মন_নিয়ে_কাছাকাছি #পর্ব_৩,০৪

0
452

#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#পর্ব_৩,০৪
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা
০৩

শ্যামকালো ঘর্মাক্ত চেহারাটা ক্লান্ত দেখাচ্ছে। সাদা পাঞ্জাবির নিচে দেহ আচ্ছাদিত সাদা স্যান্ডো গেঞ্জিটাসহ সাদা পাতলা পাঞ্জাবি পিঠে লেপ্টে রয়েছে। কপালের কাছটায় পড়ে রয়েছে কয়েকটা ভেজা অবহেলিত চুল। মাংসল কব্জিতে সিলভার রঙের ঘড়িটি রোদের আলো পড়ায় ঝকঝকে দেখাচ্ছে।

বিশিষ্ট তরুণ সমাজসেবক আজমীর রায়হানের দ্বিতীয় পুত্র অধীর রায়হান পিতৃকুলের রেস্টুরেন্ট ব্যবসার দেখাশোনা করেন সমাজসেবা আর রাজনৈতিক কাজকর্মের পাশাপাশি । শহরের অলি গলিতে ছোটবড় রেস্টুরেন্টগুলো ওনাদের। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা আর ও কয়েকটি জেলায় কাপড়ের দোকান রয়েছে। সেগুলো ও তারই তত্ত্বাবধানে চলছে বর্তমানে । নিজ কাজ করার পর সময় বের করে সেগুলো দেখাশোনা করেন অধীর রায়হান। মা জননী তার সমাজসেবা তথা রাজনৈতিক কাজকর্ম বেশ অপছন্দ করেন বিধায় ইদানীং তিনি খেয়াল করেছেন ব্যবসার দেখাশোনা শুরু করে মাকে আপাততপক্ষে চুপ করা্ দরকার। এতে যেমন পিতৃব্যবসার মঙ্গল বয়ে আনবে অন্যদিকে মায়ের দুশ্চিন্তা তথা ঘরে যেতে না যেতেই মায়ের খ্যাটখ্যাটানি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

অধীর ভাই ম্যানাজার সাহেব হিসেব বুঝিয়ে দিয়েছে। কোনো সমস্যা না। সব ঠিকঠাক।

দূর থেকে হ্যাংলা পাতলা একটা ছেলে ডেকে বলল অধীরকে।

ঠিক আছে। চলে আয়। বাড়িতে কয়েকটা পায়েসের বাটি পাঠিয়ে দে। আম্মা খেতে চাইলো। তোর যা লাগে নিয়ে বাড়ি চলে যাহ। সন্ধ্যে সন্ধ্যে চলে আসিস। আমার মার্কেটের দিকে যেতে হবে।

মার্কেটে কেন ভাই?

অধীর ধৈর্য হারা গলায় বলল

এত প্রশ্ন করিস কেন? যেটা বলছি সেটা কর। আমি তোর কথার জবাব দেওয়ার জন্য বসে আছি শালা ?

বজ্রগম্ভীর স্বরে কথাটা বলে চোখগরম করে চাইলো সে। যেন এটুকু বলতেই মহাবিরক্ত হয়ে উঠেছে সে।

সুড়সুড় করে হাঁটা ধরলো রবিন নামের অল্পবয়সী ছেলেটি। অধীর ভাই হুটহাট রেগে যায় কেন কিছুই বুঝে পায় না সে।

ফোনের দোকানে ভীড়। কোলাহল। কয়েকজন দোকানি তাকে দেখে ডাকা শুরু করলো

আরেহ, অধীর ভাই যে! কি খবর ভাই? এদিকে আসেন। ও অধীর ভাই!

অধীর হাত দেখিয়ে শান্ত হতে বলে ফোন কানে দিয়ে অন্যপথে বারংবার হাঁটতে লাগলো।

পরপর কয়েকবার রিং হতে হতে হতে ফোন কেটে গেল। তারপর কয়েক মিনিট অনবরত ফোনকল যাওয়া ফোনটির অপরপ্রান্ত থেকে রিনরিনে গলার স্বরটি ভেসে এল।

আসসালামু আলাইকুম। সরি লেট হওয়ায়। রাহা ফোন ধরছিল না। ওর নাকি লজ্জা করে আপনার সাথে কথা বলতে। আমি কাপড় শুকোতে গিয়েছিলাম ছাদে।

ওয়ালাইকুমুস সালাম। কিন্তু এত লজ্জা পেলে কি করে চলবে রাহার? পাশে আছে?

