#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_১৩,১৪
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
১৩
পিহু রাস্তা ধরতেই দেখলো আফিকে। আফি টর্চলাইট মারলো পিহুর মুখে৷ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে রাস্তার ওপাশ থেকে ডাকলো
‘তোমারে খুঁজতে খুঁজতে আমি পাগল হইয়্যা যাইতাছি। আর তুমি আমারে দেইখা ও চুপ কইরা আছো ক্যান আম্মাজান ?
পিহু হেসে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। আফি আসলো। পিহুকে বলল
‘ রিকশা পাওনাই তো কাউরে ফোন দিবানা? তোমার মা বাপ জেঠি আমারে এক জায়গা শান্তিতে খাঁড়াইতে দিতাছে না।
‘ রিকশা পেয়েছিলাম। নেমে যেতে হলো। তাই ভাবলাম বাকি পথ হেঁটেই যায়।
‘ রিকশা থেইকা নামলা ক্যান? মাইয়্যা মানুষ একা একা যাইতা কই?
‘ একা ছিলাম না বড়পাপা। মাহিদ ভাই ও ছিল। কি কতগুলো উল্টাপাল্টা বলে আমাকে একা রেখে চলে গেল ।
‘ ব্যারিস্টারের বাচ্চা কামডা কি ঠিক করলো?
‘ একদম না।
‘ তুমি খাঁড়াও। তার ব্যারিস্টার বাপেরে আমি যদি আইজ যদি বিচার না দিই আমি চৌধুরীর ব্যাটা না।
পিহু হেসে ফেলল৷ বলল
‘ থাক বাদ দাও।
‘ বাদ টাদ দেওয়া যাইবো না বাপ।
‘ তুমি ও বাপ বাপ শুরু করেছ?
দুজনের কথার মাঝখানে আদির ফোন এল আফির ফোনে। আফি ফোন তোলার সাথে সাথে বলল
‘ তোমার ছেড়িরে পাইনাই ডাক্তার সাহেব। নিজে আইসা খুইজ্যা লও। নিজের মাইয়্যার খোঁজ নিজে রাখতে পারোনা। আবার বাপ দাবি করো। সেয়ানা দেখাও আমার লগে?
আদি উদ্বিগ্ন গলায় বলল
‘ মেডিক্যালের আশপাশে কিংবা রাস্তায় দেখো দাভাই। কোথায় যাবে পিহু? তুমি মজা করছ এসময়?
আফি হাসলো। হাসলো পিহু ও। আদি দুজনের হাসির আওয়াজ শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। তারপর বলল
‘ আমার সাথে মশকরা হচ্ছে?
পিহু ফোন নিয়ে বলল
‘ পাপা আমরা অলরেডি বাড়ির রাস্তা ধরেছি। আর কিছুক্ষণ। ডোন্ট ওয়ারি।
‘ এত দেরী হলো কিভাবে পিহু?
পিহু বিড়বিড়িয়ে বলল
‘ এক বান্দরের পাল্লায় পড়ে।
‘ বুঝলাম না।
‘ দেরী হতেই পারে পাপা। রিকশা পাচ্ছিলাম না। আমরা এখনি পৌঁছে যাচ্ছি। রাখো৷
‘ ওকে৷ চলে এসো।
________
পরদিন পিহুর পরীক্ষা আছে। ফরেন্সিক মেডিসিন। বাড়ি ফিরে মাত্রই ফ্রেশ হয়ে নাশতা খেয়েছে। ইশা এসে তেলের বোতল হাতে নিয়ে পিহুর কাছে আসলো। তেল হাতে নিয়ে বলল
‘ এখন একটু ঘুমাও। পরে উঠে পড়া শুরু করবে!
পিহু না না করে উঠলো। ইশা বলল
‘ কি হলো?
‘ তেল দেব না আম্মা। আমার বিরক্ত লাগে। সরো সরো। উফফ।
ইশা কথা শুনলো না। তেলে চুবিয়ে দিল পিহুর চুল। বলল
‘ পেট যেমন খাবার খুঁজে। মাথার চুল ও তেল খুঁজে। তোমার দিদিয়াকে ও এখব জোর করে দিয়ে আসলাম। বাজে অভ্যাস দুজনের।
ছিকু এল দৌড়ে দৌড়ে। হাতে ফুটবল। দৌড়ে এসে ইশার পা আঁকড়ে ধরলো। বলল
‘ ইশুবুনু পরী ছিকুকে মারে কেন? ফুটবল নিয়ে ফেলে কেন? পরী এমুন পুঁচা কেন?
ইশা বোতল রাখলো। ছিকুকে কোলে তুলে বলল
‘ মারবেই তো। এখন কি ফুটবল খেলার সময়? এখন পড়ার সময় ভাই।
‘ কেন? পড়ার সময় কেন? ছিকুর পড়তে মন চায় না কেন?
