#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৪,০৫
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
০৪
পিহু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। সোজা হয়ে শুয়ে বলল
‘ এদিকে আসেন আব্বা।
ছিকু পা টিপে টিপে এল। বিছানায় উঠে পিহুর গায়ের উপর উঠে বসলো। বলল
‘ মিহি কুথায়? নাই কেন? মিহির জন্যু মন পুড়িচে কেন?
পিহু খিক করে হেসে ফেলল। ছিকুকে তার পাশে শুয়ে গাল দুটোতে আদর করে দিয়ে বলল
‘ মিহি মারে তারপরও মিহির কাছে কি? পুঁচা আব্বা।
‘ পিহু পুঁচা বলে কেন? মিহির কাছি নিয়ে যায় না কেন?
পিহু বলল
‘ আমি নিয়ে যেতে পারব না আপনাকে। আপনি নিজেই যান। পিহুর পাশের ঘরের পরের ঘরে যাবেন। ঠিক আছে?
‘ পিহুর পাশের ঘরে যাব না কেন?
পিহু কপাল চাপড়ে বলল
‘ আল্লাহ গো আল্লাহ শুধু কেন আর কেন? এই ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাই আমি?
ছিকু খিক করে হেসে ফেলল। বিছানা থেকে নেমে গেল। দূরে গিয়ে হাতের তালুতে চুমু খেল। সেটি পিহুর দিকে ছুঁড়ে মেরে বলল
‘ গুড নাইত। চি ইউ পিহুচুন্নি।
পিহু হাতের তালুতে বসানো চুমু ছুঁড়ে মেরে বলল
‘ গুড নাইট কলিজা।
ছিকু থপথপ পা ফেলে দৌড়ে দৌড়ে চলে গেল মাহিদের ঘরে। মাহিদ তখন নোটে চোখ বুলাচ্ছিল। ছিকু ঘরে ঢুকে হেসে ফেলল মাহিদকে খুঁজে পেয়ে। মাহিদ দেখে ও চোখ তুলে চাইলো না। ছিকুশালা কি করতে পারে সে চুপচাপ দেখছে। ছিকু অত উঁচু খাটে উঠতে পারলো না। এদিকওদিক তাকিয়ে রুমের এককোনায় ভাঁজ করে রাখা প্লাস্টিকের ছোট চেয়ার দেখলো। টেনে টেনে এনে সেটির সাহায্য বিছানায় উঠে পড়লো।
দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে বলল
‘ মিহি ছিকুর দিকে তাকায় না কেন? মুবেল দেখে কেন?
মাহিদ চোখ তুলে তাকালো। পরক্ষণেই চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল
‘ পরীর বাচ্চা ছিকু তোর পায়ে জুতো ছিল?
‘ না ছিকু জুতু পড়েনি কেন?
‘ তো বাপ তুই আমার বিছানায় খালি পায়ে উঠছস ক্যান? শালা নাম। পা ধু আগে। যাহ বাপ। ধুলাবালি লাগায় ফেলছস। যাহ ভাগ বাপ।
ছিকু আলাভোলা চোখে চাইলো। বিছানায় ধপাস করে বসলো। পায়ের তলা তুলে নিজে দেখলো। মাহিদকে দেখিয়ে বলল
‘ ছিকুর পা চুন্দর কেন? ধুলুবালি নাই কেন?
মাহিদ ফোন রেখে দিল। ছিকুর পা টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। পেটের উপর বসালো ছিকুকে। তারপর দাঁড়িয়ে পড়লো। ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলল
‘ শালা তোর চুন্দর পা গুলা আইজ আমি পানিতে চুবায় রাখুম বাপ। দম রাখ।
ছিকু ভয় পেল না। মাহিদের গলা জড়িয়ে ধরে রাখলো। মাহিদ পানির কল ছেড়ে ছিকুর পা দুটো ধুয়ে দিল। তারপর পা দুটো মুছে দিয়ে বিছানায় এনে ছুঁড়ে মারলো। ছিকু মেমোরি ফোমের বেডের কয়েক ইঞ্চি গেঁথে গেল। খিকখিক করে হাসতে হাসতে বলল
‘ মিহি আবার।
‘ কি আবার বাপ?
‘ আবার ছিকুকে ফিলি দাও। আবার।
মাহিদ তাকে টেনে নিয়ে আবার খানিকটা উপর থেকে বেডের উপর ফেলল। ছিকু হাসতে হাসতে বলল
‘ আবার। মিহি আবার।
মাহিদ তার পাশে ধপাস করে শুয়ে পড়লো। ছিকুকে টেনে নিয়ে বুকের সাথে লাগিয়ে রেখে বলল
‘ শালা পরীর বাচ্চা ঘুমা বাপ। আবার টাবার পরে। খবরদার নড়াচড়া করবি না বাপ। ঘুমা।
ছিকু মাহিদের বুকের সাথে লেগে চুপটি করে থাকলো। কিছুক্ষণ পর বলল
‘ ছিকু মাঝিমাঝি পরীর গায়ে সুসু করে দেয় কেন? রেহান বকে কেন?