নোরাহ সারাহ’র দিকে ফিরে তাকালো। ইশারায় বলল

তোর সাথে মেবি কথা বলতে চাই।

সারাহ দূরে পিছিয়ে গেল।

এই না না। আমি কথা বলব না। তোর বরের সাথে আমার কিসের কথা?

কি ফিসফিস করছেন দুজন?

নোহা শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল

সরি। ওকে বলছিলাম কথা বলতে।

হ্যা ফোনটা দিন। এত লজ্জা পেলে চলবে না।

নোরাহ হেসে বলল

থাক বাদ দিন। ও কথা বলবে না। দূরে চলে গেছে।

আচ্ছা আমি ফোনের শোরুমে আছি। কোন ফোনটা পাঠাবো? নইলে রাহাকে বলতে বলুন। কুইকলি বলুন।

নোরাহ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো এত তাড়া হলে কে বলল আসতে? কালকে যে ছবি পাঠিয়েছিল শাড়ি পড়ে তারপর তো কিছুই বলল না। কেমন মানুষ!

নোরাহ চুপ করে থাকলো আলতো অভিমানে।

লাগবে না বলেছিলাম আপনাকে। আমার এখন ফোন চাই না। যেটা আছে সেটাই যথেষ্ট।

আপনি কি বলবেন কোন ফোনটা নিতে চান?

ঠান্ডা গলায় কাঠ কাঠ আদেশী সুর।

নোরা চুপ থাকবেন না। নোরাহ!

বললাম তো ফোন চাই না আমার। আচ্ছা আমি আপনার সাথে গিয়ে কিনব। প্রমিজ।

পাক্কা?

একদম।

তারপর দু’পক্ষের আর কেউ কথা বলল না। অনেক্ক্ষণ পর নোরা মিনমিন করে বলল,

নেতা সাহেব যে পরিমাণ ব্যস্ত থাকেন !

ওপাশ থেকে দরাজ গলায় হাসি বের হয়ে এল। ততক্ষণে অধীর রিকশায় চেপে বসেছে। রিকশা চলতে শুরু করেছে।

আম্মা আজকে সকালে ও একথা বলছিলেন। তোর বউ দুদিন ও থাকবে না।

নোরা হেসে উঠলো।

ঠিকই বলেছে।

আমি ভয় পাচ্ছিনা ম্যাডাম। দুদিন থাকবেন কি থাকবেন না সেটা পরের কথা। আমি আপনাকে দুদন্ড ও চোখের আড়াল হতে দিচ্ছি না। আমার সাধনার বউ।

ফোনটা সাথে সাথেই কেন যেন কেটে গেল। নোরাহ কি লজ্জা পেল?

সারাহ পেট চেপে হাসতে হাসতে বলল

বউ পাগল জামাই। হি হি।

নোরাহ তাকে হাতের ভেজা গামছা দিয়ে মারতে গেলে সারাহ দৌড়ে পালালো। দু বোনের ছোটাছুটি দৌড়াদৌড়ি দেখে কপালে ভাঁজ ফেলে চেয়ে রইলো মেঝেতে বসে টিংটিংয়ের সাথে খেলা করা বাড়ির ছোট সদস্যটি।

নোরাহর ফোন কেটে দেওয়ার বিষয়টা অধীরের বুদ্ধিভর্তি মাথায় কিছুই ঢুকলো না।
বাড়িতে পৌঁছুতে না পৌঁছুতেই বাড়ির সবাই হামলে পড়লো যেন তার উপর।
মা এসে বললেন

কিরে অধীর? তুই নাকি তোর আব্বাকে বিয়ের দিনতারিখ নিয়ে কিছু বলিসনি? কেন? বিয়েটা কি তুই করবি না? ওই মেয়েকে বিয়ে করবি বলে তো অনেক লাফিয়েছিস এখন চুপ কেন?

