মন_গোপনের_কথা #পর্ব_৫৪ ( সমাপ্তি পর্ব )

0
963

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৫৪ ( সমাপ্তি পর্ব )
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

মাইশা নিশিতা পিহু মিলে নিনিতের ঘরটা সাজিয়েছে। পিহুর সাথে ছিকু থেকে গিয়েছে। ছিকু বিছানার উপর বসে ফুল গুলো শুঁকছে আর একটা একটা প্রশ্ন করছে সবাইকে। মাইশা বলল

দুষ্টু ছেলে কি করছে?

মাইচাকে দিখি কেন?

মাইশা হাসলো। নিশিতা বলল

আমার ও একটা ছিকু লাগবে রে।

পিহু আর মাইশা হেসে উঠলো। পিহু বলল

তাই?

হুমম।

কেন? ছিকু লাগবে কেন?

ছিকুর প্রশ্ন শুনে নিশিতা ছিকুর পাশে গিয়ে বসলো। গালে আদর দিয়ে বলল

আমি ছিকু বাবুর বিরাট ফ্যান তাই।

কেন নিচি ফেন কেন?

পিহু এসব প্রশ্নের উত্তর হয়?

না হলে ও তোকে দিতে হবে। কেন তুই ছিকুর ফ্যান?

বলেই হেসে উঠলো পিহু। ঘর সাজানো শেষ হতেই সবার খাবারের ডাক পড়লো। নিকিতা বেগম আর আইমি সবাইকে খেতে বলল। কিন্তু খেতে হা করলো না কেউ । পিহু বলল

আন্টি বিয়েতে যা খেয়েছি তা এখনো পেটে রয়ে গেছে।

সারারাত না খেয়ে থাকবে? এটা কোনো কথা?

নিশিতা বলল

এই তোরা বোস। আমি সবাইকে খাইয়ে দেই। ছিকুসোনাকে ও খাইয়ে দেব। ও না খাইয়ে থাকবে নাকি?

পিহু বলল

ও একদমই খেতে চাইছেনা। আপেল খাবে শুধু।

আইমি কয়েকটা আপেল, আঙুর আর মাল্টা নিয়ে এল। বলল

ছিকুসোনাকে দাও। আর তোমরা খাও।

জালিশা তাদের ঘরে চলে এল।
আইমি বলল

তুমি না শাড়ি পড়ে হাঁটতে পারছ না?

তো কি আমি বসে থাকবো একা একা?

নিশিতা বলল

ভাবি এসেছেন? আসুন, আসুন। বসুন।

জালিশা তার পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে বলল

চুপ। একদম ভাবি ডাকবি না।

তুই আমার একমাত্র ভাইয়ের বউ। ভাবি না ডাকলে চলে?

তার কথায় সবাই হেসে উঠলো। নিশিতা সবাইকে খাইয়ে দিল। জালিশা বলল

সবাইকে খাইয়ে দিচ্ছিস, আমি খাব না? আমি তো ভালো করে খাইনি। সবাই বলছিল ওটা বউ ওটা বউ। কি লজ্জা!

নিশিতা বলল

আয় খাইয়ে দিই।

ছিকু আপেলে কামড় দিয়ে বলল

জানিচা নজ্জা পাচে কেন?

জালিশা হেসে উঠলো। বলল

কে জানে?

নিশিতা তাকে বলল

ছিকুসাহেব আপেল এখন রাখেন। আগে ভাত খান।

ছিকু দূরে সরে গেল। বলল

আপিল খিতে মন চায় কেন? ভাতু খিতে মন চায় না কেন?

মজা তো।

মুজা নাই কেন?

ধুরর বাঁদড়।

মাংকি ডাকো কেন?

পিহু তাকে টেনে আনলো। কোলে শুইয়ে তার হাতে থাকা আপেলে কামড় দিয়ে বলল

একদম চুপ। সবাইকে পাগল বানানোর জন্য থেকে গেছে আমার সাথে।

ছিকু বলল

পিহু আপিলে কামুড় দিচে কেন? রাক্ষুচী কেন?

