মন_নিয়ে_কাছাকাছি #পর্ব_২৬

0
827

#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#পর্ব_২৬
লেখনীতে #পুষ্পিতা_প্রিমা

ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে ঘুরছে। একমুঠো সোনালি রোদ জানালা ফুঁড়ে মেঝেতে এসে পড়েছে। দুটো দোয়েল পাখি আরামসে বসে পালক ঝাড়ছে গাছে। একে অপরের সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠেছে তারা। হঠাৎ চাপা গলার স্বর ভেসে এল….

ম্যাডাম খেতে আসুন।

রাহা পাখিগুলোর দিক থেকে চোখ সরিয়ে ঘাড় ঘুরালো। তানজীব আঙুলের ইশারায় আবার ডাকলো।

কাম।

আপনি যান। আমি আসছি।

ওকে। তাড়াতাড়ি কিন্তু।

হুম।

জানালার পর্দা টেনে আঁচল টেনে মাথা ঢেকে রুম থেকে বের হতেই সানজু এসে বলল

তুমি নিজেই সব রেডি করে এখানে এসে বসে আছ? তাড়াতাড়ি আসো। ওরা আমাকে টিকতে দিচ্ছেনা।

একটু বেশি করে না?

মারাত্মক করে। তানজীব ভাই তো আরও বেশি। সবাই কত করে বলছে তোমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে। না যাবেনা। এক কথা। তুমি বুঝাও না রাহা আপু সরি থুক্কু ভাবি।

রাহা হাসলো। বলল

আপু ডেকো। ভালো লাগে।

ওকে তাহলে তো আরও ভালো।

রাহাকে আসতে দেখে সবাই তানজীবের দিকে চাইলো। গালের ভেতর কি একটা যেন চিবোতে চিবোতে সে ফোন টিপছে। রাহান বলল

আরেহ রাহা এসো। তোমার জন্যই তো বসে আছি।

রাহা মিনার পাশে গিয়ে বসলো।

বাবু কোথায় আপা?

ওর ঘুম আটটায় ভাঙে। নে খাওয়া শুরু কর।

সেলিম সাহেব আর সাজ্জাদ সাহেব তানজীবকে সেই তখন থেকে পরখ করে যাচ্ছে।

খাওয়ার সময় ফোন টিপা বন্ধ রাখ। আগে পেট শান্তি কর।

তানজীব চোখ তুলে চাইলো।

তোমরা খাও না। সারাক্ষণ আমার পেছনে পড়ে থাকো কেন? আজব!

সবাই ঠোঁট টিপে হাসলো। রাহান বলল

সারাক্ষণ প্যাঁচাল পাড়তে থাকে। আম্মা এই দুটোকে কি চাকরি ধরিয়ে দেব? ব্যবসা এদের জন্য না।

হাহ? তোমার টাকা কি আমরা খরচা করি যে চাকরি ধরিয়ে দেবে? তোমার ডাক্তারি আর ওর মিলিটারির টাকায় আমরা চলিনা। সিগারেটের খরচাও লাগেনা।

তানজীব ভুরু উঁচিয়ে বলল

ঠেস মারছো?

মনোয়ারা বেগম বললেন

বাবু তোরা কথা বলিস না। সানজু বলল

মাগোমা খাবার টেবিলেও ঝগড়াঝাঁটি। শান্তি নাই।

সাজ্জাদ সাহেব কিছু বলতেই যাচ্ছিল। তানজীব হাত দিয়ে থামিয়ে বলল…..

এখন খেতে দাও। আর কোনো কথা বলবেনা।

হ্যা কথা সব আমরাই বলি। সব আমাদের দোষ। তুই যে দোষ করোস সেটা তো বলিস না। স্বীকারও করিস না।

আমি কোনো দোষ করছিনা।

রাহান বলল

চাচ্চু চুপ করবে?