অধীর সোফায় গিয়ে বসলো গা এলিয়ে। বলল,

আমার কোনো দোষ নেই আম্মা। সব দোষ আর্মি ম্যানের। রাহান আর ওকে ছাড়া আমি কোনো অকেশন নামাতে পারব না। সেটা তুমি ও জানো, আব্বা ও জানে। ও আসুক

বন্ধু সহোদরা অতঃপর বড় ভাইয়ের স্ত্রী রোহিনী এগিয়ে এল। বলল

অধীর ভাই, ভাইয়া তো আমাকে ফোন করেছিল সকালবেলা।
তানজীব ভাই নাকি কোন একটা অপারেশন শেষ হলেই চলে আসবে। আর কয়েকটা দিন বাকি। মিনা ও একই কথা বললো।

শালা বহুত জ্বালা জ্বালাচ্ছে। বিয়ে বিলম্ব করার অপরাধে আর্মি ম্যানকে কি শাস্তি দেওয়া যেতে পারে বলোতো ভাবি? চাচ্চু তুমি বলো।

রোহিনীর কোল থেকে চাচার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো চার বছরের বাচ্চাটি।

বলল

মারি মারি।

সবাই হেসে উঠলো তার কথায়। মা আনতারা হৈচৈ করে উঠে বললেন

আরেহ আরেহ গোসলে যাহ। আজান পড়ছে শুনছিস না?

_________________

গোসলটা সেড়ে ভেঁজা তোয়ালেটা বারান্দার রেলিঙে মেলে দিতেই খটখট পায়ের শব্দ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো মিনা। সাদা এপ্রোণ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা চিকন ফ্রেমের চশমা পরিহিত সৌম্যদর্শন ডাক্তারকে দেখে চমকালে ও চেহারা তা না ফুটিয়ে মৃদুহেসে হাত বাড়িয়ে এপ্রোনটা আর ব্যাগটা নিয়ে বলল

এত তাড়াতাড়ি আজকে? কোনো সমস্যা?

কোনো সমস্যা না মিনি। বিয়ের পর তোকে তো বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা। আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর যাওয়া হয়নি। আজকে তোকে নিয়ে ঘুরতে যাব। যাবি?

নাহ।

বলেই ঘরের দিকে পা বাড়ালো মিনা।

কেন কেন?

মিনার পেছন পেছন ছুটলো রাহান।

যাবিনা কেন?

এপ্রোণটা সাদা দেয়ালের এপাশ থেকে ওপাশ দিয়ে টানা রশির উপর ঝুলিয়ে দিয়ে বলল

জেম্মা বকাবকি করবে। শুধু শুধু অশান্তি।

আরেহ আম্মার বয়স হচ্ছে তাই এরকম বকাবকি করে। তুই ওসব ধরে বসে থাকিস কেন? আমি যাব। তুই ও যাবি। কেমন?

বাচ্চাদের মতো আবদার! মিনা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। ঠোঁটের কোণায় হাসি টেনে বলল

নাহ।

কপালে ভাঁজ ফেলে চেয়ে রইলো রাহান। মিনা হেসে উঠলো।

চোখের চশমাটা খুলে নিতে নিতে বলল

অন্য একদিন। ভাইয়া আসুক। তারপর সবাই মিলে বেড়াতে যাব।

সে তো সবাই মিলে। আজ তোকে একা নিয়ে যাব। যাবই যাব।

চশমাটা নিয়ে চলেই যাচ্ছিল মিনা। রাহান আষ্টেপৃষ্টে বাহুডোরে বেঁধে নিল তার কোমর । মিনার পা হালকা মেঝে থেকে একটু উপরে উঠে গেল বটে।

টাল সামলতে না পেরে রাহানের গলা ঝাপটে ধরে মিনমিন করে আতঙ্কিত গলায় বলল

কি করছেন? দরজাটা খোলা।

দু বাহুর চাপ দিল রাহান। গালে নাক ঘষে বলল

যাবি বল। বল বল।

উহু। ছাড়েন। উফফ। আল্লাহ কেউ আসলে কি হবে?

রাহান ছাড়লো না।

আর ও একটু তুলে নিয়ে দু পা হেঁটে গলার পাশে ঘন ভেজা চুলগুলোতে মুখ ডুবিয়ে বলল

যাব কেমন?

যাব বললে ছাড়বেন?

