মন_গোপনের_কথা #পর্ব_২২

0
319

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_২২
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

পিহু নিজেই ছেড়ে দিল মাহিদকে। ঠেলে দিয়ে গাল মুছে চলে গেল। মাহিদ গলা কাত করে ছিকুর দিক তাকালো। ছিকু তখনও কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বড্ড রেগে আছে সে। এতটাই রেগে আছে যে মাহিদকে সুযোগ পেলে কামড় বসিয়ে দেবে। মাহিদ হেলেদুলে তার সামনে এগিয়ে গেল। পেটে আঙুল দিয়ে গুঁতো মেরে বলল

‘ শালা! তোরে খবর দেয় কেডা? তোর খালারে আমি ছুঁতে পারিনা তুই কোথা থেকে বকবক পকপক করার জন্য চইলা আসোস। তোর সমস্যা কি?

হাতের মুঠোয় থাকা আপেলের গায়ে এক কামড় বসিয়ে আবার কোমরে হাত রাখলো ছিকু। আপেল চিবোতে চিবোতে বলল

‘ কেন? মিহি পেটে গুঁতু মারে কেন?

মাহিদ আবার ও গুঁতো মারলো। বলল

‘ শালা ভিলেন। তুই থাকা অবস্থায় পেরেম টেরেম করা যাইতো না বাপ। তুই একটা বড় ঝুঁকিপূর্ণ বেডামানুষ।

‘ কেন ছিকু বিডামানুষ কেন?

বলেই আপেল চিবোতে লাগলো ছিকু। মাহিদ তার আপেল কেড়ে নিল। পিঠে ধপাস করে চড় বসিয়ে আপেলে কামড় দিয়ে বলল

‘ তুই এখন যাহ তো বাপ। আমি আপেল খাইতাছি। আমার জ্বর উঠছে। ভালা লাগতাছে না। যাহ। তোর খালা আমারে ধাক্কা মাইরা চলে গেল। সুস্থ হই, শালীরে দেইখা নিমু। ভাব দেখায় আমার লগে।

ছিকু মেঝেতে বসে পড়লো পা ছিটিয়ে। পা নাচিয়ে চেঁচিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল

‘ ছিকুর আপিল নিয়ে ফিলছ কেন? মিহি রাক্ষুচী কেন? আপিল দেয় না কেন?

মুনা দৌড়ে এল। সে এমনিতেই ছিকুকে খুঁজছিল। হাতে আপেল দেওয়ার সাথে দৌড়ে যে এদিকে চলে এল মুনা দেখলই না। তবে কান্নার আওয়াজ পেয়ে ছুটে এসে মেঝেতে তাকে গড়াগড়ি খেতে দেখে ভারী অবাক হলো সে। রিক, রিপ,নীরা ও এল। রিক ছিকুকে কোলে তুলে নিল। বলল

‘ কি হয়েছে ভাই? কে মেরেছে?

ছিকু হাত পা নাচাচ্ছে তখনো। রিকের কোল থেকে পড়ে যাওয়ার অবস্থা। মুনা এসে নিয়ে ফেলল কোল থেকে। পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল

‘ কি হয়েছে নানু?

‘ মিহি আপিল, আপিল খায় ফিলছে।

মাহিদ তখন নির্বিকার ভঙ্গিতে আপেল চিবোচ্ছে। সবাই হতাশ হয়ে তাকালো তার দিকে। রিপ চলে গেল হেঁটে। এই ছেলেটা কি কখনো বড় হবে না?
মুনা বলল

‘ তোর না জ্বর বাঁদড়? তারপরও ওর পিছু লেগে আছিস? কি সমস্যা তোর? কয়েকটা দেব?

‘ তোমার নাতি মহা বজ্জাত।

ছিকু মুনার কাঁধ থেকে মাথা তুললো। মাহিদের দিকে লাল চোখে তাকালো। মাহিদ ভড়কে গেল। সর্বনাশ ছিকুশালা যদি যা দেখলো তা বলে দেয়? তখন?
মাহিদ ছিকুকে কোলে নিয়ে ফেলল দ্রুত। আপেলটা ধরিয়ে দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে দ্রুত তার ঘরে নিয়ে গেল। ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল। সবাই হতবাক। মুনা বলল
‘ নীরু এই ছেলে কি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছে নাকি রে? জ্বর মানুষকে এরকম বানিয়ে ফেলে?
নীরা ও কিছু বুঝলো না। দরজা ধাক্কালে মাহিদ ভেতর থেকে বলল

