#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_২৯,৩০
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
২৯
পিহু আর পরী আদির সাথে একটু কেনাকাটায় বেরিয়েছে। সাথে ছিকু তো আছেই। ছিকুর জন্য ও কিছু কেনাকাটা দরকার। রান্নাঘরের জন্য দরকারি জিনিসপত্র। আর মাসের বাজার।
পরী আর পিহুর আঙুল ধরে মাঝখানে হাঁটছে ছিকু। বকবক করছে। কেউ তার কথার উত্তর দিচ্ছে না। কতক্ষণ বকবক করবে? ছিকু ভীষণ রেগে গেল। দুজনের আঙুল ছেড়ে দিয়ে কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে গেল। পরী বলল
‘ কি হয়েছে?
‘ কিউ ছিকুর সাথি কথা বুলে না কেন?
আদি হেসে ফেলল। বলল
‘ আচ্ছা আমার সাথে আসেন। আমি কথা বলি।
আদি তাকে কোলে তুলে নিল। পরী বলল
‘ আব্বা কোল থেকে নামিয়ে দাও। হাঁটুক কিছুক্ষণ।
‘ কেন পরী ছিকুকে নামি দিতে বলে কেন?
পরী বলল
‘ একদম চুপ।
ছিকু ঠোঁটের উপর আঙুল রাখলো।
পরী পিহুকে বলল
‘ পাপা বাজারটা সেড়ে নিক। আমরা অন্যদিকে যাই?
পিহু সায় দিল।
‘ কিন্তু ছিকু?
‘ ও আমার সাথে সাথে থাকবে।
আদির কোল থেকে ছিকুকে নিয়ে ফেলল পিহু। তারপর অন্য দোকানে ঢুকে পড়লো। আদি বাজার করে নিতে চলে গেল। পিহু আর পরী ছিকুর জন্য জুতো আর পাতলা গেঞ্জি কিনলো কয়েকটা। ছিকু ভারী কাপড় পড়তে চায় না। খালি গায়ে ও থাকতে চায় না। তার আবার বিশিবিশি নজ্জা করে।
পরী পিহু কিছু দোকানে কেনাকাটা সাড়তেই ছিকু একটি ছোট্ট বেবি ডলের কাছে ছুটে গেল। হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বলল
‘ তুমি ছিকুকে দিখো কেন? কথা বলোনা কেন?
পিহু আর পরী চেয়ে থাকলো তার দিকে। ছিকু বকবক করতেই লাগলো। পিহু ডাক দিল
‘ কলিজা ওটা তো ডল।
‘ কেন ডল কেন?
পিহু তার কাছে গিয়ে বলল
‘ এটা মানুষ নয় তাই এটা ডল।
‘ কেন মানুষ নয় কেন?
মাহিদ এসে দাঁড়ালো পরীর পাশে। হাতে জুসের বোতল, বিস্কিট আর চিপসের প্যাকেট। পরী বলল
‘ এসেছিস? আমি তো ভাবলাম তুই আসবি না।
ছিকু মাহিদকে দেখে লাফ দিয়ে উঠলো। নেচেনেচে বলল
‘ ওহ ওহ মিহি আসিচে কেন? ছিকুর খুচি লাগে কেন?
মাহিদ তার গাল টেনে দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে আদর করে বলল
‘ শালা তোরে বহুত মিস করছি বাপ। বুকে আয়। বুকে আয়।
ছিকুর মুখ থেকে হাসি সরছেনা৷ পিহু অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আছে অনেক্ক্ষণ। পরী বলল
‘ পিহু চলো।
পিহু বলল
‘ আমি বাসায় ফিরে যাই যেগুলো কিনেছি সেগুলো নিয়ে।
‘ কেন? তুমি তো নিজের জন্য কিছু কেনোনি এখনো।
‘ আমি পরে নেব। চলে যাই?