কথাগুলো বলতে বলতে ছিকুর চোখে জল এল। পরী এসে দাঁড়ালো দরজার কাছে। হাতে বেডঝাড়ু। ছিকুকে দেখিয়ে বলল
‘ আজ পিঠ লাল করে ফেলব৷ কেমন অসভ্য ছেলে দেখেছ আম্মা? বইটা ছিঁড়ে কাগজগুলি গ্লাসের পানিতে চুবিয়ে দিয়েছে। তারপর গ্লাসটা আমাকে দিয়ে বলল, পরী শব্বত বানিয়েছি কেন?
ইশা আর পিহু একসাথে হেসে উঠলো৷ সাথে ছিকু ও খিকখিক করে হাসা শুরু করলো।
ইশা তার গাল চেপে ধরে বলল
‘ আহা এভাবে হাসতে নেই। পরী রেগে গেছে তো।
ছিকু ইশার হাত সরিয়ে দিয়ে বলল
‘ কেন? পরী রেগে গিছে কেন? পরী এত পুচা কেন? পরীকে কেউ মারেনা কেন? রেহান বকেনা কেন?
পরী তেড়ে আসলো। পিহু ছিকুকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে লুকিয়ে ফেলল। বলল
‘ নাই নাই ছিকু নাই।
পরী বলল
‘ ওকে আমাকে দাও পিহু। দাও বলছি।
পিহু বলল
‘ এমন করোনা দিদিয়া। এখনো বাচ্চা তো।
ছিকু পিহুর বুকে মুখ গুঁজে রাখা অবস্থায় বলল
‘ পরী বাচ্চাকে মারে কেন? বাচ্চাকে আদর করে না কেন?
পরী বলল
‘ আদর? আসেন আদর করি। আসেন। বেয়াদব ছেলে। আমি জানিনা কি হবে একে নিয়ে।
রাইনা এসে পিহুর কোল থেকে কোলে নিল ছিকুকে। পিঠে হাত বুলিয়ে নিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ তুই একদিনে সব শিখিস নি। আমার ভাই ও একদিনে সব শিখতে পারবে না। যখন শেখার সময় হবে তখন শিখবে। একদম বকাঝকা করবি না আমার ভাইকে।
ছিকু যেতে যেতে রাইনাকে বলল
‘ পরী বিদ্দব কেন? ছিকুকে বিদ্দব বলে কেন?
রাইনা হাসলো মিটমিট করে।
ইশা পরীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
‘ ওকে আদর করে করে পড়াতে হবে মা। রাগারাগি করলে তো একদমই পড়বে না।
‘ আদর করেই তো পড়াচ্ছিলাম আম্মা। ছড়া পড়াচ্ছিলাম। এত ডাকি তবু কথা কয় না কেন বউ। ও সেটা পড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বুউ কথা কয় না কেন? নজ্জা পায় কেন?
ইশা আর পিহু হেসে ফেলল আবার। পরীরও হাসি পাচ্ছে রাগ ও লাগছে। তার চেহারায় দুরকম প্রতিক্রিয়া। পিহু টেবিলে মাথা ফেলে বলল
‘ দিদিয়া ওর কথা মনে পড়লে আমি পরীক্ষার হলে হেসে ফেলি। আমার কিউট আব্বা।
ইশা বলল
‘ এত পাকাপাকা কথা বলে। শিখিয়ে দিতে হয়না কাউকে।
পরী বলল
‘ পন্ডিতগিরি বের করব আমি। একবার হাতের কাছে পাই।
ইশা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল
‘ আচ্ছা নীরুর ফোনে একটা কল দেওয়া দরকার ছিল । ওর জ্বরটা কমেছে কিনা কে জানে?
পিহু বলল
‘ ফোন দিয়ে জেনে নাও।
ইশা পিহুর ফোন থেকেই ফোন দিল। নীরা তখন সোফায় হেলান দিয়ে বসেছে। জ্বর ছাড়ায় শরীর দুর্বল লাগছে।
মাহিদ ফোনে গেমস খেলছে নীরার কোলে মাথা রেখে শুয়ে। পিহুর ফোন থেকে ফোন আসায় নীরা লাফ মেরে ফোন তুললো। কানে দিতেই ইশা বলল
‘ তোর জ্বর সেড়েছে? এখন কেমন আছিস? বাড়ির সবাই কেমন আছে?
‘ জ্বর কমেছে। এখন ভালো লাগছে। সবাই ভালো আছে। তোরা কেমন আছিস?
‘ সবাই ভালো আছি।
মাহিদ ফোন কেড়ে নিল। ইশাকে বলল
‘ বাপের বইন। হুনো হাতের মোবাইলটা হাত থেকে এখনি ধপাস কইরা ফালাইয়া দাও। দুই টাকার মোবাইল। কথাগুলো ফসফস করতাছে। কার মোবাইল এইডা? এই ফইন্নি মার্কা মোবাইল কার?
