#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#পর্ব_১৬
লেখনীতে #পুষ্পিতা_প্রিমা
কয়েকজন সিনিয়র সেনা অফিসার সহ সেনা ডাক্তারের আওয়াজ কানে বাজতেই অচৈতন্য মানবীর পাশ থেকে উঠে তাঁবুর বাইরে বেরুলো তানজীব।
হাউ ডিড শী গেট হিয়া’র মেজর?
ডোন্ট নৌ স্যার।
সেনা ডাক্তার বললেন
তার জ্ঞান ফিরুক। আমরা নিশ্চয়ই জানতে পারব।
সেনা ডাক্তার অনেক্ক্ষণ ধরে তাকে নিরীক্ষণ করে টেন্ট থেকে বেরুলেন। তানজীব বলল
এনিথিং সিরিয়াস স্যার? ইজ শী ওকে?
সেনা ডাক্তার জানালেন তার খাওয়াদাওয়া ঠিক ছিল না, সাথে মানসিক চাপ এবং ভয়ের কারণে সেন্সলেস। ভালো খেয়েদেয়ে ঘুমালে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছুক্ষণের মধ্যে জ্ঞানও ফিরবে। তাছাড়া তার ঠান্ডাজনিত সমস্যাও বেড়েছে।
তিনি ভরসা দিয়ে বললেন,
ডোন্ট ওয়ারি, টেক কেয়ার অফ হার মেজর। শী ইজ ইয়োর স্পেশাল ওয়ান।
তানজীব মাথা দুলিয়ে সায় জানালো।
সহকর্মী অফিসারেরা সন্দিগ্ধ চোখে চাইলো তানজীবকে। রসিক গলায় বলল
ইতনা কুচ হোগেয়া মেজর! অর হাম নেহি জানতে তে?
তানজীব কি বলবে খুঁজে পেল না।
মে খুদ কুচ নেহি সামাজতা। সরি..
সবাই হাসলো হো হো করে। পিঠ চাপড়ে কিছু আদেশ উপদেশ দিল। আর সেনা ডাক্তার জরুরী মেডিসিন নেওয়ার তাড়া দিলেন রাহার জন্য।
সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তরুণ সৈনিকদের এদিকওদিক ছোটাছুটির কারণে শক্ত বুটের জোরালো আওয়াজে জ্ঞান ফেরার পর রাহা চারপাশে চোখ বুলিয়ে ভাবছিল সে কোথায় আছে, কোথায় এসেছে। ভয়েরা যখন দানা বাঁধতে শুরু করছিল তখন দেখলো তাঁবুর দরজা সরিয়ে উঁকি দিল সৌষ্ঠব এক আর্মি সেনা। রাহা পা গুঁটিয়ে বসলো শক্ত তোশকের উপর। গোলগাল চোখে তাকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে তানজীব হাসলো। আস্তে করে বলল
বাইরে আসতে পারেন মিস কবির।
রাহা এক লাফে দরজার মুখোমুখি চলে এল। শাড়ির আঁচল টেনে নিয়ে গায়ে জড়াতেই গিন্নি গিন্নি ভাব এল। লজ্জায় আড়ষ্টতায় সে তাকাতে পারছেনা। নিজেই এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছেনা সে মেজরের কাছে চলে এসেছে আগাপাশতলা কিছু না ভেবে। পরে কি হবে সেটা সে ভাবেনি।
তাবু থেকে বের হতেই দেখলো কয়েকটা তরুণ সৈনিক কালো কাঠ এনে রাখছে তাবুর পাশেই। রাহা তাদেরকে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে তানজীবের পেছনে গিয়ে লুকোলো। তানজীব ঘাড় ঘুরিয়ে বলল
আর ইউ ওকেই?
রাহা একপলক চোখ তুলে তাকিয়ে আবার মাথা নামিয়ে বলল
হুমম।
সৈনিক গুলো চলে গেল। তানজীব তার জুতো পাটি নিয়ে এল হাতে করে। পায়ের কাছে রেখে বলল
পড়ে নিন।
রাহা জিভে কামড় দিয়ে বলল
জুতো ধরলেন কেন?