মাহিদের চোখে তখন ঘুম লেগে এসেছিল। হঠাৎ এমন কথা শুনে ছিকুকে দূরে ঠেলে দিল সে। বলল
‘ শালা ভাগ। তুই বিছানায় সুসু করোস? ছিহ। তুই এত বুড়া একটা বেডা হইয়্যা বিছানায় মুতোস? তোর আক্কেল নাই বাপ? যাহ বাপ ভাগ। তোরে নিয়া আমি ঘুমামু না। যাহ। ফুট।
ছিকু মাহিদের কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। তারপর গড়াতে গড়াতে মাহিদের
বুকের উপর উঠে শুয়ে থাকলো হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে। ঠোঁট ফুলিয়ে বলল
‘ মিহি পুঁচা কেন? ছিকুর সুসুকে দেখতে পারেনা কেন? সুসুকে মুতু বলে কেন?
মাহিদ তাকে সরাতে চাইলো না। ছিকু বকবক করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো। রেহান এসে বলল
‘ ঘুম চলে এসেছে। নিয়ে যায়।
মাহিদ বলল
‘ আজ আমার সাথে থাক। দরজা টেনে দিয়ে যেও।
রেহান আর জোরাজুরি করলো না।
ঘরে গিয়ে পরীকে বলল,
‘ আপনার বাচ্চা মামার সাথে ঘুমাবে আজ।
পরী বিছানার চাদর বিছানো শেষ করে বলল
‘ ঘুম ভাঙলে আমাকে খুঁজবে। কান্না করলে তো মাহির ঘুম নষ্ট হবে। ওকে ছাড়া আমার ও ঘুম আসেনা। নিয়ে আসেন।
‘ মাহিদ দিচ্ছে না। আমি কি করব?
‘ নিয়ে আসেন।
রেহান আবার গেল। মাহিদ ছিকুকে দিল না। রেহান আবার ফিরে এসে বলল
‘ তুমি যাও। আমাকে মাহিদ দিচ্ছে না।
পরী গেল। মাহিদ বলল
‘ শালার মা বাপ। এই ছিকুরে আমি দিতাম না বাপ। যাও ভাগো। কান্না করলে ও দিতাম না। মাথা ফেটে ফেললে ও দিতাম না।
পরী বলল
‘ মাঝরাতে উঠে কান্না করবে ও। দিয়ে দে। তোর ঘুম নষ্ট হবে ভাই।
‘ ধুর বাপ।
পরী বলল
‘ আচ্ছা ঠিক আছে।
ঘরে যেতেই রেহান হেসে বলল
‘ দিল?
‘ নাহ।
পরী গালফুলানো দেখে হেসে ফেলল রেহান। পরীর দু কাঁধে হাতের কব্জি রেখে মাথা টেনে নাকে নাক ঘষে বলল
‘ মিহিকে পেলে আর কিছু লাগেনা আপনার বাচ্চার।
_____________
টিফিনবক্সটা টেবিলের উপর রেখে ইশা বলল
‘ ডক্টর আপনার টিফিন। সময়মতো খেয়ে নিবেন।
আদি এসে তার পথ আটকে দাঁড়ালো। বলল
‘ স্টেথোস্কোপটা খুঁজে পাচ্ছি না মিষ্টি। কোথায় ওটা?
‘ প্রতিদিন আপনি কিছু একটা খুঁজে পান না।
রেগে বলল ইশা। আদি বোকাসোকা চেহারায় চাইলো। বলল
‘ খুঁজে দাও মিষ্টি।
ইশা তন্নতন্ন করে সব জায়গায় খুঁজলো। বলল
‘ কোথাও নেই।
‘ এত তাড়াহুড়ো করছ কেন? আস্তে আস্তে খুঁজো না। আমার কোনোকিছুতে তোমার মনোযোগ নেই।
ইশা সাথে সাথে ফিরে তাকালো। বলল
‘ কি বললেন?
আদি ভ্যাবাছ্যাঁকা খেয়ে মাথা চুলকে বলল
‘ কই? তেমন কিছু না । কথায় কথায় কি বলেছি মনে নেই।
ইশা হনহনিয়ে চলে যাওয়ার সময় আদি তার মাথায় করা লম্বা বেণুনী টেনে ধরলো। ইশা মাথার পেছনে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল
‘ আহ! কি হচ্ছেটা কি?
আদি চুল ছেড়ে দিল। কাছে এসে থুঁতনি ঠেকালো ইশার ঘাড়ে। বলল
‘ তোমাকে রাগাতে ভালো লাগে মিষ্টি।
ইশা সরে পড়ে বলল
‘ যান খুঁজে নেন স্টেথোস্কোপ। আমি পারব না।
বলেই ইশা বের হয়ে গেল।
রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে ছুটতেই ছিকুর গলার আওয়াজ পেল সে। ইশা সেদিকে গেল। দেখলো ছিকু একটি বড় টেডিবিয়ারের পাশে বসেছে। গলায় স্টেথোস্কোপ। টেডির বুকে চেপে চেপে বলল
‘ তুমার অসুখ? তুমার জর? তুমার কাচি? তুমি কথা বুলোনা কেন? ছিকু ডক্টর কেন?