পিহু ফোনের পাশ থেকে তেজ গলায় বলল
‘ আম্মা দু টাকার মানুষের কাছে সবকিছু দু টাকারই মনে হয়। যত্তসব।
মাহিদ আর ও কিছু বলতে যাচ্ছিল। নীরা ফোন কেটে মাহিদের কান টেনে দিয়ে বলল
‘ বেয়াদব ছেলে। ওকে রাগাচ্ছিস কেন? ওকে রাগালে ওর মতো মেয়ে কোথায় পাবি তুই? আমার ওর মতো ছেলেবউ চাই। চাই মানে চাই।
মাহিদ লাফ দিয়ে উঠে বসলো। বলল
‘ তো? আমি তো বলছি একটা মাইয়্যা খুঁজে দিতে। শালী কোনো ফিডব্যাক দেয়নাই আমারে।
‘ কি আশ্চর্য! কি আশ্চর্য! বলেও ফেলছিস? মাহিরে তুই তো বিরাট কাম করছস বাপ।
মাহিদ গর্ব করে বলল
‘ মাহিদ খান সবই পারে মেরি,,মাআআ।
_____________
রাত এগারোটার দিকে পিহুর ফোনে নীরার ফোন থেকে কল এল। পিহুর সাথে টুকটাক কথা কথা বলতে একসময় নীরা বলল
‘ ভাইবা পরীক্ষায় ফেল মারা গাঁধার জন্য মেয়ে দেখতাছি তোমার মতো। তুমি কি কাউরে পাইছো আম্মাজান?.
পিহু চট করে উত্তর দিল।
‘ ইয়েস। জাস্ট ওয়েট এ মিনিট মামি।
নীরা অপেক্ষা করলো। রিপ টেবিলে বসা। হাতে কলম। কালি চলছে স্বাক্ষরের পর স্বাক্ষরে। নীরা অপেক্ষা করতে করতে রিপকে বলল
‘ ব্যারিস্টার পিহু মেয়ে খুঁজে পায়ছে?
রিপ কলম থামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে নীরার দিকে তাকালো। বলল
‘ কোন মেয়ে?
‘ অপেক্ষা করতে বলছে পিহু।
কিছুক্ষণের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেয়ের হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ভেসে উঠলো। নীরা ভালো করে ছবিটা পরখ করে বলল
‘ ব্যারিস্টার তাড়াতাড়ি আসেন।
‘ আসছি।
‘ এখন আসেন। আসেন। আসেন না। ধুরর।
রিপ টেবিল গুছালো। কলমের ঝুঁড়িতে কলম রাখলো। এসে বসলো নীরার পাশে। নীরা তার বুকের উপর এসে পড়লো। ফোনের স্ক্রিন দেখিয়ে বলল
‘ পছন্দ হয়ছে?
‘ পিহু দিয়েছে?
‘ হুম।
‘ এই মেয়ে পিহুর মতো?
‘ পিহুই তো বললো।
‘ ঠিক আছে। তোমার ছেলেকে দেখাও।
‘ তাকে দেখানোর দরকার নেই। এই মেয়ের খোঁজ খবর নেন। সোজা তুলে নিয়ে আসবো। আমার ছেলেবউ চাই মানে চাই।
‘ যে সংসার করবে তার পছন্দ অপছন্দ জানা দরকার নীরা।
‘ আপনার ছেলে কাউকেই পছন্দ করবে না। কিন্তু আমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবে বলেছে। এটাই অনেক।
‘ যদি এই মেয়ে পিহুর মতো না হয়?
‘ পিহু মিথ্যে বলবে? যদি মিথ্যে বলে তাহলে পিহুকেই তুলে নিয়ে আসবো। পিহু মাহির বউ ? ব্যাপারটা কেমন না! ধুর আমি কিসব ভাবি? এরা তো একে অপরের শত্রুর মতো। সারাক্ষণ ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে এদের মধ্যে। ছিঃ ছিঃ কিসব ভাবি আমি।
রিপ দু হাত মেলে নীরাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করলো। নীরার মাথার উপর থুঁতনি ঠেকিয়ে মনে মনে বলল,
‘ এরাই দিনশেষে একে অপরকে বেশি ভালো রাখে নীরা।
নীরা মুখ তুলে বলল
‘ দম্পতি হতে হবে আমাদের মতো। নাহ?
রিপ মাথা নেড়ে বলল
‘ হু। এবার চুপচাপ ঘুমাও।
নীরা ঘুমিয়ে পড়লো। কি শান্তি আজ! ছেলে বউ এইবার ঘরে আসিবে।
চলবে
#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_১৪
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
পিহুর পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ছিকু তার কাছে পড়তে বসেছে। কিছুক্ষণ পড়তে পড়তে ক্লান্ত হলে ধপাস করে শুয়ে পড়লো লম্বা হয়ে। পিহু বলল
‘ কি হয়েছে আব্বা?
‘ ছিকু ঘুম।
পিহু তাকে তুলে আবার কোলে বসালো। বইয়ে আঙুল দিয়ে পড়াতে পড়াতে বলল
‘ আই মিনস আমি। ইউ মিনস তুমি।
ছিকু বলল
‘ আই মিনস ছিকু। ইউ মিনস পিহু।
পিহু তার গালে চটাস করে চুমু দিয়ে বলল
‘ ওমা কি ট্যালেন্ট আমার কলিজার।
পরী এসে বসলো। বলল
‘ পড়া হচ্ছে নাকি শুধু আদর চলছে?