পিহু হেসে উঠলো উচ্চস্বরে।

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই মিলে জালিশাকে তার ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসলো। জালিশা চারপাশটা চোখ বুলিয়ে বলল

এগুলো তোমরা করেছ?

মাইশা বলল

তো কারা?

সুন্দর হয়েছে ভীষণ।

নিশিতা বলল

তোর লজ্জা নাই বেয়াদব? আমি যখন প্রথমদিন ওই ঘরে গিয়ে এসব দেখলাম লজ্জায় শেষ। আর এ বলে সুন্দর হয়েছে। নির্লজ্জ।

পিহু আর মাইশা একসাথে হেসে উঠলো। মাইশা বলল

নিউ এক্সপেরিয়েন্স।

জালিশা মুখ মোচড় দিয়ে বলল

লজ্জা কেন পাব? তুই কি আমার শ্বাশড়ি? এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? সবাইকে চিনি জানি।

ওহ আচ্ছা। এই কথা তাহলে?

হুহ।

ছিকু একটা ফুল ছিঁড়ে পকেটে লুকিয়ে ফেলল। পিহু ধমকে বলল

কলিজা কি করছে?

চুরি কচচি কেন?

হায়হায় চুরি করছে আবার বলে ও।

দেখি বের করেন।

ছিকু ভয়ে ভয়ে বের করলো। মাইশা বলল

এটা কার জন্য নিছেন ছিকুসাহেব?

বুউয়ের জন্য নিচি কেন?

কার বউ?

ছিকুর বুউ।

সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

জালিশাকে টা টা দিয়ে সবাই চলে গেল৷ জিয়াদ সবার ঘর সাজানোর টাকা দিয়ে দিয়েছে। বউয়ের একটা মাত্র ভাইয়ের বাসর বলে কথা।

নিনিত শেরওয়ানি পাল্টে সেই বেরিয়েছে আর নামগন্ধ নেই ফেরার। মাহিদদের সাথে একটু ঘুরেফিরে রাত করে ফিরলো। খাবেনা সেটা ফোন করে মাকে জানিয়ে দিয়েছিল। বাড়ি ফিরে ঢুকে পড়তেই ঘরের অবস্থা দেখে সে বোকাবনে গেল। তার উপর তার ঘরে আরেকটা মানুষের উপস্থিতি। একটু সময় লাগলো ব্যাপারটা মেনে নিতে। না এটা তো আর তার ঘর নেই। এটা আরেকজনের ও ঘর।

জালিশা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। ওরা যে শিখিয়ে দিল সালাম দিতে হয়। তার তো ভীষণ লজ্জা করছে। এখন কি হবে? জালিশা পা টিপে টিপে নিনিতের সামনে গেল৷ আহ এত অস্বস্তি। নিনিত চোখ তুলে তাকাতেই যেন বুকের ভেতর আন্দোলন শুরু হলো। আহ কি যন্ত্রণা! কি ভয়ংকর অনুভূতি।

আসসালামু আলাইকুম।

সালাম দিতে দেরী। নিতে দেরী নেই।

নিনিত হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলল

তুমি এখনো ওসব পড়ে আছ?

পাল্টে নেব?

আমি শেরওয়ানি পাল্টানোর সময় জানতে চেয়েছি?

জালিশা মুখ গোঁমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো। নিনিত বলল

সুতির শাড়ি থাকলে পড়ে নাও।

আচ্ছা।

জালিশা শাড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। নিনিত আঁড়চোখে তাকালো। বলল

বাইরে যেতে হবে?

