#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_২১
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
ছিকুর চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙলো পিহুর। ছিকু তার গায়ের উপর উঠে বসে গাড়ি চালাচ্ছে।
ভুউউ ফিপফিপ।
পিহু সোজা হয়ে শুতে পারলো না সেজন্য। বহুকষ্টে ছিকুকে তার পাশে ফেলল। তারপর বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
‘ কলিজা উঠে গেছেন?
ছিকু আপেলে কামড় দিতে দিতে বলল
‘ উতি গেছি কেন? পিহু এখুনো উতেনি কেন?
পিহু হাসলো। ছিকুর মাথায় টুপটাপ আদর দিয়ে বলল
‘ কি খাচ্ছেন?
‘ আপিল।
‘ আমাকে ও দেন।
ছিকু কামড় দিয়ে আপেল তার হাতে নিল। পিহুর দিকে বাড়িয়ে দিল। পিহু হেসে ফেলল। আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলল
‘ পঁচা কেন আব্বাটা। এভাবে কেউ কাউকে দেয়?
‘ মিহি ইমুন করে খিয়েছে কেন?
পিহু তার গালে ঠেসে চুমু খেয়ে বলল
‘ মিহি পঁচা তাই। পিহু তো পঁচা না। পিহু ভালো।
ছিকুর কষ্ট লাগলো। মিহিকে পিহু পঁচা বলেছে কেন?
‘ কেন মিহি পুঁচা কেন? পুঁচা বলো কেন?
পিহু তার চেহারার ভঙ্গিমা দেখে খিক করে হেসে ফেলল । কোলে নিয়ে গালটা চেপে দিয়ে আদর করে বলল
‘ ওরে বাবারে মিহিকে কেউ পুঁচা ও বলতে পারবে না। কি দরদ! কি দরদ!
ছিকু এখনো কপাল কুঁচকে আছে। পিহু কান ধরে বলল
‘ ওকে বাবা কান ধরলাম। আর ডাকব না পুঁচা।
ছিকুর কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেল । আপেলে কামড় বসিয়ে মাথা দুলিয়ে বলল,
‘ উম উম মুজা মুজা।
আবার ও হেসে ফেলল পিহু।
__________________
মাহিদের গায়ে জ্বর এসেছে। এখনো সকালের বিছানা ছাড়তে পারেনি সে। নীরা ডাকতে এসে দেখলো গা পুড়ে যাচ্ছে। হন্তদন্ত হয়ে রিপের কাছে গেল সে। বলল
‘ মাহির খুব জ্বর ব্যারিস্টার।
রিপ মাত্রই কোর্টে বেরোচ্ছিল। নীরার মুখ থেকে এমন কথা শুনে বলল
‘ কখন থেকে?
‘ কাল রাতে তো ঠিক ছিল।
রিপ ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিল নীরার হাতে। বলল
‘ তাড়াতাড়ি চেক করো।
নীরা থার্মোমিটার নিয়ে ছুটলো। রিপ তার পেছন পেছন গেল। নীরা মাহিদের কাছে গিয়ে থার্মোমিটার ঠোঁটের ভেতর দিল। বলল
‘ মাহি চোখ খোল। জ্বর এসেছে কাউকে বলবি না? আশ্চর্য! এভাবে শুয়ে থাকলে জ্বর কমবে?
মাহিদ চোখ খুললো একটু একটু করে। থার্মোমিটার নিয়ে ফেলে বলল
‘ ধুর কিছু হয়নাই বাপের বউ।
নীরা হেসে মিনমিন করে বলল
‘ তোর বাপ।
‘ কোথায়?