ইশা গেল তার পেছনে। বলল
‘ ভাই ডাক্তারের স্টেথোস্কোপ কোথায় পেলেন আপনি?
‘ ডততরের এসটেসকোপ নিয়ে ফিলছি কেন? ডততর জানেনা কেন? ইশু ওভাবে বলে কেন?
ইশা তাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল
‘ এটি না পেলে ডক্টর খুব কান্না করবে। ডাক্তারকে দিয়ে দিবেন। কেমন?
‘ দিয়ে ফেলবু কেন?
ইশা তাকে নিয়ে ঘরে গেল। আদি ছিকুর গলায় স্টেথোস্কোপটি দেখে বলল
‘ কি আশ্চর্য? এটি তোমার কাছে কি করে ভাইয়া?
ছিকু চুপটি করে থাকলো। ইশা সেটি আদিকে দিয়ে ফেলল। বলল
‘ আমার ভাইয়ের জন্য চকলেট আনিয়েন তো। ইয়া বড় বড় চকলেট। ঠিক আছে।
আদি মাথা নেড়ে বলল
‘ ঠিক আছে।
ছিকু খুশি হয়ে আদির কোলে ঝাপ দিল।
__________
মাহিদ সকালের নাশতা করে চৌধুরী বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। পিহু দশটার দিকে মেডিক্যালের উদ্দেশ্য বের হলো। রিকশা থেকে নেমে ফোন করলো নিশিতাকে। নিশিতা সাথে সাথে ফোন তুলে বলল
‘ বান্ধবী আমি পার্কের দিকে। জিয়াদের সাথে। তুই ও চলে আয়। আইসক্রিম চলবে।
পিহু বলল
‘ তোর সমস্যা কি রে? এত জিয়াদ জিয়াদ করলে স্যারকে বলতেই তো পারিস ভাইয়া আমাকে বিয়ে দিয়ে দাও। ডাক্তারি তোকে দিয়ে হবে না ভাই।
নিশিতা বলল
‘ ধুর বজ্জাত। জিয়াদ কুমিল্লা যাচ্ছে কিছুদিনের জন্য। কতদিন দেখব না। তাই একটু দেখা সাক্ষাৎ। খবরদার ভাইয়াকে বলতে যাস না ভুলে ও। বিয়ের আগে কোনো দেখাসাক্ষাৎ নাই বলেছে তারা। তুই চলে আয়। যাতে পিঁপড়ে ও টের না পায়।
‘ ক্লাস।
‘ ধুর। ক্লাস মিস। কিন্তু আইসক্রিম মিস গেলে চলবে না। চলে আয়। চলে আয়।
পিহু ফোন এপ্রোণের পকেটে রেখে হাঁটা শুরু করলো। তিন মিনিটের পথ। পৌঁছে কিছুক্ষণ এদিকওদিক তাকালো পিহু। কপোত-কপোতীর ভীড়, বেকার বন্ধুমহল, আর ব্যস্ত পথিকের পদচারণা। পার্কটা ছোটখাটো হলেও অপূর্ব দেখতে। চারদিকে ফুলের গাছ আর গাছ। পিহু হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর এগোলো। দেখলো বন্ধুমহলের আড্ডায় দুজন পরিচিত মানুষকে। পিহু ভড়কে গেল। নিনিত আড্ডা ছেড়ে এগিয়ে আসলো। মাহিদ সেদিকে একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল।
‘ এখানে কেন আরিশা ?
পিহু আমতাআমতা করতে করতে বলল
‘ আসলে স্যার। আমি,
পিহু মহাঝামেলায় পড়ে গেল। ওই বজ্জাত নিশি গেল কোথায়? তার ভাই এই পার্কে বসে আছে। আর সে প্রেমিক নিয়ে ঘুরঘুর করছে?
পিহু তোতলাতে তোতলাতে বলল
‘ আসলে স্যার আমি, মানে,
আমি আসলে মাহিদ ভাইয়ের সাথে কথা বলতে এসেছি।
নিনিতের কপালে ভাঁজ পড়লো। পিছু ফিরে আড্ডায় ব্যস্ত মাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ওহ। তো এটা বলতে তোতলাচ্ছ কেন? কি বলবে? ওকে ডাকি?
পিহু না না করে উঠে বলল
‘ না না। কি দরকার? আড্ডা দিচ্ছে দিক। কোনো দরকার নেই।
নিনিত বলল
‘ আরেহ ওসব কোনো কাজের আড্ডা না। আমি ডাকি। দাঁড়াও।
বলতে না বলতেই নিনিত ডাক দিল,
‘ মাহিদ এদিক আয়।
মাহিদ চোখ সরু করে তাকালো। পিহু কাঁচুমাচু করতে করতে বলল
‘ থাক না।
‘ আরেহ থাকবে কেন? ওই এদিকে আসতে বলেছি তোকে।
মাহিদ ধীরেসুস্থে উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে আসলো। বলল
‘ কি হয়ছে?
