মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_৪ (সিজন ২)

0
810

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_৪ (সিজন ২)
#পুষ্পিতা_প্রিমা

মাহিদ তার পরের দিন আদির সামনেই পিহুকে মেরে গেল। মাথায় পড়া হ্যাট। মাথা এমন নিচু করে সাইকেল চালিয়ে পিহুর কাছাকাছি এসে পিহুকে মেরে ফেলে চলে গেল আদি বুঝতেই পারল না। কিছুদূর গিয়ে হাত নেড়ে বলেছিল,

‘ ডক্টর আন্কেল আম’ সো সরি। ফিপি মারতে বলেছে। ফিপি বলেছে আরিশ নাকি খুব বদমাশ হয়েছে। তাই দুটো দিয়ে দিতে।

পিহু ঝরঝর করে কেঁদে দিল। আদির রাগ হলো প্রচন্ড। সব রাগ গিয়ে পড়ল মিষ্টির উপর। সে ভালো করে জানে মিষ্টি এসব বলেনি, কিন্তু সে তো বারন করতে পারে। সে ফিপি হয়ে যা বলতে পারবে আদি তা বলতে পারবে না। আদি রিপকে ফোন দেয়। রিপ মাত্রই কোর্টের কাজে বেরিয়েছে। আদির ফোন পেয়ে বরাবরের মতো অবাক হয়। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে আদি বলে দেয়,

‘ রিপ তোর ছেলে আমার মেয়েকে আজকে আবার মেরেছে। আমার সামনে মেরে চলে গেছে। তুই দেখেছিস কত বড় সাহস ওর??

রিপ কোনোকথা বলতে পারল না। মাহিদ যে পিহুকে সারাক্ষণ মারে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই রিপের। সবদোষ নীরার। নীরার প্রশয় পেয়ে পেয়ে মাহিদ এমন বাদঁড় হয়েছে। আজ বাসায় গিয়ে এর একটা বিহিত করতে হবে।

_____

রিপ বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় দুপুরের অনেক পর হলো। মাহিদ বাসায় ফিরেনি তখন ও। নীরার ভয় লাগল রিপের এমন শান্তশিষ্ট রূপ দেখে। কথা বলছে না । বারবার দরজার দিকে আর হাতের ফোনের দিকে তাকাচ্ছে। নীরার ভয় লাগল। ছেলেটা আবার কিছু করেনি তো? এই লোকটার বিশ্বাস নেই। রাগ উঠলে এক আছাড় দিয়ে মেরে ও ফেলতে পারে। নীরা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘ আপনি কি মাহিকে খুঁজছেন??

রিপ জবাব দিল না। পরী এল। রিপকে দেখে বলল,

‘ ছোট পাপা এত আপসেট দেখাচ্ছে কেন???

রিপ বিড়বিড় করে বলল,

‘ আজ আসুক বাসায়। ওর অবস্থা এমন করব আমি???

নীরা আতঁকে উঠল। নিশ্চয় মাহিদ কিছু করেছে। সে তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেল রুমে। ফোন হাতে নিয়ে মাহিদকে ফোন দিল। মাহিদ ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে জবাব দিল,

‘ আমি বন্ধুদের সাথে আছি মা। এত চিন্তা করতে বারন করেছি না???

নীরা বলল, শোন মাহি, আজ তুইই,,,,,

নীরা অন্যকিছু বলার আগে রিপ ডাক দিল। ‘
”ফোন রাখো নীরা। না হলে ভালো হবেনা কিন্তু। রাখো ফোন।

কাঁপাকাঁপা হাত থেকে ধপ করে ফোনটা পড়ে গেল নীরার। ওপাশে মাহিদ মা মা ডেকে গেল। রিপ ফোন তুলে সরাসরি বলল,