‘ ওটা কি।
মাহিদ চোখ ঘুরিয়ে রিপকে দেখে মুখে থার্মোমিটার দিল আবার। নীরা দেখলো জ্বর ১০২। রিপ বলল
‘ ডাক্তারকে ফোন করো। এসে দেখে যাক। আজ বাইরে যাওয়ার দরকার নেই আর।
বলেই রিপ চলে গেল। মাহিদ লাফ দিয়ে উঠে বসলো। বলল
‘ মা আজকে আমার খেলা আছে। ধুর বাপ বইসা থাকতে পারুম না ঘরের ভিতর। তোমার ব্যারিস্টারকে জামাইরে বুঝাও।
নীরা চিন্তিত গলায় বলল
‘ একদম বায়না ধরবি না মাহি। জ্বর থাকলে মাথা ঘুরায়। কোথাও যাবি না আজ। আমি ডক্টর ওয়াজিদকে ফোন করি। উনি এসে দেখে যাক। তোর আব্বা ঔষধ পাঠিয়ে দিবে।
মাহিদ আড়মোড়া ভেঙে উঠে ব্রাশ হাতে নিল। মুখ হাত ধুয়ে ফোন তুলে পিহুর ফোনে ফোন দিল। পিহু চমকালো তার ফোন পেয়ে। ফোন তুলে ছিকুকে ধরিয়ে দিল। ছিকু ফোন তুলে বলল
” হাই মিহি। হাউ আর ইউ। আ’ম ফাইন থেংকিউ।
মাহিদ হো হো করে হেসে দিল। পিহু ও হাসি চেপে ধরে রাখলো। এই ছেলেটা কি বলে এসব?
মাহিদ বলল
‘ শালা, আ’ম ফাইন কমু আমি। তুই শালারে এসব শিখাইছে কে বাপ? তোর অশিক্ষিত খালা? শালী তোরে ভালা কিছু শিখাইতে পারেনাই। ওরে ফোন দে বাপ।
‘ মিহি চকাল চকাল পুঁচা কথা বলে কেন?
‘ ফোন দিতে কইতাছি বাপ।
ছিকু ফোন দিল পিহুকে। পিহু ফিসফিস করে বলল
‘ তুমি বলো না। আমি বলব না।
‘ কেন? পিহু কথা বলবেনা কেন?
‘ ফোন দে। নইলে গিয়া ঠাস ঠাস চড় বসামু শালীরে।
পিহু ফোন নিল। কিছু বলার আগেই মাহিদ বলল
‘ ওই তুই এত ঢং দেখাস কিল্লাই? ফোন ধরোস না ক্যান? নাটক করোস? আমার জ্বর উঠছে তুই তাড়াতাড়ি আয়। বুঝছোস? কথা বলোস না ক্যান? তাড়াতাড়ি আয়। আয় আয়।
‘ কেন আসব আমি? তোমার বউকে বলো আসতে। আমি তোমার বউ নাকি? যাব না আমি। আমি অনেক বিজি।
পিহু ফোন কেটে দিল। মাহিদ ফোনটা বালিশের উপর ছুঁড়ে মারলো।
নীরা এসে বলল, কি হয়ছে?
‘ পিহুর বাচ্চিরে আসতে বলছি। শালী মুখের উপর বলে দিল আসবে না। হাতের কাছে পেলে মেরে ফেলব একদম।
নীরা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। বলল
‘ কি বললি? পিহু?
মাহিদ নীরার দিকে তাকালো। বলল
‘ কি? ধুর বাপ মাথা ব্যাথা করতাছে। আমি ঘুমাই।
নীরা তাকে শুতে দিল না। বলল
‘ এদিকে আয় খাইয়ে দিই। ডাক্তার এক্ষুণি এসে পড়বে।
‘ খামু না।
নীরা তাকে জোর করে খাইয়ে দিল। মুনা এসে বলল
‘ অসুখবিসুখ হলে তুই তো আর ও বাচ্চা হয়ে যাস মাহি। সেই তুই বিয়ে করবি?
‘ তো করুম না? বিয়ার সাথে অসুখ-বিসুখের কি সম্পর্ক?
নীরা বলল
‘ ধুর এই পাগলের সাথে কথা বলো না আপা। জ্বরের ঘোরে পাগলের প্রলাপ করতেছে। ইচ্ছা করে একদম ঠাস করে কয়েকটা দেই। রোদ খাইয়া খাইয়া জ্বর বাঁধাইছে বেয়াদব।
মাহিদ খেয়ে নীরার কোলেই ঘুমিয়ে পড়লো। পিহু ফোন দিল নীরার ফোনে।
‘ জ্বর কত মামি?
‘ ১০২।
‘ আচ্ছা রাখি।
পিহু ফোন কেটে দিল। এল আধঘন্টার ভেতরে। সাথে ছিকু। মাহিদের ঘরের সামনে এসে ছিকুকে কোল থেকে নামিয়ে দিল পিহু৷ ছিকু দৌড়ে ঢুকলো মাহিদের ঘরে৷ এক লাফে মাহিদের গায়ের উপর উঠে বসলো। মাহিদের মুখের দিকে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল
‘ মিহির অচুখ কেন? মিহির দুক্কু কেন? দুক্কু চলি যায় না কেন?