পিহু মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিনিত বলল
‘ আরিশা তোর সাথে নাকি কি কথা বলবে। তোকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে এসেছে।
মাহিদ কপাল ভাঁজ করে পিহুর দিকে তাকিয়ে বলল
‘ কি কথা?
পিহু জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নিনিত বলল
‘ আমার জন্য আরিশা বোধহয় বলতে পারছে না। আচ্ছা তুই আয়। আমরা আছি।
বলেই মাহিদের পিঠ চাপড়ে দিয়ে চলে গেল নিনিত। নিনিত যেতেই মাহিদ জিজ্ঞেস করল
‘ কি কথা?
পিহু আমতাআমতা করে বলল
‘ না কিছু না। ওই মানে,
মাহিদ ধমকে বলল
‘ সোজাসাপটা বল।
পিহু নরম চাহনি নিক্ষেপ করে বলল
‘ আমার সাথে একটু রাস্তায় আসো। তারপর বলছি।
‘ চল।
পিহু মাহিদের আগে আগে হেঁটে হেঁটে গেল। রাস্তায় যেতেই মাহিদ বলল
‘ এবার বল। আর তোর এত কথা আছে সেটা বাড়িতে যখন ছিলাম তখন তো বলতে পারতি। এখানে আসার কি দরকার?
পিহু বলল,
‘ আসলে আমি স্যারকে কিছু একটা বলতে এসেছি। কিন্তু মনে হচ্ছে এখন বলাটা ঠিক হবে না। মেডিক্যালে বলব। তাই কথা ঘুরানোর জন্য বললাম তোমার সাথে কিছু কথা আছে। তুমি প্লিজ স্যারকে কিছু বলো না। কেমন?
মাহিদ সরু চোখে চেয়ে সন্দিগ্ধ কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
‘ কি কথা বলতে এসেছিস?
পিহু বোকাসোকা গলায় বলল
‘ ধুর তোমাকে বলতে পারব না। আচ্ছা আমি যাই বরং। তুমি স্যারকে কিছু বলিওনা কেমন?
মাহিদ কাঠকাঠ গলায় বলল
‘ ফারদার এসব ফালতু কথা বলার জন্য আমাকে ডাকবি না। তুই যা ইচ্ছা তাই কর। আমাকে কেন সেখানে জড়াচ্ছিস? এক চড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দেব।
পিহু ভড়কে গেল। সব ওই নিশিতা হারামির জন্য। মাহিদ চলেই যাচ্ছিল। পিহু বলল
‘ মাহিদ ভাই স্যারকে প্লিজ কিচ্ছু বলো না। আমি লজ্জায় পড়ে যাব।
মাহিদ সাথে সাথেই তেড়ে এল। গর্জে বলল
‘ আমার কি আর কোনো কাজ নাই? তোর বাপ কি টাকা দিয়ে আমাকে চাকর রাখছে তোর কথা শোনার জন্য? তোর কথা আমি শুনব কেন? আরেহ তুই আমাকে কি মনে করিস?
পিহু থমথমে মুখে চেয়ে থাকলো। মাহিদ বিরক্ত হয়ে বলল
‘ এই যাহ তো। কার সাথে তোর কি কথা সেসব তার সাথে সাড়। যাহ। খবরদার আমাকে টানবি না সেসবের মাঝে। মেরে একদম লাশ বানিয়ে দেব। মাইন্ড ইট।
পিহুর থমথমে চেহারায় যেন কালবৈশাখীর আগাম মুহূর্ত। এত কঠোর কথা কেউ কি করে বলে? মাহিদ এইবার মহাবিরক্ত হলো পিহুর কান্না কান্না মুখ দেখে। বলল
‘ তোর যাওয়া দরকার।
পিহু বলল
‘ আমি আর কখনো তোমার কাছ থেকে সাহায্য চাইবোনা মাহিদ ভাই। তুমি সবসময় আমার সাথেই এমন করো। আর কারো সাথে তো করো না। আমি তোমার কোন জন্মের শত্রু যে তুমি আমাকে কথায় মেরে ফেলার হুমকি দাও। কোন অধিকারে এসব বলো?
মাহিদ মুখ ফিরিয়ে রাখলো। পিহু চলে যাওয়ার আগে বলল
‘ কোনটা তুমি মজা করে বলো, আর কোনটা সিরিয়াস। সেটা আমি বুঝি মাহিদ ভাই। আমি ছোট নই। তুমি আমাকে ওভাবে বলতে পারো না। আমার উপর অধিকার কিসের দেখাও তুমি?