নাহ। যাব না বললে ও ছাড়ব না।

চলবে,

#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#পর্ব_৪
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা

সমরে আমরা
শান্তিতে আমরা
সর্বত্র আমরা দেশের তরে

মাইন বিস্ফোরণের মতো ভয়ংকর বিকট শব্দে সবুজ প্রান্তর আর পাহাড়িয়া অঞ্চলটা যেন কেঁপে উঠলো তরতরিয়ে।

কেঁপে উঠলো প্রশিক্ষণার্থী অল্প বয়সী নবীন ক্যাডেটস। শাঁ করে দূরে একঝাঁক পাখি উড়াল দিল গগনতলে। দুলে উঠলো কাছের দেবদারু গাছগুলো আর দূরের বন্যবৃক্ষ।
থমথমে বারুদপোড়া গন্ধে দম আটকে এল প্রান্তরে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রেনাডিয়ার্স, রেজিমেন্ট অফ আর্টিলারি, মেসিনাইজড ইনফ্যান্ট্রি, মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এবং স্পেশাল ফোর্সের সুদক্ষ অফিসারদের। নবীন ক্যাডেটসদের অবস্থা শোচনীয়।

পরপর সিগ সাউয়ার পি২২৬,ব্রাউনিং হাই পাওয়ার, সিজেদ-৭৫, ওয়ালথার পিপিকে, সিগ এমপিএক্স মেশিনগান, ফ্রাঞ্চি এসপিএএস-১২ শটগান, রেমিংটন মডেল-৮৭০ মেশিনগান দিয়ে টার্গেট কমপ্লিট করার পর শার্প শুটার স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেস প্রটেকশন কোর্স- ফিপটিন গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন ইন্সট্রাকটর এক নিঃশ্বাসে বাজ পাখির মতো ক্ষুরধার চোখ দুটো নিক্ষেপ করলো
নবীন ক্যাডেটসদের উপর।

নবীন ক্যাডেটসরা দেখলো লম্বা, ছিপছিপে দেহ, কপালের ডান পাশে সদ্য কাঁটা একটা দাগ, থুঁতনি কাঁটা, হালকা পাক খাওয়া চাপদাঁড়িতে রুক্ষ,শুষ্ক, কঠিন মুখশ্রীর ইন্সট্রাকটর সুশ্রী, সুতনু ভঙ্গিতে কর্নেলের হাত থেকে নিয়ে নিল গাঢ় সবুজ রঙের ভারী ARGES 84 গ্রেনেডটি।
আর্মি মিলিটারি জংলা পোশাক পরিহিত প্যারা স্পেশাল ইন্টিলিজেন্স মেজর নবীন ক্যাডেটদের অস্ত্র প্রশিক্ষণে নতুন ইনস্ট্রাকটর হিসেবে সবেমাত্র জয়ন করেছে বিধায় পেছনে হাত রেখে রৌদ্র মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ চাহনিতে সদ্য নবীন ইনস্ট্রাকটরের প্রত্যেকটা অঙ্গভঙ্গি চালচলনে, প্রশিক্ষণ সিস্টেমে খুঁত ধরার চেষ্টা করছিলেন সুদক্ষ অফিসারেরা।

উনাদের হতাশ করে দিয়ে রোদের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা নবীন ক্যাডেটসদের বিস্মিত চোখজোড়া বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে পরপর অস্ত্র চালিয়ে একেরপর এক অস্ত্র দিয়ে টার্গেট মার্কে নিশানা তাক করলেন।

দেন,
দ্য টেকটিকস অফ দ্য গ্রেনেড আর এ বিট কম্পলিকেটেড। দ্যাটস হোয়াই ইউ নিড টু নৌ অ্যাবাউট দ্য স্ট্রাকচার অফ দ্য গ্রেনেড। লিসেন কেয়াফুলি টু এভরি ওয়ান। আর উই রেডি?

