#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৩৭
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
মেডিক্যালে মনমরা হয়ে বসে রয়েছে পিহু।নিশিতা এখনো আসেনি। বাকিদের সাথে গল্পগুজব করতে করতে পিহু ক্লাসের বাইরে এল। নিশিতা নিনিতের সাথে মাত্রই গেইট পার হয়ে ঢুকেছে। পিহু তাদের দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। পাশ থেকে একজন প্রত্যুত্তর করলো
‘ পিহু তোর হ্যান্ডসাম।
পিহু রেগে তাকালো। মেয়েটা জিভ কেটে বলল
‘ সো সরি। স্যারকে আবার বলিস না। আচ্ছা তোদের বিয়ে কবে খাচ্ছি রে? নিশি তো এদিন বলল বেশি দেরী নেই। তুই আমাদের ম্যাডাম হয়ে যাবি? কি আশ্চর্য!
পিহু উত্তর না দিয়ে দাঁড়িয়েই থাকলো। তারা কাছে চলে এসেছে। পিহুকে দেখে খানিকটা থমকালো। তারপর দুজন দুদিকে হাঁটা ধরলো। পিহু একবার নিনিতের দিকে, আরেকবার নিশিতার পথের দিকে তাকিয়ে শেষমেষ নিনিতের পিছু পিছু দৌড়ে গেল। বলল
‘ স্যার?
নিনিত তার ডাকে ঘাড় ঘুরালো। বলল
‘ কোনো সমস্যা?
পিহু চুপসে গেল। বলল
‘ আ’ম সরি স্যার।
‘ কেন?
পিহু ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললো। নিনিত বলল
‘ রিল্যাক্স। যা বলার বলে ক্লাসে যাও।
‘ আমি খুব সরি স্যার। আসলে আমি,,
‘ আমি কোনো কৈফিয়ত চেয়েছি?
পিহু ভয়ার্ত চোখ আবার তুলে নামিয়ে ফেলল। আমতাআমতা করতে করতে বলল
‘ আমার সাথে যা কথা তা মাহিদের সাথে হবে, তোমার সাথে নয়। যাও।
পিহু বলল
‘ আসলে আমি,
নিনিত সোজা হয়ে দাঁড়ালো। বলল
‘ কি তুমি? মাইশার কাছ থেকে আমি যা শুনেছি তাতে কখনো মনে হয়নি, মাহিদের একপাক্ষিক কিছু ছিল। তাহলে তুমি কেন কাউকে কিছু বলোনি? আমাকে না বলো নিশুকে বলতে পারতে। ও তোমার খুব কাছের বন্ধু। অবশ্য তুমি আর মাহিদ একই টাইপের। বন্ধুত্ব তোমাদের কাছে কিছুই না। শুধু একটা শব্দ। ব্যস।
আমি জেনেশুনে কখনো তোমাদের মাঝখানে আসতে চাইতাম না। অতটা নির্বোধ তো আমি নই। শুধুশুধু তোমাদের ভুলের কারণে তৃতীয়পক্ষ হয়ে গেলাম আমি। আমার অমন বন্ধু দরকার ছিল না। নেই। লাগবে না। আমি ও কারো বন্ধু নই। ক্লাসে যাও।
পিহু গেল না। নিনিত বলল,
কি হলো?
পিহু মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়েই থাকলো। নিনিত নিজেই চলে গেল।
পিহু তারপর ক্লাসে গেল। নিশিতা আজ অন্যপাশে বসেছে। অন্যদের সাথে গল্পগুজব করছে। পিহুকে দেখামাত্রই মুখ ফিরিয়ে নিল। পিহু তার জায়গায় গিয়ে বসলো। দু একবার নিশিতার দিকে ফিরে তাকালো। নিশিতা ভুলেও তার দিকে ফিরে তাকালো না।
যখন ক্লাস ছুটির সময় এল। নিশিতা সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলল
কনগ্রেস ইয়োর উইডিং মিসেস খানম।
পিহু থমথমে মুখে সবার দিকে তাকালো। সবাই ও যেন ভীষণ আশ্চর্য হয়েছে।
পিহু বলল
দোস্ত শোন না কিছু কথা ছিল…
নিশিতা গর্জে বলল
কারো বন্ধু নই আমি। যে বন্ধুত্ব শব্দটা নিয়ে ছেলেখেলা করে তার সাথে কোনো বন্ধুত্ব নেই আমার। মাইশার সাথে ভাব করেছি বলে আমার সাথে রাগ করেছিলি না? এখন তো বলতেই হচ্ছে তোর চাইতে মাইশা অনেক অনেক ভালো। অন্তত আমার কাছ থেকে কিছু লুকোয় না।
পিহুর চোখদুটো জলভর্তি।
এখন তোর কাছে মাইশা সব হয়ে গেল?