সাজ্জাদ সাহেব চুপ করলেন না। এবার রাহাকে বললেন

শোনো মেয়ে তোমার জামাইকে বুঝাও। বিয়েটা তো আর না মেনে উপায় নেই। এবার যাতে বাড়ি ফেরে। ও কাজে চলে গেলে তোমার এখানে কেউ থাকবে না। আমেনা আর রমিজ মিয়া তো সারাবছর পড়ে থাকতে পারবেনা এখানে। ওদেরও বাড়িঘরে যেতে হবে।

রাহা তানজীবের দিকে তাকালো প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে।
তানজীব মুখ দিয়ে চ’ কারাম্ত শব্দ করে বলল

এত জেরা করছে কে বলোতো তোমাদের? এত জোর করে মেনে নিতেই বা কে বলছে? আমি জোর করেছি?

রাহার দিকে তাকাতেই রাহা কপাল কুঁচকালো। আশ্চর্য মানুষ! একটু শান্ত গলায় বুঝিয়ে বললে কি হয়।

তানজীব তোয়াক্কা করলো না রাহার দৃষ্টি। বলল

শোনো ওকে ওর বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেব। ওখানেই থাকবে।

সবাই হা করে তাকালো। মিনা বলল

কিন্তু ভাইয়া এটা কি ঠিক? কেন এই সিদ্ধান্ত? এমা এটা হয় না।

সব হয়।

খানসা বেগম বললেন

মানুষে কি বলবে? বলবে বউকে খাওয়াতে পড়াতে পারেনা তাই বোধহয়….

কে কি বলবে তা আমি ভাবিনা।

সেলিম সাহেব খাওয়া শেষ করে দাঁড়িয়ে পড়লেন। বললেন

হ্যা তুমি তো হিরো। কার কথায় কি যায় আসে? এই তোমরা ওর সাথে আর একটা কথাও বলবে না। ঘাড়ত্যাড়া ছেলে। তোর বাপ থাকলে লাঠি পেটা করে সোজা করে দিত। মরে গিয়ে আমাদের ঘাড়ে ঘাড়ত্যাড়া একটাকে তুলে দিয়েছে।

তানজীব কান চুলকালো। রাহা তার দিকে নাক ফুলিয়ে তাকাতেই চোখ টিপলো সে। বিস্ময়ে দুঠোঁট ফাঁক হয়ে এল রাহার। এত অসভ্য মানুষ! সবাইকে চেঁতিয়ে দিয়ে এখন চোখ টিপছে?

রাহান বলল

তুই কি করতে চাইছিস আমি জানিনা। কিন্তু রাহাকে ওখানে রাখাটা ভালো হচ্ছেনা। তোর সিদ্ধান্তকে আমি সবসময় রেসপেক্ট করি কিন্তু আমার কথাটা ভেবে দেখিস।

সানজু বিরক্ত গলায় বলল

কোথায় ভেবে রেখেছি রাহা আপুর সাথে ভালো সময় কাটাবো। ধুরর।

তানজীব আর রাহান চলে যেতেই মিনা রাহাকে বলল

কি রে তুই কিছু বলবি না? ভাইয়া হুটহাট সিদ্ধান্ত নিচ্ছে আর তুই চুপচাপ?

খানসা বেগম বলল

ওরজন্য জল্লাদ বউ দরকার ছিল। এরকম নরমতরম বউ পেয়ে যা খুশি করছে।

তানজীবের ডাক ভেসে এল তক্ষুণি। মিনি প্রাণোকে ডেকে দে..

মিনা বলল

যাহ তো।

রাহা বলল

এগুলো গুছিয়ে দিয়ে যাই?

আমরা আছি। যা তো বাবা। ভাইয়াটা একেকটা বলে একেক সময়।

রাহা মাথা দুলিয়ে চলে গেল। ঘরে গিয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বলল

আপনি কি বলুন তো? সবসময় ওদের রাগিয়ে দেওয়ার তালে থাকেন । মুরব্বিরা উনারা। আপনি কি?

