মন_গোপনের_কথা #পর্ব_৩৪

0
334

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৩৪
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

মাহিদের ঘরে গেল ছিকু। মাহিদের দেখা নেই। তারপর হেঁটে পিহুর ঘরে গেল। দেখলো পিহু ও ঘরে নেই। কি আশ্চর্য!
রেগে গেল ছিকু। মিহি আর পিহু নাই কেন?
রেগে হন্যি হয়ে পরীর কাছে গেল। বলল

‘ পিহু আর মিহি নাই কেন? চুর কেন? লুকি থাকে কেন? ছিকুর রাগ লাগে কেন?

পরী বলল

‘ কেন ওরা কোথায় যাবে? আছে ভালো করে দেখে আসেন।

ছিকু গেল না। দুহাত কোমরে রেখে গালফুলিয়ে পরীর দিকে চেয়ে রইলো। পরী হেসে ফেলল। কোলে তুলে তার গালের সাথে ছিকুর গাল লাগিয়ে বলল

‘ কি সমস্যা? ঘুমাবেন না? মিহি আর পিহুকে কি দরকার আপনার?

‘ মিহির সাথি ঘুম দেব কেন?

‘ ও বাবা মিহির সাথে ঘুম দেবেন? আচ্ছা চলেন।

পরী মাহিদের ঘরে গেল। ঘর ফাঁকা। ছিকু চেঁচিয়ে বলল

‘ মিহি এখুনো নাই কেন?

পরী বলল

‘ আস্তে। এভাবে কেউ চিল্লায়? পিহুর ঘরে বোধহয়।

পিহুর ঘরে গিয়ে ও মাহিদকে পেল বা পরী। এমনকি পিহুকে ও নয়। ছিকু আবার গর্জে বলল

‘ পিহুচুন্নি ইখানে নাই কেন? লুকি গিছে কেন? ছিকু কামড়ে দেবে কেন?

‘ কামড়ে দেবেন? কি আশ্চর্য আপনি রাক্ষস কেন?

‘ কেন? ছিকু রাক্ষুচী কেন? ছিকুকে ভয় লাগে কেন?

পরী খিক করে হেসে ফেলল। ছিকু পরীর নাকের উপর ঠাস করে হাতের তালু বসিয়ে রেগে বলল

‘ পুরী হাচে কেন?

পরী নাকের উপর হাত দিয়ে বলল

‘ মেরেছেন? আর কথা বলবেন না আমার সাথে। যান। কোল থেকে নামেন।

ছিকু পরীর মুখের দিকে চেয়ে রইলো। পরী তাকে কোল থেকে নামিয়ে দিতে গেলে ছিকু নামলো না। শক্ত করে পরীর গলা ধরে থাকলো। কাঁদোকাঁদো গলায় বলল

‘ পুরী দুক্কু পাচে কেন?

পরী এক হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখলো। ছিকু সরানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে করতে সক্ষম হলো। তারপর খিক করে হেসে দিল। পরী না হাসায় আবার রেগে তাকালো। তারপর পরীর নাকে পাপ্পি দিয়ে বলল

‘ পুরীকে আদোল কচচি কেন?

‘ মেরেছেন তাই আর কি? আবার বলে কেন?
আমি আজ বলে দেব তোমার পাপাকে। বলব ছিকুর সাথে যাতে কথা না বলে।

ছিকু কান্নাকান্না চোখে চেয়ে রইলো। পরী তাকে নিয়ে নীরার কাছে গেল।

_______

রিপ কলম চালানো থামালো। তার ফাইলের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা নীরাকে বলল

‘ নীরা কথা শোনো।

নীরা তাকালো।

‘ কি?

রিপ মাথার পাশে দেখিয়ে দিয়ে বলল

‘ এদিকে একটু টিপে দাও তো। কেমন ধরে আছে।

নীরা বলল

‘ তেল দেবেন?

‘ ধ্যাত কিসের তেল?

