মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_৪০ (সিজন২)

0
671

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_৪০ (সিজন২)
#পুষ্পিতা_প্রিমা

পায়ের উপর পা তুলে সোফার সাথে গা এলিয়ে বসল আফি। আদেশের সুরে পিহুকে বলল,
‘ আম্মা আমারে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দাও। আর কোনো কিছু খামুনা আমি।
পিহু হাসল। বলল,
‘ তুমি আমার শ্বশুড়বাড়িতে আসছ না? শুধু জল খেলে চলবে?
আফি বলল,
‘ ওসব রংচং মার্কা খাবার খাওয়ার রুচি নাই আম্মা। সাদা পানি দাও।
পিহু গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ জল বর্ণহীন হয় বড়পাপা।
আফি ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিল। বলল,
‘ তোমার ছেড়িরে ডাকো। একটু আদর করি। পিহু বলল,
‘ বাপের কোল থেকে নামছেই না। দিদিয়া আর দাভাই কত করে কোলে আসতে বলেছে, না সে আসবে না।
আফি বলল,
‘ মাহিদ্দেরে ডাকো। শালার জামাই লুকায় আছে ক্যান?
পিহু হেসে উঠল। বলল,
‘ লুকিয়ে থাকবে কেন? আছে ওইখানে। আমি পাঠাচ্ছি।
আফি আদি আর রিপকে ডাকল,
‘ ব্যারিস্টার সাহেব, আর ডক্টর সাহেব আমার মতো সাধারণ মানুষরে কি চোখে পড়তাছে না?
রিপ হেসে বলল,
‘ এটা কোনোকথা হলো?
আদি সোফায় বসতে বসতে রিপকে জবাব দিল,
‘ তুই এই বুইড়ার কথা কানে তুলছিস? ডক্টর আদি চৌধুরীর ভাষ্যমতে এই মশাইয়ের মাথার তার সাতটা থেকে চারটা ছিঁড়ে গিয়েছে। বাকি তিনটা ও টালমাটাল। তাই তার কথাগুলো ও টালমাটাল। কানে তুলিস না ভাই। রিপ মৃদু হাসল।
আফি রেগে গেল। বলল,
‘ আদি চড় খাবি একদম। আদি হো হো করে হাসল। রিপ হাসল। রিক এসে আফির পাশে বসল। বলল,
‘ চায়ের আড্ডা হয়ে যাক একবার।
আদি বলল,
‘ হোক। হোক। মিষ্টি চা করে আনো জলদি ।
রিক বাধা দিল।
‘ আমার বোনটা এখানে বেড়াতে এসেছে। তুমি কাজ করতে বলছ? এটা হয়না। আমি মুনাকে বলছি।
রিক মুনাকে ডাক দিল। মুনা এলোনা। নীরা হাজির। বলল,
‘ ভাবিকে কি দরকার? আমরা কি তোমাদের সবার মতো বেকার বড়দা? সব রান্না আমাদের করতে হচ্ছে। আর তোমরা শুরু করেছ ডাকাডাকি।
রিপ চোখ দিয়ে নীরাকে চুপ করতে বলল। নীরা মুখ মোচড়ে দিল। রিপ ভেতরে ভেতরে হেসে দিল। এ মহিলাকে কোনোকিছু বুঝিয়ে শান্তি নেই।

রিক সোফায় বসে বলল।
‘ রাগছিস কেন নীরু? সবার জন্য একটু চা করে দে। ব্যস। তোদের আর কিছু করতে বলব না।

নীরা নাক ফুলালো। বলল,
‘ চা ছাড়া আর কিছু চেনেনা এরা৷ শুধু চা আর চা। এই ব্যারিস্টার তো ভাত না খেয়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে পারবে, কিন্তু চা ছাড়া তার চলেনা। সব ব্যারিস্টারের প্ল্যান না?
রিপ খানিকটা রাগ করে রিককে বলল,
‘ বড়দা তুমি চায়ের অর্ডার দিয়েছ, কথা শুনতে হচ্ছে আমাকে।
নীরা আদিকে বলল,
‘ দেখেছেন ভাই, এই ব্যারিস্টার কথায় কথায় রাগ করে। না আমি আর কিছু বলব না। রাগের কারখানা দেখছি। বাপরে বাপ।
আফি বলল,
‘ তোমারা আর ঝগড়াঝাটি করিওনা। আমাদের চা আইসা গেছে। আমার বৌমা চা বানাইয়া আনছে।