‘ আমি ঘুমাইতাছি বাপ। ছিকু শালা ও ঘুমাইতাছে।

নীরা আর মুনা কেউ ডিস্টার্ব করলো না। মুনা যাওয়ার আগে বলল

‘ এখন ঘুম পাড়াস না মাহি। ভাত খাওয়াতে পারব না। দেরী করে ঘুমালে ভালো হবে। নইলে কাউকে ঘুমাতে দেবে না রাতে।

মাহিদ তখন ছিকুকে পেটের উপর বসিয়েছে। ছিকুর কান্না মাত্রই থামলো। বাকি আপেলটা খেতে খেতে বলল

‘ মিহি পুঁচা। ক্যাট। ডগ। মাংকি।

মাহিদ হাসলো। ছিকুর মাথা টেনে এনে চুমু খেল কপালে। গালের দুপাশে টাপুসটাপুস আদর বসিয়ে বলল

‘ তুই শালারে আদর পায়। কিন্তু তুই শালা আদর খাইতে জানোস না বাপ। বেয়াদবি করোস আমার লগে।

ছিকু তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকালো। বলল

‘ কেন? ছিকু বিদ্দবি করে কেন?

মাহিদ তার পিঠে জোরে চাপড় বসালো। তার পাশে ধপাস করে ফেলে এক হাত দিয়ে টেনে বুকের সাথে লাগালো। পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে বলল

‘ শালা পরীর বাচ্চা ছিকু! তোর কথা শুইনা আমার তো বহুত দুক্কু লাগতেছে। বহুত কষ্ট লাগতেছে। মইরা যাইতে ইচ্ছা করতাছে।

ছিকু তার দিকে চোখ তুলে চাইলো। ছোট হাতটা দিয়ে মাহিদকে জড়িয়ে ধরে বুকে ছোট্ট পাখির ছানার মতো গুঁজে গিয়ে বলল

‘ মিহি মরি যাবে কেন? ছিকুর দুক্কু লাগে কেন? কান্না পায় কেন?

মাহিদ হো হো করে হেসে উঠলো।

_____________

পরীর কিছু ভালো লাগছেনা। ছিকু আজ বাড়িতে নেই। বাড়িটা ফাঁকা হয়ে গেছে। রেহান পা টেনে খাটে বসে বই পড়ছে । পরী গিয়ে তার পাশে বসলো। বলল

‘ আমার ভালো লাগছেনা।

রেহান বইয়ে মনোযোগ রেখে বলল

‘ ফোন দাও।

‘ ও নাকি মাহির কাছে। মাহি দরজা খুলছেনা।

‘ অপেক্ষা করো।

পরী তার বই কেড়ে নিল। বলল

‘ এসব বই টই বাদ। ভালো লাগেনা।

রেহান হেসে ফেলল। বলল

‘ তো রাহিকে যেতে দিলে কেন?

‘ ও তো বায়না করছিল পিহুর সাথে নাকি যাবে। কান্না করছিল। যেতে না দিল মা আবার রাগ করে বসবে।

রেহান তাকে টেনে এনে বুকে রাখলো। চুলে বিলি কেটে ঠোঁট ছুঁয়ালো চুলে। বলল

‘ কাল আমি গিয়ে নিয়ে আসব।

খাবার টেবিলে খেতে বসেছে সবাই। মাহিদের পাশে ছিকু। ছিকু নিজ হাতে খাচ্ছে। মুনা খাইয়ে দেবে বলছিল কিন্তু সে কারো কথা শুনছেনা। নিজের হাতে নাকি খাবে। যতগুলো না খাচ্ছে ততগুলো ফেলছে। গালের আশপাশে লাগিয়ে ফেলছে। পিহু চুপচাপ তার কান্ড দেখছে।
তখনি চৌধুরী বাড়ি থেকে ফোন এল। পরী ফোন করেছে। মুনা ফোন ছিকুর বাম হাতে ধরিয়ে দিল। ডান হাত ধুঁয়ে মুছে দিল। ছিকু দু হাতে ফোন ধরে বলল

‘ হাউআর ইউ পরী । আম ফাইন টেংকিউ।

পরী হেসে উঠলো। বলল

‘ কেমন আছে আমার মানিক? ভাত খেয়েছেন?

ছিকু রেগে বলল

‘ পরী ভাতু খিতে দেয় না কেন? ফুন দিচে কেন?

মুনা বলল

‘ ওমা এভাবে কেউ বলে? আম্মার মন পুড়ছিল তো।

ছিকুর গলার আওয়াজ শীতল হয়ে গেল।

‘ পরী আম্মা কেন? আম্মাল মন পুড়ে কেন?