পিহু বলল
‘ পড়ছি তো আমরা। না কলিজা?
ছিকু ঠোঁট ফুলিয়ে বলল
‘ পরী আদর করতে দেয় না কেন?
পরী বলল
‘ চুপ বাজে ছেলে। পড়ো চুপচাপ। কেন কেন করা বন্ধ করো।
বলেই চলে গেল পরী। পিহু ছিকুকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে গালে আদর করে বলল
‘ আমার কলিজা আজ পড়ে সব শেষ করে ফেলবে। চলেন চলেন শুরু করি।
ছিকু বলল
‘ সব শিষ করব কেন?
পিহু হেসে ফেলল।
___________
ফোনটা টেবিলের উপর রেখে নীরা মাহিদকে বলল
‘ ধর পিহুর মতো মাইয়্যা। আমি পাইয়্যা গেছি বাপ।
মাহিদ ফোনের দিকে তাকালো না। ফোন ঠেলে দিয়ে বলল
‘ ভালা। যাও লইয়্যা আসো তারে। কোলে নিয়া বইসা থাকো।
নীরা কপাল কুঁচকালো। মাহিদের মাথায় চটাস করে চাটি মেরে বলল
‘ অসভ্য ছেলে সংসার কি আমি করব? নাকি তুই করবি? কালই তো বললি আমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবি। এখম আবার এরকম বলছিস কেন?
মাহিদ টেবিলে মাথা রাখলো। বলল
‘ বললাম তো বাপের বউ বিয়া করুম। বিয়া করুম না সেটা ত কইনায়। যাও বিয়ের আয়োজন করো। যাও।
‘ এটা কোনো কথা? আগে তো মেয়ের বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করে ছেলে কি করে?
‘ বলবা সরকারি চাকরি করে। চাকরি তো পাবই। আজ না হয় কাল। শালা ভাইবা পরীক্ষায় আমারে ফেল করাইয়া দিল। শালা টাকলুরে যদি হাতে পাইতাম। ইট দিয়ে বাড়ি মেরে মাথা দু ফাঁক কইরা দিতাম।
নীরা খিক করে হেসে বলল
‘ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু তোর আব্বা বলতেছে মেয়ে দেখে পছন্দ হলে নিশানা দিয়ে রাখনের জন্য। তোর চাকরি হলেই বিয়ে। আমি তো সেইরকম করে তোর জন্য বউ আনবো। একটা কানাকড়ি ও নিমুনা তোর শ্বশুরের থেইকা। পালকি করে নিয়ে আসবো বউ। মেয়েটা তো হেব্বি আছে আব্বা। পিহুরে বলছি পিহুর মতো মাইয়্যা দেখতে, পিহু তো আর ও বেশি সুন্দর মাইয়্যা খুঁজে দিছে। দেখ তোর গায়ের রঙ আর মাইয়্যাটার গায়ের রঙ একদম হুবহু সেম। মানাইবো তো। দেখ না একবার।
মাহিদ ফোন ঠেলে দিয়ে বলল, ধুর বাপ ৷
নীরা মুখ মোচড় দিয়ে বলল, হুহ, বাপের মতো সারাক্ষণ ভাব লইয়্যা থাকে। বাপকা ব্যাটা। ঢং।
মুনা এসে বলল
‘ কি হয়েছে আবার?
নীরা ফোন নিয়ে গিয়ে বলল
‘ আপা এইটা আমার মাহির বউ হবে। বাড়ির খোঁজ পাইছি। কি সুন্দর নাহ?