পরী চায়ের ট্রে রেখে একগাল হাসল। রিককে বলল,
‘ পাপা নাও চা।
রিক হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। পরীকে আদিকে চা দিল। বলল,
‘ আব্বা চা।
রিপকে দিল। রিপ ফোনে কি যেন দেখতে ব্যস্ত। পরী ডাকল,
‘ পাপা?
রিপ মাথা তুলে হেসে দিল। পরীর মাথা চাপড়ে বলল,
‘ মায়ের হাতে চা? কতদিন পর?
পরী হাসল। বলল,
‘ তুমি তো যাওনা। আমি তোমার সাথে রেগে আছি।
রিপ বলল,
‘ সুযোগ পেলে যাই তো। এ কয়দিন কাজে একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই।
পরী আফির দিকে চা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ শ্বশুর মশাই আপনার স্পেশাল মশলা চা৷
আদি মুখ বিকৃত করে বলল,
‘ ইয়াককক দাভাই৷ কেমনে খাও ওসব ছাইপাঁশ??
আফি ট্রেতে চায়ের কাপ রেখে উঠে দাঁড়াল। বলল,
‘ আমি খাব না। এখানে ও থাকব না। রিক, আর রিপ দাঁড়িয়ে পড়ল। আফি গটগট পায়ে হাঁটা ধরল। আদির হাসতে হাসতে সোফায় ঢলে পড়ল৷ ইশা ব্যস্ত পায়ে হেঁটে এল। আদিকে হাসতে দেখে বুঝেই গেল কিছু একটা হয়েছে। ইশার পিছুপিছু রাইনা এসে বলল,
‘ কি হয়েছে রে ছোট? এই লোকটা এত নাটক দেখায় কেন?.
ইশা বলল,
‘ তোমার আদরের ভাই করছে। রাগিয়ে দিয়েছে মনে হয়?
রিক বলল,
‘ আরেহ কোথায় যাচ্ছেন ভাই?
রিক রিপ ছুটল আফির পিছু। রিপ যাওয়ার সময় আদির মাথায় জোরে মেরে বলল,
‘ তোকে আমি পরে দেখছি শালা।
আফিকে এভাবে হাঁটতে দেখে রেহান ভ্রু কুঞ্চন করে তাকালো। বাড়ির বাইরে পা রাখার আগেই আফিকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে আটকে ফেলল পিহু। হাসতে হাসতে পিহুর মুখ দিয়ে কথা বেরোলো না৷ আফি পিহুকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,
‘ ছাড়ো ছাড়ো৷ চইলা যামু আমি। তোমার বাপেরে খাইতে বলো চা। পিকনিক। আমি খামুনা৷
পিহু হাসতে হাসতে বলল,
‘ পাপাকে খুব খুব বকবো আমি। খুব বকে দেব। রাগ করছ কেন? ভাইয়ের কথায় কেউ রাগ করে? পাপা তো তোমার সাথে মজা করছে।
আফি শান্ত হয়ে গেল। বলল,
‘ না আমি ওই চৌধুরীর বাচ্চার লগে আর কথা কমুনা।
পিহু হাসি থামানোর চেষ্টা করে বলল,
‘ আচ্ছা বাবা ঠিকআছে। কথা বলতে হবেনা।
আদির কন্ঠস্বর ভেসে এল। সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল৷ আদি চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,
‘ দাভাই বাসায় পৌঁছে কল দিও। চিন্তা হয় তোমার জন্য। একটা ভাই আমার?
আফি বলল,
‘ এবার আর থাকুম না। চইলা যামু এক্কেবারে।
হাসতে হাসতে পিহুর চোখে জল চলে এল। আফি ছাড়াছাড়ি করতে করতে পরী ও গিয়ে আফিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ শ্বশুড়আব্বা এবার যান তো দেখি।

আফি শান্ত হয়ে গেল। অনেকক্ষন পর দুইবোনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
‘ ওই ইবলিশের মাইয়্যা না এগুলা। এরা আমার মাইয়্যা।
পরী পিহু একসাথে হাসল। দূর থেকে দাঁড়িয়ে রাইনা জোড়াল শ্বাস ফেলে বলল,
‘ এই পরী পিহু না থাকলে এই লোকটাকে কে সামলাতো? আল্লাহ? এত পাজি লোক ও হয়?
নিনিত রেহানকে বলল,
‘ রেহান ভাই ভারী মজা পেয়েছি।
রেহান মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ এসব আমাদের রোজ দেখতে হয়। এরা দুই ভাই মিলে সারাক্ষণ মা আর কাকিয়ার মাথা খাই। পরী সামলায়৷ মাঝখানে আমি আর রাহি মজা নেই।
নিনিত বলল,
‘ দারুণ ইন্ট্রেরেস্টিং তো?
রেহান বলল,
‘ তা আর বলতে?