‘ বাসায় এক্ষুণি ফিরবি নয়ত আর কখনোই ফিরবি না। ব্যস।

মাহিদ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরল। আশা নিয়ে ডুকল যে দিদিয়া আর বড় পাপা থাকবে। কিন্তু কেউ নেই। মাহিদ কিছু বুঝে উঠার আগেই কষে চড় বসাল রিপ মাহিদের গালে। মোটা বেত দিয়ে মারল। মাহিদের এমন তেজ, সে মাইর খেল কিন্তু জায়গা থেকে সরল না। নীরা রিপকে থামাতে পারল না। মুনা এসে বেতটা ও কেড়ে নিতে পারল না। মাহিদকে ও সরাতে পারল না। রিপ মেরে গেল। কিন্তু তার রাগ কমল না মাহিদের এত তেজ দেখে। নীরা ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠল। মাহিদকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলে ও মাহিদ সরল না। শেষমেশ পরী কোথা থেকে দৌড়ে এল। রিক ও এল। রিক রিপের হাত থেকে বেত কেড়ে নিল। পরী গিয়ে জাপটে জড়িয়ে ধরে নিয়ে আসল রিপকে। মাহিদের অবস্থা দেখে পরী কেঁদে দিল আওয়াজ করে। মাহিদকে জোরে সরিয়ে দিয়ে বলল,

‘ গাদা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাইর খাচ্ছিস? যাহ না। ছোট মা ওকে নিয়ে যাও।
নীরা সুযোগ পেয়ে মাহিদকে টেনে নিয়ে যায় ঘরে। রিপ শান্ত হয়না তারপর ও। গর্জে বলে,

‘ ওই ছোট্ট মেয়েটার গায়ে সবমসময় হাত কেন তুলে সেটার জন্য হারামির বাচ্চাকে আমি কতবার সাবধান করেছি। সে আমার কথা কানেই তুলেনা। যেন আমি তার সাথে জোক করছি। মেরে ফেলব একদম।

পরী শান্ত হতে বলে রিপকে। বলে, কি হয়েছে পাপা? ও এখনো ছোট। তুমি কিভাবে মারতে পারলে তাকে?

রিপ পরীকে সরিয়ে দেয় ঠেলে। বলে,

‘ খবরদার পরী। আমাকে আটকাতে আসবে না। তোমাকে ও দেব আমি। তুমি ও দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছ। তোমাকে কোনদিন আমি মেরে রক্তাক্ত বানিয়ে ফেলি আমি জানিনা। যাও এখান থেকে।

পরী সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল। মাথা নিচু করে দুচোখ লুকোলো। সাথে টপাটপ দুফোটা জল পড়ে গেল মেঝেতে। সে দৌড়ে চলে গেল উপরে। মুনা আর রিক কিছু বলতে পারল না। পরী দরজা লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ভিজে গেল বালিশ তার চোখের জলে। সব আদি চৌধুরীর কারণেই হয়েছে। ওই লোকটার কারণে পাপা রেগে গিয়েছে। মেয়ে এত আদরের যখন তখন তাকে কোলে বসিয়ে রাখতে পারে না???

__________

মাহিদের পিঠে বেতের দাগ বসে গেল। খয়েরি রঙ ধারণ করল সেই মারের দাগ। নীরা মলম লাগাতে লাগাতে জোরে জোরে কাঁদল। কিন্তু মাহিদ একটু টু শব্দ ও করল না। রিপ রাতে এসে একবার দেখে গেল। ঔষধ ও এনে দিল। ফ্রুটস কেটে দিতে বলল নীরাকে। নীরা জবাব দিল না রিপের কথার। বলল,

‘ মেরে আবার আদর করতে এসেছেন? দরকার নেই এসব আদরের। আমার ছেলেকে আমি আদর করতে জানি।
আমাকে সহ্য করতে পারেন না মানলাম। কিন্তু আমার ছেলেটা কি দোষ করল? নিজের বাবা কখনো সন্তানকে এভাবে মারে? পাষাণ মানুষটাকেই দিনশেষে আমি এত ভালোবাসি। আমার কপালটাই পোড়া। সাথে আমার ছেলের।

রিপ মাহিদের ঘুমন্ত চেহারায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে। পরীর রুমে গেল। পরী কোনোকথা বলল না রিপের সাথে। রিপ বলল, আজকে রিহার্সাল করছ না?

পরী কোনো কথা বলল না। রিপ তার কাছে গিয়ে বসল। বলল, মা কি রাগ করেছে?