পরী কিছু বলল না। পিহু কেনা জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেল। মাহিদ তার যাওয়ার পথে তাকিয়েই রইলো। তারপর কেনাকাটা শেষে পরীদের সাথে করে চলে গেল। ছিকু তাকে ছাড়ছেনা। মিহির সাথে তার খেলতে মন চায় কেন?
মাহিদকে দেখে ইশা খুশি হলো। বলল
‘ তুই কেমনে এলিরে মাহি? কত আসতে বলি তোকে। আসিস না।
মাহিদ সোফায় গা এলিয়ে আসলো। ছিকুকে পাশে বসিয়ে বলল
‘ সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হইতাছে তোমার এই নাতি আমারে শেষ কইরা ফালাইছে বাপ। কোল থেকে নামলো না শালা।
ইশা হেসে বলল
‘ এমন করে বলছিস কেন? তোকে কত দেখতে পারে আমার ভাই৷
ছিকু বলে উঠলো। মিহি ছিকুকে ছালা ডাকে কেন?
সবাই হেসে উঠলো। মাহিদ তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল
‘ তোরে একশবার শালা ডাকুম বাপ।
‘ কেন ডাকবে কেন? কেন বাপ কেন?
মাহিদ এসেছে শুনে ঘর থেকে ও বের হলো না একবার পিহু। রাতে খাবার টেবিলে যাও দেখাদেখি হলো পিহু তাড়াতাড়ি খেয়ে চলে গেল।
ঘুমাতে যাওয়ার সময় আজব কান্ড ঘটলো। পিহুকে নিশিতা ফোন দিচ্ছেনা অনেকদিন। হঠাৎ করে ফোন এল। পিহু ফোন রিসিভ করার জন্য বাইরে বের হলো। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয়। শুধু পরীর ঘরে লাইট জ্বলছে। ছিকু বোধহয় এখনো ঘুমোয়নি। পিহু রুমের বাইরে পা রাখলো। সাথেসাথে কে যেন মুখ চেপে ধরে সামান্য আবছা আলোকিত জায়গায় নিয়ে দাঁড় করালো পিহুকে৷ পিহু হতভম্ব।
মাহিদ হাত নামাতেই পিহু শুধু রেগে চেয়ে থাকলো। কোনো কথা বললো না। মাহিদ বলল
‘ শালী দেখা দেস না কিল্লাই বাপ?
পিহু কথা বলল না৷ মাহিদ কতকিছু বলল। পিহু গললো না। মাহিদ কান এক হাতে ধরলো। পিহু কপাল কুঁচকে তাকালো। মাহিদ বলল
‘ মাফ কর বাপ। তোর লগে আর মশকরা করতাম না।
‘ কেন আমার রাগ ভাঙাতে এসেছ? আমি রাগলেই বা তোমার কি? আমি কে তোমার?
কথাগুলো গর্জে বলল পিহু। তারপর চলে যেতে চাইলে মাহিদ তার পথ আটকালো। পিহুকে তার পড়নের শার্টের পকেট দেখিয়ে দিয়ে বলল
‘ তুই এই বুক পকেটের মানুষ বাপ।
চলবে,
#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৩০
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
এসব কথায় আমি গলছিনা। পথ ছাড়ো। যাব।
মাহিদ পথ ছাড়লো না। রেগে তাকিয়ে থাকলো। ফোঁসফোঁস করে শ্বাস ছাড়ছে। পিহু আঁড়চোখে তাকালো। বলল
‘ স,,রো। কি আশ্চর্য!