জলদগম্ভীর গলার আওয়াজ অনুসরণ করলো ক্যাটেডসরা।

দম নিয়ে ন্যানো সেকেন্ড পার হতে না হতেই, কথাটা মগজে ঢুকিয়ে নিয়ে সবাই সশব্দে আওয়াজ করে উঠলো,

ইয়েস স্যার।

কঠোর ইনস্ট্রাকটর বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিল।

গাঢ় সবুজ রঙের ভারী ARGES 84 গ্রেনেডটি হাতে নিয়ে তরুন ক্যাটেসদের নিখুঁত ভাবে পরখ করতে করতে ভারী গলায় ইন্সট্রাকটর বলতে শুরু করলো,

Usually what we see to the soldiers as a handgrenade is the Time Delay Grenade.

It explodes after 1/3 to 5 seconds after throwing them. How many seconds later the explosion will occur on the grenade.

The grenade has a cast iron body shaped like a pineapple with a grooved type. It shatters when exploded. Also different types of splinters are used inside.

From the outside you can see the safety pin of the grenade and a safety lever along with it. Inside the grenade is a delay fuse, detonator and charge. or explosives.

A strong striker spring will cause the safety lever to move and the striker pin to strike the primer forcefully.

In some grenades it wears down on the percussion cap after the lever is opened. This results in a slight spark and the delay fuse starts burning.

They burn at a certain rate every second. The end of the delay fuse is connected to the detonator, which is basically a capsule filled with more flammable material.

The delay fuse burns completely in a few seconds. When it comes into contact with the detonator, a small explosion occurs inside the main grenade.
This ignites the main explosive of the grenade and the grenade explodes, scattering sprinters around.

Now it’s our turn to test! Okay?

Yes Sir!

ক্যাটেডসদের সম্মতি দিতে দেরী।

চিতাবাঘের মতো ক্ষীপ্র গতিতে বাতাসের চাইতে দ্রুত গতিতে গ্রেনেড হাতে ছিপছিপে দেহের ইন্সট্রাকটরের ছুটে যেতে দেরী হয়নি।

গ্রেনেড নিক্ষেপ হওয়ার সাথে সাথে সেফটি লিভার সরে গেল। স্ট্রাইকার পিনটি প্রাইমারে সজোরে আঘাত হানলো। তারপর স্পার্ক, ডিলে ফিউজ পুড়তে পুড়তে ডেটোনেটরের সংস্পর্শে চারপাশে স্প্রিন্টার ছড়িয়ে হ্যান্ড গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হলো।

তারপরের সব ধোঁয়াশা সবার কাছে। নবীন ক্যাডেটসদের চোখ সেই কখন থেকে বন্ধ। শুধু পোড়া পোড়া গন্ধে ছেয়ে গেল পুরো পাহাড়ি এলাকা হয়ত শহরটি ও।

অফিস্যারেরা চোখ খুললো। খুকখুক করে কেশে উঠলো কয়েকজন। কঠোর সংগ্রামে, প্রশিক্ষণে, দায়িত্বের কাছে হেরে যাওয়া পোড়খাওয়া সকল আর্মি অফিসারের পাথর কঠিন বুকে সুতীক্ষ্ণ কাঁটা ফুটলো যেন।
হ্যান্ড গ্রেনেড যে নিরাপদ নয়। মেজর কেন লঞ্চার ইউজ করলেন না? গ্রেনেড ফায়ারিংয়ে এত এত এক্সিডেন্টের খোঁজ কি মেজর রাখেন না?

নবীন ক্যাডেটসদের কয়েকজন চোখ খুলে শুধু খুঁজছিল ইন্সট্রাকটরকে।

মেজর স্যার কোথায়?

সামনে শুধু দাউদাউ করে আগুন ছুটছে। বাতাস ও বারুদপোড়া গন্ধে বিদ্বিষ্ট হয়ে এল। পরিবেশ একটু স্বাভাবিক গন্ধ ফিরে পেতেই সবার চোখ গেল

গাঁঢ় সবুজ রঙা জিপটির চাকা নিয়ে ব্যস্ত মিলিটারি অফিসারের দিকে।

অফিসারদের রুক্ষ ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে ফুঁস করে বাষ্প বেরিয়ে এল। আটকে থাকা দম নিস্তার পেল।