________________

আপেলের গায়ে কামড় বসাতেই রাহির মাথায় চাটি জোরে মেরে বসল মাহিদ। রাহির হাত থেকে আপেল পড়ে গেল। রাহি রেগে বলল,
‘ মামা এমন করো কেন? তুমি এভাবে মেরেছ কেন?
মাহিদ বলল,
‘ তুই জামাইরে আমি কত খুঁজলি তুই জানোস বাপ? তুই একা একা ছাদে কি করস বাপ? পাশের বাসার মাইয়্যা টাইয়্যা পছন্দ হইছে নাকি?
রাহি এসব কথার আগা মাথা বুঝল না। মাথার একপাশে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
‘ মামা তুমি ভালো না৷
মাহিদ পেট চেপে হাসল৷ বলল,
‘ চুপ থাক শালা। আর সাবধানে থাকবি। অন্য মাইয়্যার দিকে চোখ দিলে তোরে আমি খাইছি৷ আমার পুতুলটারে তোর লগে বিয়া দিয়ুম৷ উলটপালট কিছু দেখলে দিতাম না মনে রাখিস। রাহির ছোট্ট মাথায় এসব আজগুবি কথাবার্তা গুলো ঢুকল না৷ সে বলল,
‘ এসব কথা আমায় বলো কেন?
মাহিদ বলল,
‘ ধুরর শালা৷ তোরে যা কওয়ার কইছি। বুইঝা লইস বাপ।
রাহি মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চলল। যেতে যেতে বলল,
‘ আমি ব্যারিস্টারকে বলে দেব।

বিছানার উপর শুয়ে থাকা বাচ্চাটি হাত পা কুড়িয়ে খেলা করছে। আর বিড়বিড় করে তার ভাষায় কথা বলছে। তার মুখটা দুহাতে আগলে ধরে আর ও একটি ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে ডাকল,
‘ আমমাল বাবু।
নাবিদ উপরে হাত তুলে মেরিকে বলল,
‘ আমমমান। আমমান। বাবুউউ।
মেরি ভ্রু কুঞ্চন করল। পরক্ষণে নাবিদকে পাম্প দিয়ে মুখে হাত বুলিয়ে বলল,
‘ বাবুউউউ।
নাবিদ মেরির হাত নামিয়ে দিল। আলোকে ঘিরে রেখে বলল,।’ আমমান আমমান।
মেরির রাগ লাগল। সে ঠোঁট ফুলালো। কাঁদো কাঁদো হয়ে ডাকল,
‘ আমমাল বাবু কই?
নাবিদ মাথা দুলিয়ে হাত নেড়ে বলল,
‘ নন্নাই। ন্নাই।
মেরি ঠোঁট টানল। আলোকে ঘিরে বলল,
‘ আলু আমমাল বুন। আমমাল।
নাবিদ মেরির হাতের বাহুতে কামঢ বসালো। গর্জে কেঁদে বলল,
‘ আমমান বাবুউউ। আমমান।
মেরি জোরে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠল। নাবিদ ভয় পেয়ে গেল। কান্না থামিয়ে দিল। দুহাত মুখে দিয়ে তাকিয়ে থাকল আলোর দিকে। আলো হাত পা নেড়ে দাঁত দেখিয়ে খিলখিল করে হাসল। মেরিনা চিৎকার করে কেঁদে উঠল। নাবিদ তার কোমল ঠোঁটজোড়া নাড়িয়ে বলল,
‘ বাবু কানেনা কানেনা। বাবু আদল আদল।
জালিশা দৌড়ে এসে মেরিকে কোলে তুলে। বলে,
‘ কি হয়েছে আম্মু । কাঁদছ কেন? কে মেরেছে?
মেরি আঙুল দিয়ে নাবিদকে দেখিয়ে দেয়। বলে,
‘ ওততো বাবু মিলেছে। বিথা পিয়েছি। আমমি বিথা পিয়েছি। আববা আমমা।
নাবিদ দাঁত দেখিয়ে হাসে। ঠোঁট জোড়া ফুলিয়ে জালিশাকে বলে,
‘ আম্মাই বাবু আদল। বাবু কানেনা কানেনা।
জালিশা মাথা চাপড়ে বলল,
‘ এসব কি শুরু করেছেন বাবাই? কামড় দিয়েছেন কেন আপুকে? ব্যাথা পেয়েছে না?
নাবিদ ঠোঁট ভেঙে হাসল। দুহাতে নিজের মুখ ধরে এপাশ ওপাশ দুলতে দুলতে বলল,
‘ বাবু কানেনা কানেনা। আদল। বাবু আদল।
মেরি ঠোঁট টেনে কাঁদে। আলোকে দেখিয়ে দিয়ে বলে,
‘ আমমাল বাবু। আলু আমমাল বাবু। মিরির বাবু। আমমাল।
নাবিদ আবার ও ঠোঁট ভেঙে হাসে। আলোকে ঘিরে রেখে বলে,
‘ বাবু আমমান। নিব্বিল।
জালিশা বলল,
‘ কচু নিব্বিল। বাবু মেরির। নিব্বিল কিছু নাই।
নাবিদ ঠোঁট টেনে রাখল। কাঁদার সংকেত দিয়ে মাকে ভয় দেখালো। জালিশা ভয় পেল না। আদুরে কন্ঠে বলল,
‘ কাঁদবেন? কাঁদেন?
নাবিদ ঠোঁট টেনে টেনে বলল,
‘ নিব্বি কানেনা কানেনা। আদল আদল।
জালিশা হাসতে হাসতে ঢলে পড়ল। মেরির হাতের বাহুতে ফুঁ দিয়ে দিয়ে আদর করল। মেরি বলল,
‘ বিথা।
জালিশা বলল,
‘ উফফ আম্মুকে বিথা দিয়েছে? নিব্বিটা ভারী পঁচা।
মেরি মাথা নাড়ল।
‘ নিব্বি পুঁচা।
নাবিদ নিজেকে সান্ত্বনা দিল।
‘ নিব্বি কাঁদেনা কাঁদেনা।
কিন্তু যখন দেখল আম্মায় মেরিকে আদর করে। তখন ঝরঝর করে ঠোঁট টেনে কেঁদে দেয়। বলে,
‘ নিব্বি কাঁদে। আম্মায় নিব্বি কাঁদে। বাবু কাঁদে।
জালিশা বলল,
‘ আহারে আমার বাচ্চাটা কাঁদে কেন? কোলে নেব তো?
নাবিদ মাথা নিচু করে কাঁদে। ধপ করে বিছানায় উল্টে শুয়ে পড়ে বলল,
‘ নিব্বি কাঁদে। আম্মায় ন্নাই। আব্বায় নাই।
জালিশা হাসতে বিছানায় বসে পড়ল। পরী এসে মেরিকে কোলে নিয়ে বলল,
‘ আম্মা এভাবে কেঁদেছে কেন?
‘ নিবিবি মিরেছে।
পরী বলল,
‘ নিব্বিকে কে মেরেছে?
মেরি আঙুল দিয়ে জালিশাকে দেখিয়ে দিল।
‘ আন্নি।
নাবিদ বালিশে মুখ চেপে রাখে। জালিশ একটান দিয়ে কোলে তুলে নিল৷ নাবিদ জালিশার দিকে তাকালো। জালিশা ডাকল,
‘ বাবাই কই?
নাবিদ মুখ তুলল না। জালিশা বলল,
‘ আমি কাঁদছি বাবাই।
নাবিদ ফট করে মুখ তুলে। জালিশার মুখে মুখ ঘষতে ঘষতে বলল
‘ আম্মায় কানেনা কানেনা। আদল। আদল।

