মন_গোপনের_কথা #পর্ব_২৫

0
320

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_২৫
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

পিহু কোনো কথা বলছেনা দেখে মাহিদ ফোনটা কেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু পিহু ঘুমোতে পারলো না। সকাল হওয়া অব্দি তার কানটা শুধু জ্বালাপোড়া করেছে। ফোনটা না তুললে এরকম বেয়াদব মার্কা একটা কথা তাকে শুনতে হতো না। ছিঃ ছিঃ মাহিদ ভাই এত বেয়াদব তার জানা ছিল না। পিহু ব্রাশ করতে আনমনা হলো। ছিকু এসে তার কোলের উপর উঠে বসলো। ব্রাশ এগিয়ে দিয়ে বলল

‘ পিহু বিরাশ করি দেয় না কেন?

পিহু বলল

‘ উফ আপনি আর কখন ব্রাশ করা শিখবেন?

‘ চিখবো না কেন?

পিহু তাকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ব্রাশ করিয়ে দিল ছোট্ট ব্রাশটা দিয়ে। বলল

‘ এর পরের বার থেকে মার চলবে।

ছিকু ফুঁপিয়ে উঠে বলল

‘ পিহু বুকা দিচে কেন?

পিহু হেসে উঠে বুকে জড়িয়ে ধরলো তাকে।

____________

ইশা ছাদ থেকে নিয়ে আসা কাপড়গুলো ভাঁজ করছে।
বিছানা উপর সব কাপড় ভাঁজ করে রাখতে রাখতে আদিকে বলল

‘ ও তো চাপা স্বভাবের। কাউকে কিছু বলতে চায় না। আমাকে ও বলতে চায় না। লজ্জা পাচ্ছে হয়ত। আপনাকে একেবারেই বলবে না। এক কাজ করুন, পরীকে জিজ্ঞেস করতে বলুন। পরীকে তো বলবে।

‘ পরী?

‘ হুম।

‘ এখন তো পিহু বাড়িতে নেই। এখন বলি পরীকে?

‘ বলুন।

আদি পরীর ঘরের দিকে পা বাড়ালো। পরী ওয়াশরুমে। ছিকুকে গোসল করাচ্ছে। ছিকু নিজে নিজে আগ বাড়িয়ে পরীকে তার কাপড়গুলো ধুঁয়ে দিচ্ছে। পরী তাকে অনেক বার বারণ করেছে। সাবান লাগাতে পারছেনা ভালো করে। ছিকু বিরক্ত হলো। পরীর দিকে রেগে তাকিয়ে বলল

‘ পুরী কাপড় ধুঁতি দেয় না কেন?

পরীর হাতের ঠাস ঠাস চড় বসে গেল ছিকুর উদাম পিঠের উপর। ফর্সা পিঠে চড়ের লাল ছোপ বসে গেল। জ্বলে উঠতেই ছিকু চেঁচিয়ে ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিল। পরী বলল

‘ একদম চুপ। সোজা হয়ে দাঁড়াও। সাবান মেখে দিই। নড়াচড়া করলে আর ও কয়েকটা দেব। আমার কাজ করে উল্টায় দিচ্ছে একদম।

ছিকু চেঁচাতে চেঁচাতে কাঁদতে লাগলো। পরী বালতি থেকে মগ কেটে ছিকুর মাথার উপর পানি দিতে লাগলো। ছিকু লাফাতে লাপাতে কাঁদলো। পরী তাকে কোলে তুলে নিয়ে এল। গা মুছিয়ে দিতে দিতে বলল

‘ কান্না বন্ধ। নইলে আর ও কয়েকটা পড়বে।

তখনি আদি এল। আদিকে দেখে ছিকু আর ও জোরে কেঁদে উঠলো। আদি বলল

‘ কি হয়েছে ভাই? আসো আসো। কেন মেরেছ পরী?