আমি ওদের চিনি ম্যাডাম। আপনি মাত্র দুদিন ধরে চিনছেন। ওদের টাইট দিতে হবে। আপনার ওসব ব্যাপারে মাথা ঘামানোর দরকার নেই।

আপনি ভীষণ পাজি একটা লোক।

আই নৌ দ্যাট। রেডি হয়ে নিন। থানায় যাব।

আমিও?

হুমম।

রাহা খুশিতে আবারও জিজ্ঞেস করলো

সত্যি?

হ্যা।

থ্যাংকস মেজর।

ওয়েলকাম মাই ওয়াইফি।

____________________

থানায় যেতে না যেতেই রাহা রাজিয়া বেগম, আশরাফ আর অন্তরাকে দেখতে পেল। সাথে তার মামারাও আছে। আমজাদ সাহেবের দু একজন বন্ধু দেখা গেল। সাথে গণ্যমান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।

রাহা মা ভাইকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লো। যে অজানা একটা অনুতাপে দগ্ধ হচ্ছিল এতদিন মা আর ভাইকে পেয়ে তার অনুতাপ অনুশোচনার ভার কেমন যেন কমে গেল। রাজিয়া বেগম মেয়েকে আদর করলেন। বললেন

তোর বাপ তোকে বিধবা করতে চাইলো রে মা। আমার ছোট মেয়ে তুই। আমি কত আদরে বড় করেছি। গায়ে একটা আঁচড় লাগতে দেয়নি কখনো। আর তোর বাপ নিজের হাতেই তোর সর্বনাশ করতে চেয়েছে। আজ তোর বাপ ছাড়া পাবে। কিন্তু পরে যদি আবারও ছেলেটার পেছনে লেগে থাকে?

রাহা মায়ের গাল মুছতে মুছতে বলল

আম্মা আম্মা এভাবে কেঁদো না। দেখো উনাকে তখনও আব্বা শত্রু ভাবছিলেন। আব্বা জানত না আমার সাথে উনার বিয়ে হয়েছে। জেনেশুনে মেয়ের ক্ষতি করতো না আব্বা। আমি আব্বা আর জেঠুকে আর কোনো ভুল করতে দেব না আম্মা। উনার সম্পর্কে বাজে ধারণা দূর করে দেব আম্মা।

রাজিয়া বেগম কেঁদে ওড়না দিয়ে মুখে গুঁজলেন। রাহা গাল মুছে দিতে দিতে বলল

আমায় ক্ষমা করেছ তো আম্মা? আমি তোমাদের জানানোর সময়টুকুও পাইনি আম্মা।

রাজিয়া বেগম মেয়ের মুখে হাত বুলিয়ে দিলেন।

তানজীবের মা তোদের কত স্নেহ করতো। আচ্ছা, ও তোকে দেখতে পায়?

হ্যা। উনি আমার কথায় তো আব্বা আর জেঠুকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। উনি খুব ভালো মানুষ আম্মা। তুমি জানো এই কাজের জন্য উনাকে কত জবাবদিহিতা দিতে হবে? উনি আমাদের পরিবারের কারো ক্ষতি চান না আম্মা। উনি নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করে দেশের জন্য কাজ করেন। আব্বার তো গর্ব হওয়া উচিত। আব্বা আর জেঠু যদি এবার না শোধরায় আমি নিজেই উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারব না আম্মা। মুখ দেখাতে পারব না।

আশরাফ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বলল

শোন বনু, কাঁদা বন্ধ কর। আব্বা আর জেঠুর এটা শেষ চান্স। নিজেদের মর্জি মতো অনেক কাজ করেছে। এবার থেকে ওদের আমি দেখে নেব। তুই আমাদের সাথে বাড়ি যাবিনা?

রাহা নাক টানলো। চোখ মুছে বলল…..

উনি বলেছেন আমাকে আর ক’দিন পর দিয়ে আসবে।

আচ্ছা।

রাহা অন্তরার কাছে গিয়ে বলল

আমার মা টা কোথায়?