‘ তো কি? বছর ছ মাসে ও তো তেল দেন না।

নীরা সত্যি সত্যি তেল নিল। রিপের মাথার উপর তেল ভর্তি হাতের গালু বসিয়ে দিয়ে বলল

‘ আহ শান্তি শান্তি।

রিপ হতভম্ব। চেঁচিয়ে বলল

‘ আহা কি করেছ এসব? উফফ।

নীরা হেসে বলল

‘ একদম ঠিক কাজ করেছি। বাপ বেটা দুজনেই তেল ছুঁবেনা জীবনে ও। ঢং করে।

রিপ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালো। নীরা ভড়কে গিয়ে বলল

‘ তো কি হয়েছে? আশ্চর্য! মানুষ কি তেল দেয় না?

রিপ নীরার কাছে এগিয়ে গেল। নীরার বেণুনী করা চুলের আগা টেনে ধরে তার মাথা থেকে তেল মুছতে মুছতে বলল

‘ তেল দিতে বারণ করেছিলাম।

‘ শুনব না। শুনিনি।

রিপ তেল মুছা শেষ করে বলল

‘ তুমি এমন কেন?

‘ আপনার মনের মতো।

রিপ আর কিছু বলতে পারলো না৷ নীরা হেসে বলল

‘ কি দেখেন?

‘ একটা আজব মানুষকে দেখছি।।

নীরা বলল

‘ ধুরর শরম করে আমার।

রিপ হেসে উঠলো আওয়াজ করে।

পরী এসে বলল

‘ কি নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে?

রিপ তাকালো।

‘ পরী? এসো মা। ভাই এখনো ঘুমোয়নি?

‘ না পাপা। ভাইকে খুঁজছে? ভাই আর পিহু কোথায়? ওদের তো খুঁজে পেলাম না।

নীরা রিপ একে অপরের দিকে তাকালো। নীরা বলল

‘ কেন? কোথায় যাবে?

রিপ বলল

‘ আশেপাশেই আছে হয়ত। নিচে দেখেছ?

‘ নেই।

‘ বাইরে?

‘ না দেখিনি। ওখানে কেন যাবে ওরা? দুজনের এত সখ্যতা হলো কখন? হাঁটতে বসতে ঝগড়া করে।

‘ কে জানে?

নীরার দায়সারা কথা। পরী বলল

‘ আচ্ছা ছাদে বোধহয়।

ছিকু বলল

‘ কেন ছাদে কেন?

‘ হয়ত ওখানে গল্পগুজব করছে।

নীরা বলল

‘ তাই হবে হয়ত। থাক গে গল্পগুজব করুক।

ছিকু জোরগলায় বলল

‘ কেন গুজুগুজু করবে কেন?

রিপ বলল

‘ আচ্ছা আচ্ছা ভাইকে নিয়ে যাও তুমি।

পরী বলল

‘ যাব?

‘ হ্যা।

পরী যাওয়ার সময় মুনা বলল

‘ কোথায় যাচ্ছ?

‘ ছাদে। ভাইরা নাকি ওখানে।

মুনা ও সাথে যেতেই পিহুর সামনাসামনি পড়ে গেল তারা। পিহু দৌড়েই আসছিল। তাদেরকে দেখে ভড়কে গেল। বড়বড় চোখ করে চোরা মুখ করে চাইলো। নীরা ও আসলো সেখানে। ছিকু বলল

‘ পিহু লুকি থাকে কেন?

পিহু অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে ছিকুকে কোলে তুলে নিল। চলে যেতেই পরী বলল

‘ দাঁড়াও। তোমার গায়ে এই ওড়নাটা কার?

পিহু শেষ। কি বলবে এখন সে? আল্লাহ!
মুনা বলল

‘ ওর আর কি।

‘ না, ওর এরকম ওড়না কোথাথেকে আসবে?

মাহিদ ততক্ষণে সবার পেছনে এসে উপস্থিত। বড় গলা করে বলল

‘ কিতা হয়ছে এইখানে?

মুনা সব বলল। পিহু কোনোদিকে তাকালো। পেছনে আঙুল করে বলল

‘ মাহিদ ভাই দিছে। মাহিদ ভাই।

পরী, মুনা একসাথে বলল

‘ মাহি? কেন?