______________________

বাইরের বিরাট উঠোনে রান্নার আয়োজন হলো। কালো কাঠ দিয়ে ইটের চুলা বসিয়ে রান্নার আয়োজন। মেরি আর নাবিদের জোরে জোরে হাসির আওয়াজ ভেসে এল। ইশা ডাক দিল মেরিনাকে।
‘ বোন এদিকে এসো। এসো।
মেরিনা গুটিগুটি পায়ে হেঁটে এসে দাঁড়াল আদি ইশার কাছে। ভ্রু কুঞ্চন করল। আদি বলল,
‘ বোনু কোলে আসো৷
মেরিনা মাথা নাড়ায়। ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
‘ আবববা দুমদুম দুমদুম মাববে।
আদি ইশা একসাথে হেসে ফেলল। মাহিদ আর পিহু মেরিকে দেখে থমকে দাঁড়াল। চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে মেরির কথা শুনল।
আদি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ কেন দুমদুম মারবে? আমি মারব তুমার আব্বাকে।
মেরিনা চিল্লিয়ে উঠে।
‘ নাআআ আমমি বিথা পাবু।
মাহিদ হেসে ফেলল। ইশা বলল,
‘ কি বাপ দরদী রে। বাপকে মারলে সে বিথা পাবে।
মেরিনা মাহিদকে দেখে একগাল হাসল। দুহাতের তালু মুখে লাগিয়ে মাথা দুলিয়ে বলল,
‘ আববা আমমা। আমমা আববা৷ আমমা মিরি। আববা মিরি।
মাহিদ আবারও হাসল। সাথে আদি,ইশা, পিহু৷