হবেনা কেন? মাইশা না বললে তো তোর সরূপ জানতাম না আমি। মাইশা সেগুলোই করেছে যেগুলো একজন প্রকৃত বন্ধু বন্ধুর জন্য করে।
আমি কি বলতাম তোকে, তখন,,,
এখন কোনোকিছু শুনতে চাই না।
পিহু ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো নিশিতা চলে গেল দলবল নিয়ে।
কয়েকজন দৌড়ে এসে বলল
দোস্ত দেখিস আমাদের বিয়ের দাওয়াত দিতে ভুলিস না।
বলেই আবার দৌড় দিয়ে চলে গেল।
_____________
মেডিক্যাল থেকে ফিরে ঘরের এককোণায় চুপটি করে বসে রইলো পিহু। ছিকু তাকে খুঁজতে খুঁজতে এল। হাতে বড় সাইজের একটি ফুটবল। দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে পিহুকে দেখে বলল
পিহু ডততর ছিকুর জুন্য ফুতবল আনিছে কেন?
পিহু কথার জবাব দিল না। ছিকু কপাল কুঁচকে পিহুকে পরখ করলো। বিছানায় উঠে পিহুর কোলে গিয়ে বসলো। ফুটবল দেখিয়ে বলল
পিহু ছিকুর সাথি ফুতবল খিলবে কেন? পিহুর মন খারাপ কেন?
পিহু বলল
খেলব না। প্রশ্ন করবেন না এত।
কেন? করবো না কেন?
উফফ মাইর খাবেন কিন্তু।
ছিকু কাঁদোকাঁদো চেহারায় বলল
কেন? পিহুকে ছিকুকে মারবে কেন? পিহু পুঁচা কেন?
পিহু তার গালের দুপাশে আদর করে বলল
আচ্ছা মারব না। যান ফুটবল খেলেন দাদাইয়ের সাথে। পিহু খেলবে না।
ছিকু রেগে গর্জে বলল
কেন? পিহু খিলবেনা কেন?
পিহুর মন ভালো নেই।
কেন? মন ভালো নেই কেন? মিহি বুউকে বুকা দিচে কেন?
পিহু বলল
যাহ পঁচা ছেলে। একদম চুপ। যান।
কেন যাবু কেন?
পিহু চিৎকার করে ডাকল
বড়মা? তোমার নাতিকে নিয়ে যাও। নইলে খুব মারবো আমি।
ছিকু রেগে নাকফুলিয়ে কোমরে হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকলো পিহুর দিকে।
পিহুকে কামুড় দিতে মন চায় কেন?
রাইনা এসে বলল
কি হয়েছে রে?
দেখো বকবক করে আমার মাথা খাচ্ছে।
রাইনা ছিকুর দিকে তাকালো। ছিকুর দুচোখে জল টলমল করছে। রাইনা বলল
বিয়ে হয়ে গেলে আর পাবি আমার নাতিকে? তখন তো মিস করলে ও কাছে পাবিনা। চলো দাদুভাই।
পিহু খাট থেকে লাফ দিয়ে নামলো। ছিকু দৌড়ে চলে যেতেই পিহু তাকে ধরে ফেলল। কোলে তুলে বুকে শক্ত করে চেপে ধরে কপালে গভীর চুমু খেয়ে বলল
‘ আমার কলিজা!
ছিকু ঠোঁট উল্টাচ্ছে। পিহু তার গালে কপালে টুপটাপ আদর বসাতে বসাতে বলল
‘ আচ্ছা আর বুকা দিবো না আমার কলিজাকে।
ছিকু আদর পেয়ে চুপটি করে থাকলো।
পিহু হেসে বলল
‘ এই সুন্দর বিলাই?
‘ কেন ছিকু চুন্দর বিলাই কেন?
পিহু হেসে উঠলো। আহা কলিজা তার মন ভালো করার ঔষধ।
____________
বিয়ের উপলক্ষে নীরার মা নাজিয়া বানু এসেছেন। মাহিদ বাড়ি ফিরে নানীকে দেখে মহাখুশি। নাজিয়া বানু বলল
আমি এসব কি শুনলাম রে ভাই? তুই শেষমেশ পিহুরে,, হায়হায়।
মাহিদ চোখ গরম করে বলল
শরম দাও ক্যা বাপ?