মাহিদ তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
‘ অধিকার? তোর উপর? তোর উপর আবার কিসের অধিকার? তুই হলি আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। দূর,,, সম্পর্কের। ব্যস।
‘ ঠিক আছে। মাথায় রাখব।
বলেই পিহু হাতের কব্জি দিয়ে চোখের কোণা চাপলো। তারপর চলে গেল। মাহিদ আড্ডায় গিয়ে বসলো। আড্ডায় আর মন বসলো না।
চলবে,
কেমন হয়েছে পাঠক? ?
#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৫
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
রিপ তখন কোর্টের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিল৷ কেসের সুনানি আছে। কিন্তু সে ঘড়ি আর পারফিউম পাচ্ছে না। সে খুঁজে ও নি। নীরাকে ডাক দিল।
ঘড়ি আর পারফিউমটা খুঁজে এনে রিপের সামনে বাড়িয়ে দিল নীরা। বিছানার কাছে চোখ রেখে বলল
‘ তাড়াতাড়ি নিন। আপা ডাকছে।
রিপ নিল না। শার্টের হাতা গুটিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল। নীরা পারফিউমটা রেখে ঘড়ি পড়িয়ে দিতে লাগলো। রিপ কপালে ভাঁজ ফেলে বলল
‘ এখনো রাগ করে আছ?
নীরা কথা বলল না। ঘড়ি পড়ানো শেষ করে পারফিউমটা রিপের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যেতেই রিপ তাকে আটকালো। হাত দুটো ধরে এনে তার সামনে দাঁড় করালো। বলল
‘ আমি এতক্ষণ রাগ করে থাকি? এসব কি হচ্ছে নীরা?
নীরা ফোঁসফোঁস করে বলল
‘ ছাড়েন। আপনার সাথে কোনো কথা নেই আমার।
রিপ তাকে ছাড়লো না। টেনে এনে নীরার মাথাটা বুকে রাখলো। বলল
‘ আদর, স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া মমতার পাশাপাশি সন্তানকে শাসনে রাখতে হয় নীরা।
নীরা ফুঁপিয়ে উঠে বলল
‘ ও মজা করে সিগারেট ধরিয়েছিল। আপনি না জেনে,,
‘ মজা করতে করতে মজাটাই একসময় অভ্যাসে পরিণত হবে নীরা। ওর বয়সটা খারাপ। এই বয়সে অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করে। আমি বয়সটা পার করে এসেছি তাই আমি জানি। পিহুর গায়ে হাত তোলাটা ও ওর কাছে মজা। পিহু আদি ইশুর মেয়ে তাই হয়ত গায়ে হাত তুলতে ওর দ্বিধা হয় না। কিন্তু তুমি একবার ভাবো পিহুর মতো যদি অন্য কোনো মেয়ের গায়ে এভাবে হাত তুলে? তখন? পিহুর গায়ে হাত তোলার ব্যাপারটা আদি ইশু জানেনা। জানলে খারাপ লাগতো ওদের। তোমার সন্তানকে আঘাত করেছি বলে তোমার যেমন খারাপ লাগছে, তেমন ওদের ও লাগতো। মাহি এরপর থেকে পিহুর গায়ে হাত তোলার আগে আমার কথা ভাববে। আর রাগ করে থেকো না। দেখি হাসো।
নীরা মাথা তুললো না। বলল
‘ পারব না।
রিপ নিজেই হাসলো। নীরার চুলে হাত বুলিয়ে কপালে অধর ছুঁয়ে বলল
‘ অলরেডি টেন মিনিট লেট। ইশ।
নীরা মাথা তুলে নাকফুলিয়ে বলল
‘ আপনার দেরী হয়নি কখন? মুখ ধুতে গেলে সেখানে একঘন্টা। খেতে গেলে এক ঘন্টা। শার্ট পড়তে গেলে একঘন্টা। এত ধীরগতির হলে লেট তো হবেই।
রিপ চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। বলল
‘ এটা কেমন অভিযোগ নীরা?
‘ এই যে কথাটা বললেন। এটা ও আরেকটু ফার্স্ট বলা যেত। এমন মানুষ আমি আর দেখিনি। এই বাজে অভ্যাসে মোড়া মানুষটার জন্য নাকি আমি দিওয়ানা ছিলাম! পাগল ছিলাম আসলে।
রিপ হেসে বলল
‘ স্বীকার করছ তবে?