‘ দুষ্টুমি করছিল আব্বা। আমাকে পুরো ভিজিয়ে দিল। আমি না গোসল নিয়েছি৷ কতক্ষণ ধরে ডাকছি গোসল করতে, আসছেই না। আর যখন এল আমাকে নাকি কাপড় ধুঁয়ে দিচ্ছে।

আদি বলল

‘ এভাবে মারতে হয়? তোমার বড়মা নামাজ পড়ছে। এখন আসবে।

‘ আসুক। বেশি আদরে আদরে বাঁদড় বানাচ্ছে সবাই।

আদি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল

‘ আসো ভাইয়া।

ছিকু এল না। বরঞ্চ লুকিয়ে গেল পরীর পেছনে। তার গায়ে কাপড়চোপড় নেই। ঠোঁট উল্টে উল্টে কাঁদতে লাগলো সে। আদি তার লুকোনোর কারণ পেয়ে হেসে দিল। এগিয়ে গিয়ে পরীর পেছন থেকে কোলে তুলে নিল। তার ড্রব থেকে গেঞ্জি আর প্যান্ট নিয়ে বলল

‘ আমরা ইশুর কাছে যাই।

ছিকু কাঁদতেই থাকলো। মুখ লাল হয়ে গেল। আদি যাওয়ার সময় পরীকে বলল

‘ কাজ শেষ হলো একবার এদিকে এসো মা। কথা আছে।

‘ ঠিক আছে আব্বা।

ইশার কাছে যেতেই ছিকু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ইশা বলল

‘ ওমা! এই অবস্থা কেন সোনা? কে মেরেছে?

আদুরে কথা শুনে ছিকুর নিচের ঠোঁট উল্টে এল। ঠোঁট বেঁকিয়ে ভ্যাঁ করে জোরে কেঁদে উঠে বলল

‘ পুরী মিরেচে কেন?

আদি তার গালের জল মুছে দিয়ে আদর দিয়ে ইশার কাছে দিয়ে ফেলল। ইশা শাড়ির আঁচল তুলে তার গাল মুছে দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল

‘ পরীকে খুব মারবো সোনা। আর কেঁদোনা। চকলেট দেব।

ইশা কাপড় পড়াতে নেবে তখনি রাইনা এল। ছিকুর পিঠ দেখে বলল

‘ তোর মেয়ের কান্ড দেখেছিস ছোট? পিঠ তো লাল হয়ে গেল। আল্লাহ!
ও দুষ্টুমি এখন করবে না তো কখন করবে? তাই বলে এভাবে মারতে হয়? ছোটবেলায় ও করেনি দুষ্টুমি? মহা বজ্জাত ছিল একটা। কেউ কিছু বললেই মাথা ঠুকাতে থাকতো। আর সে এখন করছে শাসন। ছোট থাকতে সবাই এমন করে। সহ্য করতে পারলে থাকতে বল, নইলে চলে যেতে বল তোর মেয়েকে৷

আদি বলল

‘ আরেহ আস্তে বলো না আপা। শুনলে রেগে যাবে।

‘ রেগে যাক তোর মেয়ে। ও আমার নাতি। আমার ছেলের মানিক। আমার জ্বলে না?

ছিকুর দুগালে আদর দিতে দিতে নিয়ে চলে গেল রাইনা৷ বলল

‘ তোমাকে বলছিনা দাদুর সাথে গোসল করে নিতে। নাওনি কেন? এখন তো মাইর খেলে।

ছিকু ঠোঁট উল্টে উল্টে আর ও কাঁদতে লাগলো৷ আফি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল

‘ আমার ভাই ওভাবে কান্দে ক্যা? বাড়ির মানুষগুলা কি হাওয়া হইয়া গেছে?

রাইনা ছিকুকে নিয়ে হনহনিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে বলল

‘ আসছে দরদ দেখাতে। এতক্ষণ লন্ডনে ছিল। আমার ভাইটাকে এভাবে মারতেছে কেউ দেখেনি।

আফি ছিকুর দিকে তাকালো। আহারে ভাইটার চোখমুখ ফুলে গেছে। রাইনা কোলে বসিয়ে কাপড় পড়িয়ে দিল ছিকুকে। নিজ হাতে ভাত খাওয়ালো। তারপর কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ালো বহুকষ্টে। পরী এসে খোঁজ নিতেই রাইনা ধমকে বলল

‘ কেউ নাই এখানে।

পরী বলল

‘ ঘুমিয়ে গেছে?

‘ জানিনা। যাহ তোর খোঁজ নেওয়ার দরকার নাই।

পরী থমথমে মুখে সরে যেতে যাচ্ছিল। রেহান তখনি মাত্রই বাড়ি ফিরেছে। পরীর মুখ থমথমে দেখতেই প্রশ্ন করলো

‘ কি হয়েছে মা?

