#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৫২
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
রেহানের অফিস ছুটি ছিল। রাইনা ঘ্যানঘ্যান করছিল। তার নাতিটা নেই তার ভালো লাগছেনা। পরী প্যানপ্যান করছিল তার পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।
তাই সে ছিকুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চলে এসেছে। ছিকু প্রথম প্রথম তাকে দেখে খুশিতে কোলে ঝাঁপ দিল। কারো দিকে তাকালো ও না। পরে যখন রেহানের মুখে শুনতে পেল তাকে নিয়ে যাবে এখান থেকে তখন রেহানের কোল থেকে যেই নামলো আর ধারেকাছেও নেই৷ রেহান তাকে খুঁজছে। সে ঘুরঘুর করে দৌড়ে দৌড়ে কিছুক্ষণ এদিক কিছুক্ষণ ওদিকে। ব্যাপারটা কারো চোখে না পড়লে ও মাহিদের চোখ এড়ালো না। মাহিদ মনে মনে হাসলো। তারপর খাওয়ার সময় ধরে আনলো। রেহানের পাশে বসিয়ে দিয়ে বলল
শালা তোরে চৌধুরী বাড়ি আইজ পাঠাই দিমু।
ছিকু থম মেরে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো। ধীরেধীরে নিচের ঠোঁট উল্টে বলল
যিতে মন চায় না কেন?
মুনা এসে তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। মাহিদকে বলল
ওকে খেতে দে তো। এসব বলিস না এখন। তুমি খাও ভাই। মিহির কথা শুনতে হবে না।
মাহিদ আর কিছু বলল না।
ছিকু বলল
রেহান ইকা ইকা চলি যায় না কেন?
সবাই হেসে উঠলো একসাথে। রেহান বলল
আচ্ছা ঠিক আছে। একা একা চলে যাব আমি। কেমন ছেলে আমার!
তেল মালিশ করে করে ছিকুকে খাওয়াতে হলো। মাহিদ খেতে খেতে তাকে মুখ ভাঙিয়ে দিল। ছিকু ভীষণ রেগে গিয়ে বলল
মিহি পুঁচা কেন? চলি যায় না কেন?
কডে যাইতাম?
চুধুরী বাড়ি চলি যায় না কেন?
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। মাহিদ তার পেটে গুঁতো মেরে বলল
যাইতাম না বাপ। ওইডা তোর বাড়ি। আমার শ্বশুর বাড়ি। তোর বাড়িত তুই যাহ। গো।
ছিকু হাতে থাকা চামচ নিচে মাহিদের মাথায় দুম করে মেরে দিল। বলল
মারি ফিলবো কেন?
নীরা বলল
দেখেছিস কান্ড! একদম উচিত হয়েছে। ভাই আর দুটো দাও।
রিপ মাহিদের দিকে সরাসরি তাকালো। মাহিদ মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
আমি কি করলাম। আমাকেই তো মারলো।
ছিকু চামচ দেখিয়ে দেখিয়ে বলল
ইটা দিয়ে মারি ফিলবো কেন? লকতো আনি দিব কেন? লাল করে দিব কেন?
পিহু হেসে বলল
একদম ঠিক কাজ করেছে। কলিজা এবার চুপচাপ খেয়ে নেন তো।
ছিকু খেতে খেতে মাহিদের দিকে তাকালো। মাহিদ তার দিকে না তাকিয়ে খাচ্ছে।
ছিকু অনেক্ক্ষণ মাহিদকে পরখ করে শেষমেশ বলল
মিহি দুক্কু পাচে কেন?
মুনা বলল
মাগোমা সব দিকে তার চোখ। মারবে ও, দুক্কু পাইছে কিনা সেটা ও ভাববে।
মাহিদ বলল
তোর সাথে কোনো কথা নাই৷
ছিকু মন খারাপ করে খেতে খেতে বলল
ছিকু মিহিকে মাচচে কেন? ছিকু পুঁচা কেন?