নাজিয়া বানু হেসে ফেললেন। বললেন
আয় আয়। তোরে একটু আদর করি। তুই তো আমারে দেখতে যাস না।
মাহিদ এসে ধপাস করে শুয়ে পড়লো নানীর কোলে। বলল
জানেমন ডাক্তারের বাচ্চি তো মোর ফোন ধরেনা বাপ। এখন কিতা করুম?
আহা রাগ করছে? মারছোস টারছোস নাকি?
কিল্লাই মারুম? মারিনাই। কিন্তু এখন দেখতাছি শালীরে মারা লাগবো। কাল যামু। শালীরে সবার সামনে গিয়া মাইরা আসুম। ঠাস ঠাস কইরা মারুম। বেশি বার বাড়ছে শালী।
নাজিয়া বানু গালে হাত দিলেন।
এসব কেমন কথা ভাই? বউ হইতেছে ঘরের রাণী। রাণীরে এইভাবে সম্বোধন করতে নাই।
ফালতু কথা কইয়োনা। আমার সামনে কইতাছো ভালা কথা। কিন্তু ওই বেডির সামনে কইয়োনা। শালী এমনিতে আমারে দুপয়সার দাম দেয় না। এইডা হুনার পর এক পয়সা ও দিত না।
নাজিয়া বানু হাসতে হাসতে বললেন
‘ নীরু তোর ছেলের কথা শোন। এই ছেলেকে বউ দিচ্ছে এটা ও তো বেশি।
নীরা ব্যস্ত গলায় বলল
‘ ওর বাজে কথা শোনার সময় নাই মা।
মাহিদ বলল
‘ শালার বাপের বউ।
_______
বিয়ের বাজারের মেন্যু তেরী করেছে পরী। মাহিদকে ফোন দিয়ে বলল, ভাই বাজার লিস্ট অনেক বড়। সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে তুই বাপের টাকায় বিয়ে করছিস। এখন তোর বউয়ের খোঁটা শুনতে হবে সারাবছর।
বাপের টাকাই আমার টাকা বাপ। শালীরে কথা কম কইতে শিখায় দিবা। বেশি ফটরফটর করলে গাল চিইপ্যা দিমু ছিকুশালার মতো।
পরী খিকখিক করে হাসতে লাগলো। পিহু এসে বলল
কি সমস্যা? এত হাসাহাসি কিসের?
পরী চুপ হয়ে গেল। মাহিদ ফোনের ওপাশ থেকে বলল, আইছে নবাবজাদী। হারামজাদি।
________
আইমি বারান্দায় বসেছিল চেয়ার পেতে। হাতে বই। বই পড়ার অভ্যাসটা ছোট থেকেই। জালিশার সাড়াশব্দ নেই আজ। বই পড়ায় অমনোযোগী হলো সে। এখন আপাতত আর পড়ায় মন বসবেনা। বই রেখে উঠতেই নিয়াজ সাহেব এসে দাঁড়ালেন। বললেন
তুই এখানে? তোকে তো আমি খুঁজছিলাম।
বলো না কি বলবে।
শোন না। আমি জালিশার ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
আইমির ঠনক নড়লো। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলল
‘ আসলে ওখানে এক বাংলাদেশী পরিবার আছে। আমি ওখানেই জালিশাকে দেব ভেবেছিলাম। ছেলে এবং ছেলের পরিবার ভালো। জালিশাকে ও তারা পছন্দ করে। ছেলে ওখানেই সেটেল।
এটা কেমন কথা? তুই কি তোর ভাবির উপর রাগ করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিস?
সিদ্ধান্ত তো নেওয়াই ছিল। ভাবির উপর রাগ কেন হবে? ছেলের জন্য মেয়ে পছন্দ করে রাখতেই পারে। এটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। যেহেতু বিয়েটা হচ্ছে না সেহেতু জালিশার কথা তোমাদের মাথায় আসতে পারে। তবে আমি চাইনা এটা।
জালিশা তো চায়।
চাইলেই সব পেতে হবে এমনটা নয়। আমি ওকে সবটা পরিপূর্ণ ভাবে দিয়ে বড় করেছি এমন না। ওকে অভাব এবং বাস্তবতা ও বুঝতেও শিখিয়েছি। ও মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে শিখেছে। কষ্ট হবে তবে সামলে উঠবে। আমি চাই বাচ্চারা সবাই ভালো থাকুক।
আদি নিনিতের বাড়ি এসেছে বিয়ের দাওয়াত করতে। জালিশা তাকে দেখে এককোণায় চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো। আদি তাকে ইশারায় ডাকলো। জালিশা গুটিগুটি পায়ে হেঁটে এল। আদি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
‘ কেমন আছ মামুনি?