পরী ফুঁপিয়ে উঠল। বলল, না, আমি যার তার উপর রাগ করিনা।

রিপ হাসি না আসলে ও হাসল। বলল, তুমি কি এখন আবার আদির উপর রেগে আছ নাকি? আদির কোনো দোষ নেই। পিহুকে এভাবে মারলে ওর খারাপ লাগারই কথা। রোজ রোজ মারে। আমি এতদিন কিছু করিনি শুধু সাবধান করেছি। কিন্তু মাহি আমার কথা শুনল না। মাঝেমাঝে দুই একটা দিতে হয়। তাই আজ দিয়েছি। তুমি ওকে একদম প্রশয় দেবে না পরী।

পরী চুপ হয়ে শুনল রিপের কথা। তারা দোষ করবে কিছু বলা ও যাবেনা।

পরী বলল,

‘ তোমার সাথে আমার কোনোকথা নেই পাপা। তুমি আমার ভাইকে মেরেছ। আমাকে বকেছ। অন্যবার আমাকে মেরেছ। দুই ভাইবোনকে তুমি শুধু শুধু মারো।

রিপ বলল। আমি তোমাদের ভালোর জন্যই মারি। মারার পেছনে তোমার মঙ্গল জড়িয়ে আছে। ওইদিন আদির সাথে হসপিটালে দেখা হয়েছে তোমার, তুমি কথা বলোনি কেন? ও তোমার বাবা না? ওর কষ্ট হয়নি? আর ইশা। তুমি তার ফোন ধরোনা কেন? এটা কি বেয়াদবি না পরী? তোমাকে আমরা এসব শিখিয়েছি?
আর গানের কি হয়েছে? কামাল উদ্দিন আমাকে ফোন করে জানাল তুমি নাকি অডিশন থেকে নেমে গিয়েছ। নকল প্রেশক্রিপশন দেখিয়েছ? রেহানের সাথে গান গাইবে না। জেতার নেশা তোমাকে অন্ধ বানিয়ে দেইনি? তুমি গান গাইবে। রেহান ও গাইবে। যে জিতবে সে অ্যাওয়ার্ড পাবে। রেহান জিতলে রেহান। ও তোমার সিনিয়র। তার সাথে পাল্লা দেওয়াটা কি ঠিক। রেহানের কাছ থেকে তোমার অনেককিছু শেখার আছে। তা না করে তুমি ওর পিছু লেগেছ। এটাই কি তোমাকে আমরা শিখিয়েছি। দুদিন পর যখন পরের বাড়িতে যাবে, তখন আমাদের শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না? তুমি কি চাও পাপাদের মাথা নিচু হোক। তোমাকে নিয়ে গর্ব করতে চাই পরী। সেই তুমি কি শুরু করেছ এসব। এখন দেখছি, মাহিদের চাইতে তুমি বেশি ছোট হয়ে গেছ। দুইজন মিলে আমাদের মাথা নষ্ট করে ফেলছ। আমি নেক্সট টাইম থেকে যাতে এরকম অভিযোগ আর না শুনি।

পরী মুখ গোমড়া করে শুনল রিপের কথা। কিচ্ছু বলল না। খেতে না চাইলে রিপ জোর করে খাওয়াল সেইরাতে। ধমক দিল। এসব চলবে না। খাওয়ার উপর রাগ দেখানো যাবেনা আমাদের বাড়িতে। রিক মধ্যরাতে মেয়েকে দেখতে এল রুমে। পরী তখন ও জেগে আছে। রিক চেয়েছিল একটুখানি দেখে চলে আসবে। রিককে দেখার সাথে সাথে পরী ফুঁপিয়ে উঠল। রিক বলল,

‘ মা কি ঘুমোয়নি?

পরী বলল,

‘ পাপা ওই ছেলেটার সাথে আমি গান গাইব না। আমি হেরে যাব। আমি চ্যালেঞ্জে হেরে যাব। ছোট পাপা এসব কি বলে গেছে।

রিক পরীর মাথায় হাত বুলাল। জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ রেহানকে কেন কম্পিটিটর ভাবছ পরী? এজন্যই তো হার জিতের প্রশ্ন আসছে। ওকে কম্পিটিটর ভেবো না। তোমার মাম্মা আমাকে কি বলেছে আমার ঘুম আসছেনা আর।

পরী উৎসুক হয়ে জানতে চাইল।

‘ কি বলেছে?