রেহান বলল
ছিকু ভীষণ পুঁচা। এবার না কথা বলে চুপচাপ খান৷
খাওয়াদাওয়া শেষ হলো। সবাই মিলে গল্পগুজব করার পর রেহান বেরোতো চাইলো । মুনা বলল, যাতে দুপুরের খাবারটা খেয়ে যায়। সবাই মিলে অনুরোধ করায় রেহানকে থেকে যেতে হলো। সন্ধ্যা নাগাদ ছিকুকে নিয়ে বেরোনোর সময় ছিকুর কান্নাকাটি শুরু হলো। সে যাবে না মানে যাবে না। রেহানের কোল থেকে হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে নেমে গেল। মাহিদের কাছে দৌড়ে গিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। মাহিদ কোলে তুলে নিয়ে দু গালে আদর দিয়ে বলল
কোথাও নিয়ে যাইতেছেনা তোরে। আবার নিয়া আসবো। রাতে আবার আসবি তো। কাঁন্দিস না বাপ।
ছিকুর কান্না থামলো। মাহিদের গলা জড়িয়ে ধরে বলল
মিহি যায় না কেন?
মাহিদ সবার দিকে তাকালো। তারপর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
তোরে দেইখা মনে হইতাছে তোরে আমি জোর কইরা শ্বশুর বাড়ি পাঠাইতাছি। কান্না থামা বাপ। তোর বাপ তোরে আবার লইয়্যা আসবো।
রিপ এসে বলল
আমাকে দে।
ছিকুকে রিপের কাছে দিয়ে দিল মাহিদ। রিপ বলল
ভাই তুমি আবার আসবে। যখন মন চায় তখন আসবে। কান্না থামাও৷ রেহান ছিকুকে আবার নিয়ে আসবে তো।
রেহান বলল
হ্যা। রাতেই নিয়ে আসবো। পাপা আমরা রাতেই চলে আসবো এখানে। মিহির কাছে। পরীকে দেখেই চলে আসবো। কেমন?
ছিকু চুপ করে রইলো। রেহান বলল
কেমন? এখন চলে আসেন। আমরা যাব আর আসবো। আসেন।
ছিকু অনেক ভেবেবুঝে কোলে গেল। পিহু এসে কোল থেকে নিয়ে গালে আদরে আদরে ভরিয়ে দিল। বুকের সাথে চেপে ধরে রাখলো অনেক্ক্ষণ। উফফ এটার জন্য তার এত মন পুড়ে, কি করে বুঝাবে?
মাহিদ এসে কোল থেকে নিয়ে ফেলল। বলল
তুই কিল্লাই প্যা পু লাগাইছোস বাপ? ওরে ছাড়।
ছিকু মাহিদের কোলে চলে এল। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তারা রাস্তায় গেল। ছিকু মাহিদকে শক্ত করে ধরে রাখলো। রেহানের কোলে যেই দিতে যাবে সেই আবার ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দিল। মাহিদ গালে কপালে আদর দিয়ে বলল
আমি যাব তোর কাছে। রাতেই যাব। সত্যি যাব।
ছিকুর অতঃপর বিশ্বাস হলো। তারপর ও সে কাঁদতে কাঁদতে রেহানের কোলে গেল।
মাহিদ তার কপালে চুমু দিল। পকেট থেকে ছোট্ট সাইজের একটি কালো ঘড়ি বের করলো।
ছিকু খিক করে হেসে বলল
ইটা ছিকুর ঘুরি কেন?
মাহিদ তার হাতে পড়িয়ে দিয়ে ছোট্ট হাত দুটাতে আদর দিল। বলল
তুই ফালাই দিছোস কাঁদতে কাঁদতে। এখন এটা আমি রাইখা দিলে কি হতো?
রেহান হাসলো। রিকশায় উঠে বসলো। বলল
মামাকে টা টা দাও।
ছিকু হাত বাড়িয়ে টা টা দিতে গিয়ে আবার ও ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দিল। মাহিদ বলল
ওরেব্বাপ এভাবে কাঁদলে তোরে ছাড়তে ইচ্ছা করে?