মাহিদ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। শালী তারে ফাঁসাই দিল।

‘ আমি কিছু জানিনা বলে,পিহু ছিকুকে নিয়ে দৌড় দিল।

সবাই ঝাপটে ধরলো মাহিদকে। পরী বলল

‘ তো আমারটা কই?

মাহিদ বলল

‘ ধুরর বাপ, তোমারে না বিয়ার সময় দিছি। ওরে ও বিয়ার সময় দিতাছি আর কি। পড়াই দেখতাছি কালা বেডিরে ধলা ওড়নায় মানায় কিনা।

‘ ওহহহ।

নীরা বলল

‘ বাহ সুন্দর লাগতেছে পিহুরে। কালা হইলে কি হইবো? ওর বরের কাছে ওই হইবো বিশ্বসুন্দরী। ওর মতো মেয়ে হয় নাকি?

মাহিদ কপাল কুঁচকে বলল

‘ হ। আর কথা পাওনা। কালা বেডিরে কালা না কইয়্যা ধলা যে কইবো বুইঝা নিবা তার মাথার স্ক্রু ঢিলা।

নীরা বলল

‘ হ বুঝি। আমার আশেপাশের সব মানুষই স্ক্রু ঢিলা টাইপের।

মাহিদ কেমন করে তাকালো। মেরিমার কথা তো সুবিধার ঠেকতেছেনা বাপ।

ঘরে গিয়ে পিহু ছিকুকে বিছানায় বসিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়লো। বালিশে মুখ গুঁজে বলল

‘ ছিঃ ছিঃ এসব কি হচ্ছে?

ছিকু পিহুর পিঠের উপর উঠে বসলো। বলল

‘ পিহু নজ্জা পাচে কেন?

পিহু সে অবস্থায় হাসতে লাগলো।

_____________

ঘর থেকে বেরোনোর মুহূর্তে নিনিতের সামনাসামনি পড়ে গেল জালিশা। নিনিত বলল

‘ কি অবস্থা?

জালিশা উত্তর দিল না। চলে যাওয়ার সময় নিনিত বলল

‘ এটা বেয়াদবি না?

‘ কোনটা?

‘ এই যে উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছিলে।

‘ আমি বেয়াদব না। এর চাইতে ও বেশি কিছু। কথা বলবেন না।

‘ বলব না। বলতাম না এরকম বেয়াদবি করবে জানলে। স্টুপিড।

জালিশা তার যাওয়ার দিকে তেজীচোখে চাইলো। আইমি এসে বলল

‘ কোনো সমস্যা?

‘ নোহ আম্মি। অল ফাইন।

‘ তাহলে চেহারা এত শুঁকিয়েছে কেন? তোমার মামির সাথে বেশি বকবক করতে যেওনা। উনি টেনশনে আছেন।

‘ কেন?

‘ নিনিতের বিয়ে নিয়ে বোধহয় কোনো সমস্যা হয়েছে।

জালিশা মাথা নাড়লো। বলল

‘ আমি ওনাদের মন খারাপের কারণ হবো না আম্মি। তুমি টেনশন ফ্রি থাকতে পারো।

নিশিতা এসে জালিশাকে টেনে নিয়ে গেল নিকিতা বেগমের কাছে। জালিশা হতভম্ব। নিকিতা বেগম তাকে দেখলেন চোখ তুলে। পাশে থাকা গ্লাস তুলে পানি খেয়ে বললেন

‘ বসো।

জালিশা বসলো না। নিশিতা বলল

‘ বোস।

জালিশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। তাকে কি কিছু বলবে মামি?

নিকিতা বেগম পানি খেয়ে ধীরেধীরে এগিয়ে এল। বলল

‘ তোমাকে সোজাসাপটা কয়েকটা প্রশ্ন করি?

‘ হুহ।

নিশিতার দিকে তাকালো নিকিতা বেগম। নিশিতা চলে গেল। নিশিতা চলে যেতেই নিকিতা বেগম বললেন

‘ পিহুর বাবার সাথে তোমার পরিচয় কিভাবে?