তোর মা নোরার কাছে। রেখে এসেছি। আচ্ছা ননদিনী চুপিচুপি বিয়ে করে নিয়ে…

আচ্ছা শোনোনা।

এই চুপ। বলতে দে। এখন লজ্জা পেয়ে কি হবে? আচ্ছা তোকে উনি ভালোটালো বাসে? না আমি শুনেছি আর্মিগুলো খুব কঠোর হয়। তোর সাথে ভালো করে কথা বলে?

রাহা ব্যঙ্গ করে বল

শুধু কথা? একপ্রকার বকবক করে মাথা খায়।

সত্যি? দেখে মনে হয় না।

উনাকে উপরে বুঝাই যায় না। আমি তোমার সাথে আজ পরিচয় করিয়ে দেব ভালো করে।

তোকে কি দিল?

রাহা আটকে গেল।

কি দিল? ওহ হ্যা অনেক কিছু। ইয়া বড় ব্যাগ এনেছে। এসবের তালে পড়ে কিছু খুলে দেখা হয়নি। তুমি ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছ। আজ গিয়ে দেখতে হবে।

বাড়ির সবার সাথে কথা বলে রাহার মন ফুরফুরে হয়ে গেল। আর কোনো দুশ্চিন্তা রইলো না। তানজীব দূর থেকে তাকে এমন ফুরফুরে মেজাজে দেখে হাঁফ ছাড়লো।

_________

সমস্ত নিয়ম কানুন এবং ভেতরকার কাজকর্ম শেষে অপরাধীদের খালাস দেয়া হলো সন্ধ্যার দিকে। রোস্তমের পুরো পরিবার এসেছে। একসাথে সবার সাক্ষাৎ। রাহাকেও দূর থেকে দেখলেন উনারা। রোস্তম কেমন চুপচাপ এবং শিথিল। রোস্তমের মা ছেলেকে পেয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলেন। বললেন

আমি ওই ছেলেটার গুণের কথা কখনো ভুলব না। শোন বাবা তুই কোনদিকে কম আছিস? তোর জন্য আমি লাল টুকটুকে বউ আনবো দেখিস। নিজ কর্মদোষে নিজের সম্মান হারিয়েছিস। আর কোনো ভুল করতে যাস না আব্বা।

রোস্তম আঁড়চোখে ওই বহুদূরে হাস্যজ্জ্বল মুখে অনবরত কথা বলতে থাকা কালো বোরকা পড়া মেয়েটাকে দেখলো। মেয়েটা তাকে একদম শেষ করে ছাড়লো শেষমেশ। সর্বনাশিনী।

________________

বাবা আর জেঠুকে দেখে সেদিকে ছুটে গেল রাহা । উনারা কথা বলছিলেন বন্ধু এবং রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের সাথে। রাহাকে দেখে সবাই সরে গেল। রাহা কি বলবে কিছু খুঁজে পেল না। ছুটে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল

আব্বা আমায় ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করো আর কখনো কোনো অন্যায় করবেনা। কোনো অন্যায়কে সমর্থন করবেনা। প্রতিজ্ঞা করো আব্বা।

ওই ছেলে আমায় দয়া দেখালো না? যাতে সবসময় খোঁটা দিতে পারে?

রাহা মাথা তুললো।

তোমাদের উপর উনার কখনো কোনো ক্ষোভ ছিল না আব্বা। কেন এভাবে বলো? তোমরা যা ভাবো উনি তেমন নন।

তৎক্ষনাৎ তানজীব পেছনে এসে দাঁড়ালো। বলল

উনাদের গাড়ি চলে এসেছে প্রাণো। চলে এসো।

না ও যাবেনা।

তানজীব পা বাড়ানো বন্ধ করে অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো। রাহা বলল

আব্বা আমি….

তুই কথা বলিস না।

তানজীব গলা একপাশে হালকা কাত করে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ালো।

তুমি এসব করে সবার সামনে মহান সেজেছ ভালো কথা। এজন্য তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ।

তানজীব মাথা নেড়ে বলল,,

ধন্যবাদ।

আমার মেয়ে আমার সাথে যাবে।

হুম। যাক। সমস্যা কি?