_____________________________

গনগনে রোদের আঁচ ঘরের ভেতর ঢুকছে জানালার ফাঁক দিয়ে। সাথে গরম বাতাস ভনভন করে মাথার উপর চলতে থাকা যান্ত্রিক ফ্যানটির। দরদরিয়ে ঘেমে উঠা সারাহ লাফ দিয়ে নামলো বিছানা থেকে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেড়ে একটুখানি শোয়াতেই চোখটা লেগে এসেছিল। বুকটা তার এখনো ধুকপুক ধুকপুক করছে। এত আওয়াজ এল কোথা থেকে? কোথাও যেন ভেঙেচুরে সব তছনছ হয়ে গেল। পৃথিবীর একপাশটা উল্টে গেল।

নোরা এসে তাকে অপ্রতিভ অবস্থায় দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে চিন্তাজড়ানো গলায় বলল

কি হলো? ঘুম শেষ? ওহহ বাজে স্বপ্ন দেখেছিস?

পরপর এতসব প্রশ্নে শুনে অস্থির হয়ে ঘনঘন মাথা নাড়ালো সারাহ। নোরাহ হাসলো। আলমিরা খুলে সারাহর ব্যাক্তিগত ড্রয়ারটা খুলে একটি পোড়ামাটির ঘোড়া হাতে তুলে নিল। হাসিমুখে সামনে এসে বোনের সামনে রাখলো । সারাহ’র মুখে কথা নেই। বোবামুখে চেয়ে রইলো বোনের দিকে। রাগে ক্ষোভে পলকহীন বোনের দিকে চেয়ে রইলো সে। আপা কেন তার জিনিসে হাত দেবে ?

এখন বুঝলাম সবটা। বিয়ে বিয়ে শব্দ কেন তোর কাছে এতটাই বিরক্তিকর।

কি? কেন?

যেন চোর ধরা পড়লো গৃহস্থের হাতে।

নোরাহ কুটিল হেসে বোনের পাশে বসলো। পোড়ামাটির ঘোড়াটি নাচিয়ে নাচিয়ে সারাহ’র কোলের কাছে দিয়ে বলল

কারণ তোমার মনপাখি এখানেই নেই সোনা। ওই সীমান্তের পাড়ে পড়ে আছে । এই ঘোড়াটির মনিবের কাছে। ঠিক বলছি তো?

কি যা তা বলছিস?

ঘোড়াটি কেড়ে নিল সারাহ। নিঃশব্দে ফোঁপাচ্ছে ও। সে এসব ভাবনায় ও আনতে চায় না। তানজীব তাহমিদ তার কাছে একটা স্মৃতি আর চোখের পাতায় ভাসা আবছা অবয়ব ছাড়া কিচ্ছু নয়। ছায়াটি ও তো দেখেনি সে গত চৌদ্দ বছরে।

সে একসময়কার বন্ধু বন্ধু ক্রিকেট খেলায় প্রিয় ব্যাটসম্যান কি মনে রেখেছে সেই ছোট্ট প্রাণোকে? যার কাঁচা হাতের বলিং’ এ ব্যাট উড়িয়ে দারুণ মজা নিত ব্যাটসম্যান। প্রাণোর সেই সুপারম্যান!

ঘরের এককোণায় মুখ থুবড়ে পড়লো পোড়ামাটির ঘোড়াটি। বিকট শব্দে কপাল কুঁচকে গেল নোরাহ’র।

আজ তার গায়ে দ্বিতীয়বারের মতো আঘাত।

দেখতো পুরোটা ভেঙে গেছে কিনা।

কান্নায় ভেঙে ভেঙে আসা গলায় নোরাহকে কথাটি বলে ঘর থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে পড়লো সে।

ছুঁড়ে মেরে বলছিস ভেঙে গেছে কিনা? পাগল মেয়ে।

নোরাহ’র কন্ঠে তীব্র বিরক্তি ঝড়ে পড়লো। কি হবে এই মেয়েকে নিয়ে?

____________________

ক্রিং ক্রিং ক্রিং

ফোনের শব্দে ধ্যান ভাঙলো মেজরের। সাথে সাথে নভোএয়ার ফ্লাইটে ডাক পড়লো।

ব্রাউন জ্যাকেটের কলার ঝাঁকিয়ে থামলো মেজর। কানে গুঁজা মিনি ওয়্যারলেস ব্লুটুথে ভেসে আসা বন্ধুর চেনা গলার আওয়াজে হাসলেন তিনি।

ঢাকা ফিরছি।

তারপর হাতের কব্জিতে পড়া ঘড়িটার দিকে চোখ বুলালো। বলল

এক ঘন্টার ভেতর।

এতক্ষণে তোর ফোনটা ধরা উচিত মনে হলো?