রিক বলতে উসখুস করল। তারপরে ও জিজ্ঞেস করে ফেলল,

‘ তোমার কি রেহানকে খুব পছন্দ?

পরী ছেড়ে দিল রিককে। চিৎকার করে বলল, নাআআআ
পছন্দ ও না। অপছন্দ ও না। এসব কথা কেন উঠছে পাপা?

রিক পরীকে আবার তার দিকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরল। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

‘ পরীর জন্য যোগ্যপাত্র পেয়েছি এতদিন পর।

পরী চেঁচিয়ে উঠল। রিককে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নড়েচড়ে উঠল। রিক হেসে আর ও শক্ত জড়িয়ে ধরল। মাথায় চুমু খেয়ে বলল,

‘ এই যে এত রাগ গুলো কে সামলাবে? সবার কি সেই যোগ্যতা আছে? এই মেয়েটাকে সামলানোর আগে তো তার রাগগুলোকে সামলাতে জানতে হবে। আমার মনে হয় রেহান ছাড়া কেউ পারবে এসব। সো রেহান ইজ দ্য বেস্ট ওয়ান ফর ইউ মাই প্রিন্সেস।

পরী ঝরঝর করে কেঁদে দিল। রিকের পড়নের পান্জাবী টেনে ধরল। হিঁচকি তুলে কাঁদল। রিক পরীকে এভাবে ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে দেখল বহুদিন পর। সে জানে পরী রাজী নেই কিন্তু পাপার মুখের উপর জবাব দিচ্ছে না। কালকে সকাল হলেই মাম্মার কাছে সব অভিযোগের দোকান বসবে। বলবে, কেউ আমার আপন নয়।
রিকের কাছে এখন এই অপশনটিই বেস্ট। তারমতে রেহানের কাছেই পরী খুব ভালো থাকবে। সেখানে তাকে দেখে রাখার মতো আদি ইশা আছে। রিকের কোনো ভয় থাকবে না। পরীর আদর যত্নের অভাব হবেনা। রিক দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো এই সুযোগটা সে কিছুতেই হাতছাড়া করবে না।

__________

মাহিদকে প্রায় কয়েকদিন ধরে স্কুলের আশেপাশে না দেখতে পেয়ে পিহুর কেন জানি চিন্তা বাড়ল। যে ছেলেটা রোজ দাঁড়িয়ে থাকে ওই বাইকটাতে হেলান দিয়ে সেই ছেলেটাকে আজ কোথাও দেখল না পিহু। পিহু সেদিন বাসায় গিয়ে ইশাকে বলেছিল, মাম্মা মাহিদ ভাইকে কয়েকদিন ধরে দেখছিনা। ইশা সোজাসুজি জবাব দিল,

‘ তোমরা বাপ মেয়ের জন্য। এখন খুশি হওনি। রিপদা কিভাবে মেরেছে ওকে।

আদি কোথা থেকে যেন সেই মুহূর্তেই আসল। পিহুর পাশে বসল। পিহুকে আগলে নিল। পিহু বাবার বুক পেয়ে গুটিসুটি মেরে থাকল। ইশা মুখ ভাঙিয়ে অন্যদিকে ফিরে গেল। আদি বলল,

‘ আমার কলিজা না এটা। যে সে কলিজায় আঘাত করবে তাকে প্রচুর মাইর খেতে হবে। প্রচুর। মিষ্টি তোমাকে ও খেতে হবে।
বলতে না বলতেই ইশার লম্বা বেণুনি ধরে টান দিল আদি। ইশা আর্তনাদ করে উঠল।

বলল, খুব জোরে লেগেছে ডক্টর। মেয়ের সামনে এসব কি ধরণের ইয়ার্কি?