পিহু আসার সময় ঔষধ ও নিয়ে এসেছে। নীরাকে বলল, পাপা বলেছে এখন একটা এন্টিবায়োটিক খাওয়াতে। জ্বর পড়ে যাবে। আর জ্বর পড়ে গেলে জাস্ট এইস দিবে, এন্টিবায়োটিক আর না।
‘ আমি তো ডাক্তাররে আসতে বলেছি আম্মা।
‘ মানা করে দাও।
নীরা ফোন করে মানা করে দিল।
মাহিদ ছিকুকে দেখে বুকের উপর টেনে নিল। দুগালে চুমু দিয়ে বলল
‘ তুই শালারে আমি খুঁজতাছি বাপ। তোরে আদর করি আয়।
ছিকু আদর পেয়ে বলল
‘ কেন আদর করো কেন? মারোনা কেন?
‘ তোরে আদর করলে ও দোষ।
‘ কেন দুষ কেন?
‘ চুপ বেডা। মুখে মুখে কথা কস কিল্লাই বাপ?
ছিকু মাহিদের মুখ হাত দিয়ে ধরে বলল
‘ কেন মুখি মুখি কথা বুলবোনা কেন?
মাহিদ আর কিছু বলল না। পরক্ষণে লাফ দিয়ে উঠলো মাহিদ।
‘ শালা ছিকু তুই আইছোস কার লগে?
‘ পিহু আনিচে কেন?
‘ পিহু? এই ডাক্তারের বাচ্চি লুকায় আছোস ক্যান? এইদিকে আয়।
পিহু দাঁড়িয়ে থাকলো দরজার বাইরে। মাহিদ লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামলো। পিহু দৌড়ে চলে যাচ্ছিল। মাহিদ খপ করে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে এল। বলল
‘ জলপট্টি দে বাপ। সেবা কর। আমি তোর বড়ভাই। ভাইয়ের সেবা কর। ভালা জামাই পাবি।
‘ ভালা জামাই আমার আছে। ছাড়ো।
পিহুকে বিছানায় বসিয়ে কোলে মাথা রাখলো মাহিদ। বলল
‘ চুপ বেডি। জলপট্টি দে। কপাল ফাইট্টা যাইতেছে।
পিহু তার মাথা সরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। দ্রুত প্রস্থান করতেই ওড়নায় টান পড়লো তার। মাহিদ তার ওড়নার কোণা কপালে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে। পিহু হতাশ হলো। উফ সে কেন এই মায়া অগ্রাহ্য করতে পারেনা? চেয়ারে বসে কপালে জলপট্টি লাগালো পিহু। নীরা আসতে চাইলো৷ কি মনে করে আর এল না। দরজার কাছ থেকে ফিরে গেল।
জলপট্টি সরিয়ে পিহুর হাতটা কপালে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখলো মাহিদ। পিহু হাতটা সরিয়ে নিল। মাহিদ ঝট করে চোখে বিতৃষ্ণা নিয়ে চাইলো। অসহায় কন্ঠে বলল
‘ হাতটাই তো চাইলাম। নিলি ক্যান?
পিহু নিজের ভেতরে কিছু একটা চেপে আবার হাতটা কপালে রাখলো। ছিকুকে বলল
‘ মামার জন্য আপিল আর মালটা নিয়ে আসো নানুমণির কাছ থেকে। যাও।
ছিকু চলে গেল ভালো ছেলের মতো। পিহু মাহিদকে বলল
‘ আমাকে ডেকেছ কেন?
‘ সেবা করবি।
‘ আমার বিয়ে হয়ে গেলে তখন কি করবে?
পিহু উত্তর শোনার জন্য কান একটু নিচে নামিয়ে উদগ্রীব হয়ে বসে রইলো। মাহিদ কিছুক্ষণ পর বন্ধ চোখে বলল
‘ বিয়ে হয়ে গেলে কি হয়ছে? আমি তোকে ডাকতে পারুম না?