‘ খুব ভালো। আপনি কেমন আছেন?
‘ এইতো আছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিকিতা বেগম থাকায় জালিশা উশখুশ করতে লাগলো। তারপর চলে গেল। আদি বলল
‘ নিনিতের জন্য এমন মেয়ে পেয়ে আমি ভীষণ হ্যাপী। সবাই ভালো থাকলেই হলো।
নিকিতা বেগম চুপ করে আছেন। আইমি আসতেই আদি বলল
তোমাকে আজকাল ভীষণ ঘরকুনো মনে হচ্ছে কেন?
আইমি হাসলো। বলল
আর বলোনা। জাবির বেরোবে বেরোবে করে নিজেও বের হলোনা। আমাকে ও বের হতে দিল না। জালিশা কতবার বলল, তোমার বাসায় যাবে। যাইহোক বিয়ে উপলক্ষে কিন্তু অবশ্যই যাচ্ছি।
সিউর। আগেভাগে চলে যাবে। নিনিত কোথায় আপা?
নিকিতা বেগম গম্ভীর গলায় বললেন
বাইরে গেছে। বলে তো যায়নি।
আচ্ছা ঠিক আছে। আমাকে নিশুর শ্বশুরবাড়ি ও যেতে হবে। নতুন আত্মীয় তাই আমি চাচ্ছি গিয়ে বলে আসি। সেটা ভালো দেখায় কি বলো ইমি?
আইমি মাথা দুলালো। গুড ডিছিশন।
নিয়াজ সাহেব বললেন
আপনার মেয়ের বিয়ে এই সপ্তাহে। আর আমার ছেলের বিয়ে আগামী সপ্তাহে ডাক্তার সাহেব। বিয়েটা দিয়েই ছাড়বো।
নিকিতা বেগম চোখ তুলে তাকালেন নিয়াজ সাহেবের দিকে। আদি বলল
আমি ও সেটাই বলতে চাইছি। আমার যদি ছেলে থাকতো আমি কিন্তু জালিশাকে একদম ছেলের বউ করে নিতাম।
আইমি হেসে বলল
অতটা ভালো না যতটা ভাবছ। ভীষণ রাগী।
নিয়াজ সাহেব বললেন
‘ভালোই। আমার সাহেবের সাথে ওরকম বউ দরকার। যাইহোক জালিশাই আমার পুত্রবধূ হবে ডিছিশন কিন্তু ফাইনাল।
আদি বলল
আমার ভাবতেই ভালো লাগছে। ছেলেমেয়েরা ভালো থাকলেই আমরা এমনিতেই ভালো থাকি।
আইমি বলল
পরী কেমন আছে? ওর নাকি একটা ছোট্ট বাচ্চা ও আছে।
ভালো আছে। হ্যা ওর বাচ্চা মাত্র চার বছরে পড়েছে আর কি। ভীষণ পাকা পাকা কথা বলে।
কি বলো? আমার তো ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। মিষ্টি কেমন আছে?
আরেহ গিয়ে সবাইকে দেখে আসো ভাই। আইমি হেসে বলল, হ্যা অবশ্যই।
________
বিয়ের বাজারে বের হয়েছে রেহান, পরী, পিহু, ইশা, রাইনা, নীরা,মুনা আর মাহিদ। সবার আদরের ছিকুসোনা তো রয়েছেই। সারা রাস্তা কেন কেন করে সবার মাথা নষ্ট করে দিতে সে সদা সর্বদাই প্রস্তুত। সবাই একসাথে বেরিয়েছে। মাহিদ মাঝপথ থেকে এসেছে। সে আসতেই রেহান বলল, তোমার বন্ধুরা কোথায়?
‘ সব শালা নিনিইত্যার কাছে। আমার কাউরে লাগবো না।
মেজাজ ভীষণ চটে আছে তার। গাড়ির দরজা খুলে একদম পিহুর পাশে এসে ধপাস করে বসে পড়লো সে। সবাই খিক করে হেসে উঠলো আওয়াজ করে। মাহিদের মতিভ্রম হতেই পাশে পিহুকে চেপে বসে থাকতে দেখে সবার হাসির কারণ বুঝতে পারলো। মুনা বলল
‘ বাহ মাহি তুই তো একদম সঠিক জায়গাটা বেছে নিয়েছিস।
মাহিদ উঠে যেতেই পরী হাত টেনে ধরে রাখলো। বলল
‘ বোস বোস। তুই বসবি না তো কে বসবে? উফ মা তোমরা ওকে লজ্জা দিচ্ছ কেন?