‘ তোর বউকে জিজ্ঞেস কর। মেরে পিঠ লাল করে ফেলেছে আমার নাতির।

পরী ফুঁপিয়ে উঠে চলে গেল।
রেহান মায়ের ঘরে ঢুকে ছিকুকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলো। মুখটা ফুলে আছে। আর ও বেশি আদুরে লাগছে। কপালে, গালে কয়েকবার চুমু খেল রেহান। রাইনাকে বলল
‘ কেনসাহেব আজকে মার খেল তাহলে। পরীর কপালে হেব্বি দুঃখ আছে আজ।
রাইনা বলল
‘ হয়ছে। আমাকে আর শোনাস না কোনোকিছু।

রুম থেকে বের হয়ে গেল রাইনা। রেহান ছিকুর মাথায় আর ও একটি চুমু খেয়ে কোলে তুলে নিয়ে চলে এল তার ঘরে। পরীকে বলল, নিয়ে এসেছি পরী।
পরী দৌড়ে এল। ছিকুকে কোলে নিয়ে বুকে জড়ালো শক্ত করে। কপালে গালে গভীর চুমু দিয়ে বলল
‘ খুব রাগ আমার উপর। রাগ ভাঙাতে হবে ঘুম থেকে উঠলে।
রেহান বলল
‘ একদম। মেরেছ কেন আমার ছেলেকে?

_______________

পিহু ঘুমিয়েছে মেডিক্যাল থেকে ফিরে। আর কিছুক্ষণ পর মাগরিবের আজান পড়বে। তাই পরী তাকে ডেকে দিল। পিহু উঠলো না। পরী তার পাশে শুয়ে সুড়সুড়ি দিল পিহুর কানের ভেতর। পিহু নড়েচড়ে বলল

‘ ঘুমাচ্ছি দিদিয়া।

পরী বলল

‘ দেখে আসো কে এসেছে।

পিহু চোখ খুললো। তবে মাথা তুললো না। বলল

‘ কে?

‘ নিনিত।

লাফ দিয়ে উঠে বসলো পিহু। বলল

‘ কখন? কেন?

পরী হেসে ফেলল। বলল

‘ মজা করছিলাম। আসলে খুশি হতে?

পিহু আবার ও ধপাস করে শুয়ে বলল

‘ কেন মজা করো দিদিয়া?

পরী হেসে পিহুর নাক টেনে দিল। বলল

‘ তোমার বিয়ে খুব শীঘ্রই। নিনিতের মা ফোন করে বলেছে।

পিহু অবাক গলায় বলল

‘ কিন্তু পাপা যে বলল দেরী আছে। আমাকে সময় দেবে। কেন এত তাড়াহুড়ো?

‘ যত তাড়াতাড়ি শুভ কাজ সেড়ে ফেলা যায় ততই মঙ্গল।

পিহুর থমথমে চেহারা খেয়াল করলো পরী।

‘ তোমার নিনিতকে তো পছন্দ। নিনিতের ও তোমাকে পছন্দ। তাহলে সমস্যা কোথায়?

‘ স্যার সত্যি ওরকম বলেছে।

পরী আমতাআমতা করতে করতে বলল

‘ অপছন্দ তো নয়। নইলে ওর ফ্যামিলিকে সাপোর্ট তো করতো না। তারমানে কি দাঁড়ায়? হুহ হুহ?

পিহু খাট থেকে নেমে আদির কাছে ছুটলো। পরী ও তার পিছুপিছু ছুটলো। দেখলো বিছানার উপরে খেলছে ছিকু। আশেপাশে তাকে ঘিরে সবাই বসে আছে। পরী ছিকুর দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে ফেলল। রাইনা তাকে দেখে চলে গেল।
পিহু আদিকে খুঁজতে বসার ঘরের দিকে চলে গেল। পরী গিয়ে বসলো ছিকুর পেছনে। কানে চুমু খেয়ে বলল
‘ মানিক রাগ করেছে?
ছিকু পরীর দিকে ফিরে চাইলো। আবার খেলতে লাগলো। ইশা ঠোঁট চেপে হেসে বলল

‘ কি রাগ?