‘ পিহুর বাবা?

‘ হ্যা।

‘ কেন? আমি তো পিহুর বাবাকে দেখিইনি কখনো।

‘ মিথ্যে।

ভড়কে গেল জালিশা। হালকা কেঁপে উঠলো। কত আপন ভাবে সে এদের। আর তারা?
গোলগাল মুখটা ভয়ে চুপসে রইলো।

‘ কেন মিথ্যে বলছো তুমি?

‘ আমি মিথ্যে বলছিনা মামি। আমি সত্যিই চিনিনা।

‘ চেনো তুমি। চেনো বলেই ওসব কথা বলেছ। কেন বলেছ ওসব? কেন বলেছ নিনিতকে তোমার।
উফফফ।

জালিশা মুখ ছোট করে দাঁড়িয়ে রইলো। নিকিতা বেগম বললেন

‘ যাও এখান থেকে। আমার ভালো লাগছেনা। কি হলো?

জালিশা ফুঁপিয়ে উঠলো। রুম থেকে বের হতেই নিশিতার সামনাসামনি পড়লো। নিশিতা বলল

‘ মায়ের কথায় কিছু মনে করিস না। পিহুকে মা সেই অনেক আগে থেকে ভেবে রেখেছে তাই এসব মানতে কষ্ট হচ্ছে।

‘ আমি পিহুর জায়গা নিতে চাই না।

‘ চাস না?

জালিশার শক্ত জবাব।

‘ নাহ।

নিশিতা বলল

‘ তাহলে কেন আদি আঙ্কেলকে ওসব কথা বলতে গেলি। ওনি তো পিহুর বাবা, ওনার খারাপ লাগতে পারে ওসব কথায়।

‘ আদি আঙ্কেল? আদি আঙ্কেল পিহুর বাবা?

‘ হ্যা।

জালিশার পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেছে। মাথার চুল আঁকড়ে ধরলো সে।

নিনিত এসে বলল

‘ কি সমস্যা?

নিশিতা সরে পড়লো চুপচাপ।

‘ তোমার কি হয়েছে আবার?

জালিশা তার দিকে মুখ তুলে তাকালো। বলল

‘ শুনবেন? শুনে কি করবেন?

‘ কিছু সাজেশন তো দিতে পারি।

‘ সাজেশন? আমার সাজেশন চাই না ডক্টর।

‘ তাহলে বিনামূল্যে উপদেশ দিই কিছু। কনট্রোল ইয়োর ইমোশন। খুব খারাপ জিনিস এটা।

জালিশা ফুলেফেঁপে চেয়ে রইলো। নিনিত হেসে উঠলো। বলল

‘ ওভাবে তাকাতে অধিকার লাগে। তুমি কোনো অধিকারে তাকাচ্ছ?

‘ আপনি আমার ইমোশন নিয়ে মজা করছেন না?

‘ করছি?

‘ কোন অধিকারে।

‘ সবকিছু করতে অধিকার লাগবে এটা ও কেউ রাখেনি।

‘ ডক্টর আপনি।

‘ আমি ঠিক।

‘ আর আমি?

‘ ভুল। ভুলভাল মানুষকে নিয়ে ভাবতে নেই। আমি মানুষের মনের দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হতে চাই না। তুমি তোমার মতো ভালো থাকো। আমাকে থাকতে দাও।

‘ কি বলতে চাচ্ছেন আপনি? আমি আপনাকে অশান্তিতে রেখেছি?

‘ শান্তি ও তো দিচ্ছ না। যেদিকে যাচ্ছি সেদিকে কেন তোমার নাম আমাকে শুনতে হচ্ছে? আমি মোটেও ভালো থাকতে পারছিনা। তুমি মেয়েটাই একটা জ্বলজ্যান্ত অসুখ।

নিনিত চলে গেল বলেই। জালিশা বিড়বিড় করলো

‘ আমি অসুখ?