রেহান বলল
আমরা আবার আসবো তো।
ছিকু তাই কেঁদে কেঁদে বলল
টা টা চি ইউ মিহি।
মাহিদ গালভরে হাসলো। রিকশা চলতে শুরু করলো। ছিকু রেহানের কোল থেকে গলা বাড়িয়ে পেছনে মাহিদকে চাইলো। বলল,
মিহি আলাভিউ।
মাহিদ হেসে উড়ো চুমু পাঠিয়ে বলল
আলাভিউ টু বাপ।
মাহিদ চোখের আড়াল হতে না হতেই ছিকু ফোঁপাতে ফোঁপাতে আবার কান্না শুরু করলো।
মাহিদের এখন আর ঘরে ফিরতে ইচ্ছে করলো না। তাই নিনিত, লাবীব আর তপুকে ফোন দিল।
________________
ছিকু সন্ধ্যা থেকে সোফায় শুয়ে রয়েছে। মাথা তুলছেনা। মিহি আসবে বলে আসেনি কেন?
পরী এসে কোলে তুলে নিল। কত আদর করলো। কত মিষ্টিমিষ্টি কথা বলল। সে ফিরে ও তাকালো না রাগে। ইশা এসে আদর করলো, রাইনা তো আছেই। আদি হসপিটাল থেকে ফিরলো তার জন্য চকলেট চিপস নিয়ে। কোনোকিছুতে সে গলবেনা। মিহি আসবে বলে আসেনি কেন?
আফি বলল
ভাই এটা কোনো কথা? তুমি ছোডমানুষ, তোমার রাগগুলো এমন ক্যান?
রাইনা বলল
থাক। একশবার রাগ করবে। মাহি আসবে বলে আবার আসেনি কেন? আমার ভাই কত কষ্ট পেল। সবাই তার কান্ড দেখে হাসি ও চেপে রাখতে পারছেনা। এটুকুনি একটা বাচ্চা এত জেদ। আল্লাহ!
পরী শেষমেষ ভিডিও কল দিল। মাহিদকে দেখালো। মাহিদ তাকে ওভাবে শুয়ে থাকতে দেখে বলল
শালা তোর কিতা হয়ছে?
ছিকু মাথা তুললো না। ওভাবে শোয়া অবস্থায় বলল
মিহি মাথায় দুক্কু দিচে কেন?
ক্যান মাথায় কি হয়ছে?
মাথা ফাটি ফিলতে মন চায় কেন?
সবাই চোখ বড় বড় করে চাইলো। মাহিদ হেসে বলল
তো আই কিত্তাম? তুই শালা পুঁটিমাছ। তোর মাথা এত গরম হইবো কিল্লাই?
মিছিমিছি বুলো কেন?
মিছা কইতাম না কিল্লাই? তোরে তো পাঠাইতে পারতেছিনা। উঠ। খাহ। পড়। ঘুম যাহ। তিড়িংতিড়িং করোস কিল্লাই? ঢং করোস কিল্লাই?
ছিকু ধপধপ মাথা আছাড় দিতে লাগলো। ইশা গিয়ে ধরলো। বলল
এমন করো না ভাই।
ছিকু মাথা আছাড় দিতে দিতে বলল
মরি যাবু কেন? মিহি এখুনো ইখানে আচেনা কেন?
মাহিদ বলল
শালা নিনিই্যার বিয়েতে যাবি না তুই?
ছিকু মাহিদের দিকে তাকালো। মাহিদ বলল
গাল মুছ। যদি আর কান্দোস তোরে বিয়াতে নিয়া যাইতাম না।
কেন নি যাবে না কেন?
কান্দিলে নিয়া যাইতাম না। কান্না বন্ধ কর।
ছিকু গাল মুছলো। পরী আর ও ভালো করে মুছে দিল। মাহিদ বলল
হুন শালা। তোরে আমি বিয়াতে লইয়্যা যামু। তুই আমার সাথে যাবি বাপ। পিহুনিও থাকবো।
পিহু থাকবে কেন? মুজা মুজা কেন?
হ বহুত মজা। এবার ফোন রাখ। পড়ালেখা কর। সবার কথা শোন।
ছিকু বলল
মিহির সাথি বিয়ে যাব কেন?