‘ সরুম না। তুই যা করার কর বেডি।
পিহু দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করে উঠে বলল
‘ বেয়াদব মানুষ। সারাক্ষণ গালি লেগে থাকে মুখে।
তারপর আঙুল তুললো পিহু। মাহিদের মুখের সামনে আঙুল নেড়েনেড়ে বলল
‘ শোনো ওই মাইশা মেয়েটা বোকা তাই তোমাকে বিয়ে করছে। কোনো চালাকচতুর মেয়ে তোমাকে এটলিস্ট বিয়ে করবে না। একে তো ভাইবা পরীক্ষায় ফেল মারছো, দুই সারাক্ষণ গালাগালি করো। কিন্তু আমার এখন বড্ড আফসোস হচ্ছে মাইশার জন্য।
‘ চুপ থাক শালী।। আমার নিনিইত্যার জন্য দুঃখ লাগতাছে। তোর মতো আহাম্মক তার বউ হইতাছে সেইটা ভেবে। বেচারা সুন্দর সান্দর পোয়া, তোর মতো কালা বেডিরে বিয়া করতাছে। তুই সেইজন্য চাঁদ হাতে পাইছোস পাইছোস ভাব লস আমার লগে।
পিহুর নাক কাঁপতে লাগলো তরতরিয়ে। মাহিদ বলল
‘ এক ঘুষি মাইরা নাক ফাটায় দিয়ুম বাপ। নাক ফুলাইতাছোস কিল্লাই?
পিহু তাকে জোরে ঠেলে দিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লো। ধপ করে দরজা বন্ধ করে দিল।
মাহিদ বলল
‘ ধলা রে ধলা বলতে পারলে কালা রে কালা বলতে পারুম না ক্যান? তোরে কি এহন ধলা বলতে হইবো বাপ। ঢং করোস৷ শালী তোর ঢং দেখার জন্য কি আমি বইসা আছি?
মাহিদ ও হনহনিয়ে চলে গেল।
_______
সকালে ঘুম ভাঙতেই মাহিদ নিজের পিঠের উপর ভার কিছুর আভাস পেল। ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ফেলছে। নড়তে পারলো না সে। ধীরেধীরে পিঠের উপর থেকে ভার জিনিসটা সরাতেই ধপাস করে পড়ে গেল সেটা । মাহিদ তার পাশে দেখলো একটি মানুষের বাচ্চা। ঘুমাচ্ছে। কিন্তু তারমধ্যে ও কপাল কুঁচকানো। পরী এসে বলল
‘ ভাই তুই উঠেছিস? ঘুম থেকে উঠেই তোর ঘরে চলে এল। তোর কাছে নাকি ঘুমাবে।
‘ হ বাপ ভালা কাজ করছে তোমার পোলা। শালা আমার পিঠের উপর ঘুমায় গেল? শালা তার বাপের কেনা বালিশ পাইছে?
পরী হেসে বলল
‘ ওভাবে বলছিস কেন? আমার বাচ্চা তোকে কত দেখতে পারে জানিস?
ছিকু নড়েচড়ে উঠলো। চোখ বন্ধ রেখে ওপাশ ফিরে ঘুমাতে ঘুমাতে বলল
‘ বুলে দো ইয়ামপুওওচি,,বোওওল৷
মাহিদ বলল
‘ শালা কি বলল?
পরী হেসে বলল
‘ ওই মটু পাতলু দেখে না? ওখানে যে পুলিশটা আছে ওটা নাকি এগুলা বলে।
মাহিদ ছিকুর পাশে ধপাস করে শুয়ে পড়লো। টেনে তার পেটের উপর শুয়ে দিয়ে পিঠ চাপড়ে চাপড়ে বলল
‘ শালা তুই চিংগাম শালার ফ্যান? শালা আর হাঁদারাম পেলিনা। ওই মটু উঠ বাপ।
ছিকু মিউমিউ করে বলল
‘ কেন? ছিকুকে মটু ডাকো কেন?
হেসে ফেলল মাহিদ। দুহাতে জড়িয়ে আদর করলো। তার পাশে ফেলে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ বাপের বইনের বাচ্চি শালা ছিকুর মা তুমি তোমার কাজে যাও বাপ। তোমারে আর লাগতো না। আমরা ঘুমাইতাছি।
পরী বলল
‘ আচ্ছা কিছুক্ষণ পর উঠে যাস কেমন?