পরী বলল

‘ আচ্ছা আপনি এখন ভাত খান। ভাত খাওয়া শেষে আম্মাকে ফোন দেবেন। ঠিক আছে?

‘ ঠিক আছে কেন?

মুনা ফোন নিয়ে কথা বলতে বলতে অন্যদিকে চলে গেল। পিহুর খাওয়া শেষ। ছিকুর প্লেটের ভাত গুছিয়ে নিয়ে ছিকুকে খাইয়ে দিতে দিতে বলল

‘ ডিম দেই?

ছিকু মাথা নাড়লো।

‘ শুধু ঝোল দিয়ে ভাত খায় মানুষ? পাজি ছেলে।

ছিকু ঠোঁট টানছে। ঠোঁট উল্টাচ্ছে। পিহু হেসে ফেলল। রিপ বলল

‘ জড়িয়ে ধরো। আদর করে দাও একটু। কাঁদিওনা ভাইয়া। পিহুকে মারব।

ছিকু ঠোঁট টেনে বলল

‘ পিহু বুকা দিচে কেন? বেরিচতার পিহুকে মারবে কেন?

মাহিদ আর না পেরে বলল

‘ শালা খাইলে খা নইলে তোর বাড়ি চইলা যা। তোরে ভাত খাওয়াইতে এত ঢং করতে হয় আমার জানা ছিল না। শালা পরীর বাচ্চা। তোর মা ও বিয়ার আগে সবাইরে পাগল বানাইয়া ছাড়তো খাওয়ার টেবিলে। খাইলে আমার মতো খাবি। আমারে যা দেই তাই খাই।

পিহু রিপের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসলো। মাহিদ পিহুর চোখ অনুসরণ করে রিপের দিকে তাকাতেই ভড়কে গেল। মাথা একদম নিচু করে খেতে লাগলো। তার প্লেটের একপাশে জমিয়ে রাখা পেঁয়াজ মরিচগুলো দেখিয়ে দিয়ে রিপ বলল

‘ এগুলো যাতে আজ ফেলে দিতে না হয়। যখন সব খাস এগুলো ও খাবি না কেন?

পিহুর সাথে সাথে রিক ও নিঃশব্দে হাসলো। মাহিদ রিপের দিকে অসহায় চোখে তাকালো। তারপর তাকালো পেঁয়াজ মরিচ আর তেজপাতার দিকে। এগুলো মাইনষ্যে খায় নাকি? ইয়াকক। ছিকু শালার জন্য সে মহা ঝামেলায় পড়ে গেল। শালা ছিকুরে যদি সে আজ হাতের কাছে পায়?

পিহু ঘুম পাড়াতে নিয়ে গেল ছিকুকে। ছিকু ঘুমালো না। পরীর জন্য কাঁদতে লাগলো। পিহু যেটা ভেবেছে সেটাই। চোখে ঘুম আসলে মাকে খুঁজবেই। শেষমেশ পরীর ফোনে ফোন দিল পিহু। ভিডিও কলে পরীকে দেখে নিচের ঠোঁটটা উল্টে ফেলল ছিকু। পিহু সেটা দেখে বুকের সাথে চেপে ধরে বলল

‘ কাল আম্মার কাছে চলে যাব তো। আমার ভালো ছেলে। সোনা ছেলে। ভালো ছেলেরা কাঁদে না তো।

ছিকু ঠোঁট টানতে টানতে বলল

‘ আম্মার কাছি যাবু কেন? পাপার কাছি যাবু কেন?

‘ কেন যাবেন সেটা আমি জানিনা। আমি শুধু জানি এখন কোথাও যেতে পারবেন না। এখন ঘুমান।

একবার পিহুর বুকের উপর, আরেকবার পেটের উপর শুয়ে থাকলো ছিকু। তার ঘুম আসছেনা। পিহু শেষমেশ কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে ঘুম পাড়ালো। মুনা থাকলো পিহু আর ছিকুর সাথে। ছেলেটা কখন না জানি কান্না করে।

____________

মাহিদের জ্বর কমে এসেছে। তবে মাথা ব্যাথা করছে ভীষণ। মাথা তুলতে পারছেনা। তারপরও বহুকষ্ট করে আজ খেলতে গেল। সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছে সে। নীরা তাকে বেরোতে দেবেনা সেটা সে জানে। তাই নীরাকে না জানিয়ে বের হয়ে গিয়েছে। নীরা তাকে না দেখে চেঁচামেচি শুরু করলো। রিপ বলল, ও ছোটটি নেই নীরা। নিজের ভালোমন্দ নিজে না বুঝলে আমাদের কি করার আছে? আমরা কতক্ষণ ওর ভালোমন্দ বাছবিচার করে দেব? যা ইচ্ছে তাই করুক। কতদূর যেতে পারে আমি ও দেখি।
নীরা কপালে হাত দিয়ে বসে থাকলো। পিহু তখন ছিকুকে নিয়ে চলে এসেছে। ছিকু কোল থেকে নেমে নীরার পাশে গিয়ে সোফায় বসলো। নীরার মুখ দেখার চেষ্টা করলো গলা উঁচিয়ে। তারপর প্রশ্ন করলো

‘ বেরিচতারের বুউ কাঁদে কেন? চবাই মারিচে কেন?