নীরা মুখ মোচড়ে বলল
‘ একদম দামে উঠবে না খবরদার।
রিপ হেসে উঠে কপাল ঠেকালো নীরার কপালে।
__________________
মাহিদের পরীক্ষা প্রস্তুতির তোড়জোড় চলছে। ব্যস্ততায় কাটছে তার দিনক্ষণ। সময়ের চাকার সাথে পাল্লা দিয়ে তাকে নিতে হচ্ছে প্রস্তুতি। এদিকওদিক মাথা ঘুরানোর ও সময় নেই। সারাক্ষণ মুখ গুঁজে রাখতে হচ্ছে বইয়ে। বন্ধুমহল আর আড্ডাবাজি থেকে ও দূরে সরে এসেছে ইতোমধ্যে। বন্ধুরা ও ব্যস্ত। টং দোকানে চা খাওয়ার জন্য মন ছুটতে চায়। মাহিদ সায় জানায় না। কারণ এই সময়গুলো বহুমূল্যবান। তাকে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেই হবে।
নীরার মা এল অনেক দিন পর। তার জেঠুর ছয় সন্তান। তাদের বউ বাচ্চা আছে। নীরার মা তাদের সাথে থাকেন। কখনো মনে হয় না ছেলেগুলো তার জা’ য়ের। ছেলেগুলো ও কখনো চাচীরূপে দেখেনা নীরার মাকে। ছোটমাই ডাকে। তবে মায়ের মতো কোনো আবদার অপূর্ণ রাখেনি আজপর্যন্ত। নীরা তাদের একমাত্র বোনই বলা যায়।
অনেকদিন পর মেয়ের বাড়িতে এসে নাতির ভালো করে দুটো কথা বলার জো হলো না। নাতি সালাম করে দুটো কথা বলে সেই পড়ার ঘরে ঢুকলো আর বেরোনোর নামগন্ধ নেই। সন্ধ্যার দিকে মসজিদ থেকে ফিরেই নাজিয়া বানুকে দেখে মাহিদ এগিয়ে গেল। ধপাস করে সোফায় শুয়ে মাথা রাখলো নানীর কোলে। বলল
‘ নানার বউ তোমার মেয়ের জামাইয়ের সাথে দেখা হয়ছে?
নাজিয়া বানু তার মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললেন
‘ হ্যা বলছে তো। আমাকে তো থেকে যেতে বলছে। আমি কি থাকতে পারি ভাই? নাতি নাতনি গুলো আমাকে খুঁজে। তোর বড়নানু অসুস্থ। আমি চলে আসলে একা হয়ে পড়ে। বউগুলো রান্নাবান্না, বাচ্চা সামলাতে ব্যস্ত।
‘ আর অজুহাত চাই না বাপের শ্বাশুড়ি। এইখানেই থাকবা। বুঝলা।
নাজিয়া বেগম হেসে ফেললেন। বলল
‘ বুঝলাম। তোর জন্য মন পুড়ছিল তাই তো চলে এলাম ভাই। তুই এত শুকায় গেছস কেন ভাই?
নীরা চায়ের ট্রে টি টেবিলে রাখতে রাখতে বলল
‘ পড়ার চাপ আম্মা তাই। চা নাও। মাহি চা নে। তোর আব্বা বোধহয় এখানে খাবে না।
আমি গিয়ে দিয়ে আসি।
‘ এখানে খাবে না কেন?
নীরা বলল
‘ আরেহ তোর নানুর সাথে বসে খায় না। তোর নানু মেয়ে জামাইয়ের সামনে লজ্জা পায় তাই।
মাহিদ তার নানুর দিকে তাকালো। বলল
‘ তুমি কিল্লাই আমার বাপেরে শরম পাবা।
‘ তুই বুঝবি না ভাই। তোর বাপ আমার মেয়ের জামাই। তার সাথে একসাথে খাওয়া যায় নাকি?
মাহিদের মাথায় কিচ্ছু ঢুকলো না। চা খেয়ে নানীর কোল ছাড়লো। বলল
‘ পড়া আর পড়া। পড়তে পড়তে আমি মরে যামু বাপ।
নাজিয়া বানু হেসে ফেললেন। বললেন
‘ সবসময় মজা করে এই ছেলেটা।
মুনা এসে বলল
‘ সারাক্ষণ এসব করতে থাকে। কাল আপেলের ঝুড়িতে সব আপেলে কামড় বসিয়ে বসিয়ে রেখে দিয়েছে। যেটা খাবি সেটা পুরো খা, তা না কি অবস্থা করে রেখেছে। ওর বাপ শুনলে তারপর ধমক একটা দেবে। আমি আর নীরু ওর বাপের কানে তুলিনি। কতদিক দিয়ে বাঁচায় জানেন?
নীরা বলল
‘ ও কি এখন বাচ্চামো করার বয়স আছে মা? তুমি একটু বুঝিও তো। ওদিন ইশুর মেয়ে ছোট টা। পিহু আর কি। চড় মেরে কাঁদায় ফেলে দিয়েছে। তারপর ওর আব্বা গায়ে হাত তুললো।
নাজিয়া বেগম অবাক হয়ে বললেন
‘ দেখেছ কান্ড! এটা কোনো কথা? ওর কি এখন মাইর খাওয়ার বয়স আছে?