ধরলে কি হয়?
ভালো না।
জুতোটা পড়ে নিয়ে সে তানজীবের দিকে আবার চাইলো। তাকে আপনি আপনি করে বলছে কেন? তখন তো,, সে কি ভুল শুনেছিল নাকি? আজকের সবকিছু এত এত স্বপ্ন লাগছে কেন? তাদের সত্যিই দেখা হলো খোলা আকাশের তারা ভরা জ্যোৎস্না রাতে? কুয়াশা-মাখানো চাঁদের আলোয় সবটা কেমন অনুজ্জ্বল, ফ্যাকাশে। ভারী সুন্দর।
রাহা কাঁপছে। তানজীব তার কালো চাদর ঘাসের উপর বিছিয়ে বলল
শিশিরে ভিজে গিয়েছে। ওভাবে কেউ ফেলে দেয়? এটা আর পড়া যাবে না। বসতে পারেন।
রাহা শাড়ির আঁচল টেনে নিয়ে বসলো চাদরটার উপর। এমা এত শীত কেন? কতক্ষণ থাকতে হবে এভাবে?
তাঁবুর ভেতর থেকে বোতলে করে কি একটা এনে কাঠের উপর ঢেলে দিল তানজীব। দেশলাই ছুঁড়তেই দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো কুয়াশাজড়ানো কাঠগুলো। আগুনের লালচে আলোয় দুপাশে বসে দুজন দু’জনের মুখ এবার ভালো করে দেখতে পেল বটে। চাহনি বেশিক্ষণ স্থির থাকলো না তবে। রাহা হাত বাড়িয়ে আগুন তাপ নিয়ে হাতে মুখে লাগিয়ে নিচ্ছে বেশ যত্ন করে। আগুন জ্বালানো শেষ করে তানজীব তাঁবুর ভেতর ঢুকে পড়লো। চট্টগ্রামে আসার সময় কোনো বাড়তি কিছু নিয়ে আসেনি সে। মোটা মিলিটারি পোশাক রঙা ব্যাগটার ভেতর হাত ঢুকাতেই তার যাবতীয় জিনিসপত্রের সাথে রাখা ঘন জলপাই রঙা মিলিটারি জ্যাকেটটা নিয়ে বেরিয়ে এল।
রাহার কাছে এসে চাদরের বাকি অংশ দেখিয়ে বলল
আমি এখানে বসলে সমস্যা হবে?
রাহা লাজুকভাবে মাথা নাড়ালো। তানজীব বসে জ্যাকেটটা তার গায়ে উপর দিতেই রাহা সেটি টেনে নিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করে বলল
থ্যাংকস।
পরে তানজীবের উত্তর না পেয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
সরি।
তানজীব তার কোমল হাত নিজের বলিষ্ঠ হাতের ভেতর নিয়ে বলল
হাহ! হাতটা এত ঠান্ডা কেন?
রাহা মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলে চুপচাপ বসে রইলো লজ্জিত হয়ে।
হাতের তালুতে হাত রাখতে গিয়ে মিনি ব্যান্ডেজ দেখে ভ্রুকুটি হলো তানজীবের।
এসব কি করে?
রাহা হাত নিয়ে ফেলার চেষ্টা করতেই তানজীব ধরে রাখলো।
কি লুকচ্ছ?
আপনি থেকে তুমিতে নেমে আসাতে রাহা এবার শান্তি পেল। বলল
পিনের খোঁচা পড়েছিল। তেমন কিছু না।
তানজীব তার অন্য হাতটা দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘষতে ঘষতে বলল
খিদে পেয়েছে?
সেই বেলা তিনটেই ট্রেন ধরেছিল রাহা। আর এখন রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই। খিদে লেগেছে বটে। কিন্তু সে বলল না কিছু।
তানজীব বলল
ডোন্ট ওয়ারি। ম্যাডামের জন্য খাবার আসবে। তো এতদূর কিভাবে? অধীরের কাজ নিশ্চয়ই।
রাহা তার দিকে চোখ তুলে চাইলো। তানজীব আগুনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে রাহার দিকে তাকালো। রাহার বুকের ভেতর উতালপাতাল প্রেমের তোলপাড় চলছে। মানুষটা এভাবে তাকায় কেন?