নীরা মাথা তুললো। ছিকুকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বলল

‘ তোমার মামা কামডা কি ঠিক করছে বাবুসোনা?

‘ ভালু করেনি কেন?

রিপ আর পিহু হাসলো। মুনা বলল

‘ মিহি আসলে কানটা মলে দিয়োতো নানুভাই। মিহি ভীষণ পাজি হয়েছে?

‘ কেন মিহিকে দুক্কু দেব কেন?

সবাই আরেকদফা হাসলো।
রেহান এল দশটার দিকে। মুনা আর নীরা তাড়াহুড়োয় পড়ে গেল। অনেকদিন পর মেয়েজামাই এসেছে বাড়িতে। আয়োজনের ত্রুটি রাখলো না তারা। ছিকু তখন রেহানের বুকের সাথে লেপ্টে আছে। এখন আর কাউকে চায় না তার। পিহু গিয়ে রেহানের পাশের সোফায় বসলো। বলল

‘ তোমার ছেলে রাতে পা দিয়ে ধুমধাম মারে দাভাই। আমাকে কাল এমন মারা মেরেছে। পঁচা ছেলে।

রেহান হেসে বলল

‘ ভালোই তো। তুমি তো ওর আরেকটা মা । খাওয়া দরকার।

ছিকু পিহুর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে মুখ মোঁচড়ালো। পিহু কপাল কুঁচকে তাকাতেই ছিকু খিক করে হেসে রেহানের বুকে মুখ লুকোলো। পিহু তার হাতে পায়ে চিমটি দেওয়ার সুযোগ খুঁজতে লাগলো। ছিকু লুকোতে লাগলো। রেহান তাকে লুকিয়ে ফেলতে ফেলতে বলল

‘ আর না আর না। দুক্কু পাবে ছিকু।

‘ তো আমাকে মুখ ভাঙালো কেন? বাপকে পেয়ে এখন বড়লোক হয়ে গেছে?

ছিকু আবার মুখ মোঁচড়ে আবার ও খিক করে হেসে মুখ লুকিয়ে ফেলল।

______________

বারোটা বেজে গেছে। খেলা ও শেষ। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পেপসি খাচ্ছে মাহিদ আর তার বন্ধুরা। ম্যাচে জিতে মাস্তির শেষ নেই তাদের। একের পর এক পেপসি শেষ করার একমুহূর্তে ফোন হাতে টুসটাস ফোন টিপে কাকে যেন ফোন দিল মাহিদ। ওপাশে ফোন তোলা হলো মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে এল। মাহিদ পেপসি খেতে খেতে বলল

‘ আপনি নীল রঙের ড্রেস পড়েছেন?

‘ ইয়েস।

‘ বাম পাশের রাস্তায় তাকান।

‘ কেন?

মাইশা ফিরে তাকালো। মাহিদকে দেখে হাত নাড়ালো। রাস্তা পার হয়ে এসে বলল

‘ আপনার না জ্বর? কি খাচ্ছেন এসব?

‘ গরম লাগছে। জ্বর ভ্যানিশ। কি অবস্থা?

‘ এইতো আছি। বাড়ির সবার কি অবস্থা?

‘ ভালো। নিন পেপসি খান।

মাহিদ বাড়িয়ে দিল একটি।

‘ না না।

‘ নিন।

মাহিদের জোরাজোরিতে নিল মাইশা। হঠাৎ একটি মেয়ে কোথাথেকে যেন ছুটে এল। মাথার চুলগুলো কাঁধের খানিকটা নিচ অব্দি। কূর্তি পড়া। পুতুলের মতো গোলগাল চেহারা। ডাগরডোগর চোখ। মাহিদ বিড়বিড়িয়ে বলল

‘ এইডা আবার কোথাকার জীব?