‘ ধুরর বাপ।
পরী হেসে চলে গেল। ছিকু ছোট্ট নাক দিয়ে ফুঁসফুঁস করে শ্বাস ছেড়ে ছেড়ে ঘুমাচ্ছে। মাহিদ তার নাকের উপর আলতো কামড় বসিয়ে বলল
‘ শ্লা তোরে আমার কাছে ঘুমাইতে হইবো ক্যান বাপ?
ছিকু তার বুকে আর ও গুঁজে গেল। মাহিদ নড়েচড়ে বলল
‘ শালারে শালা আমার সুড়সুড়ি লাগতাছে বাপ। তুই শালা এত নরম কিল্লাই?
________
ব্রেকফাস্ট শেষ করে মাহিদ আফির পাশে বসে গল্পগুজব করছিল। পিহু এসে এদিকওদিক তাকালো। সে ছিকুকে খুঁজছে। আফি বলল
‘ কি খুঁজতাছো আম্মা?
‘ ছিকু কোথায়? একবার ও পড়তে বসেনি কেন এখনো? খেয়ে কোথায় চলে গেল?
ছিকু সোফার পেছন থেকে বলে উঠলো
‘ কেন? ছিকু নাই কেন? ছিকুর পড়তে মন চায় না কেন?
মাহিদ হা হু করে হেসে বলল
‘ একদম ভালা কাজ। আমি ভাইবা পরীক্ষায় ফেল মারছি, ছিকুশালা মেট্রিকে ফেল মারবো, ইন্টারে ফেল মারবো। পদে পদে ফেল মারবো শালা।
পিহু গটগট পায়ে হেঁটে ছিকুর কাছে এগিয়ে গেল। ছিকু তাকে আসতে দেখে দৌড়ে মাহির কোলের উপর উঠলো। গলা ধরিয়ে ঝাপটে ধরে জড়িয়ে ধরলো। মাহিদের বুকে মুখ লুকিয়ে বলল
‘ ও বাপ পিহু ডগ কেন? ভয় পাচি কেন?
মাহিদ দুহাত দিয়ে তার পিঠ ঢেকে বলল
‘ তোরে কে নিয়া যায় দেখি?
পিহু আর দাঁড়ালো না। ফোঁসফোঁস করতে করতে চলে গেল৷
______
পরী মাহিদকে বলল, ভাই আজ রাতে আমি বিরিয়ানি রান্না করব। তুই আজকে থেকে যাহ। বড় পাপাকে বলেছি সব বাজার করে নিয়ে আসতে। শুধু আজ থাক ভাই। প্লিজ!
তোর রেহান ভাইয়ার কাছ থেকে কাপড়চোপড় পড়িস।
মাহিদ বলল
‘ হ, কাল কইবা, মাহি আমি গরু রানতাছি তুই যাস না ভাই। আমারে বোকা পাইছো বাপ? থাকুম না।
ইশা বলল
‘ এমন করছিস কেন? আমি রিপদাকে ফোন করে বলে দিয়েছি। যাস না মাহি। থাক না। ছিকু ও কত খুশি তোকে পেয়ে।
ছিকু বলল
‘ মিহি পুঁচা কেন? ছিকুকে ফেলে চলি যায় কেন?
কোমরে দুহাত রেখে কপাল কুঁচকে কথাটুকু বলল ছিকু। মাহিদ দাঁত চেপে বলল
‘ শালা তুই সর। তোর লগে কে কথা কয়৷? তুই ক্যান ফটরফটর করোস বাপ? দূর হ। ফুট শ্লা।
ছিকুর দুক্কু লাগলো। নিচের ঠোঁট উল্টে কান্নামাখা গলায় বলল
‘ মিহি বিশিবিশি বুকা দেয় কেন? দুক্কু লাগে কেন?
ইশা হেসে ফেলল। ছিকুকে কোলে নিয়ে আদর করে বলল
‘ মিহিকে দুমদাম মারবো।
তখনি ইশার ফোন এল। ২৮২৮২ নাম্বার থেকে। ইশা কেটে দিয়ে ফোন কানে দিয়ে ছিকুকে কোলসমতে হেঁটে হেঁটে কথা বলতে লাগলো। একপর্যায়ে বলল
‘ হ্যা আপা সবাই ভালো আছে। নিনিতরা সবাই ভালো আছে?