‘ নাহ। বিয়ে মানে বুঝো? আমি অনেক দূরে চলে যাব মাহিদ ভাই। তুমি ডাকলে ও আসতে পারব না।
‘ আমি যাইতে দিমুনা। আরেহ তোরে ছাড়া আমার চলে নাকি? যাইস না। যাহ তোরে আর মারুম না।
‘ কথাগুলো চোখ খুলে বলো।
মাহিদ আর জবাব দিল না। পিহু ডাকল
‘ ঘুমাচ্ছ কেন? কথা বলো। মাহিদ ভাই? আমি কিন্তু চলে যাচ্ছি।
মাহিদ কপালে রাখা হাতটা ভালোভাবে চেপে ধরলো। বিড়বিড় করে বলল
‘ নাহ। তোরে ছাড়া আমার চলবো না।
______
পিহু আর ছিকুকে যেতে দিল না নীরা। রিপ দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরলো। পিহুকে বলল, থেকে যাও মামা। পরে যেও।
আদি ফোন করলো তখনি।
‘ মাহির জ্বর কমেছে?
রিপ বলল
‘ খানিকটা।
‘ না কমলে আরেকটা এন্টিবায়োটিক দিতে বলসি রাতে। ইনশাআল্লাহ কমে যাবে। আর আমাকে আপডেট জানাস।
রিপ বলল
‘ ঠিক আছে। ইশুকে বলিস পিহু আর ছিকুভাই যাচ্ছেনা আজ।
‘ ওকে।
সারাটাদিন বিছানায় ছিল মাহিদ। নিনিত ও ফোন করেছে এরমধ্যে। নীরার কিছু ভালো লাগছেনা। তার দৌড়াদৌড়ি করা বাচ্চাটা বিছানায় পড়ে আছে। সন্ধ্যার দিকে মাথা তুলতে পারলো মাহিদ। জ্বর তখনো আছে। গা পুড়ে যাচ্ছে।
ছিকু এসে তার পাশে বসলো। বলল
‘ মিহির অচুখ চলি যায়নি কেন?
মাহিদ হাসলো। তাকে বসালো কোলের উপর। বলল
‘ তোর খালা কোথায়?
‘ খালা নাই কেন?
‘ কোথায়?
ছিকু হাত ঘুরিয়ে বলল
‘ নাই।
মাহিদের কোল থেকে নেমে গেল ছিকু। দরজার কাছে গিয়ে বলল
‘ পিহু মিহির সাথি লুকুলুকি খেলে কেন?
মাহিদ দাঁড়াতেই যাচ্ছিল। ছিকু খিকখিক করে হেসে একদৌড় দিল।
পিহু রান্নাঘরে। মুনা আর নীরার কাজ দেখছে। যেমন সে বাড়িতে ও ইশা,রাইনা আর পরীর কাজ দেখে। মুনা বলল
‘ রান্না পারো আম্মু?
‘ ভাত আর চা পারি মামি । ডিম উল্টাতে পারিনা। মাছ মাংস পারিনা।
মুনা হেসে ফেলল। ওসব করতে করতে শিখে ফেলবে। মেয়েরা পারেনা এমন কোনো কাজ নেই।
নীরা বলল
‘ মাহির জন্য একটু চা দেই। গরম গরম খেলে ভালো লাগবে। পিহুর হাতের চা খাই আজকে?
পিহু খুশি হয়ে বলল
‘ সত্যি? তাহলে বানাই। খাবে?
‘ ওমা খাব না কেন?
পিহু নিজের হাতে চা বানালো। নীরা টেস্ট করে বলল, দারুণ হয়েছে। যাও তোমার ছোট মামাকে দিয়ে এসো।
পিহু নিয়ে গেল। ঘরের সামনে গিয়ে বলল
‘ আসব মামা?
রিপ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
‘ হ্যা আসো আসো।
পিহু টেবিলে চা রাখলো। রিপ পেয়ালায় চুমুক দিয়ে পিহুর দিকে তাকালো।
‘ ডিফারেন্ট টেস্ট। তুমি করেছ?
পিহু হাসলো।
‘ বসো।
পিহু ল্যাপটপে চোখ রেখে বলল, কি কাজ করছিলে মামা?