ধুরর শালা। তোর কেন কেন’র উত্তর দিতে পারতাম না।
ছিকু খিক করে হেসে দিল। সবার পরাণ জুড়ালো। মাহিদ অনেক কথা বলে ফোন রেখে দিল।
_________
মেহেদীর দিন অনেক ব্যস্ততা নিকিতা বেগমের। তার উপর চৌধুরী বাড়িতে আর খান বাড়িতে ফোন করছেন তিনি। এই দুই বাড়ির মানুষগুলো একটু বেশিই আপন। তাদের সবার আগে চলে আসা উচিত উনার মতে। নীরা ইশা আশ্বাস দিল যে তারা মাগরিবের পরপরই পৌঁছে যাবে। একটু ও দেরী হবে না।
পিহু নীরা আর মুনাকে শাড়ি পড়িয়ে সাজিয়েগুজিয়ে দিয়েছে। এবার নিজের দেরী হয়ে গেল। সবাই এখন তার জন্য বসে আছে। সে ও হালকা করে সেজে নিল। নীরার পড়তে বলা গয়না গুলো শাড়ি পঈার পর পড়বে। শাড়িটা হাতে নিতেই মাহিদ ঘরে ঢুকে এল। পিহু চিল্লিয়ে উঠতে যাচ্ছিল মাহিদকে দেখে হা হয়ে গেল। মাহিদের হাতে দুটো পাঞ্জাবি। একটা তার অপরটি ছিকুর।
পিহু শাড়ি পড়তে মনোযোগ দিয়ে বলল
আমি ভাবছিলাম অন্য কেউ। তুমি এত দেরীতে এলে কেন? সবাই রেডি।
আমার দেরী হবে না।
মাহিদ গোসল নিতে চলে গেল। গোসল শেষ করে বেরিয়ে এল। পিহুর শাড়ি পড়া শেষের দিকে৷ পিহু তাকে ডাকল,
এদিকে এসো।
মাহিদ চুল মুছতে মুছতে বলল
কি?
আসো না।
মাহিদ গেল। পিহু বলল
কুঁচিগুলো ঠিক করে দাও।
কিভাবে করে?
একটা একটা নাও। আমি পিন করব।
মাহিদ বসলো হাঁটু মুড়ে। কুঁচি ঠিক করে দিতে দিতে বলল
শাড়িটা পড়ছিস সেই কখন থেকে।
মেয়েদের সময় লাগে। শার্ট প্যান্ট না যে পড়ে নিলেই হলো।
রাগ করছিস কেন? এমনিই বললাম।
পিহু একদম ফিটফাট হয়ে নিল।
মাহিদ পাঞ্জাবি গায়ে দিতেই পিহু বলল
এটা কবে নিয়েছ? ওটা কার?
নিনিতের কাজ আর কি। ওটা ছিকুর। লাবীব তপুকে ও দিল।
ওহহ। সবাইকে ভালো মানাবে।
মাহিদ বলল
ঘড়িটা দে।
পিহু ঘড়ি খুঁজে দিল। চিরুনি নিয়ে গিয়ে বলল
এদিকে আসো। চুল ঠিক করে দেই।
মাহিদ চিরুনি নিয়ে ফেলল।
আমি পারি।
পিহু ঠোঁট বাঁকিয়ে তার পাঞ্জাবির কলার টেনে ধরলো। বোতাম লাগিয়ে দিতে দিতে বলল
ঘড়িটা তো আমিই খুঁজে দিলাম। আমি পারি কথাটা বলো কেন?
মাহিদ কপাল ভাঁজ করে তাকালো। পিহু তার তাকানো দেখে হেসে ফেলল। বোতাম লাগিয়ে দিয়ে বোতামের উপর ঠোঁট ছোঁয়ালো। গলা জড়িয়ে ধরে বলল
তোমাকে দেখতে ভালো লাগছে।
তোর মতো!