হ্যা জিজুই তো । আপনি খুশি হননি?
আমাকে খুশি করার জন্য এসেছ?
ভুল ভাঙানোর জন্য।
আচ্ছা।
আপনি জিজুকে বকবেন না তো? সত্যি আমার আসতে একটুও সমস্যা হয়নি। জিজু উনার দলের একটা ছেলের সাথে আমাকে পাঠিয়েছে। ছেলেটা ষোল বছর হবে হয়ত। আমাকে আপু ডেকে ডেকে পুরোটা পথ মাথা খেয়ে নিয়েছে। কিন্তু আমার খুব ভালো লেগেছে। তারপর কি হলো জানেন?
শুনছি। বলতে থাকো।
তারপর, ট্রেন থেকে নামলাম। সিএনজি নিলাম। পাহাড়ের কাছে আসতে আসতে পুরো পা ব্যাথা, ওসব তেমন কিছু না। সে যাইহোক পাহাড়ের কাছে অনেক হাঁটার পর দেখলাম কয়েকটা দারোয়ান। মানে পাহাড়া দিচ্ছিল।
হুম ওরা সৈনিক।
আচ্ছা? তাই হবে। ওরা আমাকে একদম আসতে দিচ্ছিল না। ভয় দেখাচ্ছিল। রবিনকে আমি অনেক আগেই চলে যেতে বলেছিলাম। ও তার ফুপুর বাসায় থাকবে আজকে। এখানে পাশেই নাকি।
আচ্ছা। ওই ছেলেটার নাম রবিন?
হুম। তারপর আমি কি করলাম জানেন? আপনি শুনছেন না কেন?
তানজীব এবার তার দিকে ঘুরে বসলো। তার নরম হাত নিজের গালের পাশে চেপে রেখে তাকিয়ে বলল
শুনছি বলতে থাকেন।
ধারালো ছোট ছোট দাঁড়িগুলো হাতের তালুতে বিঁধে গেল রাহার। শিউরে উঠলো সে।
তারপর আমি বললাম মেজরের কাছে যাব। ওরা বিশ্বাসই করলো না। বড় বন্দুকটা দেখিয়ে ভয় দেখালো। আমি ভয় পাওয়ার মেয়ে নাকি? আমি মেজরের…..
তানজীব বক্র হাসতেই রাহা কথা ঘুরালো,
সে যাইহোক আমি তাদের কথা না শুনে ছুটে এলাম তাঁবুর আলোকে উদ্দেশ্য করে। দেখলাম অনেকগুলো আর্মি। তারপর ভীড়ের মধ্যে চলে এলাম। মেজর কোথায় জিজ্ঞেস করতেই সবাই হৈচৈ শুরু করে দিল। কেউ কেউ আপনার দিকে মুখ করে ডাকছিল মেজর বলে। আমি ভেবেই নিলাম আপনিই মেজর। কি যে খুশি লাগছিল তখন। আমি তো খুশিতে কেঁদেই দিয়েছি। মনে হচ্ছিল যুদ্ধে জয় করেছি।
তাই?
ফিসফিস হাস্কি গলার আওয়াজে সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো রাহার। চোখে চোখ রাখতে কেমন কেমন লজ্জা আড়ষ্টতা শঙ্কা ভীতি দূর হয়ে গেল। ভরসা করা যায় এই মানুষটাকে।
হাত দুটো গাল থেকে নামিয়ে দুহাতের উম দিয়ে বলল
আচ্ছা, তারপর কি হবে?
রাহা চুপ করে রইলো। আসলেই তো। কি হবে এরপর?
সোজা হয়ে বসে চিকন বাঁশের ফালিটা আগুনে ছুঁড়ে মারলো তানজীব।
আমাকে বাইরে যেতে হচ্ছে প্রাণো।
রাহার উচ্ছ্বসিত মুখখানা অন্ধকারে তলিয়ে গেল।
তুমি বিয়ে করবে?