হুম৷

নিনিত বেরিয়ে গেল৷ বলে গেল, সময় পাঁচ মিনিট।

জালিশা শাড়ি পড়ায় পটু না। সে জীবনে ও এসব পড়েনি। তার এলোমেলো লাগে। এখন পড়তে গিয়ে মনে হলো শাড়ি পড়ার মতো জটিল কাজ আর হয় না। তাও কি আর করার। কোনোমতে পেঁচিয়ে পড়ে নিল। তারপর বলল

আসতে পারেন এবার।

নিনিত ফোন টিপছিল বাইরে দাঁড়িয়ে। রুমে ঢুকতেই জালিশার দিকে নজর গেল। জালিশা শাড়িটা নিয়ে এইওই করতে লাগলো। পা বাড়াতে গিয়ে দেখলো সে ভীষণ টাইট করে পড়েছে। ভালো করে পা বাড়ানো যাচ্ছে না। আল্লাহ কি হবে এখন?

নিনিত গম্ভীর গলায় বলল,

নিশির কাছ থেকে শিখে নেবে কাল।

জালিশা মাথা নাড়ালো। একটু একটু হেঁটে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। গয়নাগুলো খুলে রেখে দিল। শাড়িটা ও রেখে দিল।

বিছানার এককোণায় এসে বসলো পা টিপে টিপে এসে। নিনিত এসে বসলো। জালিশার বুক ধ্বক করে উঠলো সাথেসাথে। একলা একটা ঘরে প্রিয় মানুষের পাশে বসে থাকার অনুভূতির ব্যাখ্যা হয় না আসলে। মন কেমন করা একটা অস্থিরতা লাগছে। এই যে রোবট মানব, দরকার হলে তাকায়, প্রয়োজনে কথা বলে, হুটহাট কাছে এসে বসে পড়ে এগুলোর বাইরে আর ও কত কি আছে। জানেনা নাকি? জালিশার ইচ্ছে হলো আরেকটু কাছে গিয়ে বসতে। কাঁধে মাথা রাখতে। কিংবা বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হতে। এখন তো আর দূরের মানুষ নেই।

মিষ্টি একটা চেহারা। মিষ্টি তার হাসি। মিষ্টি গলা। সবার সাথে মিশে যাওয়া। জালিশার এই এই গুণ গুলো আছে বলে নিনিত শুনে এসেছে। কিন্তু কখনো পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। আঁড়চোখে তাকিয়ে ও সেটা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। নিজের মানুষ তো হয়ে গেল তাহলে এত দোটানা কেন মাঝে? তবে আগের চাইতে যে এই মেয়েটি তার খুব একটা কাছে চলে এসেছে সেটা মানতেই হবে। এটাই পবিত্র বন্ধনের শক্তি। বিয়ে হয়ে গেলেই মাঝখানে থাকা একটা শক্ত আবরণ মুহূর্তেই সরে যায়। হালকা হয়ে যায় অস্বস্তি, দূরত্ব ও ঘুঁচে যায়। নইলে এই দু তিন হাত দূরত্বে বসে থাকাটা ও অনেক কিছু। তবে এভাবে বসে থাকা কিংবা চুপ থাকাটা শোভনীয় নয়। নিনিত আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে পারছেনা। জালিশা ও বলবে বলবে করে বলতে পারছেনা। দুজনেই চুপচাপ বসে রইলো। শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ আর কোনো শব্দই স্পষ্ট নয়।

নীরবতা ভেঙে নিনিত বলল

ছাদে যাবে? নাকি বারান্দায়?

জালিশা হকচকিয়ে তাকালো। তাকিয়েই থাকলো। নিনিত ভুরু নাচিয়ে বলল

কোথায় যেতে চাও?

আপনি যেখানে যাবেন।

তাহলে ছাদে চলো। ঠান্ডা বাতাস আছে।

জালিশা মাথা নাড়ালো। পরক্ষণে মনে পড়লো সে হাঁটতে পারবে না ভালো করে। তাই বলল

না যাব না।

কেন?

হাঁটতে পারব না। বারান্দায় যাই?