পরী তার গালে চুমু দিতেই ছিকু বিছানায় লুটিয়ে পড়লো। বালিশে মুখ লুকিয়ে রাখলো। পরী হেসে ফেলল। শার্ট উল্টে তুলতুলে পিঠটাতে অসংখ্য আদর দিল। তারপর তার কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো বুকের সাথে। ছিকু ঠোঁট উল্টাতে লাগলো। পরী তার গালে, কপালে চুমু দিতে দিতে বলল

‘ আর মারব না আমার সোনামানিককে। আর কান্না নয়।

মায়ের বুকের উম পেয়ে বুকের সাথে লেপ্টে থাকলো ছিকু বেড়াল ছানার মতো। ইশা বলল

‘ দেখেছ মায়ের উপর রাগ কিংবা অভিমান কোনোটা বেশিক্ষণ থাকেনা। মা মা-ই হয়।

আদিকে খুঁজে পেল না পিহু। আদি ফিরলো রাতে। পিহু বলতে গিয়ে আর কিছু বলল না। তবে ভীষণ রেগে থাকলো আদির উপর।

____________

আদি চেম্বারে বসে রয়েছে। নিনিত সেক্রেটারিকে বলল

‘ স্যার ফ্রি আছে?

‘ হ্যা স্যার।

নিনিত ভেতরে ঢুকে পড়লো। আদি তাকে দেখে বলল

‘ বসো। দেরী হলো কেন?

নিনিত চেয়ার টেনে বসে বলল

‘ মা ফোন করেছিল একটু তাই। কেন ডেকেছেন স্যার? কোনো জরুরি কিছু?

আদি নড়েচড়ে বসলো। হেসে বলল

‘ নার্ভাস ফিল করার কোনো দরকার নেই। একটা ছোট্ট প্রশ্ন করার জন্য তোমায় ডেকেছি। সোজাসাপটা বলে ফেলি।

নিনিতকে অসহায় দেখালো। স্যার কি জিজ্ঞেস করবে তাকে?

আদি তার দিকে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিল। হেসে বলল

‘ পানি খাও।

নিনিত পানি খেল।

আদি বলল,

‘তুমি আমার ছেলের মতো নিনিত । তুমি এমনিতেই জানো যে আমার সব স্টুডেন্ট থেকে তুমি আমার সবচাইতে পছন্দের একটা স্টুডেন্ট। আমার সাথে অন্যরকম একটা সম্পর্ক আছে তোমার। যদি ও আর ও একটা সম্পর্কে জড়াতে যাচ্ছি আমরা। তোমার কি মনে হয় তোমার ঠিক কোন গুনটা দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার মেয়েকে তোমার কাছে দেব?

নিনিত ভ্যাবাছ্যাঁকা খেয়ে বলল

‘ আ’ম নট সিউর স্যার। বন্ধুমহলে সবাই আমাকে বেকুব, গাঁধা বলে ডাকে। আমার কোনো ভালো গুণ আমার সত্যি জানা নেই। তবে এটা বলতে পারি যে আমি একজন বেস্ট টিচারের বেস্ট স্টুডেন্ট হতে পেরেছি।

আদি হেসে বলল

‘ তুমি খুব সহজ সরল একটা ছেলে নিনিত৷ আর এই সহজ সরল ছেলেটাকে কেউ একজন খুব ভালোবাসে।

‘ কে?

নিনিতের কৌতূহলী প্রশ্ন। আদি হেসে উঠলো।বলল

‘ বাহ আগ্রহ তো আছে।

নিনিত লজ্জা পেয়ে গেল। আদি বলল

‘ ইটস ওকে৷ এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে? যেটা বলছিলাম তুমি পিহুকে পছন্দ করো?

নিনিত হা করে তাকালো। আদি বলল

‘ আসলে আমি প্রস্তাবটা দেওয়ার সাথে সাথে তোমার মা বাবার কাছ থেকে পজিটিভ ফিডব্যাক পাব এটা কখনো ভাবিনি। পিহুকে যে তারা ও পছন্দ করে রেখেছে সেটা জানতাম না আমি। ওনারা যখন রাজী আছেন তখন আমি তোমাদের দুজনকে জুড়ে দিতে চেয়েছি কিন্তু তোমাদের দুজনের মত নিইনি। তার ও কারণ ছিল৷ কারণ তোমাদের একে অপরকে অপছন্দ করার কোনো কারণ আমি দেখিনি৷ তারপর ও আজ জিজ্ঞেস করছি। তোমার যদি অন্য কাউকে ভালোলেগে থাকে, কিংবা অন্য কাউকে পছন্দ, তাহলে আমাকে বলতে পারো উইথআউট হেজিটেশন।