পিহু হেসে উঠলো।
কি বলো? আমি তো কালা মানুষ।
মাহিদ তাকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে বলল
ওসব আমি মজা করেই বলি। সব কথা সিরিয়াসলি নেওয়া ভালো নয়।
কালা তাই কালা বলো। আমি কি সুন্দর?
বলাতে চাইছিস?
বলো।
আগে বলেছি।
আবার বলো।
মাহিদ বলল
পরে একসময় বলব। সময় করে।
পিহু হেসে তার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল
তুমি জানো? তুমি আমার চোখে সারাক্ষণ ভাসতে থাকা মানুষটি। যাকে আমি প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে অনুভব করতাম। তুমি হাত দিয়ে না ছুঁয়ে ও আমায় কিভাবে যেন ছুঁয়ে ফেলেছ। আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে আমার কখনো পাওয়া হবে না। আমরা সেই দূর সম্পর্কের আত্মীয়ই থেকে যাব। বছর ছমাসে আমাদের একবার দেখা হবে। তোমাকে একপলক দেখব দূর থেকে। ইশশ ভাবতেই আমার বুক ভার হয়ে আসছে। তুমি জানো, তুমি আমার জীবনে এক ভয়ানক অসুখ।
মাহিদ তার কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। কপালে শক্ত করে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল,
আমি তোর অসুখ হলে আমিই সেই অসুখের ঔষধ।
_____________
পিহু নীরা মুনা চৌধুরী বাড়িতে চলে এল। সবাই একসাথে যাবে। মাহিদ তাদের পরেই এল ছিকুকে নিয়ে যেতে। সবাইকে দেখে ছিকুর আনন্দের শেষ নেই। মাহিদকে দেখে কোলে ঝাঁপ দিল। অনেক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখলো। মাহিদ তার কান্ড দেখে জড়িয়ে ধরে হাসতে লাগলো। রাইনা বলল
আমার ভাই তোরে কত দেখতে পারে দেখছিস?
মাহিদ তার পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে বলল
শালার মাইর না খেলে চলে না তাই আমারে মিস করে।
ছিকু মাথা তুলে বলল
মিহি ছিকুকে মারে কেন?
মাহিদ হেসে উঠে তাকে আবার জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো। বলল
না তোরে আমি আদর করতাছি বাপ।
সবাই যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছে। পরীর দেরী হচ্ছে। রাইনা বলল, এই মেয়েটা কোনোদিন কি একটু চালু হবেনা?
ইশা বলল
ও পিহুর আশার অপেক্ষায় ছিল। পিহুর হাতে শাড়ি পড়ার জন্য। তাই দেরী হচ্ছে।
নীরা বলল
ইশু দেখ আমার ছেলের বৌ আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিল। আপাকে ও পড়িয়ে দিছে।
ইশা হেসে বলল
ভালোই জ্বালাচ্ছিস তাহলে আমার মেয়েকে।
নীরা বলল
এই না না। ব্যারিস্টারের জন্য কি জ্বালাবো তোর মেয়েকে? চোখে চোখে রাখে ছেলের বউকে। বাপরে বাপ। আমাকে তো পইপই করে বলছে ও ওর বাড়িতে যেমন ছিল সেভাবে এখানে ও থাকবে। ওর অনেক পড়ার চাপ। কাজ করতে পারবে না বেশি। তোমরা কাজ করতে না পারলে কাজের মানুষ রাখো। ওকে শুধু খেতে ডাকবে। আমার মেয়ে হলে যেমন চোখে দেখতে ওকে একই চোখে দেখবে।
ইশা হাসলো। বলল
আমি রিপদাকে চিনি। সবার ব্যাপারে রিপদা সিরিয়াস। তোর ব্যাপারে ও কম না।
নীরা লজ্জা পেয়ে গেল। রাইনা বলল
ওমা তোমাকেই তো নতুন বউয়ের মতো লাগতেছে নীরা। এত লজ্জা কোথায় রাখো?