রাহি দৌড়ে আসল কোথাথেকে। হাঁপাতে হাঁপাতে মেরির দিকে তাকালো। মেরির গাল টেনে দেওয়ার আগে মাহিদ ছুটে আসল। দুহাত ধরে ফেলে পাঁজা খোলা করে রাহিকে নিয়ে গেল। ইশা বলল,
‘ শুরু হইছে এরা মামা ভাগিনার লড়াই।
রাহি বলল
‘ মিহি এভাবে ধরেছ কেন? ব্যাথা পাই।
মাহিদ তাকে চেয়ারে বসিয়ে হাত দুটো নিজের মুঠো বন্দী করে বলল,
‘ জামাই আমার মাইয়্যারে ছুবিনা শালা। আমার সামনে তুই আমার মাইয়্যার লগে পেরেম করতে পারবি না বাপ।
রাহি নড়েচড়ে। বলে,
‘ আমি বুঝিনা কি বলো? বুঝিনা কেন?.
মাহিদ রাহির হাত দুটো আর ও শক্ত করে ধরে বলল,
‘ আমার ছেড়ির বিশ বছর হইলে তোরে দিয়া দিমু। তার আগে আমার ছেড়ির দিকা চোখ তুলে তাকাবিনা শালা। নইলে তোর নামে ইভটিজিংয়ের কেস করুম আমি।
রাহি ক্লান্ত হয়ে চেয়ার ছেড়ে মাটিতে বসে পড়ে। মাহিদ হো হো করে হাসে। হাত ছেড়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে পিঠ চাপড়ে বলে,
‘ মনে রাখবি বাপ।
মেরিনা দৌড়ে আসে। রাহির সামনে এসে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলে,
‘ লুকুলুকি। নাহি লুকুলুকি।
রাহি মেরিনার দিকে তাকায় না। মেরিনার রাগ হয়। মাহিদ মেয়েকে পাঁজা খোলা করে তুলে নিয়ে অগণিত আদর দিতে দিতে বলল
‘ মেরিজান রাগ কইরো না। ওই শালা তোমার জামাই হইবো। জামাইর উপর রাগ কইরোনা। জামাই আমার ভালা।
মেরিনা মাহিদের মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে রাখে ঠেসে। বেশখানিকক্ষণ পর মুখ তুলে কোমল নরম ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে দেয় মাহিদের চোখের নিচে নাকে। ডাকে,
‘ আব্বা?
মাহিদ ডাকল,
‘ আম্মা?
মেরিনা আওয়াজ করল,
‘ হুহহহ।

__________________

মুনা রান্না বসিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ল চেয়ারে। কিছুক্ষণ পর রিক কোথাথেকে এসে শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ মুনা এটা খাও। ভালো লাগবে।
মুনা হা করে তাকিয়ে বলল,
‘ আপনি?
রিক বলল,
‘ খেয়ে নাও।
মুনা রিকের দিকে তাকিয়ে ঢকঢক করে শরবতটুকু খেল।
রিক বলল,
‘ খাওয়ার সময় খাবারের দিকে তাকিয়ে খেতে হয়। মানুষের দিকে না।
মুনা লজ্জায় পড়ে গেল। এই লোকটা কি?
রিক বলল,
‘ আমি তো বলেছি বাবুর্চি রাখার জন্য। পারবে বলেছ কেন? এখন তো কষ্ট হচ্ছে।
মুনা বলল,
‘ নীরা ইশা, পরী পিহু আছে না? রাইনা ভাবী ও আছে। বাবুচির রান্না কি আমার রান্নার চাইতে ও বেশি স্বাদ নাকি?
রিক বলল,
‘ রাগ করো কেন? এমনিই বলছিলাম। তোমার কষ্ট হচ্ছে তাই।
মুনা আনমনে হাসল।
‘ এই লোকটা আর কতভাবে ভালোবেসে আগলে রাখবে? মুনা কি কিছু দিতে পেরেছে লোকটাকে এত এত ভালোবাসার বিনিময়ে?

না।

পরক্ষনে মনে হয় দিতে পেরেছে। পেরেছে তো। সংসার? সংসারটাকে তো সে সাজিয়েছে নিজ হাতে মায়ের পরে । বোনের মতো জা, একটা ভাই, একটা মেয়ে। মেয়ের জামাই। একটা ছেলে । ছেলের বউ। তিন নাতি, নাতনী। আর কি লাগে? রিকের এর চাইতে বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। কত সুন্দর একটা সংসার উপহার দিয়েছে সে? এরচাইতে কি বড় উপহার কি আর কিছু আছে? মুনার মনে হয়না।

রিক হাঁটা ধরল। পিছু ফিরে মুনাকে একবার দেখল।
‘ এই মহিলা কি কখনো ক্লান্ত হয়না? কার জন্য করে এতকিছু? এত ভালোবাসতে পারে কি করে? কিসের লোভে এত ভালোবাসে? এত ভালো রাখে? এত লোভ ও থাকে মানুষের? ভালোরাখার, ভালোবাসার লোভ।

_______________

নীরা ওই দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রিপকে ডাকল,
‘ অ্যাই ব্যারিস্টার?
রিপ ও নীরার কথামতো এগিয়ে আসল। বলল
‘ কি হয়েছে?
নীরা রিক আর মুনাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আপনার ভাই কত কেয়ারফুল দেখেন। আর আপনি বউয়ের খোঁজ ও রাখেনা না?
রিপ বলল,
‘ রাখি।
নীরা বলল,
‘ কচু রাখেন।
রিপ হাসল। বলল,
‘ রাখিনা?
নীরা চুপ হয়ে গেল। বলল,
‘ আমি কি জানি?
রিপ বলল,
‘ রাখি তো। রাখি। তুমি হয়ত খোঁজ নাওনি।
নীরা বলল,
‘ ধুরর ওভাবে বলেন কেন ব্যারিস্টার??
আমার এখন আপনাকে ঝাঁপিয়ে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।
রিপ হাসল। যেতে যেতে বলল,
‘ তাহলে পালায়। তোমার বিশ্বাস নেই। কখন আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ো।
নীরা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলল,
‘ যাহহ। আমার শরম করে। ওভাবে বলে নাকি?