মুনা বলল
‘ সেটা ওকে কে বুঝাবে ? যা মনে হয় তাই করে।
‘ বিয়েশাদি করলে ঠিক হয়ে যাবে। এখন বাচ্চা বাচ্চা মন তাই ওরকম করে।
নীরা অবাক হয়ে বলল
‘ বিয়ে? মা আমার বাচ্চাটার কি বিয়ে? ও এখনো ছোট। আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমায়। আমার হাতে খায়।
‘ ওমা? ছোট ছোট করে বিয়া করাবানা তুমি? যত তাড়াতাড়ি বিয়া দিতে পারিস ততই ভালো। নাতি নাতনি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাবে।
নীরা বলল
‘ ওর বউ? লাল টুকটুকে বউ! মা আমার বাচ্চা তো সুন্দর। ওর জন্য সুন্দর লাল টুকটুকে বউ লাগবে। ওরকম মেয়ে পেলে বলবা। টুপ করে গিয়ে নিয়ে আসব আমি। কিন্তু উপরে সুন্দর আবার ভেতরে পোকা হলেও চলবে না। তার চাইতে বরং একটা ভালো মেয়ে খুঁজো তুমি। যার সাথে আমার মাহি ভালো থাকবে।
‘ আমার হাতে অনেক মেয়ে আছে। ওর বাপ যখন বলবে তখন আমাকে বলিস। আমি বলব তখন।
নীরা খুশিতে বাকুমবাকুম হয়ে বলল
‘ আচ্ছা। আমি এখন বলে আসি। বউ খুঁজে রাখব। তাকে চেনার দরকার। বুঝার দরকার। তারপর বিয়ে। কেমন?
বলতে না বলতেই নীরা চলে গেল। মুনা বলল
‘ কতদিন পর শ্বাশুড়ি হবে। এখনো নিজেই বাচ্চা।
নাজিয়া বেগম হেসে বললেন
‘ তোমরা সামলাও কি করে? আমি এই মেয়েকে সামলাতে পারতাম না বিয়ের আগে। ওর আব্বা সামলাতো। বাবা পাগল মেয়ে। ওর বাবা মারা যাওয়ার সময় শুধু রিপ আর ওর কথা বারাবার বলছিল। যাক আমি নিশ্চিন্তে থাকি একটা ভালো ছেলের সাথে ওকে তুলে দিতে পেরেছি। একটা ভালো পরিবার পেয়েছে ও। একটা বড় ভাই পেয়েছে, একটা ভালো বোন। এইবার আমি মরে ও শান্তি।
মুনা বলল
‘ মরবেন কেন খালাম্মা? নাতির বউ বাচ্চা দেখতে হবে তো।
‘ সে কপালে থাকলে দেখব।
_____
নীরার মা এসেছে শুনে ইশা এক আবদার করে বসলো। নীরাকে বলল
‘ নীরু আন্টিকে এখানে পাঠিয়ে দে। আমার সাথে কয়েকদিন থেকে চলে যাবে। প্লিজ প্লিজ পাঠিয়ে দে নীরু। না করিস না প্লিজ।
‘ এসব কি বলছিস ইশু? মা কি যাবে?
‘ আসবে না কেন? আমার মা বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই তোর মাকে আসার জন্য বলতাম না। আচ্ছা রাখ।
রিপ ঘরে এসে নীরাকে বলল
‘ কে?
‘ ইশু।
ইশা রিপের গলা শুনে বলল
‘ এই এই রিপদাকে ফোন দে। তাড়াতাড়ি দে।
নীরা ফোন দিল। রিপ ফোন ধরতেই ইশা বলল
‘ রিপদা আন্টিকে আমার এখানে পাঠিয়ে দাও না। কয়েকদিন থাকবে শুধু। প্লিজ রিপদা।
রিপ বলল
‘ তুই এভাবে বললে আমি না কি করে করি ইশু? কিন্তু মা কি যাবে?
‘ যাবেনা কেন? তুমি নিয়ে আসো নয়ত মাহির সাথে পাঠাও। প্লিজ রিপদা। নইলে আমি বড়দাকে বলব।
রিপ বলল
‘ ঠিক আছে। আমি দেখছি।
ইশা খুশি হলো। বলল
‘ আমি জানি তুমি আমার কথা ফেলতে পারবে না। আমি অপেক্ষায় আছি। তুমি আসো।
নীরার মা নাজিয়া বানু ইশাকে সেই ছোট থেকেই চিনতেন। নীরার ক্লাসমেট হওয়ার সুবাদে। তাই তিনিও ইশাকে দেখার লোভ সামলাতে পারলো না। মা বাপ মরা মেয়েটা একটা ভালো ছেলের হাতে পড়ুক সেটা তিনি সবসময় চেয়েছেন।
ইশা রান্না করে ভরিয়ে ফেলল। রিপ নিয়ে আসলো নাজিয়া বানুকে। মাহিদ যেতে পারবে না বলেছে। ইশা রিপকে ছাড়লো না। বলল
‘ আজ থেকে যাও রিপদা। গল্পে গল্পেই তো রাত বারোটা বেজে যায়। প্লিজ। কাল সকাল সকাল যেও। আমি জানি তোমার অনেক কাজ। কিন্তু আমার অনুরোধটা রাখো।
‘ তুই এভাবে কেন বলিস ইশু?