মুনা বলল
ওর কথা আর বলিয়েন না। আমার ভাইটাকে জ্বালিয়ে মারে।
সবাই হেসে উঠলো। নীরা বলল
ধুরর আমি পরী পিহুর কাছে যাই। সবাই আমাকে নিয়ে মজা করে।
পরী পিহু রেডি হয়ে নিচে চলে এল। গায়ের রঙের কিঞ্চিৎ পার্থক্য না হলে এরা দুটোই জমজের মতো। ইশার চোখ জুড়িয়ে গেল। প্রত্যেকটা মায়ের চোখে সন্তান সুন্দর, আদরের,ভালোবাসার। পিহু এসে বলল
আমি সাজিয়ে দিয়েছি। খুব সুন্দর লাগছে ছিকুর আম্মিকে।
ছিকু মাহিদের কোল থেকে বলে উঠলো।
আম্মা বিটিফুল কেন? পিহি বিটিফুল কেন?
রাইনা বলল
দেখেছিস আমার ভাই কত্ত সুনাম করে সবার। আমার ভাই বললেই হলো।
ছিকু হাসলো রাইনার কথা শুনে। বলল
দাদুউউ নানুউউ বিটিফুল কেন? ইশুবুনু, বেরিসটারের বুউ বিটিফুল কেন?
সবাই আবার ও হেসে উঠলো। পিহু বলল
সবার চাইতে বেশি বিটিফুল আমার কলিজা। কি সুন্দর করে হাসে আব্বাটা!
ছিকু আর ও বেশি বেশি হাসলো। সবাই মিলে বেরিয়ে পড়লো৷ মাহিদ ছিকুকে নিয়ে আলাদা গিয়েছে। রিক, রিপ, আফি, আদিরা ও সময় করে যাবে। মেয়েদের সাথে তাদের কাজ নেই।
সবাইকে আসতে দেখে নিকিতা বেগম, আইমি ভীষণ খুশি। নিনিতের মামার বাড়ির লোকজন পিহুকে দেখার অপেক্ষায় ছিল। প্রথমে একটু অস্বস্থি হলেও পরে নিনিতের সাথে কথা বলতেই সব অস্বস্তি দূর হয়ে গেল এক নিমেষেই। জালিশা মাইশা আর নিশিতাকে পেয়ে তো সব একেবারে ভ্যানিশ।
নিশিতা বলল, সে এক ডিজাইনের শাড়ি এনেছে। সবাইকে ওই শাড়িগুলো পড়তে হবে। পরী বলল
আমি কিভাবে পড়ব? পিহু কত সুন্দর করে পড়িয়ে দিল।
নিশিতা বলল
কিউটি আপু শাড়ি পড়তে বেশিক্ষণ লাগবে না। আমরা আছি কি করতে?
মাইশা বলল
একদম। খুব বেশি সময় লাগবেনা। অত চাপ নেওয়ার দরকার নাই।
জালিশা বলল
বাবু কোথায়? ও আসেনি?
ছিকু?
হ্যা।
ও ভাইয়ের সাথে আসবে। এসে গেছে হয়ত।
জালিশা বলল
ইশ আমার ওর গালটা টানতে ইচ্ছে করছে খুব।
সবাই ওর কথা শুনে হেসে ফেলল। মাইশা বলল
ডাক্তারেরটা টানিও।
জালিশা লজ্জা পেয়ে গেল। বলল
যাহহহ।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো তার কান্ড দেখে।
মাহিদ ছিকুকে নিয়ে হাজির। তারা খেয়েদেয়ে চারজনেই গল্প করতে বসেছে। নিনিতের পাশেই ছিকু বসেছে। যে কথা বলছে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তার হাতে একটি ছানার মিষ্টি। মিষ্টি খেতেখেতে বলল
নিনি জানিচার জেমাই কেন? জানিচা বুউ কেন?
নিনিতের কথা আটকে গেল। সবাই কিছুক্ষণ নীরব থেকে হেসে উঠলো। তাদের হাসি দেখে আশপাশের মানুষ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। মাইশা কাকে যেন খুঁজতে খুঁজতে এল। শেষমেশ মাহিদদেরকে দেখে এগিয়ে এল। বলল
মাহিদ সাহেব ছিকুসোনাকে ওর দাদু নিয়ে যেতে বলছে।
ছিকু মাইশাকে দেখে হেসে বলল
মাইশা বুউ নয় কেন?