‘ হাই অল।

মাইশা ফিরে তাকালো। মাহিদ এক চুমুক খেয়ে বলল

‘ আমরা সবাই টিচার বাপ। সো কল মি স্যার। শুধু আমাকে না সবাইকে।

মেয়েটি বোকাসোকা চেহারায় তাকালো। বলল

‘ স্যার প্লিজ হেল্প মি। একচুয়ালি আমি,,

মাহিদ ব্যাট হাতে নিয়ে বলল

‘ সোজাসাপটা কও। নইলে ব্যাট দিয়ে মেরে হসপিটাল পাঠাই দিমু।

মেয়েটি ভড়কে গেল। মাইশা হেসে ফেলল। মেয়েটি বলল

‘ হসপিটাল? ওয়াও আমি তো হসপিটালই খুঁজছি। ইয়েস হসপিটালটা কোনদিকে?

মাহিদ হাঁফ ছাড়লো। বলল

‘ কোন দেশী?

‘ আমি তো কানাডা থেকে এসেছি। হসপিটালটা চিনিনা।

মাইশা বলল

‘ ওহ তাই তো তোমাকে ওরকম মনে হচ্ছে। ওদিকে যাও, দু মিনিটের পথ। হেঁটেই চলে যেতে পারবে। নইলে রিকশা নাও।

মেয়েটি বলল

‘ ওকে ম্যাম থ্যাংকস। আমি আসি?

মাইশা মাথা দুলালো। মেয়েটি কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে আসলো। বলল

‘ হাই মিস জুলিয়েট আমি জালিশা। আপনার রোমিও কিন্তু পুরোই ঝাক্কাস। টা টা মিঃ রোমিও।

বলেই দৌড় দিল জালিশা।
মাইশা আর মাহিদ হতভম্ব। মাহিদ ব্যাট হাতে নিয়ে বলল

‘ শালার জালফাল আমারে কি ডাইকা গেল?

মাইশা ব্যাটটা নিয়ে ফেলে বলল

‘ আপনি ওর সাথে মজা করছিলেন তাই ও ও মজা করে গেল। যাই বলুন সো সুইট গার্ল।

মাহিদ তপুকে বলল

‘ তোদের লাগলে পিছু লাগ বাপ। মাইয়্যা তো পারাম সুন্দরী।

‘ সামনে সুন্দরী বউ রেখে আরেকজনের উপর নজর দিস শালা। লজ্জা হওয়া উচিত।

বলেই হাসলো তারা সবাই। মাহিদ মাইশার দিকে তাকালো। মাইশা উশখুশ করে উঠলো। বলল

‘ মিঃ মাহিদ আমি আসি এখন। পরে কথা হবে। বাই।

মাহিদ মাথা দুলালো। মাইশা চলে গেল।

মাহিদ ঘরে ফিরে এল। দেখলো ছিকু খালি পায়ে সোফার উপর হাঁটছে। হেঁটে হেঁটে আবার রেহানের কোলে এসে বসছে। মাহিদ বাড়িতে ঢুকে পড়লো। দেখলো বিরাট কারবার। মজার রান্নার ম ম গন্ধে ভাসছে বাড়িটা। আহা আইজ জামাই আদর হইবে। মাহিদ ও উরুধুরা খাবে।

মাহিদ ঘরে চলে গেল। গোসল নিয়ে বের হতেই পিহুর সাথে দেখা হয়ে গেল। পিহুর হাতে ভেজা চুল মুছা গামছা। সে ও মাত্রই গোসল করেছে। নিচে যাচ্ছিল। মাহিদ কপাল কুঁচকে চাইলো। মাথার চুল ঝাড়া মারলো পিহুর মুখে। পিহু চোখ বন্ধ করে বলল

‘ বেয়াদব।

‘ কি বললি?

পিহু দু পা পিছিয়ে গেল। মাহিদ এগোতে এগোতে বলল

‘ কি বলছোস বাপ? জোরে বল।

পিহু দ্রুত পেছোতে বলল

‘ মাহিদ ভাই আমি এখন চিৎকার করব।

মাহিদ তাকে ঝট করে ধরে দেয়ালে চেপে ধরে বলল

‘ কাঁদ। নইলে আজ তোর খবর আছে।

পিহু চোখ খিঁচে বন্ধ করে বলল

‘ তুমি দিনদিন অসভ্য হচ্ছ মাহিদ ভাই। মাইশা জানে?

‘ তুই গিয়া বইলা আয়। সাথে নিনিইত্যারে ও বলবি।

‘ কি বলব?

ভীত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো পিহু। হেসে উঠলো মাহিদ। একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল

‘ বলবি তুই আমারে অসভ্য বানায় ফেলছোস। এখন তোরে ছাড়া আমার গতি নাই মতিবানু।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here