‘ এটা পিহুর মতো কোথায় হলো? পিহুর রঙ তো শ্যামলা, বড় বড় চোখ, আদুরে চেহারা। এই মেয়ের চেহারা ও সুন্দর কিন্তু রঙ তো ফর্সা। আর পিহুর মতো ডাক্তার তো নয়। আমি তো পিহুর মতো কিছুই দেখলাম না।
‘ ফর্সা হলে তো আর বেশি ভালো। থাক থাক। এইটা ভালো আছে। পিহু মতো না হোক, পিহুর পছন্দ তো। পিহু পছন্দ করে তার মাহিদ ভাইয়ের জন্য বউ খুঁজে দিছে। এইটার চাইতে ভালো কিছু আর আছে? পিহু খুশি তো হবে। ননদ আর ভাইয়ের বৌয়ের মিল পড়লেই হলো।
মুনা মাথা নেড়ে বলল
‘ তা ঠিক। দেখ কথাবার্তা বলে। তোর যখন ছেলেকে বিয়ে করানোর শখ জাগছে। জামাই ও পেয়েছিস একটা। তোর কথায় কথায় হ্যা হ্যা। বাচ্চা বউ তার।
নীরা হঠাৎ লজ্জা পেয়ে গেল ছেলের সামনে অমন কথা শুনে। ধুরর আপাটা ও বেশি। ব্যারিস্টার তার কথায় হ্যা বলবে না কেন? নীরা তার একটা মাত্র বউ বলে কথা।
মাহিদ মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকালো। বলল
‘ মেরিমা এসব বিয়ে টিয়ে বাদ দাও। একটা কাজ করি। তোমার আর আব্বার বিবাহ বার্ষিকীটা উদযাপন করি। সেটা ভালো হবে না। তোমরা তো এখনো বুড়া হওনাই।
‘ কি বলে এই ছেলে? বুড়া হমু ক্যান? আমি কত বাচ্চা বয়সে তোর বাপের কাছে চলে আসছি তুই জানোস? তোর বাপ তো মাগার এত বাপ দেখাইতো আমার লগে। হুহ, এখন আমার ভাব দেখে কে? আমার ভাবের ঠেলায় তোর বাপ ফিনিশ। তুই আসবি শোনার পর থেইকা তো একদম চোখে হারায়ছে। একবার আমার পিছপিছ আমার বাপের বাড়ি চলে গেল, সে কি কান্ড! আমার বাপ মহাশয় তো হেব্বি খুশি। এডভোকেট জামাই দাওয়াত ছাড়া বউয়ের পিছপিছ চইলা আইছে। আমার বাপের খুশি দেখে কে? আমি ও শালা কম না। তোর বাপরে নাকানিচুবানি খাওয়াইছি হেব্বি। এমন ভাব মারছি তোর বাপ শুধু হাবাগোবার মতো আমার দিকে তাকাইছিল। আমি ভাব দেখাইতে দেখাইতে আবার তোর বাপের লগে পরের দিন চইলা আসছি।
মুনা হেসে উঠলো। মাহিদ গালে হাত দিয়ে হা করে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মুনা হাসতে হাসতে বলল
‘ তুই পারিস ও নীরু। আমি তো ভাবছি রিপটার মাথা এখনো ঠিক আছে কিভাবে? আমার ভাইটাকে তো তুই জ্বালিয়ে মারিস রে।
নীরা ভাব নিয়ে বলল
‘ মাগোমা তোমার ভাই তো একদম সাধুপুরুষ। আমাকে কত জ্বালায় সেটা খবর আছে কারো?
‘ সে যাই বলিস। তুই বেশি জ্বালাস আমার ভাইটাকে। এখন তো আরেক বাঁদর ও আছে। মা ছেলে দু’টোই আমার ভাইটার মাথা খেয়ে ফেলিস।
মাহিদ বলল
‘ আবার আমারে টানতাছো ক্যান জেঠার বউ? আমি ভালা মানুষ। ভালা মানুষ বইলা এতক্ষণ তোমাদের বকরবকর শুনতাছি চুপচাপ।
‘ কি আমি বকরবকর করি? আমি? তুই এটা বলতে পারলি আমার বাচ্চা হয়ে?
মুনা হাসতে হাসতে রুম থেকে বের যেতে যেতে বলল
‘ আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে আমার পেট ব্যাথা হয়ে যাবে। বাপরে বাপ কেমনে যে পারে এরা মা ছেলে?
মুনা যেতেই নীরা হাসলো। মাহিদের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল
‘ আইচ্ছা তুই থাক। আমি যাই। পিহুকে ফোন দিয়ে মেয়েটার ব্যাপারে আর ও কিছু জেনে নিস।
মাহিদ চেয়ার ছেড়ে বিছানা ধরলো। ধপাস করে শুয়ে পড়লো। ফোন টিপে কল দিল পরীর ফোনে। ছিকু শালার সাথে কথা আছে। শালার জন্য মনপুড়ে।
পরী ফোন ধরলো না। ছিকু শালাই ধরলো। বলল
‘ বোল না মিহি বোল না।
মাহিদ বলল
‘ কি কস শালা?
‘ গান কচছি কেন? ছিকুর গান বিটিফুল বলোনা কেন?
‘ কি গান আবার?
ছিকু উদাম পেটে হাত বুলাতে বুলালো। গা দুলে দুলে কানের ফোন মুখের কাছে এনে গাইলো।
‘ ছুটিয়া না ছুতে মুচ
রং তেরা ধুলনা
ইকি তিরে বাজা দুজা
মেরা কুন মুল না
বোলনা মিহি বোলনা
বোলনা মিহি বোলনা
মিহি গান কচচি। বিটিফুল বলোনা কেন? ছিকুর গান চুন্দর কেন?
মাহিদ হা করে থাকলো। বলল
‘ চুপ থাক শালা। তুই আমার নাম লইয়্যা গান করতাছোস? আমি কি তোরে গান শোনার লগে ফোন দিছি বাপ?
‘ কেন ফুন দিচো কেন?
‘ তোর মা খালা কনডে ক শালা।
‘ পরী ইখানে নাই কেন? পিহু ফুনে কথা বলে কেন?