আদি হেসে দিল হো হো করে। বলল, মেয়েকে দেখিয়ে দেখিয়ে মারছি। উফ বেশি ব্যাথা পেয়েছ। মেডিসিন দিতে হবে।

ইশা রাগ করে বেরিয়ে গেল। বলে গেল, আজ খাওয়া বন্ধ আপনাদের। উপোস থাকুন। আদি আওয়াজ করে বলল, তোমারটা আমরা ভাগ করে খেয়ে নেব। পিহু খিলখিল করে হেসে উঠল। সাথে আদি ও। বাপ মেয়ে পাগলের মতো হাসল। পিহু বলল, পাপা মাহিদ ভাইয়ের ফোনে একটি কল দাও।
আদি বলল,কিছুক্ষণ আগেই কথা বলে তোমার রিপ মামাকে বকে দিয়েছি। শালার ব্যারিস্টার। রাগ কম না।
পিহু বলল,
‘ পাপা আমি কথা বলব মাহিদ ভাইয়ের সাথে।
আদি ফোন দিল। পিহু বলল,
‘ মাহিদ ভাইয়ের সাথে আমি বারান্দায় গিয়ে কথা বলে আসি। খুব পার্সোনাল কথা আছে পাপা।
আদি মাথা নাড়াল।
মাহিদকে ফোন দিল কয়েকবার। প্রায় চারবার কল দেওয়ার পর মাহিদ ফোন তুলল। মাহিদ কিছু বলল না। ভেবেছিল আদি ফোন দিয়েছে। পিহ বলে উঠল,

‘ মাহিদ ভাই তুমি কেমন আছ?

মাহিদ গর্জে উঠল পিহুর কন্ঠস্বর শুনে।

‘ হারামির বাচ্চা তুই ক্যান কল দিছস? দরদ উতল উঠতাছে?

পিহু বলল, এসব কি কথা মাহিদ ভাই? সুন্দর করে বলো। আমি ওই চিঠিটা দিয়েছি আনিসাকে। আবার নিজ হাতে লিখে দিয়েছি। তুমি এবার খুশি তো?

মাহিদ প্রায় লাফিয়ে উঠল খাট থেকে। ব্যাথাবেদনা সব ভুলে গেল। বলল, সত্যি?

পিহু কন্ঠস্বর ভার হয়ে এল। বলল,

‘ হ্যা। সত্যি। ওর দেওয়া চিঠিটা নেওয়ার জন্য তুমি কাল স্কুলের পাশে এসো। ঔষধ নিয়েছ তো?

মাহিদ উত্তেজনায় কেনো কথা বলতে পারল না। বলল, আচ্ছা আমি কাল আসব। এখন রাখ।

পিহু ফোন কেটে দিল। দেখল মাহিদ আবার ফোন দিয়েছে। পিহু ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে ভেসে এল মাহিদের আপ্লুত কন্ঠস্বর।

‘ থ্যাংকস আরিশ। তোকে আমি খুব খুব ভালোবাসি। এখন ফোন রাখছি।

পিহু দৌড়ে গেল আদির কাছে। আদিকে ফোনটা দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। মুখ লুকিয়ে ফেলল। আদি স্পষ্ট শুনতে পেল তার ফুঁপানোর আওয়াজ। পিহুর কপালের চুম্বন কেটে বলে,

‘ কি হয়েছে আম্মি? কাঁদছ তুমি? মাহি কি আবার বকা দিয়েছে?

পিহু মাথা নাড়ল। আদি বলল, তো কি বলেছে?
পিহু ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল,
‘ মাহিদ ভাই বলেছে, তোকে আমি খুব খুব ভালোবাসি আরিশ।

____________

তারপরের দিন আনিসার দেওয়া চিঠিটা নেওয়ার জন্য মাহিদ পিহুর স্কুলের সামনে গিয়ে আগেরকার মতো দাঁড়াল। কালকে যে উত্তেজনা দেখা গেল আজ সেই উত্তেজনা নেই মাহিদের। পিহুর স্কুল ছুটি এল। সে এল। মাহিদ অন্যকোনো কিছু জিজ্ঞেস করল না। গেমস খেলা বন্ধ করে পিহুর দিকে একটিবার তাকাল না। পিহু রাগ লাগল। সে কাঁদোকাঁদো হয়ে চিঠিটা বের করল ব্যাগ থেকে। মাহিদের দিকে বাড়িয়ে দিল না। চিঠিটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। মাহিদ ফোনের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, দে। কোথায় চিঠি?
পিহু ফুঁপিয়ে উঠল। চিঠিটা কাঁপাকাঁপা হাতে বাড়িয়ে দিল মাহিদের দিকে। আবার ও ফুঁপিয়ে উঠল।
মাহিদ চিঠিটা হাতে নিয়ে তাকাল এবার। বলল, কান্দিস কেন বাপ? আমি কি তোরে এখন মারছি? তোর ডাক্তার বাপ দেখলে এখন আমারে খুন করবে।