রাহা ভয়াভিভূত চোখে তাকালো।

যেতে বলছ?

জ্বি।

আমজাদ সাহেব রাহার হাত ধরলেন। বললেন

চল।

রাহা তানজীবের দিকে তাকালো।

কিন্তু আব্বা….

রাহাকে নিয়ে এক পা এগোনোর সাথে সাথে ভারী গলাটি ভেসে এল।

দু’দিনের জন্য। তারপরের দিন আমি গিয়ে নিয়ে আসব।

মানে? কেন? ও আমার মেয়ে।

তানজীব উনার দিকে ফিরে বলল

আপনার মেয়ে না কখন বললাম? আপনার মেয়ে আর আমার বিবাহিত স্ত্রী। এখন আমার অধিকার সবচাইতে বেশি।

কিসের অধিকার?

গলার আওয়াজ বড় করতেই রাহা বলল

আব্বা এমন করো না। মেজর আপনি….

এই ছেলে তুমি আমার মেয়েকে একটা পরিবার দিতে পেরেছ? তোমার তো মা বাপ কেউ বেঁচে নেই।

আপনারাই মেরেছেন।

খবরদার।

গলা উঁচু করবেন না। সত্যকে স্বীকার করতে শিখুন।

আশরাফ এসে বলল..

কি হচ্ছে এখানে? আব্বা কি হচ্ছে? চলো।

না। রাহাকেও নিয়ে যাব আমি। এই ছেলে মাসের পর মাস কোথায় পড়ে থাকে। ওকে আমি একা ছাড়ব না এই ছেলের হাতে। আমার মেয়ে ফেলনা নয় যে ওর পায়ের তলায় পড়ে থাকবে। যদিও ওকে কোথাও রাখে তাহলে কোথায় রাখবে সেটা আমার জানা আছে। আমার মেয়ে সারাক্ষণ খোঁচা সহ্য করে থাকতে পারবেনা। আমি এই ছেলের হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারব না। ওর একটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরি করে দেয়া আমার কর্তব্য। আমি খারাপ মানুষ হতে পারি। কিন্তু আমার মেয়ে ছেলের কাছে আমি তাদের বাবা। পরিবারের ছায়াহীন, অন্যের আশ্রয়ে থাকা ছেলের হাতে আমি আমার মেয়েকে তুলে দেব না। কিছুতেই না।

তানজীব আঁড়চোখে চেয়ে রইলো চুপচাপ। অধীর এসে পরিস্থিতি সামাল দিল।

রাহাকে চুপিসারে জিজ্ঞেস করলো

তুমি যাবে?

তানজীব তাকালো তার দিকে উত্তর জানার জন্য। রাহা তানজীবের দিকে তাকিয়ে তারপর দুপাশে মাথা নাড়ালো ঘনঘন।

আমজাদ সাহেব রাহাকে বললেন

তুই কি যাবি নাকি যাবিনা?

আব্বা আমি আর চৌদ্দ দিন পরে যাব। সত্যি যাব আব্বা। তোমাকে দুর্বল দেখাচ্ছে এত উত্তেজিত হইয়োনা আব্বা। প্লিজ আমায় একটু সময় দাও। আমি সত্যি যাব।

তিনি হনহনিয়ে হেঁটে গাড়িতে গিয়ে বসলো।

আশরাফ এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

ওকে বনু। যেদিন যাবি তার আগের দিন যাবি।

রাজিয়া বেগম গিয়ে তার হাতটা তানজীবের হাতে ধরিয়ে দিল। ব্যস্ত গলায় বলল,,,,,

ওকে ভালো রেখো বাবা। নিজের খেয়াল রেখো। আসি। হ্যা?