‘ কার লগে কথা কয়?
‘ মিহি পুঁচা কথা বলে কেন?
” চুপ বেডা। যেটা কইতাছি সেইটার উত্তর দে বাপ। তোর খালারে গিয়া একটা ধাক্কা মার জোরে। যাতে হাত থেইকা ফোন পইড়া যায়। যাহ। নইলে তোর পেট কেটে ফেলব আমি। যাহ।
ছিকু মুখ নিচু করে পেটের দিকে তাকালো। পেটে হাত বুলিয়ে বলল
‘ কেন পেট কাটিবে কেন? ছিকুর কান্না পায় কেন?
‘ তুই যাবি বাপ?
ছিকু হেঁটে হেঁটে চলে গেল। পিহু নিনিতের মায়ের সাথে কথা বলছিল। ছিকু তাকে ধাক্কা দিতেই পিহু সামনে ঢলে পড়লো। ফোন ছুটে গেল হাত থেকে। পিহু
‘ছিকু’
বলে ডাক দিতেই ছিকু দৌড়ে পালালো ওরে মা ওরে বাপ বলে। রুমে এসে ফোন কানে তুলে বলল
‘ মিহি পিহুকে ধাক্কা দিচি কেন? মিহি পুঁচা কথা শিখায় দিচে কেন? পিহু বিথা পাচে কেন?
পিহু রুমে ঢুকলো না আর। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
মাহিদ হাসতে হাসতে বলল
‘ ওরে বাপ আমার। সাব্বাশ বেটা। তোরে এক গেলাস করলার জুস খাওয়ামু খুশিতে।
ছিকু খুশি হয়ে গাইলো।
‘ বোল না মিহি বোল না।
পরে পিহুকে দেখে জোরে চিৎকার দিল। বলল, ওবাপ পিহু সব শুনে ফিলচে কেন? পিহুকে ভয় লাগে কেন?
ফোন খাটে পড়ে রইলো। পিহু গিয়ে ফোন তুললো। দেখলো ফোন কেটে দিয়েছে অলরেডি। ছিকু ভয়ার্ত চোখে চেয়ে রইলো পিহুর দিকে। পিহুর হাঁটুমুড়ে বসলো। গুলুমুলু চটকিয়ে দিয়ে বলল
‘ কি বলেছিল মিহি?
‘ পিহুকে ধাক্কা দিতি বলেছে কেন? পিহুকে ব্যাথা দিতে বলেছে কেন?
________
মাহির জন্য নাকি মেয়ে দেখছিস? কখন? মেয়ে কোথাকার? আমাদের তো বললি না।
নীরা বলল
‘ মন খারাপ করিস না ইশু। তোর ভাইপো ভাইবা পরীক্ষায় ফেল মারছে। এখন সে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন হবে। ক্রিকেট ক্রিকেট নাম জপতেছে সারাক্ষণ। চাকরি বাকরি করার মুডে নাই। তাই তারে সোজা রাখার জন্য একটা বউ লাগবো। সাথে আমাদের সবাইরে দেখাশোনার জন্য।
ইশা হেসে বলল
‘ ঠিক আছে। মাহির তো এখন বিয়ের বয়স বরাবর। ঠিক আছে দেখ। মেয়ে ভালো হলে তো ঠিক আছে। তোর ছেলে যা পাজি, ওকে সোজা করতে সেরকম মেয়ে লাগবে।
‘ হ্যা। তোরে পিহু ছবি দেখাইনাই?
ইশা বলল,
‘ নাহ।
‘ ওমা একি কথা? পিহুরে ডাক। ছবি দেইখা নে। তাড়াতাড়ি বল কেমন দেখতে মেয়ে। আমি তোর মতামত জানার জন্য তোরে ফোন দিছি।
ইশা বলল
‘ আচ্ছা আমি দেখছি।
পিহুকে ডাকলো ইশা। পিহু এসে বলল
‘ কি হয়েছে আম্মা?
‘ মাহির জন্য যে মেয়েটাকে দেখছে সে মেয়েটার খোঁজ নাকি তুমি দিয়েছ? দেখি ছবিটা দেখাও তো।
পিহু ফোন নিয়ে এসে ছবি দেখালো। ইশা বলল, মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর। মাহির সাথে মানাবে তো।
ছিকু এসে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে বলল
‘ আমাকে দেখায় না কেন? মিহির বুউ দিখতে মন চায় কেন?
ইশা তাকে কোলে তুলে নিল। ছবি দেখিয়ে বলল
‘ এই তো মিহির বুউ। বিটিফুল না?
‘ বিটিফুল কেন? মিহির বুউ চুন্দর কেন?
পিহু চলে গেল। ইশা বলল
‘ মেয়েটার নামটা কি পিহু? পিহু?
পিহুর উত্তর এল না। ছিকু বলল
‘ পিহু কুথা বলেনা কেন?
‘ কে জানে?