______________

সকাল সকাল বাড়িতে মাইশাকে দেখে হতভম্ব পিহু। মাহিদের সাথে হেসেখেলে খাওয়াদাওয়া করছে। পিহুকে ও ডাকলো। নীরার তো খুশির শেষ নেই। সব এগিয়ে এগিয়ে দিচ্ছে। পিহু ফুলতে ফুলতে অবশিষ্ট কিছু নেই। রিপ ও বাদ যায়নি। সবার মধ্যমণি এখন মাইশা। ছিকু ও মাইশার কোলে। বেয়াদব ছেলে। আর পিহু পিহু করলে এক চড়ে দাঁত ফেলে দেবে। মাহিদ একবার পিহুর দিকে আড়চোখে তাকালো। পিহু আঙুল দেখিয়ে ইশারায় বলল

‘ এটা খুলে ফেলে দেব একদম।

মাহিদ কপাল কুঁচকে চাইলো। আবার এই সেই কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। পিহু চুপচাপ কোনো কথা বলেনি। বলছে না। তার কিসের কথা?

মাইশা দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে পিহুর কাছে আসলো। সে চলে যাবে। পিহু তাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল

‘ বিকেল অব্ধি থাকুন।

‘ না পিহু। মা ফোন করছে বারবার। তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।

বলেই ব্যাগ থেকে একটি ঝকঝকে প্যাকেট জাতীয় কিছু বের করলো। পিহু বলল

‘ কি এটা?

‘ খুলে দেখো।

পিহু খুললো সেটি। দেখলো একটি ছবি। সাথে সাথে মাইশার দিকে চোখ তুলে তাকালো পিহু। মাইশা হেসে বলল

‘ আরেহ দেখো।

পিহু ছবিটার দিকে তাকালো৷ দেখলো তার আর মাহিদেরই একটা ছবি। দুজন দাঁড়িয়ে আছে যোজন যোজন দূরত্বে। পিহুর মুখে আকাশসম অভিমান। মাহিদ আঁড়চোখে অভিমানের কণা গুনতে থাকা সেই প্রেমিক। পিহু ছবিটা পেছনে লুকিয়ে ফেলল। মাইশা তার কান্ড দেখে হেসে ফেলল৷ হাসতে হাসতে গাল টেনে দিয়ে বলল

‘ তোমাকে এভাবে কতবার দেখে তুমি জানো? হায়হায় তুমি দেখছি লজ্জা পাচ্ছ। ওসব কোনো ব্যাপার না। তোমার বন্ধু না হলেও মিঃ মাহিদের খুব ভালো বন্ধু আমি। লজ্জার কোনোকিছু নেই। তবে একটা কথা বলি, তোমার মন খারাপের কারণ হওয়া মানুষটাই কিন্তু দিনশেষে তোমার মন ভালো করার ঔষধ। ওসব মানুষকে একেবারে বেঁধে ফেলতে হয়। বেঁধে রাখতে হয়। অল দ্য বেস্ট। একেবারে বিয়েতে দেখা হচ্ছে। আমি কিন্তু এক সপ্তাহ আগে দাওয়াত চাই।

পিহু বোবা হয়ে চেয়ে রইলো। মাইশা হেসে বলল

‘ কি একটা অবস্থা!

মাইশা চলে গেল। মাহিদ তাকে দিয়ে এসে বাড়ি ফিরলো। নীরা এসে বললো

‘ পিহুকে তো নিনিতের মা ফোন দিছে। ওদের আকদের কথা শোনা যাচ্ছে।

‘ তো আমি কি করুম?

নীরা গজগজ করে বলল

‘ গর্তে বইসা থাক ইঁদুরের বাচ্চা।

মাহিদ হেসে বলল

‘ আইচ্ছা।

নীরা বলল

‘ হাসবি না মাহি। তোরে না বলছি পিহুর মতো বউ লাগবে আমার।

‘ মতো টতো লাগতো না আর। অরিজিনিয়াল ভার্সনরে লইয়্যা আসুম।

কথাটা স্বাভাবিক গলায় বলে সোফায় বসে টিভিতে মন দিল মাহিদ। নীরার মনে হলো সে কানে ভুল শুনেছে। তাই কানে আঙুল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। না সে ঠিকই শুনেছে। এই তো বাছাধন লাইনে আইছে।