ডকুমেন্টসগুলো দেখছিলাম। আর এই ফাইলের সাথে ম্যাচ করে কিনা দেখছিলাম।
পিহু বলল
‘ আমি দেখি।
‘ পারবে। ওগুলো তেমন জটিল কোনো কাজ না।
পিহু ডকুমেন্টসগুলো পড়তে পড়তে বলল
‘ তুমি কোর্টে কিভাবে রায় দাও মামা? দুই পক্ষের প্রত্যেকটা এভিডেন্সগুলো খুবই শক্ত।
‘ হ্যা। একপক্ষ তো অবশ্যই দোষী। আর আমরা চোখে যেটা দেখি সেটা সবসময় সত্যি হয় না। আর যেটা দেখিনা সেটাই সত্যি হয়। তবে আইন সবসময় প্রমাণের উপর ভিত্তি করে রায় দিতে বলে । তাই সেক্ষেত্রে আমার সন্দেহ হলেও কিছু করার থাকেনা। তবে আমার যাকে সন্দেহ হয় তার বিপরীত পক্ষকে সবার অগোচরে সাপোর্ট করি। যাতে সঠিক প্রমাণ খুঁজে পায়।
‘ ওহহহ। অনেক টাফ সাবজেক্ট।
‘ হুম। তোমার পড়াশোনার কি অবস্থা?
‘ চলছে। ফোর্থ ইয়ারের প্রিপারেশন শুরু করব।
রিপের কয়েকটা কাজ পিহুই করে দিল। কিছু নোট করার দরকার ছিল ওগুলো ও পিহু করে দিল। নীরা এসে বলল
‘ গল্পগুজব শেষ হলো মামা ভাগিনার?
রিপ বলল
‘ আজ তোমার বকা আমায় শুনতে হবে না।
পিহু লিখতে লিখতে বলল
‘ মামি তোমাকে বকে?
নীরা বলল
‘ একদম ফালতু কথা। আমি খুব ভালো।
পিহু হেসে উঠলো। বলল
‘ বড়মা আর বড়পাপাও সারাক্ষণ কথা কাটাকাটির তালে থাকে।
রিপ পিহুর লিখা দেখলো। নীরা বলল
‘ মাইশার সাথে এখনি কথা বলে আসছি। মাহির কথা জিজ্ঞেস করছিল। ওর জ্বর কমছে কিনা জিজ্ঞেস করছিলো।
রিপ পিহুর দিকে তাকালো। বলল
‘ মাইশা আসলে আমার কাজগুলো ও করে দিতে পারবে।
পিহু লিখা থামাতে গিয়েও থামালো না। লিখতেই লাগলো। রিপ বলল
‘ মামা তোমার হাত ব্যাথা করবে। বাকিগুলো আমি লিখব।
‘ আমি এর চাইতে ও বেশি লিখি মামা।
পিহুর গলায় তেজ। নীরা তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
‘ নিয়াজ সাহেব কপাল করে এমন একটা ছেলের বউ পাবে।
পিহু উঠে দাঁড়ালো। কলম রেখে যেতে যেতে বলল
‘ হয়েছে। আমার গুনগান কাউকে গাইতে হবে না আর। মাইশা বেশি ভালো।
পিহু বেরিয়ে যেতেই রিপ হেসে উঠলো। খাতার লিখাগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল
‘ মাইশা বেশি ভালো নীরা। তাই না?
নীরাও হেসে উঠলো।
হনহনিয়ে যেতে যেতে মাহিদের ঘরের কাছে গিয়ে থামলো পিহু। চোখে টলমল করছে জল। চোখ চেপে মুছলো সে। দেখলো মাহিদ ঘরে নেই।
পিহু বারান্দায় পা রাখতেই দেখলো মাহিদ বারান্দায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। নয়নতারার পাতাগুলো দুলছে গ্রিলের সাথে। মাহিদ তার উপস্থিতি টের পেয়ে পেছন ফিরলো। মজা করে বলল
‘ ভাবলাম তুই শ্বশুরবাড়ি পালিয়েছিস।
পিহু তেড়ে গিয়ে বুকে ধাক্কা দিল। মাহিদ এক পা ও নড়লো না। হাসলো বরঞ্চ। পিহু ফুঁপিয়ে উঠে বলল
‘ সবার মতো তুমিও মজার তালে থাকো। আমি কাউকে বলে বলে যাব না। এমন ভাবে যাব কেউ টেরও পাবেনা।
মাহিদ আবার ও হাসলো। পিহুকে টেনে মাথা বুকে রাখলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
‘ তোরে কোথাও যাইতে দিতাম না বাপ।
ছিকু এসে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। নাক ফুলিয়ে গাল ফুলিয়ে বলল
‘ কেন? মিহি পিহুকে জড়িয়ে ধচচে কেন? পিহু কাঁদে কেন?
চলবে,
সারপ্রাইজ পাঠক। রিচেক করব পরে।