম ছাড়তে চায়না।
আদি বলল,
‘ পরী ও চাইতো না আলো ও চাইনা। পরী,আলো দুজনই ডক্টরকে বেশি ভালোবাসে।
ইশা বলল,
‘ আহারে।
পরী বলল,
‘ মা আসো।
আলো পিটপিট করে তাকালো। আদির পড়নের ঢিলা শার্ট খামচে ধরল। মুখ গুজল। পরী বলল,
‘ পাপা এসেছে। রেহান। রাহি। এসেছে। ভাই এসেছে। পাপা এসেছে। আসো।
আলো মুখ দেখাল আবার। আদির দিকে তাকিয়ে পরীর কাছে চলে গেল।
পরী তার নাকের ডগায় চুমু দিল। ঘরের দিকে পা বাড়িয়ে বলল,
‘ কি বলেন?
আলো জিহ্বা বের করে বলে,
‘ এপ্পে,পেপ্পে
পরী হাসে। বলে,
‘ আপনার এসব ভাষা বুঝার বয়স আমার হয়নি।
রেহান ফ্রেশ হয়ে এল মাত্রই। বিছানায় বসে ল্যাপটপটা চার্জারে দিতে দিতে ডাকল
‘ পরী?
পরী চলে এল। বলল,
‘ নিয়ে এসেছি। রেহান একগাল হাসল। বিছানায় বসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ দাও।
রাহি এসে রেহানের পাশে বসল। বলল,
‘ আমি নেব। আমি তাহিয়ার জন্য চকলেট এনেছি। তাহিয়া চকলেট খাবে?
রেহান বলল,
‘ ও আমার আন্ধার ঘরের আলো। আলো ডাকবে।
রাহি গাল ফুলিয়ে বলল,
‘ রাহির বোন তাহি। আমি ওকে তাহি ডাকব। আমার বোন তাহি।
রেহান মেয়ের গালে গাল লাগিয়ে বলল,
‘ আলো মা তুমি বলোতো, কোনটা বেশি সুন্দর?
আলো হাসল মিটিমিটি। গুলুমলু হাতটা দিয়ে রেহানের গাল ছুঁয়ে ছুঁয়ে ডাকল,
‘ এপপে পেপপে, এমমে মেমমে।
পরী হাসল। বলল,
‘ আপনি বুঝতে পারছেন আপনার মেয়ের ভাষা?
রেহান হাসল। বলল,
‘ না বুঝার কি আছে। তার পাপাকে ডাকছে।
পরী হাসল। রাহি বলল,
‘ ভাই ডাকো তাহি। ডাকো।
আলো পিটপিট করে ভাইকে দেখল। হাতের মুঠি দিয়ে শক্ত করে রাহির চুল টেনে ধরে তার মুখের কাছে আনল।
রাহি বলল,
‘ রাহি ব্যাথা পাই কেন? ভাই ব্যাথা পাই তো।
আলো ছেড়ে দিল রাহিকে।
রাহি বলল,
‘আমাকে কোলে দাও। বোনকে কোলে চড়াবো আমি।
রেহান বলল,
‘ না পড়ে যাবে। তোমার বিশ্বাস নেই।
রাহি মন খারাপ করে ফেলল। পরীর কন্ঠস্বর খানিকটা উঁচু হলো।
‘ সিংগারম্যান রাহিকে কোলে দেন। আমার ছেলে বড় হয়েছে। বোনকে কোলে নিতে পারবে। রাহি মুখ ফুলিয়ে রাখে।
রেহান রাহির কোলে দেয়। ব্যস আর পায় কে? রাহি বোনকে কোলে নিয়ে চলে গেল। পরী পিছু পিছু গেল,
‘ রাহি সাবধানে।
রেহান এক হাত দিয়ে টেনে আনল পরীকে। পেছন থেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে বলল,
‘ এখন ভয় পাচ্ছ কেন?
পরী কোনো আওয়াজ করল না। মৃদুমন্দ ধরা কন্ঠে বলল,
‘ কোথায়?
পরী সামনে ফিরল। রেহান তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,
‘ আমার বাচ্চার মা টা কেমন আছে?
পরী আবেগে সিক্ত হয়ে বলল,
‘ যেমন রেখেছেন?
‘ ভালো রাখিনি?
পরী হাসে। বলে,
‘ খুব ভালো রেখেছেন। আমি ভালো আছি। আপনি ও ভালো থাকবেন।
রেহান কপালে কপাল ঠেসে বলল,
‘ আমি থাকব। তুমি ও থেকো।