ইশা দেখল আদি চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছে। ইশা আশপাশে দেখে ডাকল,
‘ এই ডক্টর? ডক্টর?
আদি চোখ খুলে বলল,
‘ হুহ?
ইশা নাকমুখ কুঁচকে বলল,
‘ এটা ঘুমানোর জায়গা? ঘুম পেলে যান। ঘরে যান।
আদি বলল,
‘ মিষ্টি ছাড়া ঘুম আসেনা।
ইশা এক ধমক দিল।
আদি বলল,
‘ আমি তুমি মিষ্টির কথা বলিনি। খাবার মিষ্টির কথা বলেছি।
ইশা শাড়ির আঁচল ঝেড়ে বলল,
‘ ধুরর। আপনি থাকেন আপনার মতো।
আদি বলল,
‘ মিষ্টি তোমাকে রাগলে বেশি বেশি সুন্দর দেখায়। আহা।
ইশার রাগ আকাশ ছুঁই। ধমক দিয়ে বলে,
‘ একদম চুপ। বেয়াদব লোক একটা।
আদি হেসে বলে,
‘ এখানে কেউ না থাকলে, তোমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রাগ ভাঙাতাম।
ইশা তাড়াতাড়ি পা চালায়।

____________

রাইনা আফিকে পিছু ডেকে বলল,
‘ যেখানে সেখানে রাগ দেখান কেন? আপনার আজকাল বাজে অভ্যাস হয়েছে দেখছি।
আফি কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
‘ ভালা কইরা কথা কইতে পারোনা? সারাক্ষণ খ্যাঁক খ্যাঁক করতে থাকো।
রাইনা মনে মনে হেসে ফেলল।
আফি বলল,
‘ পানি খাওয়াও এক গেলাস।
রাইনা পানি এনে দিল। আফি পানি খেয়ে বলল,
‘ ভালা কইরা কথা কইবা আমার লগে। মিষ্টি মিষ্টি কইরা। বুঝছ। তাহলে আমি ও তোমার লগে মিষ্টি মিষ্টি কইরা কথা কমু। নইলে কমুনা।
রাইনা হাসল। আফি বলল,
‘ হাসো ক্যান?
রাইনা মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ এমনি।
আফি বলল,
‘ হাইসো। হাসলে তেমারে ভালো দেখায়।
রাইনা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ গুঁজে দিল।
‘ তওবা তওবা কেউ শুনলে কি ভাবতো?

_____________

রাতের পিকনিকে খাওয়া দাওয়া শেষে যার যার ঘুমানোর পালা। দিনটা সবার কাছে খুব স্পেশাল হয়ে থাকবে। ক্যামেরা বন্দী হলো আর ও একটি দৃশ্য। স্মৃতির পাতায় বন্দী হলো ও আর একটি গল্প। মন কেমনের বৃষ্টিদের আসার আনাগোনা চলছে, তবে নামেনি। অন্য কোনো একদিন নামার আশায়। প্রতীক্ষায়। নিনিত আর জালিশাকে ফিরতে দিলনা মাহিদ। সবার অনুরোধে থেকে গেল তারা ও।
নাবিদকে ঘুম পাড়িয়ে জানালার কাচ বন্ধ করতে গেল জালিশা। রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট দেখা যাচ্ছে। পেছনে এসে যে কেউ একজন দাঁড়িয়েছে টের পেল জালিশা। পেছন ফিরে মানুষটাকে দেখে একগাল হেসে বলল,
‘ জানেন আজ চাঁদ উঠেছে। ইয়া বড় চাঁদ।। কি সুন্দর?
নিনিত দুহাত দিয়ে ঘিরে নিল জালিশাকে। বলল,
‘ কই দেখিনি তো?
জালিশা বলল,
‘ দেখেন।
নিনিত জালিশার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ দেখি। দেখি।
জালিশা বলল,
‘ চোখে কি?
নিনিত বলল,
‘ চোখে ও চাঁদ থাকে। তাই তো চোখকে এতই সুন্দর দেখায়।
জালিশা হেসে ফেলল। বলল,
‘ ডাক্তার বাবু আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না মোটেও।
নিনিত হাসল। দুহাতের বন্ধনে জালিশাকে আবদ্ধ করল। কপালের একপাশে তার মুখ লাগিয়ে রেখে বলল,
‘ প্রেমের জ্ঞান দেওয়ার মানুষ কিন্তু শুধু একটাই হয়। আর সেই একজনের দেওয়া জ্ঞান গ্রহণ করতে হয়। নাহলে ভারী অন্যায়।
জালিশা হেসে বলল,
‘ যথাস্তু।