তারপর ওপাশে কি বলছে তা তো শোনা যাচ্ছে না। ইশা কিছুক্ষণ পর আবার বলল
‘ হ্যা হ্যা আমি ওর আব্বাকে বলেছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তত তাড়াতাড়ি বিয়ের তারিখ ফেলে দিতে। সমস্যা নেই আগামী মাসেই তারিখ ফেলতে বলব।
পরী ভুরু কুঁচকে ইশার দিকে চেয়ে রয়েছে। মাহিদ ফোন টিপছে। ইশা ফোন রাখার সাথে সাথে ছিকু বলল
‘ ইশুবুনু ফুনে কথা বলে কেন?
ইশা তার গালে আদর বসিয়ে বলল
‘ পিহুর বিয়ে তো। বিয়ে খাবেন না?
‘ কেন? পিহুর বিয়ে কেন? বিয়ে খায় কেন?
ইশা হেসে ফেলল। পরী বলল
‘ ওটা নিকিতা আন্টি ছিল আম্মা?
‘ হ্যা।
ইশা ছিকুকে মাহিদের কাছে নিয়ে গেল। মাহিদের কোলে বসিয়ে দিয়ে বলল
‘ মাহি পিহুর বিয়ের এক সপ্তাহ আগেই কিন্তু তুই চলে আসবি। ঠিক আছে? তুই না ওর মাহিদ ভাই। বুঝেছিস?
মাহিদ ফোন থেকে মাথা তুললো। ছিকুকে পাশে বসিয়ে বলল
‘ হ বুঝছি। এক সপ্তাহ ক্যা এক মাস আগে আইসা বইসা থাকুম। শালীরে তাড়াতাড়ি তাড়ামু।
ইশা কপাল কুঁচকে বলল
‘ এভাবে কেউ বলে? পিহু শুনলে এখন,,,,
‘ শালী হুনলে কি করবো? প্যা পু কইরা কান্দা ছাড়া শালী কিছু পারে? শালী।
ইশা বলল
‘ ঠিক আছে। নিনিতের বউ হোক তারপর ডাকিস শালী।
মাহিদ হো হো করে হেসে উঠে বলল
‘ বল্টুর বউ শালী। একশবার বলুম।
ইশা কেমন করে তাকিয়ে চলে গেল। ছিকু মাহিদের কোলের উপর উঠে এল। দাঁড়িয়ে মাহিদের মুখোমুখি হলো। মাহিদের দু গালে দুহাত রেখে প্রশ্ন করলো
‘ মিহি পিহুকে ছালী বুলে কেন?
মাহিদ নাক দিয়ে ছিকুর নাকে দুম করে মেরে সোফায় ফেলে গালে চেপে চুমু খেয়ে বলল
‘ চুপ থাক শালা। তুই শালার কেন কেন শুইনা কচু গাছে ফাঁস খাইতে মন চাই বাপ।
ছিকু পড়ে থাকা অবস্থায় বলল
‘ মিহি বিশিবিশি আদর করে কেন? মারে কেন?
মাহিদ তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল
‘ তুই মুটু তাই তোরে আদর লাগে বাপ।
___________
নিজ হাতে বিরিয়ানি রান্না করছে পরী। পিহু তার ঘরে পড়ছে। ছিকু আজ মাহিদকে পেয়ে বড়লোক। পিহুর ধারেকাছেও নেই। মাহিদের সাথে দৌড়াদৌড়ি খেলছে। রাইনা তাদের দুজনকে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখে বলল
‘ এই ছেলেটা নাকি কয়দিন পর বিয়ে করবে। এখনো বাচ্চামো স্বভাব যায়নি। কি করছিস মাহি ও পড়ে যাবে তো।
মাহিদ ছিকুকে ধরলো। দুজনেই হাঁপিয়ে উঠেছে ইতোমধ্যে। মাহিদ ছিকুকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ শালারে আইজ কিমা বানামু। তারপর গপাগপ খাইয়া ফালামু।
ছিকু কান্নামুখর চেহারায় বলল
‘ ও বাপ মিহি ছিকুকে খিয়ে ফিলবে কেন? ছিকু ভয় পাচে কেন?