নতুন কিছু বল।

অধীর গরম গলায় বলল

নতুন কিছুই বলি তাহলে। বিয়ে কবে করছিস?

আশপাশ না ভেবে আর্মি অফিসারে হাস্কি গলার হাসির চোটে কয়েকজন ফিরে ফিরে তাকালো। মিনি স্যুটকেসটা টেনে নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হতে তানজীব বলল

নতুন কিছু বল।

অধীর ভয়ানক রেগে গিয়ে বলল

শালা তোরে হাতের কাছে পাই আগে। তোর কি কথা বলতে টাকা খরচ হয় শালা? ফোন করিস ও না, ধরিস ও না।

সমাজসেবা করতে গেলে বেশি কথা বলতে হয়। আর দেশসেবা করতে গেলে কম কথা বলতে হয়। আচ্ছা বাদ দে। এখন একটু বেশি কথা বলা যাক। বিয়ে কাকে করছিস?

সে আরেক নেত্রীর প্রসঙ্গ। তুই আমার প্রশ্নের উত্তর দিস নি এখনো।

কিছুক্ষণ নীরবতা। নিজের সিট খুঁজে নিল তানজীব।

সিট বেল্ট টেনে লাগাতে লাগাতে বলল,

হ্যা, বল। কি প্রশ্ন?

অধীর ধীরেসুস্থে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসলো।

বিয়ে কবে করছিস?

গা এলিয়ে বসলো তানজীব। কপালের ডানপাশে ক্ষতস্থানটা আঙুলের সাহায্যে চুলকাতে চুলকাতে বলল

এভাবেই ভালো আছি।

——–

খুশিতে আজ কোনো কাজই হাতে উঠছেনা মিনার। তার ভাই আসছে। আজকের দিনটা তার কাছে ঈদের মতোই। সানজু অনেক্ক্ষণ মিনাকে পরখ করছিল। আপার মুখে হাসি দেখে তার ও ভীষণ ভালো লাগছে। খুশিতে, আনন্দে মনটা উড়ু উড়ু করছে। কিন্তু মিনা আপাকে একটা কথা পারা হয়নি। বলবে বলবে করে বলা হয়ে উঠেনি। মনোয়ারা বেগম আর খানসা বেগমের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে মিনার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো সে। বলল

এই আপা অধীর ভাইয়ের বৌয়ের নাম কি জানিস? রোহি আপাকে ফোনে বলতে শুনেছি। বড়মাকে বলছিল।

কি? ছবি দেখেছিস?

হ্যা। নাম নূর বলেছিল বোধহয়।
অনেক সুন্দর। ওনার বোনটাও দেখতে একদম ওনার মতো। জমজ।

হাতটা কেঁপে উঠলো মিনার। সানজুর দিকে চোখ তুলে তাকালো।

জমজ? একদম সমবয়সী? নাকি?

হবে হয়ত। একরকম লাগছিল ছবিতে। সমবয়সী হবে।

ওহহ।

আরেকটু হলেই মিনার কাদের যেন মনে পড়ে যাচ্ছিল। সে মনে করতে চায় না তাদের। দমবন্ধ হয়ে আসে। কষ্ট হয়। কত দুষ্টুমিষ্টি স্মৃতি মনে পড়তে থাকে একে একে ট্রেনের বগির মতো। তারা যে ছিল চারজন। টক, ঝাল, তেঁতো, মিষ্টি।

মাথা ঝেড়ে কাজে মনোযোগ দিল মিনা। রান্নাঘরের দরজায় একজন উঁকি দিল। ডাকলো

মিনি সে চলে এসেছে। চটজলদি আয়।

মিনা খুশিতে দিশেহারা হয়ে পাগলের মতো ছুটলো। ছুটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়তে যাচ্ছিল। রাহান শক্ত করে ধরে ধমক দিয়ে বলল

তোর সবেতে তাড়া। পড়ে গেলে কি হতো?

মিনা লজ্জামিশ্রিত বদনে হেসে আবার ও পাগলের মতো ছুটলো।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here