পিহু নিচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কাঁদল। তারপর একদম ঘাড় ঘুরিয়ে চলে গেল। একপা একপা ফেলল মাটিতে রেগে রেগে। রেহানের সাথে দেখা হয়ে গেল। রেহান তাকে বাইকে উঠতে বলল। পিহু কোনোকথা না বলে বাইকে উঠে গেল। রেহান জিজ্ঞেস করল,কেন কাঁদছ পিহু?
পিহু উত্তর দিল না একবার ও।
মাহিদ সেইরাতে ইশার ফোনে ফোন দিয়ে বলল, ফিপি তোমার বজ্জাত মেয়েকে ফোনটা দাও।
পিহু ফোন নেওয়ার সাথে সাথে মাহিদ ওপাশ থেকে বলে উঠল।
‘ এই শোন ডাইনি, আনিসাকে দিয়ে হবেনা। ওর ন্যাকামি দেখলে আমার গা জ্বলে। তোর বেস্টফ্রেন্ড নিহা আছে না? নিহাকে লাগবে আমার। একটা চিঠি লিখেছি। স্কুলের গেইটে দাঁড়িয়ে থাকবি। আমি কালকে দিয়ে আসব। শুনছিস তুই।
পিহু রেগে গেল।
‘ আমি আর পারব না মাহিদ ভাই। তুমি আমাকে এসব করার জন্য কি মাইনে দিচ্ছ?

মাহিদ আর ও বেশি রেগে গেল।

‘ এমন ক্যান করিস বইন? তুই ভালা না? আমি প্রেম করতাছি তুই আমারে হেল্প করতাছস,তুই করলে আমি তোরে করুম। কছম কাইটা বলতাছি।

পিহু হনহন পায়ে হেঁটে ইশার কাছে এল। মাহিদকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, মাম্মা মাহিদ ভাই ফোন দিলে আমাকে আর ডাকবে না।

ইশা বলল, কি হয়েছে মাহিদ??

মাহিদ বলল, ‘ ফিপি আমি বলেছি না আরিশকে আমি ভালোবাসি। বেটি কানে ও নেই না। আমার কোনোকথা শুনছে না। আমার কোনোকাজ করে দিচ্ছে না। ইশা মাহিদের কথা শুনে হেসে দিল খিক করে।

____________

রাইনা আর আফি প্রচন্ড খুশি হলো রিকের প্রস্তাবে। তারা ও এমনটাই ভেবে রেখেছিল। আলিয়া তো খুশিতে আটকানা। পরী আসবে এ বাড়িতে তার নাতবউ হয়ে। আলিয়া উত্তেজনাবশত সেই খবর জানাল ইশাকে।
ইশা অবাক হলো। আদি আর ও বেশি অবাক হলো। ইশা বলল,

‘ এসব কি বলছেন মা? পরী এই বিয়েতে কখনোই রাজী হবেনা।

রাইনা এসে বলল, কেন রাজী হবে না? আমার ছেলে কি দেখতে খারাপ? নাকি কোনোদিকে কম।

ইশা বলল, রেহান ভালো থাকবে না ওর সাথে। তুমি শুধু রেহানকে জড়াচ্ছ এসব ঝামেলায়। আমি নিশ্চিত পরীর মত নেই এই বিয়েতে।
রাইনা বলল, তুই চুপ থাক ছোট। ও তোর মেয়ে হয়ে আসবে না এই বাড়িতে,আমার ছেলের বউ হয়ে আসবে। আর পরী তার মামুনিকে খুব ভালোবাসে। আমি ওকেই আমার ছেলের বউ করে আনব।