মাহিদ ছিকুকে কোলে নিয়ে কানে কানে বলল
লাবির বউ মাইশা।
ছিকু তা শুনে চেঁচিয়ে বলে উঠলো
মাইশা লাবির বুউ কেন? লাবি জামাই কেন?
লাবীবের দিকে চোখ পড়লো মাইশার। দুজনেই হতভম্ব। বাকিরা ও। নিনিত তপুর দিকে তাকালো। একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। মাইশা লাবীবের দিকে কপাল কুঁচকে তাকালো। মুখ ঝামটা মেরে চলে গেল। লাবীব মাহিদের পিঠে দুম করে মেরে বলল
শালা তোর ভাগিনারে কি শিখায় দিছোস? ওই মহিলার এমনিতেই ভাবের শেষ নেই। এখন তো ভাববে আমি বলেছি এসব।
মাহিদ বলল
এত ভাবাভাবির কি আছে রে ভাই? সরাসরি গিয়ে বলে দিবি, মাইশু তোমারে ছাড়া আমার চলে না বাপ। এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে?
লাবীব ইচ্ছেমতো দিল মাহিদকে। ছিকু রেগে গিয়ে বলল
মাইচা লাবিকে বুকা দেয়না কেন? মিহিকে মারে কেন?
মাহিদ ছিকুকে নিয়ে পালালো। নিনিত আর তপু হেসে গড়াগড়ি।
এদিকে মাইশা সেইরকম বোম হয়ে আছে লাবীবের উপর। লাবীবের মা, তপুর মা এল। লাবীবের মা রাজিয়া বেগম পিহুকে দেখার জন্য উতলা। জালিশাকে তো দেখতেই এসেছে। পিহুকে বিয়ের পর আর দেখেনি। মাহিদ পিহু আর জালিশাকে ধরে আনলো। বলল
এগুলো হচ্ছে তোমাগো দুই পুত্রবধূ।
রাজিয়া বেগম বললেন
তুই বাঁদর আর ঠিক হলিনা। এভাবে ধরে আনতে বলছি ওদের?
ওরা দুজনই সালাম করে কুশলাদি বিনিময় করলো। ওনি দুজনের মুখ ছুঁয়ে আদর করলেন। বললেন
অনেক সুখী হও। কি মিষ্টি! কি মিষ্টি! আমি কবে এমন মিষ্টি একটা বৌমা পাব কে জানে?
মাহিদ বলল
ধুরর বাপ এত চাপ নেও ক্যান? আমার কাছে রেডিমেড আছে। অপেক্ষা করো।
বলতে না বলতেই মাইশাকে ধরে নিয়ে আসলো। বলল
দেখো তো এইটা কেমন?
মাইশা সালাম দিল। রাজিয়া বেগম সালাম নিল। মুখ ছুঁয়ে আদর দিয়ে বলল
মাশাল্লাহ! এটা কার বউ?
মাইশা আবার ও মাহিদের দিকে তাকালো। লাবীব এদিকে আসতেই সবাইকে দেখলো একসাথে। মায়ের পাশে মাইশাকে দেখতেই বুকটা ধ্বক করে উঠলো। কেন উঠলো সে জানেনা। তবে সে লুকিয়ে পড়লো দ্রুত। কান পেতে কথা শুনতে লাগলো।
মাহিদ বলল
এইটা হইতেছে মাইশা। তোমার পোলা এইডারে হেব্বি পছন্দ করে। মা হিসেবে তোমার উচিত এদের লাইন ঠিক করে দেওয়া।
মাইশা যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। বোবা হয়ে গেল সে। শুধু আলাভোলা হয়ে সবার দিকে তাকাচ্ছে। লাবীব দ্রুত প্রস্থান করলো সে জায়গা থেকে। যার মাহিয়ের মতো বন্ধু আছে তার ইজ্জত সম্মান নামক কিছু রাখা দায়।
চলবে,,,