হুম।

দুজনেই বারান্দায় গেল। ঘরের মধ্যে যে দম বন্ধ বন্ধ লাগছিল সেটা এখানে লাগছেনা৷ জালিশার ঠোঁট হাসি চড়লো। বলল

এখানে আসলেই ভালো লাগছে।

নিনিত পেছনে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। একদম নির্জন একটা রাত৷ ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ। হুতুম পেঁচার ডাক৷ জোনালি পোকাদের ছোটাছুটি ।

একদম যেটা কখনো ভাবেনি সেটাই হলো। নিনিত হুট করে তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। জালিশা সামনে ফিরে তাকে দেখে শুকনো ঢোক গিললো। কিছু বলে উঠার আগেই নিনিত তার ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বলল

চুপ। আমাকে স্বাভাবিক হতে দাও৷ নইলে তুমি কিচ্ছু পাবেনা।

জালিশা চুপ করে থাকলো। ঠোঁটের উপর চেপে বসা আঙুলটার স্পর্শ তাকে কাঁপিয়ে তুলেছে৷ নিনিত পকেট থেকে একটা জিনিস বের করলো৷ ঝুনঝুন করে উঠলো। ঘুঙুরটা কোমরে বেঁধে দিতে গিয়ে উদরে হাত লেগে যাওয়ায় জালিশা চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল৷ বলল

আমি ঘরে যাব।

যাওয়া যাবে না। এটা কাল কাউকে দেখাবে না।

কেন?

চুপ একদম৷ যেটা বলছি সেটা।

সবাই জিজ্ঞেস করবে।

করুক।

পড়ানো শেষ করে নিনিত হাত রেলিঙে রাখলো। জালিশা চোখ নিচু করে ঘুঙুরটা দেখে চমৎকার হাসলো৷ এই আনন্দের নাম হয় না।

আমি আপনাকে কি দেব?

কিছু লাগবে না।

জালিশা হেসে উঠলো।

নিনিত ভুরু কুঁচকে বলল

হাসছ কেন?

জালিশা তার কাছ ঘেঁষে বুকে মাথা রাখলো। পুরুষালী গন্ধ মস্তিষ্কে পৌঁছে একদম পাগলপারা করে দিল তাকে। একদম শক্ত করে নিজের মাথা ঠেকিয়ে সে বলল

আমি আপনাকে রোজ রোজ একটু একটু করে ভালোবাসতে শেখাবো। হবে?

নিনিত কি উত্তর দেবে? তাই বলেই ফেলল

হু।

জালিশা হেসে আরেকটু শক্ত করে ধরলো। বলল

তাহলে হাতদুটো দিয়ে আমাকে শক্ত করে ধরুন। আজ থেকে শেখা শুরু।

নিনিত হাতদুটো বাড়িয়ে নরম শরীরটা ধরতেই অবস্থা কাহিল। তার বুকের ভেতরটা এত কাঁপছে কেন? কেমন আওয়াজ হচ্ছে!

জালিশা বলল

আপনার ভেতরের তোলপাড় আমি বুঝি।

নিনিত চুপ করে থাকলো তাকে ধরে। এই মেয়েটা তার ভেতরের অবস্থা কি করে টের পেল?
জালিশা চোখ বুঁজে গুঁজে গেল একদম। নিনিত তার হাত চুলের উপর রাখলো। সে কারো ভালোবাসায় ঋণী হতে চাই না। যতটুকু পাবে বরঞ্চ তার চাইতে বেশি ফিরিয়ে দেবে। সবসময় জালিশাকে এগিয়ে থাকতে দেওয়া যাবে না।

__________________

তার পরের দিন ছোটখাটো করে আবার বৌভাতের আয়োজন হলো তাদের। মাহিদ এসে খেয়েদেয়ে পিহু আর ছিকুকে নিয়ে গেল। ছিকু তো বেজায় খুশি৷ কিন্তু তার খুশিতে এক বালতি পানি ঢেলে দিল রেহান৷ তাকে নিয়ে গেল চৌধুরী বাড়ি । আহা মাহিদের কাঁধে মাথা ফেলে সে কি কান্না।!
তার সারাক্ষণ মিহির সাথে থাকতে মন চায় কেন?
মাহিদ বহুকষ্টে নিজে গিয়ে দিয়ে আসলো। তারপর লুকিয়ে লুকিয়ে চলে এল।