___________

রেহান তার কোলের বাচ্চাটিকে দোলনায় শুয়ে দেয়। অনেকক্ষণ পর যখন দেখল ঘুমিয়েছে তখন চুপিচুপি পরীকে বলল,
‘ গায়ে পাতলা কাঁথা জড়িয়ে দাও। পরী জড়িয়ে দিল। বলল,
‘ রাহি ঘুমিয়েছে? দেখেছেন?
রেহান বলল,
‘ দেখে আসি।

দরজা ঠেলে পাশের রুমে ডুকে পড়ল রেহান। বিছানায় পরিপাটি হয়ে ঘুমোচ্ছে রাহি। নিজের সবকিছু এত পরিপাটি পছন্দ করে সে? একদম বাপের মতো। রেহান ও ছোট বেলায় ঠিক এমন ছিল। রাহির কাছে গিয়ে গায়ে কাঁথা জড়িয়ে দিল রেহান। কপাল থেকে একঝাঁক চুল সরিয়ে চুমু আঁকল কপালে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে এল তারপর।
পরী দরজা সামান্য করে ভাজিয়ে দিল। রেহানকে বলল,
‘ ছাদে যাব। চলুন। যাবেন বলেছিলেন ওইদিন।
রেহান বলল,
‘ কোনদিন?
পরী বলল,
‘ ওইদিন। মনে পড়ছেনা। কিন্তু বলেছিলেন যেদিন বড় করে রূপোর থালার মতো চাঁদ উঠবে সেদিন।
রেহান হাসল। বলল
‘ চাঁদকে দেখার জন্য চাঁদে যেতে হয়না পাগলী। এত রাতে ছাদে যাওয়া ভালো হবেনা তোমার আর আলোর জন্য।
পরী মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘ তাহলে?
রেহান পরীর হাত ধরল। টেনে বারান্দায় নিয়ে গেল। পরীর কাঁধে চিবুক রেখে দাঁড়িয়ে ওই দূরে চাঁদকে দেখালো। গ্রিল, গাছের পাতার ফাঁকফোকর পেরিয়ে একটুকরো চাঁদের আলো এসে ছুঁয়ে দিল ভালোবাসাবাসিদের মুখ। রেহান বলল,
‘ দেখতে পেয়েছেন?
পরী হাসল। বলল,
‘ হু।
রেহান বলল,
‘ আমি বলেছিলাম না? ভালোবেসে আমি ভুল করিনি।
পরী সামনে ফিরে। চোখে চোখে দীর্ঘ সময় নীরব কথোপকথনের পর বলে,
‘ ভালোবাসা ভুল নয় তো?
ভালো না বাসাটাই বড় ভুল।
ভালো না বাসার মতো ভুল ও আমি করিনি কিন্তু।
রেহান কপাল লাগিয়ে রাখে পরীর কপালে।

________________

এলোমেলো চুল গুলো থেকে ক্লিপ খুলে হাতখোপা করল পিহু। গায়ের এলোমেলো ওড়নাটা ঠিক করে হাই হাই তুলতে তাকালো এদিকওদিক। বিছানায় আলুথালু হয়ে ঘুমোনো বাচ্চাকে দেখল। কিন্তু বাচ্চার বাপ কই? পিহু ডাকল,
‘ এই জাতির ভাই? কোথায় যাও তুমি? ঘুম ভেঙ্গে গেল তো? ধুরর।
কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলনা কারো। পিহু ঘুমঘুম চোখে উঠে বসল। বিছানার উপর হাত পা গুটিয়ে বসে চোখ কচলালো। দরজা ঠেলে ডুকা লোকটার দিকে তাকালো না। না তাকিয়ে বলল,
‘ কোথায় যাও? আমার ঘুম ছুটে যাই।
মাহিদ হাসল। বলল,
‘ দেখতে গিয়েছি।
পিহুর চোখ কপালে তুলে কিড়মিড় করে বলে
‘কাকে?
মাহিদ হাসল। পিহুর কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ বলব না।
পিহু কান্না আসল। কিন্তু সে তা চেপে রাখল। উঠে দাঁড়িয়ে মাহিদের কলার চেপে ধরে বলল,
‘ আমায় কষ্ট দাও কেন শুধু শুধু? আমাকে কাঁদাতে ভালোলাগে?
মাহিদ তার এত কাছে থেকে ও ডাকল।
‘ আয়।
পিহু দুহাত বাড়িয়ে একদম আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। বলল,
‘ এসেছি।
মাহিদ পিহুর চুলে নাক ডুবিয়ে বলল,
‘ কি শ্যাম্পু দিয়েছিস বাপ। গন্ধ। ইয়াক। নাক শেষ। উড়ে গেল বাপ।
পিহু কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে,
‘ কান্না করব বেশি কিছু বললে?
মাহিদ হাসল। বলল,
‘ আয়।
পিহু বলল,
‘ এসেছি না?
মাহিদ আবার ও বলল,
‘ আয়।
পিহু বলল,
‘ কোথায়?
মাহিদ এবার পিহুকে পাঁজাখোলা করে তুলে নেয়। বলে,
‘ এইবার একটা প্রশ্নের মতো প্রশ্ন করেছিস। চল।
পিহু বলল
‘ কোথায়?
‘ ছাদে। এই জানিস আজ আকাশে বিরাট চাঁদ উঠেছে। চাঁদের হাসি দেখেছিস কখনো?
পিহু উত্তর দিলনা। মিনমিন করল,
‘ রোজ দেখি তো।
মাহিদ শুনে গেল।
‘ তুই আমার চাইতে বেশি দেখিস তা আমি মানব না।
‘ মানতেই হবে। নইলে জোর করব?
‘ আমাকে।
‘ হ্যা তোমাকে। কেন জোর করতে পারিনা?
‘ তুই সব পারিস। পারিস না এমন কোনোকিছু নেই।
‘ যারা জাতির ভাইয়ের মতো কাউকে জয় করতে পারে, তারা সব পারে। জানো?
‘ শুধু জানিনা। খুব বেশি জানি।