_________
উকিল জমির মিয়া সুদর্শন পাত্রের ছবিটা সবার উপরে রেখে মুহিবউদ্দীমকে বললেন
‘ ব্যারিস্টার রেজওয়ান খানকে নিশ্চয়ই চেনেন সাহেব?
‘ কে না চেনে।
‘ এটা ওনার একমাত্র ছেলে। আপনার মেয়েকে ব্যারিস্টারের স্ত্রীর আর ছেলের বড়ই মনে ধরেছে। আমাকে তাড়াতাড়ি জানাতে বলেছে আপনাদের মতামত।
মুহিবউদ্দীন অন্যসব ছবি দেখলো ও না। অবাক চোখে পাত্রের ছবি আর বায়োডাটার দিকে চোখ বুলাতে বুলাতে বলল
‘ রেজওয়ান খানের ছেলে? ওনারা সত্যি অনেক ভালো মনের মানুষ। এত যশ, প্রতিপত্তি হয়েছে চলাফেরায় বিন্দুমাত্র তা বুঝা যায় না। অতি সাদামাটা মানুষ তারা। আমার বড়ই পছন্দের ব্যাক্তি ব্যারিস্টার সাহেব। ব্যারিস্টারের বড় ভাইয়ের সাথে ও তো পরশু আমার দেখা হলো। ওনাদের বোনটা চৌধুরী বাড়ির ছোট বউ মনে হয়। চৌধুরী সাহেবদের সাথে ও ভালোই সম্পর্ক ওনাদের। ওনাদের সাথে সম্পর্ক করতে কোনো দ্বিধা নেই আমার। তারপরও আমি মাইশা আর তার ভাইয়ের সাথে কথা বলি। মেয়ের মতামত তো লাগবেই।
জমির মিয়া হাসিমুখে বাড়িটা ছাড়লেন। নীরাকে ফোন করে সব খুলে বললেন। নীরার মুখ কালো হয়ে গেল। পাত্রকে তো পছন্দ করেছেই কিন্তু তার আগে বড় কথা হলো পাত্রের বাবাকে খুব বেশি পছন্দ হয়েছে। নীরা হিংসে হলো। তার ব্যারিস্টারকে কেন পছন্দ করতে যাবে। বেটা বেয়াদব। কিন্তু পরক্ষণে খুশিতে নাচতে নাচতে চৌধুরী বাড়িতে খবরটা দিল নীরা। পিহুকে ফোন করে বলল
‘ আম্মাজান তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়িতে আসো। মিষ্টিমুখ করা লাগবো তো। মাহিরে সেইরকম পছন্দ হয়েছে নাকি। মেয়ের বাবার পছন্দ মানে মেয়ের ও পছন্দ। আমার মাহি কি কম নাকি কোনদিক দিয়ে? আমার বাচ্চা তো একটুকরা চাঁদ।
পিহু উত্তেজিত হয়ে বলল
‘ তাই? তাহলে তো খুব খুশির খবর? আমি নিজেই মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছি। মাহিদ ভাইকে বাসায় থাকতে বলো। আমি নিজের হাতে মিষ্টি খাওয়াবো। বিয়ের খুশিতে মিষ্টি।
‘ আইচ্ছা। আসো আসো।
পরদিন পরী ছিকুর সাথে পিহু ও গেল খান বাড়ি। ছিকু তো মহাখুশি। মিহির সাথে তার দেখা হবে। কোলে চড়া যাবে। মাইর খাওয়া যাবে। কি মুজা?
মিষ্টির প্যাকেটটা পিহুর হাতেই ছিল। তারা বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে নীরা ছুটে এল। চোখেমুখে খুশির ঢল। বলল
‘ আরও একটা খুশির খবর। মেয়ের বাবা জানিয়েছে মাহির চাকরি হয়ে গেলেই তারা মেয়ে তুলে দেবেন। কি খুশির খবর। তোমরা এত মানিক ক্যান আম্মাজান। আসার সাথে সাথে খুশির খবর ও নিয়া আসছো।
পরী বলল
‘ যাক। এই বাড়িতে বউ আসবে। এইবার আর আমাকে শুনতে হবেনা বাড়িটা খালি হয়ে আছে।
মুনা ছিকুকে কোলে তুলে নিল। আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়ে বলল
‘ কেমন আছে আমার ভাই?
‘ মিহি নাই কেন? মিহিকে মিচ করি কেন?
নীরা বলল
‘ সে তো বহুদূরে ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে গেছে। জেলার বাইরে। অনেকদূর। ফিরতে ফিরতে রাত হবে। থাক সমস্যা নাই তার মিষ্টি তার জন্য বরাদ্দ থাকবো।
পরী পিহু একসাথে হাসলো।
________
মাহিদ আসলো রাতে। ক্রিকেট ম্যাচে আজ হেরেছে। ইজ্জত সম্মান সব ডুবেছে। মাথা খারাপ। বাড়ি ফিরে চুপচাপ ঘরে গিয়ে গোসল নিল। ছিকু তার ঘরে গেল। ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বলল
‘ মিহি ছিকুর সাথে কথা বলেনি কেন? কোলে নেয়নি কেন?