গাড়ি ছেড়ে দিতেই রাহা বড় করে শ্বাস ফেলল। গাল মুছে পেছনে ফিরতেই তানজীবকে দেখে এগিয়ে গেল।

তানজীব তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। রাহাও তার পিছু পিছু গেল। অধীর আর রাহান হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। বলল

এবার সব মিটলেই হলো।

তানজীব গাড়িতে উঠে বসতেই রাহাও পাশে এসে বসলো।

কাছাকাছি এসে তানজীবের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেয়ে বলল

অনেক কষ্ট সইতে হবে। বলা ছিল।

আমার কথা আমাকে বলছো?

আর কে আছে আমার?

সিটবেল্ট বাঁধো।

আচ্ছা।

রাগ কমেছে?

শাটআপ। সিটবেল্ট বাঁধো।

রাহা বাঁধলো না। তানজীব সিটবেল্ট টেনে বাঁধার সময় রাহা তার মুখটা ধরে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। হেসে উঠে বলল…

আপনাকে এরকম দেখতে ভালো লাগে মেজর।

স্টুপিড।

রাহা হেসে উঠলো আবার।

_____________

ঘড়ির কাঁটায় রাত এগারোটা। রাহা বিছানায় এলোমেলো হয়ে থাকা শাড়িগুলো ভাঁজ করে শুধু লাল রঙের শাড়িটা পড়ার সিদ্ধান্ত নিল। তানজীব ঘরে আসতেই দেখলো ঘরটা আবছা অন্ধকারে ডুবে আছে। ড্রিম লাইট জ্বলছে। এককোণায় রাহাকে দেখে বলল

ভয় নেই?

রাহা উত্তর করলো।

না।

শোনো নানু ফোন করেছে।

এখন আসবেন না। শাড়িটা পড়া হয়নি।

তানজীব শুনলো না কথা। অর্ধ আবৃত শাড়ি পরিহিত রাহাকে টেনে নিয়ে দু’হাতে কোমর জড়িয়ে কাঁধে থুতনু ঠেকিয়ে বলল

লাল শাড়িতে ভালো লাগছে।

কচু লাগছে। পড়তেই পারিনি এখনো।

আর পড়া লাগবেনা।

ঘাড়ে প্রলম্বিত চুম্বনের ছোঁয়া পেতেই রাহা শিউরে উঠে বলল

নানুর কথা বলছিলেন বোধহয়।

তানজীব মুখ তুলে বলল

হুমম। নানু দাওয়াত দিল নাতবৌকে। যাবে?

কতদূর। বেশি না। তবে মামার বাড়ি অনেক সুন্দর। যাবে?

হুমম। আপনার সাথে কোথাও যাব এটা তো আমার সৌভাগ্য।

ওকে।

রাহাকে পাঁজাখোলা করে তুলে নিতেই রাহা আঁতকে উঠে তার গলা জড়িয়ে ধরে বলল

মামি দুটো না?

হুহ। আর কোনো কথা না। সারপ্রাইজ আছে।

রাহাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজের ব্যাগের কাছে ছুটলো সে। আবছা আঁধারে ব্যাগ হাতিয়ে কিছু পেছনে হাত লুকিয়ে একটা নিয়ে এসে রাহার পাশে এসে শুইয়ে বলল

চোখবন্ধ।

কেন?

চুপ। বন্ধ করো।

রাহা চোখ বন্ধ করলো। কড়াপড়া আঙুলের ছোঁয়া উন্মুক্ত উদরে লাগতেই নেতিয়ে পড়লো রাহা। হাত দিয়ে ছুঁতেই দেখলো কিছু একটা।

বিছা!

তানজীব সেটি পড়িয়ে অধর ছোঁয়ালো উদর ও বক্ষের মধ্যস্থিত অঁচলে।

রাহা শিউরে উঠে মুছড়ে উঠে কুঁকড়ে গেল। অন্যদিকে গলা ফিরিয়ে রাখতেই তানজীব গলদেশে মুখ লুকিয়ে ঠোঁট গুঁজলো।

কিয়ৎক্ষণ পর জানতে চাইলো,

আর ইউ ওকে?

রাহা তার বুকে লুকিয়ে পড়ে বলল

নাউ ওকে।

——–

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here