‘ আপনার হঠাৎ এরকম কেন মনে হলো স্যার, যে আমার অন্য কোথাও পছন্দ থাকতে পারে।

‘ মনে হতেই পারে নিনিত। আমার তোমাদের দুজনেরই মতামত নেওয়ার দরকার আছে। যদি ও এই কাজটা আর ও অনেক আগেই দরকার ছিল।

‘ আমার অন্য কোথাও পছন্দ নেই স্যার। আমি জানি আপনি কিংবা আমার মা বাবা আমার জন্য অলওয়েজ বেস্টটা চুজ করবেন।

‘ পরিবারের কথা বলছিনা। তোমার কথা বলছি। যদি ও প্রশ্নটা কেমন হয়ে যায় তারপরও ও বলছি, পিহুর জায়গায় অন্য কাউকে কিভাবে দেখবে তুমি? যদি সে তোমাকে, তোমার সবকিছুকে ভালোবাসে।

নিনিতের চেহারার রঙ পাল্টে গেল।

‘ আমি বিশ্বাস করিনা এমন কেউ আছে। থাকলে ও তা দুদিনের। ভালোবাসা জিনিসটা হুট করে হয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার নয় স্যার। আরিশা আমাকে যতটুকু চেনে, অন্য কেউ আমাকে ততটুকু চিনবেনা।

‘ আমরা আসলেই যা দেখি তার বাইরে ও কিছু থাকে নিনিত। তুমি এখন যা দেখছ তার বাইরে ও কিছু আছে। তোমার পিহুকে ভালোলাগে। পিহুর তোমাকে। আর এই ভালোলাগা ব্যাপারটা দারুণ সুন্দর। তবে ভালোলাগার বাইরে ও যদি তোমাকে কেউ অন্যচোখে দেখে সেটার নামই ভালোবাসা। ভালোবাসা শব্দটা ভীষণ জটিল। তেমন ভয়ংকর সুন্দর।
তোমাকে কেউ পাগলের মতো করে ভালোবাসে কথাটা শুনলে তোমার ভেতরে নিশ্চয়ই খুশি কাজ করবে। খুশির পাশাপাশি আর ও একটি জিনিস কাজ করে সেটা হচ্ছে এড়িয়ে যেতে পারার মতো একটা প্রবণতা। কারণ আমরা যখন জানতে পারি যে আমাকে কেউ ভালোবাসে তখন আমরা খুব বেশি উপরে উঠে যাই। না চাইতে পেয়ে যাওয়া জিনিসটাকে আমরা মূল্যায়ন করিনা। কিন্তু ভালোবাসা পা দিয়ে ঠেলে দেওয়ার মতো জিনিস নয় নিনিত। এটি সম্মানের। এটি পবিত্র। তোমাকে সত্যি কেউ একজন খুব বেশি ভালোবাসে। তোমার থাকে মূল্যায়ন করা উচিত। তুমি কি বুঝতে পারছ আমি কার কথা বলছি?

নিনিত ভীষণ বিস্ময় নিয়ে বলল
‘ স্যার আমি সত্যি কিছু বুঝতে পারছিনা। আপনি কার কথা বলছেন?

আদি ও খানিকটা বিস্ময় হলো। নিনিত জানেনা জালিশার কথা? মেয়েটা এত চটপটে অথচ মনের কথা চেপে রেখেছে? কি অদ্ভুত!

আদি বলল না জালিশার কথা। শুধু বলল

‘ সেটা তোমাকে বুঝে নিতে হবে নিনিত। এতটা অবুঝ হলে তো চলে না। নিজের জিনিস নিজেকেই বুঝে নিতে হয়। আমরা তাদের কাছেই ভালো থাকি যারা আমাদের ভালোবাসে। নইলে একটা সময় গিয়ে ঠিক আফসোস হবে। কিন্তু তখন আর কিছু করার থাকে না। তাই সময় থাকতে নিজের মানুষকে নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়, বুঝে নিতে হয়। আর তোমার পরিবার ও সেটায় চায়। ওরা চাই তুমি ভালো থাকো। সে যার সাথেই হোক না কেন। তাদের পছন্দের মানুষের সাথে তুমি ভালো থাকবে এটা কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে না নিনিত।

নিনিতকে ভাবিয়ে তুললো বিষয়টা। স্যার এসব কি বলছে? যেতে যেতে সে আবারও পিছু ফিরলো। বলল

‘ আপনি তাকে চেনেন স্যার?