______________

রাইনা রেহানকে সরাসরি কোনোকিছু বলল না। শুধু বলল, তোমার জন্য পাত্রী দেখছি রেহান, তুমি ও যাবে চলো।
রেহান কানে হাত চাপা দিয়ে বলল, এ কথা আর কয়বার বলবে মা? আমি এসব বিয়ে টিয়ে এখন করব না।
রাইনা রেগে গেল। ফলসরূপ তার কান্না পেল। যে ছেলেকে কোলে পিঠে করে এতদূর নিয়ে এসেছি সে নাকি মায়ের পছন্দে বিয়ে ও করতে পারবেনা।
রেহান অবাক হলো মায়ের কান্না দেখে। আজ পর্যন্ত যেই মা কোনো সিদ্ধান্ত তার উপর চাপিয়ে দেইনি সেই মা নাকি বিয়ের জন্য তাকে জোরাজুরি করছে? মা তো সব জানে। পরীর কথা ও জানে। রেহান বিরক্ত হয়ে বলল, যাব,কোথায় যেতে হবে?
সে মনে মনে ভেবে নিল, মেয়েটাকে বলবে আমি অন্যকাউকে পছন্দ করি। আপনাকে বিয়ে করতে পারব না। তাহলেই তো হলো। শুধু শুধু মা কাঁদল। রেহান গেল।

রাইনা আর আফির সাথে সাথে সে ও গেল। কিছুদূর যেতে না যেতেই রাইনা বলল,

‘ মেয়েটা নাকি ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। একা কথা বলে নাও। বুঝেশুনে নাও।

আফি বলল,

‘ মেয়েটার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবি। রেগে গেলে ও তুই চুপ থাকবি। পটানোর চেষ্টা করবি। বুঝেছিস।
আমরা অভিভাবকরা ওইখানেই আছি। তুই যাহ।
রেহান বিরক্ত নিয়ে এগোলো। দেখল মেয়েটা পিছ করে দাঁড়িয়েছে। রেহানের ভীষণ রাগ লাগল। জানা নেই,শোনা নেই একটা মেয়ের সাথে কি এভাবে কথা বলা যায়? আশ্চর্য?
রেহান মেয়েটা থেকে দূরত্ব রেখে মেয়েটার পিছু গিয়ে দাঁড়াল। বলল, দেখুন আমি আপনাকে বিয়ে টিয়ে করতে পারব না। আমি অন্য একজনকে পছন্দ করি। সো বিয়েটা করা পসিবল না। আপনি আপনার অভিভাবকদের বুঝিয়ে বলবেন। আমি দুঃখিত। আমার মা বাবা জোর করায় আসতে হলো।

আচমকা রেহানের মুখে কোথা থেকে পানি ছুটে এল। রেহান ঝাপসা দেখল চারপাশ। পুরো ভিজে গেল। মুখ থেকে পানি সরাতেই দৃশ্যমান হলো খুব পছন্দ, ভালোলাগার একটি রাগান্বিত মুখ। রেহান চুল মুখ থেকে পানি মুছে চোখ বড় বড় করে তাকাল মেয়েটির দিকে। বলল, তুমি????

পরী বোতলের চিপি মারতে লাগল দাঁতে দাঁত ঘষে। বলল, ন্যাকামো। ডং। মেরে ফেলব।

রেহান দু পা পিছু হাটল।

‘ এখানে অন্যকারো থাকার কথা ছিল না?

পরী গর্জে উঠল। আমার থাকার কথা ছিল।

রেহান আবার হাত দিয়ে মুখ মুছল। বলল, আমি আসছি এক্ষুণি। জাস্ট ফাইভ মিনিটস।

রেহান পা চালাল দ্রুত। পান্জাবীর হাতায় মুখ মুছল। ঘেমে গেল প্রচন্ড। পরী হলে তো সে সাথে সাথে হ্যা বলে দিত। মা আগে বলেনি কেন? ধ্যাত।

রেহান গেল যে গেল। পাঁচ মিনিট কেন? পাঁচ ঘন্টা পার হলে ও রেহান এল না।

___________

মাহিদ ফোন দিল ইশার ফোনে। পিহু রিসিভ করল। মাহিদ হো হো করে হাসল। হেসে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছেন বেয়াইন সাব? বুকে বড় জ্বালা।
পিহু রেগে বলল, নিহাকে ডুকিয়ে রাখো বুকের ভেতর। জ্বালা কমে যাবে। অসভ্য, বেয়াদব ছেলে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here