পিহুর ক্লাস কোচিং শুরু । পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে হবে। অনেক হলো ফাঁকি দেওয়া বিয়ের অজুহাতে।
পিহুর পড়াশোনা চলছে আর মাহিদের ভাইবা পরীক্ষা ও গেল। এবার রেজাল্টের অপেক্ষা।
শীতের আগমনী বার্তা হিসেবে ঝাপসা ভোরের দেখা গেল। নীরা ভাবলো ছেলেমেয়ে দুটো কোথাও বেড়াতে গেলে ভালো হয়। পরীক্ষাটা ও গেল। এখন না গেলে আর কখন যাবে?
তাছাড়া তাদের বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ বড়দেরকেই করে দিতে হবে । নিনিত জালিশা ও আছে। যেতে পারবে৷ মাহিদ প্রথমে হ্যা না কিছু বলল না। পিহুর পড়াশোনার ক্ষতি হবে। কিন্তু পিহু তো একদম উঠে পড়েছে। সে যাবে মানে যাবেই।
মাহিদ সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতেই পিহু তার পিছুপিছু ঘরে গেল। মাহিদ ঘাড় ঘুরিয়ে বলল

কি?

পিহু তার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। গন্ধ শুঁষে বলল

রাজী হয়ে যাও। বেড়াতে যাব। প্লিজ প্লিজ।

মাহিদ বলল

তোর পড়াশোনা।

আমি পুষিয়ে নেব প্লিজ। তুমি কিছু না বললে মা বাবা যেতে দেবে না। প্লিজ। আর কখন যাব?

মাহিদ কিছু বলল না। পিহু মনে মনে আল্লাহ করতে লাগলো যেন রাজী হয়। উফফ পড়াশোনা! এখন কোথায় ঘুরবে ফিরবে আর বাচ্চাকাচ্চার মা হবে। তা না শুধু পড় আর পড়।

মাহিদ মত দিল। কিন্তু সে বন্ধুদের ছাড়া কোথাও বেড়ায় না। অতএব বন্ধুদের নিয়ে যেতে হবে। পিহু বলল

তাতে কি সমস্যা সবাইকে যেতে বলো। আমরা ও যাব।

অন্যদিকে নিশিতা নিনিতের সাথে কান্না কাটি শুরু করে দিল। তার এখন কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে। কক্সবাজার, সাজেক সে যাবেই যাবে। কেউ তাকে বুঝিয়ে কূল পেলনা যে তার এই সময় জার্নি করাটা ঠিক হবে না।
তাই নিনিত সিদ্ধান্ত নিল নিশিতাকে কারে করে নিয়ে যাওয়া হবে৷ ওদের মতো যেতে পারবে না। কক্সবাজার ঘুরে তারপর সাজেক ও সাজেকের আশেপাশে জায়গা যাবে। পিকনিক ও খেলবে। সবাই যখন যাচ্ছে মাহিদ ভাবলো মাইশাকে ও বলা যায়। মাইশার বাবা রাজী হলো না প্রথমে। কারণ লাবীবের মায়ের সাথে ওনাদের কথাবার্তা চলছে। বিয়ের আগে ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা তিনি পছন্দ করেন না। কিন্তু নিশিতা জেদ ধরলো। মাইশাকে নিয়ে যাবেই। পরে মাইশার মা বাবাকে বুঝিয়ে বলল মাহিদ। মাহিদ বলায় তিনি রাজী হলেন মেয়েকে ছাড়তে। মাইশা ও খুশি। সবার সাথে সময় কাটাতে পারবে এর চেয়ে ভালো কিছু হয় না। মানুষগুলো ভীষণ আপন।

সবাই যাবে কিন্তু ছিকু যাবেনা এটা হয়? পরী বলল

ভাই তোরা সবাই যাচ্ছিস। আমরা মা ছেলে কি দোষ করলাম?