ছাদে এসে মাহিদ নামিয়ে দিল পিহুকে। পিহু একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল চাঁদের দিকে।। বলল,
‘ কতদিন পর দেখলাম।
মাহিদের উত্তর পাওয়া গেলনা। পিহু মাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ তুমি আমার দিকে কি দেখো? চাঁদ দেখো? কত সুন্দর?
মাহিদ এক পা এগিয়ে বলল,
‘ চাঁদ আমার ঘরে রোজ উঠে। জানিস?
পিহু মাথা নাড়ায়।
‘ জানা উচিত ছিল।
পিহু বলল
‘ না জানলে কি জরিমানা নেবে?
‘ নেবই তো। জরিমানা হিসেবে তোকে আমার চাই।
পিহু হাসল। বলল,
‘ এত বড় জরিমানা? কম করে চাইতে পারো।
মাহিদ মাথা নাড়াল।
‘ কমে আমার পোষায় না। জানিস না?
পিহু এক পা এগিয়ে গেল। দূরত্ব কমিয়ে দাঁড়িয়ে মাহিদের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ জানতে চাই। আর ও আরও আরও।
‘ এত জেনে কি করবি?
‘ কি করব? আমি আর কি পারি? আগেই বলেছি ভালোবাসা ছাড়া আমি আর কিছুই পারিনা। এতটাই অর্কমণ্য আমি।
মাহিদ পিহুর নাকে নাক ঘষে। বলে,
‘ তুই যে সবচাইতে বড় কাজটাই পারিস। আমার তোকে হিংসে হয়। তোর মতো করে আমি ভালোবাসতে পারিনা তোকে।
‘ আমার মতো করে ভালোবাসতে হবেনা। তুমি তোমার মতো করে ভালোবেসো। জীবনের প্রতিটা ঘাত প্রতিঘাতে আমার পাশে থেকো। আমাকে তোমার পাশে রেখো। আমাকে নিজের করে রেখো। একদম নিজের করে। আমি কিন্তু এর বিনিময়ে তোমাকে বেশি কিছু দিতে পারবনা। ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছুই দেওয়ার ক্ষমতা নেই আমার। কিন্তু কথা দিলাম তোমায়, এই ভালোবাসা দিতে একটু কার্পণ্য করবনা আমি।

মাহিদ শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় পিহুকে। বলে,

আমি রাত হলে তুই চাঁদ হয়ে থাকিস
আমি সূর্য হলে তুই রোদ গায়ে মাখিস
আমি ফুল হলে তুই যত্নে তুলে রাখিস
আমি বৃষ্টি হলে তুই বৃষ্টিজল মাখিস
আমি ভালো না বাসলে ও
তুই ভালোবাসিস।
আমি দূরে থাকলেও
তুই কাছে কাছে থাকিস।

পিহু বুকে মুখ গুজে। নির্লজ্জ চাঁদ হা করে তাকিয়ে দেখে। ইশশ রাতের বুকে চাঁদ। তার ও হিংসে হয়। ভালোবাসা এমন ও হয়?
পিহু শ্বাস টানে। গভীর আবেগে, ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বলে,

টুকরো টুকরো প্রেম, আর মুঠো মুঠো ভালোবাসায় রাঙিয়ে দেব তোমার শহর।
তুমি জেনে রেখো, মনে রেখো আমায়।
আমি ছিলাম, আছি, থাকব।
থাকতে চাই সারাজীবনভর।

চলবে,

আগামী পর্বেই গল্প শেষ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here