মাহিদ সোপ গায়ে মাখা অবস্থায় দরজা খুললো। ছিকুর গায়ে ফেনা লাগিয়ে দিয়ে কাছে টেনে গালে চুমু খেল। বলল
‘ আদর বাকি থাক বাপ। আমি গোসল সেড়ে আইতাছি।
ছিকুর মাথা দুষ্টু বুদ্ধি এল। ভেতরে ঢুকে ঝর্নার ট্যাপ মোচড়ে দিল। পানিতে জবজবে ভিজে উঠতেই সে নেচে উঠে গাইলো
‘ বোল না মিহি বোল না।
মাহিদ তাকে কোলে নিয়ে আদর দিতে দিতে বলল
‘ শালা তোর আমার লগে গোসল করতে মন চায়। কর। তোরে আইজ পানিতে চুবায় রাখুম।
মাহিদ গোসল থেকে বের হলো উৎপুল্ল মনে। কিন্তু নিচে গিয়ে সবার মুখে এক এক কথা শুনে রাগ বাড়লো তরতরিয়ে। হেরে যাওয়ার খারাপ লাগাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। পিহুকে দেখা গেল না আশেপাশে। বিরক্ত হলো মাহিদ। রাতের খাওয়ার সময় দেখা হলো দুজনের। পিহু তার সাইড কেটে সরে পড়লো। খাওয়ার টেবিলে রিপ টুকটাক কথা বললো পিহুর সাথে। খাওয়ার টেবিলেই মাহিদ জানতে পারলো তার হবু স্ত্রীর নাম মাইশা। ওই মাইশা নয়তো। যেটা ভাবলো ঠিক সেটাই। নীরার ফোনে দেখলো মাইশারই ছবি। সব রাগ গিয়ে পড়লো পিহুর উপর।
খেয়েদেয়ে সবাই তখন ঘুমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। ছিকুকে ঘুম পাড়িয়ে পিহু তখন মাত্রই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। চুল খুলে দিয়েছে। নরম রেশমী চুল গুলো দিয়ে সুগন্ধি বেরোচ্ছে শ্যাম্পুর। ঠান্ডা বাতাসে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। কোথা থেকে যেন মাহিদ হনহনিয়ে এল। যেন অনেক আগে থেকেই পিহুকেই খুঁজছিল সে। পিহুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। বাড়ির বাইরে দাঁড় করিয়ে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেওয়ার সময় বলল
‘ এই বাড়িতে এসেছিস কেন? মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য? ওয়েট।
বলেই মাহিদ কোথায় যেন চলে গেল। পিহু শান্ত, স্থির চোখে পাগলামি দেখছে। মাহিদ গিয়ে আবার এল। হাতে মিষ্টির প্যাকেট। পিহুর মুখের উপর ছুঁড়ে মারলো প্যাকেটটি। যদি ও সেটাতে সীমিত মিষ্টি ছিল। পিহু মুখ সরাতেই মিষ্টিগুলো নিচে পড়লো। মাহিদ গর্জে বলল
‘ দূর হ। একদম পা রাখবিনা আমার বাড়িতে। আমার বিয়ে হলে তোর কি? তোর এত খুশি কিসের? তোর এত নাচানাচি কিসের? আমার বিয়ের বয়স হয়ছে, বিয়ে আমি করবোই। সেখানে তোর এত বাড়াবাড়ি কিসের? তুই মেয়ের খোঁজ দিয়েছিস বলে? তুই না দিলে আমি তাকে খুঁজে পেতাম না। আরেহ আমার তাকে খুঁজতেই হতো না। আমি তোর আগেই তারে ঠিক করে রাখছি। তুই খোঁজ না দিলে ও আমি তাকেই বিয়ে করতাম। এবার যাহ। তুই খবরদার ভুলেও আমার সামনে আসবি না।
পিহু তখন ও শান্ত। শান্ত গলায় বলল
‘ আফসোস হচ্ছে আমার। ভীষণরকম আফসোস হচ্ছে তোমার বউয়ের জন্য। কারণ তুমি কখনোই তাকে তোমাকে দিতে পারবে না। কারণ কি জানো কারণ তুমি নিজের মধ্যেই নেই মাহিদ ভাই।
মাহিদ ধপ করে দরজা বন্ধ করলো ওর মুখের উপর। সোজা ঘরে চলে গেল। রাগে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে তার। ক্রিকেট ব্যাডটা টেবিলের উপর ছুঁড়ে মারলো। তারপর শুয়ে পড়লো।
রিপ বাড়ির দরজা খুলে দিল। পিহু তখনি নিজের সরূপ লুকোতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রিপের চোখ তার ভেজা গাল এড়ায়নি। কোমল গলায় বলল
‘ আসো মামা । রাত হয়েছে অনেক। ঘুমিয়ে পড়া দরকার।
পিহু নরম পায়ে হেঁটে ঢুকলো বাড়িতে।
চলবে,,,,,
রিচেক হয়নি