‘ প্লিজ।
রিপ তার মাথায় হাত রেখে বলল
‘ দেখা যাক।
নাজিয়া বেগম পরী পিহুকে বলল
‘ তোদের দেখতে চলে এলাম। আমাকে দেখতে তো যাস না।
পরী বলল
‘ শোনো নানু। কিছুদিন আগে মাহিকে বললাম চল নানুর বাড়ি যাই। একটু বেড়িয়ে আসি। সে সোজা না করে দিল। নিজে যাবেনা আমাদের ও নিয়ে যাবে না। কেমন বজ্জাত ছেলে।
ছিকু নাজিয়া বেগমের কোলে উঠে বসে থাকলো। রিপের আনা চিপস খেতে খেতে বলল
‘ মিহি আসিনি কেন? মিহির জুন্য মন পুড়িচে কেন?
সবাই হেসে ফেলল তার কথায়। পরী বলল
‘ মাইর ও খায়, আবার তার জন্য মনও পুড়ে তাই না?
নাজিয়া বেগম তাকে আদর করে বলল
‘ বাবাহ এতো মিহির জন্য পাগল। মিহি আদর করে তোমায়?
‘ না। মিহি চালা ডাকে। ছিকুর গাল টানি টানি মারে। বাপ বাপ ডাকে।
সবাই হাসতে হাসতে ঢলে পড়ার অবস্থা হলো। ছিকু গালফুলিয়ে বলল
‘ চবাই হাচে কেন? কেন বাপ কেন?
ইশা নাজিয়া বানুকে এক সপ্তাহ রেখে দিল। সপ্তাহ খানেক পরে মাহিদ এল নিয়ে যেতে। ইশা বলল দুপুরে খাবারের পর ছাড়বে। রাইনা ও তাতে সায় দিল। মা চাচীরা মারা গেছেন অনেক বছর। নাজিয়া বানুকে পেয়ে যেন মা মা গন্ধটা নাকে এল। মা বাবাগুলো দীর্ঘজীবি হতে পারেনা?
দুপুরে খাওয়ার টেবিলে মাহিদের পাশে ছিকু বসেছে। মাহিদ তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিল। ছিকু মাহিদের হাতে খেয়ে হাত ঘুরাতে ঘুরাতে বলল
‘ মুজা মুজা। উম উম। মুজা মুজা।
পরী বলল
‘ কি আশ্চর্য! ভাত খাওয়াতে কেয়ামত হয় এই ছেলেকে। এখন মুজা মুজা বলছে? ভাই তুই একে নিয়ে যাহ।
‘ নিয়া যামু ঠিক। কিন্তু এই ছিকু শালার হাগুমুতু সাফ করতে পারুম না বাপ।
ছিকু লজ্জা পেয়ে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল। বলল
‘ মিহি নজ্জা দেয় কেন? মিহি বিদ্দব।
টেবিল কাঁপিয়ে হেসে উঠলো সবাই।
পিহু সেখানে নীরব দর্শক। মাহিদ চোখ তুলে। একপলক তাকালো তার দিকে।
ইশা বলল
‘ আন্টি তুমি আবার আসবে কিন্তু। তুমি ছিলে কত ভালো লাগলো সবার।
নাজিয়া বেগম খেতে খেতে ইশাকে বললেন
‘ তোর পিহু ও তো বড় হয়ে গেছে ইশু । ওর বিয়ের সময় আসবো। একটা ভালো পাত্র দেখেশুনে তুলে দিস। মেয়ে যখন হয়েছে পরের বাড়ি তো যেতে হবে।
পরী বলল
‘ নানু ওর তো বিয়ে ঠিক আছে। ওহ সরি মানে পাত্র ঠিক আছে। শুধু পিহুর মতামতের অপেক্ষা। ও তো ডাক্তারি পড়ছে। তাই।
‘ পাত্র ঠিক? কি রে পিহু আমাকে এতকিছু বললি একবার ও ওটা বললি না?
পিহু আমতাআমতা করতে করতে ইশা পরীর দিকে তাকালো। পরী বলল
‘ নানু পিহু লজ্জা পাচ্ছে। তাই বলেনি।
পিহু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ইশা বলল
‘ কোথায় খেলে? উঠে গেলে কেন?
‘ আর খাব না আম্মা।
পিহু চলে গেল। নাজিয়া বেগম বলল
‘ মাহির পরীক্ষা টরীক্ষা শেষ হোক। চাকরি বাকরি একটা হোক। ওর জন্য ও একটা বউ নিয়ে আসব।
মাহিদ পানি খাচ্ছিল। পাশে বসা ছিকুর গায়ে কুলি করে দিল সে। খুকখুক কাশা শুরু করলো। বলল,
‘ ওরেব্বাপ নানার বউ নানী, আর কোনো কথা পাইলা না বাপ।
ওদিকে ছিকু কান্না করে দিয়ে বলল
‘ মিহি ছিকুকে কুলি করি দিচে কেন? ছিকু ভিজি গিছে কেন? মিহি অচুভ্য কেন?
চলবে