____________________

পিকনিকের আয়োজন হলো খান বাড়িতে। মেরির খুশি কে দেখে? মাহিদ ফোন করা শেষে ঘরে ডুকতেই মেরি দৌড়ে এল। বাড়ি খেল মাহিদের পায়ের সাথে। ধপ করে মেঝেতে পড়ে গেল। কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,
‘ আববা?
মাহিদ তাড়াতাড়ি তাকে কোলে নিয়ে বলল,
‘ এভাবে দৌড়াচ্ছেন কেন মেরিজান?
মেরি আঙুল দিয়ে বাইরে দেখিয়ে দেয়। মাহিদ তাকে নিয়ে বাইরে বেরোয়। নিনিতকে দেখে হাসে। বলে,
‘ শালা তুই আর তোর বউয়ের কোথাও যাইতে আসতে বললে বছর লেগে যায় ক্যান? আর ও তাড়াতাড়ি আসতে পারোস নাই বাপ?
গাড়ি থেকে জালিশা বের হয়ে এল। ছোট্ট বাচ্চাটি কোল থেকে নেমে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে নিনিতের আঙুল ধরে। বলে,
‘ পাপা ওততো বাবু।
মেরি নাবিদকে দেখিয়ে দেয় মাহিদকে। বলে,
‘ আব্বা বাবু ইখানে?
মাহিদ আর নিনিত হাসে। নিনিত নাবিদকে কোলে নিয়ে বলে,
‘ দুজনই তো বাবু। কিন্তু নাবিদসাহেব ওনি আপনার আপু হবে। আপু ডাকবেন।
মেরি দাঁত দেখিয়ে হেসে বলে,
‘ পুউউউ।
মাহিদ হাসে। নাবিদ নিনিতকে ধমক দেয়।
‘ ইননননা বাবু।
নিনিত হাসে। বলে,
‘ আচ্ছা বাবু ডাকো।
মেরি ডাকে,
‘ বাবু আসু। আমাল টুকি আছে। তুমাল টুকি আছে?
নাবিদ নিনিতের মুখের দিকে তাকায় কিছু না বুঝে। নিনিত বলে,
‘ আছে।
নাবিদ নিনিতের মুখে মুখে বলে,
‘ আতে। আমমমমাল আতে। টুতি আতে।
জালিশা হাসল। মাহিদ বলল,
‘ শালা তোর বাচ্চারে আমার বহুত পছন্দ হইছে। আমি তারে বোনঝির জামাই বানামু।
জালিশা বলল,
‘ উফ স্যার। ওরা আগে বড় তো হোক।
মাহিদ ধমক দেয়।
‘ হেইই চোপপপ। তোমারে কে কথা কইতে কইছে বাপ? ডাক্তারণীর মতো মুখে মুখে কথা কওয়া শিখছো? আমি মুরব্বি কথা বলি, তুমি নাক গলাও কিল্লাই?
মেরি গালে হাত দিয়ে হাসে কিছু না বুঝে। মাহিদ মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ কি বুঝলা আম্মাজান। হাসেন ক্যান?

নিনিতের পিছু পিছু আর ও একটা গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে এল রাহি। মাহিদের পা জড়িয়ে ধরল ডাকল,
‘ মিহি??????
মাহিদ হেসে বলে,
‘ জামাই বাবাজি তুমি এখনো ছোড থাইকা গেছ? আমারে কেন এত চিন্তায় রাখো মিয়া? আমার মাইয়া বড় হইয়া যাইতাছে তুমি জামাই বাবাজি বড় হওনা কিল্লাই? চিন্তায় তো আমার ঘুম হারাম হইয়া যাইবো বাপ।
রাহি হাসে। মেরি ও হাসে। সবাই হা করে মেরি আর রাহির হাসি দেখে। হাসি থামেনা তাদের আপনাআপনি। সবাই একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলে,

‘ এরা হাসে কেন বাপ? ডাল মে কুচ কালা হ্যা?

নাবিদ ও হা করে তাকিয়ে থাকে। রেহানের সাথে কুশলাদি বিনিময় শেষে নিনিত বলল,
‘ বেবি এখন কেমন আছে। রেহান বলল,
‘ এখন ভালো আছে। ট্রিটমেন্ট তো চলছেই । নাবিদসাহেব কেমন আছে??
রেহান খুব কাছাকাছি থাকায় তার কোলে থাকা আলোকে সবার চক্ষুর অগোচরে নাবিদ ঠাসস করে চড় মেরে বসল। আলো চিৎকার করে কেঁদে উঠল। রেহান দুলাতে দুলাতে বলল,
‘ আদর করেছে। আর কেঁদোনা মা। কেঁদোনা।
নিনিত বলল,
‘ এটা কি করেছেন নাবিদসাহেব। বাবু ব্যাথা পেয়েছে না? মারলেন কেন?
নাবিদ কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে,
‘ বাবুকে আদল আদল। আদল আদল।
নিনিত মাথা চাপড়ে বলে,
‘ রেহান ভাই এখন কি মনে করবে?

মাহিদ বলল,
‘ তোর শালারে আমি বোনঝি দিতাম না বাপ।
যাই গিয়া দেইখা আসি।

মাহিদ যাওয়ার সাথে সাথে জালিশা বলল,
‘ একদম বাপের মতো অসভ্য হয়েছে।
নিনিত জালিশা ওড়নায় টান দিল এদিকওদিক তাকিয়ে। জালিশা মাথায় হাত দিয়ে বলল,
‘ ওড়নায় পিন করেছি না?
নিনিত জালিশার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
‘ বাপ কি অসভ্যতামি করেছে?
জালিশা বলল,
‘ বলতে হবে?
নাবিদ চিল্লিয়ে বলে,
‘ বাবু কানেনা, কানেনা। আদল, আদল।

চলবে,
বোনাস পর্ব দিতে গিয়ে আমি বোধহয় আবার গল্প বানিয়ে ফেলব। দেখা যাক কতদূর এগোয়। তারআগে বলুন,

চলবে কি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here