পিহুর রুমে গিয়ে বিছানায় ছিকুকে ছুঁড়ে মারলো মাহিদ। ছিকু ফোমে গেঁথে গিয়ে আরাম পেল। খিকখিক করে হেসে বলল
‘ মিহি আবার।
পিহু ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো। দাঁড়িয়ে পড়লো।
‘ আমার ঘরে কি? আমি পড়ছি। সবাই বের হও।
‘ চুপ বেডি। তুই বিয়া পাস করবি, এত কিসের পড়া তোর বাপ? যাহ সর। ফুট।
পিহু রাগান্বিত চেহারায় চাইলো। ছিকু রেগে বলল
‘ মিহি আবার।
মাহিদ তাকে উপর থেকে আবার ফেলে দিয়ে বলল
‘ শালা তোরে নিয়া যাই কই?
পিহু অবাক হয়ে বলল
‘ কি করছ তুমি? ওর লাগলে কি হবে? ওর শরীরের হাড় এখনো নরম।
‘ আইছে দরদ দেখাইতে। মা’র চাইতে মাসির দরদ বেশি। ডাক্তারি শিখাইস না বাপ। তোর দু নম্বরী ডাক্তারি আমার শিখন লাগতো না। যাহহ।
মাহিদ ছিকু দু’জনই দুষ্টুমি করতে করতে রুম ফাটিয়ে হাসাহাসি করতে লাগলো। পিহু পরীর ঘরে চলে গেল। এই বেয়াদব দুটো না নিজেরা পড়ে, না আরেকজনকে পড়তে দেয়। বেয়াদব।
_______
রাতে জম্পেশ খাওয়া দাওয়া চললো। মাহিদ খেয়ে পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
‘ শালা ছিকু আর আমি আইজ বেশি খাইয়া ফেলছি বাপ।
ছিকু ও মাহিদের মতো পেটে হাত বুলাতে লাগলো। একপর্যায়ে সোফায় শুয়ে শার্ট তুলে পেট চাইলো। বলল
‘ ও বাপ ছিকুর পেট এতু বড়ো কেন? বিশিবিশি খায় ফিলচি কেন?
মাহিদ পেটে টোকা মেরে বলল
‘ তোর পেট বাপ রাক্ষস।
‘ কেন রাক্ষুচী কেন?
_____
সবাই যে যার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে। পিহু বিছানায় কোলে বালিশ নিয়ে পড়ছে গালে হাত দিয়ে। ঢুলে ঢুলে পড়তে পড়তে একসময় দরজা খুলে ঘরে কেউ ঢুকে এল। পিহু চমকে উঠলো। বলল
‘ এখানে কি চাই? একদম ভালো হবে না। যাও বলছি।
মাহিদ এগিয়ে এল। ধপাস করে বিছানায় এসে বসলো। বলল
‘ চুপ বেডি তোর লগে গল্প করতে আইছি। ঘুম আইতাছে না। তোর বাপের বাড়িতে আমার ঘুম আসেনা বাপ।
‘ ঢং। যাও এখন।
মাহিদ গেল না। বরঞ্চ ধপাস করে শুয়ে পড়ে বলল
‘ ধুর বেডি ঘুম আইসলে আমারে কোলে কইরা ওই ঘরে দিয়া আসিস।
পিহু অবাক হয়ে বলল
‘ এই বুইজ্জা বেডাকে আমি কোলে নিব? পাগল আমি? অদ্ভুত।
পিহু টেবিলে গিয়ে বসলো। মাহিদ পিহুর ফোন টিপতে শুরু করলো। পিহু পড়তে পড়তে একসময় খেয়াল হলো মাহিদ ফোন টিপতে টিপতে ঘুমিয়ে পড়েছে। সর্বনাশ।
পিহু চুপিসারে ডাকল
‘ মাহিদ ভাই উঠো। এই মাহিদ ভাই?