আদি হাসতে হাসতে বলল

‘ চিনি চিনি।

‘ কে সে?

‘ বলতে পারি এক শর্তে৷ তুমি তাকে কিছু বলতে পারবেনা।

‘ কিচ্ছু বলব না। প্রমিজ।

‘ সত্যি!

‘ তিন সত্যি।

আদি কাগজে কিছু একটা লিখে বাড়িয়ে দিল নিনিতের দিকে। বলল, ঔষধ টা বাড়িতে গিয়ে খাবেন। এখন না, এখানে না।

নিনিত হেসে উঠলো। যাওয়ার আগে আবার পিছু ফিরে বলল

‘ ঔষধটা তার আগে খেয়ে ফেললে কি কোনো প্রবলেম হবে স্যার?

আদি হেসে উঠলো উচ্চস্বরে।

__________

মাহিদ বিছানায় শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছে ফোনে। নীরা দুধের গ্লাস এনে ধপাস করে টেবিলে। বলল

‘ তুই কি শুরু করছিস মাহি? সারাদিন মাঠে থাকিস৷ তোর কি পরীক্ষাটা দিতে হবে না? বিয়েশাদি করবি না তুই?

‘ করুম। বউ ঠিক আছে। এত চিন্তা কিসের লাগি করো বাপের বউ?

নীরা ফোঁসফোঁস করে বলল

‘ মাইশা তোরে বিয়া করবোনা বলছে। আমার পিহুর মতো বউ চাই।

মাহিদ ফোন রেখে হা করে তাকালো নীরার দিকে। নীরা বলল

‘ দুধটা খা। সুবুদ্ধি হোক। মাঝেমাঝে তাপড়াইতে মন চায় তোরে গাঁধা।

নীরা হনহনিয়ে চলে গেল। মাহিদ দুধের গ্লাস হাতে নিল। দুধটা নাড়তে লাগলো তারপর এক চুমুক খেল৷ আরেক চুমুক খেতেখেতে কল দিল পিহুকে৷ পিহু বই খুঁজে পাচ্ছে না তার। মাথা খারাপ। এদিকে ফোন তোলার সাথে সাথে মাহিদ বলল

‘ ওই শালী তুই দুই নম্বরি কাজ কিল্লাই করছোস বাপ? তোর বাপ আর তোরে কি আমি সাধে দুই নম্বরী বলি?

পিহু বলল

‘ ফোন রাখছি। আমি বই খুঁজে পাচ্ছি না।

পিহু ফোন বিছানায় রেখে দিল। টেবিলে এসে বই খুঁজতে লাগলো তন্নতন্ন করে। ফোনটা বাজতেই লাগলো। পিহু ফোন তুলবে না। তার নতুন বইটা কোথায় চলে গেল?

ইশা তার রুমে ঢুকে ফোনটা তুললো। রিংটোন বন্ধ হতেই পিহু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। ততক্ষণে মাহিদ বলল

‘ ও বাপরে বাপ। শালী ডাক্তারের বাচ্চি তুই এত ভাব দেখাস কিল্লাই বাপ?
মেরিমা কইছে তোর মতো বউ লইয়্যা আসতে। আমি তোরে আর বিশ্বাস করিনা। তোর উপর বিশ্বাস করা যাইতো না বাপ। তুই দুই নম্বর জিনিস ঢুকায় দিতাছোস। এখন তোর মতো কাউরে আমার চাই না। আমার এহন তোরে চাই। ব্যস। তুই তোর বাপোরে কহ তার আদরের ঝি’রে আমি কিডন্যাপ করুম বাপ। রাখতাছি এহন। আমি কিডন্যাপ করার যন্ত্রপাতি যোগাড় করি।

ইশা ততক্ষণে কান থেকে ফোন সরিয়ে নিয়েছে। পিহু এসে ফোনটা নিয়ে বলল

‘ মাহিদ ভাই মজা করেতেছে। সবসময় করে।

বলেই অপ্রস্তুত হাসলো পিহু। মাহিদ ভাই কি উল্টাপাল্টা কিছু বলছে নাকি?

ইশা চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে গেল।

চলবে
রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here