ইশা বলল, আচ্ছা ঠিক আছে আর লজ্জা পেতে হবেনা।
নীরা বলল
‘ শোন আমি একটা খয়েরী রঙের শাড়ি কিনবো ইশু। ব্যারিস্টার খয়েরী রঙ পছন্দ করে।
মুনা বলল
‘ হ্যা বিয়ে তো তোর ছেলের না। বিয়ে তোর আর তোর ব্যারিস্টারের।
সবাই হেসে উঠলো।
রাইনা বলল
‘ আচ্ছা আমাদের কেন তোদের সাথে আনতে হলো বলতো। আমি আমার দাদুভাইকে নিয়ে থাকতাম।
ছিকু বলে উঠলো
‘ কেন থাকবো কেন?
নীরা বলল
‘ এই দেখো প্রতিবাদী ছেলে।
খিকখিক করে হাসতে লাগলো ছিকু।
বরকনের বিয়ের বাজার শেষ হলো। তখন সবাই ক্লান্ত। সবার জন্য কেনাকাটা করতে করতে রাত অনেক হয়েছে। ছিকুর রেহানের কাঁধে ঘুমিয়ে পড়েছে। পিহু বড্ড ক্লান্ত। রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করলো সবাই। ছিকুকে দুটোর চাইতে বেশি খাওয়াতে পারেনি। সে চোখ খুলছেনা।
গাড়িতে বসতেই পিহুর চোখ লেগে এসেছে। ইশা বলল, নীরু সবাই আমাদের এখানে চলে আয়। রাতটা থেকে সকাল সকাল চলে যাস।
‘ না না এটা হয় না। বাড়িতে সবাই আমাদের অপেক্ষায়। কাল মেহেদী। অনেক কাজ।
মাহিদ গাড়িতে বসতে গিয়ে পিহুকে ওভাবে ঘুমোতে দেখে বলল, শালী আইজ আমার লগে কথা কইলি না। তোরে আমি দেইখা নিমু বাপ। তোর ভাব বাইর করুম আমি।
পিহু নড়েচড়ে উঠে আবার ঘুমোতে লাগলো। পরী এসে বলল, ভাই আরেকটু যাহ। পিহুর পাশে যাহ না আর ও। ওমা আমরা বসবো না? মাহিদ গেল। তবে খানিকটা আলগা হয়ে বসলো। সবাই একে একে সামনে পেছনে বসেছে। ছিকু পরীর কোলে ঘুম। মাহিদ তার গাল টেনে ঘুমের মধ্যে আদর করলো। গাড়ি ছাড়তেই পিহুর মাথা তার হাতের বাহুর উপর এসে পড়লো। মাহিদ বলল, ইজ্জত সম্মান সব শেষ করবো এই শালী।
পিহু ঢলে পড়ে যাচ্ছে সেটা মুনা খেয়াল করলো। মাহিদকে বলল
‘ এই মাহি পিহুকে ধর না। কি আশ্চর্য? ও তো পড়ে যাচ্ছে। তুই এমন কেন?
‘ কেমনে ধরুম বাপ? ধুর পারুম না। শরম করে।
সবাই এত ক্লান্তির মাঝে ও হেসে ফেলল। রেহান গাড়ির লাইট অফ করে দিল। শালাবাবু হবু বউয়ের লগে একটু আরাম কইরা বসুক। মা শ্বাশুড়ি আর জেঠির সামনে তার তো লজ্জা করে।
লাইট অফ হতেই রাইনা বলল, আমার চোখ এজন্য জ্বলছিল বোধহয়। উফফ এখন শান্তি লাগতেছে। মাহিদ ও একটু আরাম করে বসলো। পিহু ততক্ষণে তার বুকের সাথে লেগে গিয়েছে। মাহিদের আগে শরম করলে ও এখন করলো না। কারণ কারো চোখে তেমন পড়তেছেনা। এক হাত দিয়ে পিহুকে সযত্নে আগলে ধরে সে মাথা এলিয়ে দিল সিটে। পরী আঁড়চোখো তা দেখে ফিসফিস করে বলল
‘ ভাই জিও জিও।
চলবে,,,,