হ্যা। করবো না? আপনি চলে যাবেন। আমি বিয়ে না করে বসে থাকবো নাকি? চলে যান।
পা গুটিয়ে হাত দিয়ে পা দুটো আগলে ধরে বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজল সে। তানজীব হেসে দাঁড়িয়ে পড়লো
কাকে তে বলিনি প্রাণো। বাচ্চাই রয়ে গেলে। বসো খাবার নিয়ে আসি। ওরা দেরী করছে কেন কে জানে?
তানজীব বলতে বলতে কিছুদূর এগিয়ে যেতেই রাহা একলাফে দাঁড়িয়ে পড়লো। জ্যাকেটের হাতায় হাত ঢুকিয়ে তানজীবের পেছন ছুটে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে অস্থির গলায় বলল
কাকে বলেছেন?
তানজীব তার হাঁটুতে হাত রেখে রাহার দিকে ঝুঁকে পড়লো। ফিসফিস করে ভরাট গলায় বলে উঠলো…
আপনার মেজরকে।
রাহার চোখগুলো স্বাভাবিকের চাইতে বড় হতেই তানজীব হেসে উঠলো।
আনসার?
রাহা চট করে তাকে পিছু ফিরে দাঁড়ালো। হাঁপাচ্ছে সে। দুহাতে মুখ ঢেকে নিয়ে বলল
আপনি যেখানে যাচ্ছেন যান।
কানের কাছে ফিসফিস করে তানজীব বলল
ওকে।
তানজীব যেতেই রাহা ছুটে এসে আগুনের সামনে বসলো। তানজীব কিছুক্ষণ পর এল খাবারের প্যাকেট নিয়ে। সেনাদের জন্য আসা খাবার। খিঁচুড়ি আর সেদ্ধ ডিম। দু পিস মুরগীর রোস্ট।
আজকে আপনার কপাল ভালো ম্যাডাম, খিঁচুড়ি জুটে গেল।
তাহলে রোজ সবাই কি খায়?
রুটি, ডাল, সবজি মাঝেমাঝে ব্যাতিক্রম কিছু। মিশনে এলে তো এসবই খেতে হবে।
আমার ডানহাতে ব্যান্ডেজ।
জানি। আর সুযোগ খুঁজতে হলো না।
আপনি সত্যি খাইয়ে দেবেন?
পুরু হ্যান্ডগ্লাভস খুলতে খুলতে তানজীব একপলক তাকালো তার দিকে।
আপনাকে উপোসে কি করে রাখি?
রাহা ঠোঁট টিপে হাসলো। মাথা নত করে বলল
আচ্ছা আপনাকে আমি কোনো একদিন খাইয়ে দেব।
সে ঠিক আছে। ভেতর থেকে হ্যান্ডওয়াশটা নিয়ে আসুন। কুইক…….
আমি খুঁজে না পেলে….
বলতে বলতে তাঁবুর ভেতর ঢুকে পড়লো সে। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে বলল
মেজর খুঁজে পাই না।
মন দিয়ে খুঁজে দেখো প্রাণো…
রাহা আবারও ভেতরে ঢুকে গেল। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে তানজীবের পাশে এসে বলল
পেয়ে গেছি।
মন দিয়ে কোনো কিছু খুঁজে দেখলে পাওয়া যায়।
মন দিয়ে কোনো কিছু চাইলেও পাওয়া যায়। না?
তানজীব হেসে বলল
সামটাইমস। নট অলওয়েজ।
রাহা পানি ঢেলে দিল। হাত ধুঁয়ে নিল তানজীব। মুখে পানির ছিটকে দিতে দিতে বলল
মুখ ধুঁতে হবে?
হুম।
বামহাতের তালুতে পানি নিয়ে মুখ ধুলো রাহা। তারপর নিজ হাতে রাহাকে খাইয়ে দিতে দিতে কতশত গল্প সেড়ে নিল দু’জন। অনেক কথা জমে পড়ে ছিল যে।
কাঠে আগুন কমে এল। খাওয়াদাওয়া শেষ করে কয়েকটা কাঠ এনে আগুনে ফেলে কয়েকজন সৈনিককে একসাথে কি কি যেন আদেশ উপদেশ দিয়ে রাহার কাছে এগিয়ে এল তানজীব।
ভেতরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন ম্যাডাম। ব্ল্যাংকেট আছে। ভয়ের কিছু নেই। ঠিক আছে?