ছিকু পরীর মুখে মুখে বলল

কি দুশ কললাম?

মাহিদ বলল

খাইছে। হানিমুনে যাইতাছি আমরা৷ শালা এখন দলবল শুধু বাড়তেছে। ঠিক আছে তোমার জামাইরে কও। আরেকবার হানিমুন যাওয়া যাক।

ভাই সত্যি?

হ সত্যি!

পরী তো খুব খুশি৷ তার খুশি দেখে ছিকু মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে বলল

মুজা মুজা।

আয়োজন করতে করতে তিন চারদিন চলে গেল। জালিশা ভাবলো তারা চারজন গেলে তেমন মজা হতো না। এখন সবাই থাকবে কি মজা হবে? ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে। নিনিত হসপিটাল থেকে ফিরতেই জালিশা ছুটে গেল তার কাছেই। চোখের চশমা খুলে তার চোখে লাগালো। গলা জড়িয়ে ধরে হেসে বলল

ডাক্তার সবাই যাচ্ছে। পিকনিক হবে। ইশশ কি আনন্দ হবে। আপনি খুশি?

নিনিত মাথা নাড়লো৷ সে বাইরে থেকে আসলে জালিশার এসব আহ্লাদীপনা এখন স্বাভাবিক। বরঞ্চ কপালের মাঝখানে সন্তর্পণে ঠোঁট ছুঁয়ে না দেওয়াটা বড়ই অস্বাভাবিক। জালিশা ছাড়বে না তাকে। তার প্রাপ্যটা বুঝে সে তবেই নিনিতকে ছাড়লো। তারপর গোছগাছে লেগে পড়লো।

পরদিনই সবাই এক জায়গায় এসে থামলো। সবার হাতে স্যুটকেস। পরী আর রেহান ও এল গাড়িতে করে। ছিকু চোখে কালা চশমা পড়ে রেহানের কোলে। সবাইকে দেখে খিকখিক করে হাসলো। মাহিদকে বলল

মিহি হিনিমুন যায় কেন? চবাই হিনিমুন যায় কেন? ছিকু হিনিমুন যায় কেন?

সবাই একসাথে হো হো করে হেসে উঠলো। যে বাসটা ভাড়া করে হয়েছে ওটাতে সবাই উঠে পড়লো। এসি থাকায় কারো অসুবিধা হলো না। নিশিতা আর জিয়াদ কারে যাবে। সাজেদ যাবে কি যাবে না তা নিয়ে জিয়াদ দ্বিধাদ্বন্ধে আছে। তার বউটা ভীষণ জেদী। এত জেদী হওয়া ভালো না।

কক্সবাজারের পাশেই হোটেলে উঠলো সবাই। রুম পড়েছে অবিচ্ছিন্ন ভাবে। ভালোই হলো নইলে বারান্দার দাঁড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করা যেত না।
বিশ্রাম নিয়ে সবাই সন্ধ্যার আগেই বেরিয়ে পড়লো। সমুদ্রের সেই আছড়ে পড়া ঢেউ, নোনা পানিতে পা ভেজানো। সূর্য ডুবার সেই মোহনীয় দৃশ্য। আহা মনপ্রাণ প্রশান্তিতে ভরে উঠে। ছোট্ট বাচ্চাটির কি আনন্দ! এই প্রথম সে এমন জায়গা দেখলো। বালুতে বসে কত আঁকিবুঁকি আঁকলো। একটা মিহি আঁকলো, একটা পিহু আঁকলো, একটা মিহির মিইয়্যা আঁকলো। পানি এসে সেগুলো সব মুছে দিতেই কি কান্না তার। পানিতে গড়াগড়ি আর পানিতে নেমে মিহির সাথে দুষ্টুমিষ্টি মুহূর্তগুলো তারজন্য কি আনন্দের। হাসি সরেনা মুখ থেকে। তারমধ্যে কত খাওয়াদাওয়া।
মাহিদ ফুটবল এনেছিল। ছিকু সবার সাথে ফুটবল খেললো। সবার আগে তার হাসির আওয়াজ বেশি শোনা যাচ্ছে। মাহিদ তাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিল। বলল