_________

পিহু বই নিয়ে একটু টেবিলে বসেছে। তার পড়ায় মন বসছেনা। ওদিকে কি হলো কিছু জানেনা। খচখচানিটা কমছেনা। ছিকু এসে বকবক করতে করতে কোলে ঘুমিয়ে পড়লো। পিহু তাকে শুইয়ে দিয়ে পাশে শুয়ে পড়লো।

মাহিদের ফোন এল তক্ষুণি। পিহু সাথেসাথে ফোন তুললো।

‘ বাইরে আয়।

‘ কেন?

‘ আয় আয়।

‘ যদি কেউ দেখে?

‘ লাইন ক্লিয়ার।

‘ ধুরর।

‘ আয় আয়।

পিহু গেল সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে। বাইরে আবছা আলো। বাগানের গাছের ফাঁকে ফাঁকে জোনাজি পোকা দেখা যাচ্ছে। পুরোনো গাছটি থেকে বকুল ফুলের গন্ধ আসছে। পিহু ছুটে গেল। এদিকওদিক তাকাতে লাগলো। কাউকে চোখে পড়লো না। ভয় লাগতে শুরু করলো পিহুর। মাহিদ পেছন থেকে এসে ডাক দিতেই পিহু চমকে উঠলো। দেখলো মাহিদের মুখে কাপড়চোপড় পেঁচানো। পিহু বলল

‘ এসব কি পেঁচিয়েছ?

‘ খুলে দে।

পিহু কাপড়টি খুলতেই দেখলো মাহিদের কপালে একটি কাপড় বাঁধানো। পিহু মাহিদের মাথা নিচে নামিয়ে এনে কাপড়ে লেখাটি পড়তে চাইলো। আবছা আবছা আলোয় পড়লো, তিন চার এক মিলে কত হয়?
পিহুর কপালে ভাঁজ। কপালের কাপড়টা খুলে নিয়ে বেশ মনোযোগ দিয়ে চাইলো কাপড়টা। আচমকা কাপড়টি লুকিয়ে ফেলল পিহু। হেসে ফেলল মাহিদের দিকে তাকিয়ে। বলল

‘ এক, চার, তিন হয় গাঁধা।

মাহিদ বলল

‘ সব মিলে কত হয়?

পিহু দুটো আঙুল দেখিয়ে বলল

‘ দুই।

মাহিদ আঙুল দুটোর দিকে তাকালো। আঙুল দুটো টেনে নিজের কাছে নিয়ে এল। বলল

‘ এবার বুঝা দুই কেমনে।

‘ এক আছে, তিন আছে, চার ও আছে কিন্তু মাঝখানে দুই নেই। তাই দুই।

মাহিদ হাতের বাঁধন শক্ত করে বলল

‘ ধুরর বাপ উত্তর পছন্দ হয় নাই।

পিহু হেসে বলল

‘ না দুই। দুই। দুই। দুই।

‘ কেমনে?

‘ কারণ দুই মানে দুটো মানুষ। যেমন আমি আর তুমি।

‘ তুই আর আমি কি?

পিহু বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে বলল

‘ তুমি আর আমি বলে কিছু হয় না। আমিই তুমি। তুমিই আমি।

‘ তুই আর আমি বউ জামাই হমু বাপ। সোজাসাপটা বইলা দিবি। আমারে শরম পাবি কিল্লাই? আমারে শরম পাইয়্যা কাম নাই। তোর শরম টরম সব আমি।

পিহু বলল

‘ যাহহহহহ।। তুমি বেয়াদব।

মাহিদ তার মাথা বুকে ঠেকিয়ে আবার ছেড়ে দিল। ছেড়ে দিয়ে বলল

‘ হ বাপ। বুইঝা পাইছি আমি বেয়াদব।
পেরেম টেরেম বহুত হয়ছে। যাহ এবার ঘুমা। তুই ঘুমা, আমারে ঘুমাতে দে।
পাঠক বাপদের ও ঘুমাতে দে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here