রাহা মাথা দুলালো। বলল
আপনি কি আশপাশেই থাকবেন?
হ্যা। আপনাকে একা রেখে কোথায় যাব? যান।
কোথায় থাকবেন আপনি? অন্য তাঁবুতে?
বললাম তো তোমাকে একা রেখে কোথাও যাব না। যাও। আমি এখানেই আছি। রাহা অবাক হয়ে বলল
এখানে বসে থাকবেন?
তানজীব হতাশ হলো তাকে বুঝাতে না পেরে। হাত ধরে টেনে তাঁবুতে ঢুকে বলল
যাও ঘুমিয়ে পড়ো। একদম সকাল সকাল ভোর না হতেই জেগে উঠতে হবে। গুড নাইট প্রাণো।
রাহা গালফুলিয়ে বসে রইলো। একটু বুঝিয়ে বললে কি হয়? তারজন্য কি মেজরের ঘুমের অসুবিধা?
তানজীবের অন্য তাঁবুতে যাওয়ার কথা। কিন্তু রাহাকে একা তাঁবুতে রেখে অন্য তাঁবুতে ঘুম আসবে না তার। তার কাছে এখন সে আমানত। তাঁবুর খুঁটির সাথে কয়েক কাঠ পরপর সাজিয়ে রাহার চাদরটা বিছিয়ে দিয়ে খুঁটির সাথে মাথা লাগিয়ে বসলো সে। বেশ আরাম লাগছে। কিন্তু আগামী দিনের চিন্তায় ঘুম এল না চোখে। আর মাত্র দুটো দিন আছে তার কাছে।
রাহা গায়ের কম্বলমুড়ি দিয়ে তোশক থেকে নেমে তাঁবুর মোটা তেরপালের মতো ভারী কাপড়টি পিন দিয়ে হালকা করে ফু্টো করলো প্রায় সাত আট মিনিটের মতো সময় নিয়ে। যা শক্ত কাপড়। বাপরে বাপ। তাতে চোখ লাগিয়ে মেজরকে দেখছিল সে। কোথায় কি করছে মেজর? কিন্তু যা দেখলো তাতে বুক কেঁপে উঠলো। তারজন্য উনি এত কষ্ট করছেন? এই কনকনে শীতের রাতে? তার গায়ের পরিহিত জ্যাকেট আর জড়ানো নরম,পাতলা অথচ উষ্ণ কম্বলটাতে মেজরের গায়ের সুবাস লেগে আছে। তোশকের উপর এপাশ ওপাশ করতে করতে ভাবলো তার আজ ঘুম আসবে না একটুও। তাই সে বেরিয়ে গেল তাঁবু থেকে। তখন কাঠের আগুন প্রায় নিভে গিয়েছে। তাঁবুর ভেতরকার আলো আর দূরের তাঁবুর আলোর সাথে চাঁদের নিজস্ব আলোয় আলেকিত চারপাশটা। গলা ফিরিয়ে অর্ধশায়িত চোখবুঁজা মেজরকে দেখে সে ভাবলো সত্যি এমন একটা রাত এসেছে তার জীবনে? এগুলো যে তার স্বপ্ন।
গায়ের কম্বলটা তানজীবের গায়ে জড়িয়ে দিল সে আপাদমস্তক। গলার কাছে গুঁজে দিতে গিয়ে হাতজোড়া কেঁপে উঠলো তার মেজরের কড়াপড়া হাতের স্পর্শে। কম্বলটা সরিয়ে রাহার গায়েও জড়িয়ে দিয়ে একহাতে রাহাকে আগলে ধরলেন তিনি। রাহার বিস্মিত ছলছলে নয়নজোড়ায় ডুবে গিয়ে অন্য হাতে মুখের দুপাশে উড়োচুল গুঁজে দিতে দিতে বললেন
কালকেই সব দূরত্ব ঘুঁচিয়ে নেব প্রাণো। যা হবার হবে। যাওয়ার আগে তোমাকে আমার করে রেখে যাব।
চলবে