মাহিদ নড়েচড়ে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। পিহু পড়লো মহামুশকিলে। পিহু ফোন নিয়ে রিংটোন বাজালো। মাহিদ একসময় বিরক্ত হয়ে চোখ পাকিয়ে চাইলো। পিহু ভড়কে গিয়ে রিংটোন বন্ধ করলো। মাহিদ লাফ দিয়ে উঠে বসলো। চোখ কচলে বলল
‘ এই বেডি তুই রাত জাইগা পেরেম করোস?
‘ না।
আবার কি যেন ভেবে বলল
‘ হ্যা। তো?
মাহিদ তেড়ে এল। ঘুমঘুম গলায় বলল
‘ তুই আমারে ফালাইয়া অন্য কারো লগে পেরেম করবি ক্যান?
কথাগুলো চিল্লিয়ে বলছে মাহিদ। পিহু বলল
‘ আহা চেঁচাচ্ছ কেন? সবাই ঘুমোচ্ছে।
‘ ঘুমোক। শুনুক।
পিহু ও চেঁচিয়ে বলল
‘ আমি একশবার রাত জেগে ডাক্তারের সাথে কথা বলব। তাতে তোমার কি? হ্যা? ঢং করো? যাও এখন।
মাহিদ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পিহুর হাত টেনে ধরলো। মোচড়ে ধরে বলল
‘ তোরে না আমি ভালা টালা বাসি। তারপরও তুই পেরেম করোস অন্য কারো লগে? আমারে কি পাগল পাইছোস শালী?
পিহু বড় বড় চোখ করে চাইলো। ঠোঁট টিপা হাসি লুকিয়ে বলল
‘ আচ্ছা। ভালা টালা বাসো? এগুলা আবার কেমনে বাসে?
পিহুকে রসিকতা করতে দেখে তরতরিয়ে রাগ বাড়লো মাহিদের। কি করবে কি করবে ভেবে পেল না। টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। পিহু দৌড়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালো। বলল
‘ উফ ঝামেলা করো না তো। এখান থেকে যাও। একজনকে বিয়ে করবে, আবার আরেকজনকে নাকি ভালা টালা বাসে। যত্তসব ঢং।
‘ আমি তোরে ছাড়া কাউরে বিয়া করতাম না বাপ। আমি তোরে বিয়া না করলে তুই ভালা জামাই পাবি। তোরে ভালা জামাই দেওয়া যাইতো না বাপ৷ তুই পরে আমার লগে ভাব দেখাবি। তোরে আমি হাড়েহাড়ে চিনি।
‘ কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করব না। বললেই হলো? আশ্চর্য।
মাহিদ তার হাত চেপে ধরলো জোরে। বলল
‘ ক্যান করবি না?
‘ করব না মানে করব না। আমাকে অনেক কষ্ট দিছ তুমি। নাহ একদম বিয়ে করব না তোমাকে। তোমার বন্ধুকে করব।
‘ ওরেব্বাপ এমন করোস কিল্লাই? তোরে আমি ভালা টালা বাসি বলছি না? তুই বিয়া না করলে তোরে আমি খুন করুম শালী তারপরও কারো লগে বিয়া হইতে দিতাম না বাপ।
পিহু মুখ মোচড়ে বলল
‘ করব না মানে করব না।
মাহিদ রেগে বলল
‘ তাইলে তোরে এখন খুন করুম আমি।
‘ আমি মরে গেলে তুমি কিন্তু বেশি কাঁদবা। হুহ।
‘ যাহ বেডি। ডরাই না আমি। তুই মইরা যাহ তবু ও তরে নিনিইত্যার কাছে দিতাম না বাপ।
চলবে,
রিচেক করা হয়নি।