শালা তুই না এলে তে আমার ভালা লাগতো না জামাই।

জেমাই বুলো কেন? বুউ নাই কেন?

মাহিদ আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হাসলো তার কথায়। তারপর সবাই ক্লান্ত হয়ে ফিরলো যার যার ঘরে। খাওয়া দাওয়া করলো সবাই একসাথে। তারপর বারান্দায় দাঁড়িয়ে আবার ও সেই কলকল পানির শব্দে হারিয়ে যাওয়া। শাঁ শাঁ বাতাসে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচল উড়ানোর মুহূর্তেগুলো দারুণ উপভোগ্য। ভীষণ মিষ্টি। আবার ও একসাথে বসে গল্পগুজব করা। হাসিঠাট্টা মজা ছিকুকে নিয়ে দুষ্টুমিষ্টি খুনসুটিতে অর্ধেক রাত পার করে দেওয়ার মতো আনন্দ আর দুটিতে নেই।

সারাদিনের জার্নি আর ছোটাছুটির কারণে ক্লান্তিতে চোখ বুঁজে আসছিল পিহুর।বিছানায় পড়ে রইলো নরম হয়ে। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে।
মাহিদ এসে তাকে এই অবস্থায় দেখে চিন্তিত হয়ে বলল

শরীর খারাপ লাগছে তোর?

পিহু মাথা নাড়ালো।

না। ক্লান্ত লাগছে। রাত অনেক হচ্ছে। কখন ঘুমাবে?

তুই ঘুমা। আমার মুখ হাত ধুঁতে হবে। কেমন কেমন লাগছে।

মাহিদ মুখ হাত ধুঁয়ে আসলো। দেখলো পিহুর চোখে ঘুম নেমে গিয়েছে। মাহিদ তার গায়ে কাঁথা জড়িয়ে দিল। পাশে শুয়ে বুকে টেনে নিতেই পিহুর চোখ ছুটে গেল। মুখ উপরে তুলে মাহিদের দিকে চেয়ে রইলো। নিঃশ্বাসের ঘ্রাণ নিল। আঙুল দিয়ে মুখে আঁকিবুঁকি আঁকতে আঁকতে ফিসফিস করে বলল

শোনো আমার না কেমন কেমন লাগছে।

কেমন?

আমি না কাল ও বুঝিনি। জানো? হঠাৎ মনে হচ্ছে শরীরের অবস্থা দেখে।

মাহিদ চিন্তিত গলায় বলল

কি হয়েছে?

বকবে না তো?

না। বল।

পিহু মাহিদের হাতটা নিল। ভয়ে ভয়ে তার উন্মুক্ত উদরে হাতটা চেপে রাখলো। চেপে ধরলো। মাহিদ বোকাসোকা চোখে তাকালো। বলল,

কি হয়েছে?

পিহু হাসলো। অধর অধরের দূরত্ব ঘুঁচিয়ে নিল। কানে কানে বলল

আমার মনে হচ্ছে কেউ আসছে।

মাহিদ পলকহীন, শব্দহীন চেয়ে রইলো।

সমাপ্ত………

মাঝেমাঝে হুটহাট ওদের নিয়ে লিখবো। তবে আর কন্টিনিউ করা সম্ভব নয়। আমি চাইনা লিখায় বিরক্ত আসুক। ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। ভালো থাকবেন। ভালো রাখবেন। ভালোবাসা ♥️।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here